নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থে কেনা বিলাসবহুল ১০টি গাড়ি বিক্রি করে সেই টাকা প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ তহবিলে জমা করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব ড. মো. ফরহাদ হোসেনের সই করা এক অফিস আদেশে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
আদেশে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ধারা ৪৪ (১) অনুযায়ী প্রত্যক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সাধারণ তহবিল থাকবে এবং ৪৪ (৭) ধারা অনুযায়ী সাধারণ তহবিলের অর্থ ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় ব্যয় ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যাবে না।
নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়ন খাতে প্রয়োজনীয় ব্যয় না করে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ১২টি গাড়ি কেনে। এর মধ্যে ১০টি বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
অফিস আদেশে আরও বলা হয়, উল্লিখিত ১০টি বিলাসবহুল গাড়ি খোলা দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করে বিক্রয়লব্ধ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়নে ব্যয়ের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানের সাধারণ তহবিলে জমা করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে জরুরি ভিত্তিতে জানানোর অনুরোধ করা হলো।
যে ১০টি গাড়ি বিক্রি করতে হবে
যানবাহনের ধরন ও মডেল হলো- হার্ড জিপ (টয়োটা প্রাডো টি এক্স), মডেল-২০১৫; হার্ড জিপ (রেঞ্জ রোভার ভোগ পি ৪০০ ), মডেল-২০১৯; হার্ড জিপ (রেঞ্জ রোভার ভোগ পি ৪০০ ই), মডেল-২০১৯; হার্ড জিপ (রেঞ্জ রোভার অটোবায়োগ্রাফি), মডেল-২০১৯; হার্ড জিপ (রেঞ্জ রোভার ভোগ পি ৪০০), মডেল-২০১৯; হার্ড জিপ (রেঞ্জ রোভার অটোবায়োগ্রাফি), মডেল-২০১৯, হার্ড জিপ (রেঞ্জ রোভার অটোবায়োগ্রাফি), মডেল-২০১৯; হার্ড জিপ (রেঞ্জ রোভার ভোগ পি ৪০০ ই), মডেল-২০১৯; কার (স্যালুন) মার্সিডিজ বেঞ্জ, মডেল-২০১৯ এবং হার্ড জিপ (রেঞ্জ রোভার ভোগ পি ৪০০ ই), মডেল-২০১৯।
সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় দাঁড় করিয়েছেন শাখা ছাত্রলীগের অন্য নেতারা।
টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, মারধর, নারী হেনস্থা, নেতাকর্মীদের অপদস্ত করা এমনকি একই শাখার অন্য এক নেতাকে প্রকাশ্যে জুতাপেটার অভিযোগও উঠেছে।
জবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কামরুল হুসাইন ও পরাগ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফৌজিয়া জাফরিন প্রিয়ন্তী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হাসিবুল হাসান হৃদয় নিউজবাংলার কাছে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন।
এছাড়াও সোমবার বিকেলে জবি প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে গণমাধ্যমের সামনে প্রকাশ্যে এসব অভিযোগ তোলেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের একাংশ।
অভিযোগ তুলে তারা বলেন, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একক কর্তৃত্ব ধরে রাখতে অন্য নেতাকর্মীদের সামনে আসার সুযোগ দেন না। ক্যাম্পাসে অন্য নেতাদের টানানো পোস্টার রাতের আঁধারে ছিঁড়ে ফেলা, যেকোনো প্রোগ্রামে মঞ্চে উঠতে বাধা দেয়া, কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রটোকল দিতে না দেয়া, এমনকি এক নেতাকে প্রকাশ্যে জুতাপেটাও করেছেন তারা।
এছাড়াও সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজির ছাত্রদল-সংশ্লিষ্টতা ও সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেনের বাবা যুবদলের ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা ছিলেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।
ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কামরুল হুসাইন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেদের পকেট ভারী করতে ছাত্রলীগের নাম করে ক্যাম্পাসে টেন্ডারবাজি করেছেন। নতুন ক্যাম্পাসের প্রকল্প কাজ যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মীর কাশেমের কোম্পানিকে পাইয়ে দিয়ে সেখান থেকে কমিশন খেয়েছেন।
‘জবি ছাত্রলীগ সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজি মেয়ে নিয়ে রিসোর্টে যান বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। যেখানে রাত ৯টায় হলের গেট বন্ধ হয়ে যায় সেখানে কী করে মধ্যরাতে তারা হলে প্রবেশ করেন?’ সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।
আরেক সহ-সভাপতি পরাগ হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নেতার সঙ্গে আমার ঝামেলা হয়। সেখানে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। আমি থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ তা না নিয়ে জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের নিষেধ আছে বলে জানায়৷ সভাপতিকে তা জানালে সেই ছেলে আকতারের রাজনীতি করে বলে ঘটনা এড়িয়ে যান।’
সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ‘কুপ্রস্তার’-এর অভিযোগ আনা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফৌজিয়া জাফরিন প্রিয়ন্তী বলেন, ‘ছাত্রী হলে সিট পেতে ছাত্রলীগ থেকে ৩০০ জনের নাম দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সদ্য যুক্ত হওয়া ৬/৭জনও আছে। অথচ ক্যাম্পাসে ৭ বছর রাজনীতি করলেও আমার নাম দেয়া হয়নি।
‘আমাকে যেমন কুপ্রস্তাব দিয়েছে, মনোবাসনা পূরণ করার কথা বলা হয়েছে, তাদেরও যে তেমনটা বলা হয়নি তার কী প্রমাণ আছে!’
প্রিয়ন্তী আরও বলেন, ‘মাদারীপুরে বাড়ি হওয়ায় আকতার ভাই ও আমি একসঙ্গে রাজনীতি করেছি। কিন্তু নেতা হওয়ার পর তার আসল রূপ দেখতে পেয়েছি। এরপর থেকে ক্যাম্পাসে রাজনীতি করা আমার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
‘ক্যাম্পাসে তার প্যানেলে থাকতে পারব না বলে সভাপতির কাছে যাই। সেখানেও আমাকে রাজনীতি করতে দেয়া হয়নি। আমি এর সঠিক বিচার চাই। ক্যাম্পাসে মেয়েদের রাজনীতি করার পরিবেশ নিশ্চিত করতে চাই।’
জবি ছাত্রলীগের ১ নম্বর সাংগঠনিক সম্পাদক রিফাত সাঈদ অভিযোগ করে বলেন, ‘পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার মোড়ে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আমার পরিচয়ে চাঁদা দাবি করেছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা। তাৎক্ষণিকভাবে জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বিষয়টি জানালেও সাংগঠনিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। কারণ তারা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের একান্ত আস্থাভাজন।’
সাংগঠনিক সম্পাদক হাসিবুল হাসান হৃদয় বলেন, ‘আমি ২০১৫ সাল থেকে ক্যাম্পাসে রাজনীতি করি। নিজের যোগ্যতায় সংগঠনে পদ পেয়েছি। ক্যাম্পাসের পাশে এক মার্কেটের মালিকের খোঁজখবর নেয়ায় বলা হয়েছে আমি নাকি চাঁদাবাজি করি। আমাকে সবার সামনে অপমান করা হয়েছে। বহিষ্কারের হুমকি দেয়া হয়েছে।
‘রোজার ঈদের আগে ভিসি ভবনের সামনে ইব্রাহিম ফরাজি পায়ের জুতা খুলে আমার দুই গালে বাড়ি দিয়েছে। দুইটা থাপ্পড় মেরেছে আর যেসব অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে তা আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমি বলেছিলাম অপরাধ করে থাকলে আমার বিচার হবে। কিছু না করেও কেন আমাকে অপমানিত হতে হলো? আমি এর বিচার চাই।’
