শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবিরতির পক্ষে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
তিনি বলেন, ‘আজকাল বিশ্বের অনেক দেশে শিক্ষার্থীরা গ্যাপ ইয়ার নেয়। আমি কোনো একটি বিষয় নিয়ে পড়ছি, মাঝে অন্য কোনো কাজ করতে চাইলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে কেউ তিন বছর, কেউ বিশ বছর পর পড়তে এসেছেন। একটি বিষয়ে পড়ে এসেছেন, আরেকটি বিষয়ে পড়তে চান, তিনি কেন এই সুযোগ পাবেন না?
রোববার দুপুরে রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) উত্তরা ইউনিভার্সিটির সপ্তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
দীপু মনি বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং চলছে। এর ফলাফল খুব আশাব্যঞ্জক। শিক্ষার্থীরা আনন্দের মধ্য দিয়ে শিখবে। প্রশ্ন করবে। কিন্তু আমরা প্রশ্ন করাকে নিরুৎসাহিত করি। একদিকে সমাজে গণতন্ত্রের কথা বলি, অন্যদিকে শিশুদের প্রশ্ন করাকে নিরুৎসাহিত করি। এ জন্য আমাদের চিন্তার জগতে পরিবর্তন আনতে হবে।’
নারী নির্যাতন এবং বিদ্যুৎ নিয়েও কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘নারী নির্যাতনকারীর যেই পরিচয়ই থাকুক না কেন, তাকে অবশ্যই অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে। কেউ যদি তার রাজনৈতিক পরিচয়, গোষ্ঠীগত পরিচয় নিয়ে নারী নির্যাতনের মতো কোনো ধরনের অপরাধের দায় থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করে, সেটি শেখ হাসিনার সরকার কখনই হতে দেবে না। কারণ সরকারের কাছে দলীয় বা ধর্মীয় গুরুত্ব নয়, যে অপরাধ করে সে অপরাধী। আমরা সবাই যেন সেটা মনে রাখি।’
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিদ্যুৎ নিয়ে অপপ্রচার আছে, সেগুলোয় কেউ কান দেবেন না। আমাদের সাশ্রয়ী হতে হবে, যাতে সামনে কঠিন দিন এলেও সমস্যায় না পড়ি। অর্থনৈতিকভাবে আমরা এখনও স্বস্তিপূর্ণ জায়গায় আছি। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় আমরা করোনা মোকাবিলা করতে পেরেছি, উন্নত অনেক দেশই যা পারেনি।’
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও উত্তরা ইউনিভার্সিটির আচার্য কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষমতাবলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তার বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ। আরও বক্তব্য দেন উত্তরা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আজিজুর রহমান ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন আরা লেখা। শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি প্রদান প্রক্রিয়া পরিচালনা করেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আলী।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে বহনকারী সরকারি গাড়িতে যাত্রীবাহী একটি বাস ধাক্কা দিয়েছে। তিনি সামান্য ব্যথা পেলেও বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি। পুলিশ চালকসহ বাসটি আটক করেছে।
জি এম কাদের শনিবার বিকেল ৫টার দিকে বনানী কার্যালয় থেকে উত্তরার বাসায় ফেরার পথে খিলক্ষেত এলাকায় লা-মেরিডিয়ান হোটেল সংলগ্ন সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
জাপা চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী জানান, জি এম কাদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিজ বাসভবনে বিশ্রামে আছেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রাতের খাবার ও প্রয়োজনীয় ওষুধ খেয়েছেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার পর ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকলেও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়ার আয়োজন করে ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা। ছাত্রলীগের ব্যানারে শনিবার বিকেলে আয়োজনটি ঘিরে বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা আয়োজনটির জন্য কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিলেও ব্যানারে ছাত্রলীগ রাখার বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না বলে জানিয়েছেন বুয়েট উপাচার্য সত্যপ্রসাদ মজুমদার।
তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে বলেছি। মূলত এটি আমরা পরে জানতে পেরেছি। আগে জানতাম না। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। তারা যে আবেদন লিখেছে সেখানে বুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষার্থী লিখা ছিল। সে জন্যই তাদের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
