রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার কর্তৃত্ব হারালেন আলোচিত হেফাজত নেতা মামুনুল হক ও তার বড় ভাই মাহফুজুল হক। মাদ্রাসাটিতে অভিযান চালানোর পর এর দায়দায়িত্ব ওয়াকফ এস্টেটকে বুঝিয়ে দিয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসক।
মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে সোমবার বিকেল ৪টার দিকে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল আওয়াল।
এর আগে সকালে মাহফুজুল হক মাদ্রাসার দখল ছাড়ার পর বেলা ১১টার দিকে মাদ্রাসাটি ‘অবৈধ দখল মুক্ত’ করতে যায় ঢাকা জেলা প্রশাসন।
দুপুর ১২টার দিকে পুলিশের উপস্থিতিতে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে প্রশাসনের কর্মকর্তারা মাদ্রাসার ভেতরে প্রবেশ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল আওয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেই মাদ্রাসাটির সামনে আমরা দাঁড়িয়ে আছি সেটা একটি মসজিদ ও ওয়াকফ এস্টেট। এই ওয়াকফ এস্টেটে আগে বিভিন্ন ইস্যু ছিল। কোর্টে বিভিন্ন মামলা চলমান ছিল। মামলা চলমান থাকার সুবাদে একটি পক্ষ এটার দখলে ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই মাসে আমরা ওয়াকফ প্রশাসনের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে নির্দেশিত হয়েছি যে, এখানে যারা অবৈধ দখলদার আছে তাদের উচ্ছেদ করে মাদ্রাসাটি নির্বাচিত বৈধ কমিটির কাছে দখল হস্তান্তর করার জন্য। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখানে এসেছি।
‘আমাদের এখানে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার লোকজন আছেন। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকেরা এখানে আছেন। তাদের সহযোগিতায় নতুন যে কমিটি ওয়াকফ এস্টেট থেকে গঠন করা হয়েছে তাদের আমরা দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছি।’
আব্দুল আওয়াল জানান, মাদ্রাসাটির জন্য ওয়াকফ প্রশাসনের গড়ে দেয়া নতুন কমিটির সভাপতি করা হয়েছে আব্দুল রহিমকে।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু ওয়াকফ এস্টেট প্রশাসন কর্তৃক কমিটি গঠিত হয়েছে আমরা তার কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছি।’
মাদ্রাসায় অভিযান চালানোর সময় কোনো বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘অভিযান পরিচালনা করতে আমরা কোনো বাধার সম্মুখীন হইনি।
‘তবে প্রথমে আমরা যখন এখানে আসলাম তখন দেখলাম এখানে তালা মারা আছে, ভেতরে কোনো লোকজন পাইনি। যেহেতু সব জায়গায় তালা মারা ছিল তাই দখল ও হস্তান্তরের স্বার্থে তালা ভেঙে আমরা দায়িত্ব হস্তান্তর করেছি।’
মাদ্রাসার দখলে আগে যারা ছিলেন তার অধ্যক্ষ মাওলানা মাগফুল হক বলেছিলেন বেফাকের সভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হাসানের কাছে এ মাদ্রাসার দায়িত্ব হস্তান্তর করা হবে।
এ বিষয়ে কিছু জানেন কি না, এমন প্রশ্নে আওয়াল বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে কিছু জানি না। আমরা বাইরে একটা নোটিশ দেখেছিলাম, যাতে কারও স্বাক্ষরও নেই।’
নিজের অনুসারী শিক্ষক-ছাত্রদের নিয়ে সকালেই মাদ্রাসাটি ছেড়ে চলে যান মুহতামিম মাহফুজুল হক। পরে মাদ্রাসার প্রধান ফটকে তালা দিয়ে যান।
মাদ্রাসার চাবি সরকার স্বীকৃত ইসলামি শিক্ষা বোর্ড আল হাইআতুল উলয়ার (বেফাক) চেয়ারম্যান মাওলানা মাহমুদুল হাসানের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হবে বলেও জানান মাহফুজুল।
তখন তিনি বলেন, ‘মাহমুদুল হাসান সাহেব অন্যান্য শীর্ষ আলেমদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত একটি কল্যাণকর এবং সুন্দর একটা সমাধান আমাদেরকে দেবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি।’
মাহফুজুল হকের সঙ্গে অন্য শিক্ষকদেরও মাদ্রাসা ছাড়ার কারণ জানতে চাইলে জামিয়া রহমানিয়ার শিক্ষক মাওলানা নুরুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আমাদের অধ্যক্ষের অধীনে সেখানে থাকি। কোনো প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে উনাকে জিজ্ঞেস করুন।’
জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসার আরেক শিক্ষক মাওলানা আনিসুর রহমান বলেন, ‘মাদ্রাসার চাবি হস্তান্তর করতে বলা হয়েছে। তাহলে তো সবাইকে বের হতে হবে। না হলে তালা মারবে কীভাবে। তাহলে কি শিক্ষকরা ভেতরে আটকা থাকবে?’
