নড়াইলে পুলিশের সামনে মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরানো ও সহিংসতার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত এক শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেয়া হয়েছে।
বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২৯তম সিন্ডিকেট সভায় এ ব্যবস্থা নেয়া হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (জনসংযোগ দপ্তর) মো. আতাউর রহমান বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানান।
সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অধ্যক্ষ লাঞ্ছনার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকায় খুলনা সরকারি ব্রজলাল (বিএল) কলেজের মো. রহমাতুল্লাহর ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে। তিনি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।
অধ্যক্ষকে লাঞ্ছনার ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত রহমাতুল্লাহকে গত ২৯ জুন গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত সোমবার তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার রিমান্ড শেষ হয় বুধবার।
ঘটনার সময় কালো জামা পরা ওই শিক্ষার্থীকে শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরাতে দেখা যায়।
ওই ঘটনার সময় নেতিবাচক ভূমিকা রাখায় মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ নেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না, সে মর্মে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।
ওই ঘটনায় নির্লিপ্ততার কারণে কলেজ গভর্নিং বডিকে শোকজ করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের শোকজের উত্তর দিতে বলা হয়েছে।
মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় গত ২৮ জুন তদন্ত কমিটি গঠন করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সিন্ডিকেট সভায় ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
প্রতিবেদনের ওপর বিস্তর আলোচনা শেষে উল্লিখিত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় সিন্ডিকেট।
তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন খুলনা বিএল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শরীফ আতিকুজ্জামান। কমিটির সদস্য ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন দপ্তরের পরিচালক এ এস এম রফিকুল আকবর। কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন খুলনা আঞ্চলিক কেন্দ্রের পরিচালক আ স ম আবদুল হক।
প্রেক্ষাপট
ফেসবুকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার সমর্থনে কলেজের এক হিন্দু শিক্ষার্থীর পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুন দিনভর নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ, সহিংসতা চলে। গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়েছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস।
এরপর পুলিশ পাহারায় বিকেল ৪টার দিকে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে দাঁড় করিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় একদল ব্যক্তি। শিক্ষক স্বপন কুমার হাত উঁচিয়ে ক্ষমা চাইতে থাকেন। পরে তাকে তুলে নেয়া হয় পুলিশের গাড়িতে।
মোবাইল ফোনে ধারণ করা এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দেশজুড়ে তৈরি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ।
আরও পড়ুন: শিক্ষককে জুতার মালা: ঘুম ভাঙল প্রশাসনের, হারাচ্ছেন না পদ
কী বেরিয়ে এসেছে নিউজবাংলার অনুসন্ধানে
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে হেনস্তার পেছনে কলেজে অভ্যন্তরীণ বিরোধের বিষয়গুলোও অনুসন্ধান করছে এই তদন্ত কমিটি। কমিটির সদস্য নড়াইল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম ছায়েদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই দিনের ঘটনার সঙ্গে শিক্ষকদের কেউ জড়িত কি না আমরা খোঁজার চেষ্টা করছি। ঘটনার ধারাবাহিকতায় বিষয়টি আমাদের এ রকম মনে হচ্ছে।
