চলে গেলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফি। সোমবার মধ্যরাতে রাজধানীর এক হাসপাসাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে নিজের জমানো অর্থ ব্যয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের ভবন নির্মাণ করে দিয়েছিলেন এই শিক্ষাবিদ। তিনি ওই বিভাগেরই প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন।
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগটি অধ্যাপক শফির হাত ধরেই ১৯৯৮ সালে যাত্রা শুরু করে। ২০০০ সালে নিজস্ব ভবন তৈরি করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। বিভাগের পাঁচতলা ভবনের ভিতসহ একতলার কাজ করতেই সেই বরাদ্দ অর্থ শেষ হয়ে যায়। এরপর অর্থাভাবে প্রায় ১৫ বছর আটকে ছিল এই ভবনের নির্মাণ কাজ।
অধ্যাপক শফি নিজের উপার্জন থেকে জমানো প্রায় ৭০ লাখ টাকা দিয়ে ২০১৪ সালে সেই কাজ আবার শুরু করেন। ২০০৫ সালে তিনি অবসরে যান।
অধ্যাপক মোহাম্মদ শফি তার দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে জড়াননি। শ্রেণীকক্ষে পড়ানো, বিভাগের উন্নয়ন আর গবেষণা নিয়েই শিক্ষকতা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। তার পাঁচটি গবেষণাগ্রন্থ, একটি আত্মজীবনী ও ৭০টির মতো প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
২০১০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন লাখ টাকায় গঠন করেন ‘আমেনা-লতিফ ট্রাস্ট ফান্ড’। সেখান থেকে প্রতিবছর মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের তিনজন মেধাবী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়া হয়। পরের বছর নিজের নামে গঠন করেন ‘ড. মোহাম্মদ শফি ট্রাস্ট ফান্ড’। এখান থেকেও দুজন কৃতী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়া হয়।
এই মহানুভব অধ্যাপকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো আখতারুজ্জামান।
শোকবার্তায় উপাচার্য বলেন, ‘অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফি ছিলেন একজন প্রখ্যাত মৎস্যবিজ্ঞানী এবং নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক ও গবেষক। অত্যন্ত বিনয়ী, সজ্জন ও নিষ্ঠাবান এই অধ্যাপক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তিনি বিভাগের অবকাঠামোসহ সার্বিক উন্নয়নে বিপুল অংকের আর্থিক অনুদান প্রদান করে এক মহতী দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।
‘বাংলাদেশে মৎস্য বিজ্ঞান গবেষণার পথিকৃৎ এই অধ্যাপক মৎস্যবিজ্ঞান সংক্রান্ত অনেক মূল্যবান পুস্তক রচনা করেছেন। মৎস্যবিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণায় অসাধারণ অবদানের জন্য গুণী এই অধ্যাপক স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’
উপাচার্য মরহুমের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার পরিবারের শোক-সন্তপ্ত সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের বিরুদ্ধে উত্ত্যক্ত ও যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন দুই ছাত্রী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানীর কাছে লিখিতভাবে এ অভিযোগ করেছেন তারা।
অভিযুক্ত ছাত্রের নাম রাকিবুল হাসান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। থাকেন বিজয় একাত্তর হলে।
দুই ছাত্রীর অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় একজনকে উত্ত্যক্ত করেন রাকিব। পরের দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তন চত্বরে অন্যজনকে যৌন হয়রানি করেন তিনি।
টিএসসির ঘটনায় ভুক্তভোগী দাবি করা ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। থাকেন বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে।
শিখা চিরন্তন চত্বরের ঘটনায় ভুক্তভোগী দাবি করা ছাত্র্রী কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি থাকেন মিরপুরে।
টিএসসির ঘটনায় রাকিবই একমাত্র অভিযুক্ত। দ্বিতীয় ঘটনায় ইবির ছাত্রী রাকিবের সঙ্গে আরও দুই ছাত্রের জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন।
ইবি ছাত্রী রাকিবসহ আরও এক ছাত্রের শুধু নাম জানাতে পেরেছেন। অন্যজনের কোনো পরিচয় জানাতে পারেননি।
ইবির ছাত্রী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিখা চিরন্তনের ঘটনায় রাকিব ছাড়া অভিযুক্ত অন্য শিক্ষার্থীর নাম রাফাত, তবে তার বিভাগ-সেশন আমি শনাক্ত করতে পারিনি।’
