নিরাপদ ক্যাম্পাস, সান্ধ্য আইন বাতিল, যৌন নিপিড়নে অভিযুক্তদের বিচারসহ চার দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা।
সাড়ে তিন ঘণ্টা অবস্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সব দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে ছাত্রীরা তাদের অবস্থান থেকে সরে আসেন।
বুধবার রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলের সামনে অবস্থান নেন ছাত্রীরা। সাড়ে ৯টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সবাই অবস্থান নেন। সাড়ে তিন ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সব দাবি মেনে ছাত্রীদের চুক্তিপত্রে সই করেন। এরপর সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যান।
নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান বলেন, ‘আমি শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো মেনে নিয়েছি। তাদের দাবিপত্রে প্রশাসনের পক্ষে স্বাক্ষর করে দিয়েছি। আমার স্বাক্ষরের পর ছাত্রীরা হলে ফিরে গেছেন। কর্তৃপক্ষ তাদের দাবি মেনে না নিলে প্রক্টরিয়াল বডি পদত্যাগ করবে।’
শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবি হলো
১. বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। হল থেকে বের হওয়া, প্রবেশ এবং মেডিক্যালে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সময়সীমা বেঁধে দেয়া যাবে না।
২. নতুন কার্যকরী যৌন নিপীড়ন সেল গঠন করতে হবে। সেলে বিচার কার্যকর করতে সর্বোচ্চ সময়সীমা বাঁধা থাকবে এক মাস এবং সেটি না হলে সেল স্বয়ং শাস্তির বিধান গঠনতন্ত্রে থাকবে।
৩. ৪ কার্যদিবসের মধ্যে যৌন নিপীড়ন সেলে চলমান সব কেইসের বিচার করতে হবে।
৪. ৪ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আশরাফী নিতু বলেন, ‘আমরা যে চারটি দাবি দিয়েছি চার কার্যদিবসের মধ্যে যদি না মেনে নেয়, তাহলে প্রক্টরিয়াল বডি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন। আর সেটি না করলে আমরা তাদের পদ থেকে নামাব।’
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী তাসফিয়া নোলক বলেন, ‘প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটছে। এখানে কেউ কারো প্ররোচনায় আসেনি। এখানে সবাই নিজের দাবিতে এসেছে। সবাই নিরাপত্তা চায়। শিক্ষার্থীদের ১০টার পর হলে বন্ধ করে রাখা কোনো সমাধান না। আমাদের সমাধান হচ্ছে ক্যাম্পাসকে নিরাপদ করা।’
সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ফারজানা সনিয়া বলেন, ‘ক্যাম্পাসে সান্ধ্য আইন করে ১০টার মধ্যে হলে ঢুকানো আসলে ভুক্তভোগীদের নিয়ন্ত্রণ করা। এক বছর আগে আমাদের বান্ধবীর সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে তার বিচার হলে এ রকম ঘটনা (যৌন নিপীড়ন) বারবার ঘটত না।’
এর আগে বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে অজ্ঞাতপরিচয় ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
এজাহারে বলা হয়, গত ১৭ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওই ছাত্রী ও তার বন্ধু প্রীতিলতা হলে ফেরার সময় কাছের একটি সড়কে কয়েক যুবক তাদের পথরোধ করে। তাদের মারধর করে বোটানিক্যাল গার্ডেনের পেছনে ঝোপে নিয়ে যায়।
এ সময় ওই ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে মোবাইল ফোনে ভিডিও করে এবং সেই ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়।
ছাত্রীর বন্ধু এর প্রতিবাদ করলে তাদের দুজনের ওপর নির্যাতন করা হয়। তাদের মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনতাই করে পালিয়ে যায় যুবকরা।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছাত্রীদের আবাসিক হলে রাত ১০টার মধ্যে প্রবেশের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেন ছাত্রীরা। তারা এমন সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়াসহ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