এর আগে সকাল পৌনে ৯টার দিকে মাদ্রাসা থেকে ফেসবুক লাইভে আসেন মাহফুজুল হক। মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বিভিন্নভাবে কথা আসছে, আমাদের এ প্রতিষ্ঠান ছাড়তে হবে। এ ভবন আমাদের ছাড়তে হবে। আমরা লক্ষ করছিলাম। আমাদের কাছে নিয়মতান্ত্রিকভাবে কোনো নোটিশ আসেনি। আমাদের দেশের শীর্ষ আলেমরা এ বিষয়টি নিয়ে কোনো পরামর্শও করছেন না।’
মাহফুজুলের ভাই মামুনুল হক নিজেও এই মাদ্রাসার শিক্ষক। নেতৃত্বে পরিবর্তন আসলেও তাকে মাদ্রাসা থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে কি না, সেটি নিশ্চিত করেননি তিনি।
মাহফুজুল হক বলেন, ‘মাওলানা মামুনুল হক এখানকার শিক্ষক। তিনি তো এখন ভেতরে (জেলে)। উনি বাইরে থাকলে বলতে পারতাম। এটা উনার বিষয়, তিনি থাকবেন কি থাকবেন না।’
মাদ্রাসা ছাড়ার আগে ফেসবুক লাইভে আসেন মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাহফুজুল হক
সেই মাদ্রাসা সেভাবে মাহফুজুল-মামুনুল পরিবারের দখলে
মামুনুল ও মাহফুজুলের বাবা আজিজুল হক মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এরপর অধ্যক্ষ হয়েই জড়িয়ে পড়েন অনিয়মে, যে কারণে ১৯৯৯ সালে তিনি প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কৃত হন।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জামিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও অধ্যক্ষ হওয়ার পর আজিজুল হক সেই নিয়ম ভাঙতে শুরু করেন। রাজনৈতিক সংগঠন খেলাফত মজলিসের আমির হওয়ার সুবাদে বিএনপি সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন। এরপর নানান অভিযোগে ১৯৯৯ সালে মাদ্রাসা থেকে তাকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হয়।
তবে ২০০১ সালের ৩ নভেম্বর স্থানীয় বিএনপি ও পুলিশের সহায়তায় আজিজুল হকের পরিবারের সদস্যরা মাদ্রাসাটি দখল করেন। হামলায় নেতৃত্ব দেন মামুনুল হক ও তার ভাই মাহফুজুল হক। চারদলীয় জোটের এমপি ও আজিজুল হকের এক মেয়ের ভাশুর মুফতি শহীদুল ইসলামও ছিলেন তাদের সঙ্গে।
মাদ্রাসা দখলের পর এর প্রতিষ্ঠাতা ও সরকার অনুমোদিত পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের বিতাড়িত করা হয়। অনুমোদনহীন পারিবারিক কমিটির মাধ্যমে শুরু হয় একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ।
অন্যদিকে, প্রকৃত পরিচালনা কমিটির সদস্যরা বিতাড়িত হওয়ার পর মূল মাদ্রাসার কয়েক শ গজ দূরে একই নামে আরেকটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেন মূল জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে বিতাড়িত অধ্যক্ষ মাওলানা হিফজুর রহমান। নতুন ওই মাদ্রাসার কার্যক্রম এখনও চলমান।
আদালতের নির্দেশনাও উপেক্ষিত
২০০১ সালের অক্টোবরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার এক মাসের মধ্যে আজিজুল হক মোহাম্মদপুরের মাদ্রাসা দখলের পর আবদুল মালেককে প্রধান করে ৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি করেন।
সেই কমিটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা করে বিতাড়িত পরিচালনা কমিটি। ঢাকা জেলা জজ আদালতের সেই মামলার (নম্বর ৪১০/২০০১) রায় বিতাড়িত কমিটির বিপক্ষে যায়। আজিজুল হকের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে গেলে ২০১২ সালে হাইকোর্টও বিতাড়িত কমিটির বিপক্ষে রায় দেয়। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল ২০১৪ সালে আপিল বিভাগেও খারিজ হয়।
এর মধ্যে ২০১২ সালের আগস্টে আজিজুল হক মারা যান। তবে তার মৃত্যুর পর ছেলেদের নিয়ন্ত্রণেই চলছে মোহাম্মদপুরের মাদ্রাসাটি।