কীভাবে অভিযুক্তদের পরিচয় শনাক্ত করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেদিনের পর থেকে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার বন্ধুদের ঘটনাটা জানাই। অভিযুক্তদের চেহারার ধরন এবং দেখতে কী রকম ছিল, সেটা জানাই। পরে তারা বেশ কয়েকজনের ছবি দেখালে সেখান থেকে আমি রাকিবুল ইসলামকে শনাক্ত করেছি।
‘আর সেদিনের ঘটনায় সেই তিনজনের কথাবার্তা থেকে রাফাত নামের একজনের নাম শুনতে পাই, তবে তার বিষয়ে আমি নিশ্চিত হতে পারিনি।’
টিএসসির ঘটনায় ঢাবির ছাত্রী তার লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, ‘গত রোববার টিএসসি প্রাঙ্গণে অবস্থানকালে একটা ছেলে অনেকক্ষণ ধরে আমাকে উদ্দেশ্য করে বাজে মন্তব্য করতে থাকে। একটা পর্যায়ে সীমা অতিক্রম করে আমার আরও নিকটবর্তী হয়ে অত্যন্ত অশালীন ও অভদ্র ইঙ্গিত দিতে থাকে।
‘এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি তার নিকট জবাবদিহিতা চাইলে উল্টো আমার ওপর আরও চড়াও হয়ে নানা হুমকি দিয়ে চলে যায়।’
ওই ছাত্রী আরও উল্লেখ করেন, ‘আমি ক্যাম্পাসের ছাত্রী পরিচয় দিয়ে তাকে আইনগত ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে অবহিত করলেও সে তার অবস্থান থেকে নিবৃত্ত হয়নি।’
শিখা চিরন্তনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ইবির ছাত্রী বলেন, ‘গত সোমবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমি, আমার বন্ধু এবং বন্ধুর মা ঘুরতে আসি। বন্ধুর মা চলে যাওয়ার পর আমরা শিখা চিরন্তনের পাশে বসে নিজেদের মধ্যে আলাপ করছিলাম। এ সময় একটা বাইকে রাকিবসহ তিনজন ছেলে এসে আমরা ক্যাম্পাসের কি না জিজ্ঞেস করে।
‘পরে না বললে তারা আমার সঙ্গে থাকা বন্ধুকে এক পাশে নিয়ে গিয়ে তাকে চড়-থাপ্পড় দেয়। আর দুইজন আমার সঙ্গে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে যৌন হয়রানি করে। আমি এটি সহ্য করতে না পেরে চেঁচামেচি শুরু করলে তারা ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়।’
অভিযোগের বিষয়ে কী বলছেন রাকিব
টিএসসির ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে রাকিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টিএসসির ঘটনাটা একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। সেদিন আমি আমার গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে হাঁটছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে আমি আমার বন্ধুর সঙ্গে কথা বলার জন্য দাঁড়ালে আমার গার্লফ্রেন্ড সামনে এগিয়ে যায়। আর সেম পজিশনে সেই আপুটা দাঁড়িয়ে ছিল।
‘বন্ধুর সঙ্গে কথা শেষ করে সেই আপুকে আমার গার্লফ্রেন্ড ভেবে উনাকে বলি, চলো, আসো। যখন দেখি আসছে না, তখন আমি আপুর কাছে যাই। কাছে গিয়ে দেখি সে আমার গার্লফ্রেন্ড না, অন্য একজন। এটা দেখে তখন আমি হাঁটা শুরু করি। এরপর সেই আপু তার বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে আমার কাছে কারণ জানতে চাইলে আমি সে সময় কারণও বলেছিলাম।’
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত রাকিব বলেন, ‘সোমবারের এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত না। আমার সঙ্গে প্রতিদিন আমার গার্লফ্রেন্ড থাকে। সেদিন সোমবারও আমি আমার গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে ছিলাম। আমি সেই আপুকে ফেস করতেও রাজি।’
অভিযুক্তের এই বক্তব্য ইবির ছাত্রীকে জানালে তিনি বলেন, ‘কোনোভাবেই সম্ভব না। তিনজনের একজন রাকিবই ছিল। আর সেই রাকিবই সবচেয়ে বেশি উগ্র আচরণ করেছে। সে-ই সেই দলের নেতা ছিল। তার ছবি মাথা থেকে কোনোভাবেই যাচ্ছে না।’
এ ঘটনায় আরেক অভিযুক্ত রাফাতের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
প্রক্টরের ভাষ্য
দুই অভিযোগের প্রথমটির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, ‘টিএসসির ঘটনায় অভিযুক্ত রাকিবের কোনো ফোন নম্বর মেয়েটির (রওনক) কাছে আছে কি না, সেটি তার কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে। আর রাকিবের বিস্তারিত তথ্য জানতে প্রক্টর অফিসকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