আরও পড়ুন:আফগানিস্তানের কাবুলে বিস্ফোরণে মৃত বেড়ে হয়েছে ২১। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩৩ জন। কাবুল পুলিশের মুখপাত্র খালিদ জাদরান এসব জানিয়েছেন।
মাগরিবের নামাজের সময় বুধবার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে মসজিদের ইমাম আমির মুহাম্মদ কাবুলিও আছেন বলে জানা গেছে। নিরাপত্তা বাহিনী এখন বিস্ফোরণের স্থানটি সিল করে দিয়েছে।
হামলায় কারা জড়িত তা এখনও নিশ্চিত না। তবে এক সপ্তাহ আগে রাজধানীতে আত্মঘাতী বোমা হামলায় এক তালেবান নেতাকে হত্যা করে আইএস।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, তারা শক্তিশালী বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। বিস্ফোরণে আশেপাশের ভবনের জানালা ভেঙে গেছে।
এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘অনেক মানুষ মারা গেছে। এমনকি অনেককে মসজিদের জানালা দিয়ে ফেলে দেয়া হয়েছে।’
শহরের প্রধান হাসপাতাল পরিচালনাকারী মেডিক্যাল চেরেটি ইমার্জেন্সির প্রধান স্টেফানো সোজা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে শিশুসহ ৩৫ জনের চিকিৎসা চলছে তাদের হাসপাতালে।
তিনি বলেন, ‘গুরুত্ব বিবেচনায় রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে। আঘাতগুলো বিস্ফোরণের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই মৃতদেহের ভেতরে শেল ছিল, অনেকের শরীরে পোড়া দাগ ছিল।’
মসজিদের ভেতরে বিস্ফোরণ হয়েছে বলে ধারণা স্টেফানোর। তিনি বলেন, ‘সম্ভবত নামাজের সময় কেউ বিস্ফোরক নিয়ে মসজিদে ঢুকেছিল। ভিড়ের মধ্যে হামলাকারী ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসটি সক্রিয় করে। এতে হামলাকারীর কাছাকাছি থাকা ব্যক্তিরা মারা যায়। দূরে যারা ছিলেন তারা আহত হয়েছেন।’
তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদের বরাতে বার্তা সংস্থা এপির বলছে, এ ধরনের অপরাধীদের শিগগিরই বিচারের আওতায় আনা হবে, কঠিন সাজা দেয়া হবে।’
এদিকে, তালেবানকে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে ‘দৃঢ় পদক্ষেপ’ নিতে এবং দুর্বল সম্প্রদায়কে বাড়তি নিরাপত্তা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে আফগানিস্তানে জাতিসংঘের মিশন (উনামা)।
উনামা বলছে, এ হামলাটি ধারাবাহিক বোমা হামলার সবশেষ ঘটনা। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আড়াইশোর বেশি মানুষকে হতাহত করা হয়েছে বোমা হামলায়, যা গত বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ মাসিক বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা।’
আরও পড়ুন:ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক সালমান রুশদির ওপর হামলা চালানো হাদি মাতার লেখকের বিতর্কিত উপন্যাস দ্য স্যাটানিক ভার্সেসের কেবল দুই পৃষ্ঠা পড়েছিলেন। হামলার পর লেখকের বেঁচে যাওয়ায় তিনি ভীষণ অবাক হয়েছেন। কারাগার থেকে নিউ ইয়র্ক পোস্টকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব জানান ২৪ বছরের হাদি।
তিনি বলেন, “বইটির ‘পৃষ্ঠা দুয়েক’ পড়েছিলাম। উনাকে আমি পছন্দ করি না। আমার মনে হয় না সে খুব ভালো মানুষ। তিনি এমন একজন যিনি ইসলামকে আক্রমণ করেছেন, তাদের বিশ্বাস এবং মূল্যবোধকে আঘাত করেছেন। হামলা থেকে বেঁচে গেছেন শুনে অবাক হয়েছি।”
নিউ ইয়র্কের শাটোকোয়া ইনস্টিটিউশনে গত সপ্তাহে বক্তব্য রাখার সময় রুশদির ওপর ছুরি হামলা চালান হাদি মাতার। ঘটনাস্থল থেকেই আটক করা হয় হাদিকে। শাটোকোয়া কাউন্টি জেলে বন্দী আছেন তিনি।
১৯৮৮ সালে রুশদির বিখ্যাত এবং বিতর্কিত উপন্যাস দ্য স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশিত হয়। এটির বিষয়বস্তুতে ক্ষুব্ধ হয় মুসলিম বিশ্ব। ইরানের নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি ১৯৮৯ সালে রুশদির মৃত্যুদণ্ডের জন্য ফতোয়া জারি করেন।
