শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ পদ দীর্ঘদিন ধরে ফাঁকা থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজে স্থবিরতা দেখা গেছে। চলতি দায়িত্ব দিয়ে দায়সারাভাবে চালানো হচ্ছে দৈনন্দিন কাজ। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি দায়িত্বে যারা আছেন তারা শুধু দৈনন্দিন কাজেই মনোযোগী হন। কারণ তাদের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা থাকে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন সেবাপ্রার্থীরা।
একটি প্রতিষ্ঠানের চলতি দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চলতি দায়িত্বে থাকলে রুটিন কাজ ছাড়া নীতিনির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব না। কারণ এর পরে কে আসবে, তিনি এই সিদ্ধান্ত পছন্দ করেন কি না, আর না করলে কোনো ঝামেলায় পড়তে হয় কি না, এসব বিষয় থাকে।
‘ফলে অনেক সিদ্ধান্ত আছে, যা কেবল পূর্ণ নিয়োগ পেলেই গ্রহণ করা সম্ভব। এর ফলে আদতে প্রতিষ্ঠানই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
পদ ফাঁকা থাকার ঘটনায় প্রশাসনের কর্মদক্ষতা নিয়ে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষাবিদরা। তারা বলছেন, এসব পদ থেকে অবসরে কেউ হুট করে চলে যায় না। অবসরের অন্তত এক বছর আগে থেকেই বিষয়টি জানা থাকে কোন কর্মকর্তা অবসরে যাচ্ছেন। আবার ছয় মাস আগে শুরু হয় অবসরকালীন ছুটি।
ফাঁকা পদের জন্য সময়মতো নতুন লোক বাছাই করতে না পারা একটি অদক্ষ শিক্ষা প্রশাসনের প্রমাণ হিসেবেই দেখছেন জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক শেখ একরামুল কবির।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটি পদের মেয়াদ কবে শেষ হবে, তা অবশ্যই মন্ত্রণালয় জানে। তাই তাদের উচিত এর আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য শিক্ষা প্রশাসনের বেশ কিছু পদ এখনও ফাঁকা পড়ে আছে। এতে প্রতিষ্ঠানের কাজে স্থবিরতা নেমে আসছে।’
শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘একটি পদের মেয়াদ কখন শেষ হবে, তা নিশ্চয়ই মন্ত্রণালয় জানে। তাহলে তারা কেন যথাসময়ে নতুন লোক নিয়োগের উদ্যোগ নেয় না? আসলে এ বিষয়গুলো অনেকটা লাল ফিতার দৌরাত্ম্যও বলা যায়।’
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা প্রশাসনে পদ ফাঁকা রাখা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এতে প্রতিষ্ঠানের গতিশীলতা নষ্ট হয়। যার কোনো না কোনোভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিক্ষার্থীরাই।’
কত দিন ধরে ফাঁকা
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হওয়ার পর গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ছাড়েন অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।
তিনি নতুন পদে নিয়োগ পান চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি, কিন্তু তিনি তাতে যোগ দেয়ার আগে দুই সপ্তাহেও নতুন কোনো চেয়ারম্যানকে বেছে নেয়া হয়নি।
প্রায় তিন মাস ধরে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব তপন কুমার সরকার নিজের দায়িত্বের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে বোর্ড প্রধানের ভূমিকা পালন করছেন।
এ প্রতিষ্ঠানটি ঢাকার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বা এনসিটিবির চেয়ারম্যানের পদ থেকে ফরহাদুল ইসলাম অবসরে যান এপ্রিলে। এর পর থেকে চেয়ারম্যানের রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন এনসিটিবি সদস্য (শিক্ষাক্রম) মো. মশিউজ্জামান।
এই সংস্থাটি প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যের বইও দেয়া হয় এ সংস্থার মাধ্যমে।
চেয়ারম্যান পদ ছাড়াও এনসিটিবির আরও দুটি সদস্য পদ খালি এক বছরের বেশি সময় ধরে। সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী এ সংস্থায় চেয়ারম্যান ছাড়াও চারজন সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। তারা অর্থ, পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষাক্রম ও প্রাথমিক শিক্ষাক্রম বিভাগের দায়িত্ব পালন করবেন। চার সদস্যের মধ্যে এখন দুজন সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন।
