ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরের চেয়ে ৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়িয়ে ঘোষণা করা বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৯২২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
বাজেটে গবেষণা খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ৪ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে গবেষণায় বরাদ্দ ছিল ১১ কোটি ৫ লাখ টাকা। আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫ কোটি ৫ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দীন বাজেট উপস্থাপন করেন। পরে সর্বসম্মতিক্রমে তা পাস করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো আখতারুজ্জামান অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
অধিবেশনের শুরুতেই সিনেট চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও দেশবরেণ্য ব্যক্তিবর্গের প্রতি শোক জ্ঞাপনে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
চলতি বছরের তুলনায় আসন্ন বাজেটে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুদান ৫০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বেড়েছে।
নতুন অর্থবছরের (২০২২-২৩) জন্য প্রস্তাবিত ৯২২ কোটি ৪৮ লাখ টাকার বাজেটে ইউজিসি থেকে অনুদান হিসেবে পাওয়া যাবে ৭৮১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব খাতগুলো থেকে আয় ধরা হয়েছে ৮৩ কোটি টাকা।
অর্থাৎ বাজেটে ৫৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকার মতো ঘাটতি থাকবে, যা প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ।
প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী আসন্ন অর্থবছরে ৬৭১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও পেনশন খাতে। এটা প্রস্তাবিত মোট বাজেটের ৭২ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
অধিবেশনে চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটও পাস করা হয়। কোষাধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ চলতি বছরের ৮৬০ কোটি ৬৮ লাখ টাকার সংশোধিত বাজেট পেশ করেন। চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) জন্য গত বছর ৮৩১ কোটি ৭৯ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন হয়েছিল। অর্থাৎ এ বছর ২৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা বেশি খরচ হয়েছে।
বাজেট উপস্থাপনের সময় ঘাটতি বাজেট নিয়ে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো লাভজনক প্রতিষ্ঠান নয় বলে নিজস্ব তহবিল থেকে ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে না। প্রতি বছর এভাবে তহবিল ঘাটতি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন কষ্টসাধ্য হবে।
‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয়ের নতুন নতুন খাত খুঁজে বের করতে হবে। অন্যথায় সরকারের কাছে বিশেষ অনুদান চাওয়া যেতে পারে।’
মমতাজ উদ্দীন বলেন, ‘২০২১-২২ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রী নিজ উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও একাডেমিক ভবন মেরামত ও সংস্কারের জন্য ইউজিসিকে বিশেষ তহবিল দিয়েছেন যেখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এ জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।’
এদিকে উপস্থাপিত বাজেটে গবেষণা খাতে ১৫ কোটি ৫ লাখ টাকা তথা মোট বাজেটের ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ বরাদ্দ হওয়াকে শিক্ষক ও প্রাক্তন গ্র্যাজুয়েট হিসেবে ‘লজ্জাকর’ বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের সাবেক চেয়ারপারসন এবং সিনেট সদস্য অধ্যাপক এজেএম শফিউল আলম ভুঁইয়া।
পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন
বিশ্বব্যাংকের অভিযোগকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করার জন্য সিনেট সভা থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনে প্রস্তাব উত্থাপন করেন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবদুস সামাদ। পরে তার এই প্রস্তাবে অনেকে সমর্থন জানান। এরপর সিনেটের চেয়ারম্যান এবং উপাচার্য আখতারুজ্জামান এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন:সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইনের বিরুদ্ধে ‘গুরুতর’ অভিযোগ তুলেছেন সংগঠনের একই শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফৌজিয়া জাফরিন প্রিয়ন্তী।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘আমার অপরাধ ছিল আমি তার কুপ্রস্তাব মেনে নেইনি। ভেঙে গেল ৭ বছরের ভাই-বোনের সম্পর্ক। একমাত্র ছাত্রী হলে ছাত্রলীগ থেকে ৩০০ মেয়ে সিট পেলেও আমাকে সে হলে উঠতে দেয়নি।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটির কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ দেয়ার পর শুক্রবার রাতে এই নেত্রী নিজের টাইমলাইনে এক পোস্টের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি অভিযোগ তুলে ধরেন।
ফৌজিয়া বলেন, ‘আমার জন্য তার অনেক বড় ভাইরা বললেও তিনি কানে তোলেননি। কারণ তার তো আর আমাকে কর্মী হিসেবে প্রয়োজন নেই। এখন তিনি নেতা, প্রয়োজন মেটাতে পারলেই কেবল প্রয়োজন বোধ করবেন। বাংলাদেশের এমন কোনো হল আছে কি যেখানে কোনো গেস্ট গিয়ে একদিন থাকতে পারে না? কিন্তু এই আমি প্রিয়ন্তী হলে একদিন গিয়েছিলাম দেখতে যে হলে থাকার কেমন অনুভূতি। কিন্তু এই আকতার জানতে পেরে প্রভোস্ট ম্যামকে চাপ দিয়ে সেই রাতেই আমাকে হল থেকে বের হতে বাধ্য করে।’
‘আমার কি অপরাধ ছিল? ১৪ সাল থেকে প্রতিদিন আট-দশ ঘন্টা ইভেন আরও বেশি পরিশ্রম করে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কমিটিতে এসেছি। আমাকে হলে উঠতে দেওয়া হয়নি। এর পেছনের প্রধান কারণ হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার। আমার দীর্ঘ আরাধ্য ও প্রতীক্ষার হল থেকে, আমার প্রাপ্য অধিকার থেকে আমাকে বঞ্চিত করেছে।’
প্রিয়ন্তী ফেসবুকে আরও লিখেন, ‘দীর্ঘ ৭ বছর তার পিছনে হেঁটেছি। আপনি তার কয় দিনের কর্মী সেটা আগে ভাবুন। আমার মাদারীপুরের তিনজন ক্যান্ডিডেট ছিল। কিন্তু তার মধ্যে থেকে তাকে বেছে নিয়েছিলাম নেতা হিসেবে। তার জন্য কত কিছু করছি যা লিখে বলা সম্ভব না। আল্লাহ মনের আশা পূরণ করলেন, কিন্তু তারপর থেকে আকতার ভাইয়ের আসল রূপ বের হতে থাকলো।
‘লেখক দাদার বাসা থেকে যেদিন ফুল দিয়ে নিচে নামলাম তার সাথে, সেদিন সকল পোস্টেড নেতার সামনে বসে আমাকে আর জিনিয়া আফ্রিনকে উদ্দেশ করে বলল- কোন হাইকমান্ডের ফোনে সে হল কমিটি দিবে না; দরকার হয় সে সাবেক হয়ে যাবে। সে নেতা হয়ে গেছে। তার নামের আগে সাবেক লেখা থাকবে তার সমস্যা নেই। আগে তার কর্মী হতে হবে, তাকে নেতা মেনে ধারণ করতে হবে। তবেই সেই হলের নেত্রী বানাবে। আমরা অবাক হয়ে রইলাম। হলের কথা কই থেকে আসলো? নেতা হল ১০ দিন মাত্র তখন। সেদিনের পর থেকে তার বিভিন্ন আবদার রাখতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে তার সাথে আমার দীর্ঘ ৭ বছরের রাজনীতিকে সে মুহুর্তেই অস্বীকার করেছে।’
এ বিষয়ে ফৌজিয়া জাফরিন প্রিয়ন্তী নিউজবাংলাকে বলেন, কুপ্রস্তাব বলতে বুঝাতে চেয়েছি, তাঁর মতো করে চলতে হবে। সে যেখানে যেতে বলবে সেখানে যেতে হবে, যা করতে বলবে তা করতে হবে। আমি তো রাজনৈতিক প্রোগ্রাম কোনো কিছুই বাদ দিতাম না। কিন্তু এর বাইরে সে কী বুঝাইছে আশা করি আপনাদের এটা আর ডিটেইলস-এ বলতে হবে না।’
