শিশুদের জন্য পাঠ্যপুস্তক সহজ ও প্রাঞ্জলভাবে লেখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আমিনুল ইসলাম খান।
মঙ্গলবার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড আয়োজিত প্রথম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষক সহায়িকার যৌক্তিক মূল্যায়ন বিষয়ে কর্মশালার উদ্বোধনী অধিবেশনে তিনি এ আহ্বান জানান।
সচিব বলেন, ‘প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই এমনভাবে লিখতে হবে, যাতে শিশু মনে শিক্ষা ভীতি তৈরি না করে প্রীতির ভাব জাগাবে। পাঠ্যপুস্তক হতে হবে সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল। তাহলে তা শিশুকে আনন্দিত করবে, বইয়ের পাতা উল্টাতে তাগিদ সৃষ্টি করবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার নতুন শিক্ষানীতির আলোকে পুরনো ধারার শিক্ষার খোলনলচে পাল্টে ফেলছে। এমন এক শিক্ষার বীজ বপন করা হচ্ছে, যা শিক্ষার্থীর মস্তিষ্ক থেকে মুখস্থ বিদ্যার বোঝা ঝেড়ে ফলে তাদের কৌতূহল, জিজ্ঞাসা, অনুসন্ধান ও শক্তি জাগাবে।’
এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহিবুর রহমান, পরিচালক ড. উত্তম কুমার দাশ, এনসিটিবির সদস্য মো. মশিউজ্জামান ও প্রফেসর একেএম রিয়াজুল হাসান, সচিব নাজমা আখতারসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
মাগুরার শালিখা উপজেলার রায়জাদাপুর আদাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৩ সালে। এত বছরেও নতুন ভবন না হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিতেই চলছিল পাঠদান।
ভবনটির বারান্দার ছাদ গত মঙ্গলবার ধসে পড়েছে। তবে ঘটনাটি সন্ধ্যায় ঘটেছে বলে কেউ হতাহত হয়নি। এরপর থেকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে।
সরকারি বিদ্যালয়টির একমাত্র ভবন ছিল এটি। চার কক্ষের ভবনটি ১৯৯৫ সালে নির্মাণ করা হয় বলে স্কুলসূত্রে জানা গেছে।
সরেজমিন বৃহস্পতিবার দেখা গেছে, ধসে যাওয়া ছাদের অংশ বারান্দায় পড়ে আছে। স্কুলটি দড়ি দিয়ে ঘেরাও করে লাল নিশানা টানিয়ে দেয়া হয়েছে। বারান্দার ছাদ ধসে পড়ার পর পাশাপাশি চারটি কক্ষের সবকটির ছাদের আস্তর খসে পড়েছে, বেরিয়ে গেছে রড।
স্থানীয় জালাল মিয়া বলেন, ‘ভাগ্য ভালো যে দিনের বেলায় এ ঘটনা (ছাদ ধসে পড়া) ঘটেনি... দিনে ঘটলে ছাদের নিচে চাপা পড়ে অনেকে মারা যেতে পারত।’
স্কুলের সামনে টহল দিতে দেখা যায় সহকারী শিক্ষক সুদিপ্ত বিশ্বাস ও মসিউর রহমানকে।
তারা নিউজবাংলাকে জানান, মঙ্গলবার স্কুল বন্ধ ছিল। সন্ধ্যার দিকে স্থানীয় ছেলেরা ভবনের বারান্দায় বসে সাধারণত আড্ডা দেয়। তবে মঙ্গলবার কেউই ছিল না। এ কারণে কেউ হতাহত হয়নি।
সুদিপ্ত বলেন, ‘পরিত্যক্ত ঘোষণার পরও আমরা ক্লাস নিয়ে গেছি। কারণ আর কোনো ভবন নেই। কিছুদিন আগে শ্রেণিকক্ষের ছাদ খসে পড়লে ক্লাস নেয়া বন্ধ করা হয়। কিন্তু আমরা শিক্ষকরা সেখানে অফিসসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করি।
‘প্রায় ১০০ শিক্ষার্থীর জীবনে কী নেমে আসত যদি ছাদটি স্কুলের সময় ধসে পড়ত? ভাবতেই আমাদের ভয় লাগছে। তাই কেউ যেন ভবনে ঢুকতে না পারে সে জন্য পাহারা দেয়া লাগছে।’
স্কুলের প্রধান শিক্ষক তপতী রায় বলেন, ‘প্রতিনিয়ত আমাদের ছেলেমেয়েদের ঝুঁকি নিয়ে পড়াতে হয়। আমাদের এই বিদ্যালয়ের নতুন বিল্ডিংয়ের জন্য দরখাস্ত দিয়েছিলাম এমপির ডিও লেটার সহকারে। কাগজে-কলমে আমাদের বিল্ডিংটি এসেছে। কয়েকবার মাটিও পরীক্ষা করে নিয়ে গেছে। অথচ আজও ভবনটি করা হয়নি।
‘কাগজে-কলমে যেহেতু এসেছে তাহলে ভবনটি গেল কোথায়? জরাজীর্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তালিকায় (জিপিএস) ১৪টি বিদ্যালয়ের নাম আছে... সব স্কুলের নতুন ভবন নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু রায়জাদাপুর আদাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি হয়নি।’
বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘স্কুলে ছেলেমেয়েদের ঝুঁকির মধ্য দিয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে। দুইটা শেডে কীভাবে ১০০ ছেলেমেয়ে পড়বে? নতুন ভবনের মাটি পরীক্ষা করে নিয়ে গেছে, তারপর কী কারণে ভবনটি নির্মাণে দেরি হচ্ছে আমার জানা নেই।’
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আকবর হোসেন বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ভবনধসের বিষয়টি আমি জেনেছি। পুরোনো ভবনটি ২০১৩ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে কোনো ক্লাস হয় না। ক্লাস নেয়ার জন্য সেখানে দুইটা শেড করে দেয়া হয়েছে।