হামলার সঙ্গে আশির দশকে ইরানের জারি করা ফতোয়ার কোনো যোগসূত্র আছে কি না, তা নিশ্চিত করেননি হাদি। তিনি বলেন, ‘আমি আয়াতুল্লাহকে সম্মান করি। আমি মনে করি তিনি একজন মহান ব্যক্তি।’
চলতি সপ্তাহের শুরুতে হাদির মা বলেছিলেন, তিনি ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেছেন।
‘আমি তার সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করেছি। তাকে আমার কিছুই বলার নেই।’
হামলায় রুশদির লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি এক হাত ও চোখের স্নায়ু বিচ্ছিন্ন গেছে। শনিবার তাকে ভেন্টিলেটর থেকে সরিয়ে নেয়া হয়।
রুশদির পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রাণঘাতী হামলার পরও বুকার পুরস্কার বিজয়ী লেখক তার সহজাত ও অদম্য রসবোধ হারাননি।
আরও পড়ুন:উত্তরায় বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পের বক্স গার্ডার দুর্ঘটনায় ঠিকাদারি কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আপত্তি করবে না চীন।
এই দুর্ঘটনার জন্য মন্ত্রণালয়ের তদন্তে চীনা ঠিকাদারি কোম্পানির দায়ের বিষয়টি উঠে আসার পর ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং এ কথা জানান।
বৃহস্পতিবার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে তিনি এ কথা বলেন বলে মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ‘সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার সকালে চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং গত ১৫ আগস্ট উত্তরায় ঢাকা বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান। তিনি আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
‘এ সময়ে চীনের মান্যবর রাষ্ট্রদূত গার্ডার দুর্ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো আপত্তি থাকবে না বলে জানান।’
গাজীপুর থেকে ঢাকার বিমানবন্দর মোড় পর্যন্ত বিরতিহীন বাস রুট চালু করতে বিআরটি প্রকল্পের এই কাজটি শুরু হয়েছে ২০১২ সালে। শেষ করার কথা ২০১৭ সালে। তবে নানা জটিলতায় বারবার পিছিয়েছে কাজ। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এই কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রকল্পটি চীনের জিয়াংশু প্রভিন্সিয়াল ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড ও গেজুবা গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড বাস্তবায়ন করছে।
দুর্ঘটনার পরপরই ঠিকাদারি কোম্পানির অবহেলার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি না করে ক্রেন দিয়ে ৭০ টন ওজনের বক্স গার্ডারটি তোলা হচ্ছিল। সেটি একটি গাড়িতে তোলার সময় প্রাইভেট কারকে চাপা দেয়। এতে নিহত হয় পাঁচজন।
ঠিকাদারি কোম্পানির অবহেলার আরও নমুনার কথা জানিয়েছে র্যাব। যিনি ক্রেনটি অপারেট করছিলেন, তিনি এর চালক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত নন। তার সহকারী সেটি অপারেট করছিলেন।
বিআরটি প্রকল্পের থার্ড পার্টি হিসেবে বিল্ড ট্রেড ইঞ্জিনিয়ার লিমিটেড থেকে মাসিক ভাড়ার চুক্তিতে ক্রেনটি আনা হয়। ক্রেনটি ১৯৯৬-৯৭ সাল থেকে চলছে। প্রথমে ক্রেনটির সক্ষমতা ৮০ টন ছিল। পরে ধীরে ধীরে ক্রেনটির সক্ষমতা কমে যায়। সর্বশেষ ক্রেনটি দিয়ে ৪৫ থেকে ৫০ টন ভর শিফট করা সহজ ছিল। কিন্তু এই ক্রেন দিয়ে ৬০ থেকে ৭০ টন ওজনের গার্ডারটি শিফট করা হচ্ছিল।
আবার যে চালককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তার ভারী গাড়ি চালানোর অনুমোদন নেই। তার লাইসেন্স হালকা যানের।
এত ভারী গার্ডার উঠানোর সময় ক্রেনে কাউন্টার ওয়েট রাখার দরকার ছিল। তাও রাখেনি দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা। ফলে ক্রেনের বাড়তি ওজন বহন করা সম্ভব হয়নি।
বিআরটি প্রকল্পের অবহেলায় এর আগেও ঝরেছে প্রাণ। কিন্তু ঠিকাদারি কোম্পানি এর পরেও পর্যাপ্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়নি।