এদিকে এ পোস্ট দেয়ার পর থেকে চাপের মুখে পড়েছেন বলে জানান এই নেত্রী। বলেন, ‘পোস্ট দেওয়ার পর আকতার হোসাইন আমাকে কল দিয়ে বলেন- যা করলি অনেক ভালো করলি। আমি যখন তাকে জিজ্ঞেস করলাম- আপনি আমার সঙ্গে অন্যায় করেননি? তখন তিনি বলেন- হ্যাঁ, আমি অন্যায় করেছি। কিন্তু তুই এটা এ সময়ে তুলে না ধরলেও পারতি।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইনকে কল দেয়া হলেও তিনি সংযোগ কেটে দেন।
প্রসঙ্গত, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত জন্য স্থগিত করা হয়েছে। ছাত্রলীগ সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শুক্রবার এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে বাণিজ্য অনুষদভুক্ত ‘গ’ ইউনিটের প্রথমবর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষার ফল রোববার প্রকাশ করা হবে।
শনিবার বিকেলে জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক মাহমুদ আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোববার দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনস্থ অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান আনুষ্ঠানিকভাবে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করবেন।
গত ২ জুন ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সাতটি বিভাগীয় শহরে ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের জন্য নির্ধারিত এই ইউনিটে মোট আসন রয়েছে ৯৩০টি। এর বিপরীতে ৩০ হাজার ৬৯৩ শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। সে অনুযায়ী প্রতিটি আসনের বিপরীতে ৩৩ শিক্ষার্থী ভর্তিযুদ্ধে অংশ নেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আজ। ১৯২১ সালের এই দিনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত এই বিদ্যায়তনে। দিবসটি উদযাপনে নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য- ‘গবেষণা ও উদ্ভাবন: ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সহযোগিতা’।
১৯২১ সালের ১ জুলাই ছাত্রছাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার দুয়ার। তৎকালীন ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত রমনা এলাকায় প্রায় ৬০০ একর জমির ওপর পূর্ববঙ্গ এবং আসাম প্রদেশ সরকারের পরিত্যক্ত ভবন ও ঢাকা কলেজের (বর্তমান কার্জন হল) ভবনগুলোর সমন্বয়ে গড়ে ওঠে এই বিশ্ববিদ্যালয়।
তিনটি অনুষদ ও ১২টি বিভাগ নিয়ে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু হয়। প্রথম শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিভাগে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৮৭৭ জন এবং শিক্ষক সংখ্যা ছিল ৬০ জন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩টি অনুষদ, ১৩টি ইনস্টিটিউট, ৮৪টি বিভাগ, ৬০টি ব্যুরো ও গবেষণা কেন্দ্র এবং ছাত্রছাত্রীদের ১৯টি আবাসিক হল, ৪টি হোস্টেল ও ১৩৮টি উপাদানকল্প কলেজ ও ইনস্টিটিউট রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৪৬ হাজার ১৫০ জন। পাঠদান ও গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় ২ হাজার ৮ শিক্ষক।
এদিকে ১০২তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবন, কার্জন হল, কলা ভবন ও ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। নেয়া হয়েছে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান শুক্রবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের খেলার মাঠে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ১০টার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল ও হোস্টেল থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ শোভাযাত্রা সহকারে শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের খেলার মাঠে সমবেত হবেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলোর পতাকা উত্তোলন, পায়রা উড়ানো, কেক কাটা এবং সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয়ের থিম সং পরিবেশিত হবে।
