আলিম পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে ৭৫০ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেবে সরকার। এর মধ্যে ১৫০ শিক্ষার্থীকে মেধাবৃত্তি ও ৬০০ শিক্ষার্থীকে সাধারণ বৃত্তি দেয়া হবে।
রোববার রাতে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ শামসুজ্জামানের সই করা আলিমের বৃত্তির ফল তৈরি সংক্রান্ত অফিস আদেশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
এতে আরও বলা হয়, ‘২০২১ সালের আলিম পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে মেধাবৃত্তিপ্রাপ্ত ১৫০ শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ৭৫০ টাকা এবং বার্ষিক এককালীন ১ হাজার ৮০০ টাকা দেয়া হবে। সাধারণ বৃত্তিপ্রাপ্ত আলিম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৬০০ শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ৩৫০ টাকা এবং বার্ষিক এককালীন ৭৫০ টাকা দেয়া হবে। আলিম-পরবর্তী কোর্সের মেয়াদ অনুযায়ী তিন, চার বা পাঁচ বছর এ বৃত্তি সুবিধা পাবেন শিক্ষার্থীরা।’
জানা যায়, বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের টাকা জিটুপি পদ্ধতিতে ইএফটির মাধ্যমে সরাসরি শিক্ষার্থীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হবে। বৃত্তির গেজেট প্রকাশের ৭ দিনের মধ্যে অনলাইন সুবিধাসম্পন্ন ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলে হিসাব নম্বর ভর্তীকৃত প্রতিষ্ঠানে জমা দিতে হবে।
এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ করা হয় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি। এতে পাসের হার ৯৫.২৬ শতাংশ। এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন এক লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ শিক্ষার্থী।
সাধারণত প্রতি বছর এপ্রিলে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হলেও করোনা মহামারির কারণে এই পাবলিক পরীক্ষা ২০২১ সালের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নেয়ার ঘোষণা দেয় সরকার। পরীক্ষা ২ ডিসেম্বর শুরু হয়ে শেষ হয় ৩০ ডিসেম্বর।
ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এমপির প্রচেষ্টায় বিদ্যুতের লোডশেডিং থেকে অনেকটাই রক্ষা পেয়েছে চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলার প্রায় ৮ লাখ মানুষ। চালু হয়েছে বন্ধ থাকা ১১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। বিষয়টি এক ভিডিও বার্তায় নিশ্চিত করেছেন তিনি।
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ নসরতপুরে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ১১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র সম্প্রতি চালু হয়েছে। এতে করে ব্যারিস্টার সুমন এমপির সংসদীয় এলাকায় আগের তুলনায় লোডশেডিং কমেছে। আগে এখানে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৫-১৬ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকতো না। বর্তমানে দিন-রাত মিলে ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন ওই এলাকার মানুষ। প্রচণ্ড গরমের এই সময়ে বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং কমে আসায় জনজীবনে ফিরেছে স্বস্তি।
পবিত্র রমজান মাসে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় অতীষ্ঠ হয়ে এমপি সুমনের কাছে এর সমাধান চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হন চুনারুঘাট-মাধবপুরবাসী। তিনি নিজ সংসদীয় এলাকার জনগণের বিদ্যুৎ-ভোগান্তির খবর শুনে ফেসবুকে ভিডিও বার্তায় লোডশেডিং কমানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সমাধান না হলে তিনি মহাসমাবেশের ডাক দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন।
পরবর্তীতে ব্যারিস্টার সুমনের ঐকান্তিক চেষ্টায় ১১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র চালুর মাধ্যমে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে আসে।
ভিডিও বার্তায় এই খবর দিতে গিয়ে এমপি সুমন বলেন, ‘গ্যাস সংযোগ না থাকায় নসরতপুর ১১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র এতোদিন বন্ধ ছিল। গ্যাস সংযোগের মাধ্যমে কেন্দ্রটি চালু হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, আর আগের মতো অতটা লোডশেডিং হবে না।
‘যদি আবারও অসহনীয় লোডশেডিং হয়, তবে পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহি করতে হবে জনগণের কাছে।’
পরিশেষে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সচিব, ১১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ইনচার্জসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
