নড়াইলে পুলিশের সামনে মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরানো ও সহিংসতার ঘটনায় স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আক্তার হোসেন টিংকুর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) তদন্ত কমিটি।
টিংকু নড়াইল সদরের বিছালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। স্বপন কুমারকে জুতার মালা পরানোর ঘটনার প্রায় দুই সপ্তাহ পর তাকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়। তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ।
ফেসবুকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার সমর্থনে কলেজের এক হিন্দু শিক্ষার্থীর পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুন দিনভর নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ, সহিংসতা চলে।
গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়েছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস।
এরপর পুলিশ পাহারায় বিকেল ৪টার দিকে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে দাঁড় করিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় একদল ব্যক্তি।
শিক্ষক স্বপন কুমার হাত উঁচিয়ে ক্ষমা চাইতে থাকেন। পরে তাকে তুলে নেয়া হয় পুলিশের গাড়িতে। মোবাইল ফোনে ধারণ করা এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের সামনে শিক্ষকের এমন অপদস্থ হওয়ার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয় সারা দেশে।
এ ঘটনা তদন্তে মাউশির গঠিত তিন সদস্যের কমিটি মঙ্গলবার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনার পেছনে শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল দায়ী থাকতে পারে। ঘটনার সময় আক্তার হোসেন টিংকুর ভূমিকা ‘রহস্যজনক’ ও ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
মাউশির বেসরকারি কলেজ শাখার উপপরিচালক মো. এনামুল হক হাওলাদারের কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেয়া হয়। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে তদন্ত প্রতিবেদনটি আমরা হাতে পেয়েছি। প্রশাসনিক বিধি মোতাবেক প্রতিবেদনটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হবে। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারব না।’
মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন উইং) অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট শাখায় আজ তদন্ত প্রতিবেদনটি জমা পড়েছে। তবে আমার কাছে এখনও প্রতিবেদনটি আসেনি।’
একজন কলেজ শিক্ষককে জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনায় জড়িতদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।’
শাহেদুল খবির বলেন, ‘মাউশির মহাপরিচালক মহোদয় দেশের বাইরে আছেন। তিনি ফিরলেই তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে বিধি মোতাবেক দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
মাউশির এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, কলেজের অধ্যক্ষ পদটি দখলে কয়েকজন শিক্ষকের প্রতিযোগিতায় নামার বিষয়টি উঠে এসেছে তদন্ত প্রতিবেদনে। এ কারণে দ্রুত নিয়মিত অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়ে সমস্যা সমাধানের সুপারিশ করা হয়েছে।
ঘটনার দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও সতর্কতা প্রয়োজন ছিল বলে মনে করছে মাউশির তদন্ত কমিটি।
মাউশির খুলনা অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক শেখ হারুনুর রশিদের নেতৃত্বে ২৯ জুন গঠিত এ কমিটিতে ছিলেন উপপরিচালক (কলেজ) এস কে মোস্তাফিজুর রহমান ও সহকারী পরিচালক (কলেজ) মো. নিজামুল ইসলাম।
শিক্ষক হেনস্তার ঘটনায় জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি গত ৩ জুলাই রাতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। নড়াইলের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) জুবায়ের হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে এ কমিটিতে ছিলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম ছায়েদুর রহমান ও নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শওকত কবীর।