সকাল ১১টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে ‘গবেষণা ও উদ্ভাবন: ইন্ডাস্ট্রি একাডেমিয়া সহযোগিতা’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) হলে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন বড় ভাই আবরার ফাহাদ। সেই বিশ্ববিদ্যালয়েই এবার ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ। তবে এখানে ভর্তি হবেন কি-না তা নিয়ে দ্বিধায় আছেন জুনিয়র আবরার।
বুয়েটের বিভিন্ন বিভাগে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে বুয়েটের ওয়েবসাইটে এই ফল প্রকাশ করা হয়।
ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী আসির আনজুম খান।
স্নাতক ভর্তির ফলাফলে আবরার ফাইয়াজ ৪৫০তম হয়ে যন্ত্রকৌশল বিভাগে চান্স পেয়েছেন। তার রোল নম্বর ৫৫৩৯৫।
ছেলে বুয়েটে চান্স পাওয়ায় খুশি বাবা বরকত উল্লাহ ও মা রোকেয়া খাতুন। কিন্তু এ সংবাদ পাওয়ার পর বুয়েট ক্যাম্পাসে বড় ছেলেকে হারানোর শোক নতুন করে বুকে চেপেছে। কেঁদেই চলেছেন মা।
আবরার হত্যাকাণ্ডের পর ছোট ছেলে ফাইয়াজকে ঢাকা কলেজ থেকে এনে তার মা কুষ্টিয়া কলেজে ভর্তি করেন। ফাইয়াজকে তিনি নিজের কাছেই রেখে দিতে চেয়েছেন।
আবরারের বাবা-মা ও ছোট ভাই কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই রোডে বাস করেন। সেখানেই এখন আছেন তারা।
আবরার ফাইয়াজ বলেন, ‘বুয়েটে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা আছে। কিন্তু মা আমাকে ঢাকায় পাঠাতে চান না। পরে কথা বলে ঠিক করব।’
ছেলেকে বুয়েটে ভর্তি করাবেন কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত নন বরকত উল্লাহও। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ভেতরের পরিস্থিতি কী সে বিষয়ে আগে খোঁজ-খবর নিয়ে দেখি। আমার ছেলে বর্তমানে গাজীপুরের আইআইইউটিতে ভর্তি রয়েছে। বুয়েটে ভর্তি হতে হলে তো সেখানে ভর্তি বাতিল করতে হবে। সবাই মিলে চিন্তা-ভাবনা করে দেখি কী করা যায়।’
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে নিহত হন তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক্স প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদ। ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর এই মামলায় ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত।
বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা ও ফল
বুয়েটে ভর্তিতে এবার লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়া ৬ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ২ হাজার ১৫৯ জন প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ও অপেক্ষমাণ তালিকায় স্থান পেয়েছেন। যাচাই-বাছাইয়ের পর তাদের মধ্য থেকে ১ হাজার ২৭৯ জন এবার বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পাবেন।
এর আগে ৪ জুন বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার প্রাক-নির্বাচনী পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। সেই পরীক্ষায় প্রথম ছয় হাজার শিক্ষার্থীকে লিখিত পরীক্ষার জন্য মনোনীত করা হয়। ১৮ জুন অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তিযোগ্য প্রার্থীদের মেধা তালিকা তৈরি করেছে বুয়েট।
বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার লিখিত পর্ব হয় দুটি গ্রুপে। ‘ক’ গ্রুপে ছিল প্রকৌশল বিভাগগুলো এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ। ‘খ’ গ্রুপে প্রকৌশল বিভাগগুলো এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের পাশাপাশি রয়েছে স্থাপত্য বিভাগ।