‘এত শিক্ষক থাকতে যখন ঘটনাটি অল্পের মধ্যে ছিল, তখন বিষয়টি সবাই মিলে চেষ্টা করলে সমাধান করা যেত। ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ বিষয়টি জটিল করার দিকে নিয়ে এটা করেছি কি না, সে বিষয়টি আমাদের অনুসন্ধানের মধ্যে আছে। আমি বিষয়টি এখনও পরিষ্কার হতে পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘তদন্তে এমন কিছু এখনও প্রমাণ করতে পারিনি। তবে যারা আমাদের সাক্ষাৎ দিয়েছেন, তারা বলছেন অভ্যন্তরীণ কোনো ঝামেলা থাকতে পারে।’
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘কলেজে বেশ কয়েক বছর ধরে অধ্যক্ষের পদ ফাঁকা আছে। স্বপন কুমারের আগে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন আক্তার হোসেন টিংকু নামের আরেক শিক্ষক। পরে তাকে সরিয়ে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
‘আমরা শুনেছি, এদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোনো বিরোধ থাকতে পারে। তবে স্পষ্ট করে কেউ কিছু বলেনি। হয়তো তাদের অন্তরে বিরোধিতা ছিল। প্রকাশ্যে কিছু ছিল না।’
আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে স্বপন কুমার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিতে বাধ্য হন গত বছরের ২৭ এপ্রিল। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আক্তার হোসেন জুনিয়র ছিলেন, তার ওপরে ছিলেন স্বপন কুমার বিশ্বাস। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি নির্দেশনা আছে, অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে অন্যজন দায়িত্ব পালন করবেন। সে কারণে তাকে (আক্তার) সরিয়ে নতুন একজনকে অধ্যক্ষ করা হয়েছিল।’
আইনটি সম্পর্কে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) বেসরকারি কলেজ শাখার উপপরিচালক (কলেজ-২) মো. এনামুল হক হাওলাদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০১১ সালের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রে বলা হয়, বেসরকারি কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা অনুসরণ করতে হবে।’
আক্তার হোসেনের পরিবর্তে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিতে অনীহা ছিল স্বপন কুমারের। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট অচীন চক্রবর্তী। তবে আইনি বাধ্যবাধকতার কারণেই পদটি গ্রহণ করতে হয় স্বপন কুমারকে।
অচীন চক্রবর্তী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আক্তার হোসেনের আগে কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন রওশান আলী। তিনি দুর্নীতির দায়ে অব্যাহতি পেয়েছিলেন। তখন স্থানীয় সংসদ সদস্য (নড়াইল-১ আসনের এমপি কবিরুল হক) কলেজের সভাপতি ছিলেন, তিনি আক্তার হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন। আক্তার কয়েক বছর দায়িত্বে ছিলেন।
‘পরে কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা সেলিম। তিনি পর্যালোচনা করে দেখেন, নীতিমালায় আছে অধ্যক্ষ না থাকলে টপ মোস্ট সিনিয়র শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাবেন। এরপর তিনি নীতিমালা অনুসারে স্বপনকে দায়িত্ব নিতে বলেন।
‘তিনি (স্বপন কুমার) রাজি ছিলেন না। তবে নীতিমালায় আছে, উপযুক্ত কারণ ছাড়া টপ মোস্ট সিনিয়র দায়িত্ব না নিতে চাইলে তার শাস্তি হবে। তাই তিনি দায়িত্ব নিতে বাধ্য হন।’
আরও পড়ুন:ভয়ঙ্কর হামলার পর হাসপাতালে নিবিড় চিকিৎসাধীন সালমান রুশদি। জটিল অস্ত্রোপচারের পর মাত্র কথা বলার সক্ষমতা ফিরে পেয়েছেন। এর মধ্যেও সহজাত ও অদম্য রসবোধ হারাননি আলোচিত এই ঔপন্যাসিক।
এক টুইটে রোববার এ কথা জানান রুশদির ছেলে জাফর রুশদি।
জাফর লিখেছেন, ‘আমার বাবা জীবন বদলে দেয়া আঘাত সহ্য করেছেন। তবু তিনি পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছেন।’
A family statement… @SalmanRushdie #SalmanRushdie pic.twitter.com/tMrAkoqliq
— Zafar Rushdie (@ZafRushdie) August 14, 2022