প্রতিবেদন জমা দেয়ার পরের দিনই (রোববার) জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির সদস্য নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শওকত কবীরকে নড়াইল থেকে সরিয়ে খুলনা আরআরএফ (রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স)-এ সংযুক্ত করা হয়। আর মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক শেখ মোরছালিনকেও প্রত্যাহার করে নড়াইল জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:টানা তিন দিন ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পানির সংকটে ছিল কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল। তবে সোমবার রাতে নতুন মোটর লাগানোর পর পানির সংকট কেটেছে।
গত তিন দিন পানি না থাকায় ভোগান্তিতে ছিলেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে ভর্তি থাকেন হাসপাতালে। ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে রোগী ও স্বজনসহ সহস্রাধিক মানুষ অবস্থান করেন।
প্রতিদিন এখানে ২০ হাজার লিটার পানি প্রয়োজন। হাসপাতালে পানির সংকটের কারণে অন্তত ৩০ জন রোগী অন্যত্র চলে গেছে বলেও খবর পাওয়া যায়।
পানির মোটর বিকল হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালটিতে শনিবার বেলা ১১টা থেকে শৌচাগারসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। পানি সংকটে শৌচাগার থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালে।
টানা দুই দিন বিকল হয়ে যাওয়া মোটরটি সচল করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয় কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে পানি সরবরাহের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাতে প্রয়োজন মেটেনি।
কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের (ভারপ্রাপ্ত) তত্ত্বাবধায়ক ডা. নূর মোহাম্মদ শামসুল আলম বলেন, ‘বিগত তিন দিনে রোগীদের অনেক ভোগান্তি হয়েছে, এটা সত্য। তবে আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সমস্যা সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টাটুকু করেছি।
‘গতকাল রাতে একটি নতুন মোটর লাগানোর পর পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলাধীন মেঘনা নদীতে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের সঙ্গে স্পিডবোটের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ছয়জনকে।
হতাহত সবাই নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর সক্রিয় সদস্য বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
প্রাণ হারানো চারজন হলেন গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী বেপারীর ছেলে ওদুদ বেপারী (৩৬), মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা চরঝাপ্টা রমজানবেগ গ্রামের বাচ্চু সরকারের ছেলে বাবুল সরকার (৪৮), চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাকিব (২৬) ও একই এলাকার নয়াকান্দি বড়ইচর গ্রামের মোহন ভান্ডারের ছেলে নাঈম (২৫)।
মেঘনা নদীর কালীপুরা ঘাট সংলগ্ন এলাকায় শুক্রবার রাত ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, হতাহত সবাই নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর সক্রিয় সদস্য। তারা সবাই অবৈধ বালুমহাল পরিচালনার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। নিহত ওদুদ বেপারি নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর সেকেন্ড ইন কামান্ড পিয়াসের বড় ভাই।
স্থানীয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামসংলগ্ন মেঘনা নদীতে অবৈধ একটি বালুমহাল পরিচালনা করতেন নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর লোকজন। দিনের আলোতে নদীর ওই অংশে বালুমহালের অস্তিত্ব না থাকলেও সন্ধ্যা হলেই সেখানে চালু করা হতো বালুমহাল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অসংখ্যবার অভিযান চালিয়েও অবৈধ বালুমহালটি বন্ধ করতে পারেনি।
সন্ধ্যায় অবৈধ বালুমহাল চালুর পর আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তিন থেকে চারটি স্পিডবোট ও ট্রলার নিয়ে নদীতে মহড়া দেয় নয়ন বাহিনীর লোকজন। এ বাহিনীর সাথে বিগত কয়েক মাসে কয়েকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রতিপক্ষের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের দাবি, শুক্রবার রাতে অবৈধ বালুমহালের জন্য বাল্কহেড আটক করতে একটি স্পিডবোট ও ইঞ্জিনচালিত একটি ট্রলার নিয়ে যাচ্ছিল নয়ন বাহিনীর লোকজন। ওই সময় নৌযান দুটিতে ১০ থেকে ১১ জন আরোহী ছিল। রাতে ঘন কুয়াশার কারণে দ্রুতগতির স্পিডবোটটি দিক ভুলে ট্রলারে ধাক্কা দিলে ট্রলারটি তলিয়ে যায় এবং স্পিডবোটটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে তিনজনের লাশ উদ্ধার হলেও নাঈম (২৫) নামে একজন নিখোঁজ হন।