শিখা চিরন্তনের ঘটনা নিয়ে প্রক্টর বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী যৌন হয়রানি করলে সে (ভুক্তভোগী) আইনগত ব্যবস্থা নেবে। সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুক্তভোগীর ঘটনা তো আমরা সমাধান করতে পারব না।
‘ওরা তাদের মতো করে তাদের জায়গায় অভিযোগ দেবে আর আইনগত সহযোগিতা নেবে। ঘটনা সত্য হলে আমরা সহযোগিতা করব।’
আরও পড়ুন:বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে সুপারিশ করে থাকে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক মামলার জালে পড়েছে। এতে আটকে যাচ্ছে একের পর এক নিয়োগ প্রক্রিয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় পাঁচ শতাধিক মামলা করা হয়েছে এনটিআরসিএর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে দুই শতাধিক মামলা ইতোমধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে। এখনও চলমান রয়েছে তিন শতাধিক মামলা।
জানতে চাইলে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান এনামুল কাদের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটি ঠিক আমরা যে পরিকল্পনা নিয়ে কাজগুলো শুরু করি, শেষ পর্যন্ত নানা জটিলতায় তা আর শেষ করতে পারছি না। এর মধ্যে অন্যতম সমস্যা মামলা।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক চাকরিপ্রার্থী না বুঝেই মামলা করে পুরো প্রক্রিয়াটি আটকে দিচ্ছেন। এটা খুবই দুঃখজনক। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা বিশেষ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু সেটিও মামলা জটিলতায় দীর্ঘসূত্রতার কবলে পড়েছে। কিছুদিন আগে আমরা বিষয়টির সমাধান করেছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনটিআরসিএর এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, সর্বশেষ তৃতীয় গণনিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ফল প্রকাশ করেছে এনটিআরসিএ। এই তৃতীয় গণনিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধেও প্রায় ২৭টি মামলা করা হয়েছিল। পরে সব মামলা নিষ্পত্তি করে তৃতীয় গণনিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ফল প্রকাশ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি বিশেষ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ ঠেকাতেও মামলা করা হয়েছে। পরে কোর্টের মাধ্যমে তা নিষ্পত্তি করা হয়।
এখনও এনটিআরসিএ-র বিরুদ্ধে তিন শতাধিক মামলা চলমান আছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাঁচ শতাধিক মামলা করা হয়েছে এনটিআরসিএর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে দুই শতাধিক মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে। এখনও চলমান রয়েছে তিন শতাধিক মামলা।
জানা যায়, বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০০৫ সাল থেকে সনদ দিয়ে আসছিল এনটিআরসিএ, যদিও নিয়োগের ক্ষমতা ছিল গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটির হাতে। ২০১৫ সালে এই পদ্ধতির পরিবর্তন আনে সরকার। এর পর থেকে এনটিআরসিএ সনদ দেয়ার পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশও করে।
সারা দেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শূন্য পদের বিপরীতে এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে প্রার্থীদের প্রিলিমিনারি, লিখিত, মৌখিক ও জাতীয় সম্মিলিত মেধাতালিকায় স্থান পেতে হয়। এরপর নিয়োগের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি বা সার্কুলারের মাধ্যমে প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন নেয়া হয়। চূড়ান্ত ধাপে মেধাতালিকা অনুসরণ করে প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে একজন শিক্ষককে সেই পদে সুপারিশ করা হয়।
এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি তৃতীয় গণনিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সারা দেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩৪ হাজার ৭৩টি পদে বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করে এনটিআরসিএ।
যদিও গত বছরের ১৫ জুলাই ৩৮ হাজার ২৮৩ জন শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করেছিল এনটিআরসিএ।
গত বছরের ৩০ মার্চ তৃতীয় ধাপে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ৫৪ হাজার ৩০৪ জন শিক্ষক নিয়োগে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ।
গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ৫৪ হাজার ৩০৪টি শূন্য পদের মধ্যে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে ৩১ হাজার ১০১টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে এমপিওভুক্ত পদ ২৬ হাজার ৮৩৮টি। মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে শূন্য পদ ২০ হাজার ৯৯৬টি।
এর মধ্যে ১৯ হাজার ১৫৪টি এমপিওভুক্ত। আর ২ হাজার ২০৭টি এমপিও পদ রিট মামলায় অংশ নেয়াদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়।
৫১ হাজার ৭৬১টি পদে সুপারিশ করার কথা থাকলেও গত বছরের ১৫ জুলাই সুপারিশ করা হয়েছে ৩৮ হাজার ২৮৬ জন প্রার্থীকে। তাদের মধ্যে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ৩৪ হাজার ৬১০ জন এবং নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ৩ হাজার ৬৭৬ জন।
আর ৮ হাজার ৪৪৮টি পদে কোনো আবেদন না পাওয়ায় এবং ৬ হাজার ৭৭৭টি নারী কোটায় প্রার্থী না পাওয়ায় ১৫ হাজার ৩২৫টি পদে ফল দেয়নি এনটিআরসি।
আরও পড়ুন:জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষার অনলাইন রেজিষ্ট্রেশন শুরু হয়েছে। চলবে ১৬ জুন পর্যন্ত। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কমিটি এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিল কক্ষে বুধবার বিকেল ৪টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এ বছর ৪ ইউনিটে পরীক্ষা হবে। এ, বি, সি এবং ই ইউনিটের ভর্তি ফর্মের দাম ৯০০ এবং ডি ইউনিটের জন্য ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ভর্তি পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ চলতি বছরের ৩১ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট। শিক্ষার্থীরা অনলাইনে মোবাইল ব্যাংকিং, বিকাশ কিংবা রকেটের মাধ্যমে ফি পরিশোধ করতে পারবেন।
এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার অনলাইন রেজিষ্ট্রেশন কার্যক্রম পরিচালনা করছে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. রাশেদা আখতার, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, উপ-রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষক এবং কর্মকর্তারা।
ভর্তি-সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য https://junivi-admission.org/ -ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার পাঠক্রম উন্নয়নে সহযোগিতা করবে যুক্তরাষ্ট্র।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) ফুলব্রাইট স্কলারশিপ পুনরায় চালুর অংশ হিসেবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের প্রতিনিধিরা এ কথা জানান।
ইউজিসি থেকে জানা যায়, অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে শিল্প প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক জোরদার, নারীর ক্ষমতায়ন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন এবং স্কলারশিপ সুযোগ বৃদ্ধিসহ উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়।
অনুষ্ঠানে ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম বলেন, ‘ইউজিসি ব্লেন্ডেড লার্নিং নীতিমালা প্রণয়ন, অনলাইন অ্যাসেসমেন্ট গাইডলাইন, আউটকাম বেজড এডুকেশন টেমপ্লেট প্রণয়ন করেছে। উচ্চশিক্ষা ও গুণগত গবেষণা, দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি এবং শিক্ষার্থীদের সফট স্কিলস বৃদ্ধির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস সহযোগিতা করতে পারে।’
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কালচারাল অ্যাফেয়ার্স অ্যাটাশে শার্লিনা হোসাইন মরগ্যান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতা দিতে আগ্রহী। বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম হালনাগাদ করা, শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের বিকাশ, সফট স্কিলস, যোগাযোগ ও ইংরেজি ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধি এবং দক্ষ মানব সম্পদ তৈরিতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির পরামর্শ নিতে পারে।’