এর মধ্যে একজন মো. মশিউজ্জামান (শিক্ষাক্রম) ও অন্যজন এ কে এম রিয়াজুল হাসান (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম)। অপর দুটি সদস্য পদ শূন্য থাকায় এ দুজন পদগুলোতে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। অর্থাৎ চারজনের কাজের ভার এখন পড়েছে দুইজনের কাঁধে।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে সনদ প্রদান ও সুপারিশ করে থাকে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ এনটিআরসিএ। সংস্থাটির একটি সদস্য পদও এক বছরের বেশি সময় ধরে ফাঁকা।
সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী, এ প্রতিষ্ঠানে চেয়ারম্যানসহ তিনটি সদস্য পদ রয়েছে, কিন্তু এখন দুইজন মিলে পালন করছেন তিনজনের দায়িত্ব।
কেন পদগুলো পূরণ হচ্ছে না
কয়েকবার শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো পূরণে উদ্যোগ নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা জটিলতার কারণে শূন্য পদগুলোতে নতুন নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ ভেস্তে যায়। এর মধ্যে তদবির, যোগ্য না হয়েও পছন্দের লোককে নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা অন্যতম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদগুলো পূরণে সরকারের নানা হিসাব-নিকাশ আছে। এ ছাড়া শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিদের উদ্যোগ ও আগ্রহও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক বলেন, ‘আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। এ বিষয়ে কাজ চলছে।’
টেন্ডার জালিয়াতি ও উন্নয়নকাজ শেষ না করেই কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রধান প্রকৌশলী মো. হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে।
সাবেক কর্মস্থল যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) থাকাকালীন হেলালের এসব দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেনকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে গত ৯ মে প্রজ্ঞাপন জারি করে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোর।
প্রজ্ঞাপনে ১৬ মে সকাল ১০টার মধ্যে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেনের কাছে সব নির্মাণকাজের ডিপিপি, প্ল্যান, ডিজাইন, টেন্ডার কমিটি, দরপত্র বিজ্ঞপ্তি, সিএস, নোটিফিকেশন অফ অ্যাওয়ার্ড, কার্যাদেশ বিল, ভাউচারসহ এ-সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র সরবরাহ করার জন্য বলা হয়।
যবিপ্রবির বঙ্গবন্ধু অ্যাকাডেমিক ভবন, জগদীশ চন্দ্র অ্যাকাডেমিক ভবন, বীরপ্রতীক তারামন বিবি হল, ওয়ার্কশপ, ১৬০০ কেভিএ সাবস্টেশন নির্মাণ, হ্যাচারি নির্মাণ ও জিমনেসিয়ামের নির্মাণকাজের যাবতীয় কাগজপত্র জমা দিতে বলেছে দুদক।
এ ছাড়া হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারীর মূল পদবি ইউনিভার্সিটি ইঞ্জিনিয়ার (গ্রেড-৪) হলেও তাকে প্রধান প্রকৌশলী পদ ব্যবহার করে গ্রেড-৩-এ বেতন-ভাতাদি নেয়া সংক্রান্ত কাগজপত্র পাঠানোর নির্দেশও দেয়া হয়।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত প্রধান প্রকৌশলী মো. হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অভিযোগ এসেছে। আগে সত্য-মিথ্যা যাচাই করুক। তারপর আমি এ বিষয়ে বক্তব্য দেব।
‘আর আমাকে দুদক থেকে ডাকা হয়েছে। আমি গিয়ে দেখা করব।’
এ বিষয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আহসান হাবীব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুদক সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান। তারা তথ্য চাইলে আমরা দিতে বাধ্য।
‘এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব অফিসের তথ্য চাওয়া হয়েছে, সেসব জায়গা থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে রেজিস্ট্রার দপ্তরের কাগজে সংশ্লিষ্ট স্থানে প্রেরণ করা হবে।’
