জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বিজ্ঞান ও আইন অনুষদে নতুন দুজন ডিন নিয়োগ করা হয়েছে।
১৬ জুন থেকে পরবর্তী দুই বছরের জন্য তারা এ দায়িত্ব পালন করবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান নিউজবাংলাকে বুধবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত দুটি অফিস আদেশও প্রকাশ হয়েছে।
অফিস আদেশের একটিতে বলা হয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের বর্তমান ডিনের মেয়াদ ১৫ জুন দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। এ কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৫-এর ২২ (৫) ধারা অনুযায়ী সিন্ডিকেটের অনুমোদন সাপেক্ষে আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম মাসুম বিল্লাহকে পরবর্তী দুই বছরের জন্য অনুষদের ডিন হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। এ আদেশ ১৬ জুন থেকে কার্যকর হবে।
আরেক অফিস আদেশে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের বর্তমান ডিনের মেয়াদ ১৫ জুন দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। এ কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৫-এর ২২ (৫) ধারা অনুযায়ী সিন্ডিকেটের অনুমোদন সাপেক্ষে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহানকে পরবর্তী দুই বছরের জন্য বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলো।
এতে আরও বলা হয়, অফিস আদেশ ১৬ জুন থেকে কার্যকর হবে।
বিজ্ঞান অনুষদের নতুন ডিন অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এযাবৎকালে আমাকে যত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তা আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করেছি। নতুন দায়িত্ব পেয়েছি৷ আশা করছি সবাইকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে ইতিবাচক দিক দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।’
দীর্ঘ ১৩ বছর পর আইন অনুষদে ডিন পরিবর্তন হয়েছে। কাকতালীয়ভাবে ডিনের দায়িত্ব পাওয়া অধ্যাপক ড. এস এম মাসুম বিল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের আইন অনুষদ একটি সম্ভাবনাময় অনুষদ এবং পাশাপাশি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগ দিয়ে বাইরে অনেকটাই পরিচিত। অনুষদের ভেতরে দুটি বিভাগের শিক্ষকরা কমিটেড।
‘সকল শিক্ষকের সহযোগিতা নিয়ে আমাদের অনুষদকে কীভাবে মেলে ধরা যায়, সেভাবে কাজ করব। গবেষণার মান উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কল্যাণে যা করার দরকার, সেটাই আমি করব।’
এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দশম ব্যাচের ছাত্রী মাহমুদা আমির ইভা ও শারমিন আক্তার সেতু বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন।
আরও পড়ুন:প্রতি সেমিস্টারে শিক্ষার্থীদের দেয়া উন্নয়ন ফির টাকা বিভাগের অ্যাকাউন্টে জমা না দিয়ে নিজের কাছে রেখে দেয়ার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইংরেজি বিভাগের এক কর্মকর্তাকে পদাবনতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।
সভায় উপস্থিত সিন্ডিকেট সদস্য অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বুধবার রাতে সিন্ডিকেট সভা হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সভার সভাপতিত্ব করেন।
পদাবনতি পাওয়া কর্মকর্তার নাম মাহবুব আলম। তিনি ইংরেজি বিভাগের প্রধান সহকারী। এখন থেকে তিনি সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিকের দায়িত্ব পালন করবেন।
অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান জানান, সাধারণত প্রতি সেমিস্টারে ভর্তির সময় শিক্ষার্থীরা বিভাগের উন্নয়ন ফি নামে একটা ফি দেয়। এই কর্মকর্তা সেই টাকা (২ লাখ ১৫ হাজার টাকা) বিভাগের ব্যাংকে জমা না দিয়ে নিজের কাছে রেখে দেন।
দীর্ঘদিন পর বিষয়টি জানাজানি হলে বিভাগ তদন্ত শুরু করে। এরপর তিনি সেই টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে চিঠি দিয়ে বিভাগের কাছে ক্ষমা চেয়েছে। নজরে না এলে হয়তো তিনি নিজের কাছে রেখে দিতেন।
অধ্যাপক মিজান বলেন, ‘যেহেতু এটা একটা ফাইন্যান্সিয়াল অফেন্স, তাই বিভাগ এটি সিন্ডিকেটের নজরে এনেছে। আর সিন্ডিকেট তাকে শাস্তি দিয়েছে।’
জানা যায়, এই শাস্তি ছাড়াও সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানের জন্য প্রণয়ন করা নয়টি নীতিমালা পাস করেছে।
এর আগে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে র্যাগ ডে অনুষ্ঠানকে নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল। পরে এই সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নের জন্য উপউপাচার্যকে (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি নয়টি নীতিমালা প্রণয়ন করেন। আজ সিন্ডিকেট সভায় সেসব নীতিমালা উপস্থাপন করা হলে সিন্ডিকেট এসব নীতিমালা পাস করেন।
