যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর জাহিদের নামে মামলা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।
গুঞ্জন উঠেছে, ‘বহিষ্কৃত ছাত্রের সঙ্গে বিরোধের ঘটনাকে পুঁজি করে এ শিক্ষককে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র’ হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অভিযোগ, দুর্নীতি ও অনিয়ম চিহ্নিত করে ইতিপূর্বে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ায় নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মিজানুর রহমান এ মামলা করেন।
বিষয়টি অস্বীকার করে লাঞ্ছিত হওয়ায় মামলা করেছেন বলে দাবি মিজানুর রহমানের।
গত ২৮ জুন যশোর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মারধরের অভিযোগে মামলা করেন মিজানুর রহমান।
যা বলা হয়েছে এজাহারে
মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছেন, রাজশাহীর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনারেটর সরবরাহ করে। ওই প্রতিষ্ঠানের ১৮ লাখ টাকার (বিল) প্রকল্পের বিপরীতে সিকিউরিটি বাবদ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা জামানত রাখা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ওই সিকিউরিটির টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত ছাত্র আজিজুল ইসলামকে দিতে চাপ দিচ্ছিলেন অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর জাহিদ।
টাকা দিতে না চাইলে তারা প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের ওপর ক্ষুব্ধ হন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ জুন শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে আজিজ নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত ছাত্র প্রকৌশলী মিজানুরকে ডেকে ড. ইকবাল কবীর জাহিদের কাছে নিয়ে যান।
সেখানে গেলে ড. ইকবাল কবীর জাহিদ অ্যাকাডেমিক ভবনের পশ্চিম পাশে সিঁড়ির নিচে গালিগালাজ করে মিজানুরের কানে থাপ্পড় মারেন।
পরে বহিষ্কার হওয়া ছাত্র আজিজও মিজানুরকে চড় মেরে লাঞ্ছিত করেন।
যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আশরাফুজ্জামান জাহিদ বলেন, ‘মামলার অভিযোগটি একেবারে ঠিক নয়। ঘটনার সময় মিজানুর ও আজিজের মধ্যকার কথা-কাটাকাটি চলছিল। বিরোধ দেখে ড. ইকবাল কবীর জাহিদ এগিয়ে গিয়ে তাদের নিবৃত করেন।
‘বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যালারির সাউন্ড সিস্টেমের দুর্নীতির বিষয়ে একটি তদন্ত হয়েছিল। তদন্তে প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন ইকবাল কবীর জাহিদ। সে কারণে দেখে নেয়ার জন্য মামলায় তাকে জড়ানো হয়েছে।’
ড. মো. আশরাফুজ্জামান জাহিদ দাবি করেন, ঘটনা সাজানো বলেই মিজানুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অভিযোগ দিয়েছেন এবং আদালতে যে বক্তব্য দিয়েছেন; তার মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। একবার বলছেন, ২ নম্বর আসামি তাকে ডেকে নিয়ে গেছেন, আবার বলছেন বহিরাগত লোক এসে ডেকে নিয়ে গেছে। সময়েরও ভিন্নতা রয়েছে।
এ ছাড়া ঘটনার ২-৩ ঘণ্টা পর গিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মামলায় যাদের সাক্ষী করা হয়েছে, তারা কেউই ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী যবিপ্রবির ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মনিবুর রহমান জানান, ওই সময় তিনি ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী সিঁড়ি দিয়ে উঠছিলেন। তখন তিনি দেখেছেন, বহিষ্কৃত ছাত্র আজিজুলকে নিবৃত করে নিয়ে যাচ্ছেন ড. ইকবাল কবীর জাহিদ। এরপর তিনি সেখান থেকে চলে যান। ওই সময় ‘মিজানুর রহমানকে ড. ইকবাল কবীর মেরেছেন- এমন কোনো ঘটনা তিনি দেখেননি বা শোনেননি।’
যবিপ্রবির ফিজিওথেরাপি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. ফিরোজ কবীর জানান, ঘটনাটি জানতে পেরে তিনি সঙ্গে সঙ্গে সেখানে যান। ইকবাল কবীর জাহিদ মিজানুর রহমানকে মেরেছেন এমন কথা তিনি ওই সময় শোনেননি।
ফিরোজ কবীর বলেন, ‘ড. ইকবাল কবীর জাহিদ একজন প্রথিতযশা শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি গবেষণায়ও তিনি বরেণ্য। তিনি যবিপ্রবির জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক। করোনাকালে এই জিনোম সেন্টারের অবদান সারা দেশের মানুষ জানেন। ফলে দুর্নীতি অনিয়ম ধরায় যদি এমন ষড়যন্ত্র ও হয়রানির শিকার হতে হয়, তা খুবই দুঃখজনক।’
অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, ‘মারপিটের কোনো ঘটনার সঙ্গেই আমার ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা নেই। তদন্ত করে অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেয়ায় আমাকে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়ানো হয়েছে। এই ঘটনার প্রতিকার না হলে তো আর কেউ অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস পাবে না।’
মিজানুর রহমানের দাবি, তিনি মারপিটের শিকার হয়েছেন বলেই মামলা করেছেন। আর গ্যালারির সাউন্ড সিস্টেমের অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর জাহিদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মামলা’র প্রতিবাদে যবিপ্রবি ক্যাম্পাসে মানববন্ধন হয়েছে।
রোববার সকালে অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি এ মানববন্ধন করে। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. সেলিনা আকতার, সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আশরাফুজ্জামান জাহিদ, ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মনিবুর রহমান।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগাম অবসর চেয়ে সহকারী অধ্যাপক সামিয়া রহমানের আবেদন গ্রহণ করে তাকে অবসরের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পাশাপাশি তার কাছ থেকে ১১ লাখ ৪১ হাজার ৬০১ টাকা পাবে জানিয়ে এই টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত বুধবার ইস্যু করা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করা সামিয়াকে চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনার ৩১-০৩-২০২২ তারিখের পত্রের বরাতে এবং ২৬-০৪-২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে জানানো যাচ্ছে যে, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে আপনাকে দেনাপাওনা সমন্বয় সাপেক্ষে ১৫-১১-২০২১ তারিখ হতে বিধি মোতাবেক আগাম অবসর (আর্লি রিটায়ারমেন্ট) গ্রহণের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে।
‘সিন্ডিকেটের ২৬-০৪-২০২২ তারিখের সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে আপনাকে আরও জানানো যাচ্ছে যে, আপনার নিকট বিশ্ববিদ্যালয়ের পাওনা টাকা পরিশোধ না করলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
চিঠিতে জানানো হয়, ‘আপনার প্রভিডেন্ট ফান্ডে সুদসহ জমাকৃত টাকার পরিমাণ ১৬ লাখ ৫৮ হাজার ২১৬ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট আপনার দেনা ১১ লাখ ৪১ হাজার ৬০১ টাকা।’
বকেয়াগুলো কিসের টাকা জানতে চাইলে সহকারী রেজিস্ট্রার মোখতার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উনি যে তারিখ থেকে (গত ১৫ নভেম্বর) আর্ন লিভে গিয়েছিলেন সেই তারিখ থেকে উনার স্বেচ্ছায় অবসরের আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। এরপর থেকে উনি যে বেতন ভাতা পেয়েছেন সেগুলো। তবে তিনি যদি আবার অর্জিত ছুটির জন্য আবেদন করেন তাহলে ছুটির পরিবর্তে অর্থ মঞ্জুর পাবেন।’
গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগের মধ্যে ২০২১ সালের নভেম্বরে চার মাসের অর্জিত ছুটি নিয়ে দেশের বাইরে যান সামিয়া রহমান। গত ৩১ মার্চ তার ছুটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে মার্চ মাসের শুরুতে তিনি বিনা বেতনে আরও এক বছরের ছুটির জন্য আবেদন করেন। তবে সেটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনুমোদন না করার পর তিনি আগাম অবসরের আবেদন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্তে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির বিষয়টি প্রমাণ পাওয়ার পর সামিয়ার পদাবনতি ঘটায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় তাকে এক ধাপ পদাবনতি দিয়ে সহকারী অধ্যাপক করা হয়। তবে এই আদেশের বিরুদ্ধে তিনি উচ্চ আদালতে যান। গত ৪ আগস্ট সামিয়া রহমানকে পদাবনতির আদেশ অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে তাকে সব সুযোগ-সুবিধা ফিরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন আদালত।
তবে আগেই সামিয়া আগাম অবসরের আবেদন করায় এবং সেটি কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করায় আপাতত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার শিক্ষকতা করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সহকারী রেজিস্ট্রার মোখতার হোসেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘উনি (সামিয়া রহমান) আর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে পারবেন না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় যদি নতুন করে শিক্ষকের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় আর তখন যদি তিনি আবেদন করেন সে সময় ওনাকে নিয়োগ দেয়া হলে তারপর শিক্ষকতা শুরু করতে পারবেন।’