এর আগে লেখকের এজেন্ট অ্যান্ড্রু ওয়াইলি জানিয়েছিলেন, সালমান রুশদির চিকিৎসা চলছে। সময় লাগবে সেরে উঠতে। কারণ আঘাতগুলো গুরুতর।
নিউ ইয়র্কে শুক্রবার সকালে এক অনুষ্ঠানে হামলার শিকার হন ৭৫ বছরের সালমান রুশদি। লেবানিজ বংশোদ্ভূত যুবক হাদি মাতার মঞ্চে উঠে তার ঘাড়ে ও পেটে ১০-১৫ বার ছুরি দিতে আঘাত করে। পরে ঘটনাস্থল থেকেই আটক করা হয় হাদিকে।
রুশদির ছেলে শুক্রবার এক টুইটে লিখেছিলেন, ‘হামলার পর আমার বাবা গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।’
শনিবার রুশদিকে ভেন্টিলেটর থেকে সরিয়ে নেয়ার পর জাফর বলেছিলেন, ‘স্বস্তি পাচ্ছি। বাবা কিছুটা কথা বলতে পেরেছেন।’
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঔপন্যাসিক সালমান রুশদি ১৯৮১ সালে ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ উপন্যাস দিয়ে খ্যাতি অর্জন করেন। শুধু যুক্তরাজ্যেই বইটির ১০ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়।
১৯৮৮ সালে দ্য স্যাটানিক ভার্সেস উপন্যাস লেখার পর থেকে বছরের পর বছর প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে আসছেন এই লেখক। দ্য স্যাটানিক ভার্সেস তার রুশদির চতুর্থ উপন্যাস। এই বই লেখার জন্য রুশদিকে ৯ বছর আত্মগোপনে থাকতে হয়।
পরাবাস্তববাদী ও উত্তর-আধুনিক এই উপন্যাসটি কিছু মুসলিমের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়। ইরান ও বাংলাদেশসহ কয়েকটি মুসলিম প্রধান দেশে বইটি নিষিদ্ধও করা হয়। বইটি প্রকাশের এক বছর পর, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি রুশদির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আহ্বান জানান । তার মাথার জন্য ৩০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন খোমেনি।
তারপরও নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন রুশদি। এক পর্যায়ে ইরান সরকার সরে আসে খোমেনির ডিক্রি থেকে।
দ্য স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশনার পর সহিংসতায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে ছিলেন উপন্যাসটির জাপানি ভাষায় অনুবাদকও। রুশদির ব্রিটিশ এবং আমেরিকান নাগরিকত্ব রয়েছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে একজন সোচ্চার কণ্ঠ তিনি।
আরও পড়ুন:ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে আগুন লাগা অভিযান-১০ লঞ্চটি বুঝে পেয়েছেন লঞ্চের মালিক হামজালাল শেখ।
মামলার আলামত হিসেবে ঝালকাঠি সদর থানা পুলিশের হাতে জব্দ এই লঞ্চ শনিবার বুঝে পান তিনি।
এর আগে গত ২৪ জুলাই এ নিয়ে আদেশ দেয় আদালত। ওই আদেশের কপি নিয়ে থানায় জমা দেন লঞ্চ মালিক।
থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত জিম্মানামার মাধ্যমে আগুনে পোড়া লঞ্চটিকে নিয়ে যাওয়া হয়।
মামলার তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান নিউজবাংলাকে ফোনে বলেন, ‘লঞ্চটি মালিক এসে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় বক্তব্য দেয়ার কোনো বিষয় নেই।’
এর আগে এমভি অভিযান-১০ নামের লঞ্চটিতে অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানির ঘটনায় গত ২৭ ডিসেম্বর ঝালকাঠি সদর থানায় একটি মামলা করেন লঞ্চের নিখোঁজ যাত্রীর স্বজন ঢাকার ডেমরার বাসিন্দা মো. মনির হোসেন।
ওই মামলায় অভিযান-১০ লঞ্চটি তখন জব্দ করেছিল ঝালকাঠি সদর থানা পুলিশ। ঘটনার কয়েকদিন পর ঘাট থেকে সরিয়ে সুবিধাজনক স্থান হিসেবে সুগন্ধা পাড়ের ডিসিপার্ক এলাকায় লঞ্চটি বেঁধে রাখা হয়।
পরে থানায় হওয়া মামলাটি ঢাকা নৌ আদালতে স্থানান্তর করে ঝালকাঠির একটি আদালত। বেশ কয়েক মাসের আইনি প্রক্রিয়া শেষে চলতি বছরের ২৪ জুলাই ঢাকা নৌ-আদালত লঞ্চটিকে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়।
১৯২ ফুট দৈর্ঘ, ৩১.৫০ ফুট প্রস্থ এবং ২৭ ফুট উচ্চতার তিনতলা বিশিষ্ট বিশালাকারের লঞ্চটির দুইদিকে দুটি বাল্কহেড বেঁধে ঘন্টাব্যাপী চেষ্টা করেও ঢাকার উদ্দেশে নিয়ে যেতে পারেনি মালিক পক্ষ।