প্রাক-নির্বাচনী পর্বে ‘ক’ ও ‘খ’ দুই গ্রুপের জন্যই গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন বিষয়ের ওপর ১০০ নম্বরের বহুনির্বাচনী পরীক্ষা হয়।
লিখিত পর্বে ‘ক’ গ্রুপের জন্য ৪০০ ও ‘খ’ গ্রুপের জন্য ৬৫০ নম্বরের পরীক্ষা হয়।
এ ক্ষেত্রে ‘ক’ গ্রুপের পরীক্ষা হয় গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন বিষয়ের ওপর। আর ‘খ’ গ্রুপে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নের পাশাপাশি মুক্তহস্ত অঙ্কন এবং দৃষ্টিগত ও স্থানিক ধীশক্তি বিষয়ের ওপর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী প্রকৌশল বিভাগগুলো এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগে ভর্তির জন্য ১ হাজার ২২৫ জন শিক্ষার্থী প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন; অপেক্ষমাণ তালিকায় আছেন ৭৫৯ জন। আর স্থাপত্য বিভাগে ভর্তির জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন ৮৪ জন; অপেক্ষমাণ তালিকায় আছেন ৮৯ জন।
আরও পড়ুন:১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ মঞ্চে নিয়ে আসছে আমেরিকান নাট্যকার ইউজিন ও’নিল রচিত বাস্তববাদী ঘরানার নাটক ‘দ্য আইসম্যান কমেথ’।
নাটকটি ১ জুলাই থেকে শুরু হয়ে আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটমন্ডল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হবে।
বিভাগটির তৃতীয় বর্ষ পঞ্চম সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের অভিনয়ে নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানভীর নাহিদ খান।
নাটকে নৈরাজ্যবাদী নেতা ল্যারি ভিলের চরিত্রে অভিনয় করেছেন মহিউদ্দিন রনি, পানশালার মালিক হ্যারি হোপ চরিত্রে জাদিদ ইমতিয়াজ আহমেদ, সেলসম্যান হিকি চরিত্রে প্রাণকৃষ্ণ বণিক, বার টেন্ডার রকি চরিত্রে জয়া মারিয়া কস্তা ও বার সিঙ্গার চাক চরিত্রে ইফতি শাহরিয়ার রাইয়ান, হল্যান্ডের সাবেক জেনারেল ওয়েটজয়েন চরিত্রে মুজাহিদুল ইসলাম রিফাত, ক্যাপ্টেন লুইস চরিত্রে রিফাত জাহান শাওন।
এ ছাড়া লেফটেন্যান্ট ম্যাকগ্লোয়েন চরিত্রে তরিকুল সরদার, ডোনা প্যারিট চরিত্রে মৌমিতা সরকার, প্রাক্তন হার্ভার্ড শিক্ষার্থী উইলি চরিত্রে তাহিয়া তাসনিম মীম, টুমোরো আন্দোলন নেতা জিমি টুমোরো চরিত্রে সালমান নূর, পতিতা চরিত্রে রিফাত করবী, দেবলীনা দৈবী ও রিজভী সুলতানা এবং মানসিক বিকারগস্ত মদ্যপ হুগো চরিত্রে অভিনয় করছে মিরহাজুল শিবলী।
নাটকটির নেপথ্যে, মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনা এবং অভিনয় সৃজন রূপায়ণ করেছেন বিভাগের চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান লিয়ন, দেহবিন্যাস করেছেন অমিত চৌধুরী, পোশাক পরিকল্পনা করেছেন কাজী তামান্না হক সিগমা ও আহম্মেদ রাউফুর রহিম।
এ ছাড়া নাটকে দ্রব্য পরিকল্পনা করেছেন বিভাগের শিক্ষক উম্মে সুমাইয়া মনি ও আহসান খান, সংগীত পরিকল্পনা করেছেন রুদ্র সাওজাল কাব্য, প্রক্ষেপণ করেছেন ওবায়দুর রহমান সোহান এবং আলোক প্রক্ষেপণ করেছেন শাহাবুদ্দিন মিয়া, পোস্টার ডিজাইন করেছেন দেবাশীষ কুমার দে।
নাটকে দেখা যাবে, হ্যারি হোপের পানশালায় নানা পেশার, নানা দেশের,নানা মানুষ কিছু অবাস্তব স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকে। সেই পানশালার সবাই নিজের জীবনের ব্যর্থতা থেকে বেরিয়ে পুনরায় নতুন করে জীবন শুরু করতে চায় আগামীকাল থেকে। কিন্তু তাদের সেই আগামীকাল আর আসে না। চার অঙ্কের নাটকটি শেষ হয় সেলসম্যান হিকি কর্তৃক স্ত্রী হত্যার আত্মস্বীকৃত উন্মোচন এবং পিতৃপরিচয় সংকটে ভোগা ডোনা প্যারিটের আত্মহত্যার মাধ্যমে।