গত ১৫ জুলাই গাজীপুরে একই প্রকল্পের ‘লঞ্চিং গার্ডার’ চাপায় এক নিরাপত্তারক্ষী নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় এক শ্রমিক ও একজন পথচারী আহত হন।
চীনা রাষ্ট্রদূত সড়ক সচিবকে জানান, এই দুর্ঘটনার তদন্তে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল তার দেশ থেকে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। প্রতিনিধিদলটি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটিকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব বলেন, ‘এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় সমগ্র জাতি ব্যথিত।’
যেকোনো উন্নয়নকাজে নিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটিতে আমরা বুয়েটের একজন বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্ত করেছি।’
আগামী সাত দিনের মধ্যে কমিটিকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মন্ত্রণালয়ের তদন্তে দায় ঠিকাদারি কোম্পানির
দুর্ঘটনার পর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় যে তদন্ত কমিটি করে, তারা ঠিকাদারি কোম্পানিকে দায় দিয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘ছুটির দিনে ঠিকাদারের কাজ করার কথা না। তারা কোনো রকম নিরাপত্তাব্যবস্থা না নিয়েই কাজ করছিল। এভাবে উন্মুক্ত রেখে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। নিয়মানুযায়ী কাজ করতে হলে আগের দিন তারা একটি ওয়ার্ক প্ল্যান দেবে, তাদের কতজন লোক থাকবে, কতগুলো ক্রেন লাগানো হবে, কখন পুলিশকে জানাবে- এসব থাকে।’
‘ঠিকাদার এগুলো না করেই কাজটি করেছে। কোনো অবস্থাতেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা না করে এ ধরনের কাজ করার কোনো সুযোগ নেই।’
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামে আদালত প্রাঙ্গণে দুই সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় দুই আইনজীবীর নামে মামলা হয়েছে। এতে অজ্ঞাত আরও ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
কোতোয়ালি থানায় বুধবার রাত ১টার দিকে মামলাটি করেন হামলার শিকার সাংবাদিক আল আমিন শিকদার।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এজাহারনামীয় দুই আসামি হলেন, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার পূর্ব কলাউজান গ্রামের সাহেদুল হক ও আধুনগর আকতারিয়া পাড়া গ্রামের ইসহাক আহমেদ।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সংবাদ সংগ্রহের জন্য বুধবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে গাড়ি নিয়ে চট্টগ্রাম আদালতে যাচ্ছিলেন যমুনা টেলিভিশনের প্রতিবেদক আল আমিন শিকদার ও ক্যামেরাপার্সন আসাদুজ্জামান লিমন। আদালত প্রাঙ্গণে যাওয়ার সময় গাড়ির হর্ন বাজালে কয়েকজন আইনজীবী ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে টেনেহিঁচড়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকেন তাদের।
এ সময় হত্যার উদ্দেশ্যে আল আমিনের গলা টিপে ধরেন তারা। মারধরের এ ভিডিও ফুটেজ ধারণ করার সময় ক্যামেরাপার্সন লিমনকেও বেধড়ক মারধর করা হয়। ভবিষ্যতে কোনো দিন কোর্ট বিল্ডিংয়ে আসার চেষ্টা করলে তাদের জানে মেরে ফেলার হুমকিও দেন আসামিরা।
আরও বলা হয়, মারধরকারীরা একপর্যায়ে ২ সাংবাদিকের পকেট থাকা দুটি স্মার্টফোন ও ৫ হাজার টাকা নিয়ে নেন। এরপর তাদের মারতে মারতে পুরাতন আইনজীবী ভবনের তৃতীয় তলায় নিয়ে যান। সেখানে একটি কক্ষে আটকে রেখে ফের মারধর করা হয় তাদের। এ সময় ভিডিও ক্যামেরার মেমোরি কার্ড ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন তারা। পরে খবর পেয়ে অন্য সাংবাদিকরা গিয়ে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মামলার এক নম্বর আসামি সাহেদুল হক। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ওনারা জোরে গাড়ির হর্ন দেয়ায় শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা হর্ন না দিতে বলেছিল; কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তারা আক্রমণাত্মক কথা বলতেছিল। একপর্যায়ে এটা নিয়ে কথা কাটাকাটি থেকে ইসহাক ভাইয়ের সঙ্গে একটু ধস্তাধস্তি হয়েছে। আমি তাদের আলাদা করে চলে গিয়েছিলাম। হামলার বিষয়টি সত্য না’