‘২০১৬ সালে নতুন ভবন স্থাপনের নোটিশ এসেছে। কিন্তু কেন এখনও ভবনটি নির্মাণ হয়নি তা আমি বলতে পারব না। ভবনের মাটি পরীক্ষা করার জন্য প্রকৌশলীকে বলা হয়েছিল। তিনি পরীক্ষাও করেছেন, কিন্তু তারপর কী হয়েছে জানি না।’
উপজেলা প্রকৌশলী শোয়েব মোহম্মদ বলেন, ‘বিদ্যালয়ের মাটি পরীক্ষা করে আমরা রিপোর্ট ঢাকায় পাঠিয়েছি। কিন্তু ঢাকা থেকে আমাদের কোনো নোটিশ আসেনি। যার ফলে ভবনটি এখনও নির্মাণ হয়নি।’
আরও পড়ুন:পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ভাষা শিক্ষা অ্যাপ ডুয়োলিঙ্গো তাদের প্ল্যাটফর্মে বাংলাভাষীদের জন্য প্রথমবারের মতো চালু করল ইংরেজি ভাষা শিক্ষা। এই অ্যাপ বাংলায় ব্যবহার করে সহজে ইংরেজি শেখা যাবে।
বাংলাদেশসহ পৃথিবীর যে কোনো বাংলাভাষী মানুষ এখন থেকে ডুয়োলিঙ্গো অ্যাপে বিনামূল্যে ইংরেজি শিখতে পারবেন। অ্যাপটি আইওএস, অ্যান্ড্রয়েড ও ওয়েব থেকে বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যাবে।
ডুয়োলিঙ্গোর লক্ষ্য হল, বাংলায় ইংরেজি শেখার এই অ্যাপ বাংলাদেশ ও ভারতে বসবাসকারী ৩০ কোটি বাংলাভাষীর কাছে সহজলভ্য করা। এর কোর্স ম্যাটেরিয়ালগুলো গ্যামিফায়েড ও ইন্টার-অ্যাক্টিভ, যা ব্যবহারকারীদের জন্য বেশ মজার হবে।
ডুয়োলিঙ্গোর মুখপাত্র করণদীপ সিং কাপানি বলেন, ‘এখানে ইংরেজি শেখাকে সাধারণত খুব কঠিন মনে করা হয়। কিন্তু অনেকেই এটা বোঝে না যে স্থানীয় উপমহাদেশীয় ভাষাগুলো অনেক বেশি জটিল। সে তুলনায় ইংরেজি ভাষা অনেক সহজ। ইন্টারনেট ও ডিজিটালাইজেশনের উত্তেরোত্তর চাহিদা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের বিশাল বাজারে আমাদের সেবা সম্প্রসারণের জন্য আমরা মুখিয়ে আছি। কেননা এভাবে আমরা আরও বেশি আঞ্চলিক ও স্থানীয় ভাষার সঙ্গে যুক্ত হতে পারব।’
ডুয়োলিঙ্গোতে ইংরেজি শেখা অনেকটা গেমস খেলার মতো। ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন ধাপে পয়েন্ট অর্জন করবেন ও পরবর্তী ধাপে পৌঁছাবেন। এর মাধ্যমে ইংরেজিটা শেখা হয়ে যায়। অধ্যায়গুলো ‘বাইট-সাইজড’, অর্থাৎ ছোট ছোট ধাপ। এগুলো সম্পাদন করতে আলাদা করে সময় বের করে পড়তে বসতে হবে না। দৈনন্দিন কাজের মাঝেই পড়া, লেখা, বলা ও শোনার কাজটি করা যাবে।
অ্যাপটিতে মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে শিক্ষাথীর্দের ব্যক্তিগত প্রয়োজন অনুসারে পাঠক্রম দেয়া হবে। এতে ব্যবহারকারীদের শেখানোর জন্য সবচেয়ে কার্যকরী উপায় A/B টেস্টিং মেথড ব্যবহার করা হয়েছে।
ম্যানেজিং কমিটি বিলুপ্ত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) হাতে ন্যস্ত করা হবে বলে যে খবরটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে, তা গুজব ও ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার দায়িত্ব আগের মতোই ম্যানেজিং কমিটির হাতে থাকছে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার এ কথা জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ম্যানেজিং কমিটি থাকবে না বলে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। আগের মতোই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করবে ম্যানেজিং কমিটি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডিসি ও ইউএনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করবে, এমন কোনো নির্দেশনা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হয়নি।
এতে উল্লেখ করা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ডিসি ও ইউএনওদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম মনিটর করার কথা বলা হয়েছে। আগেও ডিসি ও ইউএনওরা তাদের নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম মনিটরিং করার যে দায়িত্ব পালন করতেন, তা অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুন:গুচ্ছভুক্ত দেশের ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের বিজ্ঞান ‘বি’ ইউনিটের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় ৮২.২৫ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছেন দিগন্ত বিশ্বাস। অর্থনীতি নিয়ে লেখাপড়া করতে চান এই মেধাবী।