স্থানীয়ভাবে লঞ্চের দায়িত্বে থাকা আবু হানিফ জানান, দুই একদিনের মধ্যে টাগবোর্ড এনে লঞ্চটি ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হবে।
ঝালকাঠির পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় সুগন্ধা নদীতে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চ আগুনে পুড়ে যায়। এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ৪১।
আরও পড়ুন:খাগড়াছড়িতে অভাবের তাড়নায় নিজের সন্তানকে বিক্রি করতে চাওয়া মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা প্রশাসন।
রোববার সকালে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মা সোনালী চাকমার হাতে সঞ্চয়পত্র করার জন্য ১ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস।
এ সময় সোনালীর ছেলে রামকৃষ্ণ চাকমার ভবিষ্যৎ সুরক্ষা ও পড়ালেখার সুবিধা নিশ্চিত করতে সমাজসেবা পরিচালিত সরকারি শিশু পরিবারে থাকার ব্যবস্থা করা হয়।
এ ছাড়া সোনালীকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত গৃহহীনদের জন্য ঘর প্রকল্পের আওতায় ঘর তৈরি করে দেয়ার আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক। পাশাপাশি সোনালীর শারীরিক পরীক্ষা করে তার সুচিকিৎসা ও মানসিক ভারসাম্যহীন হলে প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।
সোনালী ও তার সন্তানের বিষয়টিতে গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করেন জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস। এ সময় খাগড়াছড়ি সমাজসেবার উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম, ভাইবোন ছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুজন চাকমা, খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাব সভাপতি জীতেন বড়ুয়া ও সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
গত বৃহস্পতিবার অভাবের তাড়নায় নিজের ছয় বছর বয়সী ছেলে রামকৃষ্ণ চাকমাকে বিক্রির উদ্দেশে খাগড়াছড়ি বাজারে নিয়ে যান মা সোনালী চাকমা। এ সময় তিনি ছেলের মূল্য হাঁকেন ১২ হাজার টাকা। পরে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির হস্তক্ষেপে বিক্রির হাত থেকে রক্ষা পায় রামকৃষ্ণ।
ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে এবং গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হলে তাদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি আসতে শুরু করে বিভিন্ন মহল থেকে।
আরও পড়ুন:কলেজছাত্রকে বিয়ের ঘটনা ভাইরাল হওয়ার পর মানসিক চাপে পড়ে শিক্ষক খাইরুন নাহার আত্মহত্যা করতে পারেন বলে ধারণা করছে পুলিশ।
নাটোর শহরের বলারিপাড়া এলাকার ভাড়া বাসা থেকে রোববার সকালে খাইরুনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তার স্বামী কলেজছাত্র মামুন হোসেনকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিয়েবিচ্ছেদের পর একমাত্র ছেলেকে নিয়ে নিজ বাড়িতেই থাকতেন খায়রুন। ফেসবুকের মেসেঞ্জারে ২০২১ সালের ২৪ জুন মামুনের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। পরিচয়ের ছয় মাস পর গত বছরের ১২ ডিসেম্বর কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করেন তারা।
বিয়ের ছয় মাস পর জুলাইয়ে ঘটনাটি জানাজানি হয়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তাদের বিয়ের খবর ফলাও করে প্রচার করা হয়; সম্প্রচার করা হয় ভিডিও সাক্ষাৎকারও। এতে ‘টক অফ দ্য কান্ট্রি’তে পরিণত হয় বিষয়টি।
খাইরুনের মরদেহ উদ্ধারের বিষয়ে রোববার দুপুরে সাংবাদিকরা জানতে চান নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) লিটন কুমার সাহার কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘শিক্ষক ও ছাত্রের প্রেমের কাহিনি ছড়িয়ে পড়লে দুজনই বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছিলেন; কিন্তু সামাজিক, পারিবারিক ও কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় তাদের মধ্যে এক ধরনের মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়।