সিসিটিভি ফুটেজে আল আমিনের গলা চেপে ধরতে দেখা যাওয়ার ও দুই সাংবাদিককে পুরাতন আইনজীবী ভবনে নিয়ে মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি এগুলো জানি না, এ রকম কিছু হয়নি।’
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে ওসি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাতে আল আমিন একটি এজাহার দায়ের করেছেন, আমরা মামলাটি নিয়েছি। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
এদিকে ২ সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সামাবেশ ও মিছিল করেছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন।
আরও পড়ুন:‘আমাদের ফ্যাক্টরিতে লাখখানেক কেজি চা এক সপ্তাহ ধরে পড়ে আছে। শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে এগুলো প্রক্রিয়াজাতকরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে পাতাগুলো নষ্ট হচ্ছে। আর দুই-এক দিন এভাবে চললে এই পাতা থেকে আর চা হবে না। হলেও গুণগত মান খুব খারাপ হবে।’
চলমান শ্রমিক ধর্মঘটে চা উৎপাদনের ক্ষয়ক্ষতির বর্ণনা দিতে গিয়ে নিউজবাংলাকে এমনটি বলছিলেন আকিজ গ্রুপের মালিকানাধীন মৌলভীবাজারের বাহাদুরপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল জব্বার।
দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে ধর্মঘট পালন করছেন দেশের সব চা বাগানের শ্রমিকরা। এতে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে দেশের উৎপাদনশীল এই খাতে। ভরা মৌসুমে শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে বেশির ভাগ বাগানের ফ্যাক্টরিতেই নষ্ট হচ্ছে তোলা পাতা। আবার বাগানের কচি পাতা বয়স্ক হয়ে পড়ছে। এতে দেশে উৎপাদন হ্রাসেরই শঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০২১ সালে দেশে রেকর্ড ৯ কোটি ৬৫ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়। এর আগে সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল ২০১৯ সালে। সে বছর ৯ কোটি ৬০ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছিল। তবে এবার তাতে ধস নামার শঙ্কা বাগান মালিক ও কর্মকর্তাদের। ধর্মঘটের কারণে বাগানগুলোতে প্রতিদিন ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
চা বাগানের শ্রমিকরা বর্তমানে দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি পান। মজুরি বাড়িয়ে তা ৩০০ টাকা করার দাবিতে ৮ আগস্ট থেকে আন্দোলনে নামেন তারা। প্রথমে প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন। দাবি মেনে না নেয়ায় গত শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন। এতে বন্ধ হয়ে পড়েছে দেশের ১৬৬টি চা বাগানের উৎপাদন ও পাতা উত্তোলন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শ্রমিকরা।
উত্তোলিত চা নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় মঙ্গলবার কারখানা চালু করতে যান মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ধামাই চা বাগানের কর্মকর্তা। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা তা তালা দিয়ে রাখেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের মুক্ত করেন।
এই বাগানের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শেখ কাজল মাহমুদ বলেন, ‘শ্রমিকদের আন্দোলনে আমাদের কোনো বিরোধিতা নেই। কিন্তু ফ্যাক্টরিতে বাগানের অনেক পাতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই পাতা বিক্রি করে তাদের ও আমাদের মজুরি দেয়া হয়। শ্রমিকরা যেহেতু আপাতত কাজ করছে না, তাই আমরা সবাই মিলে ফ্যাক্টরি চালু করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তারা এসে আমাদের তালা মেরে দেয়।’