‘কিন্তু ওরা ব্যানারের মধ্যে যেটা লিখছে সেটা আমরা জানতাম না। বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ এটা তারা পরে লিখেছে। আবেদনের সময় এটা ছিল না।’
সত্যপ্রসাদ মজুমদার বলেন, ‘আমরা শোক দিবস পালন করি। ছাত্ররাও করে। এটি নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই। শুধু ছাত্রলীগ লিখা ছিল, এ জন্যই তাদের আপত্তি।’
বুয়েটে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের ব্যানারের সে আলোচনা সভা ঘিরে জড়ো হয়ে ‘ছাত্রলীগের ঠিকানা, এই বুয়েটে হবে না’, ‘আবরারের রক্ত, বৃথা যেতে দিব না’ ইত্যাদি স্লোাগান দেন।
ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়া স্বত্ত্বেও ছাত্রলীগের ব্যানারে প্রোগ্রাম আয়োজন করতে দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন শিক্ষার্থীরা।
এই ঘটনার প্রতিবাদে রাত সাড়ে ৮টায় শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেয়া কোনো শিক্ষার্থীই তাদের পরিচয় বলেননি।
‘শিক্ষার্থীরা সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতির পুনরুত্থানের আশঙ্কায় আছে’
বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতির পুনরুত্থানের আশঙ্কায় আছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘শোকের মাস আগস্ট। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি হারায় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
‘তার আদর্শ অনুসরণ করেই আমরা নিরন্তর কাজ করে চলেছি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে গড়ে তুলতে। তারই ধারাবাহিকতায় নিরাপদ এবং সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন নিশ্চিত করা সকল শিক্ষার্থীর মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম।’
‘অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য, যে ছাত্ররাজনীতি একসময় দেশের ক্রান্তিলগ্নে অগ্রগণ্য ভূমিকা রেখেছিল, পরাধীনতার হাত থেকে যুক্ত করে জন্ম দিয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের, সেই ছাত্ররাজনীতি আজ ক্ষমতার অপব্যবহারে কলুষিত।’
শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা সত্ত্বেও শনিবার সেমিনার হল বুয়েট অডিটোরিয়াম কমপ্লেক্সে ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বুয়েটের সাবেক নেতৃবৃন্দ’ আয়োজনে একটি ব্যানার দেখা যায়।
গত ২ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হলে আরিফ রায়হান দিপের স্মৃতিফলকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং ৮ জুন সাবেকুন নাহার সনির স্মৃতিফলকে বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের পক্ষ থেকে ব্যানার টানানো হয়।
ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও অত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠনের বারবার নিজেদের উপস্থিতি জানিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি পাওয়ায় বুয়েট কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
তারা বলেন, ‘এমন কার্যক্রমের ব্যাপারে আমরা, বুয়েটের সব সাধারণ শিক্ষার্থী, কর্তৃপক্ষের অবস্থান এবং সুস্পষ্ট জবাব আশা করছি।’
আরও পড়ুন:সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাৎবার্ষিকী ‘জাতীয় শোক দিবস’ উপলক্ষে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির উদ্যোগে আজ রবিবার আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মিলনায়তনে সকাল ১১টায় এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। ‘১৫ই আগস্ট জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের ষড়যন্ত্র ও সহায়তাকারী জিয়াসহ অন্যদের খুঁজতে তদন্ত কমিশন চাই’ শীর্ষক এ আলোচনায় প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ. এইচ. এম. খায়রুজ্জামান (লিটন)।
সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দকার বজলুর রহমান। সঞ্চলনা করবেন বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সুবিধাভোগীরাই তার খুনি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু।
শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিউশনের সেমিনার হলে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
১৪ দলের এই মুখপাত্র বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সুবিধাভোগী কারা ছিল এবং কারা ষড়যন্ত্র করেছে তা জিয়া, মোশতাক ও জাতীয় পার্টির কাজই পরিষ্কার করে দেয়। সেই ষড়যন্ত্র এখনও আছে। কেননা বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।’