সভায় উপস্থিত ছিলেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর, অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ, ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান, ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট, কমিউনিকেশন ও ট্রেনিং বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান ভূঁইয়া, ইউএস ফুলব্রাইট স্পেশালিস্ট ড. শ্যারন হার্ট, দূতাবাসের কালচারাল অ্যাফেয়ার্স স্পেশালিস্ট রায়হানা সুলতানা, ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর শাওন কর্মকারসহ আরও অনেকে।
আরও পড়ুন:মহামারি করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরপর কিছুদিন ক্লাস হওয়ার পরই শুরু হয় ঈদের ছুটি। সেই ছুটি শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতেই সিলেটে বন্যার কারণে পাঠদান ফের ব্যাহত হচ্ছে।
সিলেটের অন্তত সাড়ে ৫০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া ২০০-এর মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোলা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। ফলে জেলার অন্তত সাড়ে ৭০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
গত ১০ মে থেকে সিলেটে ভারী বর্ষণ শুরু হয়, যা এখনও চলমান। একই সঙ্গে উজান থেকে নামছে ঢল। এতে গত ১১ মে থেকেই সিলেটের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যেতে শুরু করে। আর গত সোমবার থেকে পানিতে তলিয়ে যেতে শুরু করে সিলেট নগর। এখন বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
জেলার শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ছাড়া পানি নামার সময় আরও দু-একটি উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একই দশা হতে পারে।
বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে সিলেটের জৈন্তাপুর তৈয়ব আলী ডিগ্রি কলেজ। এই কলেজের শিক্ষক ফারুক আহমদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের শ্রেণিকক্ষগুলোতে পানি ঢুকে গেছে। পুরো এলাকাই পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে পাঠদান অব্যাহত রাখা সম্ভব না। তবে যেহেতু ডিগ্রি পরীক্ষা চলছে, তাই অন্য কেন্দ্রে আমাদের পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনার দীর্ঘ ছুটির পর বন্যার কারণে পাঠদান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা আবার ক্ষতির মুখে পড়বে। পানি না কমলে ক্লাসের কার্যক্রম শুরু করা যাবে না।’
সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১ হাজার ৪৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে বুধবার দুপুর পর্যন্ত ৪০০টি পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ফলে এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাখাওয়াত এরশেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেসব বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে, সেগুলোতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। পানি বাড়ার কারণে নতুন করে আরও প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বন্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। জেলার সব বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা আসেনি। যে বিদ্যালয়গুলোতে এখনও পানি ওঠেনি, সেগুলোকে প্রয়োজনে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।’
এদিকে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রায় দেড় শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় পানি উঠেছে। এগুলোতেও পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে কানাইঘাটে ৪২টির মধ্যে ৩৭টি, বিশ্বনাথে ৫১টির মধ্যে ৫টি, জৈন্তাপুরে ৩২টির মধ্যে ১২টি, সদরে ৯৫টির মধ্যে ১৮টি, গোয়াইনঘাটে ৪৮টির মধ্যে ১৮টি ও কোম্পানীগঞ্জে ২৬টির মধ্যে ১৫টি। এ ছাড়া দক্ষিণ সুরমা ও নগরে আরও ২০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পানি বাড়ার কারণে প্লাবিত বিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ছে। এগুলোতে আপাতত পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।’
এখনও পানি না ওঠা অনেক বিদ্যালয়েও বন্ধ রয়েছে পাঠদান। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ১৯৯টি ও নগরে ১৭টি বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলার অন্তত ২০টি কলেজ প্লাবিত হয়ে পড়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
