× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

শিক্ষা
Iftar of harmony in Jabi
google_news print-icon

জবিতে সম্প্রীতির ইফতার

জবিতে-সম্প্রীতির-ইফতার-
পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্পাসে ইফতারের প্রস্তুতি নেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ছবি: নিউজবাংলা
সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থী মিথিলা দেবনাথ ঝিলিক বলেন, ‘ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হওয়ার পরেও সহপাঠী এবং সিনিয়র ভাই-বোনদের থেকে ইফতারের দাওয়াত পেয়ে খুব ভালো লাগে। একসঙ্গে বসে ইফতার করার মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চিত্র ফুটে ওঠে।’

রাজধানীর পুরান ঢাকায় মাত্র সাড়ে সাত একরের ক্যাম্পাস জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। এই স্বল্প পরিসরের মধ্যে প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষার্থী, ৭০০ শিক্ষক আর হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিয়মিত চলাচল। আয়তনে ছোট হলেও নিত্যদিন এখানে সৃষ্টি হয় নতুন স্মৃতির গল্প। যানজট, কোলাহল ও ব্যস্তময় এই শহরের ক্যাম্পাসে ভাই-বন্ধু-শিক্ষকের সাক্ষাতে মিলে দুদণ্ড শান্তি।

ক্যাম্পাস ছোট হওয়ায় প্রায় সবার সঙ্গেই প্রতিদিন সবার দেখা হয়৷ আর এভাবেই প্রাণোচ্ছল থাকে ক্যাম্পাস। তার মধ্যে আবার সংযুক্ত হয়েছে রমজানের ইফতার। রমজানে প্রতিদিন পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ইফতারির প্রস্তুতি। খোপে খোপে বসে ক্যাম্পাসে ইফতারের প্রস্তুতি নেন জবি শিক্ষার্থীরা।

অন্যবারের থেকে এবারের রমজান মাসটি জবি শিক্ষার্থীদের জন্য একটু ব্যতিক্রম। কারণ এবারেই প্রথম রমজানের মধ্যে একাডেমিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ফলে প্রায় সব শিক্ষার্থীই অবস্থান করছেন ক্যাম্পাসে। আর সারা দিন রোজা রেখে ইফতারের আনন্দময় ক্ষণটি প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে কাটাতে ক্যাম্পাসে ইফতারের আসর বসান শিক্ষার্থীরা। আর এই ইফতারের ছোট বড় আসরে মুখরিত হয়ে উঠছে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান।

জবিতে সম্প্রীতির ইফতার

ক্যাম্পাসের খোপে খোপে বসে ইফতারের প্রস্তুতি নেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ছবি: নিউজবাংলা

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, শান্ত চত্বর, মুক্তমঞ্চ, কাঁঠালতলা, রফিক ভবনের প্রতিটি তলার বারান্দা, বিবিএ ভবনের নিচতলায় পুরোটাজুড়ে, বিজ্ঞান অনুষদ প্রাঙ্গণ, পোগোজ স্কুলের খেলার মাঠ ছাড়াও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন আঙিনায় জমে উঠে ইফতারের মহোৎসব। তন্মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণোচ্ছল পরিবেশ দেখা যায় শহীদ মিনারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাশ ভবনের ওপর থেকে দেখলে মনে হয় এ যেন ভ্রাতৃত্বের এক অনন্য বন্ধন।

ক্যাম্পাসের জুনিয়র-সিনিয়র সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণে সৌহার্দ্য সম্প্রীতির মেলবন্ধনে প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে ইফতার আয়োজন। রোজা শুধু মুসলমানদের ইবাদত হলেও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে থাকেন অন্য ধর্মাবলম্বী বন্ধুরাও।

জবিতে সম্প্রীতির ইফতার

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাশ ভবনের উপর থেকে দেখলে মনে হয় এ যেনো ভাতৃত্বের এক মেলবন্ধন। ছবি: নিউজবাংলা

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা যতই কাছাকাছি আসে আস্তে আস্তে ততই জড়ো হতে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এরপর বন্ধুরা মিলে বাহারি পদের খাবার নিয়ে সাজানো হয় ইফতারের আসর। সবার উদ্দেশ্য, বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দঘন পরিবেশে ইফতার করা। তাই ইফতারের আয়োজনে কী থাকছে সেটা এখানে গৌণ। সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত।

ক্যাম্পাসে ছোট ছোট দলে ছড়িয়ে আড্ডা-গল্পের পাশাপাশি তারা ইফতারের আয়োজনে ব্যস্ত। মাগরিবের আজানের আগ পর্যন্ত প্রতিটি দল তাদের সামনে ইফতারি নিয়ে বসে থাকে। সচরাচর তাদের ইফতারির মধ্যে থাকে মুড়ি, আলুর চপ, পিঁয়াজু, ডিমের চপ, জুস, বেগুনি, জিলাপি, শরবত, খেজুর, বুন্দিয়া, নানা রকম মৌসুমি ফল-ফলাদি। এ ছাড়া থাকে পুরান ঢাকার খাবারের কোনো বিখ্যাত পদ।

জবিতে সম্প্রীতির ইফতার

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, শান্ত চত্বর, মুক্তমঞ্চ, কাঁঠালতলাসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন আঙিনায় জমে ওঠে ইফতারের মহোৎসব। ছবি: নিউজবাংলা

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বন্ধুদের সঙ্গে আয়োজন করছেন এসব আসরের। অনেক সময় সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে করা হয়েছে ইফতারের এ আয়োজন। আর ইফতারের পর সারা দিনের ক্লান্তি আর অবসাদ কাটাতে আড্ডায় মুখর হয়ে ওঠে আসরগুলো। শিক্ষার্থীদের ছোট-বড় অসংখ্য ইফতারের আসরে প্রতিদিন আনন্দমুখর হয়ে ওঠে জবি ক্যাম্পাস। এ যেন এক আত্মিক মিলনমেলা।

ক্যাম্পাসে ইফতারের অনুভূতি জানিয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ইউছুব ওসমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার কারণে গত বছর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় সবাই বাড়িতে ছিল। আর আমরা যারা ঢাকায় ছিলাম রুমেই ইফতার করতাম। এ বছর ক্যাম্পাস খোলা থাকায় সব বন্ধুরা মিলে একত্রে ইফতার করতে পারতেছি। এতে পরিবার থেকে দূরে থাকার বিষাদ কিছুটা হলেও কম হচ্ছে।’

জবিতে সম্প্রীতির ইফতার

বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষার্থী সাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘রমজানের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে সম্প্রীতি প্রয়োজন। সব শ্রেণি-ধর্ম-বর্ণ-জাত বিভেদ ভুলে গিয়ে পারস্পরিক সৌহার্দ্য সম্প্রীতি মেলবন্ধনের মধ্য দিয়ে ইফতারে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে প্রাণের জবি ক্যাম্পাসে। সাম্প্রদায়িক শক্তির মুখে একমুঠো ছাই ফেলে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয় ক্যাফেটেরিয়া থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রাঙ্গণে, চোখ বুলিয়ে যাওয়ার মতো অনাবিল দৃশ্য ভুলবার নয়। এভাবেই জমকালো ইফতারের মাধ্যমেই বন্ধুত্বের বন্ধন হোক অটুট, সেই প্রত্যাশা।’

পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী মেহরাব হোসেন অপি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী পরিবার ছাড়া ঢাকায় থাকে। ক্যাম্পাস খোলা থাকায় পরিবারের সঙ্গে একত্রে ইফতার করাটাও হচ্ছে না। এ জন্য আমরা যারা বন্ধু-বান্ধব আছি, তারা সব সময় একসঙ্গে আমাদের পরিবারের মতো ক্যাম্পাসে ইফতার করার চেষ্টা করি।

জবিতে সম্প্রীতির ইফতার

রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী ছামিরা ইসলাম ছনি বলেন, ‘ইফতারের সময়ে ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে পরিবেশ দেখে বিমোহিত হয়ে গেলাম। সবাই দলে দলে ইফতার নিয়ে বসে আছে। এ সৌন্দর্য অন্য রকম। আমরাও ব্যস্ত হয়ে পড়লাম ইফতার তৈরি করা নিয়ে। ইফতার পরিবেশন ও শরবত বানানোর সময় বারবার মনে হচ্ছিল যেন নিজের পরিবারের সঙ্গেই আছি। বাড়ির বাইরে রোজা ও ইফতারের এই প্রথম অভিজ্ঞতা।

‘বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ইফতারের এই সুন্দর আয়োজন সত্যি মনোমুগ্ধকর ও আনন্দের। পরিবারের সঙ্গে ইফতার খুব মিস করছি, তবে বন্ধুদের সঙ্গে ইফতারও খুব উপভোগ করছি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে বন্ধুরা মিলে ইফতার করার এই মুহূর্তটা খুব মিস করব।’

সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থী মিথিলা দেবনাথ ঝিলিক বলেন, ‘ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হওয়ার পরও সহপাঠী এবং সিনিয়র ভাই-বোনদের থেকে ইফতারের দাওয়াত পেয়ে খুব ভালো লাগে। একসঙ্গে বসে ইফতার করার মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চিত্র ফুটে ওঠে।’

আরেক সনাতন ধর্মের শিক্ষার্থী অমিত পাল বলেন, ‘রমজান মাসে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকায় ক্যাম্পাসে সময় কাটছে। অন্য ধর্মের হওয়া সত্ত্বেও সহপাঠী, সিনিয়র বড় ভাই-বোনদের থেকে প্রতিদিনই ইফতারের দাওয়াত পাই। এ যেন ভ্রাতৃত্বের এক বন্ধন। অসাম্প্রদায়িকতার এক দৃষ্টান্তমূলক প্রতিফলন। এবারের রমজানে অনেক ইফতারের দাওয়াত পেয়েছি।

জবিতে সম্প্রীতির ইফতার

‘প্রতিদিনই ক্যাম্পাসে একেক দিন কোনো না কোনো ইফতার আয়োজন লেগেই থাকে। বিভাগের সিনিয়র-জুনিয়র, ব্যাচমেট, জেলা ছাত্র কল্যাণ ছাড়াও অনেক মাধ্যমে ইফতার আয়োজন করা হয়ে থাকে৷ এভাবে পুরো রমজান মাসই একের পর এক সংগঠনের ইফতার আয়োজন চলতেই থাকে। এতে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস৷ ইফতারের সময় ক্যাম্পাসে ইফতারের মাধ্যমে যেন নিজের পরিবারের অভাবটা পূরণ হয়।’

এ ছাড়া প্রথম রোজা থেকেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় ইফতার আয়োজন করা হচ্ছে৷ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি শরবত ও সাতটি আইটেমের সমন্বয়ে ৪০ টাকা মূল্যের ইফতার প্যাকেজ রমজান মাসব্যাপী চালু থাকবে। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে ক্যাফেটেরিয়ার মধ্যেই ইফতার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

আরও পড়ুন:
ইফতারি খেয়ে বিচারকসহ অসুস্থ ৩০, কারাগারে ৩
জাপার ইফতারে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীকে নিমন্ত্রণ
যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সেনাপ্রধানের ইফতার
আলেম-এতিমদের সঙ্গে বিএনপির ইফতার, থাকছেন না খালেদা
রমজানে জবির ক্লাসের সময়সূচি কিছুটা পরিবর্তন, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

মন্তব্য

আরও পড়ুন

শিক্ষা
Women cannot be Pope for that reason

নারীরা যে কারণে পোপ হতে পারেন না

নারীরা যে কারণে পোপ হতে পারেন না

পোপ হলেন ক্যাথলিক চার্চের সর্বোচ্চ নেতা। ১.৪ বিলিয়ন মানুষের আস্থার কেন্দ্রবিন্দু। যিশুর প্রধান শিষ্য। ফলে আস্থার দিক থেকে খ্রিষ্টান সমাজ ও চার্চে পোপের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত ধরা হয়। এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে শুধুমাত্র পুরুষকেই বেছে নেওয়া হয়। সেখানে কোনো নারীর জায়গা নেই।

যাজক হিসেবে সবসময়ই পুরুষদের নির্বাচিত করায় বারবারই প্রশ্নের মুখে পড়েছে চার্চ। কয়েক শ বছর থেকেই যাজকের দায়িত্ব গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত রয়েছেন নারীরা। ১২ বছর ধরে রোমান ক্যাথলিকদের ধর্মীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর প্রয়াত হয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস। তার প্রয়াণের পর এবার নতুন করে শুরু হবে পোপ নির্বাচন। তখন নতুন করে উঠেছে প্রশ্নটি।

পোপের মৃত্যু পর বা পদ্যত্যাগ করার পর ১৫-২০ দিন সময় নেয় রোমান ক্যাথলিক চার্চ‌। এই সময়ের মধ্যে সারা বিশ্ব থেকে চার্চের সবচেয়ে প্রবীণ কর্মকর্তারা রোমে এসে উপস্থিত হন। তাদের সম্মিলিতভাবে ‘কলেজ অব কার্ডিনালস’ বলা হয়। ভ্যাটিকান থেকে তাদের কাছে পোপ নির্বাচনে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ আসে।

নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সকলকে তাদের পছন্দের ব্যক্তির নাম কাগজে লিখে জানাতে হয়। কঠোর প্রোটোকল অনুসারে, এই নির্বাচনে শুধুমাত্র পুরুষরাই অংশগ্রহণ করতে পারবেন, কোনো নারী নয়।