আরও পড়ুন:কুমিল্লা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে জেলায় শুরু হয়েছে আনারসের ফিলিপাইনের একটি জাত।
এ উদ্যোগে যুক্ত একজন কৃষি কর্মকর্তা জাতটির বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, এ বছর আনারস চাষ সফল হলে আগামী বছর আরও বড় পরিসরে এ জাতের চাষ করা হবে।
রোপণ করা চারা থেকে আগামী মাস ছয়েকের মধ্যে ফলন পাওয়া যাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভাষ্য, বিদেশি আনারসের এ জাতটির নাম এমডি-২। এটির আদি নিবাস ফিলিপাইন। এর আগে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায় এ জাতের আনারস চাষ হয়েছে। এ আনারসের চামড়া পাতলা ও প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।
অধিদপ্তরের কুমিল্লা কার্যালয়ের উপপরিচালক আইয়ুব মাহমুদ বলেন, ‘এমডি-২ জাতের আনারসের আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক সুনাম আছে। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকায় বেশ জনপ্রিয়। এ জাতের আনারস দেশীয় আনারসের তুলনায় অনেক বেশি মিষ্টি।
‘এ আনারস দ্রুত পচে না। প্রথমবারের মতো এ বছর আমরা পুরো কুমিল্লা জেলায় দেড় হাজার চারা বিতরণ করেছি। জেলায় আদর্শ সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, সদর দক্ষিণ ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় বেশ কিছু টিলা ও পাহাড় রয়েছে। ছাড়াও লালমাই পাহাড়কে টার্গেট করে আমরা চারা বিতরণ করেছি। আশা করছি কুমিল্লার মাটি ও আবহাওয়া এমডি ২ জাতের আনারস চাষে বেশ উপযোগী হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফলন ভালো পাওয়া যাবে। এ বছর আমরা সফল হলে আমাদের আগামী বছরে আরও ব্যাপকভাবে এমডি-২ জাতের আনারস চাষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলায় ঈদ উৎসবে কিষান-কিষানিদের নিয়ে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। সেসব খেলা দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজারো দর্শনার্থী এস ভিড় জমায়।
কৃষকদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন করে ফাইট আনটিল লাইট (ফুল) নামে একটি সামাজিক সংগঠন। মূলত কৃষকদের ঈদকে প্রাণবন্ত করতে এ উৎসবের আয়োজন করে সংগঠনটি। খেলা শেষে ৩৫ জন বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।
শুক্রবার দিনব্যাপী ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর বড়ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসব খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
দিনব্যাপী চলা অনুষ্ঠানে প্রায় ২২ ধরনের ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল হাঁড়ি ভাঙা, বালিশ খেলা, সুঁইসুতা, সাঁতার, তৈলাক্ত কলাগাছ বেয়ে চড়া, স্লো সাইকেল রেস, বেলুন ফাটানো এবং কিষানিদের বল ফেলা, বালিশ খেলা এবং যেমন খুশি তেমন সাঁজোসহ আরও অন্যান্য খেলা। এসব খেলায় অংশ নেন বিভিন্ন বয়সের শতাধিক কিষান-কিষানি।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আইনুল ইসলাম, সাংবাদিক শফি খান, রংপুর বিভাগীয় হিসাবরক্ষক সাইদুল হক, ফুল-এর নির্বাহী পরিচালক আব্দুল কাদের প্রমুখ।
খেলা দেখতে আসা ময়নাল হক বলেন, ‘গ্রামে এসব খেলা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। প্রায় ১০-১৫ বছর পর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খেলা দেখে খুবই আনন্দ পেলাম। সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে কৃষকদের হাঁড়ি ভাঙা, সাইকেল খেলা দেখে। এছাড়া কিষানিদের সুঁইসুতা খেলা ও বালিশ খেলা ছিল বেশ আনন্দের।’
কৃষক নুর ইসলাম বলেন, ‘কৃষকদের নিয়ে এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন সত্যি ভালো লেগেছে। আমরা এখানে শতাধিক কিষান-কিষানি আজকের খেলায় অংশ নিয়েছি। খু্ব ভালো লেগেছে।’
ফুল-এর নির্বাহী পরিচালক আব্দুল কাদের বলেন, ‘কৃষক হাসলে বাংলাদেশ হাসে- এ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে দিনব্যাপী শতাধিক কিষান-কিষানিকে নিয়ে প্রায় ২২টি খেলার আয়োজন করা হয়েছে।
‘এ খেলার মাধ্যমে সমাজে বাল্যবিয়ে বন্ধে সচেতনতা বাড়াতে চেষ্টা করেছি। এছাড়া গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানাতেও এ খেলার আয়োজন করা হয়েছে।’
‘ঈদ কার্ড বানিয়ে খোলা উদ্যানে, শৈশবে ফিরে যাই নব উদ্যমে’ স্লোগান নিয়ে মাগুরায় ঈদ কার্ড তৈরি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার সকাল ১০টায় মাগুরা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ‘পরিবর্তে আমরাই’ নামক একটি সংগঠন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন মাগুরা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন ও মাগুরা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার মজুমদার।