আদালতে মামলার মধ্যেই ২০০৩ সালে ওয়াকফ প্রশাসন থেকে নিবন্ধন পেয়ে ২০০৬ সালে ২১ সদস্যের নতুন কমিটি গঠন করে মাদ্রাসার বিতাড়িত কমিটি। নতুন কমিটির সভাপতি আহমদ ফজলুর রহমান জমির বৈধ কাগজের ভিত্তিতে আজিজুল হকের অবৈধ কমিটিকে উচ্ছেদ করে তাদের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে ওয়াকফ প্রশাসনে আবেদন করেন।
এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে মাদ্রাসার অবৈধ কমিটিকে উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দেয় ওয়াকফ প্রশাসন। পরে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০০৮ ও ২০০৯ সালে দুইবার জেলা প্রশাসন থেকে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হলেও তারা উচ্ছেদের কোনো পদক্ষেপ নেননি। ওয়াকফ কমিশনের এই আদেশের বিরুদ্ধেও উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেছিলেন আজিজুল হক, তবে সেটিও খারিজ হয়।
আইনি এসব লড়াইয়ের বেশ কিছু নথি পেয়েছে নিউজবাংলা। ২০০৮ ও ২০০৯ সালে মাদ্রাসাটি দখলমুক্ত করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মকবুল হোসেন ও মো. কামরুজ্জামানকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তাদের বর্তমান অবস্থান চিহ্নিত করতে পারেনি নিউজবাংলা, ফলে এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।
আরও পড়ুন:বৃষ্টির মৌসুম শুরু হতেই ঢাকার বায়ুমানে উন্নতি লক্ষ করা যাচ্ছে। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গত কয়েকদিনের মতো আজও ঢাকার বাতাস যেকোনো প্রকার অস্বাস্থ্যকর শ্রেণি থেকে বেশ দূরে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকাল দশটার দিকে ঢাকার বাতাসের একিউআই স্কোর ছিল ৭৯, একিউআই সূচকে যা ‘মাঝারি’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ।
সাধারণত বায়ুদূষণের সূচক (এইকিআই) শূন্য থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে তা ‘ভালো’ শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। তারপর থেকে ১০০ পর্যন্ত একিউআই স্কোর ‘মাঝারি’।
এই সময়ে ভারতের রাজধানী দিল্লির বায়ুমানও ‘মাঝারি’ শ্রেণিতে ছিল, তবে তা ঢাকার চেয়ে কিছুটা খারাপ ছিল। দিল্লির বাতাসের সূচক ছিল তখন ৯০ এবং দূষণে শীর্ষ শহরগুলোর তালিকায় অবস্থান ছিল ১৭তম।
তবে অবশেষে আজ দূষিত বাতাসের শহরগুলোর তালিকার শীর্ষ পাঁচ থেকে বের হতে সক্ষম হয়েছে পাকিস্তানের লাহোর। একই সময়ে ১২৪ স্কোর নিয়ে তালিকার অষ্টম স্থানে অবস্থান করছিল শহরটি। বেশ কিছুদিন পর আজ সকালে লাহোরের বায়ুমানে এত উন্নতি হয়েছে। সাধারণত ১৫০-এর নিচে নামে না লাহোরের একিউআই স্কোর।
আজ সবচেয়ে দূষিত শহর ছিল চিলির সান্তিয়াগো। শহরটির সূচক ছিল ১৬২। ১৬০, ১৫৬ ও ১৫৪ স্কোর নিয়ে তার পরের তিন শহর ছিল উগান্ডার কাম্পালা, বাহরাইনের মানামা ও কঙ্গোর কিনশাসা। শীর্ষ চার শহরের বায়ুমানই ছিল ‘অস্বাস্থ্যকর’। পঞ্চম স্থানে থাকা মিসরের কায়রোর বাতাসের স্কোর ছিল এই সময় ১৩২, অর্থাৎ ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’।
কণা দূষণের এই সূচক ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। আর ১৫১ থেকে ২০০ হলে ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়। জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে ৩০০-এর বেশি যেকোনো সূচক।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আজ থেকে ঢাকায় শুরু হচ্ছে পাঁচ দিনব্যাপী পার্বত্য ফল উৎসব ও মেলা।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র মেলার সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকছে।