পোপ হওয়ার অধিকার থেকে নারীদের বাদ দেওয়ার বিষয়টি চার্চের দীর্ঘদিনের রীতির সঙ্গে যুক্ত। এই বিষয়টি কেবল পুরুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। ক্যানন আইন (ক্যানন ১০২৪) অনুসারে, শুধুমাত্র দীক্ষিত পুরুষদেরই পোপ হিসেবে নিযুক্ত করা যেতে পারে। আসলে খ্রিষ্টান ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস যে প্রভু যীশু কেবল পুরুষদের শিষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন, যে নিয়ম ক্যাথলিক চার্চে বহুদিন ধরে চলছে।

জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের রিলিজিওন অ্যান্ড পাবলিক পলিসি প্রোগ্রামের ডিরেক্টর রেভারেন্ড টমাস রিজের মতে, পোপের মতো পদের জন্য অর্ডিনেশন প্রয়োজন এবং নারীদের পুরোহিত হওয়ার অনুমতি নেই।

একবার প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসকে প্রশ্ন করা হয়, নারীরা কি কখনো পোপ হতে পারবেন না? উত্তরে পোপ বলেন, আপনি যদি সেইন্ট দ্বিতীয় জন পলের ঘোষণা ভালোভাবে পড়ে থাকেন তাহলে সেই নির্দেশনা এখনও অব্যাহত রয়েছে। নারীরা অন্য অনেক কাজে পুরুষের চেয়ে অপেক্ষাকৃত ভালো করতে পারেন। তবে পোপ হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের ওপর বিধিনিষেধ আছে।

ইতিহাসের দিক থেকে, পোপ হওয়ার মানদণ্ড মতবাদের পরিবর্তে নজিরের ওপর ভিত্তি করে। ১৪৫৫ সালে পোপ ক্যালিক্সটাস তৃতীয় ছিলেন পোপ নির্বাচিত হওয়া শেষ অ-পুরোহিত এবং ১৩৭৮ সালে আরবান ষষ্ঠ ছিলেন শেষ অ-কার্ডিনাল পুরোহিত যাকে নির্বাচিত করা হয়েছিল।

ক্যাথলিক চার্চের ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে, যিশুখ্রিষ্ট ১২ জন পুরুষকে তার শিষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। যারা পরে তাদের পরিচর্যা চালিয়ে যাওয়ার জন্য অন্যান্য পুরুষদের বেছে নিয়েছিলেন। ফলস্বরূপ, চার্চ এই পুরুষতান্ত্রিক ঐতিহ্য বজায় রেখেছে। ঠিক সেই কারণেই নারীরা কখনো যাজক হতে পারে না।

মন্তব্য

শিক্ষা
Holy Lilatul Kadar today

পবিত্র ‘লাইলাতুল কদর’ আজ

পবিত্র ‘লাইলাতুল কদর’ আজ প্রতীকী ছবি
মহান আল্লাহ লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম।

পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর বৃহস্পতিবার। এর অর্থ ‘অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত’ বা ‘পবিত্র রজনী’।

আজ সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হবে কদরের রজনী।

যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে সারা দেশে রাতটি পালন করা হবে।

মহান আল্লাহ লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম।

এ রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষণ করা হয়। নির্ধারণ করা হয় মানবজাতির ভাগ্য।

৬১০ সালে কদরের রাতেই মক্কার নূর পর্বতের হেরা গুহায় ধ্যানরত মহানবী হযরত মুহাম্মদের (সা.) কাছে সর্বপ্রথম সুরা আলাকের পাঁচ আয়াত নাজিল হয়। এরপর আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর বহনকৃত ওহির মাধ্যমে পরবর্তী ২৩ বছর ধরে মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট আয়াত আকারে বিভিন্ন সুরা নাজিল করা হয়।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে।

‘শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত। (সূরা আল- কদর, আয়াত ১-৫)।’

হাদিসে বর্ণিত আছে, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ ১০ রাতে লাইলাতুল কদর সন্ধান করো (বুখারি ও মুসলিম)।’

মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় পবিত্র রাতটি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে দেন। কামনা করেন মহান রবের অসীম রহমত, নাজাত, বরকত ও মাগফিরাত।

এরই ধারাবাহিকতায় আজ রাত থেকে পরের দিন ভোররাত পর্যন্ত মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও আখেরি মোনাজাত করবেন তারা।

এই উপলক্ষে শুক্রবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে রাতব্যাপী ওয়াজ মাহফিল, ধর্মীয় বয়ান ও আখেরি মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।

এ ছাড়া দেশের সব মসজিদেই তারাবির নামাজের পর থেকে ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন থাকবে।

পবিত্র লাইলাতুল কদর/শবে কদর উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিওগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।

এ ছাড়া সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করা হবে।

মন্তব্য

শিক্ষা
Tamim Iqbals unique treatment of the golden age of Islam and Islam

তামিম ইকবালের সুচিকিৎসা ও ইসলামের স্বর্ণযুগের অনন্য চিকিৎসাব্যবস্থা

তামিম ইকবালের সুচিকিৎসা ও ইসলামের স্বর্ণযুগের অনন্য চিকিৎসাব্যবস্থা ইসলামের স্বর্ণযুগের চিকিৎসাকর্মী। ছবি: দ্য রিভিউ অব রিলিজিয়নস
১২৮৪ সালে মিসরের কায়রোতে নির্মিত এই ‘মানসুরি হাসপাতাল’ ছিল ইসলামের স্বর্ণযুগের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে উন্নত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। এখানে চারটি বড় আঙিনার কেন্দ্রে জলপ্রপাত ছিল, রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড, বহির্বিভাগ, ওষুধ বিতরণ কেন্দ্র এবং শিক্ষার্থীদের জন্য লেকচার হল ছিল। হাসপাতালের চিকিৎসকরা শুধু রোগীদের চিকিৎসাই করতেন না, বরং প্রয়োজনে তাদের বাড়িতেও গিয়ে সেবা দিতেন। বিশেষত, জ্বর ওয়ার্ডগুলোকে জলপ্রপাতের মাধ্যমে ঠান্ডা রাখা হতো এবং রোগীদের বিনোদনের জন্য সংগীতশিল্পী ও গল্প বলার ব্যবস্থা ছিল।

বাংলাদেশের জনপ্রিয় ক্রিকেটার তামিম ইকবালের সুস্থতায় দেশবাসী যেমন চরম আনন্দ পেয়েছে, তেমনই তাদের অনেকে প্রচলিত একটি ভুল ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছে। এতদিন দেশের মানুষের বিশাল অংশের একটি ধারণা ছিল যে, বাংলাদেশে ভালো চিকিৎসক নেই। কিন্তু তামিম ইকবাল যখন বুকে ব্যথা অনুভব করেন, তখন দুই ঘণ্টার মধ্যেই এনজিওগ্রাম, হার্টে স্টেন্ট তথা রিং বসানোসহ সবকিছু হয়ে যায়।

তামিম দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার। তাই তার চিকিৎসায় বিলম্ব হয়নি। এই যে দ্রুত গতিতে চিকিৎসাসেবা পাওয়া, সেটি তার জন্য করুণা নয়; বরং ন্যায্য পাওনা।