আইনগত সমস্যা দেখিয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির মুখপাত্র ও ডেপুটি ডিরেক্টর হায়াতুজ্জামান মুকুলের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার অনুরোধ করেন।
যোগাযোগ করা হলে হায়াতুজ্জামান মুকুল ছুটিতে আছেন জানিয়ে বলেন, ‘আমি অফিসে ছিলাম না। এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারব না।
‘চিঠি এসেছে রেজিস্ট্রার অফিসে। আপনি রেজিস্ট্রারের সঙ্গে কথা বলেন।’
যবিপ্রবির রেজিস্ট্রার তার সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলেছেন জানালে মুকুল বলেন, ‘আমার কাছে কোনো চিঠিও নেই, কাগজও নেই, কিছুই নেই। এটি একটি গোপন জিনিস। আমি শুধু জানি, দুদক থেকে তদন্তের জন্য একটি চিঠি এসেছে।’
তিনি দুদক যশোর অফিসের ডিজির সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনার পরামর্শ দেন।
এদিকে শারীরিক অসুস্থ থাকায় বেশ কিছুদিন ছুটিতে রয়েছেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের উপপরিচালক (ডিডি) আলামিন হোসেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে। তিনি আমাদের তথ্য দেবেন এবং তা জমা দেয়ার শেষ সময় ছিল ১৬ মে, তবে তিনি তা প্রেরণ করেছেন কি না, এই মুহূর্তে তা বলতে পারছি না।’
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তের দায়িত্ব পান দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘কাগজপত্র সব এখনও আসেনি, তবে চাহিদা মোতাবেক উনারা চেষ্টা করেছেন। আমি মোটামুটি পেয়েছি, যাচাই করে কাজ আগানো যাবে।
‘ভবিষ্যতে উনারা আমাদের চাহিদা অনুযায়ী বাকি কাগজপত্র জমা দেবেন। আর যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, উনাকে তার বক্তব্য বলার জন্য ডাকা হয়েছে।’
২০১৯ সালে প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তখন ওই পদের জন্য আবেদন করেন ১২ জন। তাদের মধ্যে চারজনকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়। ওই চারজনের মধ্য থেকে নিয়োগ পান হেলাল উদ্দিন।
আরও পড়ুন:প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারিভাবে গান শেখানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ জন্য সারা দেশে আড়াই হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি প্রথমবারের মতো প্রাথমিকে শারীরিক শিক্ষার শিক্ষকও নিয়োগ দেয়া হচ্ছে সমপরিমাণ।
প্রতি বিষয়ে ২ হাজার ৫৮৩টি সহকারী শিক্ষকের পদ তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।
সংগীত ও শারীরিক শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠানো প্রস্তাব এরই মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন দিয়েছে। এই মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাঠানো হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। জনবলের বিপরীতে বরাদ্দ নিশ্চিত করে সেখান থেকে অনুমোদিত হয়ে এলে তা যাবে সচিব কমিটিতে। সেখান থেকে প্রাথমিকে আবার যখন সিদ্ধান্তটি আসবে, তখন তা পাঠানো হবে অধিদপ্তরে। তারপর আসবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি।
সরকার চাইছে, শিশুরা স্কুলে এসে আনন্দের সঙ্গে সময় কাটাবে। পড়াশোনাকে বিশেষ চাপ ভেবে ভীত থাকবে না।
সনাতন ধাঁচের শিক্ষা পদ্ধতির বদলে প্রাথমিক থেকেই শিশুরা যেন আনন্দ নিয়ে পড়াশোনা করে, সে জন্য পাঠক্রম থেকে শুরু করে স্কুলের অবকাঠামোও পরিবর্তন করে ফেলতে চাইছে সরকার। এর অংশ হিসেবে শিক্ষায় সংগীত ও শরীরচর্চা যোগ হচ্ছে।
এখন সীমিত পরিসরে কিছু স্কুলে ছবি আঁকার যে চর্চা রয়েছে, সেটি সব স্কুলে শুরু করা, পাশাপাশি আলাদা শিক্ষক নিয়োগের চিন্তা করা হচ্ছে।
বগুড়ার বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রাথমিক থেকেই সংগীত শেখানোর ব্যবস্থা আছে। এই দায়িত্বে আছেন শুক্লা ধর। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই বিষয়ে যখন আমরা ক্লাস নেই, তারা বেশ উপভোগ করে। যেসব পরিবার সংগীতচর্চায় আগ্রহী, সেসব পরিবার স্কুলের বাইরেও বিষয়টি এগিয়ে নেয়।’