জবি ছাত্রলীগ নেতৃত্বের একাংশ আরও অভিযোগ তুলেছে, শাখা ছাত্রলীগের ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির গুটি কয়েক সদস্য ছাড়া সবাই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হেনস্থার শিকার হয়েছেন।
গণমাধ্যমের সামনে এসব অভিযোগ তুলে ধরার সময় ১০-১২ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে সহ-সভাপতি প্রিতিশ দত্ত রাজ, মিঠুন বাড়ৈ, মাসুম পারভেজ, সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল ও আবু রায়হান অভিযোগের বিষয়ে সক্রিয় অবস্থানে রয়েছেন।
এছাড়াও নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজির চিত্র উঠে এসেছে। সম্প্রতি সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা হলেও চাঁদাবাজি থেমে থাকেনি।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, ছাত্রলীগ সভাপতির অনুসারী রবি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী মাসুদ েই চাঁদাবাজির টাকা তোলায় সরাসরি জড়িত। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের অংশে কথিত টিএসসির প্রতিটি দোকান থেকে ২০০ টাকা, ভ্যানের ওপর ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলো থেকে ৫০০-৬০০ টাকা চাঁদা নেয়া হয়। চাঁদাবাজি থেকে বাদ যাচ্ছে না ফুটপাতের মুচির দোকানও।
ঈদুল ফিতরের আগে এপেক্স কোম্পানির সদরঘাটের নতুন শাখা থেকে চাঁদা আদায় করেন ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি মেহেদী বাবু। আউটলেটটির ম্যানেজার ও এক কর্মচারী সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
নেতাদের আনা এসব অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলতে জবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। এসএমএস পাঠালেও কোনো উত্তর মেলেনি।
৫৫ বছর বয়সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আলোড়ন তৈরি করা বেলায়ত হোসেনকে নিরাশ হতে হলো। পরীক্ষায় পাস করতে না পারায় কষ্টে আছেন তিনি। তবে এখানেই থেমে থাকতে চান না, দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেবেন। আশা, কোথাও না কোথাও ভর্তির সুযোগ মিলবে।
বেলায়েত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অংশ নিয়েছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরে এই ইউনিটের ফল প্রকাশ হয়। এতে দেখা যায়, তিনি পাস করতে পারেননি। আর যে নম্বর পেয়েছেন, তাতে তিনি আরও বেশি হতাশ হয়েছেন।
গত ১১ জুন পরীক্ষা দেয়ার পর বেলায়েত জানিয়েছিলেন পরীক্ষা ভালো হয়েছে। এত বয়সে এর আগে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তির চেষ্টা করেনি।
তবে প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, ৬০ নম্বরের নৈর্ব্যক্তিক অংশে বেলায়েত পেয়েছেন ৮ । এমসিকিউতে ফেল করায় তার লিখিত অংশের খাতা মূল্যায়নের জন্যে বিবেচিতই হয়নি।
আট নম্বরের মধ্যে নৈর্ব্যক্তিক অংশের বাংলায় ২, ইংরেজিতে ২.৭৫ এবং সাধারণ জ্ঞান অংশে পেয়েছেন ৩.২৫ নম্বর।
আর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জিপিএসহ সর্বমোট নম্বর পেয়েছেন ২৬ দশমিক ২।
বেলায়েত বাংলা অংশের নৈর্ব্যক্তিকে মোট ১২টি প্রশ্নের উত্তর দেন। এর মধ্যে আটটি প্রশ্নের উত্তরই ছিল ভুল।
ইংরেজিতে নয়টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। সেখানে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর তার ঠিক হয়নি।
সাধারণ জ্ঞান অংশে দেয়া ১২টি প্রশ্নের মধ্যে তিনি সাতটি প্রশ্নেরই ভুল উত্তর দিয়েছেন।
বেলায়েত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার। তবে সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। আমার স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। স্বপ্নভঙ্গের কষ্ট তো আমাকে পোড়াবেই।’