এ বিষয়ে অন্য এক সিন্ডিকেট সদস্য মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হারুনর রশীদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা র্যাগ ডে নামে যে অনুষ্ঠান উদযাপন করে এটির নাম এখন থেকে শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠান এখন থেকে কিছু নীতিমালার মধ্যে থেকে করতে হবে। নীতিমালাগুলো হলো, ক্লাস চলাকালে উচ্চস্বরে বাদ্য-বাজনা পরিহার করতে হবে অর্থাৎ কাউকে ডিস্ট্রার্ব করা যাবে না।’
সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় চেয়ারম্যান/ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও ছাত্র উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সভা করে অনুষ্ঠানসূচি চূড়ান্ত করা, স্ব-স্ব বিভাগ/ইনস্টিটিউটের ভবন চত্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করা; ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) সমবেত হয়ে পথচারীদের চলাচল স্বাভাবিক রাখা, বিভাগের/ইনস্টিটিউটের সংশ্লিষ্টতায় দুপুরে অথবা রাতে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা, উৎসবের দিন রাত ১০টার মধ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষ করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকা এসবও নীতিমালার আওতাধীন।
আরও পড়ুন:ঢাকার সাভারে সাভারে শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা ও নড়াইলের শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরানোর মতো ঘটনাকে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার অন্তরায় হিসেবে দেখছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন নীলদল।
এসব ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়ে শিক্ষকরা বলছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্রুত উন্নয়ন সাধন করছে এবং বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে তখন কিছু কুচক্রিমহল এই অর্জনকে নস্যাৎ করার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে বিভিন্নভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নীলদল এই অশুভচক্রকে শক্ত হাতে দমনের জন্য জোর দাবি জানিয়েছে।
বুধবার নীলদলের একাংশের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন সাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গত ১৭ জুন ২০২২ তারিখ কথিত ধর্ম অবমাননার পোস্টে সমর্থনের অভিযোগে নড়াইলের সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের সম্মানিত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জনাব স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরানো হয়। ২৫ জুন সাভারের আশুলিয়ার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক জনাব উৎপল কুমার সরকার একজন উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থীর দ্বারা আক্রান্ত হন এবং পরবর্তীতে ২৭ জুন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। দুটি ঘটনাই সামাজিক অস্থিরতার চরম বহিঃপ্রকাশ যা একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার অন্তরায়।’
দুটি ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুষ্কৃতিকারীদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
আরও পড়ুন:জালিয়াতির দায়ে গেল বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিখা পিরেগুকে। তিনি ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাবেক সভাপতি। বহিষ্কারের পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থাকছেন তিনি।
বিষয়টি স্বীকার করে মার্কেটিং বিভাগের ৪৪ ব্যাচের বহিষ্কৃত এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি পুনঃবিবেচনার জন্য আবেদন করেছি। এ বিষয়ে এখনও জবাব পাইনি, তাই হলে থাকছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৪০১, ৪১২ ও ৪১৩ নম্বর কক্ষ তিনটি ছাত্র ইউনিয়রের ‘কক্ষ’ হিসেবে পরিচিত। মিখা পিরেগু নিয়মিত থাকেন ৪১২ নম্বর কক্ষে। চার সিটের এই কক্ষে আরও থাকেন ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের বর্তমান কমিটির সহ সভাপতি রিফাত খান অনিক, সাংগঠনিক সম্পাদক অমর্ত্য রায় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়কসম্পাদক মো. সৈকত।
আজীবনের জন্য বহিষ্কৃত একজন ছাত্র কীভাবে হলে থাকেন জানতে চাইলে অমর্ত্য রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সে (পিরেগু) নিয়মিত ঢাকায় থাকত। মাঝে মাঝে হলে আসত। তার পারিবারিক সমস্যার কারণে গত দেড় মাস ধরে হলে নিয়মিত থাকছে।’
সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েও আপনি কেন ব্যবস্থা নেননি? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
সহ সভাপতি রিফাত খান অনিক বলেন, ‘পিরেগু আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের পুনঃবিবেচনার বিষয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন। সেই সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত তিনি হলে থাকতে পারবেন। তাই এই বিষয়ে আমরা কোনো ব্যবস্থা নেইনি।’
একই কক্ষে থাকলেও পিরেগুর বহিষ্কারের বিষয়টি জানতেন না দাবি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মো. সৈকতের। বলেন, ‘আমি ভাইয়ের বহিষ্কারের বিষয়টি জানতাম না।’
গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ স্বাক্ষরিত বহিষ্কারাদেশে বলা হয়, ‘বিশেষ পরীক্ষার অনুমতির আবেদনপত্রে বিভাগীয় সভাপতির স্বাক্ষর ও সিলমোহর জালিয়াতি করায় এ সংক্রান্ত গঠিত কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে মিখা পিরেগুকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হলো।’
বহিষ্কার হওয়ার পর কেউ হলে অবস্থান করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবু হাসান (শিক্ষা)। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘কেউ সাময়িক বহিষ্কার হলেও তার হলে থাকার অধিকার নেই। সেক্ষেত্রে আজীবন বহিষ্কার হলে কোনোভাবেই হলে থাকার সুযোগ নেই।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আখতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থী হোক বা কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মী হোক, আজীবন বহিষ্কার হয়ে কেউ কোনোভাবেই হলে অবস্থান করতে পারেন না। এটি একটি নৈতিকতাবিরোধী কাজ।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ইস্রাফিল আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’
আরও পড়ুন:পরীক্ষার উত্তরপত্রে অযাচিত এক বাক্য লিখে বেকায়দায় পড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সেই ছাত্রকে বিভাগীয় তলবের পর এবার কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ওই ছাত্রের এমন আচরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ণ হওয়ায় ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল নিউজবাংলাকে বুধবার বিকেলে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তানভীর মাহতাবকে আগামী ৪ জুলাইয়ের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। তার এ কর্মকাণ্ড অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিপন্থি।
‘ওই শিক্ষার্থী একাধিক অপরাধ করেছে। সেগুলোর কারণ তাকে দর্শাতে হবে। যথাযথ কারণ উল্লেখ করতে না পারলে তাকে প্রশাসনিকভাবে আইনের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এর আগে গত রোববার তাকে ডেকে পাঠায় বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ। ওই ছাত্র সেদিনই ভুল স্বীকার করে মার্জনা পেতে তার বিভাগের কাছে আবেদন করেন। তারপর তার লিখিত বক্তব্য প্রক্টর অফিসে পাঠানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল আরও বলেন, ‘বিভাগ থেকে আমরা একটি আবেদন পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে সত্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মমিন উদ্দীন বলেন, ‘তাকে বিভাগ থেকে ডাকা হয়েছিল। তার কাছ থেকে লিখিত নিয়ে প্রক্টর অফিসে জমা দেয়া হইছে। বিভাগ তো আর শাস্তি দিতে পারে না। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন (শৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে) ব্যবস্থা নেবে।’
বিষয়টিকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হলে ওই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা বহিষ্কার করতে পারি না। এটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে। আর ভাইরাল হওয়া ওই অতিরিক্ত উত্তরপত্রে ইনভিজিলেটরের স্বাক্ষরটি ইংরেজি বিভাগের কোনো শিক্ষকের নয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিভাগের মতামত নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ কে এম আক্তারুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে বিভাগ যা বলবে তার ওপর পদক্ষেপ নির্ভর করছে। তা ছাড়া উত্তরপত্রটি আমি দেখিনি। তাই এই মুহূর্তে এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
এর আগে তানভীর মাহতাব নামের ওই ছাত্র পরীক্ষার অতিরিক্ত উত্তরপত্রে ‘স্যার, আজকে আমার মন ভালো নেই’ লিখে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে হাসিঠাট্টা তামাশার পাত্রে পরিণত হয়েছেন তিনি।