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতা বলেন, ‘ওই সময় আমাদের নেতৃত্ব কেন কোনো ঘোষণা দিতে পারল না, সে কথা আজ বলতে চাই না। তবে বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্য কুশীলবদের খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিশন গঠন সময়ের দাবি। বিচার বিভাগ হোক বা গণকমিশন হোক, সেটা গঠন করে নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করা হোক।’
সভায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিছক কোনো ব্যক্তিকে হত্যা নয়। তা ছিল বাংলাদেশকে দ্বিতীয় পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্র। সেই কাজ জেনারেল জিয়াউর রহমান পরিকল্পিতভাবে করেছেন। এরশাদ করেছেন। সংবিধানে এখনও সাম্প্রদায়িকতা-সামরিক সরকারের ক্ষত আছে। এগুলো ধীরে ধীরে দূর করতে হবে।’
কোভিড আক্রান্ত হওয়ায় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ মেনন অনুষ্ঠানে ছিলেন না। তার পক্ষে সূচনাপত্র পড়ে শোনান দলের নেতা কামরুল আহসান। ওই পত্রে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের ষড়যন্ত্র প্রকাশ করতে ‘জাতীয় তদন্ত কমিশন’ গঠনের দাবি জানানো হয়।
একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল নায়ক জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের ভাবধারায় ফিরিয়ে নেয়া হয়েছিল। সে কারণে সংবিধান সংশোধন করে জিয়া বিসমিল্লাহ বসান মাথার উপরে। বঙ্গবন্ধু ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধ করেছিলেন। জিয়া সেটা ফিরিয়ে আনেন।’
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি। অন্যদের মধ্যে কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন:বিএনপি বন্দুকের নল থেকে নির্গত দল বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠা করা বিএনপি বন্দুকের নল থেকে নির্গত দল। তিনি বন্দুকের নল উঁচিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিলেন, ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে বিএনপি গঠন করেন। সেই উচ্ছিষ্ট গ্রহণের জন্য মির্জা ফখরুল, খন্দকার মোশাররফ, গয়েশ্বর বাবুসহ যারা যোগদান করেছিলেন, তারাই এখন বিএনপির বড় বড় নেতা। তারা সবাই রাজনীতির কাক।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির পেট্রলবোমা সন্ত্রাসীরা আবার মাঠে নেমেছে। তাদের তাড়িয়ে দিতে হবে এবং প্রতিরোধ করতে হবে। বিএনপির সমাবেশে আমরা কখনো বাধা দিইনি, দেবও না। যদি পেট্রলবামা বাহিনীদের দেখি, তখন কিন্তু আমরা বসে থাকব না, প্রতিরোধ গড়ে তুলব।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির লাফালাফি হচ্ছে পুঁটি আর মলা মাছের মতো। তেলের দাম বাড়াতে ওরা একটু লাফাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সারা পৃথিবীতে তেলের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। ৬০ ডলারের তেল ১৭০ ডলারে গিয়েছে। এখন সেটি ১৩৮-১৪০ ডলার। দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। আমাদের দেশে আমরা তেলের দাম দ্বিগুণ করি নাই। সব মিলিয়ে ৩৮-৪০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
‘আমরা দাম বাড়িয়ে পশ্চিমবাংলার সমান করেছি। বিশ্ববাজারে যদি তেলের দাম স্থিতিশীলভাবে কমে তাহলে আবার দাম সমন্বয় করা হবে। তাই বিএনপির এই পুঁটি ও মলা মাছের মতো এত লাফালাফির কোনো প্রয়োজন নেই।’
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী জিয়াউর রহমান ও তার পরিবার উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার প্রসিডিং সংরক্ষিত আছে, সেই মামলার প্রসিডিংয়ে আসামি এবং সাক্ষীরা তাদের জবানবন্দিতে সবিস্তারে বলেছেন, কখন কোথায় কীভাবে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে দেখা করেছিল, তিনি কীভাবে ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মেজর জেনারেল সফি উল্লাহকে সরিয়ে দিয়ে জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনী প্রধান করেছিন খোন্দকার মোস্তাক।’
তিনি বলেন, ‘আমরা রাজপথে এখনো নামিনি, আগামী মাসে পরিপূর্ণভাবে নামব। রাজপথে নামলে বিএনপি পালানোর জায়গা পাবে না। বিএনপিকে অবশ্য এখনও সারা দেশে খুঁজে পাওয়া যায় না, বিএনপি আছে নয়াপল্টনের অফিস এবং প্রেস ক্লাবের সামনে। বিএনপির সমাবেশে এখন অনেক নেতাকর্মী দেখতে পাচ্ছি। তাদের কীভাবে গর্তে ঢুকাতে হয়, সেই ওষুধ আমাদের জানা আছে। প্রয়োজনে প্রয়োগ করা হবে।’