তার সন্ধানে উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস, কোস্ট গার্ড ও বিআইডব্লিউটিএ। পরবর্তী সময়ে শনিবার দুপুর দুইটার দিকে নাঈমের লাশ উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার ইউনিট প্রত্যয় নারায়ণগঞ্জের কমান্ডার ও বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক ওবায়দুল করিম খান বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আমরা শুনেছিলাম বাল্কহেডের সাথে স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলে আসার পরে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, স্পিডবোটের সাথে একটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের সংঘর্ষ হয়েছে। দুর্ঘটনায় ট্রলারটি তলিয়ে যায় এবং স্পিডবোটটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমার ধারণা, যারা মারা গেছে, তারা সবাই ট্রলারের যাত্রী ছিল।
‘এ ঘটনায় একজন নিখোঁজ ছিল। উদ্ধার অভিযানের একপর্যায়ে শনিবার দুপুর দুইটার দিকে দুর্ঘটনাস্থলের অদূরে ঝোঁপ থেকে নিখোঁজ নাঈমের লাশ উদ্ধার করি আমরা।’
নিহত ওদুদ বেপারীর স্ত্রী ফেরদৌসীর দাবি, অবৈধ বালুমহাল পরিচালনা নয়, পার্শ্ববর্তী মতলব উত্তর উপজেলার একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন তারা। এ ঘটনায় চারজন নিহত হন। আহত হন পাঁচ থেকে ছয়জন।
গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ‘ঘন কুয়াশার কারণে নদীতে একটি ট্রলারের সঙ্গে দ্রুতগতির স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছে। বিস্তারিত পরে বলতে পারব।’
আরও পড়ুন:ঝালকাঠি সদর উপজেলার রামপুর জোড়াপোল এলাকায় ৬ জানুয়ারি সুদেব হালদার (২৮) নামের ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় জড়িতরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বজন ও স্থানীয়রা।
সুদের হত্যার দিনই ঝালকাঠি সদর থানায় একটি মামলা করেন তার বাবা সুব্রত হালদার। কিন্তু ঘটনার তৃতীয় দিনেও হত্যায় জড়িত কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এমন বাস্তবতায় ক্ষোভ জানিয়েছে নিহতের পরিবার, স্বজন ও এলকাবাসী। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ করতে বৃহস্পতিবার দোকান বন্ধ রেখে রাস্তায় নামেন।
সকালে ঝালকাঠির বাউকাঠি বাজারের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এক ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে প্রতিবাদ জানান ব্যবসায়ীরা।
সকাল ১০টার দিকে সুদেব হালদারের বাউকাঠি বাজারের মোবাইল ফোনের দোকানের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন ব্যবসায়ীরা।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তৃতা করেন নবগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী সরদার মো. শহিদুল্লাহ, বাউকাঠি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. রুহুল আমিন ফকির, সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম, ব্যবসায়ী রাহুল রাড়ী, রফিকুল ইসলাম, আলতাফ হোসেন মোল্লা, আলী হায়দার রাড়ী, মো. আবু বক্কর, সৈয়দ রুহুল আমিন, মো. বেল্লাল খান, মো. আনিস সিকদার এবং নিহতের সহোদর সাগর হালদার সুকেশসহ অনেকে।
বক্তাদের একজন বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে সুদেব হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় লাগাতার কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে শতাধিক ব্যবসায়ী অংশ নেন।
গত ৬ জানুয়ারি রাতে সুদেব হালদার দোকান বন্ধ করে বাড়ির পথে রওনা হলে দুর্বৃত্তরা তার গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়। সকালে স্থানীয়রা মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়।
আরও পড়ুন:বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে সচিবালয়ে আগুন ধরেছিল বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে মঙ্গলবার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
নাসিমুল গণি বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক তদন্তে যেটা উঠে এসেছে, এটা বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণেই আগুন লেগেছে। প্রাথমিক তদন্তে কোনো ধরনের নাশকতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’