আরও পড়ুন:কুমিল্লার বরুড়ায় মাদ্রাসাশিক্ষকের বেত্রাঘাতে ছাত্রের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই শিক্ষককে আটক করা হয়েছে।
অসুস্থ অবস্থায় ১৫ বছরের মো. শিহাবকে শুক্রবার সকালে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে বেলা ১টা ১২ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।
তথ্যগুলো নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন বরুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার মজুমদার।
শিহাবের বাড়ি বরুড়া উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের শশইয়া গ্রামে। সে ইউনিয়নের মেড্ডা আল মাতিনিয়া নূরানী মাদ্রাসায় পড়ত।
তাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ওই মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুর রবের বিরুদ্ধে।
শিহাবের ভাবি সাবিকুন নাহার ঝুমুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার দেবরকে কয়েক দিন আগে শিক্ষক আব্দুর রব বেত দিয়ে মারেন। এ সময় সিহাব অসুস্থ হয়ে পড়লে শিক্ষকরা তাকে ওষুধ এনে খাওয়ান। তাতেও সে সুস্থ না হওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার মাদ্রাসা থেকে ফোন করে শিহাবের অসুস্থতার খবর জানানো হয়।
‘আমার শ্বশুর গিয়ে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসে। তার অবস্থা খারাপ হওয়ায় শুক্রবার সকালে উপজেলা হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে ডাক্তার তাকে কুমিল্লা মেডিক্যালে পাঠায়। ওইখানে নিলে দুপুরে সে মারা যায়।’
শিহাবের মা খালেদা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, “আমার ছেলেকে যখন বাসায় আনা হয় তখন তার অনেক জ্বর। অনেক রাতে সে আমাদের বলে, ‘আমার কেন জ্বর তোমরা কেউ জানতে চাইলে না? আমার হাত থেকে ভাত পড়ে গেছে দেখে হুজুর আমাকে জোড়া বেত দিয়ে অনেক পিটিয়েছে।’
“আমার ছেলের ছোট থেকে হাত ভাঙা। আমগাছ থেকে পড়ে গিয়ে হাত ভাঙে। তাই হয়তো হাত থেকে ভাত পড়ে গেছে। এ জন্য তাকে মারল আব্দুর রব হুজুর। আমার ছেলে জ্বরে সকালে বমি করে দেয়। এরপর আমরা হাসপাতাল নিই।”
তিনি বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘আমার ঘরে এত ভাত, আমার ছেলেকে ভাতের জন্য মারল!’
ঝলম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি স্থানীয় মেম্বারের কাছে শুনেছি মাদ্রাসার একজন শিক্ষক তাকে প্লেট দিয়ে আঘাত করেছে। মাদ্রাসায় খোঁজ নিয়ে শুনেছি এমন কিছুই, তবে সিরিয়াস কিছু হয়নি। আমি এখন ঘটনাস্থলে যাচ্ছি, সেখানে গিয়ে জেনে বিস্তারিত বলতে পারব।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আব্দুর রবের মুঠোফোনে দুপুরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। নিউজবাংলার পরিচয়ে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
মেড্ডা আল মাতিনিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আহমেদ শফি বলেন, ‘আমি সিহাবের পরিবারের সঙ্গে কথা বলছি। আপনি পরে ফোন করলে খুশি হব।’
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মোখলেসুর রহমান জানান, শিহাবকে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্ত করলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
মরদেহ থানায় নেয়া হয়েছে জানিয়ে বরুড়া থানার ওসি ইকবাল বলেন, ‘আমরা মরদেহের পিঠে আঘাতের চিহ্ন পেয়েছি। ওই শিক্ষককেও জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য নিয়েছি। অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:বরিশালের বাকেরগঞ্জে ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
বাকেরগঞ্জের জিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে বৃহস্পতিবার দুপুরে মহাসড়ক অবরোধ করে তারা বিক্ষোভ করেন। আধা ঘণ্টা পর পুলিশ গিয়ে তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক ইদ্রিসুর রহমান খান স্বপন অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে বিভিন্ন সময়ে শ্লীলতাহানি করেছেন। ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে বুধবার থানায় অভিযোগ দেয়া হলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