রাঙ্গুনিয়া পৌর অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল মোনাফ সিকদার। যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ নেতা স্বজন কুমার তালুকদার, আবুল কাশেম চিশতি, জহির আহমদ চৌধুরী, মো. শাহজাহান সিকদার, নজরুল ইসলাম তালুকদার, ইদ্রিচ আজগর, বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার, আকতার হোসেন খান, জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার, আবু তাহের, এমরুল করিম রাশেদ ও শেখ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী।
আরও পড়ুন:শিক্ষার্থী আবরার হত্যার পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে কর্তৃপক্ষ। রাজনীতি নিষিদ্ধের মধ্যেই ক্যাম্পাসে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দোয়া ও আলোচনা সভার আয়োজন করে বুয়েট ছাত্রলীগের সত্তর ও আশির দশকের সাবেক নেতারা। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শনিবার বিকেল ৫টা থেকে বুয়েট ক্যাফেটরিয়ার সেমিনারে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বুয়েটের সাবেক নেতাদের ব্যানারে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান শুরু হয়।
খবর পেয়ে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাফেটরিয়ার বাইরে জড়ো হতে থাকেন।
এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে ‘ছাত্ররাজনীতির ঠিকানা, এই বুয়েটে হবে না’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’ ইত্যাদি লেখাসংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
রাত ৮টার দিকে বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা যখন ক্যাফেটরিয়া থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন শিক্ষার্থীরা ‘ছাত্রলীগের ঠিকানা এই বুয়েটে হবে না’ বলেও স্লোগান দেন। এ সময় বুয়েটের বিভিন্ন ব্যাচের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
তার কিছুক্ষণ পর আশির দশকে বুয়েট ছাত্রলীগের এক নেতা শিক্ষার্থীদের সামনে আসেন। বলেন, ‘আমরা শুধুমাত্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া করতে আসছি।’
তখন শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে আমরা সবাই ভালোবাসি। বঙ্গবন্ধু সবার। ওনার জন্য দোয়া করতে ছাত্রলীগের ব্যানার কেন ব্যবহার করতে হবে? বিশ্ববিদ্যালয় তো ওনার জন্য দোয়া করতই।’
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘শোক দিবস পালন নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমাদের আপত্তি ব্যানারে ছাত্রলীগ শব্দ ব্যবহারে।’
সাবেক ওই ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘আমরা জানি বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ। আমাদের প্রোগ্রামে ছাত্রলীগের কোনো শিক্ষার্থী ছিল না। সবাই সত্তর-আশির দশকের নেতৃবৃন্দ ছিল। আমরা সবাই সাবেক।’
এ সময় শিক্ষার্থীরা বলে উঠেন, ‘সাবেক ছাত্রলীগই আবরার ভাইকে হত্যা করেছে। আপনারাই আবরার ভাইকে হত্যা করেছেন।’
শিক্ষার্থীরা তখন ‘ছাত্রলীগ খুনি’ বলে স্লোগান দেয়া শুরু করলে সাবেক নেতারা বেরিয়ে যান।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলে আবরার ফাহাদ রাব্বীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সবাই বুয়েটের শিক্ষার্থী।
হত্যার ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরদিন ৭ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা বরকত উল্লাহ।
আবরার হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। লাগাতার বিক্ষোভ আন্দোলনের পর ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে কর্তৃপক্ষ।
মামলাটির বিচারিক কাজ শেষে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান।
আরও পড়ুন:দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সন্তান ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজকে নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগে। তার বোন মাহজাবিন আহমদ মিমির ফেসবুকে দেয়া একটি পোস্ট থেকে এ আলোচনার সূত্রপাত।
শাসক দলের নেতারা বলছেন, সোহেল তাজ আওয়ামী পরিবারের সন্তান। তিনি সৎ ও যোগ্য। দলে পদ পেতেই পারেন। তাকে নিয়ে সংগঠনের ভেতরে আলোচনা আছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে তা বাড়ছে। তবে সংগঠনে তার পদ পাওয়া নিয়ে দলীয় ফোরামে কোনো আলোচনা হয়নি।
আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ এ বিষয়ে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সোহেল তাজ দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদের সন্তান। তিনি নিজেও যোগ্য।
