টাকার বিনিময়ে বেসরকারি শিক্ষায় আগ্রহী হয়ে উঠা মধ্যবিত্ত শ্রেণির শিশুদেরকে আবার সরকারি প্রাথমিক শিক্ষায় নিয়ে আসার চেষ্টা করতে চাইছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এই চেষ্টার অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগরীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ব্যাপক অবকাঠামোগত পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তৈরি করা হবে দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো।
এভাবে সব শ্রেণি-পেশার অভিভাবকরা সন্তানদেরকে প্রাথমিকে ভর্তিতে আগ্রহী করে তুলতে চাইছে সরকার।
শিক্ষাবিদরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সারা দেশের স্কুলগুলোকেই ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তারা অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি পাঠ্যক্রম পাল্টানো ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণেও জোর দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন। বলেছেন, একটি দেশে সব শিশুর একই মানের শিক্ষা লাভের যে অধিকার, সেটি নিশ্চিত করতে না পারলে শিক্ষায় বৈষম্য দূর করা যাবে না।
সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা বিনা মূল্যের হলেও এর মান নিয়ে আছে প্রশ্ন। তবে অর্থকরির সংকট নেই, এমন পরিবারগুলো এখন সরকারের স্কুলগুলোতে সন্তান ভর্তি করে না বললেই চলে। তারা বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন এবং হাল আমলে ইংরেজি মাধ্যমেই সন্তানদেরকে ভর্তি করছেন।
এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা ব্যবস্থায় শুরু থেকেই এক ধরনের বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। বিষয়টি এমন হয়ে গেছে যে, গরিবের সন্তান পড়বে সরকারি প্রাথমিকে আর সম্পদশালীর শিশু পড়বে বেসরকারি স্কুলে।
রাজধানীতে এই বিভাজন আরও বেশি। এখানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সাধারণত ঘিঞ্জি, দুর্গন্ধময় এলাকায় অবস্থিত। স্কুলগুলোর অবকাঠামোর মানও বেশ দুর্বল। সেখানে নিম্ন আয়ের পরিবারের শিশুরাই সাধারণত ভর্তি হয়।
এতে শৈশব থেকেই শিশুরা সমাজের সামগ্রিক চিত্র দেখে বড় হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে শিক্ষাবিদরা আক্ষেপ করেন। অর্থাৎ নিম্ন আয়ের শিশুরা কেবল মিশছে তাদের শ্রেণির সঙ্গে, মধ্যবিত্ত শ্রেণির শিশুদের বন্ধুত্ব হচ্ছে কেবল তাদের শ্রেণিভুক্তদের মধ্যে, আর উচ্চবিত্ত শ্রেণির শিশুরা মিশছে অন্য উচ্চবিত্ত শ্রেণির শিশুর সঙ্গে।
এতে একটি শ্রেণি অন্য শ্রেণির জীবন সম্পর্কে কিছুই জানছে না। আর প্রাথমিকে যেহেতু কেবল নিম্ন আয়ের শিশুরা ভর্তি হচ্ছে, সেহেতু এসব স্কুলে শিক্ষার মান বজায় রাখা নিয়ে চেষ্টা কম।
এই পরিস্থিতি পাল্টে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে সব শ্রেণি-পেশার অভিভাবকের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পড়তে আগ্রহী করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগরী ও পূর্বাচলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ দৃষ্টিনন্দনকরণ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
এ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা মহানগরীর ৩৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৫৪টি বিদ্যালয়ের দুই হাজার ৯৭৫টি কক্ষ নতুনভাবে নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া ১৭৭টি বিদ্যালয়ের ১ হাজার ১৬৭টি কক্ষের অবকাঠামো উন্নয়নসহ দৃষ্টিনন্দন করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় উত্তরায় তিনটি ও পূর্বাচলে ১১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও স্থাপন করা হবে।
চার বছর মেয়াদি এ প্রকল্প শেষ হবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৫৯ কোটি ২ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রকিউরমেন্ট) ও প্রকল্প পরিচালক মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশের অন্যান্য জায়গার তুলনায় ঢাকা মহানগরীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামো নাজুক। এ কারণে সব শ্রেণি-পেশার অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের এসব বিদ্যালয়ে পড়াতে আগ্রহী হন না। আমরা অভিভাবকদের এসব বিদ্যালয়ে সন্তানদের পাঠাতে উৎসাহী করতে চাই। বিদ্যালয়গুলো দৃষ্টিনন্দন করার উদ্যোগ এর অন্যতম পদক্ষেপ।’
প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হলেও করোনা মহামারির কারণে যথাসময়ে কাজ শুরু করা যায়নি। তবে সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। বুধবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজ উদ্বোধন করে প্রকল্পের মূল কাজ শুরু করবেন।
মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন শিক্ষাবিদরাও।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচক। প্রাথমিক শিক্ষা অবশ্যই আনন্দদায়ক করতে হবে। শিশুদের আকৃষ্ট করতে বিদ্যালয় দৃষ্টিনন্দন হওয়া উচিত।’
এই উদ্যোগ কেবল ঢাকায় না রেখে সারা দেশেই নেয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, ‘দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ভিত গড়ে দেয় প্রাথমিক শিক্ষা। আমাদের প্রাথমিক শিক্ষায় আরও বেশি নজর দিতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সব শ্রেণি-পেশার সন্তানরা পড়াশোনা করে না- এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। আমি এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। একই সঙ্গে পড়াশোনার মান উন্নয়নে শিক্ষকদের যথাযথ ট্রেনিং দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।’
বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ২০২০ সালের জরিপ অনুযায়ী দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকের সংখ্যা ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮০ জন। আর শিক্ষার্থী সংখ্যা ১ কোটি ৭৬ লাখ ৭২৬৫ জন।
কিন্ডারগার্টেন স্কুলদের সমিতি বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সেকেন্দার আলী জানিয়েছেন, তাদের সমিতিভুক্ত স্কুলের সংখ্যা সাড়া দেশে ৬৫ হাজারের বেশি। তবে ছাত্র সংখ্যা কত, সেই হিসাব তাদের কাছে নেই।
আরও পড়ুন:অভিযোগ ছিল, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বান্ধাবাড়ি জেবিপি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠটি মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে এক ঠিকাদারের কাছে ভাড়া দিয়ে নানা ধরনের নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়েছে। এতে ওই স্কুলসহ সংলগ্ন বান্ধাবাড়ি হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা বন্ধ হয়ে যায়। আর ইট ভাঙার বিরামহীন শব্দে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের মনোযোগেও বিঘ্ন ঘটতে থাকে।
বিষয়টি নিয়ে নিউজবাংলাসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বুধবার কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদাউস ওয়াহিদ জানান, বিষয়টি তদন্ত করে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও জানান, কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে সদস্য করে তিন সদস্যের ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে নিউজবাংলার আগের প্রতিবেদনে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য কামাল হোসেন অভিযোগ করেছিলেন, নির্মাণসামগ্রী রাখতে ওই মাঠটি ৭ লাখ টাকায় ঠিকাদার মো. জসিমের কাছে ভাড়া দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
স্কুলের এক ছাত্র-অভিভাবক দাবি করেন, ঠিকাদারের কাছ থেকে জেবিপি উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হান্নান মোল্লা ও প্রধান শিক্ষক শেখ আব্দুর রশিদ ৭ লাখ টাকা নিয়েছেন।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকসহ ঠিকাদার জসিমও। তারা দাবি করেছেন, ৫০ হাজার টাকা এবং একটি সিসি ক্যামেরা বিদ্যালয়ে দেয়া হবে এই শর্তে মাত্র তিন মাসের জন্য নির্মাণসামগ্রীগুলো রাখা হয়েছে।
বর্তমানে বিদ্যালয়টির মাঠজুড়ে ইট, খোয়াসহ নির্মাণ সামগ্রী দেখা গেছে। প্রতিদিনই বিকট শব্দ করে মেশিন দিয়ে ভাঙা হচ্ছে ইট। এতে পড়াশোনা ও খেলাধুলা দুদিকেই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
আরও পড়ুন:জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০২০ সালের অনার্স চতুর্থ বর্ষ পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ। তবে ৪ বছরের সমন্বিত ফলাফল (CGPA) আগামী সপ্তাহে প্রকাশিত হবে।
বুধবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) মোঃ আতাউর রহমানের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে থেকে এ তথ্য জানা যায়।
এতে বলা হয়, এ পরীক্ষায় দেশের ৭৩৩ টি কলেজের ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭২৭ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এ পরীক্ষার ৪ বছরের সমন্বিত ফল (CGPA) আগামী সপ্তাহে প্রকাশিত হবে।
আরও বলা হয়, সন্ধ্যা ৭টা থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে (www.nu.ac.bd/results অথবা www.nubd.info/results) ফল পাওয়া যাবে।
করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে দ্বিতীয় দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীরে ক্লাস বন্ধ করা হয় গত ২১ জানুয়ারি। এ দফায় শিক্ষাঙ্গনে সশরীরে ক্লাস বন্ধ থাকে এক মাস।