শুক্লা পড়াশোনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগে। তার মতো যারা এই বিষয়ে পড়াশোনা করেন, তাদের পক্ষে পেশা হিসেবে সংগীতকে বেছে নেয়াটা কঠিন হয়ে যায় এই কারণে যে খুব বেশি প্রতিষ্ঠানে এই বিষয়ে নিয়োগ দেয়া হয় না।
প্রাথমিকে বিষয়টি চালু হলে সংগীতে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও নতুন সুযোগ তৈরি হবে।
শুক্লা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকারের এ সিদ্ধান্ত অত্যন্ত ইতিবাচক। ফলে শিক্ষা হবে আনন্দময়। যার ফল আমরা ভবিষ্যতে ভোগ করব। আর যারা এ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন তাদের জন্যও কর্মক্ষেত্র তৈরি হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক তাহমিনা আক্তার সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে শিশুদের শিক্ষাকে আনন্দময় করার দাবি করে আসছি। সংগীত ও শারীরিক শিক্ষায় শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হলে আমাদের দাবি কিছুটা হলেও বাস্তবায়ন হবে। বর্তমানে প্রাথমিকে অঙ্কন বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ বিষয়টি আরও জোরদার করা উচিত।’
শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বেশি নজর দেয়া উচিত প্রাথমিক শিক্ষায়। এই ধরনের উদ্যোগ এই শিক্ষার মান বাড়াবে।’
ব্যাপক চাকরির সুযোগ
প্রাথমিক ও জনশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকভাবে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে ৫ হাজার ১৬৬টি পদ তৈরি করার প্রস্তাব দিলেও এই বিষয়টি যদি স্কুলে স্কুলে চালু হয়, তাহলে কর্মসংস্থানের নতুন দিক উন্মোচন হতে পারে।
সবশেষ হিসাব অনুযায়ী দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। সব স্কুলে একজন করে সংগীত ও শরীরচর্চার শিক্ষক যদি নিয়োগ দেয়া যায়, তাহলেও নতুন চাকরির সুযোগ হবে ১ লাখ ৩১ হাজার ১৩২টি।
আবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই বিষয়ে শিক্ষক থাকলে বেসরকারি স্কুল-কলেজও একই চর্চায় যাবে। সে ক্ষেত্রে আরও নতুন চাকরি তৈরি হবে, দেশে সাংস্কৃতিক চর্চা বাড়বে।
সারা দেশে কর্মরত সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকের সংখ্যা ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮০ জন।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে কম নিয়োগ দেয়া হলেও আশা করছি পরে প্রতিটি স্কুলেই এই নিয়োগ দেয়া হবে।’
তিনি শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর তাগিদও দেন। বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর করা ড. কুদরত-ই-খোদা শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে শিক্ষায় বাজেটের ৬ থেকে ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু এখনও আমরা এটি করতে পারলাম না। কেবল ২ শতাংশের ভেতরে ঘুরপাক খাচ্ছে।’
কবে আসতে পারে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪)-এর আওতায় সংগীত ও শরীরচর্চা বিষয়ে সহকারী শিক্ষক পদ সৃষ্টিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় ২০২০ সালে।
সেই প্রস্তাব নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এই মন্ত্রণালয় সময় নিয়েছে দুই বছর।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মণীষ চাকমা ধারণা দিতে পারেননি কবে প্রস্তাবটি চূড়ান্ত করে তারা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাপাতে পারবেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এখন এ পদগুলোর বিষয়ে অর্থ বিভাগের সম্মতি নিয়ে সচিব কমিটি পাঠানো হবে। সেখানে অনুমোদন মিললে এই দুই বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে।’
শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় এই স্থরিবতা নিয়ে হতাশ। তিনি বলেন, ‘এই গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত নিতে কেন দুই বছর লাগবে? এখন তা আবার অন্য মন্ত্রণালয় ও কমিটিতে যাবে। এত দীর্ঘসূত্রতা কেন?’