বৃষ্টির সময়কে চায়ের উৎপাদন মৌসুম ধরা হয়। ফলে এখন চায়ের ভরা মৌসুম। এই সময়ে ধর্মঘটের কারণে সব বাগানের কারখানায় নষ্ট হচ্ছে উত্তোলিত চা। প্রায় এক কোটি কেজি চা সব বাগানের ফ্যাক্টরিতে জমা পড়ে আছে বলে দাবি বাংলাদেশ চা সংসদের।
ধর্মঘটের কারণে ফ্যাক্টরির চা-পাতা নষ্ট হওয়ার অভিযোগে মঙ্গলবার বিভিন্ন বাগানের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
মৌলভীবাজারের ডিনস্টন (খেজুরী ছড়া) চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক খালিদ হাসান রুমী মঙ্গলবার রাতে শ্রীমঙ্গল থানায় একটি জিডি করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে ৯৯২০০ কেজি চা পাতা প্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব হয়নি। এই পরিমাণ পাতা থেকে ২২ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হতো। যার বাজারমূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা।
১ লাখ ৫৩ হাজার কেজি চা পাতা নষ্ট হওয়ার অভিযোগ এনে একই থানায় জিডি করেছেন রাজঘাট চা বাগানের ব্যবস্থাপক মাঈনুল এহছান।
ফিনলে চা কোম্পানির চিফ অপারেটিং অফিসার তাহসিন আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন বাগানে ৩৫ কোটি টাকার চা-পাতা নষ্ট হয়েছে। এগুলো থেকে আর ভালো মানের চা হবে না।’
এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কয়েকটি বাগানের পক্ষ থেকে কাঁচা চা-পাতা নষ্টের অভিযোগে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। আমরা প্রতিটি কারখানা সরেজমিনে পরিদর্শন করে তার সত্যতা নিশ্চিত করব।’
কেবল ফ্যাক্টরির চা-পাতা নয়, বাগানের পাতাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জানিয়ে বাংলাদেশ চা সংসদের সিলেট বিভাগের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চায়ের জন্য মূলত কচি পাতাগুলো তোলা হয়। সব বাগানেই কচি পাতা বয়স্ক হয়ে যাচ্ছে। এগুলো থেকে আর চা হবে না। এ ছাড়া বৃষ্টি শেষ হয়ে গেলে গাছে আর কচি পাতা গজাবে না। ফলে একদিকে যেমন উৎপাদনে ধস নামবে, অন্যদিকে চায়ের গুণগত মানও হ্রাস পাবে।’
শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে সব বাগান মিলিয়ে প্রতিদিন ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
প্রতি দুই বছর পর পর বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদ ও শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে চা শ্রমিকদের মজুরি পুনর্নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে চা শ্রমিকদের মজুরি ১২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
শ্রমিক নেতাদের অভিযোগ, দুই বছর পেরিয়ে গেলেও মালিকপক্ষ শ্রমিকদের মজুরি বাড়াতে সম্মত হচ্ছে না।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে জানিয়ে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল নিউজবাংলাকে বলেন, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। মাত্র ১২০ টাকায় এই বাজারে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। আমরা না বাঁচলে বাগান মালিকরা উৎপাদন করবেন কিভাবে। তাই বাগান মালিক ও চা শিল্পের স্বার্থেই শ্রমিকদের বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন। তাদের ন্যূনতম বেঁচে থাকার মতো মজুরি নির্ধারণ করা প্রয়োজন।’
শ্রম দপ্তরের শ্রীমঙ্গল কার্যালয়ের উপপরিচালক নাহিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই ভরা মৌসুমে ধর্মঘটের কারণে মালিক-শ্রমিক উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পুরো চাশিল্পই ক্ষতির মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যে আমরা দুই দফা তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। ১৬ আগস্ট শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালকও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আমরা তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘২৩ আগস্ট মালিক ও শ্রমিক পক্ষের নেতাদের নিয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বসবেন। আশা করি, এতে একটা সমাধান হবে। ধর্মঘট প্রত্যাহার করে ওই বৈঠকে যোগ দেয়ার জন্য আমি শ্রমিক নেতাদের অনুরোধ করছি।’