২২ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাঙ্গনগুলো আবার প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে।
গত ২ মার্চ শুরু হয় প্রাথমিকে সশরীরে ক্লাস। টানা দুই বছর বন্ধের পর গত ১৫ মার্চ প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের সশরীরে ক্লাস শুরু হয়।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর দুই দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়। প্রথম দফায় প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করে শিক্ষাঙ্গনের দুয়ার।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী ভোটার তালিকা হালনাগাদে সরকারি, বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের সহায়তা করার নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
বুধবার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিচালক অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরীর সই করা অফিস আদেশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
আদেশে বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ১৬ মে‘র স্মারকপত্রে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, ২০২২ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে সার্বিক সহযোগিতা ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদেরকে নির্দেশনা দিতে অনুরোধ করা হল।
জানা গেছে, ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে যাদের জন্ম তাদের এবং বিগত ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে যারা বাদ পড়েছেন নিবন্ধনের জন্য তাদেরও তথ্য সংগ্রহ করা হবে। প্রথম পর্যায়ে ১৪০টি উপজেলা বা থানার তথ্যসংগ্রহ করা হবে। অবশিষ্ট উপজেলা বা থানার সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার বা জেলা নির্বাচন অফিসাররা স্থানীয়ভাবে তথ্য সংগ্রহ ও নিবন্ধন কার্যক্রমের সময়সূচি নির্ধারণ করবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মাস্টারদা সূর্য সেন হলে জ্যেষ্ঠ একজনকে সালাম না দেয়ায় মারধরের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন ছাত্রলীগ কর্মী।
হলের ২৪৯ নম্বর কক্ষে মঙ্গলবার রাত পৌনে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান ওই ছাত্র।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত মানিকুর রহমান মানিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। অভিযোগকারী সাজ্জাদুর হক সাঈদি নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।
অভিযুক্ত ও অভিযোগকারী উভয়ই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত। তারা হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমানের অনুসারী।
কী ঘটেছিল
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সাজ্জাদুর হক বলেন, ‘আমি আমার একটা ব্যক্তিগত কাজে রুমে বসে রাত ১১টা থেকে ১টা অনলাইন মিটিংয়ে যুক্ত ছিলাম। রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমাদের রাজনৈতিক গ্রুপের মাস্টার্সের কয়েকজন বড় ভাই আমাদের রুমে আসেন। তখন আমি অনলাইন মিটিংয়ে যুক্ত থাকায় উঠে উনাদের সালাম দিতে পারিনি।
‘আমি এবং রুমের বাকি কয়েকজন সদস্য গেস্টরুম এবং প্রোগ্রামে অনিয়মিত হওয়ায় উনারা রুমে থাকা আমার বাকি বন্ধুদের বলেন, আমরা যেন ৩২৬ নং কক্ষে শিফট হয়ে আমাদের রুমটা খালি করে দেই। এ কথা বলেই উনারা চলে যান।’
এই শিক্ষার্থী বলেন, “বড় ভাইয়েরা চলে যাওয়ার পর চতুর্থ বর্ষের মানিক ভাই এবং আরও কয়েকজন ভাই আমাদের রুমে ঢোকেন। তখনও আমি মিটিংয়ে যুক্ত থাকায় উঠে উনাদের সঙ্গে হ্যান্ডশেক এবং সালামও দিতে পারিনি।
“এরপর মানিক ভাই আমাকে বলেন, ‘তোর বাড়ি কোথায়? তুই মিটিং থেকে উঠিস না ক্যান? ভাইয়েরা আসছে দেখিস না?’ এগুলো বলেই খারাপ ভাষায় আমার মা-বাবাকে জড়িয়ে আমাকে গালাগাল করেন। এরপর জুতা নিয়ে আমার বিছানার ওপর উঠে আমার কলার চেপে ধরে মিটিং থেকে তুলে আমাকে বিছানার মধ্যে ফেলে দেয়। মিটিংটা গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় আমি তারপরও মিটিংটা চালিয়ে গেছি।”
এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘মিটিং শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে মানিক ভাই আমাকে কানে জোরে থাপ্পড় দেন। এরপর মাস্টার্সের বড় ভাইয়েরা রুমে ঢোকেন। উনাদের সামনেও আমাকে বুকের মধ্যে লাথি মারলে আমি মাটিতে পড়ে যাই। এরপর আমাকে রুম থেকে চলে যেতে বলে আর আমি ক্যামনে হলে থাকি, সেটা উনি দেখে নেবেন বলে হুমকি দেন।’