আকস্মিক অসুস্থতায় মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখার পর তামিমের দ্রুত চিকিৎসা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। ঘটনাটি সমাজে ধনী-দরিদ্র্যের বৈষম্যকেও আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।

এ দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষের জন্য চিকিৎসাপ্রাপ্তির অভিজ্ঞতা এত সুন্দর বা সহজ নয়। ভর্তির ফরম পূরণ, সিরিয়ালের অপেক্ষা, হাসপাতালের করিডোরে দীর্ঘ প্রতীক্ষা—আরও কতকিছুর মধ্য দিয়ে যেতে হয়। প্রতি পদে পদে বুঝিয়ে দেওয়া হয়, এখানে উন্নত চিকিৎসা পেতে হলে আপনাকে ধনী, জনপ্রিয়ত হতে হবে অথবা আপনার ‌তদবির করার মতো লোক থাকতে হবে। যাদের সেগুলো আছে, তারা ভালো চিকিৎসা পাবে, যাদের নেই তারা প্রক্রিয়াগত জটিলতায় পড়বেন। ভাগ্য ভালো না হলে বেঘোরে প্রাণটা হারাবেন।

জনগণ তামিমের ঘটনা থেকে জানতে পারল বাংলাদেশে চিকিৎসা নেই কথাটা ‌‘যদি’, ‘কিন্তু’ ছাড়া ভুল। বাংলাদেশে উন্নত চিকিৎসা আছে, কিন্তু সেটা সাধারণ জনগণের জন্য সোনার হরিণেরমতো।

আসলে এটি শুধু বাংলাদেশের চিত্র নয়, সারা বিশ্বেই দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সুচিকিৎসা পেতে অনেক বেগ পেতে হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের প্রতি বছর প্রায় সাত হাজার ৭৪৯ ডলার খরচ করতে হয় স্বাস্থ্যবিমার জন্য। দেশটিতে গত এক দশকে বিমাহীন মানুষের সংখ্যা ৩৫ শতাংশ বেড়েছে, যা দরিদ্রদের চিকিৎসাসেবা গ্রহণে বড় বাধা সৃষ্টি করেছে।

জানলে অনেকে আঁতকে উঠবেন যে, জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকায় প্রতি বছর আড়াই লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় ভুল চিকিৎসায়। বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও অন্য কিছু প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সংখ্যা চার লাখেরও বেশি। হৃদরোগ ও ক্যানসারে ভুল চিকিৎসার জন্য মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি।

যদিও ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (OECD) নামে বৈশ্বিক নীতিনির্ধারণী একটি ফোরাম বলছে, আমেরিকার চেয়ে পৃথিবীর আর কোনো দেশে চিকিৎসা খাতে বেশি অর্থ ব্যয় করা হয় না। তবে চিকিৎসায় ব্যয়ের বেশির ভাগ অংশ সরাসরি রোগীদের চিকিৎসার জন্য নয়, বরং হাসপাতাল নির্মাণ, উন্নয়ন, স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন ও ওষুধের উচ্চমূল্যের পেছনে ব্যয় হয়। ফলে জনসাধারণ স্বল্প মূল্যে চিকিৎসা পান না।

আমরা যখন একুশ শতকে সামরিকভাবে প্রচণ্ড প্রভাবশালী রাষ্ট্রের এ চিত্র দেখছি, তখন শত শত বছর আগে ইসলামী ভাবধারার শাসনামলে চিকিৎসা ছিল ধনী-গরিব সবার জন্য সমান। পশ্চিমা জ্ঞানকাণ্ডে ইসলামের সোনালি এ দিনগুলোকে অন্ধকারাচ্ছন্ন হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও বাস্তবে ১২৮৪ খ্রিস্টাব্দে কায়রোর আল-মানসুর কালাউনের বিমারিস্তানের (হাসপাতাল) পলিসি স্টেটমেন্টটি দেখলে আপনি হয়তো ফিরে যেতে চাইবেন সেই সময়ে। চলুন দেখে নিই, কী ছিল সেই পলিসি স্টেটমেন্টে।

সেখানে বলা ছিল, ‘হাসপাতাল সকল রোগীকে-পুরুষ ও নারী- সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত রাখবে। সব খরচ হাসপাতাল বহন করবে, তা সে দূরবর্তী অঞ্চল থেকে আসুক বা নিকটবর্তী এলাকা থেকে, বাসিন্দা হোক বা বিদেশি, সবল হোক বা দুর্বল, উচ্চবিত্ত হোক বা নিম্নবিত্ত, ধনী হোক বা দরিদ্র, কর্মরত হোক বা বেকার, দৃষ্টিহীন হোক বা শারীরিকভাবে সক্ষম, মানসিক বা শারীরিকভাবে অসুস্থ, শিক্ষিত বা নিরক্ষর সবাইকে সমান সেবা দেওয়া হবে।’

এখানে কোনো শর্ত বা অর্থ প্রদানের বাধ্যবাধকতা নেই। কেউ যদি অর্থ প্রদান করতে না পারত, তাতেও কোনো আপত্তি বা ইঙ্গিত করার সুযোগ ছিল না। সম্পূর্ণ সেবাটি পরম দয়ালু আল্লাহর অনুগ্রহের মাধ্যমে প্রদান করা হতো।

১২৮৪ সালে মিসরের কায়রোতে নির্মিত এই ‘মানসুরি হাসপাতাল’ ছিল ইসলামের স্বর্ণযুগের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে উন্নত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। এখানে চারটি বড় আঙিনার কেন্দ্রে জলপ্রপাত ছিল, রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড, বহির্বিভাগ, ওষুধ বিতরণ কেন্দ্র এবং শিক্ষার্থীদের জন্য লেকচার হল ছিল।

হাসপাতালের চিকিৎসকরা শুধু রোগীদের চিকিৎসাই করতেন না, বরং প্রয়োজনে তাদের বাড়িতেও গিয়ে সেবা দিতেন। বিশেষত, জ্বর ওয়ার্ডগুলোকে জলপ্রপাতের মাধ্যমে ঠান্ডা রাখা হতো এবং রোগীদের বিনোদনের জন্য সংগীতশিল্পী ও গল্প বলার ব্যবস্থা ছিল।

বিশেষভাবে উল্লেখ করার বিষয় হলো রোগীরা হাসপাতাল থেকে ছাড়ার সময় তাদের হাতে কিছু পরিমাণ অর্থ তুলে দেওয়া হতো, যাতে তারা আর্থিক সংকটে না পড়ে এবং কাজের জন্য প্রস্তুত হতে পারে।

এবার একটি চমকপ্রদ চিঠি তুলে ধরা হলো, যা দেখলে আপনি অবাক হতে পারেন। আর সেই সঙ্গে ইসলামী শাসনামলের চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারণা পেতে পারেন।