নম্বর প্রত্যাশার চেয়ে কম এসেছে এবং এটা আরও বেশি পোড়াচ্ছে বেলায়েতকে। তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা ভালোই দিয়েছিলাম। তবে এত কম নম্বর পাব তা ভাবিনি। আশা করেছিলাম পাস করব। তবে সেটাও হলো না। অনেক খারাপ লাগছে। আমার ভাগ্যটাই ভালো না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হতাশ হলেও থেমে থাকবেন না বলে জানিয়েছেন বেলায়েত। আসলে তিনি থেমে থাকার মানুষও নন।
তিনি বলেন, ‘সামনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করব। আশা করি, দেশের যেকোনো একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া সুযোগ পাব।’
বেলায়েতের জীবন কাহিনি বলে তিনি এগিয়ে যেতে চান।
আর্থিক দুরবস্থা ও বাবার অসুস্থতার কারণে ১৯৮৩ সালে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর লেখাপড়া থেকে ছিটকে যান বেলায়েত। হাল ধরতে হয় সংসারের।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার পর প্রথমে ভাই বোন ও পরে সন্তানদেরকে দিয়ে চেষ্টা করেন বেলায়েত। কিন্তু তারাও পারেনি। এরপর বয়স ৫০ পেরিয়ে যাওয়ার পর আবার পড়াশোনা শুরু করেন তিনি।
২০১৭ সালে ঢাকার বাসাবোর দারুল ইসলাম আলিম মাদরাসা থেকে ৪ দশমিক ৪৩ জিপিএ নিয়ে তিনি এসএসসি (ভোকেশনাল) পাস করেন। চার বছর পর ২০২১ সালে রামপুরার মহানগর কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জিপিএ ৪ দশমিক ৫৮ পেয়ে পাস করেন এইচএসসি (ভোকেশনাল)।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তিনি।
স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে বেলায়েতের সংসার। কাজ করেন দৈনিক করতোয়া প্রত্রিকায় গাজীপুরের শ্রীপুর প্রতিনিধি হিসেবে।
দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘র্যাগ ডে’ উদযাপন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
সোমবার রাতে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ নিউজবাংলাকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, হাইকোর্টের একটি রায়ের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে র্যাগ ডে উদযাপন বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সাধারণত কোনো ব্যাচের শিক্ষা সমাপ্ত হওয়ার পর র্যাগ ডে পালন করা হয়। সাধারণত এটি অনার্স অথবা মাস্টার্স শেষে হয়ে থাকে। এটিকে অনেকে শিক্ষা সমাপনী উৎসবও বলেন।
সোমবার রাতে ইউজিসির বেসরকারি শাখার পরিচালক ওমর ফারুকের সই করা অফিস আদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগ ডে উদযাপন বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়।
এতে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নং-৪৫১৫/২০২২ এর একটি আদেশে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘র্যাগ ডে’ উদযাপনের নামে সব ধরনের অশ্লীলতা, নগ্নতা, ডিজে পার্টি, অশোভন আচরণ, নিষ্ঠুর ও নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ড এবং বুলিং অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
আরও বলা হয়, হাইকোর্ট ডিভিশনের উল্লিখিত নির্দেশনা মোতাবেক সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উক্ত রূপ কর্মকাণ্ড অবিলম্বে বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হলো।
গত ৩০ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাগ ডের নীতিমালা অনুমোদন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, র্যাগ ডের নতুন নাম হবে ‘শিক্ষা সমাপনী উৎসব’। এই উৎসব উদযাপনে শিক্ষার্থীদের মানতে হবে একগুচ্ছ নিয়ম।
গত ১৭ এপ্রিল ‘র্যাগ ডে’ পালনের নামে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজে পার্টিসহ নগ্ন, অশ্লীল, উন্মত্ত, কুরুচিপূর্ণ ও আপত্তিকর কর্মকাণ্ড বন্ধে ৩০ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন।