গত ২৬ ডিসেম্বর সচিবালয়ের একটি ভবনের চারটি ফ্লোর পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ৭ নম্বর ভবনের এসব ফ্লোরে পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আংশিক কার্যালয় এবং একটি বিভাগের পুরো কার্যালয়ের অবকাঠামোর সঙ্গে সব নথিপত্রও পুড়ে যায়।
তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য বুয়েটের অধ্যাপক ড. মাকসুদ হেলালী জানান, প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাখিল করা হয়েছে। তার সঙ্গে প্রাথমিক তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা বিশেষজ্ঞ দলের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে খুঁটিনাটি জেনে নিয়ে ভবিষ্যতে করণীয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ বলেন, কোনো বিস্ফোরক ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দেয়া নমুনাতেও কোনো বিস্ফোরক ব্যবহারের আলামত পাওয়া যায়নি। ডগ স্কোয়াডের সার্চেও মেলেনি বিস্ফোরকের আলামত।
আরও পড়ুন:পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা কর্মবিরতির কারণে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় এক কিশোরের মৃত্যুর জেরে একাধিক বাস ভাঙচুরের প্রতিবাদে সোমবার থেকে বাস চলাচল বন্ধ রাখেন শ্রমিকরা। মঙ্গলবারও ওই সড়কটিতে বাস চলাচল করেনি।
বাস বন্ধের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারগামী যাত্রীরা।
জকিগঞ্জের কামালগঞ্জ এলাকায় বাসের ধাক্কায় এক স্কুলছাত্রের নিহতের ঘটনার জেরে বাস ভাঙচুরের ঘটনায় সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন অনির্দিষ্টকালের এ কর্মবিরতির ডাক দেয়। এর আগে সোমবার বিকেলে মঙ্গলবার থেকে সিলেটজুড়ে কর্মবিরতির ডাক দিলে রাতে ওই অবস্থান থেকে সরে আসেন শ্রমিকরা। কেবল সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তারা।
কদমতলী বাস টার্মিনালে মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনাল থেকে কোনো বাস জকিগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি। একইভাবে জকিগঞ্জ থেকেও সিলেটের উদ্দেশে কোনো বাস ছেড়ে আসেনি। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা পড়েন মারাত্মক দুর্ভোগে।
টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, অনেক যাত্রী সেখানে বসে আছেন বাসের অপেক্ষায়। বাস ছেড়ে যাবে না জানার পরও তারা অপেক্ষা করছেন ধর্মঘট প্রত্যাহারের।
জকিগঞ্জ যাওয়ার জন্য টার্মিনালে অপেক্ষা করছিলেন কালিগঞ্জের যাত্রী বদরুল ইসলাম। তিনি জানান, পরিবার নিয়ে তিনি সকালে কদমতলী টার্মিনালে এসেছেন, কিন্তু কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। তাই মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন।
তিনি আরও জানান, বিকেল নাগাদ ধর্মঘট প্রত্যাহার না হলে মাইক্রোবাস রিজার্ভ করে তাকে বাড়ি ফিরতে হবে।
গত রোববার সকালে জকিগঞ্জের কামালগঞ্জ আব্দুল মতিন কমিউনিটি সেন্টারের নিকটে সড়কের পাশে শিশু-কিশোররা ফুটবল খেলছিল। হঠাৎ বল সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে চলে গেলে সেটি আনতে আবির আহমদ (১৪) নামের এক কিশোর দৌড় দেয়। সে সময় দ্রুতগামী একটি গেটলক বাসের ধাক্কায় সে গুরুতর আহত হয়।
পরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।
পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগ, অন্তত তিনটি বাস ভাঙচুর করা হয় ওই সময়। এর প্রতিবাদে সোমবার পরিবহন শ্রমিকরা সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। মঙ্গলবারও এ সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন তারা।
জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মুহিত বলেন, ‘আমাদের বাসের চালক অন্যায় করলে আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হবে, কিন্তু আইন হাতে তুলে নিয়ে বাস ভাঙচুর করা ও পোড়ানো সন্ত্রাসী কাজ।
‘আমরা এর বিচার চাই। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বাসের চালক বাদী হয়ে জকিগঞ্জ থানায় মামলা দায়েরের আবেদন করেছেন।’
জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, ‘বাস ভাঙচুরের দাবি করে রোববার রাতে হেলাল মিয়া নামের একজন লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেটি আমরা তদন্ত করে দেখছি। সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে এখন বাস, মিনিবাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।’