মিডটার্ম পরীক্ষা শেষে অতিরিক্ত একটি উত্তরপত্র সঙ্গে নিয়ে আসেন তানভীর মাহতাব। বুধবার রাতে সেই উত্তরপত্রে ‘আজকে আমার মন ভালো নেই’ লিখে নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দেন তিনি। তারপর বিষয়টি সব জায়গায় ভাইরাল হয়ে যায়। পরে তিনি পোস্টটি ডিলিট করলেও এ নিয়ে চলছে হাসি-তামাশা।
নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ নিয়ে টাইমলাইনে ফানি পোস্ট দেয় তানভীর। উত্তরপত্রে ইনভিজিলেটরের সইও তার দেয়া ছিল বলে নিউজবাংলাকে তিনি জানিয়েছেন।
ওই ছাত্র জানান, তিনি বুঝতে পারেননি বিষয়টি এভাবে ভাইরাল হয়ে যাবে। পরে বেকায়দা বুঝতে পেরে পোস্টটি ডিলিট করে দেন।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সাংবাদিকদের হেনস্তা ও হুমকি দেয়ার ঘটনায় ৯ ছাত্রলীগ কর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার দুপুরে তাদের এই নোটিশ দিয়েছে চবি প্রক্টরিয়াল বডি।
১৬ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল হলে চবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতির কক্ষে গিয়ে শোকজ পাওয়া ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বলেছিলেন, ‘চবির হল আমরা লিজ নিছি। যখন ইচ্ছা তোদেরকে হল থেকে বের করে দেব৷’
এই হুমকির ঘটনায় লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৯ জনকে শোকজ করা হয়েছে।
শোকজ পাওয়া ৯ ছাত্রলীগ কর্মী হলেন, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের, অর্থনীতি বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের রানা আহমেদ, একই সেশনের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ওবায়দুল হক লিমন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ২০১৬-১৭ সেশনের আশীষ দাস, দর্শন বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের সাজ্জাদুর রহমান, সংস্কৃত বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের তুষার তালুকদার বাপ্পা, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের আহম্মদ উল্লাহ রাব্বি ও একই বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের জাহিদুল ইসলাম এবং সংস্কৃত বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের রুদ্র তালুকদার।
সহকারী প্রক্টর মো. শাহরিয়ার বুলবুল তন্ময় বলেন, ‘অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত ৯ ছাত্রকে আমরা কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি। আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তাদের জবাব দিতে বলা হয়েছে। জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
১৬ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল হলে ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াসের অনুসারী উপ-গ্রুপ বিজয়ের বেশ কয়েকজন কর্মী চবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলামের কক্ষে গিয়ে সাংবাদিকদের হল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেন। এ সময় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করেন তারা।
এদিন ছাত্রলীগ নেতারা বলেন, ‘এই হল আমাদের। হল আমরা লিজ নিছি। যখন ইচ্ছা তোদেরকে হল থেকে বের করে দেব৷ এই রুম যদি তোদের হয় পুরা হল আমাদের। কী করবি তোরা? নিউজ করবি? কর। আমরা সাংবাদিক-প্রক্টর খাই না৷’
এ ঘটনায় ১৯ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন চবি সাংবাদিক সমিতির নেতারা।
আরও পড়ুন:নড়াইলে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা এবং সাভারে শিক্ষক হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে সমাবেশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষক নির্যাতনে জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ সমাবেশ হয়।
‘শিক্ষকের গলায় জুতার মালা: নৈতিকতার অবক্ষয় ও সাম্প্রদায়িকতার ছড়াছড়ির শেষ কোথায়’ শীর্ষক সমাবেশে জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ মিহির লাল সাহাও অংশ নেন।
মিহির লাল সাহা বলেন, ‘শিক্ষক হিসেবে আমি এখানে বক্তব্য দিচ্ছি, জানি না আমি কতটুকু নিরাপদ। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করছি। কারণ আমি সনাতন ধর্মাবলম্বী। সনাতন ধর্মের প্রত্যেকটি শিক্ষক আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
সাম্প্রদায়িকতাকে যদি শেকড় থেকে তুলে না আনা যায়, তাহলে এই সমসার সমাধান হবে না বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘এই বাংলাদেশ হয় পাকিস্তান হবে, নয় আফগানিস্তান হবে। এর সঙ্গে যে কুচক্রী মহল যুক্ত আছে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে।
‘উন্মুক্ত রাস্তায় জনসম্মুখে তাদের বিচার করা উচিত। তাহলেই শিক্ষা হবে।’
মিহির লাল বলেন, ‘বিচারহীনতার সমাজে কখন বিচার হবে? যারা বিচার করবেন, দেখা যায় তারাই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। প্রশাসন বলছে, ঘটনা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে।