দশম শতাব্দীতে কর্ডোবার একটি হাসপাতাল থেকে এক তরুণ ফরাসি যুবকের চিঠির কথা আমির গাফার আল-আরশদি কর্তৃক ১৯৯০ সালে বৈরুতের আল-রিসালা এস্টাবলিশমেন্ট থেকে প্রকাশিত The Islamic Scientific Supremacy শীর্ষক গ্রন্থে তুলে ধরা হয়।

চিঠিটির অনুবাদ নিচে দেওয়া হলো।

‘আপনি আপনার আগের চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন যে, আমার ওষুধের খরচের জন্য কিছু টাকা পাঠাবেন। আমি বলতে চাই, আমার একেবারেই সেই টাকার প্রয়োজন নেই, কারণ এই ইসলামী হাসপাতালে চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে দেওয়া হয়।

‘এ ছাড়াও এ হাসপাতালের আরেকটি চমকপ্রদ দিক হলো—যে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন, তাকে হাসপাতাল থেকে একটি নতুন পোশাক এবং পাঁচ দিনার দেওয়া হয়, যাতে তিনি বিশ্রাম ও পুনরুদ্ধারের সময় কাজ করতে বাধ্য না হন। প্রিয় বাবা, আপনি যদি আমাকে দেখতে আসতে চান, তবে আমাকে সার্জারি ও জয়েন্ট চিকিৎসা বিভাগের ওয়ার্ডে পাবেন। ফটক দিয়ে প্রবেশ করার পর দক্ষিণ কক্ষে যান, যেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা ও রোগ নির্ণয় বিভাগ রয়েছে। এরপর আপনি সন্ধান পাবেন বাত (জয়েন্ট) রোগ বিভাগের।’

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আমার কক্ষের পাশে একটি গ্রন্থাগার এবং একটি হলঘর রয়েছে, যেখানে চিকিৎসকরা একত্রিত হয়ে অধ্যাপকদের বক্তৃতা শোনেন এবং এটি পড়াশোনার জন্যও ব্যবহৃত হয়। হাসপাতালের প্রাঙ্গণের অপর পাশে রয়েছে স্ত্রীরোগ বিভাগের ওয়ার্ড, যেখানে পুরুষদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। হাসপাতালের আঙিনার ডান দিকে রয়েছে বিশাল একটি হল, যেখানে সুস্থ হওয়া রোগীদের পুনরুদ্ধারের জন্য কিছুদিন রাখা হয়। এই কক্ষে একটি বিশেষ লাইব্রেরি ও কিছু বাদ্যযন্ত্রও রয়েছে।

‘প্রিয় বাবা, হাসপাতালের প্রতিটি স্থান অত্যন্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। বিছানা ও বালিশ দামাস্কাসের সূক্ষ্ম সাদা কাপড় দিয়ে মোড়ানো থাকে। কম্বল তৈরি হয় নরম ও মসৃণ প্লাশ কাপড় দিয়ে। প্রতিটি কক্ষে পরিষ্কার পানির ব্যবস্থা আছে, যা পাইপের মাধ্যমে বিশাল একটি ঝরনার সঙ্গে সংযুক্ত। শুধু তাই নয়, প্রতিটি কক্ষে গরম রাখার জন্য চুলাও রয়েছে।

‘খাবারের ব্যবস্থা এত ভালো যে, প্রতিদিন রোগীদের জন্য মুরগির মাংস ও সবজি পরিবেশন করা হয়। এমনকি, অনেক রোগী সুস্থ হয়েও হাসপাতাল ছাড়তে চান না শুধু এখানকার সুস্বাদু খাবারের প্রতি ভালোবাসার কারণে।’

চিকিৎসাব্যবস্থাকে পুঁজিবাদ ও ইসলাম সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে দেখে। বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় চিকিৎসা একটি লাভজনক ব্যবসা, অন্যদিকে ইসলাম চিকিৎসাকে মানবসেবার অংশ হিসেবে দেখে, যেখানে মুনাফার পরিবর্তে সবার জন্য সুলভ ও ন্যায়সঙ্গত চিকিৎসার ওপর জোর দেওয়া হয়।

ইসলামে চিকিৎসা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ইসলামে রাষ্ট্রকে জনগণের কল্যাণ এবং তাদের মৌলিক অধিকারগুলোর প্রতি দায়িত্বশীল হতে নির্দেশ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো চিকিৎসাসেবা।

ইসলামের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করা এবং চিকিৎসাসেবা এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত এক হাদিসে বলা হয়, ‘আল্লাহ এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার নিরাময়ের উপকরণ তিনি সৃষ্টি করেননি।’ হাদিসটি ইসলামি শাসনামলে চিকিৎসাশাস্ত্রে অগ্রগতির নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।

এ ছাড়া ‘যে ব্যক্তি মুসলিম ভাইয়ের কোনো দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ তৈরি করবেন’ এবং ‘মুসলিম একে অপরের ভাই। যদি কেউ তার ভাইয়ের সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করে, আল্লাহ তাকে সাহায্য করবেন’ ধরনের হাদিস তৎকালীন চিকিৎসকদের অনুপ্রাণিত করতো সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে।

সে সময় ভুল চিকিৎসায় কারও মৃত্যু হলে তাকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে দেখা হতো, তাই দক্ষতা ছাড়া কেউ এ পেশায় আসত না, যা ভুল চিকিৎসা রোধে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।

চিকিৎসাসেবার মান নিয়ন্ত্রণ ও পর্যালোচনা নিয়ে ইবন আল-উখওয়া (Ibn al-Ukhuwa) তার গ্রন্থ মা’আলিম আল-কুরবা ফি তালাব আল-হিসবাতে কয়েকটি বিষয়টি উল্লেখ করেন।

• যদি রোগী মারা যান, তবে তার পরিবারের সদস্যরা প্রধান চিকিৎসকের কাছে অভিযোগ করতে পারেন। তারা চিকিৎসকের লেখা প্রেসক্রিপশন দেখান।
• যদি প্রধান চিকিৎসক মনে করেন যে চিকিৎসক তার কাজ যথাযথভাবে করেছেন, তবে তিনি পরিবারকে জানান যে এটি একটি স্বাভাবিক মৃত্যু।
• কিন্তু যদি চিকিৎসকের অবহেলা প্রমাণিত হয়, তবে প্রধান চিকিৎসক পরিবারকে বলেন, ‘তোমাদের আত্মীয়কে ভুল চিকিৎসার কারণে হত্যা করা হয়েছে। চিকিৎসকের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করো!’

