মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশ পেয়েও যোগদান না করা শূন্য পদগুলোয় আবারও সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এটি তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির দ্বিতীয় ধাপের সুপারিশ নামে পরিচিত হবে।
জানা যায়, দ্বিতীয় ধাপের সুপারিশ দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে মিলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন। এখন প্রশাসনিক কিছু কাজ শেষে চলতি মাসেই দ্বিতীয় ধাপে সুপারিশের ঘোষণা দেয়া হবে।
রোববার বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সচিব মো. ওবায়দুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির শূন্য পদগুলো পূরণে আমরা দ্বিতীয় ধাপের সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনও পেয়েছি।’
কবে নাগাদ সুপারিশ করা হবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘চলতি মাসের ১৬ তারিখে এনটিআরসিএর বোর্ড মিটিং রয়েছে। মিটিংয়ে ফল প্রকাশের সম্ভাব্য দিন এবং সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে। আশা করছি, চলতি মাসেই তৃতীয় গণনিয়োগ বিজ্ঞপ্তির দ্বিতীয় ধাপের সুপারিশ করা সম্ভব হবে।’
এর আগে গত ২০ জানুয়ারি তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করা ৩৪ হাজার ৭৩ শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করে এনটিআরসিএ। এরপর আরেক দফায় গত ১ মার্চ আরও ১১৬ শিক্ষককে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়।
গত বছরের ৩০ মার্চ তৃতীয় ধাপে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ৫৪ হাজার ৩০৪ জন শিক্ষক নিয়োগে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ।
গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ৫৪ হাজার ৩০৪টি শূন্যপদের মধ্যে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে ৩১ হাজার ১০১টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে এমপিওভুক্ত পদ ২৬ হাজার ৮৩৮টি। মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে শূন্য পদ ২০ হাজার ৯৯৬টি।
এর মধ্যে ১৯ হাজার ১৫৪টি এমপিওভুক্ত। আর ২ হাজার ২০৭টি এমপিও পদ রিট মামলায় অংশ নেয়াদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়।
৫১ হাজার ৭৬১টি পদে সুপারিশ করার কথা থাকলেও গত বছরের ১৫ জুলাই সুপারিশ করা হয়েছে ৩৮ হাজার ২৮৬ জন প্রার্থীকে। তাদের মধ্যে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ৩৪ হাজার ৬১০ জন এবং নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ৩ হাজার ৬৭৬ জনকে সুপারিশ করা হয়।
৮ হাজার ৪৪৮টি পদে কোনো আবেদন না পাওয়ায় এবং ৬ হাজার ৭৭৭টি নারী কোটায় প্রার্থী না পাওয়ায় ১৫ হাজার ৩২৫টি পদে ফল দেয়নি এনটিআরসিএ।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির ২০২৪ সালের কার্যকরি পরিষদের নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। ফলে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় বিনা নির্বাচনেই জয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল।
শুক্রবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ইকবাল রউফ মামুন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না পেয়ে নীল দলের পুরো প্যানেলকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে ইকবাল রউফ মামুন বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের সময় ছিল। আমাদের কাছে ১৫টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল। সবই নীল দলের প্রার্থীদের। আর কোনো প্যানেল বা স্বতন্ত্র হিসেবে কেউই মনোনয়নপত্র জমা দেননি। যেহেতু নীল দলের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না, আমরা তাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেছি।’
জয়ী হওয়ার ফলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে পুনরায় দায়িত্ব পালন করবেন পুষ্টি ও খাদ্য-বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া ও অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা। এ ছাড়া সহ-সভাপতির দায়িত্বে থাকবেন অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস ছামাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মাসুদুর রহমান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. মো. মিজানুর রহমান।