নির্দেশক তানভীর নাহিদ খান বলেন, ‘সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতেও নাটকটি প্রাসঙ্গিক। বর্তমান সময়ে মহামারি, জলবায়ুর বিরূপ পরিস্থিতি, দুর্যোগের মাঝেও আগামীর স্বপ্ন দেখার মাঝেই মানুষ বেঁচে থাকার প্রেরণা পায়।’
তিনি বলেন, ‘বাস্তববাদী ধারার এই নাটকে নিবিড় অভিনয় প্রশিক্ষণের প্রতি মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে এবং সর্বপ্রকার অভিনয়-ত্রুটি বিলোপের অভিপ্রায় নাট্যানুশীলনে চর্চিত হয়েছে।
বিভাগের চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান লিয়ন বলেন, ‘বিভাগ অ্যাকাডেমিক আয়তনে নাটক বিষয়ে বহু অক্ষিয় জ্ঞান আরোহণে গুরুত্ব দিয়ে দেশজ, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের নাট্য পরিবেশনাবিষয়ক জ্ঞান চর্চা করে আসছে। তার ধারাবাহিকতায় পাঠ্যক্রমের অংশ হিসেবে পাশ্চাত্যের নাট্য পরিবেশনা উপস্থাপনের মাধ্যমে আমাদের এবারের আয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, 'এই আয়োজনের মাধ্যমে বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন করছে। আমার বিশ্বাস প্রাতিষ্ঠানিক নাট্যচর্চার এই ধারাবাহিক উদ্যোগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও নাট্যপরিমণ্ডলকে বিকশিত করবে।'
উল্লেখ্য, প্রদর্শনীর আগে নাটমন্ডল প্রাঙ্গণ থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে।
আরও পড়ুন:দেশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে চতুর্থ ঢেউ ছড়িয়ে পড়ায় সশরীরে ক্লাসের বদলে আবার অনলাইন ক্লাসের দিকে ঝুঁকেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েট। আগামী ২ জুলাই থেকে এক সপ্তাহ বিশ্ববিদ্যলয়টির স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সব ক্লাস অনলাইনে নেয়া হবে।
ঈদের পর আবার সশরীরে ক্লাসের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে করোনার চতুর্থ ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরদিন বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার ফোরকান উদ্দীন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে করোনা সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ায় এই সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানানো হয়।
দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বুয়েটই প্রথম অনলাইন ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নিল।
করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসতে থাকার মধ্যে গত ১২ জুন বুয়েট সশরীরে ক্লাসে ফিরে। এই সিদ্ধান্তের পর করোনা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়, এমনকি পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার একপর্যায়ে ১ শতাংশের নিচে নেমে আসে।
তবে গত মাসের শেষ দিক থেকেই করোনা পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। এখন পর্যন্ত মৃত্যুর হার বেশ কম থাকলেও ১৬ জুন পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ হার ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। টানা ১৪ দিন সংক্রমণ হার ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার পর ২৯ জুলাই বাংলাদেশে করোনার চতুর্থ ঢেউয়ে পদার্পণের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী করোনার ঢেউ নিয়ন্ত্রিত থাকা অবস্থায় পরপর দুই সপ্তাহ পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ হার ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেলে পরবর্তী ঢেউ ছড়িয়েছে বলে ধরা হবে।
বুয়েটের ছাত্র কল্যাণ দপ্তরের পরিচালক (ডিএসডব্লিউ) মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের কোরবানির ঈদের বন্ধ শুরু হয়ে গেছে। তবে বন্ধের আগে আরও এক সপ্তাহ স্নাতকোত্তর শ্রেণির ক্লাস কার্যক্রম চলবে।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই আমরা তাদের এই এক সপ্তাহের ক্লাস কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালনা করব। ক্লাসরুমে তাদের আনব না।’