‘ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আগে প্রকাশ্যে জুতার মালা পরাতে হবে। তাদের আগে জুতার মালা পরিয়ে শিক্ষকের সামনে দাঁড় করাতে হবে। এটি হলে বিচারের প্রথম কাজ এগোবে।
'প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, শিক্ষক লাঞ্ছনার দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।'
শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নীরবতার সমালোচনা করে অচিরেই ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি ও প্রতিবাদ সমাবেশ করার আহ্বান জানান অধ্যাপক মিহির লাল।
সমাবেশে জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের সভাপতি কাজল দাস বলেন, ‘যে প্রজন্ম শিক্ষককে জুতার মালা গলায় পরায়, শিক্ষককে স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলতে পারে, সেই প্রজন্মের লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এ ঘটনার প্রতিবাদ না জানানোর সমালোচনা করে কাজল দাস বলেন, ‘আজকে আমরা লজ্জিত। যেখানে শিক্ষক সমাজ এখানে দাঁড়ানোর কথা, সেখানে আমরা দাঁড়িয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীরা এই সাম্প্রদায়িকতাকে কখনো মেনে নেয়নি, নেবে না। যেকোনো সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার থাকব।’
জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অতনু বর্মন বলেন, ‘শিক্ষকরা জাতির মেরুদণ্ড। স্ট্যাম্পের আঘাতে তাদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া হচ্ছে। আমরা দেখছি, বর্তমান সময়ে সবচেয়ে নিরীহ শিক্ষক। আজকে তারা মন খুলে পড়াতে পারেন না।
‘মনের ভাব প্রকাশ করতে গেলে, কথিত ধর্ম অবমাননার অপবাদ দিয়ে হয় গণপিটুনি খেতে হয়, নতুবা জেলে যেতে হয়। এই বিষদাঁত আমাদের ভেঙে দিতে হবে।’
আরও পড়ুন:জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক ছাত্রের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির ছেলের গাড়িচালককে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তসহ কয়েকজনকে অজ্ঞাত করে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী চালক নজরুল ইসলাম।
সোমবার রাতে মামলা করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবীর হোসেন হাওলাদার।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর নাম কৌশিক সরকার সাম্য। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের (১৪ ব্যাচ) শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইনের অনুসারী।
মারধরের শিকার নজরুল ইসলাম রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের ছেলে রিয়াদ আহমেদ তুষারের গাড়ির চালক।
গত রোববার ওয়ারীতে জবির শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম হলের কাছে অভিযুক্তকে সাইড দিতে বলায় ঘটনার সূত্রপাত হয়। সেখানে মারধরের পর আবার চালককে হলে নিয়েও মারধর করা হয়।
অভিযুক্ত কৌশিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্যানেলের কর্মী বলে জানা গেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে জানা গেছে, সাম্য নিজেকে শাখা ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেনের সঙ্গে তার ছবি ছাড়াও নিয়মিত ছাত্রলীগকেন্দ্রিক পোস্ট শেয়ার করতে দেখা যায়।
শাখা ছাত্রলীগের একাধিক নেতাও সাম্যকে সংগঠনটির কর্মী হিসেবে নিশ্চিত করেছেন।
তবে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইন অভিযুক্ত ছাত্রলীগের কেউ নয়, এমনকি তার কর্মী নন বলে জানান।
তিনি দাবি করেন, ‘আমি নেতৃত্বে আসার পর এ ছেলে কখনও আমার সঙ্গে রাজনীতি করেনি। জগন্নাথে পাঁচ-ছয় হাজার শিক্ষার্থীর সঙ্গে আমাদের ছবি থাকতে পারে, তাই বলে এরা সবাই তো ছাত্রলীগ করে না।’
মামলার বিষয়ে ওসি কবীর হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘গত পরশুর ঘটনা। রাষ্ট্রপতির ছেলের গাড়িচালক নজরুল ইসলাম গাড়ি ঘোরাচ্ছিলেন, ছেলেটা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল। ড্রাইভার বলছেন ছেলেটার গায়ে লাগেনি, হর্ন দিয়েছিলেন সরে যাওয়ার জন্য। ছেলেটা প্রথমে চালককে থুথু দেন, তারপর মারধর করেন। পরে আবার সৈয়দ নজরুল ইসলাম হলে নিয়ে গিয়ে চার-পাঁচজন মিলে মারধর করে চালককে। সোমবার সন্ধ্যার পর মামলা হয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করব। এরপর পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। থানার সাথে আমার কথা হয়েছে। গাড়ির চালক মহামান্য রাষ্ট্রপতি স্যারের ছেলের গাড়িচালক বলে থানা জানিয়েছে।’
২০১৯ সালে অভিযুক্ত কৌশিক সরকার সাম্য সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য