ছাত্রীর মায়ের দেয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, তার মেয়েকে বিভিন্ন সময় শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দিতেন প্রধান শিক্ষক ইদ্রিসুর। শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করতেন। তার প্রস্তাবে রাজি না হলে পরীক্ষায় পাস না করানোর হুমকিও দিতেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, গত ১ আগস্ট শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে মেয়েটিকে শারীরিকভাবে হয়রানি করার চেষ্টা করেন। সে সময় সহপাঠীরা গিয়ে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। বিষয়টি জানালে মা পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে থানায় অভিযোগ করেন।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা আকমল হোসেন বলেন, ‘আমরা স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এর আগেও বাকেরগঞ্জ দুধল মৌ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকাকালে নারীঘটিত অভিযোগ উঠেছিল। ওই সময় তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষক ইদ্রিসের ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
তবে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আশুতোষ ব্রক্ষ্ম জানিয়েছেন, অভিযোগ সত্য নয়। স্থানীয় একটি পক্ষ পরিচালনা কমিটির সভাপতি হতে না পেরে প্রধান শিক্ষককে অপসারণের জন্য পরিকল্পিতভাবে ঘটনা সাজিয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত সরকার জানান, ওই ছাত্রীর মায়ের দেয়া অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন:অভিভাবককে জুতাপেটা, অনিয়মসহ নানা অভিযোগে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার পশ্চিম সারডুবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে।
তদন্তের পর অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম নবী।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিদ্যালয়ের বিষয়টি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় বৃহস্পতিবার প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে।’
পশ্চিম সারডুবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার ছবির বিরুদ্ধে যথাযত পদক্ষেপ নেয়ার দাবিতে গত ১৯ জুলাই ঢাকা-বুড়িমারী মহাসড়কে মানববন্ধন করেন অভিভাবকরা।
তারা অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার ছবি দেরিতে স্কুলে আসেন, এক অভিভাবককে তিনি জুতাপেটা করেছিলেন, স্কুলের অর্থ আত্মসাতেও তিনি জড়িত। এরপর প্রধান শিক্ষক ১১ জন অভিভাবকের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছিলেন।
অভিভাবক আবদার আলী বুধবার বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার কীভাবে একজন অভিভাবককে মারেন, আবার মামলাও দেন? যতদিন ওনার অপসারণ না হবে, ততদিন আমরা আমাদের বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাব না।’
আফরোজা বেগম নামে আরেক অভিভাবক সে সময় বলেন, ‘স্কুলের হেড ম্যাডাম বাচ্চাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। অভিভাবককে তার জুতা দিয়ে পেটানোর কারণে আমরা বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাব না। উনি বদলি হলে পাঠাব।’
অভিভাবকরা জানান, গত ১৮ জুলাই দেরিতে স্কুলে যাওয়ার অভিযোগ তুলে এর কারণ জানতে প্রধান শিক্ষকের কাছে যান এক অভিভাবক। তখন প্রধান শিক্ষক তাকে জুতাপেটা করেন। এ ঘটনা শুনে অভিভাবকরা মানববন্ধন করেন।
১৯ জুলাইয়ের পর থেকে শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাননি অভিভাবকরা।
সরেজমিন বুধবার স্কুলে দেখা যায়, কোনো শিক্ষার্থী না থাকায় শিক্ষকরা অলস সময় কাটাচ্ছেন।
এই স্কুলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১২০ জন শিক্ষার্থী আছে। প্রধান শিক্ষকসহ আছেন সাতজন শিক্ষক।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার ছবিকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা স্কুলে না আসায় আমরা প্রত্যেকে হোম ভিজিট করেছি। কিন্তু অভিভাবকদের দাবি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বদলি না হওয়া পর্যন্ত সন্তানদের স্কুলে পাঠাবেন না। আমরা প্রতিদিনই তাদের বাড়িতে যাচ্ছি, কিন্তু একই কথা বলছেন।
‘আমরাও অতিষ্ঠ তার আচরণে। দুপুর ১২টায় আসেন ১টায় যান। প্রধান শিক্ষকের একক আধিপত্য, স্বেচ্ছাচারিতা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা, রুটিন মেইনটেন্যান্সে অনিয়ম, এমনকি স্কুলের ফ্যান খুলে বাড়িতে নিয়ে যাওয়াসহ বহু অভিযোগ আছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।’
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ব্যালট পেপার নিয়ে সংঘটিত ঘটনায় ব্যার্থতার দায়ে পদাবনতি পায় তৎকালীন হল প্রাধ্যক্ষ শবনম জাহান। তাকে স্বপদে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট।
মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব চৌধুরী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড মো. হারুনুর রশীদ খান।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সভার সভাপতিত্ব করেন।