প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম শফিক, চিত্রশিল্পী আবুল আজাদ ও মনিরুল ইসলাম। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন অতিথিরা। এ প্রতিযোগিতায় শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষও অংশগ্রহণ করেন।
‘পরিবর্তে আমরাই’ সংগঠনের পরিচালক নাহিদুল রহমান দুর্জয় বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের সপ্তম বার্ষিকীতে এ আয়োজন। মাগুরাতে এ সংগঠন বিভিন্ন সৃজনশীল কাজ করে থাকে। বিভিন্ন জাতীয় দিবসসহ নানা উৎসবে আমরা সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছি। মাগুরাতে আমরাই বির্তকের নানা কলাকৌশল শিক্ষার্থীদের শিখিয়ে থাকি। আগামী দিনে মাগুরায় আরও ভালো কিছু সৃজনশীন কাজ আমরা করতে চাই। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের শিশুকাল থেকে মানবতার শিক্ষা দিতে তাদের টিফিনের টাকায় ছয় বছর ধরে ঈদ উপহার বিতরণ করছে ‘ডিলাইট কিন্ডারগার্টেন’ নামের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে, কুমিল্লা রেল স্টেশনে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘লাল সবুজ উন্নয়ন সংঘ’-এর আয়োজনে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে ঈদের নতুন পোশাক উপহার দেয়া হয়েছে।
ডিলাইট কিন্ডারগার্টেন প্রাঙ্গণে পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মো. কাছেদ মিয়ার সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঈদ উপহার বিতরণে প্রধান অতিথি ছিলেন অষ্টগ্রাম সদর ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ ফাইয়াজ হাসান বাবু।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ছয় বছর ধরে পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়নে ডিলাইট কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীদের একদিনের টিফিনের টাকার সঙ্গে শিক্ষক, অভিভাবক এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতা মিলিয়ে প্রতি বছর নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণের আয়োজন করা হয়।
এবারও পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শতাধিক স্বল্প আয়ের মানুষের মাঝে দুধ, চিনি, সেমাই, নুডুলস, সাবানসহ ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
এ ঈদ উপহার বিতরণের মাধ্যমে শিশুদের মানবিক ও পরোপকারী করে গড়ে তোলার জন্য এ আয়োজনকে ধন্যবাদ জানিয়ে উপস্থিত এক বক্তা বলেন, ‘আগামী বছর আরও বড় পরিসরে এ আয়োজন করতে সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে।’
অন্যদিকে, কুমিল্লা রেল স্টেশনে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে বৃহস্পতিবার সকালে ঈদের নতুন পোশাক বিতরণের মাধ্যমে সারা দেশে পাঁচ দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ৭০টি শিশুকে ঈদের নতুন পোশাক দেয়া হয়।
সংগঠনটির সদস্যরা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থী। তারা নিজেদের একদিনের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে শিশুদের মুখে হাঁসি ফুটাতে ঈদের নতুন জামা উপহার দিচ্ছেন।
আগামী পাঁচ দিন ধারাবাহিক এ কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রায় এক হাজার সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে ঈদের নতুন জামা উপহার দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।
এ বিষয়ে লাল-সবুজ উন্নয়ন সংঘের প্রতিষ্ঠাতা ও কেন্দ্রীয় সভাপতি কাওসার আলম সোহেল বলেন, ‘১৩ বছর ধরে টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাঠদান, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, ঈদের নতুন পোশাক বিতরণ ছাড়াও মাদক ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আমরা কাজ করছি।’
বাজার খরচ পাঁচ টাকা। আর ওই সামান্য টাকায় মিলেছে ৯ ধরনের খাদ্য উপকরণ। আর এই বাজারের ক্রেতারা সবাই সমাজের পিছিয়ে পড়া দুস্থ, অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষ।
শনিবার দুপুরে খুলনা মহানগরীর আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন পাকা রাস্তায় বসেছিল এই বাজার। ‘উই আর বাংলাদেশ’ (ওয়াব) নামের একটি সংগঠন পবিত্র রমজানের মাহাত্ম্য ছড়িয়ে দিতে এই আয়োজন করেছে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা পুলিশের কনস্টেবল এস এম আকবর। সংগঠনটি পরিচালনাকারী অন্যরাও পুলিশের সদস্য। চাকরির পাশাপাশি জনকল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে তারা মানুষের পাশে দাঁড়ান। তাদের সঙ্গে সমাজের অন্যান্য শ্রেণী-পেশার মানুষও যুক্ত হয়ে হতদরিদ্রদের সহায়তায় হাত বাড়ান। এরই ধারাবাহিকতায় রমজানে হাজারও পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতে তারা উদ্যোগ নিয়েছেন।