আরও পড়ুন:মেহেরপুরে সম্পত্তির ভাগ চাওয়ায় ভাইদের হাতে বোন তাসলিমা খাতুন হত্যা মামলার দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছেন র্যাব সদস্যরা।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মেহেরপুর সদর উপজেলার চাঁদবিল গ্রামের শরিফ উদ্দীন (৬৫) ও তার ছেলে সবুজ হােসেন (২৯)।
র্যাব-১২ গাংনী সিপিসি ক্যাম্প কমান্ডার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফ উল্লাহ শনিবার রাত ১০টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, শনিবার বিকেল সােয়া পাঁচটার দিকে দুজনকে মেহেরপুর সদর উপজেলার যাদবপুর গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মা-বাবার সম্পত্তির ১২ বিঘা জমির মধ্যে সাড়ে ১০ কাঠা তাসলিমাকে মৌখিকভাবে দিয়েছিলেন তার ভাইয়েরা। বাকি জমির ভাগ চাওয়ায় গত ২৬ ডিসেম্বর তাসলিমার ভাইয়েরা তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা শেষে কবরস্থানের পাশের ডোবায় ফেলে রেখে পালিয়ে যান।
পরে স্থানীয়রা ডোবায় মরদেহটি ভাসতে দেখে খবর দিলে পুলিশ এসে মরদেহটি উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
এ ঘটনায় তাসলিমার স্বামী মেহেরপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
আরও পড়ুন:দেশের প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ে সংঘটিত আগুনকে পরিকল্পিত নাশকতা বলে সন্দেহ করছেন রাজনীতিক, প্রশাসন সংশ্লিষ্ট লোকজনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সচিবালয় কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন তথা কেপিআইভুক্ত। সে স্থাপনায় মধ্যরাতে আগুন নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে গোটা দেশের মানুষ।
তারা বলছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও অনেক ঘটনার ধারাবাহিকতায় সচিবালয়ের এ আগুন।
ভয়াবহ এ আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র। আগুন লাগার ধরন দেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ‘পরিকল্পিত নাশকতা’ হতে পারে।
সচিবালয়ে মধ্যরাতে লাগা এ আগুনের ঘটনা জন্ম দিয়েছে নানা প্রশ্নের। ফেসবুকে নানাজন বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন তুলে তার উত্তর খুঁজছেন।
বাংলাদেশ সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। অনেকে এই আগুনকে নাশকতা বলছেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
এদিকে ২৫ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবি করে আলটিমেটাম দিয়েছিলেন আমলারা। প্রশাসনে এমন চলমান অস্থিরতার মধ্যে আগুনের ঘটনা ঘটল।
আগুন পরিকল্পিতভাবে লাগানো হয়েছে বলে মনে করেন সচিবালয়ের কাছে থাকা একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী।
তারা বলছেন, সচিবালয়ের ভেতরে শতাধিক নিরাপত্তাকর্মী ও সব গোয়েন্দা সংস্থার লোক থাকে। আগুন লাগার পর একজনের চোখেও পড়েনি, এমনটা কীভাবে সম্ভব।
অন্যদিকে সচিবালয়ে কর্মরত একাদিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একই সময়ে দুই জায়গায় আগুনের সূত্রপাত দেখে সন্দেহ তৈরি হয়েছে এটি শর্টসার্কিট নাকি অন্য কিছু।
বিষয়গুলো নিয়ে অনেক প্রশ্ন জাগছে বলেও জানান তারা।
আগুনের ঘটনা নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সাবেক কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, সচিবালয়ের ভেতরে থাকা নিরাপত্তাকর্মীদের ব্যর্থতা ছিল। তৃতীয় কোনো পক্ষ সুযোগ নিয়ে আগুন লাগাতে পারে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্রকৌশলী আলী আহমেদ খান ইউএনবিকে বলেন, ‘বাংলাদেশ সচিবালয় কেপিআইভুক্ত এলাকা। যদিও এখানে আগেও একাধিকবার আগুন লেগেছে। পিডব্লিউ কাজও করেছে।
‘আবার কেন তাহলে আগুন লাগল? আমরা অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এভাবে কখনও দুর্ঘটনার আগুন লাগে না।’
তিনি বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা যখন আগুন লাগায় তখন একসঙ্গে একাধিক স্থানে আগুন লাগে। এমন দুর্বৃত্তায়নের আগুন আমি আগেও দেখেছি। এখানেও তাই হয়েছে।
‘এটা শর্টসার্কিট না, আগুন লাগানো হয়েছে। ২৫ ডিসেম্বর সরকারি ছুটি ছিল। হয়তো দুর্বৃত্তরা এই ছুটির সুযোগে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগাতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘এখানে ফায়ার সার্ভিস ছিল। ভেতরে ফায়ার স্টেশন আছে। আর ক্যামেরা তো আছেই। সার্বক্ষণিক দেখভালের লোক আছে।