ঢাকার ডিপিএস এসটিএস স্কুলের এ বছরের গ্র্যাজুয়েশন সেরেমনি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডিপ্লোমা অর্জনকারী ১১১ গ্রাজুয়েট নিয়ে ডিপিএস সিনিয়র সেকশন অডিটোরিয়ামে শুক্রবার এই সেরেমনি অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এ আয়োজনে গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীরা একে একে মঞ্চে ওঠে সনদ গ্রহণ করেন এবং স্কুলের প্রিন্সিপাল ও ভাইস প্রিন্সিপালের সঙ্গে ছবি তোলেন।
সনদ বিতরণ শেষে বক্তব্য দেন অধ্যক্ষ ড. শিবানন্দ সিএস। তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ আমাদের সবার জন্যই অত্যন্ত কঠিন ছিল। কিন্তু অদম্য তারুণ্য, সহনশীলতা ও সাহসের কারণেই সংকটপূর্ণ সময় কাটিয়ে এই গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান আয়োজন সম্ভব হয়েছে।’
প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাডেমিক অভিজ্ঞতা সবার সামনে তুলে ধরেন ভ্যালেডিক্টোরিয়ান আয়মান আলম। তিনি বলেন, ‘আমি আমার সব শিক্ষক, বন্ধু এবং মা-বাবাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। জীবনের এ পর্যায়ে আসতে তারা আমাদের যথেষ্ট সহায়তা করেছেন।’
আনুষ্ঠানিকতা শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ সময় গ্র্যাজুয়েশন ক্লাসের বিশেষ মুহূর্তগুলো স্মরণ করে বানানো একটি ভিডিও দেখানো হয়। শিক্ষার্থীরা গ্র্যাজুয়েট হিসেবে তাদের টুপি বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে মুহূর্তটি উদযাপন করেন। গ্র্যান্ড ডিনারের মধ্য দিয়ে শেষ হয় সেরেমনির আয়োজন।
নড়াইলে পুলিশের সামনে শিক্ষকের গলায় জুতার মালা দিয়ে লাঞ্ছিত ও কলেজে সহিংসতার ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
রোববার বিকেলে নিউজবাংলাকে এ তথ্য জানান মাউশির বেসরকারি কলেজ শাখার উপপরিচালক মো. এনামুল হক হাওলাদার।
তিনি বলেন, ‘নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে অপদস্থ করার ন্যক্কারজনক ঘটনায় তদন্ত হচ্ছে। মাউশির খুলনা অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক শেখ হারুনুর রশিদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত দল আজ থেকে সরেজমিন তদন্ত শুরু করেছে।’
কবে নাগাদ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আশা করছি দুই-তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আমাদের হাতে আসবে। এরপর আমরা তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
ফেসবুকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার সমর্থনে কলেজের এক হিন্দু শিক্ষার্থীর পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুন দিনভর বিক্ষোভ, সহিংসতা চলে মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে। গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়েছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস।
এরপর পুলিশ পাহারায় বিকেল ৪টার দিকে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে দাঁড় করিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় একদল ব্যক্তি। শিক্ষক স্বপন কুমার হাত উঁচিয়ে ক্ষমা চাইতে থাকেন। পরে তাকে তুলে নেয়া হয় পুলিশের গাড়িতে।
মোবাইল ফোনে ধারণ করা এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। পুলিশের সামনে শিক্ষকের এমন অপদস্থ হওয়ার ঘটনায় তৈরি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ।