সদস্য হিসেবে থাকবেন অধ্যাপক ড. জিয়াউর রহমান, অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির, অধ্যাপক ড. শফিউল আলম ভূইয়া, অধ্যাপক ড. নেসার হোসাইন, অধ্যাপক ড. সীমা জামান, অধ্যাপক ড. জিল্লুর রহমান, অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল, অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ এবং অধ্যাপক ড. সিকদার মনোয়ার মোর্শেদ। এই নেতারা আগামী এক বছর শিক্ষক সমিতির দায়িত্ব পালন করবেন।
বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। দলটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, ‘সাদা দল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী একটি পেশাজীবী সংগঠন। নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনে বিশ্বাসী বলে দলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ফোরামের নির্বাচনে সবসময় অংশ নিয়ে আসছে। কিন্তু এবার বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরিবেশ অনুকূল বলে আমরা মনে করি না।’
লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমরা মনে করি, দেশে বিরাজমান পরিস্থিতিতে আসন্ন শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার চেয়ে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং ভোটাধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে পরিচালিত আন্দোলনের গুরুত্ব অনেক বেশি। আমরা চাই না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন শিক্ষক সমিতি নির্বাচিত হোক যেটি ভোটাধিকার হরণকারী অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিস্ট সরকারের হাতকে শক্তিশালী করবে।’
আরও পড়ুন:কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ টি বিভাগের মধ্যে অন্যতম একটি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ। এ বিভাগের ৮ জন শিক্ষকের মধ্যে ৪ জন শিক্ষক শিক্ষা ছুটি এবং একজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন। বাকি ৩ জন শিক্ষক নিয়ে চলছে বিভাগটির কার্যক্রম।
একই অবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাকি ১৭ বিভাগেও। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ বাদে সব বিভাগেই দুই কিংবা দুইয়ের অধিক শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন। ফলে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মত অন্য অনেক বিভাগই শিক্ষক সংকট নিয়েই চালিয়ে যাচ্ছে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ঘেটে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষকের সংখ্যা ২৬৬ জন। এর মধ্যে শিক্ষা ছুটিতে আছেন ৯৩ জন শিক্ষক। এর মধ্যে গণিত বিভাগে ১৭ জন শিক্ষকের মধ্যে শিক্ষা ছুটিতে ৬ জন, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ১৬ জন শিক্ষকের মধ্যে ৮ জন, পরিসংখ্যান বিভাগের ১৪ জন শিক্ষকের মধ্যে ৫ জন, রসায়ন বিভাগে ১৫ জন শিক্ষকের মধ্যে ৯ জন, ফার্মাসি বিভাগের ১৩ জন শিক্ষকের মধ্যে ৬ জন, ইংরেজি বিভাগে ১৭ জন শিক্ষকের মধ্যে ৭ জন, বাংলা বিভাগের ১৪ জন শিক্ষকের মধ্যে ২ জন, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ১৫ জন শিক্ষকের মধ্যে ২ জন শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন।
এছাড়া একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ১৬ জন শিক্ষকের মধ্যে ৪ জন, মার্কেটিং বিভাগের ১৫ জন শিক্ষকের মধ্যে ৫ জন, ফিনান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ৯ জন শিক্ষকের মধ্যে ৩ জন, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৩ জন শিক্ষকের মধ্যে ৯ জন, আইসিটি বিভাগের ১৩ জন শিক্ষকের মধ্যে ৫ জন, লোকপ্রশাসন বিভাগের ১৮জন শিক্ষকের মধ্যে ৫ জন, অর্থনীতি বিভাগের ১৭ জন শিক্ষকের মধ্যে ৪ জন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের ১৭ জন শিক্ষকের মধ্যে ৬ জন, প্রত্নতত্ব বিভাগের ১১ জন শিক্ষকের মধ্যে ৩ জন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ৮ শিক্ষকের মধ্যে একজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে এবং বাকি চারজন শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন।