প্রাথমিক শিক্ষাকে ঢেলে সাজাতে যত সিদ্ধান্ত
প্রাথমিকে শতভাগ ভর্তির লক্ষ্য অর্জনের পর সরকার এখন শিক্ষার গুণগত মানে নজর দিয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রমে বড় পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সরকারিভাবে। এটি বাস্তবায়ন হলে প্রাথমিকে পরীক্ষার সংখ্যা কমবে। বাড়বে শ্রেণিকক্ষে ধারাবাহিক মূল্যায়ন।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনসিটিবির পরিকল্পনা হলো নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাথমিকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা হবে না। পুরো মূল্যায়ন হবে বিদ্যালয়ে ধারাবাহিকভাবে শিখন কার্যক্রমের মাধ্যমে।
চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সামাজিকবিজ্ঞান ও বিজ্ঞানে ধারাবাহিক মূল্যায়ন ৬০ শতাংশ এবং সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে ৪০ শতাংশ। আর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্পকলা বিষয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে।
আরও পড়ুন:করোনা মহামারি-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষার বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়া গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
ঢাবির অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে মঙ্গলবার দুপুরে অনুষ্ঠিত প্রাক বাজেট সংলাপে অংশ নিয়ে এ মন্তব্য করেন উপাচার্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসি ‘বাজেট ২০২২-২৩: অতিমারি থেকে সমৃদ্ধির পথে অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক এই সংলাপের আয়োজন করে।
উপাচার্য বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতিসহ সব উন্নয়নকে টেকসই করতে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ ও সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে করোনা মহামারি পরিস্থিতিতেও দেশের অর্থনীতি ও সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রা অব্যাহত ছিল।’
দেশের এই উন্নয়নের ধারা আরও এগিয়ে নিতে সঠিকভাবে অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সুশাসনের অভাবগুলোকে চিহ্নিত করে সেগুলো নিরসনে কাজ করার জন্য উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।
সংলাপে সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ এবং ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
মূল প্রবন্ধে জাতীয় বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতকে অগ্রাধিকার দেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
তারা বলেন, বিদ্যমান ও উদীয়মান চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবিলা করে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে। টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, ন্যায়পরায়ণতা, দূরদর্শিতা এবং সামাজিক শুদ্ধাচার নিশ্চিত করতে হবে।
করোনার প্রভাবে শিক্ষার ক্ষতি নিরূপণ এবং কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়নে যথাযথ অর্থ বরাদ্দের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে স্বাধীন শিক্ষা ঘাটতি মোকাবিলায় কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়।
ঢাবির ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর এবং অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে প্রাক বাজেট সংলাপে অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন:শিক্ষা কার্যক্রমকে উপভোগ্য ও ফলপ্রসূ করতে ঢাকার ডিপিএস এসটিএস স্কুল কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। স্কুলটি ক্যামব্রিজ ও ব্রিটিশ কাউন্সিল অ্যাফিলিয়েটেড বোর্ড এক্সাম ভেন্যু হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
একইসঙ্গে এটি আইইএলটিএস এক্সামিনেশন রেজিস্ট্রেশন সেন্টার, স্কলাস্টিক অ্যাপটিটিউড টেস্ট (স্যাট) এক্সাম ভেন্যু, ক্যামব্রিজ টিচার্স ট্রেনিং ভেন্যু ও ক্যামব্রিজ পিডিকিউ সেন্টার হিসেবেও বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পাশাপাশি স্কুলটি ডিউক অব এডিনবার্গ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডের সহযোগী হিসেবেও রয়েছে।
বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করা আইইএলটিএস ট্রেনিং মডিউল সরবরাহকারী কিছু সংখ্যক আন্তর্জাতিক স্কুলগুলোর মধ্যে ডিপিএস এসটিএস স্কুল ঢাকা অন্যতম। স্কুলটি অনুমোদিত আইইএলটিএস পরীক্ষার নিবন্ধন কেন্দ্র এবং ডিপিএস এসটিএস স্কুলের শিক্ষার্থীসহ অন্যদের জন্যও আইইএলটিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের কোর্স প্রস্তাব করে।