এদিকে জেলার বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনও শিক্ষা কার্যক্রম চলছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পড়েছেন বিপাকে।
নগরের জামতলা এলাকার বাসিন্দা রজতকান্তি গুপ্ত। তার ছেলে এবার সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। স্কুলে এখন নির্বাচনি পরীক্ষা চলছে।
রজত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তিন দিন ধরে বাসার ভেতরে পানি। বিদ্যুৎও নেই। ঘরেই থাকা যাচ্ছে না। সে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবে কীভাবে, আর পানি ডিঙিয়ে পরীক্ষা দিতে যাবে কী করে?’ তাই পরীক্ষা আপাতত বন্ধ রাখার আহবান জানান তিনি।
তবে পরীক্ষা বন্ধ রাখার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বন্যার কারণে কোনো শিক্ষার্থী যদি পরীক্ষা দিতে না পারে, তবে আমাদের কাছে আবেদন করতে পারে। আমরা তা বিবেচনা করব।’
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) ইয়াসমিন নাহার রুমা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পাঠদান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ক্ষতি তো হবেই। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগে তো আমাদেরও কিছু করার নেই। পানি কমলে এই ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হবে।’
আরও পড়ুন:টেন্ডার জালিয়াতি ও উন্নয়নকাজ শেষ না করেই কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রধান প্রকৌশলী মো. হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে।
সাবেক কর্মস্থল যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) থাকাকালীন হেলালের এসব দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেনকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে গত ৯ মে প্রজ্ঞাপন জারি করে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোর।
প্রজ্ঞাপনে ১৬ মে সকাল ১০টার মধ্যে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেনের কাছে সব নির্মাণকাজের ডিপিপি, প্ল্যান, ডিজাইন, টেন্ডার কমিটি, দরপত্র বিজ্ঞপ্তি, সিএস, নোটিফিকেশন অফ অ্যাওয়ার্ড, কার্যাদেশ বিল, ভাউচারসহ এ-সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র সরবরাহ করার জন্য বলা হয়।
যবিপ্রবির বঙ্গবন্ধু অ্যাকাডেমিক ভবন, জগদীশ চন্দ্র অ্যাকাডেমিক ভবন, বীরপ্রতীক তারামন বিবি হল, ওয়ার্কশপ, ১৬০০ কেভিএ সাবস্টেশন নির্মাণ, হ্যাচারি নির্মাণ ও জিমনেসিয়ামের নির্মাণকাজের যাবতীয় কাগজপত্র জমা দিতে বলেছে দুদক।
এ ছাড়া হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারীর মূল পদবি ইউনিভার্সিটি ইঞ্জিনিয়ার (গ্রেড-৪) হলেও তাকে প্রধান প্রকৌশলী পদ ব্যবহার করে গ্রেড-৩-এ বেতন-ভাতাদি নেয়া সংক্রান্ত কাগজপত্র পাঠানোর নির্দেশও দেয়া হয়।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত প্রধান প্রকৌশলী মো. হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অভিযোগ এসেছে। আগে সত্য-মিথ্যা যাচাই করুক। তারপর আমি এ বিষয়ে বক্তব্য দেব।
‘আর আমাকে দুদক থেকে ডাকা হয়েছে। আমি গিয়ে দেখা করব।’
এ বিষয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আহসান হাবীব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুদক সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান। তারা তথ্য চাইলে আমরা দিতে বাধ্য।
‘এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব অফিসের তথ্য চাওয়া হয়েছে, সেসব জায়গা থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে রেজিস্ট্রার দপ্তরের কাগজে সংশ্লিষ্ট স্থানে প্রেরণ করা হবে।’
আইনগত সমস্যা দেখিয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির মুখপাত্র ও ডেপুটি ডিরেক্টর হায়াতুজ্জামান মুকুলের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার অনুরোধ করেন।
যোগাযোগ করা হলে হায়াতুজ্জামান মুকুল ছুটিতে আছেন জানিয়ে বলেন, ‘আমি অফিসে ছিলাম না। এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারব না।
‘চিঠি এসেছে রেজিস্ট্রার অফিসে। আপনি রেজিস্ট্রারের সঙ্গে কথা বলেন।’