‘এর আগে দলের মনোনয়নে সংসদ সদস্য এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। যে কোনো কারণে সেসব ছেড়ে দিয়ে তিনি আমেরিকা চলে গিয়েছিলেন। এখন দলে কাজ করতে চাচ্ছেন। শিক্ষা, পরিবার এবং যোগ্যতা বিবেচনায় তিনি দলে পদ পেতেই পারেন। তবে পদ ছোট হবে না বড় হবে সেটা বলতে পারি না। তবে দলীয় ফোরামে এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
এমন স্ট্যাটাস দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মাহজাবিন আহমদ মিমি বলেন, ‘সোহেল (সোহেল তাজ) সব সময় আওয়ামী লীগে ছিল। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করার পরও দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। আওয়ামী লীগের প্রতিটি সম্মেলনেই সে উপস্থিত থেকেছে। দলে সক্রিয় হওয়ার বিষয়ে সে পরিবারে আলোচনা করেছে। আমরাও বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক মতামত দিয়েছি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা বা তিনি কোনো ইঙ্গিত দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে মিমি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোহেলকে স্নেহ করেন। তিনি সবসময় চেয়েছেন সে দলে সক্রিয় থাকুক। নির্বাচনের আগে সবসময় একটা ষড়যন্ত্র হয়। বিভিন্ন গোষ্ঠী আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। তাই আমরা মনে করছি এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে যোগ্য, বিশ্বস্ত ও নিবেদিতদের থাকা প্রয়োজন।’
তাজউদ্দীন আহমদ-জোহরা তাজউদ্দীন দম্পতির ছোট সন্তান এবং সোহেল তাজের বোন মাহজাবিন আহমদ মিমি বৃহস্পতিবার রাতে তার ফেসবুক প্রোফাইলে লেখেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আসন্ন কাউন্সিল অধিবেশনে তানজিম আহমদ (সোহেল তাজ) দলীয় নেতৃত্বে আসছেন ইনশাআল্লাহ। জয় বাংলা! জয় বঙ্গবন্ধু! জয়তু শেখ হাসিনা!! বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।’
এই স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। অফ লাইন-অনলাইন দুই মাধ্যমেই আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক-অনুসারীরা এ বক্তব্যের মমার্থ খুঁজতে শুরু করেন। অনেকেই সোহেল তাজকে শুভ কামনা জানান।
নেতাকর্মীদের পাশাপাশি দলীয় নেতাদের মধ্যেও এ নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলে। এমনকি ‘সোহেল তাজ আওয়ামী লীগের সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাচ্ছেন’ শীর্ষক গণমাধ্যমে একটি রিপোর্টও হয়। সোহেল তাজ তার ফেসবুক পেজে সেই রিপোর্ট এবং লিংক শেয়ারও করেছেন। তার ফেসবুক পেজেও অসংখ্য মানুষ তাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সম্মেলনের আগে এ ধরনের আলোচনা হওয়াটা স্বাভাবিক। কে দলে আসবে, কে বাদ যাচ্ছেন তা নিয়ে প্রতিবারই কথা হয়। কিন্তু সম্মেলনের এখনও অনেক দেরি। এখনই এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলার সুযোগ নেই।
জানতে চাইলে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘যিনি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি সোহেল তাজের বোন। ভাই বড় পদে থাকুক তারা সেটা চাইবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে দলে এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে বলে আমার জানা নেই।’
এদিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন গণভবন-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, নিকট অতীতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাজউদ্দীন পরিবারের কেউ দেখা করতে আসেননি। তবে তারা পারিবারিকভাবে ঘনিষ্ঠ। নিজেদের মধ্যে ফোনে যোগাযোগ আছে।
আওয়ামী লীগে পদ পাওয়া নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টে সোহেল তাজ একটি বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি দলের (আওয়ামী লীগের) জন্য সর্বদা প্রস্তুত আছি। যে কোনো পরিস্থিতিতে দল যদি মনে করে যে আমি অবদান রাখতে পারি, তাহলে আমাকে ডাকলে যাব। আমি আওয়ামী লীগের জন্য অতীতে প্রস্তুত ছিলাম, এখনো প্রস্তুত, ভবিষ্যতেও তৈরি থাকব।’
তাজ আরও বলেন, ‘আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তার জ্বলন্ত উদাহরণ পদ্মা সেতু। এখন প্রয়োজন মানবিক উন্নয়ন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশের মানুষের একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও চাচ্ছেন বলে আমি মনে করি। সেজন্য তার (প্রধানমন্ত্রী) পাশে যোগ্য ও নিবেদিত মানুষ প্রয়োজন, তাকে সহায়তা করার জন্য।’
সোহেল তাজের ছেড়ে দেয়া গাজীপুরের কাপাসিয়া আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য তার মেজ বোন সিমিন হোসেন রিমি। যিনি এর আগে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য