ঈদ শেষে ফের সশরীরে ক্লাস শুরুর পরিকল্পনা আছে বলেও জানান অধ্যাপক মিজান।
মান ও মর্যাদার জন্য শিক্ষকতায় এসেছি, এখন দেখি জীবনও নেই বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যিালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার সাইদ।
তিনি বলেন, ‘অনেক দিন আগে সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ সিনেমা দেখেছিলাম। সেখানে হীরক রাজা সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে বলেছিলেন, বিদ্যাশিক্ষা লোকসান, এতে নাই অর্থ, নাই মান।’
সাভারে শিক্ষক হত্যা ও নড়াইলে শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বৃ্হস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মানববন্ধন করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. সজীব কুমার ঘোষের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে শিক্ষকরা ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। একই সঙ্গে শিক্ষকদের নিরাপত্তা ও সঠিক মর্যাদা নিশ্চিতের আহ্বান জানান।
মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার বলেন, ‘সাভারে শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করা হলো, অথচ মারধরের সময় কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলো না।
‘অন্যদিকে নড়াইলে স্বপন কুমার বিশ্বাস পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশকে ফোন দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে কীভাবে পারল একটা কলেজের অধ্যক্ষকে এভাবে নির্যাতন করতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কল্পনা করুন, শিক্ষকের গলায় জুতার মালা দিয়েছে, তার ছবি তোলা হচ্ছিল, এ সময় তিনি মুখটা বন্ধ করে রেখেছিলেন। সেখানে আশপাশে পুলিশ সদস্য ছিল, তারা একনিষ্ঠভাবে তাকিয়ে ছিলেন কিন্তু কিছু করেননি।
‘পুলিশ কীভাবে সহ্য করল একজন অধ্যক্ষকে এভাবে অপমান করা। আমি ধিক্কার জানাই ওই কলেজের সবাইকে। এসব সহ্য করতে পারছি না। এসব ঘটনার বিচার চাই দ্রুত।’
সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ বলেন, ‘ছাত্ররা কেন উদ্ধত হয়ে যাচ্ছে এর বিশ্লেষণ প্রয়োজন। যে ছাত্ররা এইসব ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তারা একজনের জীবন নিয়েছে (উৎপল কুমার বিশ্বাস), আরেকজনকে জীবন্ত রেখেও মৃত বানিয়ে ফেলেছে।
‘যাদের জন্য এইসব ঘটনা ঘটেছে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনতে হবে। আইন সব দেশেই আছে। আইনের যথার্থ বাস্তবায়ন না হলে অরাজকতার সৃষ্টি হয়। আমার মনে হয় আমাদের দেশেও তাই হচ্ছে।’
একজন শিক্ষক যদি অপদস্থ হয়, সমগ্র জাতি অপদস্থ হয়। বঙ্গবন্ধু শিক্ষকদের অনেক মর্যাদা দিতেন। শিক্ষকের মর্যাদা রক্ষিত হোক আর ওই কুলাঙ্গারদের ফাঁসি নিশ্চিত করা হোক বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্বদ্যিালয়ের ইংরেজি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. সুকান্ত ভট্টাচার্য।
মানববন্ধনে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক তাপসী ঘোষ বলেন, ‘মহান শিক্ষকতাকে পেশা পছন্দ করেছি। কিন্তু যখন দেখি, শিক্ষক ছাত্রের হাতে নিগৃহীত হচ্ছেন, তখন ঘৃণা ও লজ্জায় মুখ কোথায় রাখি।’
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. সজীব কুমার ঘোষ বলেন, ‘কোন সমাজের দিকে যাচ্ছি আমরা। আমরা সবাই শিক্ষক, জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে আমাদেরও করণীয় আছে। মানববন্ধন থেকে আমরা এই ঘটনাগুলোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য