‘তাদের বিয়ের পর বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে অনেক আলোচিত ও সমালোচিত হয়। মানসিক এ চাপের কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন কি না, আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি।’
৪২ বছর বয়সী খাইরুন নাহার গুরুদাসপুরের খুবজিপুর এম হক ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। ২২ বছরের মামুনের বাড়ি উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের পাটপাড়া গ্রামে। তিনি নাটোর এন এস সরকারি কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
কী বলছেন খাইরুনের স্বজনরা
কলেজশিক্ষক খাইরুনের চাচাতো ভাই নাঈম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে মামুন খাইরুন নাহারকে টাকা-পয়সার জন্য চাপ সৃষ্টি করছিল। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় খাইরুনকে মারধরও করত মামুন।
‘এ ছাড়া খাইরুনের বাড়ির দলিলও সে জোর করে নিজের কাছে নিয়ে রাখে। ঘটনাটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খতিয়ে দেখছে। খাইরুনের মৃত্যু সম্পর্কে তারা অনেক কিছু জানাতে পারবে।’
শিক্ষকের বড় বোনের ছেলে আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে খালার মৃত্যুর খবর শুনে আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।’
‘আত্মহত্যা’র খবর জানিয়েছিলেন মামুনই
যে বাসা থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, সেখানে মামুনের পরিবারের কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, রাত ৩টার দিকে মামুন তাদের ডেকে বলেন, তার স্ত্রী খায়রুন গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এলাকাবাসী ছুটে গিয়ে ঘরের মেঝেতে শোয়ানো অবস্থায় খাইরুনের মরদেহ দেখতে পান।
এ ঘটনায় সন্দেহ হলে স্থানীয়রা মামুনকে ধরে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। পরে মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে যায়।
ওই বাসার তত্ত্বাবধায়ক নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘রাত ২টার দিকে মামুন বাসা থেকে বের হয়ে যান। এরপর ৩টার দিকে বাসায় ফিরে সবাইকে ডাকাডাকি করে বলেন, তার স্ত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে সবাই ঘরে ঢুকে মেঝেতে মরদেহ শোয়ানো অবস্থায় দেখতে পায়।’
আরও পড়ুন:নাটোরে কলেজশিক্ষকের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় স্বামী মামুন হোসেনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
রোববার সকাল ৭টার দিকে শহরের বলারিপাড়া এলাকার ভাড়া বাসা থেকে ওই শিক্ষকের মরদেহ উদ্ধারের পর মামুনকে আটক করা হয়।
নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) লিটন কুমার সাহা।
তিনি বলেন, ‘কলেজছাত্র মামুন হোসেনকে আট মাস আগে বিয়ে করেন শিক্ষক খাইরুন নাহার। আজ (রোববার) সকালে ভাড়া বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামুনকে আটক করা হয়েছে।’
৪২ বছর বয়সী খাইরুন নাহার গুরুদাসপুরের খুবজিপুর এম হক ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। ২২ বছরের মামুনের বাড়ি উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের পাটপাড়া গ্রামে। তিনি নাটোর এন এস সরকারি কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, রাত তিনটার দিকে মামুন তাদের ডেকে বলেন, তার স্ত্রী খায়রুন গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এলাকাবাসী ছুটে গিয়ে ঘরের মেঝেতে শোয়ানো অবস্থায় খায়রুনের মরদেহ দেখতে পায়।
এ ঘটনায় সন্দেহ হলে এলাকাবাসী মামুনকে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে। পরে মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে যায়।
বাসার কেয়ারটেকার নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘রাত দুইটার দিকে মামুন বাসা থেকে বের হয়ে যান। এরপর তিনটার দিকে বাসায় ফিরে সবাইকে ডাকাডাকি করে বলেন, তার স্ত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে সবাই ঘরে ঢুকে মেঝেতে মরদেহ শোয়ানো অবস্থায় দেখতে পায়।’