২০১৯ সালের ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচনের সময় কুয়েত মৈত্রী হলে সিল দেয়া বস্তাভর্তি ব্যালট পাওয়ার অভিযোগ ওঠে। এসব ব্যালটে ছাত্রলীগের হল সংসদের প্রার্থীদের পক্ষে ভোট দেয়া ছিল।
এরপর হলের ভোট গ্রহণ সাময়িক স্থগিত হয়ে যায় এবং ওই সময় এই হলের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ ড. শবনম জাহানকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
ওই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তাৎক্ষণিকভাবে শবনম জাহানকে ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে অধ্যাপক মাহবুবা নাসরিনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
পরে ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ।
ওই কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ শবনম জাহানকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।
পরে ওই ঘটনার তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি করা হয়।
এক বছরের বেশি সময় পর ওই কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০২০ সালে এই শিক্ষককে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত না করে পদাবনতি অর্থাৎ ব্যাবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে অবনমিত করা হয়।
সিন্ডিকেট সভার এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন শবনম জাহান।
সেই রিটের রায়ে তাকে 'প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধাসহ' ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পদে পুনর্বহাল করার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
রায়ের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সিন্ডিকেট এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান অধ্যাপক হারুনর রশীদ।
তিনি বলেন, ‘হাইকোর্টের রায় বিচার বিশ্লেষণ করে সিন্ডিকেটের সকল সদস্য একমত হয়ে তাকে স্বপদে পুনর্বহালে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবিরতির পক্ষে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
তিনি বলেন, ‘আজকাল বিশ্বের অনেক দেশে শিক্ষার্থীরা গ্যাপ ইয়ার নেয়। আমি কোনো একটি বিষয় নিয়ে পড়ছি, মাঝে অন্য কোনো কাজ করতে চাইলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে কেউ তিন বছর, কেউ বিশ বছর পর পড়তে এসেছেন। একটি বিষয়ে পড়ে এসেছেন, আরেকটি বিষয়ে পড়তে চান, তিনি কেন এই সুযোগ পাবেন না?
রোববার দুপুরে রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) উত্তরা ইউনিভার্সিটির সপ্তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
দীপু মনি বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং চলছে। এর ফলাফল খুব আশাব্যঞ্জক। শিক্ষার্থীরা আনন্দের মধ্য দিয়ে শিখবে। প্রশ্ন করবে। কিন্তু আমরা প্রশ্ন করাকে নিরুৎসাহিত করি। একদিকে সমাজে গণতন্ত্রের কথা বলি, অন্যদিকে শিশুদের প্রশ্ন করাকে নিরুৎসাহিত করি। এ জন্য আমাদের চিন্তার জগতে পরিবর্তন আনতে হবে।’
নারী নির্যাতন এবং বিদ্যুৎ নিয়েও কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘নারী নির্যাতনকারীর যেই পরিচয়ই থাকুক না কেন, তাকে অবশ্যই অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে। কেউ যদি তার রাজনৈতিক পরিচয়, গোষ্ঠীগত পরিচয় নিয়ে নারী নির্যাতনের মতো কোনো ধরনের অপরাধের দায় থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করে, সেটি শেখ হাসিনার সরকার কখনই হতে দেবে না। কারণ সরকারের কাছে দলীয় বা ধর্মীয় গুরুত্ব নয়, যে অপরাধ করে সে অপরাধী। আমরা সবাই যেন সেটা মনে রাখি।’
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিদ্যুৎ নিয়ে অপপ্রচার আছে, সেগুলোয় কেউ কান দেবেন না। আমাদের সাশ্রয়ী হতে হবে, যাতে সামনে কঠিন দিন এলেও সমস্যায় না পড়ি। অর্থনৈতিকভাবে আমরা এখনও স্বস্তিপূর্ণ জায়গায় আছি। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় আমরা করোনা মোকাবিলা করতে পেরেছি, উন্নত অনেক দেশই যা পারেনি।’
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও উত্তরা ইউনিভার্সিটির আচার্য কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষমতাবলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তার বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ। আরও বক্তব্য দেন উত্তরা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আজিজুর রহমান ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন আরা লেখা। শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি প্রদান প্রক্রিয়া পরিচালনা করেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আলী।