শিক্ষা ছুটিতে থাকা শিক্ষকের বিপরীতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আন্তর্জাতিক মানদন্ডে পিছিয়ে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্বব্যাপী উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাতের ন্যূনতম মানদণ্ড ধরা হয় ১:২০। কিন্তু ইউজিসির ৪৮ তম বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৬,৩৮৪ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ২৬৬ জন শিক্ষক রয়েছে। যা অনুপাত হিসাবে ১:২৪।
এছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় টিচিং লোড ক্যালকুলেশন নীতিমালা (সাধারণ) ২০২২ মতে, একজন শিক্ষকের সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা ৪০ হবে। এই কর্মঘণ্টা কন্টাক্ট আওয়ার এবং নন-কন্টাক্ট আওয়ার সমন্বয়ে পরিপূর্ণ হবে। ৪০ ঘন্টার মধ্যে একজন শিক্ষক গড়ে ১৩ ঘন্টা ব্যয় করবেন কন্টাক্ট আওয়ার হিসাবে। কিন্তু বিভাগ/ইনস্টিটিউটের প্রধানের সাপ্তাহিক কন্টাক্ট আওয়ার ৬ ঘন্টা হবে।
কিন্তু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট থাকার ফলে কর্মে নিয়োজিত থাকা শিক্ষকদের টিচিং লোড পড়ছে অতিরিক্ত। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অনেক শিক্ষক একাধিক কোর্সের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় অল্প ক্লাস নিয়েই শেষ করছেন কোর্সগুলো। ফলে কোর্স শেষ হয়ে গেলেও অজানাই থেকে যাচ্ছে অনেক বিষয়।
এ বিষয়ে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ছুটির বিষয়ে নির্ধারিত বিধি থাকলেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। ফলে শিক্ষক সংকটে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এছাড়া কর্মস্থলে থাকা অন্যান্য শিক্ষকদের উপর চাপ বেশি পড়ছে। এটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনার সমস্যা। শিক্ষা ছুটির জন্য আলাদা নিয়ম করার মাধ্যমে এবং ইউজিসি থেকে নতুন পদ সৃষ্টির মাধ্যমে দ্রুত এই সমস্যা সমাধান করা উচিত।’
রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. রায়হান উদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের কাছে বিভাগের জন্য শিক্ষক নিয়োগ চেয়েছি। কিন্তু ইউজিসি পদ না দেয়ায় প্রশাসনও কোন নিয়োগ দিতে পারছে না। ইউজিসি থেকে পদ পেলে শিক্ষক সংকট অনেকটাই কেটে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উচ্চ শিক্ষার জন্য অনেক শিক্ষক ভালো স্কলারশিপ পেয়ে থাকেন। বিভাগ থেকেও সুপারিশ যায়। তখন শিক্ষক সংকটের কথা বলে সুপারিশ না দিলে শিক্ষকের মধ্যেও এক ধরনের ক্ষোভ কাজ করে। কাজ করতে চায় না। প্রশাসন কিংবা আমাদের কারোই উপায় নেই। এখন নতুন পদ দরকার সংকট কাটিয়ে উঠার জন্য।’
প্রকৌশল অনুষদের ডিন ও কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান মাহমুদুল হাসান রাজু বলেন, ‘আমাদের বিভাগে শিক্ষক সংকট রয়েছে। এই শিক্ষক সংকট কাটাতে আমাদের বিভাগে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ প্রয়োজন। কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি করছি আমাদের বিভাগে যেন অতিসত্বর শিক্ষকদের পদ দেয়া হয়। নতুন নিয়োগের মাধ্যমে বিভাগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর যে অনুপাত সেটাও রক্ষা পাবে।’
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান কাজী এম. আনিছুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ইউজিসির কাছে পদ চেয়েছে। ইউজিসি পদ দিলে আশা করি বিভাগ শিক্ষক সংকট কাটিয়ে উঠবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক বছর ধরে শিক্ষক সংকট রয়েছে। এর মধ্যে এই বছর আরও কয়েকজন শিক্ষক উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য বিদেশে গিয়েছেন। যে সমস্ত শিক্ষক উচ্চশিক্ষার পরেও ফিরে আসছিলেন না, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফিরে আসতে বলি। যারা আসেনি তাদের অনেকের দেনাপাওনা নিষ্পত্তি করে তাদের ধরে রাখা পদগুলো শূন্য করা হয়েছে আর বাকিদের দেনা-পাওনা নিষ্পত্তিসহ পদ শূন্য করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর বিদেশে যাওয়া শিক্ষকদের শূন্যতা পূরণের জন্য আমি পদ চেয়ে ইউজিসিতে বিশেষভাবে