আজ বিকেলে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা।
রাজধানীর বেইলি রোডে পার্বত্য কমপ্লেক্সে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন পাহাড়ি সংস্থা পাহাড়ি ফলমূল নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছেন।
মেলা উপলক্ষে ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান- বিজয় সরণি, সার্ক ফোয়ারা, রমনা পার্ক, বেইলি রোডের পশ্চিম পাশে রমনা পার্ক সংলগ্ন ও পূর্ব পাশে অফিসার্স ক্লাব সংলগ্ন, টিএসসি ও দোয়েল চত্বরে পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স-এর সম্মুখে একটি বেলুন স্থাপন করা হয়েছে।
রাজধানীর ৩৩ বেইলি রোডে অবস্থিত পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রতিদিন এই মেলা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৩৮৪১.৩৮ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করলো ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন পরিচালনা কমিটির ৭ম (সপ্তম) কর্পোরেশন সভা
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৩৮৪১.৩৮ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করলো ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরিচালনা কমিটির ৭ম (সপ্তম) কর্পোরেশন সভা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এর প্রশাসক জনাব মো. শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর সংস্থার প্রতিনিধির সমন্বয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন পরিচালনা কমিটির ২৫ (পঁচিশ) জন সদস্য আজ সোমবার নগর ভবনে উপর্যুক্ত সভায় অংশগ্রহণ করেন।
সভার শুরুতে ০৫ মে ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ কর্পোরেশনের সভার কার্য বিবরণী দৃঢ়ীকরণ এবং বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হয়। পরবর্তীতে সভার আলোচ্য সূচি অনুযায়ী আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা (অতি. দা.) জনাব আলী মনসুর। পরবর্তীতে, পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দ বাজেট আলোচনায় অংশগ্রহণ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৩৮৪১.৩৮ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন প্রদান করেন।
বাজেট আলোচনায় অংশগ্রহণ ও অনুমোদন প্রদান করায় পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এর প্রশাসক বলেন, “ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বাজেট কেবল গাণিতিক সংখ্যা নয়। এই বাজেট আমাদের কাছে সম্মানীত করদাতাদের আমানত। এই বাজেট সফলভাবে প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উপর নির্ভর করছে আমাদের সবার প্রিয় এই নগরীর ব্যবস্থাপনা এবং আমাদের দৈনন্দিন নাগরিক সমস্যার সমাধান।”
সভায় ১৯৯৮ সাল থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বসবাসকারী নগরবাসীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও মাতৃত্বকালীন বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী ‘আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারী প্রকল্প-২ পর্যায়’ শীর্ষক প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং বিদ্যমান প্রকল্পের আওতায় সেবা প্রদানকারী এনজিওসমূহের মধ্যে সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