এই ন্যায়সঙ্গত পদ্ধতির কারণে শুধু অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত চিকিৎসকরাই চিকিৎসাব্যবস্থায় কাজ করতে পারতেন।

ইসলামি সভ্যতায় আধুনিক হাসপাতালের ধারণা নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর সময়েই জন্ম নিয়েছিল। ইসলামের প্রথম দিনগুলোতে চিকিৎসাসেবার মূল কেন্দ্র ছিল মদিনার মসজিদ, যেখানে রোগীদের চিকিৎসার জন্য তাঁবু স্থাপন করা হতো। বিশেষ করে, গাজওয়া খন্দকের সময় নবী (সা.) আহত সেনাদের চিকিৎসার জন্য রুফাইদা বিনতে সাদ (রাঃ)-এর তত্ত্বাবধানে একটি বিশেষ তাঁবু স্থাপন করেছিলেন।

পরবর্তী সময়ে ইসলামী খলিফারা চিকিৎসাসেবা আরও সংগঠিত করেন এবং ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল প্রবর্তন করেন, যা নির্দিষ্ট অঞ্চলে গিয়ে জনগণকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করত।

১৩০০ শতকের চিকিৎসক ও পর্যটক আবদুল লতিফ আল-বাগদাদির এক চমৎকার অভিজ্ঞতা দিয়ে শেষ করব, যা ইসলামি শাসনামলে চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নত অবস্থার চিত্র তুলে ধরে।

দামেস্কে শিক্ষকতা করা এ চিকিৎসক এক চতুর পার্সি যুবকের গল্প বলেছেন, যিনি নূরী হাসপাতালের চমৎকার খাবার ও পরিষেবার প্রতি এতটাই আকৃষ্ট হয়েছিলেন যে, অসুস্থতার ভান করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। চিকিৎসক তার অসুস্থতা নিয়ে সন্দেহ করলেও তাকে তিন দিন ধরে ভালো খাবার পরিবেশন করেন। চতুর্থ দিনে, চিকিৎসক তার কাছে এসে মৃদু হেসে বললেন, ‘আরবীয় ঐতিহ্য অনুযায়ী, আতিথেয়তা তিন দিনের জন্য হয়ে থাকে। এখন দয়া করে বাড়ি ফিরে যান!’

পরিশেষে, তামিম ইকবাল যে দ্রুত চিকিৎসা পেয়েছেন, তা যেন কোনো ‘বিশেষাধিকার’ না হয়, বরং প্রতিটি নাগরিকের প্রাপ্য হয়—সেই লক্ষ্যে এমন সমাজের জন্য কাজ করা জরুরি যে সমাজ রুফাইদা (রা.)-এর তাঁবু বা কালাউনের হাসপাতালের মতো ‘কাউকে অর্থ বা পরিচয় জিজ্ঞাসা করবে না, শুধু নিশ্চিত করবে মানবতা।’ কেননা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার দৃষ্টিভঙ্গি যেহেতু মুনাফাকেন্দ্রিক, সেহেতু এ ব্যবস্থা বহাল রেখে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জন্য সুচিকিৎসা বাস্তবতা বিবর্জিত স্বপ্ন হিসেবে প্রতীয়মান হতে পারে।

লেখক: সাংবাদিক

আরও পড়ুন:
হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির জরায়ু কেটে ফেলার অভিযোগ
অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা বাবদ ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ সরকারের
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা স্থিতিশীল: চিকিৎসক
বিদেশি চাটুকারদের উপদেষ্টা বানানো হচ্ছে: ফয়জুল করীম
চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পেলেন দুই আমেরিকান

মন্তব্য

পাহাড়ের চূড়ায় নান্দনিক মসজিদ

পাহাড়ের চূড়ায় নান্দনিক মসজিদ বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু স্থানে নির্মিত মসজিদটির নাম ‘দারুস সালাম জামে মসজিদ’। এর অবস্থান পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ভ্যালির রুইলুই পাড়ায়। ছবি: বাসস
রাজধানী ঢাকা থেকে সাজেকে ঘুরতে আসা পর্যটক সোহেল আরমান বাসসকে বলেন, ‘চার বছর আগেও একবার এখানে এসেছিলাম। মসজিদ না থাকায় তখন জামায়াতে নামাজ আদায় করতে পারিনি। তবে এবারে এসে মসজিদের এমন নিরব-নির্মল পরিবেশে সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করতে পেরে অন্যরকম প্রশান্তি অনুভব করছি।’

যেখানে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়ের সারি, রোদের সাথে শুভ্র মেঘদলের নিত্য লুকোচুরি খেলা, সেখানেই নির্মাণ করা হয়েছে নান্দনিক এক মসজিদ। সে মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসে আজানের সুমধুর ধ্বনি।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৭০০ ফুট উঁচুতে সবুজ পল্লব আর নিসর্গের বুক চিঁড়ে সপ্রতিভ দাঁড়িয়ে আছে একটি মসজিদ। বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু স্থানে নির্মিত মসজিদটির নাম ‘দারুস সালাম জামে মসজিদ’। এর অবস্থান পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ভ্যালির রুইলুই পাড়ায়।

সেনাবাহিনীর দানকৃত এক একর ভূমির ওপর নির্মিত এ মসজিদটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৮ টাকা। এতে যৌথভাবে অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ।

চার তলা ভিতের ওপর দণ্ডায়মান দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি উচ্চতায় ২২ ফুট। এতে রয়েছে চারটি গম্বুজ ও একটি সুউচ্চ মিনার।

মসজিদটির পূর্ব-পশ্চিমের দৈর্ঘ্য ৬৫ ফুট, উত্তর-দক্ষিণের প্রস্থ ৮১ ফুট এবং সামগ্রিক আয়তন ৫ হাজার ২৬৫ বর্গফুট।

সৌন্দর্যে অপরূপ মসজিদটি নির্মাণে ২০২০ সালে যৌথভাবে উদ্যোগ নেয় সেনাবাহিনী ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। একই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি সাজেকের রুইলুই পাড়ায় হ্যালিপ্যাডের পাশে মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক চট্টগ্রাম ডিভিশনের তৎকালীন জিওসি মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান।

মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হতে সময় লাগে ঠিক দুই বছর। বর্তমানে সেনাবাহিনীর বাঘাইহাট জোনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মসজিদটি পরিচালিত হচ্ছে।

দারুস সালাম জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মো. মনিরুজ্জামান বাসসকে বলেন, ‘২০২২ সালের পহেলা রমজানের এশা এবং খতম তারাবির নামাজের মাধ্যমে এই মসজিদে নামাজ আদায়ের সূচনা হয়। বর্তমানে প্রাত্যহিক পাঁচ ওয়াক্ত জামায়াতের পাশাপাশি জুমা এবং খতম তারাবির নামাজ আদায় করা হয় এখানে।

‘তারাবির জন্য প্রতি বছরের মতো এবারও দুইজন হাফেজ নিয়োগ করা হয়েছে। এসব জামায়াতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অসংখ্য পর্যটক অংশ নেন।’

সাজেকে প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে তিন হাজার পর্যটকের সমাগম হয়। আর বিশেষ ছুটির দিনগুলোতে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ থেকে ২০ গুণ, যাদের মধ্যে অধিকাংশই ইসলাম ধর্মাবলম্বী পর্যটক।

মসজিদ না থাকায় এত বছর নামাজ আদায়ে বেশ বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে মুসলিম পর্যটকদের। তবে এখন স্বাচ্ছন্দ্যেই মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারেন সাজেক ভ্রমণে আসা পর্যটকরা।