নাটোর মডেল থানা পুলিশ জানায়, প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদের পর এক ছেলেকে নিয়ে নিজ বাড়িতেই থাকতেন খায়রুন। ফেসবুকের মেসেঞ্জারে ২০২১ সালের ২৪ জুন মামুনের সঙ্গে পরিচয় হয় খাইরুন নাহারের। পরিচয়ের ছয় মাস পর গত বছরের ১২ ডিসেম্বর কাজী অফিসে গিয়ে গোপনে তাকে বিয়ে করেন খায়রুন।
বিয়ের ছয় মাস পর গত জুলাই মাসে ঘটনাটি জানাজানি হলে দেশ জুড়ে আলোচনায় আসেন এই দম্পতি।
বিয়ের পর খাইরুন নাহার জানিয়েছিলেন, প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদের পর তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। সে সময় আত্মহত্যার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন। তখন ফেসবুকে মামুনের সঙ্গে পরিচয় হয়। মামুন খারাপ সময়ে পাশে থেকে তাকে উৎসাহ দিয়েছেন; নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তাই পরে দুজন বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন।
বিয়ের পর মামুন হোসেন বলেছিলেন, ‘মন্তব্য কখনও গন্তব্য ঠেকাতে পারে না। খাইরুনকে বিয়ে করে আমি খুশি ও সুখী। সবার দোয়ায় সারা জীবন এভাবেই থাকতে চাই।’
থানার ওসি মো. নাছিম আহমেদ বলেন, ‘মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে তার মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।’
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রে একটি অনুষ্ঠানে ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক সালমান রুশদিকে ছুরিকাঘাত করা সন্দেহভাজন যুবক হাদি মাতারের নামে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।
নিউ ইয়র্কের চৌতাউকা কাউন্টির প্রসিকিউটর জানিয়েছেন হামলাকারী হাদি মাতারকে হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার সব ধরনের জামিন বাতিল করা হয়েছে।
মাতারের বিরুদ্ধে একটি স্থানীয় শিক্ষাকেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মঞ্চে দৌড়ে সালমান রুশদি এবং তার সাক্ষাৎকারকারীর ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।
শুক্রবার ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত রুশদির সার্জারির পর তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। লেখকের অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন।
৭৫ বছর বয়সী সালমান রুশদি তার উপন্যাস দ্য স্যাটানিক ভার্সেসের জন্য বছরের পর বছর হত্যার হুমকি পেয়ে এসেছেন। বইটিকে অনেক মুসলমান ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি অবমাননা বলে মনে করেন।
চৌতাউকা ইনস্টিটিউশনে হামলার কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থল নিউ জার্সির ফেয়ারভিউ থেকে মাতারকে আটক করা হয়।
হামলার পরদিন স্থানীয় সময় শনিবার বিকেলে আদালতে হাজির করা হয় তাকে। এ সময় তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। সন্দেহভাজন হাদি মাতারের মুখে মাস্ক ও পরনে ছিল কারাগারের পোশাক।
ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি জেসন এসমিডট একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘এটি একটি দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার প্রাথমিক পর্যায় মাত্র।’
স্থানীয় সময় শুক্রবার সালমান রুশদির ওপর হামলায় জড়িত অভিযোগে হাদি মাতারকে ঘটনাস্থল থেকেই আটক করে পুলিশ।
তার বইয়ের এজেন্ট এন্ড্রু ওয়াইলি জানিয়েছেন, সম্ভবত তিনি এক চোখ হারিয়েছেন। রুশদির অবস্থা ভালো নয়।
আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়, পুলিশের হাতে আটক হাদি মাতারের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় হলেও তিনি নিউ জার্সির ফেয়ারভিউ এলাকায় বসবাস করছিলেন।
হাদির জন্মের আগে তার বাবা-মা লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের ইয়ারুন থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় পাড়ি জমান। ইয়ারুন পৌরসভার প্রধান আলী কাসেম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। লেবাননের সংবাদপত্র ডেইলি আন-নাহারকে তিনি বলেন, হাদির জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে, তিনি কখনও ইয়ারুনে আসেননি।