পরবর্তীতে, অর্থ বিভাগের পরিপত্র অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োজিত সাময়িক শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৬০০/- (ছয় শত) টাকা হতে ৮০০/- (আট শত) টাকা পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া, মন্ত্রীপাড়ায় অবস্থিত অস্থায়ী মসজিদটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক একটি তিনতলাবিশিষ্ট নান্দনিক মসজিদে রূপান্তরের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।
সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. জিল্লুর রহমান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সচিব জনাব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলামসহ সকল বিভাগীয়গণ উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর মতিঝিলে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ব্যবসায়ীর ৩০ লক্ষ টাকা ডাকাতির ঘটনায় তিন ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপি’র মতিঝিল থানা পুলিশ। এ সময় ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত হাইয়েস গাড়ি ও নগদ ৮৯ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মো. শামিম রহমান (২৯), মো. মিজান রহমান (৫১) ও রবিউল ইসলাম জুয়েল (৪২)।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৭-২৯ জুন ঢাকা ও ঝালকাঠিতে পৃথক অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারের সময় শামিমের হেফাজতে থাকা ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত হাইয়েস গাড়ি, মিজানের কাছ থেকে নগদ ৮০ হাজার টাকা ও জুয়েলের কাছ থেকে নয় হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
ডিএমপি’র মতিঝিল থানা সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ জুন রাজধানীর ওয়ারীর নবাবপুরের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মো. খলিল মিয়া (২৬) ও ইব্রাহীম হোসেন রিফাত (২৪) নামের দুই ব্যক্তি নগদ ৩০ লক্ষ টাকা মতিঝিল সিটি ব্যাংক শাখায় জমা দেওয়ার জন্য একটি স্কুটিতে করে রওয়ানা দেন।
দুপুর পৌনে ১টার দিকে মতিঝিলের ঘরোয়া হোটেলের সামনে পৌঁছা মাত্রই ৬/৭ জনের একটি দল নিজেদের ডিবি পরিচয়ে তাদেরকে ডিবি লেখা একটি হাইয়েস মাইক্রোবাসে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে যায়।
পরে দুজনকে মারধর করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ৩০ লক্ষ টাকা নিয়ে হাত-পা বেঁধে সাইনবোর্ড বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি ময়লার ডাস্টবিনে ফেলে পালিয়ে যান।
স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে প্রথমে সাইনবোর্ডের প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির মালিক সাইদুল ইসলামের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডিএমপি’র মতিঝিল থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু হয়।
থানা সূত্রে আরও জানা যায়, গ্রেফতারকৃত মিজানের নামে ঝালকাঠির রাজাপুর ও নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার থানায় আরো দুটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও লুন্ঠন হওয়া অন্যান্য টাকা উদ্ধারসহ আত্মগোপনে থাকা ডাকাতদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
রাজধানীর হাজারীবাগের একটি বাসায় পানির ট্যাংক পরিষ্কারের সময় বিস্ফোরণে দুই শিশুসহ একই পরিবারের চারজন দগ্ধ হয়েছেন।
শনিবার (২৮ জুন) সন্ধ্যায় হাজারীবাগের জিগাতলা ট্যানারি মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। দগ্ধদের উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে স্থানান্তর করা হয়।