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে লেভেল ক্রসিংয়ে উঠে যাওয়া মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় ১৩ জন নিহতের ঘটনায় গেটম্যান ও নিহত মাইক্রোচালকের দায় খুঁজে পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
মঙ্গলবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনসার আলীকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটি।
প্রতিবেদনে লেভেল ক্রসিংয়ের দায়িত্বে থাকা গেটম্যান সাদ্দাম হোসেন ও নিহত মাইক্রোচালক গোলাম মোস্তফা নিরুকে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করে রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপক আবুল কালামের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়।
বুধবার আবুল কালাম নিজেই নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি। গেটম্যান সাদ্দামের ঘটনাস্থলে অনুপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে মামলায় সে আসামি হয়ে কারাগারে আছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেয়া হবে। আর মাইক্রোবাসচালক তো মারাই গেছে।’
২৯ জুলাই আরঅ্যান্ডজে কোচিং সেন্টার থেকে খইয়াছড়া ঝরনায় ঘুরতে যান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ফেরার পথে মীরসরাইয়ের বড়তাকিয়া রেলস্টেশন এলাকায় অরক্ষিত একটি লেভেল ক্রসিংয়ে পর্যটকবাহী মাইক্রোটিকে ধাক্কা দেয়।
এতে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান ১১ জন। পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান দুজন। এ ঘটনায় আহত তিনজন এখনও চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানায় মামলা করেন সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) জহিরুল ইসলাম। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
ঘটনার সময় সাদ্দাম হোসেন লেভলে ক্রসিংয়ে ছিলেন কি না এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। দুর্ঘটনার পর প্রাণহানির পুরো দায় মাইক্রোচালকের বলে দাবি করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
তখন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেখানে রাস্তায় ক্রসিংয়ে সাদ্দাম নামে একজন গেটকিপারের দায়িত্বে ছিলেন। তার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তিনি দাবি করেছেন যে সময়মতোই ক্রসিংবার ফেলেছিলেন। তার কথা অমান্য করে মাইক্রোবাসের চালক বারটি তুলে রেললাইনে গাড়ি তুলে দেয়। এতেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।’
পরে রেলওয়ে কর্মকর্তার এ দাবি সত্য নয় দাবি করেন বেঁচে ফেরা দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোর যাত্রী জুনায়েদ কায়সার ইমন।
ট্রেনের ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া মাইক্রোর পেছনের সারিতে ছিলেন হাটহাজারীর কলেজছাত্র জুনায়েদ। তিনি জানান, ক্রসিংয়ে কোনো বার ছিল না। এ কারণে চালক গাড়ি টেনে নেন রেললাইনে।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেছিলেন, ‘ট্রেনের কোনো ব্যারিকেড ছিল না। ট্রেন যখন আসছিল তখন বৃষ্টি পড়ছিল। আমরা বুঝতে পারিনি যে ট্রেন আসছে। ড্রাইভার গাড়ি চালানোর সঙ্গে সঙ্গে ট্রেন এসে মেরে দিয়েছে। খেয়ালও করিনি। নিমিষেই ট্রেন চলে আসছে। আমি পড়ে গেছি পেছনে। কীভাবে পড়লাম, কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি।’
এ ঘটনা তদন্তে পরে দুটি কমিটি গঠন করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে একটি কমিটি গেটম্যান ও মাইক্রোবাসের চালককে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করে প্রতিবেদন দিয়েছে।