স্কুলটি কলেজ বোর্ডের অধীনে স্যাট পরীক্ষার জন্য টেস্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সেন্টার; যারা স্যাট পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করা সব ধরনের সুবিধাসহ পরীক্ষার ভেন্যু সুবিধা দিয়ে থাকে। ডিপিএসের কেন্দ্র নম্বর ৭৪১০১।
ডিপিএস এসটিএস স্কুল ডিউক অফ এডিনবার্গ ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রামের সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রোগ্রামটি ক্যামব্রিজের সুপারিশ করা (https://www.cambridgeinternational.org/why-choose-us/duke-of-edinburghs-international-award/)। ৮ থেকে ১২ গ্রেডের শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের সুযোগটি উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। যার ফলে অনেক শিক্ষার্থী এই অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রামের বিভিন্ন স্তরে অংশগ্রহণ করেছেন। ডিউক অব এডিনবার্গ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড বাংলাদেশে অংশগ্রহণকারীরা ব্রোঞ্জ, সিলভার ও গোল্ড ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন সনদ গ্রহণ করেছেন।
ডিপিএস এসটিএস স্কুল ঢাকার দুটি ক্যাম্পাসই ডিপিএস স্কুল থেকে এ পরীক্ষায় অংশ নেয়া সব পরীক্ষার্থীদের জন্য ক্যামব্রিজ ও ব্রিটিশ কাউন্সিল অ্যাফিলিয়েটেড বোর্ড পরীক্ষার ভেন্যু হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
একইসঙ্গে গত বছর এটি অন্যান্য স্কুল থেকে যারা আইজিসিএসই, ‘ও’, ‘এএস’ এবং ‘এ’ লেভেল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে তাদের ভেন্যু হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ডিপিএস এর কেন্দ্র কোড হলো বিডি১১৭।
ডিপিএস এসটিএস স্কুল ঢাকা ক্যামব্রিজ প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট কোয়ালিফিকেশন (পিডিকিউ) সেন্টার থেকে অনুমোদিত; যারা ক্যামব্রিজ সার্টিফিকেট ইন টিচিং অ্যান্ড লার্নিংয়ের (সিআইসিটিঅ্যান্ডএল) জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। সার্টিফিকেশন প্রোগ্রামটি গত বছরের অক্টোবরে ডিপিএস স্কুল ঢাকার সিনিয়র সেকশনে শুরু হয়।
৮২ শতাংশ ডিসটিংশন গ্রেড ও শতভাগ পাশ নিয়ে এ প্রোগ্রামের প্রথম ব্যাচের কার্যক্রম শেষ হয়। স্কুলটির ইন-হাউজ ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর ও ইন্সট্রাক্টররা এ প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা করেন; যেখানে ডিপিএস ও অন্যান্য ক্যামব্রিজ স্কুলের শিক্ষকরা অংশ নেন।
স্কুলটি ক্যামব্রিজ টিচার্স ট্রেনিং ভেন্যু হিসেবেও বিবেচিত। যেখানে স্কুল ক্যাম্পাসে ক্যামব্রিজ বিষয় ও মডিউল ভিত্তিক টিচার্স ট্রেনিং পরিচালনা করে থাকে।
ডিপিএস এসটিএস স্কুলের প্রিন্সিপাল ড. শিবানন্দ সিএস বলেন, ‘এ ধরনের প্রোগ্রামসহ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুবিধা-সুযোগ দেয়ার জন্য ভিন্ন ধরনের উদ্যোগের সহযোগী হতে পেরে আমরা বেশ আনন্দিত। আগামী দিনগুলোতে এ ধরনের আরও উদ্যোগের সহযোগী হতে আমরা সচেষ্ট রয়েছি, যা দেশের তরুণদের জন্য আরও সুযোগ তৈরি করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।’
আরও পড়ুন:নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থে কেনা বিলাসবহুল ১০টি গাড়ি বিক্রি করে সেই টাকা প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ তহবিলে জমা করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব ড. মো. ফরহাদ হোসেনের সই করা এক অফিস আদেশে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
আদেশে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ধারা ৪৪ (১) অনুযায়ী প্রত্যক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সাধারণ তহবিল থাকবে এবং ৪৪ (৭) ধারা অনুযায়ী সাধারণ তহবিলের অর্থ ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় ব্যয় ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যাবে না।
নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়ন খাতে প্রয়োজনীয় ব্যয় না করে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ১২টি গাড়ি কেনে। এর মধ্যে ১০টি বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
অফিস আদেশে আরও বলা হয়, উল্লিখিত ১০টি বিলাসবহুল গাড়ি খোলা দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করে বিক্রয়লব্ধ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়নে ব্যয়ের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানের সাধারণ তহবিলে জমা করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে জরুরি ভিত্তিতে জানানোর অনুরোধ করা হলো।
যে ১০টি গাড়ি বিক্রি করতে হবে