অনুরোধ করি এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। সেই প্রেক্ষিতে ইউজিসি চলতি মাসে আমাদের সেই ৭ টি পদ দিয়েছে। এজন্য ইউজিসিকে আমি ধন্যবাদ জানাই। আরও কিছু পদ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আশা করি দ্রুত আমরা আরও পদ পাবো। আমি আশা করি দীর্ঘ বছর ধরে আমাদের পদের যে সঙ্কট তা অনেকখানি লাঘব হবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। এছাড়াও তিনি বলেন, ‘পদ দিচ্ছে না এমন না। কিছুদিন আগেও পদ দেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন:কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ (সিইউবি) –এর উপ-উপাচার্য (প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর) হিসেবে যোগদান করেছেন অধ্যাপক ড. মো. গিয়াসউদ্দিন আহসান। রাষ্ট্রপতি ও সিইউবির চ্যান্সেলর আগামী চার বছরের জন্য তাকে এই পদে নিযুক্ত করেছেন।
রাজধানীর প্রগতি সরণিতে সিইউবির নিজস্ব ক্যাম্পাসে রোববার অনুষ্ঠিত এক টাউন হল মিটিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত তাকে পরিচয় করিয়ে দেন।
অধ্যাপক ড. মো. গিয়াসউদ্দিন আহসান সিইউবিতে যোগদানের আগে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিন ও প্রো-ভাইস চ্যান্সেলরসহ বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ পদে ১৮ বছরেরও বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়া ড. আহসান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতাসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে একজন একাডেমিক সদস্য এবং গবেষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে প্রথম পর্বের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ৮ ডিসেম্বর। ওইদিন রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের ১৮টি জেলায় এই পরীক্ষা হবে। এই পর্বে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ লাখ ৬০ হাজার ৬৯৭ জন।
মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সভায় জানানো হয়, ৮ ডিসেম্বর প্রথম পর্বের রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের ১৮টি জেলার ৫৩৫টি কেন্দ্রে সকাল ১০টা থেকে এক ঘণ্টাব্যাপী এই লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলমান রয়েছে। বাংলাদেশের আইন অনুসারে নির্বাচন কমিশন অচিরেই নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক করার সব ধরনের উদ্যোগ নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে।
গত ৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহকে সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানালে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি সহ ২৬টি রাজনৈতিক দল সংলাপে অংশগ্রহণ করে। বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের সমমনা কয়েকটি রাজনৈতিক দল সংলাপে অংশগ্রহণ না করে গণতন্ত্র ও নির্বাচনি বিধিব্যবস্থার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের ২৯ তারিখের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার প্রাক্কালে একটি দেশের রাষ্ট্রদূত সকল ধরনের শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে সে দেশের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের ৩টি রাজনৈতিক দলকে নিঃশর্ত সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে চিঠি বিতরণ করেছে বলে জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে সরকারকে পদত্যাগের একদফা শর্ত জুড়ে দিয়ে বিএনপি-জামায়াত শর্তহীন সংলাপের দাবিকে নাকচ করেছে। রাষ্ট্রদূতের পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্তকারীদের ওপর ‘ভিসানীতি’ প্রয়োগের পুরনো হুমকি ব্যক্ত করা হয়েছে। স্মরণযোগ্য, যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন সরকার ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের পক্ষাবলম্বন করে অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে গণহত্যায় সহযোগিতা করেছিল। একই ধারাবাহিকতায় তাদের নীতি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তিকে রসদ যুগিয়ে চলেছে। বিএনপি-জামায়াতের সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে জনসমর্থন