দিগন্ত বিশ্বাস দিনাজপুরের পার্বতীপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ ৫ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন। এছাড়া জ্ঞানাঙ্কুর পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৪ দশমিক ৪৪ জিপিএ নিয়ে এসএসসি পাস করেন দিগন্ত। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় তার কেন্দ্র ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে।
অনুভূতি প্রকাশ করে দিগন্ত বিশ্বাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম হওয়ার অনুভূতিটাই অন্যরকম, সবার অনুপ্রেরণাই আমার এই সফলতার মূল কারণ। সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় আমার এই সাফল্য।
‘আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও চান্স পেয়েছি। গুচ্ছতেও হয়েছে। এখন সময় যেহেতু আছে তাই ভাবনা-চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেব। দুটোর মধ্যে গুচ্ছে আমার অগ্রাধিকার থাকবে। আর গুচ্ছের ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অবশ্যই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। অর্থনীতি নিয়ে পড়তে চাই। ভবিষ্যতে অর্থনীতি নিয়ে কিছু করতে চাই।’
তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট দিগন্ত ছোটবেলা থেকেই দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বেড়ে উঠেছেন। তার বড় বোন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে লেখাপড়া শেষ করে আইনজীবী পেশায় কর্মরত। বড় ভাই রুয়েট থেকে পাস করে বর্তমানে আমেরিকায় পিএচডি করছেন। পাশাপাশি অ্যাপল-এ চাকরি করছেন। তার মা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা। বাবা প্রায় ১৪ বছর আগে মারা গেছেন। তিনিও শিক্ষক ছিলেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা (ম্যানিজিং) কমিটিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সুপারিশ করার বিধান অবৈধ ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। এর ফলে কমিটিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য কোনো সুপারিশ করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন রিটকারীর পক্ষের আইনজীবী।
মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেয় বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।
আদালতে রিটের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০০৮ ও ২০১৯ সালের দুটি প্রজ্ঞাপন রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে- প্রাথমিক স্কুল পরিচালনা কমিটিতে দুজন বিদ্ব্যৎসাহী (নারী ও পুরুষ) সদস্য থাকবেন, যাদের নাম প্রস্তাব করবেন স্থানীয় সংসদ সদস্য।’
এই আইনজীবী বলেন, ‘সাধারণত একজন সংসদ সদস্য যখন কারও নাম প্রস্তাব করেন তখন তাকেই সভাপতি করা হয়। তাহলে নির্বাচনের তো আর প্রয়োজন হয় না। এ কারণে ওই প্রজ্ঞাপনের ২(২) ধারা চ্যালেঞ্জ করে শহীদুল্লাহ নামে একজন অভিভাবক হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করেছিলেন।
‘আজ রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে রুলটিকে যথাযথ ঘোষণা করে আদালত রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আদালত বলেছেন, প্রাথমিক স্কুল পরিচালনা কমিটিতে কারা থাকবেন সে ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য পরামর্শ বা কারও নাম প্রস্তাব করতে পারবেন না।’
এর আগে ভিকারুনিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ম্যানেজিং কমিটির বিষয়ে আদালত যে আদেশ দিয়েছিল অনুরূপ আদেশ হয়েছে বলে জানান রিটকারীর পক্ষের এই আইনজীবী।
আরও পড়ুন:নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড ঢেলে সাজানো হয়েছে। পুরাতন ও বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে নতুন ট্রাস্ট্রি বোর্ড গঠন করে একটি আদেশ জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বিদায়ী ট্রাস্টি বোর্ড সদস্যদের অনেকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ লোপাট, জঙ্গিবাদ বিস্তারে ভূমিকা রাখা, যৌন হয়রানি, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এসেছে। এসব কারণে দেশের শীর্ষস্থানীয় এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন করা হলো।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুসারে এ বিশ্ববিদ্যালয়টির ১২ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ড নতুন করে গঠন করে মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করে।