‘সচিবালয়ের ভেতরে ও বাইরে এক বা দুজন লোক ছিল না। দেড়-দুই শতাধিক নিরাপত্তাকর্মী ছিল। তারা কি সবাই একসঙ্গে ঘুমাচ্ছিল? সেটা তো হতে পারে না।’
এ ঘটনাকে নাশকতা বিবেচনায় অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখার অনুরোধ জানিয়ে আলী আহমেদ বলেন, ‘এটা ডিজ্যাস্টার। কেউ চান্স নিয়েছে মনে হচ্ছে। গুরুত্ব সহকারে নাশকতার ঘটনা কি না, তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি।’
সচিবালয়ের আগুনকে সরাসরি নাশকতার অংশ হিসেবে দেখছেন ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, “এই আগুন স্যাবোটাজ (নাশকতা)। অবশ্যই এটা সন্দেহের শুরুতে রাখতে হবে। লাগানো আগুন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এটা কেপিআইভুক্ত এলাকা। আমাদের এখন চ্যালেঞ্জিং সময় যাচ্ছে। এটা ধরে নিতে হবে যে, এই আগুনের মোটিভ কী হতে পারে? এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে সচিবালয়ের চারটা ফ্লোরে আগুন, যেখানে চারটা কমিশন চলছে। যেখানে বিভিন্ন ধরনের নথিপত্রের প্রয়োজন হবে।
“এই আগুনের টার্গেটই হচ্ছে সেই গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়িয়ে দেয়া। কারণ কমিশনের জন্য বিভিন্ন সময় নথিপত্রের প্রয়োজন হবে। যে উচ্চপদস্থ কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাদের সবকিছুর আগে বিবেচনায় রাখতে হবে যে এটা স্যাবোটাজ। যদি প্রথমেই ‘স্যাবোটাজ’ না ধরে তদন্ত করা হয় তাহলে ভুল হবে।”
ফায়ার সার্ভিসের সম্ভাব্য ব্যর্থতাও তদন্ত দাবি
করেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (অপারেশনস) অবসরপ্রাপ্ত মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘সচিবালয়ে লাগা আগুন নির্বাপণে ১০ ঘণ্টা সময় নেয়া অবিশ্বাস্য। সচিবালয়ে আগুন লাগানো হয়েছে। নাশকতার যথেষ্ট কারণ আছে।
‘যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বেশি দুর্নীতির অভিযোগ, সেসব জায়গায় আগুন লাগছে। আরেক ভবনে তো আগুনই লাগেনি।’
তিনি বলেন, ‘গতকাল ছুটির দিন ছিল। রাত দেড়টায় আগুন লাগল, যেখানে বাইরের মানুষের প্রবেশের সুযোগ নেই। এর মধ্যে একটা পক্ষের ৪০ ঘণ্টার আলটিমেটাম চলছে।
‘কারা আলটিমেটাম দিয়েছে, তাদের ধরতে হবে। মধ্যরাতে লাগা আগুন নেভাতে ১০ ঘণ্টা লাগল কেন, তাও দেখতে হবে।’
শাকিল নেওয়াজ বলেন, ‘যদি দুর্ঘটনাজনিত আগুন হয়, তাহলে এক জায়গায় লাগার কথা। একসঙ্গে তিন জায়গায় আগুন লাগার কথা নয়। লাগানো হলেই তিন জায়গায় আগুন জ্বলবে।
‘তো পুলিশ, আনসার, বিজিবি ছিল। চারদিকে লাইট বন্ধ ছিল। ফায়ার সার্ভিস কী করল? তাদের কী দুর্বলতা ছিল? বঙ্গবাজার ১০ গজের ভেতরে। সেই আগুনও তারা দ্রুত নেভাতে পারল না। সচিবালয় কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান। সেখানেও তারা আগুন নেভাতে পারছেন না। এটা হয় না, মানা যায় না। তাদের ব্যর্থতাকেও তদন্তের বিবেচনায় আনতে হবে।’
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল ইউএনবিকে বলেন, ‘কী কারণে আগুনের সূত্রপাত তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সবকিছু নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। আগুনের ঘটনায় মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি করেছে। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আছেন। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি কাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সচিবালয়ে আগুনে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশে কিছুটা সীমাবদ্ধতা আছে। বিশেষ করে বড় গাড়িগুলো ঢোকানো কঠিন ছিল। সচিবালয়ের গেট ভেঙে দুটি বড় গাড়ি ঢোকানো হয়। রাত ১টা ৫২ মিনিটে আমরা মেসেজ পাই, সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে আগুন লেগেছে।
‘১টা ৫৪ মিনিটের মধ্যে আমাদের ইউনিট পৌঁছে যায়। মোট ১৯টি ইউনিট নিয়োজিত করা হয়। এর মধ্যে ১০টি ইউনিট সরাসরি কাজ করেছে। ৬, ৭, ৮ ও ৯ এই চারটি তলায় আগুন লেগেছে।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ইউএনবিকে জানান, সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের পর ৭ নম্বর ভবনের প্রতিটি দপ্তরের সিসিটিভি ভিডিও সংগ্রহ করা হয়েছে। ভিডিও দেখা হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন আসলে বিস্তারিত বলা যাবে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর বৃহস্পতিবার সকালে সচিবালয়ের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেছিলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নাশকতা কি না, তা তদন্তের পর বলা যাবে।