ঘটনার ৯ দিন পর গত ২৭ জুন দুপুরে নড়াইল সদর থানায় মামলা করেন পুলিশের উপপরিদর্শক ও মির্জাপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ শেখ মোরছালিন। এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ১৭০ থেকে ১৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার পর সেদিন রাতেই মির্জাপুরের শাওন খান, মনিরুল ইসলাম ও সৈয়দ রিমন আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন বুধবার গ্রেপ্তার করা হয় রহমত উল্লাহ রনি নামের যুবককে। শাওন ও রনিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে সরাসরি অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দিতে দেখা গেছে বলে জানায় পুলিশ।
ঘটনা তদন্তে পুলিশের পাশাপাশি একাধিক টিম কাজ করছে। মাউশি গত ২৯ জুন তদন্ত কমিটি গঠন করে। মাউশির খুলনা অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক শেখ হারুনুর রশিদের নেতৃত্বে এ কমিটিতে আছেন উপপরিচালক (কলেজ) এস কে মোস্তাফিজুর রহমান ও সহকারী পরিচালক (কলেজ) মো. নিজামুল ইসলাম।
তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে অধ্যাপক শেখ হারুনুর রশিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আজ তদন্তের কাজ শুরু করেছি। ভুক্তভোগী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস ওই দিনের ঘটনার বিস্তারিত তথ্য আমাদের জানিয়েছেন। এছাড়া এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট আরও বেশ কয়েকজনের সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি।’
এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি শনিবার রাতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। নড়াইলের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) জুবায়ের হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে এ কমিটিতে ছিলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম ছায়েদুর রহমান ও নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শওকত কবীর।
প্রতিবেদন জমা দেয়ার পরের দিনই (রোববার) জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির সদস্য নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শওকত কবীরকে নড়াইল থেকে সরিয়ে খুলনা আরআরএফ (রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স)-এ সংযুক্ত করা হয়েছে।
একই ঘটনায় পৃথক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল নড়াইল জেলা পুলিশ। এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিয়াজুল ইসলামকে। অন্য সদস্যরা হলেন- ডিআই ওয়ান মীর শরীফুল হক ও পুলিশ পরিদর্শক (অপরাধ) রফিকুল ইসলাম।
আরও পড়ুন:যমুনায় বিলীন হয়ে গেছে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কাউয়াবাধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি দ্বিতল ভবন। অব্যাহত ভাঙনের কবলে পড়ে শনিবার বিকেলে ভবনটি বিকট শব্দে নদীতে ধসে যায়।
নিউজবাংলার হাতে আসা ভিডিওতে দেখা যায়, যমুনা নদীর তীব্র স্রোতে ভাঙছে বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনের অংশ। সে সঙ্গে খণ্ড খণ্ড জমি গিলে নিচ্ছে যমুনার স্রোত। একপর্যায়ে তীব্র স্রোতে বিদ্যালয়ের পুরো ভবনটিই নদীতে ভেঙে পড়ে।
দুঃখ প্রকাশ করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুম মিয়া বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবনটি যমুনার গর্ভে চলে যায়। ১৫ দিন আগেও ভাঙন এলাকা থেকে ১৫০ মিটার দূরত্বে ছিল ভবনটির অবস্থান।
‘২৬ জুন নিলামে ভবনটি বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ভবনটি সরিয়ে নেয়ার চেষ্টাও করেন শ্রমিকরা। তার আগেই তীব্র স্রোতে নদীগর্ভে চলে যায় পুরো ভবন। ভবনটি নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পুরো বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