এ আদেশের মাধ্যমে মূলত বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানায় বড় ধরনের পরিবর্তন এলো। দেশের কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এ ধরনের সিদ্ধান্ত এবারই প্রথম।
নতুন ট্রাস্টি বোর্ডে উদ্যোক্তা ট্রাস্টি হিসেবে আছেন টি কে গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এম এ কালাম, কনকর্ড ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের চেয়্যারম্যন ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর এস এম কামাল উদ্দিন, আবুল খায়ের গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবুল কাশেম, মিনহাজ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক ইয়াসমিন কামাল, বেক্সিমকো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান আহমেদ সোহেল ফসিউর রহমান ও ইউনাইটেড ফসফরাস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ফৌজিয়া নাজ।
নতুন ট্রাস্টি বোর্ডে শিক্ষাবিদ হিসেবে আছেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম। আর উদ্যোক্তা ট্রাস্টির উত্তরাধিকারী হিসেবে বোর্ডে আছেন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সিনিয়র ইকনোমিস্ট ড. জুনাইদ কামাল আহমাদ, ইনকনট্রেড লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান তানভীর হারুন, উদ্যোক্তা জাভেদ মুনির আহমেদ, ফাইজা জামিল ও শীমা আহমেদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি কেনায় অর্থ আত্মসাতের মামলায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির প্রভাবশালী চার ট্রাস্টি সদস্য এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান ও মোহাম্মদ শাহজাহানকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে আদালত। বর্তমানে তারা কারাগারে আছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে এক ধরনের অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা ব্যয়ের অনুমোদন করতে পারেন। অথচ প্রতি মাসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা বাবদ প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয় হয়।
সরকারি আদেশে বলা হয়েছে, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) কিছু সদস্য ও অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকালাপ, জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় জড়িত বলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্তে প্রমাণিত হয়, যা দেশের প্রচলিত আইনের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি ক্রয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিওটির চারজন সদস্য জমি কেনায় আর্থিক দুর্নীতি করায় দুদকের মামলায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে বর্তমানে কারাবন্দি রয়েছেন। তা ছাড়া ট্রেজারার নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারি নথি জালিয়াতির ঘটনায় একজন ট্রাস্ট্রির বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজে অন্তর্ভুক্ত থাকা সমীচীন নয় বলে মনে করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ পূর্ণাঙ্গভাবে পরিচালনা করতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা ও পরিচালনা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং সরকারের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সম্মিলিত সভার সুপারিশ বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর উদ্যোক্তা ট্রাস্টি ও উদ্যোক্তা ট্রাস্টির উত্তরাধিকারীদের সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ পুনর্গঠন করা হয়েছে।