প্রকৃতির অবারিত সবুজের মাঝে সুনসান পরিবেশে এমন সৌন্দর্যমণ্ডিত মসজিদে নামাজ পড়ার সুযোগ পেয়ে পর্যটকরা দারুণ উচ্ছ্বসিত।

রাজধানী ঢাকা থেকে সাজেকে ঘুরতে আসা পর্যটক সোহেল আরমান বাসসকে বলেন, ‘চার বছর আগেও একবার এখানে এসেছিলাম। মসজিদ না থাকায় তখন জামায়াতে নামাজ আদায় করতে পারিনি। তবে এবারে এসে মসজিদের এমন নিরব-নির্মল পরিবেশে সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করতে পেরে অন্যরকম প্রশান্তি অনুভব করছি।’

দারুস সালাম মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক যুবরাজ বলেন, ‘সেনাবাহিনীর বাঘাইহাট জোন, স্থানীয় কটেজ-রিসোর্ট-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী এবং পর্যটকদের দান-অনুদানে এই মসজিদের সার্বিক ব্যয় নির্বাহ করা হয়। উঁচু পাহাড়ের কারণে সাজেকে পানি পাওয়া যায় না। ফলে মসজিদে অজুসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার্য সকল পানি কিনে ব্যবহার করতে হয়।

‘প্রতিদিন এ মসজিদে গড়ে ৫ হাজার লিটার পানি লাগে। আর প্রতি লিটার পানিতে ১ টাকা করে দৈনিক ৫ হাজার টাকা খরচ হয় কেবল পানি বাবদ। এ ছাড়া আরও আনুষাঙ্গিক অনেক খরচ রয়েছে। তবে ব্যয়বহুল হলেও সবার সহযোগিতা নিয়ে এ মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় হচ্ছে।’

আরও পড়ুন:
অগ্নিকাণ্ড: নিরাপত্তার স্বার্থে সাজেক ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করছে প্রশাসন
সাজেকে গোলাগুলি, আটকা পড়েছেন পাঁচ শতাধিক পর্যটক
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে রেকর্ড ৮,২১,৩৪,৩০৪ টাকা
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার ২৯ বস্তা টাকা 
এক মাসের বেশি সময় পর পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত সাজেক

মন্তব্য

শিক্ষা
This time the lowest feed of 5 rupees per person is Tk

এবার জনপ্রতি সর্বনিম্ন ফিতরা ১১০ টাকা, সর্বোচ্চ ২৮০৫

এবার জনপ্রতি সর্বনিম্ন ফিতরা ১১০ টাকা, সর্বোচ্চ ২৮০৫
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররমের সভাকক্ষে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে জাতীয় সাদাকাতুল ফিতর নির্ধারণ কমিটির সভা হয়। ছবি: ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় সাদাকাতুল ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সভাপতি ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা মুফতি আবদুল মালেক।

হিজরি ​১৪৪৬ সালের সাদাকাতুল ফিতরের হার জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১১০ টাকা এবং সর্বোচ্চ দুই হাজার ৮০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররমের সভাকক্ষে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে জাতীয় সাদাকাতুল ফিতর নির্ধারণ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় সাদাকাতুল ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সভাপতি ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা মুফতি আবদুল মালেক।

এতে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, ইসলামী শরিয়াহ মতে, আটা, যব, কিসমিস, খেজুর ও পনিরের মতো পণ্যগুলোর যেকোনো একটি দিয়ে ফিতরা প্রদান করা যাবে।

গম বা আটা দিয়ে ফিতরা আদায় করলে অর্ধ সা’ বা ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ১১০ টাকা প্রদান করতে হবে। যব দিয়ে আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ৫৩০ টাকা, খেজুর দিয়ে আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ২ হাজার ৩১০ টাকা, কিসমিস দিয়ে আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ১ হাজার ৯৮০ টাকা এবং পনির দিয়ে আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ২ হাজার ৮০৫ টাকা ফিতরা প্রদান করতে হবে।

দেশের সব বিভাগ থেকে সংগৃহীত আটা, যব, খেজুর, কিসমিস ও পনিরের বাজারমূল্যের ভিত্তিতে এ ফিতরা নির্ধারণ করা হয়। মুসলমানরা নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী উপর্যুক্ত পণ্যগুলোর যেকোনো একটি পণ্য বা এর বাজারমূল্য দিয়ে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতে পারবেন।

উপর্যুক্ত পণ্যগুলোর স্থানীয় খুচরা বাজার মূল্যের তারতম্য রয়েছে। সে অনুযায়ী স্থানীয় মূল্যে পরিশোধ করলেও সাদাকাতুল ফিতরা আদায় হবে।

আরও পড়ুন:
সর্বোচ্চ ফিতরা ২৯৭০, সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা
এবার জনপ্রতি সর্বোচ্চ ফিতরা ২৬৪০ টাকা, সর্বনিম্ন ১১৫
জনপ্রতি সর্বনিম্ন ফিতরা ৭৫ টাকা

মন্তব্য

রমজান উপলক্ষে জীবনের সর্বস্তরে সংযমের বার্তা প্রধান উপদেষ্টার

রমজান উপলক্ষে জীবনের সর্বস্তরে সংযমের বার্তা প্রধান উপদেষ্টার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: ইউএনবি
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘মহান আল্লাহ আমাদের জাতীয় জীবনে পবিত্র মাহে রমজানের শিক্ষা কার্যকর করার তাওফিক দান করুন। মাহে রমজান আমাদের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল শান্তি। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে ক্ষমা ও হেফাজত করুন, আমিন।’

পবিত্র রমজান উপলক্ষে জীবনের সর্বস্তরে সংযমের বার্তা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

রমজানকে সামনে রেখে শনিবার সন্ধ্যায় দেওয়া বাণীতে এ বার্তা দেন।

পবিত্র রমজান উপলক্ষে দেশবাসীসহ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর প্রতি আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়ে বাণীতে তিনি বলেন, ‌‘সিয়াম সাধনা ও সংযমের মাস মাহে রমজান আজ আমাদের মাঝে সমাগত। পবিত্র এ মাসে আত্মসংযমের মাধ্যমে আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটে। সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি, নৈকট্য লাভ ও ক্ষমা লাভের অপূর্ব সুযোগ হয়।

‘সিয়াম ধনী-গরিব সবার মাঝে পারস্পরিক সহমর্মিতা, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা পালন করে।’

তিনি বলেন, ‘আসুন, পবিত্র মাহে রমজানের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যাবতীয় ভোগবিলাস, হিংসা-বিদ্বেষ, উচ্ছৃঙ্খলতা ও সংঘাত পরিহার করি এবং জীবনের সর্বস্তরে পরিমিতিবোধ, ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শনের মাধ্যমে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করি। সিয়াম পালনের পাশাপাশি বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করি এবং ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকি।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘মহান আল্লাহ আমাদের জাতীয় জীবনে পবিত্র মাহে রমজানের শিক্ষা কার্যকর করার তাওফিক দান করুন। মাহে রমজান আমাদের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল শান্তি। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে ক্ষমা ও হেফাজত করুন, আমিন।’