আরও পড়ুন:‘পাঁচ মাস, প্রায় পাঁচ মাসের মতো অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছিল। ভয়ভীতি নিয়ে দিন কাটছিল। এখনও ভয়ভীতি আছে, ভয়ভীতি যাবে না। তবে এখন আমি মুক্ত।’
ধর্ম অবমাননার মামলা থেকে অব্যাহতির পর কথাগুলো বলেছেন মুন্সীগঞ্জের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল।
জেলা আমলি আদালত-১-এর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জশিতা ইসলাম শুনানি শেষে মঙ্গলবার মামলা থেকে হৃদয় মণ্ডলকে অব্যাহতির মৌখিক আদেশ দেন। বুধবার সে আদেশপত্রে স্বাক্ষর করেন বিচারক।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালত পুলিশের জিআরও মো. জসিমউদ্দিন।
এ খবর শুনে শিক্ষক বলেন, ‘ভয়টা রইল না যে আবার কারাগারে যেতে হবে অথবা আবার মাসে মাসে হাজিরা দিতে হবে। এটার থেকে তো মুক্তি পাইলাম।
‘অনেক শিক্ষকই চাইছিলেন আমি এই স্কুল থেকে চলে যাই। স্কুলের শিক্ষকরা তো চাইছিলেন এই সমস্যাটা সৃষ্টি হোক। তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সব সময় আমার ভালো সম্পর্ক ছিল, এখনও আছে।’
হৃদয় মণ্ডলের আইনজীবী শাহীন মোহাম্মদ আমানউল্লাহ বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার মুন্সীগঞ্জ আমলি আদালত-১-এর বিচারক জশিতা ইসলাম অব্যাহতির আদেশ দেন। তবে মৌখিক ঘোষণার পর আজ আদেশপত্রে স্বাক্ষর করেছেন বিচারক। গত ৮ আগস্ট পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়।’
যা ঘটেছিল
মুন্সীগঞ্জ সদরের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন হৃদয় মণ্ডল।
তিনি গত ২০ মার্চ দশম শ্রেণির ক্লাসে বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। ধর্মকে একটি ‘বিশ্বাস’ এবং বিজ্ঞানকে ‘প্রমাণভিত্তিক জ্ঞান’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। গোপনে তার অডিও ধারণ করে এক শিক্ষার্থী।
ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদের কাছে ওই শিক্ষকের নামে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ দেয়। প্রধান শিক্ষক কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে তিন দিনের মধ্যে শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে জবাব দিতে বলেন। তবে এর আগেই ২২ মার্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা জোটবদ্ধ হয়ে হৃদয় মণ্ডলের শাস্তির দাবিতে স্কুলে মিছিল বের করে।
বিদ্যালয় চত্বরের পাশের রিকাবীবাজার এলাকাতেও মিছিল হয়। প্রধান শিক্ষক পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের খবর দেন। স্কুলে গিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। তবে ভেস্তে যায় সেই আলোচনা। একপর্যায়ে হৃদয় মণ্ডলকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর রাতেই হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা করেন স্কুল সহকারী মো. আসাদ।
১৯ দিন কারাভোগের পর ১০ এপ্রিল রোববার জামিনে মুক্ত হন হৃদয় মণ্ডল। তাকে ৫ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন দেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোতাহারাত আক্তার ভূঁইয়া।
কী কারণে এই অভিযোগ তোলা হতে পারে- এমন প্রশ্নের উত্তরে সেদিন নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি বলতে পারছি না কী ঘটছে, স্কুলে অভ্যন্তরীণ রেষারেষি থেকেও হতে পারে, প্রাইভেট পড়ানো নিয়েও হতে পারে।’
নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বানও জানান তিনি। বলেন, যাদের অভিযোগের কারণে তিনি কারাভোগ করেছেন, তাদের ওপর তার কোনো ক্ষোভ নেই।
গত ১১ এপ্রিল সরকারি হরগঙ্গা কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল হাই তালুকদারকে প্রধান করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা বোর্ড। তদন্ত শেষে হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি বলে ২০ এপ্রিল প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য