সরকারের নতুন সিদ্ধান্তের ফলে দেশের অন্যতম শীর্ষ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ পর্ষদ থেকে বাদ পড়লেন প্রভাবশালী সদস্য আজিম উদ্দিন আহমেদ, রেহানা রহমান, এম এ কাশেম, মোহাম্মদ শাজাহান ও বেনজীর আহমেদ। তারা প্রত্যেকেই একাধিকবার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। এই পাঁচ সদস্য গত দেড় দশক ধরে ছিলেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকের ভূমিকায়। তাদের মেয়াদে জমি কেনার নামে অর্থ আত্মসাৎ, বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় গাড়ি ও ভ্রমণবিলাস, অবৈধভাবে মোটা অংকের সিটিং অ্যালাওয়েন্স গ্রহণের মতো বড় বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি ঘটে নর্থ সাউথে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টিদের অনিয়ম তদন্ত করতে গিয়ে জমি কেনা বাবদ কয়েকশ কোটি টাকার অনিয়ম খুঁজে পায় দুদক।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের জমি কেনায় অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে গত ৫ মে বিশ্ববিদ্যালয়টির পাঁচ ট্রাস্টিসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এ পাঁচ ট্রাস্টি হলেন- আজিম উদ্দিন আহমেদ, রেহানা রহমান, এম এ কাশেম, মোহাম্মদ শাহজাহান ও বেনজীর আহমেদ। আর বাকি একজন হলেন আশালয় হাউজিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালী।
এ মামলায় জামিন চেয়ে গত ২২ মে আদালতে হাজির হলে চার ট্রাস্টিকে শুরুতে পুলিশের হেফাজত এবং পরে কারাগারে পাঠায় আদালত। তারা এখনও জামিন পাননি।
১৯৯২ সালে দ্য নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ট্রাস্ট গঠনকালে এর সদস্য সংখ্যা ছিল ২৩। এর মধ্যে ১৬ জন ছিলেন ‘প্রতিষ্ঠাতা আজীবন সদস্য’। আর বাকি সাত জন সাধারণ সদস্য। ট্রাস্ট ডিড অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠাতা আজীবন সদস্যদের মৃত্যুর পর তাদের উত্তরসূরী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি হবেন। আর সাধারণ সদস্যদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর পর তাদের সদস্যপদ থাকবে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যমতে, বিওটিতে সদস্য সংখ্যা ১৫। এছাড়া উপাচার্য আইনি ক্ষমতাবলে বিওটির সদস্য।
ট্রাস্টি বোর্ডে আকস্মিক এ পরিবর্তন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান জামিল আহমেদের মোবাইল ফোনে কল করে এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন:দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে চা শ্রমিকদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’র ব্যানারে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা চা শ্রমিকদের দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি ব্যবস্থার তীব্র নিন্দা জানান এবং শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনকে ন্যায়সংগত উল্লেখ করে তাদের দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকা করার দাবি জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী শিপন বারেক বলেন, ‘বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের জীবন বিপন্ন। এখন দৈনিক ১২০ টাকা মজুরিতে একজন মানুষের সংসার কেমনে চলবে? এই টাকা দিয়ে তিনবেলা খাবারের জোগান হবে না। তা হলে কীভাবে বাকি চাহিদাগুলো তারা পূরণ করবে? আমাদের দাবি, ৩০০ টাকা নয়, তাদের যেন ৫০০ টাকা দৈনিক মজুরি দেয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই দেশ অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হোক। মালিকপক্ষ, শ্রমিকপক্ষ সবাই যাতে সন্তুষ্ট থাকে। এই চা শ্রমিকরা অনেক নির্যাতিত। কেউ যাতে কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয় এটিই আমাদের দাবি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী সুদিপ্ত সরকার বলেন, ‘সিলেটের সৌন্দর্য দেখে আমরা মুগ্ধ হই, সাত রঙের চা খেয়ে আমরা মুগ্ধ হই। কিন্তু তার পেছনের শ্রমিকদের দুঃখ-কষ্ট আমরা দেখি না। এটি আমাদের হৃদয়ে দুঃখের সঞ্চার করে।’
১২০ টাকা দিয়ে পরিবার চালানো সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এত কম টাকায় তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন কখনই সম্ভব নয়। আমরা তাদের বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী স্বপন নাইড়ু মালিকপক্ষকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘চা শ্রমিকরা তো মাত্র ৩০০ টাকা মজুরি চায়। এটি তো খুব বেশি না। তাদের দাবি মেনে নিন। এই শ্রমিকেরা যদি আন্দোলন শুরু করে, তারা যদি কাজ বন্ধ করে দেয় তাহলে শত কোটি টাকা থেকে আপনাদের ফকির বানাতে বেশি সময় লাগবে না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ জন শিক্ষার্থী ছাড়াও জগন্নাথ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও চা শ্রমিকদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য