না পেলেও উক্ত দেশের রাষ্ট্রদূতের পক্ষপাতমূলক আচরণে উৎসাহিত হয়ে তারা আন্দোলনের নামে সহিংসতা চালিয়ে যাওয়ার প্রয়াস পাচ্ছে। হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির নামে যানবাহনে অগ্নি-সংযোগ, শিল্প-কলকারখানা ভাংচুর, পুলিশ ও সাধারণ পথচারী-হত্যা, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাংচুর ও ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলেও তথাকথিত মানবধিকার ও গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা রাষ্ট্রটি এ বিষয়ে কোনো কথা বলেনি। নির্বাচনি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থকারীদের ওপর ভিসানীতিও প্রয়োগ করেনি। এ রাষ্ট্রটি কথায় কথায় মানবাধিকারের কথা বললেও বিশ্বজনমতকে উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনিদের বিপক্ষে নারী-শিশুসহ গণহত্যায় নগ্নভাবে ইজরাইলিদের পক্ষাবলম্বন করেছে। তারা গণতন্ত্রের নামে আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে। এবার তারা অর্থনৈতিকভাবে ক্রমাগ্রসরমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে, যেটি তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, তার উন্নয়নের ধারাকে পশ্চাদ্গামী করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী শক্তির অপতৎপরতায় রসদ যোগাচ্ছে। এছাড়া গত ৩১ অক্টোবর ২০২৩ তারিখ অসত্য তথ্যের ওপর ভিত্তি করে জাতিসঙ্ঘ মানবধিকার হাইকমিশন কর্তৃক প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রতিবাদ’ শিরোনামের প্রেসব্রিফিংয়ের প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এ বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
এ ধরনের পদক্ষেপ মানুষ-হত্যা, ভাংচুর, সহিংসতার মাধ্যমে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে যারা তৎপর রয়েছে তাদেরকে উৎসাহিত করবে বলে আমরা মনে করি। সহিংসতা সৃষ্টিকারী রাজনৈতিক দল ও উগ্র ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সঙ্গে সংলাপের কথা বলে সময়ক্ষেপণ করে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টির অপতৎপরতায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রতি সম্মান জানিয়ে অবাধ-সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন ও সরকারের প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিতে সবাইকে আহ্বান জানাই।
আট শতাধিক বিবৃতি প্রদানকারী শিক্ষকদের পক্ষ থেকে
অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার
ডিন, ফার্মেসী অনুষদ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) প্রধানমন্ত্রীর নবনির্মিত ৬টি হল ও একটি গবেষণা কেন্দ্রের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দুই শিক্ষককে তাদের আসন থেকে উঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বসানোর ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে এ ঘটনা ঘটে।
সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ১৫৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১০ হাজার ৪১টি স্থাপনার উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠানে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, হল প্রাধ্যক্ষগণ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
অনুষ্ঠান শুরুর ২৪ মিনিট পর অন্তত ২০ জন নেতা-কর্মীসহ অডিটোরিয়ামে উপস্থিত হন জাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন। ততক্ষণে অডিটোরিয়াম ভবন অতিথিতে পরিপূর্ণ। এসে সামনের দিকের আসনে জায়গা না পেয়ে ক্ষেপে যান তিনি। এ সময় তাদের শান্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান এগিয়ে আসেন। পরে প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে প্রক্টর তাদের নিয়ে অডিটোরিয়ামের বাইরে চলে যান। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী স্লোগান দিতে শুরু করেন। পরে প্রক্টরের অনুরোধে স্লোগান বন্ধ করেন তারা।
অডিটোরিয়াম ভবনের সামনে গিয়ে প্রক্টরের সঙ্গে আরেক দফায় বাগবিতণ্ডায় জড়ান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও তার অনুসারীরা।