রাজশাহীর গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে ‘মারধরের’ ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
নিউজবাংলাকে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানান মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন উইং) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে মারধরের যে অভিযোগ উঠেছে, তা তদন্ত করার জন্য মাউশির রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. কামাল হোসেনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ওমর ফারুক চৌধুরী ৭ জুলাই রাতে রাজশাহী নগরীতে নিজ কার্যালয়ে কলেজ অধ্যক্ষকে কিল, ঘুষি ও হকিস্টিক দিয়ে পেটান বলে অভিযোগ ওঠে। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় গত ১৩ জুলাই।
ওই ঘটনার পর অধ্যক্ষ সেলিম রেজা বিষয়টি নিয়ে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন, কিন্তু রহস্যজনক কারণে একপর্যায়ে তিনি মুখ বন্ধ করে ফেলেন। অনেকটা গা ঢাকা দেন তিনি। দুই দিন ধরে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না।
ফোনে কিংবা সরাসরি কোনো বক্তব্য না দিয়ে বুধবার ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নিজের মন্তব্য দেন অধ্যক্ষ।
গত ১৪ জুলাই এমপি ফারুক চৌধুরীর সঙ্গেই সাংবাদিকদের সামনে হাজির হন সেলিম রেজা। রাজশাহী নগরীর থিম ওমর প্লাজার পাশে ওমর ফারুক চৌধুরীর নিজস্ব কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ওমর ফারুক চৌধুরী দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। এতে তিনি রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হয়েছেন। আওয়ামী লীগের সম্মানহানি হয়েছে।
ওমর ফারুক বলেন, ‘৭ জুলাই রাতে কোনো কলেজশিক্ষককে আমি মারধর করিনি। এটা মিথ্যা কথা। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আমাকে হেয় করার জন্য এমন তথ্য প্রচার করছে।’
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ সেলিম রেজা বসেছিলেন অভিযুক্ত ওমর ফারুক চৌধুরীর পাশেই। তিনিও দাবি করেন, সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী তাকে মারধর করেননি।
সেলিম রেজা লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘গণমাধ্যমে যেভাবে বলা হচ্ছে যে, সংসদ সদস্য আমাকে মারধর করেছেন, তা ঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে আমরা কয়েকজন অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ ঈদ উপলক্ষে এমপি সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। এ সময় অধ্যক্ষ ফোরামের কমিটি গঠন এবং অভ্যন্তরীণ অন্যান্য বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয়। একপর্যায়ে এমপি মহোদয় আমাদের নিবৃত্ত করেন। এ ছাড়া অন্য কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
মারধরের শিকার না হলে ঘটনার রাতে চিকিৎসকের কাছে কেন গেলেন, অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে একটু ধাক্কাধাক্কি হয়েছিল। তাতে সামান্য জখম হয়েছে।’
‘আমরা শুনেছি আপনার হাতে কনুইয়ের কাছে বড় জখম হয়েছে। কতটা জখম হয়েছে তা একটু দেখাবেন কি?’—এমন প্রশ্নের জবাবে সেলিম রেজা তা দেখাতে অস্বীকৃতি জানান।
এমপি না মেরে থাকলে তাকে কে মেরেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আবারও বলেন, ‘সামান্য ধাক্কাধাক্কি হয়েছে অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে।’
ওই সময় তার পাশে বসা গোদাগাড়ীর মাটিকাটা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল আউয়াল রাজু অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে ধাক্কা মারার দায় নিজের কাঁধে নেন।
এমপি ফারুক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত অধ্যক্ষ রাজু বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে অধ্যক্ষ ফোরামের পক্ষ থেকে সংসদ সদস্যের সঙ্গে দেখা করার জন্য আমিই সব অধ্যক্ষকে ফোন করে ডাকি। সেখানে ফোরামের কমিটি গঠন এবং আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়। একপর্যায়ে আমি অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে ধাক্কা দিই। এ সময় সেখানে থাকা আলমারি ও চেয়ারে ধাক্কা খেয়ে সেলিম রেজা আহত হন।’
এমপি তাদের থামিয়েছেন বলে দাবি করেন রাজু। একজন এমপির সামনে শিক্ষকদের এমন আচরণের জন্য তিনি ক্ষমা চান।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য