যানবাহনের ধরন ও মডেল হলো- হার্ড জিপ (টয়োটা প্রাডো টি এক্স), মডেল-২০১৫; হার্ড জিপ (রেঞ্জ রোভার ভোগ পি ৪০০ ), মডেল-২০১৯; হার্ড জিপ (রেঞ্জ রোভার ভোগ পি ৪০০ ই), মডেল-২০১৯; হার্ড জিপ (রেঞ্জ রোভার অটোবায়োগ্রাফি), মডেল-২০১৯; হার্ড জিপ (রেঞ্জ রোভার ভোগ পি ৪০০), মডেল-২০১৯; হার্ড জিপ (রেঞ্জ রোভার অটোবায়োগ্রাফি), মডেল-২০১৯, হার্ড জিপ (রেঞ্জ রোভার অটোবায়োগ্রাফি), মডেল-২০১৯; হার্ড জিপ (রেঞ্জ রোভার ভোগ পি ৪০০ ই), মডেল-২০১৯; কার (স্যালুন) মার্সিডিজ বেঞ্জ, মডেল-২০১৯ এবং হার্ড জিপ (রেঞ্জ রোভার ভোগ পি ৪০০ ই), মডেল-২০১৯।
আরও পড়ুন:শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল ও বাস্তব শিক্ষার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করতে শিক্ষকদের আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
রাজধানীর সরকারি টিচার ট্রেনিং কলেজে বঙ্গবন্ধু ‘সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ’-এর জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘তত্ত্বীয় জ্ঞানের চেয়ে ব্যহারিক শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রায়োগিক শিক্ষার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বাস্তব শিক্ষার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করতে হবে।’
মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের সঙ্গে কাজ করার মানসিকতাই তৈরি হয়নি। আমরা তত্ত্বীয় জ্ঞানের ওপর এত বেশি জোর দিচ্ছি যে, বাস্তবে কোনও কাজ করার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা নিরুৎসাহিত হয়ে যাচ্ছে। তারা মনে করছে কৃষি কাজসহ কায়িক পরিশ্রমের কাজ হচ্ছে অশিক্ষিত লোকের কাজ। যেহেতু সে শিক্ষিত হয়ে গেছে সেহেতু সে এসব কাজ করবে না।
‘কিন্তু শিক্ষার্থীরা লদ্ধ জ্ঞানকে ব্যবহার করার মাধ্যমে উদ্ভাবন করতে পারে। তাই শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ থাকলো, শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ব্যবহারে উপযুক্ত করতে হবে।’
শিক্ষার্থীদের উন্মুক্ত ও বিজ্ঞানমনস্ক করার আহ্বান জানিয়ে উপমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা কূপমণ্ডুকতা, জড়তা, অতিমাত্রায় প্রতিক্রিয়াশীলতার মধ্যে ডুবে থাকে এবং কুসংস্কার, ধর্মীয় অপব্যখ্যা, নারী-পুরুষের মধ্যে অসমতার প্রতি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ চলে যায় সৃজনশীল চর্চার অভাবে।
‘সে কারণে শিক্ষকদের আমি অনুরোধ করব, জাতির পিতা যে দক্ষতা নির্ভর জনগোষ্ঠী করতে চেয়েছিলেন, শিক্ষার্থীদের সেই বাস্তব শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দক্ষতা নির্ভর জনগোষ্ঠী গেড়ে তুলতে হবে।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।
আরও পড়ুন:
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০২০ সালের ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট কোর্স প্রথম বর্ষ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে।
পরীক্ষায় এক লাখ ৭১ হাজার ১৯৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছেন ১ লাখ ৪৯ হাজার ৬০৭ জন। গড় পাসের হার ৮৭ দশমিক ৯ শতাংশ।
সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) আতাউর রহমান এ তথ্য জানান।
রেজিস্ট্রেশন ও কলেজওয়ারী ফলাফল www.nu.ac.bd/results ওয়েবসাইট থেকে জানা যাবে। এ ফলাফল সম্পর্কে কোনো পরীক্ষার্থী বা সংশ্লিষ্ট কারও আপত্তি/অভিযোগ থাকলে ফলাফল প্রকাশের এক মাসের মধ্যে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে লিখিতভাবে জানাতে হবে। এরপর আর কোনো আপত্তি/ অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হবে না।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০২০ সালের ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট কোর্স প্রথম বর্ষ পরীক্ষা শুরু হয় গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর আর শেষ হয় চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি। এর মধ্যে করোনা মহামারির কারণে কয়েক দফায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে দ্বিতীয় দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীরে ক্লাস বন্ধ করা হয় গত ২১ জানুয়ারি। এ দফায় শিক্ষাঙ্গনে সশরীরে ক্লাস বন্ধ থাকে এক মাস।
২২ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাঙ্গনগুলো আবার প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে।
গত ২ মার্চ শুরু হয় প্রাথমিকে সশরীরে ক্লাস। টানা দুই বছর বন্ধের পর গত ১৫ মার্চ প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের সশরীরে ক্লাস শুরু হয়।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর দুই দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়। প্রথম দফায় প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করে শিক্ষাঙ্গনের দুয়ার।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য