এর আগে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, রুশদির অবস্থা দেখে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হবে হাদির বিরুদ্ধে।
হাদি মাতারের আগের রেকর্ড জানতে এবং হামলার উদ্দেশ্য বের করতে ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) সহায়তা চেয়েছে নিউ ইয়র্ক পুলিশ।
নিউ ইয়র্ক পুলিশের মেজর ইউজিন স্ট্যানিসজেউস্কি বলেছেন, প্রাথমিকভাবে ছুরিকাঘাতের উদ্দেশ্য পরিষ্কার নয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাদির অ্যাকাউন্টগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তিনি শিয়া চরমপন্থা এবং ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রতি সহানুভূতিশীল।
হাদির ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিষয়েও তথ্য পেয়েছে নিউ ইয়র্ক পুলিশ।
নিউ ইয়র্কের শাটোকোয়া ইনস্টিটিউশনের শুক্রবার সকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেয়ার সময় সালমান রুশদির ওপর হামলা চালান হাদি মাতার।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রুশদিকে ২০ সেকেন্ডে ১০ থেকে ১৫ বার ছুরিকাঘাত করা হয়। হামলার পর রুশদি তৎক্ষণাৎ মেঝেতে পড়ে যান। আশপাশের লোকজন ছুটে এসে লেখককে ঘিরে ফেলেন। অনুষ্ঠানে আনুমানিক আড়াই হাজার লোক উপস্থিত ছিলেন।
এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘রুশদিকে মুহূর্তের মধ্যে বেশ কয়েকবার আঘাত করা হয় এবং তিনি তার রক্তের ওপরই লুটিয়ে পড়েন।’
হামলায় সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী হেনরি রিসও মাথায় সামান্য আঘাত পেয়েছেন। রিস একটি অলাভজনক সংস্থার সহপ্রতিষ্ঠাতা; যা নিপীড়নের হুমকির মধ্যে থাকা নির্বাসিত লেখকদের জন্য সুরক্ষিত পরিবেশ সৃষ্টি করে।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঔপন্যাসিক সালমান রুশদি ১৯৮১ সালে ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ উপন্যাস দিয়ে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। শুধু যুক্তরাজ্যেই বইটির ১০ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়েছিল।
১৯৮৮ সালে দ্য স্যাটানিক ভার্সেস উপন্যাস লেখার পর থেকে বছরের পর বছর প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে আসছেন এই লেখক।
দ্য স্যাটানিক ভার্সেস রুশদির চতুর্থ উপন্যাস। এই বই লেখার জন্য রুশদিকে ৯ বছর আত্মগোপনে থাকতে হয়েছিল।
দ্য স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশনার পর সহিংসতায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে ছিলেন উপন্যাসটির জাপানি ভাষায় অনুবাদকও।
আরও পড়ুন:সাংবাদিক সোহানা পারভীন তুলির ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধারের এক মাসেও তদন্তে তেমন অগ্রগতি হয়নি। মৃত্যুর আগের দিন তুলি তার বন্ধু রফিকুল ইসলাম রঞ্জুর ফোনে একটি মেসেজ পাঠান। সেখানে আত্মহত্যার হুমকির কথা থাকলেও রঞ্জুকে একবারের পর আর জিজ্ঞাসাবাদ করেনি পুলিশ।
সাংবাদিক রঞ্জুর বিরুদ্ধে তুলিকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার অভিযোগ তুলছেন তার পরিবার ও সাবেক সহকর্মীরা। এ ঘটনায় হাজারীবাগ থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
পুলিশ বলছে, রঞ্জুর সঙ্গে তুলির কী সম্পর্ক ছিল, মোবাইল ফোনে বিভিন্ন সময়ে তাদের কী কথোপকথন হয়েছে তা জানতে তুলির মোবাইল ফোন সিআইডির ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এ কাজ শেষ করতে সময় লাগবে।
রাজধানীর রায়েরবাজারের মিতালী রোডের বাসা থেকে গত ১৩ জুলাই দুপুরে সোহানা পারভীন তুলির ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে হাজারীবাগ থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন তুলির ভাই মোহাইমেনুল ইসলাম।
হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখনও ময়নাতদন্ত ও মোবাইল ফোনের ফরেনসিক রিপোর্ট পাইনি। রিপোর্ট পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া যাবে।’
রিপোর্ট পেতে কত সময় লাগতে পারে সে বিষয়ে নিশ্চিত নন পুলিশের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায়োরটি দিয়ে রিপোর্টগুলো আনার চেষ্টা করছি। তবে সিআইডিতে সারা দেশের বিষয়গুলো আসে। এ কারণে রিপোর্ট পেতে সময় লাগে। মেডিক্যাল রিপোর্ট পেতেও সময় লাগবে।’
ঘটনার পর তুলির বাসার দারোয়ান একটি মোটরসাইকেলের নম্বর পুলিশকে দেন। তার সূত্র ধরেই পুলিশ রফিকুল ইসলাম রঞ্জুকে শনাক্ত করে। তুলির সঙ্গে সম্পর্ক ও নিয়মিত যোগাযোগ থাকার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন রঞ্জু। তবে আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগ তিনি স্বীকার করেননি।
আরও পড়ুন: প্রাণোচ্ছল, পরোপকারী তুলির মনে কী দুঃখ ছিল
হাজারীবাগ থানার ওসি মোক্তারুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রঞ্জুকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। দীর্ঘ সময়ের জন্য ঢাকার বাইরে কোথাও গেলে আমাদের অবহিত করতে বলেছি। তদন্তের প্রয়োজনে আবার ডাকলে তাকে আসতে হবে।’
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট ডিএমপি রমনা বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, তুলির সঙ্গে সাংবাদিক রঞ্জুর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। মোবাইল ফোনে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ হতো এবং তুলির বাসায়ও রঞ্জু প্রায়ই যাতায়াত করতেন। ঘটনার আগের দিন বিকেল ৩টা ৯ মিনিটে রঞ্জুকে তুলি মেসেজ পাঠিয়েছিলেন। এক লাইনের মেসেজে লেখা ছিল, ‘আজকে তুই মরার খবর পাবি’।
তিনি বলেন, ‘রঞ্জুকে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সম্পর্কের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে তুলির পাঠানো মেসেজটি তিনি না দেখেই ডিলিট করে দেন বলে দাবি করেছেন।’
তুলির ভাই মোহাইমেনুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, আপুকে আত্মহত্যার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা তথ্য-প্রমাণের জন্য অপেক্ষা করছি। আপুর ফোন সিআইডির কাছে আছে। তাদের রিপোর্ট পেলে অনেক কিছুই বেরিয়ে আসবে। আমরা চাই, পুলিশ তদন্ত করে সত্য বের করে আনুক। আমরা ঘটনার বিচার চাই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তুলির সাবেক এক সহকর্মী বলেন, ‘রঞ্জু মোবাইলে মেসেজ পেয়ে তুলিকে ফেরানোর চেষ্টা করলে আজ হয়তো সে বেঁচে থাকত। নিশ্চয়ই ওদের মধ্যে এমন কিছু হয়েছে, যাতে তুলি এমন কথা লিখে মেসেজ করেছে। তাদের মধ্যে কী হয়েছিল, কেন তুলি আত্মহত্যার পথ বেছে নিল, তা তদন্তে বেরিয়ে আসা উচিত।‘
তুলির ফোনে পাঠানো মেসেজ ও সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে রফিক রঞ্জু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না কী কারণে সে এ ধরনের মেসেজ দিয়ে থাকতে পারে। একটা ভালো সম্পর্ক ছিল, কোনো ধরনের ঝগড়া বা এ ধরনের কোনো কিছু আমার সঙ্গে ওর হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘মেসেজটি আমি দেখিনি। এরপর আর কোনো কথাও হয়নি। পরদিনই তো খবরটা পাইছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সোহানা তুলি এক দশকের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতায় জড়িত ছিলেন। সবশেষ ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত তিনি অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনে কর্মরত ছিলেন। এরপর কয়েক মাস সেন্টার ফর কমিউনিকেশন অ্যাকশন বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছিলেন।
বাংলা ট্রিবিউনের আগে তিনি কাজ করেছেন দৈনিক কালের কণ্ঠ ও দৈনিক আমাদের সময়ে।
সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম রঞ্জু সবশেষ কর্মরত ছিলেন দৈনিক সমকালে। তুলির ঘটনার পর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য