সচিবালয়ের মধ্যরাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকারের সিদ্ধান্ত জানাতে গতকাল সন্ধ্যায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তিন দিনের মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন দেবে। এ কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের প্রধান। এ ছাড়া রয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, সশস্ত্র বাহিনীর একজন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বুয়েটের ড. কাদরী মনসুর ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ড. ইয়াসির আরাফাত।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নেই। আমাদের ব্যর্থ করার এই ষড়যন্ত্রে যে বা যারাই জড়িত থাকবে, তাদের বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেয়া হবে না।’
আগুনের ঘটনা প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের বিগত সময়ে হওয়া অর্থলোপাট, দুর্নীতি নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছিলাম। কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটপাটের প্রমাণও পাওয়া গিয়েছিল।’
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ‘ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পিত’ বলে মন্তব্য করেছেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম।
তিনি বলেন, ‘সচিবালয়ে যেভাবে আগুন লেগেছে এবং এটার ধরন, অবস্থান যেমন, এটা কখনোই সাধারণভাবে বা ন্যাচারালি বা কোনো দুর্ঘটনাবশত আগুন হতে পারে না। আমরা আমাদের জায়গা থেকে মনে করি, ষড়যন্ত্র করে, প্ল্যান (পরিকল্পনা) করে এই আগুনটি লাগানো হয়েছে।’
অন্যদিকে ফ্যাসিস্টদের পক্ষে ‘সিমপ্যাথি গেইন’ ক্যাম্পেইন চালানো হচ্ছে উল্লেখ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘এই ক্যাম্পেইন না থামাতে পারলে আপনি শেষ। আজকে আমলা। আগামীকাল অন্য কেউ।’
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, “ফ্যাসিজমের এনাবলারদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের উদারতা দেখানোর পরিণাম এ কপালপোড়া জাতিকে অনন্তকাল ভোগাবে। হাসিনার (সাবেক প্রধানমন্ত্রী) ঘি খাওয়া ফ্যাসিস্ট এনাবলাররাই এখন মানবাধিকারের আলাপ দিয়ে ফ্যাসিস্টদের পক্ষে ‘সিমপ্যাথি গেইন’ ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে। এই ক্যাম্পেইন না থামাতে পারলে আপনি শেষ। আজকে আমলা; আগামীকাল অন্য কেউ।”
এদিকে শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের নথি চাওয়ার পর সচিবালয়ে ভয়াবহ আগুন লাগা ও অনেক নথি পুড়ে যাওয়া দেশের মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, এ আগুনের ঘটনায় মানুষের মনে বিরাট প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে শাস্তির জোর দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এক বিবৃতিতে বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘সচিবালয়ের মতো স্পর্শকাতর ভবনে ভয়াবহ আগুন এবং আগুন নেভানোর কাজে গিয়ে একজনের মৃত্যু ও দুই-তিনজন আহত হওয়ার ঘটনায় আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে ভস্মীভূত হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়া অস্বাভাবিক নয়।’
সচিবালয়ে বুধবার রাত ১টা ৫২ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। সচিবালয়ে অবস্থিত ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটটি আগুন নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করে রাত ১টা ৫৪ মিনিট থেকে। আগুনের তীব্রতা বেড়ে গেলে একে একে ১৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। শুরুতে আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য ৮টি ইউনিট কাজ করলেও পরে আরও ১১টি ইউনিট যুক্ত হয়।
সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের ছাই হয়ে যাওয়া চারটি ফ্লোরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ছিল। এ চারটি ফ্লোর একেবারে পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুনের ঘটনায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিগুলোকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং সড়ক, পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়েও আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য