মাত্র পাঁচ টাকার বিনিময়ে ক্রেতারা পেয়েছেন ৩ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি করে চিড়া, ছোলা, চিনি, মুড়ি, পেঁয়াজ এবং আধ কেজি করে খেজুর ও তেল। কার্যক্রম শুরুর দিনে প্রায় ৩০০ পরিবারের মাঝে এসব উপকরণ নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
কেএমপি কমিশনার এ সময়ে বলেন, ‘ওয়াব নামের সংগঠনটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা পুলিশের চাকরি করার পাশাপাশি মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। এটা মানবিক পুলিশিং কর্মকাণ্ডের একটি অংশ। এই সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি ইতোপূর্বেও বিভিন্নভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।
‘সংকটাপন্ন রোগীকে বিনামূল্যে রক্তদান, গৃহহীনদের গৃহনির্মাণ, ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শিক্ষা উপকরণ কিনে দেয়াসহ শিক্ষার খরচ বহন, দুস্থ রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ প্রদান, হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষদের পুনর্বাসনের জন্য সেলাই মেশিন প্রদান এবং প্রাকৃতিক প্রতিটি দুর্যোগে তারা মানুষের পাশে থাকেন।’
ওয়াব-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের সেবামূলক কার্যক্রমের প্রশংসা করে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘একটি মানুষ তার কর্ম দিয়েই কিন্তু প্রমাণিত হয়; সে কী চাকরি করে তা দিয়ে প্রমাণিত হয় না। মানুষকে ভালোবাসার মাধ্যমেই পরমাত্মা তথা স্রষ্টাকে পাওয়া যায়। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোও একটি ইবাদত।’
সামাজিক সংগঠন ওয়াবের অ্যাডমিন সরদার মসনুর আলী বলেন, ‘রমজানে দেশের বিভিন্ন স্থানে আমাদের এই কার্যক্রম শুরু হবে। খুলনা থেকে এর উদ্বোধন হলো। ভোগ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে যারা ঠিকমতো বাজার করতে পারছেন না তারা পাঁচ টাকার বিনিময়ে এসব উপকরণ পাবেন। এছাড়া যাদের পণ্য কেনার সামর্থ্য নেই তাদেরকে সহায়তা পৌঁছে দেয়ার জন্য আমাদের একটি স্বেচ্ছাসেবী দল রয়েছে। রাতের আঁধারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা পণ্য পৌঁছে দিয়ে আসেন, যাতে গ্রঈতা সামাজিকভাবে নিজেকে হেয় মনে না করেন।’
গড়াই নদীর ভাঙন থেকে নিজেদের ঘরবাড়ি, ফসলি খেতসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রক্ষায় নিজ উদ্যোগে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছেন মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার দোরাননগর গ্রামের বাসিন্দারা।
নদীভাঙনের আশঙ্কা মাথা নিয়ে প্রতিরাতে ঘুমাতে যেতে হয় ওই গ্রামের বাসিন্দাদের। গত কয়েক বছরে ভাঙনে এ গ্রামের গড়াই তীরবর্তী বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ফসলি খেত বিলীন হয়ে গেছে।
ভাঙন রোধে শুক্রবার প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছেন দোরাননগর গ্রামের শতাধিক গ্রামবাসী।
এলাকাবসী জানান, গত বর্ষা মৌসুমে তিন কিলোমিটার জায়গা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গত পাঁচ বছর পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অনেকবার এ বিষয়ে আবেদন করেও কোনো ফল পাননি তারা। যে কারণে উপায়ান্তর না পেয়ে নিজেরাই এ উদ্যোগ নিয়েছেন।
দোরাননগর গ্রামের বাসিন্দা প্রকৌশলী রথীন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, ‘প্রতি বছর গড়াই নদীর ভাঙনে আমাদের দোরাননগর গ্রামের রাস্তা, বসতবাড়ি বিলীন হয়ে যায়। ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে সমাজের বিত্তবান মানুষের আর্থিক সহায়তায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছি আমরা।’
তিনি বলেন, ‘গত বছর গ্রামবাসীর উদ্যোগে ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বাঁশ, কাঠ দিয়ে ৮টি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। সেটির রুপান্তর ঘটিয়ে এবার নতুন করে ইট, বালু, রড দিয়ে তৈরি কংক্রিটের পিলার দিয়ে সেটিকে মজবুত করা হচ্ছে।’
এই বেড়িবাঁধ নির্মাণের ফলে আগামী বর্ষা মৌসুমে গোটা গ্রাম নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে বলে জানান তিনি।
ওই এলাকার বাসিন্দা ডা. পঙ্কজ কান্তি মণ্ডল বলেন, ‘প্রতি বছর আমরা ভাঙনের মুখে পড়ছি। এতে বাড়িঘর রাস্তাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। যে কারণে এবার ইট বালু, সিমেন্ট, লোহার রড দিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এলাকাবাসীর নিজস্ব অর্থায়নেই এটি করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মমতাজ মহল বলেন, ‘আমি বিষয়টি মাত্র জানলাম। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
মন্তব্য