এ সময় সহ-সভাপতি পদমর্যাদার এক নেতা অনুষ্ঠান চলাকালে অডিটোরিয়াম ভবনে তালা দেয়ার হুমকি দেন। ওই নেতা বলেন, ‘আমাদের জন্য জায়গা রাখা হয়নি। আমরা তাহলে অডিটোরিয়ামে তালা দিয়ে চলে যাই।’
এর কিছুক্ষণ পর অডিটোরিয়ামে উপস্থিত হন জাবি ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে অডিটোরিয়ামের তৃতীয় সারিতে বসা প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও দর্শন বিভাগের দুই প্রভাষককে তাদের জায়গা ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করেন প্রক্টর ফিরোজ-উল-হাসান৷ পরে শিক্ষকদের যথাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম সারির আসনে বসানো হয়। শিক্ষকদের তৃতীয় সারির আসনে বসেন জাবি ছাত্রলীগ সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন। পরে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগেই ওই দুই শিক্ষক অডিটোরিয়াম ত্যাগ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রোগ্রামে ছাত্রলীগের এমন আচরণকে ‘অশোভন’ ও শিক্ষকদের জন্য ‘লজ্জাকর’ বলে মন্তব্য করেন উপস্থিত শিক্ষকরা।
জীববিজ্ঞান অনুষদের এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, ‘এমন জাঁকজমকপূর্ণ প্রোগ্রামে ছাত্রলীগের এমন আচরণ খুবই অশোভন। ভরা মজলিসে দুইজন সম্মানিত শিক্ষককে তুলে দিয়ে সেই জায়গায় ছাত্রলীগ নেতাদের বসানো শিক্ষকদের জন্য অসম্মানজনক ও লজ্জার। আমি এই ঘটনার নিন্দা জানাই।’
আরেক অধ্যাপক বলেন, ‘ষষ্ঠ ও সপ্তম সারিতে জায়গা যখন ফাঁকাই ছিল, তখন ছাত্রলীগ নেতাদের সেই আসনে বসানো যেত। শিক্ষকদের তুলে দেয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না। তাদেরকে তুলে দিয়ে শিক্ষক সমাজের মর্যাদাকে নিচু করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘আমরা ছাত্রলীগকে আগে আসতে বলেছিলাম। আগে আসলে এই ঘটনা ঘটত না। ছাত্রলীগের সকল নেতা-কর্মীর দাবি ছিল, স্ক্রিনে যাতে সভাপতি-সেক্রেটারিকে দেখা যায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় সারিতে বসতে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আমার ওখানে অনুরোধ করার মতো জুনিয়র ওই দুজনই (শিক্ষক) ছিলেন। আর অন্য কাউকে অনুরোধ করার কোনো সুযোগ ছিল না। ম্যাক্সিমাম সিনিয়র এবং অন্য অপরিচিত যারা, স্কুল-কলেজের শিক্ষক-অফিসাররা সেখানে ছিলেন। এই দুজন আমার অত্যন্ত কাছের এবং আপনজন দেখেই আমি তাদের অনুরোধ করতে পেরেছি। তারা হয়তো মনে কষ্ট পেয়েছেন। তবে কষ্ট পেলেও তারা অনুরোধ রেখেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের তো সব মিলিয়ে সমন্বয় করতে হয়। ওরা আগে আসলে এই সমস্যাটা হতো না, সামনের দিকে বসতে পারত। আমি প্রত্যাশা করব যে, এর পরে কোনো প্রোগ্রামে তারা যেন নির্দিষ্ট সময়ে আসে এবং তারা যেখানে বসতে চায়, সেখানে বসতে পারে। পুরো প্রোগ্রামটা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার স্বার্থেই আমি খুব কাছের দুজন মানুষকে অনুরোধ করেছি।’
জাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এম শামীম কায়সার বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা অডিটরিয়ামের দ্বিতীয় তলায় বসবেন এটি পূর্বনির্ধারিতই ছিল। শিক্ষার্থীদের তো সেখানে বসার কথা ছিল না। কিন্তু তবুও কোনো শিক্ষকের সঙ্গে যদি এরকম ঘটনা ঘটে থাকে এবং তিনি যদি আমাকে (শিক্ষক সমিতির সম্পাদক হিসেবে) অনানুষ্ঠানিকভাবেও জানান, তাহলে আমরা শিক্ষক সমিতি এর প্রতিবাদ করব। আর এ বিষয়টি নিয়ে আমি প্রক্টরের সঙ্গে কথা বলব।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘আমরা অডিটোরিয়ামের বাইরে ছিলাম। প্রক্টর স্যার আমাদের ভেতরে যেতে বললে আমরা গিয়ে আসন ফাঁকা পাই। এখানে কারা বসেছিল, আমরা কিছুই জানি না, প্রক্টর স্যার জানেন।’
তবে জাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদককে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
আরও পড়ুন:সিলেটের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের বহিস্কৃত দুই শিক্ষককে পুনর্বহালের আদেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সেই সঙ্গে ট্রাস্টি বোর্ড থেকে ভারতীয় নাগরিকসহ দুজনকে ২ মাসের মধ্যে বাদ দিয়ে নতুন করে বোর্ড গঠনেরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