সাজ্জাদ বলেন, ‘আমি বর্তমানে আমার রুমেই আছি। এই ঘটনায় আমি আগামীকাল (বুধবার) হল প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেব।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মানিকুর রহমানের মোবাইলে কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমান বলেন, ‘আমি এখন হলের বাইরে আছি। এই বিষয়ে অল্প শুনেছি। হলে গিয়ে বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি।’
আরও পড়ুন:ছাত্রলীগের হামলায় নেতাকর্মী জখমের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
বিএনপির অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদল ২৬ মে সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়) বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। পরদিন সংগঠনটি একই কর্মসূচি পালন করবে জেলা ও মহানগরে।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবার রাতে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল অভিযোগ করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলায় ছাত্রদলের নারী নেত্রীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ৮০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেকের শারীরিক অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। ক্যাম্পাসে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালনের সময় হকিস্টিক, রড, রামদা, চাপাতি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এই হামলা চালায়।
তিনি বলেন, ‘হামলায় ছাত্রদলের নেত্রী মানসুরা আলম, রেহেনা আক্তার শিরীন, শানজিদা ইয়াসমিন তুলি, সৈয়দা সুমাইয়া পারভীন, তন্বী মল্লিক রেহাই পাননি। তাদেরকে সড়কে ফেলে পেটানো হয়েছে। দুজন ছাত্রদল নেতাকে তুলে নিয়ে শহীদুল্লাহ হলের ড্রেনে ফেলে নির্যাতন করা হয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালে আহত নেতাকর্মী ও চিকিৎসকদের হয়রানি করছে ছাত্রলীগের কর্মীরা।’
সংবাদ সম্মেলনে আহত নেতাকর্মীদের তালিকা তুলে ধরেন ছাত্রদলের নেতারা। এ তালিকায় কেন্দ্রীয় সংসদের সিনিয়র সহ সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসার মোহাম্মদ ইয়াহইয়া, সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক আকতারুজ্জামান আক্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহবায়ক আকতার হোসেন, যুগ্ম আহবায়ক খোরশেদ আলম সোহেলসহ বিভিন্ন স্তরের নেতারা রয়েছেন।
আরও পড়ুন:জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম। অবসরোত্তর ছুটি ভোগরত অবস্থায় এ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
আগামী দুই বছর তিনি এই দায়িত্ব পালন করবেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখার উপসচিব মোহা. রফিকুল ইসলামের সই করা প্রজ্ঞাপন থেকে মঙ্গলবার এ তথ্য জানা যায়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি চাকরি আইন ২০১৮-এর ধারা-৪৯ অনুযায়ী অবসর-উত্তর ছুটি ভোগ করা অবস্থায় বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের কর্মকর্তা অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলামকে তার অবসর-উত্তর ছুটি ও তদসংশ্লিষ্ট সুবিধাদি স্থগিতের শর্তে যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী দুই বছর মেয়াদে এনসিটিবি চেয়ারম্যান পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করা হলো।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম চলতি বছরই অবসরে যান। তিনি এনসিটিবির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি এনসিটিবির চেয়ারম্যান পদে প্রেষণে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে মঙ্গলবার। তাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বিতর্কিত দুই প্রার্থীসহ আওয়ামীপন্থী নীল দলের তিনজন জিততে পারেননি।
মঙ্গলকার সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। মোট এক হাজার ৪৭০ জন ভোটারের মধ্যে এক হাজার ৩৪৬ শিক্ষক ভোট দেন।
ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দীন আহমেদ মঙ্গলবার বিকেলে ভোটের ফল ঘোষণা করেন।
ঘোষিত ফলে দেখা যায়, ৩৫ জন শিক্ষক প্রতিনিধি থেকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নীল দলের প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ৩২ জন। বাকি তিনজন নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাদা দলের প্যানেল থেকে।
সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফুর রহমান বলেন, গণতান্ত্রিক এবং বন্ধুত্বসুলভ পরিবেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। এই নির্বাচন নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই।