যবিপ্রবির রেজিস্ট্রার তার সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলেছেন জানালে মুকুল বলেন, ‘আমার কাছে কোনো চিঠিও নেই, কাগজও নেই, কিছুই নেই। এটি একটি গোপন জিনিস। আমি শুধু জানি, দুদক থেকে তদন্তের জন্য একটি চিঠি এসেছে।’
তিনি দুদক যশোর অফিসের ডিজির সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনার পরামর্শ দেন।
এদিকে শারীরিক অসুস্থ থাকায় বেশ কিছুদিন ছুটিতে রয়েছেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের উপপরিচালক (ডিডি) আলামিন হোসেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে। তিনি আমাদের তথ্য দেবেন এবং তা জমা দেয়ার শেষ সময় ছিল ১৬ মে, তবে তিনি তা প্রেরণ করেছেন কি না, এই মুহূর্তে তা বলতে পারছি না।’
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তের দায়িত্ব পান দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘কাগজপত্র সব এখনও আসেনি, তবে চাহিদা মোতাবেক উনারা চেষ্টা করেছেন। আমি মোটামুটি পেয়েছি, যাচাই করে কাজ আগানো যাবে।
‘ভবিষ্যতে উনারা আমাদের চাহিদা অনুযায়ী বাকি কাগজপত্র জমা দেবেন। আর যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, উনাকে তার বক্তব্য বলার জন্য ডাকা হয়েছে।’
২০১৯ সালে প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তখন ওই পদের জন্য আবেদন করেন ১২ জন। তাদের মধ্যে চারজনকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়। ওই চারজনের মধ্য থেকে নিয়োগ পান হেলাল উদ্দিন।
আরও পড়ুন:প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারিভাবে গান শেখানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ জন্য সারা দেশে আড়াই হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি প্রথমবারের মতো প্রাথমিকে শারীরিক শিক্ষার শিক্ষকও নিয়োগ দেয়া হচ্ছে সমপরিমাণ।
প্রতি বিষয়ে ২ হাজার ৫৮৩টি সহকারী শিক্ষকের পদ তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।
সংগীত ও শারীরিক শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠানো প্রস্তাব এরই মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন দিয়েছে। এই মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাঠানো হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। জনবলের বিপরীতে বরাদ্দ নিশ্চিত করে সেখান থেকে অনুমোদিত হয়ে এলে তা যাবে সচিব কমিটিতে। সেখান থেকে প্রাথমিকে আবার যখন সিদ্ধান্তটি আসবে, তখন তা পাঠানো হবে অধিদপ্তরে। তারপর আসবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি।
সরকার চাইছে, শিশুরা স্কুলে এসে আনন্দের সঙ্গে সময় কাটাবে। পড়াশোনাকে বিশেষ চাপ ভেবে ভীত থাকবে না।
সনাতন ধাঁচের শিক্ষা পদ্ধতির বদলে প্রাথমিক থেকেই শিশুরা যেন আনন্দ নিয়ে পড়াশোনা করে, সে জন্য পাঠক্রম থেকে শুরু করে স্কুলের অবকাঠামোও পরিবর্তন করে ফেলতে চাইছে সরকার। এর অংশ হিসেবে শিক্ষায় সংগীত ও শরীরচর্চা যোগ হচ্ছে।
এখন সীমিত পরিসরে কিছু স্কুলে ছবি আঁকার যে চর্চা রয়েছে, সেটি সব স্কুলে শুরু করা, পাশাপাশি আলাদা শিক্ষক নিয়োগের চিন্তা করা হচ্ছে।
বগুড়ার বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রাথমিক থেকেই সংগীত শেখানোর ব্যবস্থা আছে। এই দায়িত্বে আছেন শুক্লা ধর। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই বিষয়ে যখন আমরা ক্লাস নেই, তারা বেশ উপভোগ করে। যেসব পরিবার সংগীতচর্চায় আগ্রহী, সেসব পরিবার স্কুলের বাইরেও বিষয়টি এগিয়ে নেয়।’
শুক্লা পড়াশোনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগে। তার মতো যারা এই বিষয়ে পড়াশোনা করেন, তাদের পক্ষে পেশা হিসেবে সংগীতকে বেছে নেয়াটা কঠিন হয়ে যায় এই কারণে যে খুব বেশি প্রতিষ্ঠানে এই বিষয়ে নিয়োগ দেয়া হয় না।
প্রাথমিকে বিষয়টি চালু হলে সংগীতে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও নতুন সুযোগ তৈরি হবে।
শুক্লা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকারের এ সিদ্ধান্ত অত্যন্ত ইতিবাচক। ফলে শিক্ষা হবে আনন্দময়। যার ফল আমরা ভবিষ্যতে ভোগ করব। আর যারা এ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন তাদের জন্যও কর্মক্ষেত্র তৈরি হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক তাহমিনা আক্তার সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে শিশুদের শিক্ষাকে আনন্দময় করার দাবি করে আসছি। সংগীত ও শারীরিক শিক্ষায় শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হলে আমাদের দাবি কিছুটা হলেও বাস্তবায়ন হবে। বর্তমানে প্রাথমিকে অঙ্কন বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ বিষয়টি আরও জোরদার করা উচিত।’
শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বেশি নজর দেয়া উচিত প্রাথমিক শিক্ষায়। এই ধরনের উদ্যোগ এই শিক্ষার মান বাড়াবে।’
ব্যাপক চাকরির সুযোগ
প্রাথমিক ও জনশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকভাবে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে ৫ হাজার ১৬৬টি পদ তৈরি করার প্রস্তাব দিলেও এই বিষয়টি যদি স্কুলে স্কুলে চালু হয়, তাহলে কর্মসংস্থানের নতুন দিক উন্মোচন হতে পারে।
সবশেষ হিসাব অনুযায়ী দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। সব স্কুলে একজন করে সংগীত ও শরীরচর্চার শিক্ষক যদি নিয়োগ দেয়া যায়, তাহলেও নতুন চাকরির সুযোগ হবে ১ লাখ ৩১ হাজার ১৩২টি।
আবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই বিষয়ে শিক্ষক থাকলে বেসরকারি স্কুল-কলেজও একই চর্চায় যাবে। সে ক্ষেত্রে আরও নতুন চাকরি তৈরি হবে, দেশে সাংস্কৃতিক চর্চা বাড়বে।
সারা দেশে কর্মরত সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকের সংখ্যা ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮০ জন।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে কম নিয়োগ দেয়া হলেও আশা করছি পরে প্রতিটি স্কুলেই এই নিয়োগ দেয়া হবে।’
তিনি শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর তাগিদও দেন। বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর করা ড. কুদরত-ই-খোদা শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে শিক্ষায় বাজেটের ৬ থেকে ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু এখনও আমরা এটি করতে পারলাম না। কেবল ২ শতাংশের ভেতরে ঘুরপাক খাচ্ছে।’
কবে আসতে পারে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪)-এর আওতায় সংগীত ও শরীরচর্চা বিষয়ে সহকারী শিক্ষক পদ সৃষ্টিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় ২০২০ সালে।
সেই প্রস্তাব নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এই মন্ত্রণালয় সময় নিয়েছে দুই বছর।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মণীষ চাকমা ধারণা দিতে পারেননি কবে প্রস্তাবটি চূড়ান্ত করে তারা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাপাতে পারবেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এখন এ পদগুলোর বিষয়ে অর্থ বিভাগের সম্মতি নিয়ে সচিব কমিটি পাঠানো হবে। সেখানে অনুমোদন মিললে এই দুই বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে।’
শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় এই স্থরিবতা নিয়ে হতাশ। তিনি বলেন, ‘এই গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত নিতে কেন দুই বছর লাগবে? এখন তা আবার অন্য মন্ত্রণালয় ও কমিটিতে যাবে। এত দীর্ঘসূত্রতা কেন?’
প্রাথমিক শিক্ষাকে ঢেলে সাজাতে যত সিদ্ধান্ত
প্রাথমিকে শতভাগ ভর্তির লক্ষ্য অর্জনের পর সরকার এখন শিক্ষার গুণগত মানে নজর দিয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রমে বড় পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সরকারিভাবে। এটি বাস্তবায়ন হলে প্রাথমিকে পরীক্ষার সংখ্যা কমবে। বাড়বে শ্রেণিকক্ষে ধারাবাহিক মূল্যায়ন।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনসিটিবির পরিকল্পনা হলো নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাথমিকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা হবে না। পুরো মূল্যায়ন হবে বিদ্যালয়ে ধারাবাহিকভাবে শিখন কার্যক্রমের মাধ্যমে।
চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সামাজিকবিজ্ঞান ও বিজ্ঞানে ধারাবাহিক মূল্যায়ন ৬০ শতাংশ এবং সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে ৪০ শতাংশ। আর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্পকলা বিষয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য