রোববার ইউজিসির পরিচালক মো. ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত চিঠিতে এসব নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে লিডিং ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন অনিয়ম ও বিশ্ববদ্যিালয়টির উপাচার্য এবং ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের পরস্পরের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ তদন্তে গঠিত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, লিডিং ইউনিভার্সিটির আর্কিটেকচার বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা জারিনা হোসেইন এবং সহযোগী অধ্যাপক স্থপতি রাজন দাসের বহিষ্কারাদেশ বাতিল ঘোষণাপূর্বক সকল সুযোগ সুবিধাসহ বহিস্কারাদেশ সাক্ষরের তারিখ হতে স্বপদে পূর্নবহাল করার নির্দেশ প্রদান করা হয়।
সেই সঙ্গে, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর কোন এখতিয়ারবলে তাদের চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে তার কারনদর্শানো সহ ব্যাখ্য তিন কার্য দিবসের মধ্যে কমিশনে প্রেরণ করারও আদেশও দিয়েছে কমিশন।
এই চিঠিতে ভারতীয় নাগরিক সাদিকা জান্নাত চৌধুরী ও নাবালক সাইদ আজমাইন আবদুল হাইকে বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ থেকে বাদ দিয়ে আগামী দুই মাসের মধ্যে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা ও আগামী তিন মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির অনিরীক্ষিত অর্থ বছরের নিরীক্ষা করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কাজী আজিজুল মওলাকে চুক্তি অনুযায়ী বেতনভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাদি প্রদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
ইউজিসির পরিচালক ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত চিঠিতে সকল বিভাগে আগামী ৩ মাসের মধ্যে যোগ্যতাসম্পন্ন প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ৩৩(৩) ধারা মোতাবেক খণ্ডকালীন শিক্ষক সংখ্যা নিশ্চিত করার জন্যও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কাজী আজিজুল মাওলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডকে অবৈধ দাবি করে এবং লিডিং ইউনিভার্সিটিতে ট্রেজারার বনমালী ভৌমিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে লিখিত অভিযোগ দেন।
উপাচার্য তার অভিযোগে ইউনিভার্সিটির ৬৮টি লেনদেনে অনিয়মের বিষয়ে জানতে রেজিস্ট্রার বরাবরে কমিশনের দেয়া চিঠিসহ ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সাদিকা জান্নাত চৌধুরী ভারতের নাগরিকের বিষয়টি উল্লেখ করেন।
অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিবোর্ডের চেয়ারম্যান রাগিব আলীও উপাচার্যের বিরুদ্ধে ইউজিসিতে অভিযোগ দেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করতে ড. কাজী আবু তাহেরের নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি ইউজিসির তদন্ত কমিটি গত ২৭ জুলাই ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন। ওই সময় তারা বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান রাগীব আলী, উপচার্য ড. কাজী আজিজুল মাওলা ও ট্রেজারার বনমালী ভৌমিকর সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠক করেন। তদন্ত শেষে রোবববার ইউজিসি থেকে এ চিঠি দেয়া হয়।
ইউজিসি চিঠি পাওয়ার কথা জানিয়ে উপাচার্য কাজী আজিজুল মাওলা বলেন, ‘আমি চিঠি পাওয়ার পরপরই চিঠির আলকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দিয়েছি। ওই শিক্ষককে আবার পুণর্বহাল করে চিঠি দিতেও বলেছি। তিনি না করলে আমি নিজেই এই চিঠি প্রদান করবো।’
প্রসঙ্গত, গত ১২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের প্রধান রাজন দাশ এবং শিক্ষক স্থপতি সৈয়দা জেরিনা হোসেনকে বরখাস্ত করা হয়। ওই সময় লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য কাজী আজিজুল মাওলা যুক্তরাষ্ট্র সফরে ছিলেন। উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে ট্রেজারার বনমালী ভৌমিক ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হয়ে নিয়মবর্হিভূতভাবে তাদের বহিস্কার করেন বলে অভিযোগ ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আন্দোলনেও নামেন শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য