সাদা দলের প্যানেল থেকে মাত্র তিনজন প্রার্থী ছাড়া বাকিদের হেরে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মূলত দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা, শিক্ষক নিয়োগ বিষয়ে জুনিয়র শিক্ষকরা শিক্ষক নেতাদের পেছনে ঝুঁকে থাকা এবং মানসিক চাপের কারণে এই ফল।
এদিকে নির্বাচনে হেরে যাওয়া নীল দলের তিন প্রার্থীর মধ্যে দুজনের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই যৌন হয়রানির অভিযোগ ছিল। তারা হলেন-ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এবং ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক মো. আকরাম হোসেন।
যৌন হয়রানির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও নীল দল থেকে তাদের মনোনয়ন দেয়ায় দলের একটি অংশের মধ্যে শুরু থেকেই চাপা ক্ষোভ ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নীল দলের এক শিক্ষক বলেন, এই দুই বিতর্কিত শিক্ষকের পরিবর্তে শক্তিশালী প্রার্থী দিলে নীল দল প্রায় পূর্ণ প্যানেলে বিজয়ী হতে পারতো।
নীল দলের প্যানেল থেকে হেরে যাওয়া অন্য প্রার্থী হলেন শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান।
এদিকে সাদা দল থেকে নির্বাচিতরা হলেন- পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. লুৎফর রহমান (৭৭৭ ভোট), পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম (৬৩৫ ভোট) এবং প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ (৬২৭ ভোট)।
নীলদলের প্যানেল থেকে নির্বাচিতরা হলেন- পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া (৯১২ ভোট), পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইসতিয়াক মঈন সৈয়দ (৮৩১ ভোট); টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক আবু জাফর মো. শফিউল আলম ভূঁইয়া (৮২৫ ভোট), রোবটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক লাফিফা জামাল (৮১৩ ভোট), অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. জিয়াউর রহমান (৮০২ ভোট), ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল বাছির (৭৭৭ ভোট), উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মিহির লাল সাহা (৭৭৫ ভোট), গণিত বিভাগের অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার (৭৭৪ ভোট), ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক আবদুস ছামাদ (৭৬৫ ভোট), কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু (৭৫৯ ভোট)।
আরও রয়েছেন- সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদা (৭৪১ ভোট), প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম মাহবুব হাসান (৭৩৯ ভোট), অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মাদ আবদুল মঈন (৭৩৯ ভোট), পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন (৭১১ ভোট), আইন বিভাগের অধ্যাপক সীমা জামান (৭০৬ ভোট), সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন (৬৯৮ ভোট), অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের অধ্যাপক নিসার হোসেন (৬৯৮ ভোট), ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ (৬৮৮ ভোট), প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ফিরোজ জামান (৬৮২ ভোট), আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তৌহিদা রশিদ (৬৭৩ ভোট), অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান (৬৭৩ ভোট), ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি অ্যান্ড ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক এস এম আবদুর রহমান (৬৭২ ভোট), ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক কে এম সাইফুল ইসলাম খান (৬৬৭ ভোট), ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মো. জিল্লুর রহমান (৬৬৪ ভোট), মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মো. মাসুদুর রহমান (৬৬০ ভোট)।
নীলদল থেকে নির্বাচিত বাকিরা হলেন- ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ (৬২৭ ভোট), ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুর রহিম (৬৪৬ ভোট), ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফিরোজা ইয়াসমীন (৬৪১ ভোট), ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সিকদার মনোয়ার মুর্শেদ ওরফে সৌরভ সিকদার (৬২০ ভোট), ইসলাম শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুর রশীদ (৬১৮ ভোট), শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম (৬১৩ ভোট) এবং ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম (৬০৯ ভোট)।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য