প্রধান শিক্ষক জানান, যমুনায় পানি কিছুটা কমে আসায় অব্যাহত ভাঙনের মুখে পড়ে ভবনটি। শুক্রবার সন্ধ্যার আগে ভবনটির পুরো অংশই নদীতে দেবে যায়।
কাউয়াবাধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯১ সালে। ২০০৯ সালে দ্বিতল ভবনটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়। এই ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চলে আসছিল।
বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, ‘শুক্রবার বিকেলে বিদ্যালয়ের ভবনটি দেখতে গিয়ে ছবি ও ভিডিও করি। সেখান থেকে ফেরার পরপরই ভবনটি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার খবর পাই। বিদ্যালয়ের ৩৩ শতাংশ জমির মধ্যে ৩০ শতাংশই এখন নদীর বুকে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে পাঠদানের কোনো ভবন নেই। তবে পাশেই নিজের আরেকটি জমিতে বিকল্প ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যবস্থা করতে চাই।
‘টিনশেড কিংবা অবকাঠামো নির্মাণে হাতে কোনো অর্থ নেই আমাদের। সরকারি সহযোগিতা না পেলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধের আশঙ্কা রয়েছে।
বিদ্যালয়ের ভবনটি নিলামে কিনেছিলেন ঠিকাদার জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘আড়াই লাখ টাকায় কেনার পর ভবনটি ভেঙে সরিয়ে নেয়ার কাজ চলছিল। কয়েক দিন ধরে শ্রমিকরা ভবনের কিছু ইট ও রড সরিয়ে নিলেও শুক্রবার সন্ধ্যার আগে তীব্র স্রোতে ভবনটি ভেঙে পড়ে নদীতে। নিলাম বিজ্ঞপ্তির অল্প সময় অর্থাৎ ৪-৫ দিনে ভবনটি সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। ভবনটি রক্ষায় অন্তত ১৫ দিন আগে কর্তৃপক্ষের নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেয়া উচিত ছিল।
তিনি জানান, এখন নিলামে নির্ধারিত অর্থ পরিশোধে তাকে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। এ জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার কথা জানান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবক রফিকুল ইসলাম জানান, গত ১৫ দিন আগেও বিদ্যালয় থেকে নদীর দূরত্ব ছিল প্রায় দেড় শ মিটার। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে নদীভাঙন তীব্র হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে বিদ্যালয়টি যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
যমুনার ভাঙনে কাউয়াবাধাসহ দক্ষিণে চৌমোহন, পশ্চিমে কোচখালী, মানিকচর ও গুপ্তমনি গ্রামের রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি ও ফসলি জমিসহ নানা স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়েছে। অথচ ভাঙন রোধে জিও ব্যাগে বালুর বস্তা ফেলেই দায় সারে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা একাধিকবার পরিদর্শনে এসে আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এমনকি ভাঙনে প্রতিবছর নিঃস্ব মানুষগুলো মানবেতর জীবনযাপন করলেও তাদের খোঁজ রাখেনি কেউ।
যমুনার ভাঙন আতঙ্কে তীরবর্তী হাজারো মানুষের নির্ঘুম রাত কাটছে বলে জানান ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম সেলিম পারভেজ।
তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর নদীভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে শত শত পরিবার। কিন্তু ভাঙন রোধে স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় না। এবারও ভাঙন রোধে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের ওপরই ভরসা করে আছি। জনগণের জানমাল রক্ষায় দ্রুত পরিকল্পিত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন:সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইনের বিরুদ্ধে ‘গুরুতর’ অভিযোগ তুলেছেন সংগঠনের একই শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফৌজিয়া জাফরিন প্রিয়ন্তী।