আরও পড়ুন:
দলীয় নয়, অপরাধ বিবেচনায় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
রমজানজুড়ে ঝালকাঠিতে থাকবে ‌‘প্রশান্তি’
নতুন দল জনকল্যাণমুখী হবে, আশা উপদেষ্টা আসিফের
সেনাপ্রধান না বুঝে কিছু বলেননি: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সবসময় সজাগ-সতর্ক থাকার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

মন্তব্য

শিক্ষা
Shah Alam of Chandpur is selling Iftar Sams without profit

বিনা লাভে ইফতারসামগ্রী বিক্রি করছেন চাঁদপুরের শাহ আলম

বিনা লাভে ইফতারসামগ্রী বিক্রি করছেন চাঁদপুরের শাহ আলম রমজান উপলক্ষে ইফতারসামগ্রীর দাম কমিয়ে দিয়েছেন শাহ আলম (বামে)। ছবি: ইউএনবি
শাহ আলম বলেন, ‘নিজ বাড়ির পাশে কোনো লাভ ছাড়াই কেনা দামেই পবিত্র মাহে রমজানের আটটি ইফতারসামগ্রী বিক্রি করছি। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে মুড়ি, ছোলা, খেসারির ডাল, বেসন, চিড়া, চিনি, খেজুর ও সয়াবিন তেল।’

দেশে রমজান মাস এলে বাজারে হু হু করে বেড়ে যায় খাদ্যপণ্যের দাম। এমন বাস্তবতায় ভিন্ন চিত্র সামনে এনেছেন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের মুদি দোকানি শাহ আলম।

রমজান উপলক্ষে ইফতারসামগ্রীর দাম কমিয়ে দিয়েছেন শাহ আলম। লাভ ছাড়াই পণ্য বিক্রি করছেন তিনি।

ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মধ্য চরকুমিরা গ্রামে শাহ আলমের এ মুদি দোকান। পাশেই নিজ বাড়ি।

তিনি জানান, গেল দুই বছর রমজানে কেজিতে এক টাকা লাভে ইফতারসামগ্রী বিক্রয় করেন। অবশ্য এবারও কেজিতে এক টাকা লাভে উপজেলার ভাটিয়ালপুর এলাকায় তার নিজের অন্য একটি দোকানে ইফতারের ৮ রকমের পণ্যসামগ্রী বিক্রি করছেন তিনি। সেটা তার ভাই ও বোন দেখাশোনা করছেন। তবে আরেক দোকানে লাভ ছাড়াই বিক্রি করছেন পণ্য।

শাহ আলম বলেন, ‘নিজ বাড়ির পাশে কোনো লাভ ছাড়াই কেনা দামেই পবিত্র মাহে রমজানের আটটি ইফতারসামগ্রী বিক্রি করছি। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে মুড়ি, ছোলা, খেসারির ডাল, বেসন, চিড়া, চিনি, খেজুর ও সয়াবিন তেল।’

শাহ আলমের দোকানে মূল্য তালিকা সাঁটানো রয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও তার দোকান পরিদর্শন করেছেন।

এ দোকানি ইউএনবিকে বলেন, ‘বছরের ১১ মাসই তো ব্যবসা করি। এই মাসে কোনো ব্যবসা (লাভ) করব না। পাশে আমার আরেকটি মুদির দোকান রয়েছে। গরিব, মেহনতি মানুষের জন্য কিছু একটা করার জন্য এ বছর রমজানে ক্রয়মূল্যেই রোজাদারের জন্য আটটি খাদ্যপণ্যসামগ্রী বিক্রয় করার সিদ্বান্ত নিয়েছি। এখন থেকেই শুরু করছি এসব পণ্য বিক্রি।’

অন্যান্য বছর রমজানে মাসে প্রায় ১০ লাখ টাকা বিক্রয় হলেও এবার রমজান মাসে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মালামাল বিক্রয় করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ব্যবসায়ী শাহ আলম।

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার রমজানের মালপত্র বিক্রির অর্ডার পেয়েছি এ এলাকার লোকজন ও প্রবাসী ভাইদের কাছ থেকে।’

তার দোকান পরিদর্শন করে দেখা যায়, শাহ আলম, তার ভাতিজা সাকিবসহ (১৯) এসব পণ্য সামগ্রী প্যাক করছেন। দোকানে মালামালে পূর্ণ।

রমজানে দূরের বাজারে না গিয়ে বাড়ির পাশে শাহ আলমের মুদি দোকান থেকে ক্রয়মূল্যে ইফতারসামগ্রী কিনতে পেরে আশপাশের ক্রেতারা খুশি বলে জানান অটোচালক আরজু মিয়া (৪০), আইয়ুব আলী বেপারি (৫০), অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী আবদুল খালেক (৭৭), বেলায়েত হোসেন (৫০), ইলেকট্রিক মিস্ত্রি সাকিব বেপারি (১৮) ও আবুল বেপারি (৬০)।

তারা বলছেন, শাহ আলমের দোকান থেকে পণ্য ক্রয় করলে সুবিধা। দূরের বাজারে গিয়ে বিভিন্ন দোকানে দাম যাচাই-বাছাই করতে ঘুরতে হয় না।

শাহ আলম এসব পণ্য প্যাক করে মালামাল রিক্সা-ভ্যানে করে বাড়িতে বাড়িতে বাড়িতেও পাঠিয়ে দেন বলে জানান একজন গৃহিণী ও তার বাবা।

গেল দুই বছর ১ টাকা লাভে রমজানের পণ্য বিক্রয় করে ব্যাপক সাড়া পান শাহ আলম। গত বছর সরকার তাকে পুরস্কৃতও করে।

পাশের মুদি দোকানদার বেলায়েত হোসেন বেপারিসহ কয়েকজন শাহ আলমের এ উদ্যোগের প্রশংসা করেন।

এদিকে রমজান উপলক্ষে বিনা লাভে ক্রয়মূল্যে ইফতারসামগ্রী বিক্রয় করায় শাহ আলমকে অভিনন্দন জানিয়েছে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

সম্প্রতি তার দোকানে গিয়ে যেকোনো ব্যপারে শাহ আলমকে সহযোগিতার হাত বাড়ানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলার সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল ইমরান।

আরও পড়ুন:
রোজা: জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা শনিবার
সুন্দোরা বিউটির ভালোবাসা দিবসের বিশেষ ক্যাম্পেইন ‘গিফটস অব লাভ’
চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে গোলাগুলি: দুজন নিহত, একজন আহত
চেতনানাশক খাইয়ে সাতজনকে হত্যা করেন জাহাজের লস্কর: র‌্যাব 
ভোজ্যতেল, এলএনজি, সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনবে সরকার

মন্তব্য

p
উপরে