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘আমার অপরাধ ছিল আমি তার কুপ্রস্তাব মেনে নেইনি। ভেঙে গেল ৭ বছরের ভাই-বোনের সম্পর্ক। একমাত্র ছাত্রী হলে ছাত্রলীগ থেকে ৩০০ মেয়ে সিট পেলেও আমাকে সে হলে উঠতে দেয়নি।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটির কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ দেয়ার পর শুক্রবার রাতে এই নেত্রী নিজের টাইমলাইনে এক পোস্টের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি অভিযোগ তুলে ধরেন।
ফৌজিয়া বলেন, ‘আমার জন্য তার অনেক বড় ভাইরা বললেও তিনি কানে তোলেননি। কারণ তার তো আর আমাকে কর্মী হিসেবে প্রয়োজন নেই। এখন তিনি নেতা, প্রয়োজন মেটাতে পারলেই কেবল প্রয়োজন বোধ করবেন। বাংলাদেশের এমন কোনো হল আছে কি যেখানে কোনো গেস্ট গিয়ে একদিন থাকতে পারে না? কিন্তু এই আমি প্রিয়ন্তী হলে একদিন গিয়েছিলাম দেখতে যে হলে থাকার কেমন অনুভূতি। কিন্তু এই আকতার জানতে পেরে প্রভোস্ট ম্যামকে চাপ দিয়ে সেই রাতেই আমাকে হল থেকে বের হতে বাধ্য করে।’
‘আমার কি অপরাধ ছিল? ১৪ সাল থেকে প্রতিদিন আট-দশ ঘন্টা ইভেন আরও বেশি পরিশ্রম করে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কমিটিতে এসেছি। আমাকে হলে উঠতে দেওয়া হয়নি। এর পেছনের প্রধান কারণ হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার। আমার দীর্ঘ আরাধ্য ও প্রতীক্ষার হল থেকে, আমার প্রাপ্য অধিকার থেকে আমাকে বঞ্চিত করেছে।’
প্রিয়ন্তী ফেসবুকে আরও লিখেন, ‘দীর্ঘ ৭ বছর তার পিছনে হেঁটেছি। আপনি তার কয় দিনের কর্মী সেটা আগে ভাবুন। আমার মাদারীপুরের তিনজন ক্যান্ডিডেট ছিল। কিন্তু তার মধ্যে থেকে তাকে বেছে নিয়েছিলাম নেতা হিসেবে। তার জন্য কত কিছু করছি যা লিখে বলা সম্ভব না। আল্লাহ মনের আশা পূরণ করলেন, কিন্তু তারপর থেকে আকতার ভাইয়ের আসল রূপ বের হতে থাকলো।
‘লেখক দাদার বাসা থেকে যেদিন ফুল দিয়ে নিচে নামলাম তার সাথে, সেদিন সকল পোস্টেড নেতার সামনে বসে আমাকে আর জিনিয়া আফ্রিনকে উদ্দেশ করে বলল- কোন হাইকমান্ডের ফোনে সে হল কমিটি দিবে না; দরকার হয় সে সাবেক হয়ে যাবে। সে নেতা হয়ে গেছে। তার নামের আগে সাবেক লেখা থাকবে তার সমস্যা নেই। আগে তার কর্মী হতে হবে, তাকে নেতা মেনে ধারণ করতে হবে। তবেই সেই হলের নেত্রী বানাবে। আমরা অবাক হয়ে রইলাম। হলের কথা কই থেকে আসলো? নেতা হল ১০ দিন মাত্র তখন। সেদিনের পর থেকে তার বিভিন্ন আবদার রাখতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে তার সাথে আমার দীর্ঘ ৭ বছরের রাজনীতিকে সে মুহুর্তেই অস্বীকার করেছে।’
এ বিষয়ে ফৌজিয়া জাফরিন প্রিয়ন্তী নিউজবাংলাকে বলেন, কুপ্রস্তাব বলতে বুঝাতে চেয়েছি, তাঁর মতো করে চলতে হবে। সে যেখানে যেতে বলবে সেখানে যেতে হবে, যা করতে বলবে তা করতে হবে। আমি তো রাজনৈতিক প্রোগ্রাম কোনো কিছুই বাদ দিতাম না। কিন্তু এর বাইরে সে কী বুঝাইছে আশা করি আপনাদের এটা আর ডিটেইলস-এ বলতে হবে না।’
এদিকে এ পোস্ট দেয়ার পর থেকে চাপের মুখে পড়েছেন বলে জানান এই নেত্রী। বলেন, ‘পোস্ট দেওয়ার পর আকতার হোসাইন আমাকে কল দিয়ে বলেন- যা করলি অনেক ভালো করলি। আমি যখন তাকে জিজ্ঞেস করলাম- আপনি আমার সঙ্গে অন্যায় করেননি? তখন তিনি বলেন- হ্যাঁ, আমি অন্যায় করেছি। কিন্তু তুই এটা এ সময়ে তুলে না ধরলেও পারতি।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইনকে কল দেয়া হলেও তিনি সংযোগ কেটে দেন।
প্রসঙ্গত, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত জন্য স্থগিত করা হয়েছে। ছাত্রলীগ সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শুক্রবার এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য