আহতরা হলেন- মো. জিয়াউর রহমান (৪৫) ও তার দুই মেয়ে ফারিয়া (৮) ও রাইফা (৪) এবং ট্যাংক পরিষ্কারের কাজে নিয়োজিত শ্রমিক বেলাল হোসেন (২৮)।
আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া শাহপরান জানান, চাচার বাসায় বেলাল হোসেন নামের এক শ্রমিক ট্যাংক পরিষ্কার করছিলেন, এ সময় চাচা জিয়াউর রহমান ট্যাংকে পর্যাপ্ত আলো না থাকায় একটি বৈদ্যুতিক বাল্ব চালু করার পরই এ বিস্ফোরণ ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে, ট্যাংকের ভেতরে জমে থাকা গ্যাস থেকে এমনটা হয়েছে।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের রেসিডেন্ট সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান বলেন, ‘বেলাল হোসেনের শরীরের ১৭ শতাংশ, জিয়াউর রহমানের ৪ শতাংশ, ফারিয়ার ৫ শতাংশ এবং রাইফার ৬ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।’
বর্তমানে তারা সবাই শঙ্কামুক্ত এবং জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
রাজধানীর উত্তরা এলাকায় দ্রুতগামী ট্রাকের ধাক্কায় একই পরিবারের তিন সদস্য নিহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন, আহসানুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী অমিত (২৩), তার আত্মীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী নাইমুল হক (৩২) এবং জাবেদ আলম খান (৫৫)।
উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম মোস্তফা জানান, শনিবার (২৯ জুন) দিবাগত রাত ২টার দিকে উত্তরা পূর্ব থানাধীন আজমপুর মোড়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন তারা। এ সময় ময়মনসিংহ থেকে আসা পাথরবোঝাই একটি ট্রাক তাদের চাপা দেয়।
এতে ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হন বলে জানান তিনি। ওসি বলেন, অপরজনকে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানেই মারা যান।
তিনি আরও জানান, মরদেহগুলো শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য।
নিহতরা কাছাকাছি একটি হাসপাতালে রোগী দেখতে গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে এবং এর চালক রাকিবুল ইসলামকে (৪২) আটক করা হয়েছে বলে জানান ওসি।
রাজধানীর উত্তরায় ‘মব’ সৃষ্টি করে ‘হোটেল মিলিনা’ নামের একটি আবাসিক হোটেল দখলের চেষ্টা করা হয়। এমন অভিযোগে ৯ জনকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১)।
রোববার র্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, শনিবার দুপুরে শফিক মোল্লা নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে হোটেল মিলিনিার মালিক আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে পূর্বের ব্যবসায়িক সূত্র ধরে ‘মব’ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। সেসময় ১০টি মোটরসাইকেলে করে কমপক্ষে ২৪ জন জোরপূর্বক হোটেলটি দখল করতে যায়।
এ সময় দূর থেকে ওই ঘটনার কিছু ছবি ধারণ করেন র্যাব-১ এর এক গোয়েন্দা সদস্য। ছবি ধারণের সময় ‘মব’ সৃষ্টিকারীরা র্যাব সদস্যদের ঘেরাও করে এবং ছবি তুলতে বাধা দেয়। এ ঘটনার পর র্যাব-১ এবং উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশের টহল দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ‘মব’ নিয়ন্ত্রণ করে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজে বাধা দেওয়া এবং ‘মব’ সৃষ্টির অভিযোগে ঘটনাস্থল থেকে মোট ৯ জনকে আটক করা হয়। তারা হলেন, মো. সাজ্জাদ হোসেন (২৮), মো. শফিক মোল্লা (৩০), মো. আরিফুল ইসলাম (৩০), মো. তন্ময় হোসেন শাওন (২৭), মো. রবিউল ইসলাম (২৫), মো. আনোয়ার হোসেন আশিক (২৭), মো. সাইফুল ইসলাম সাগর (২৭), মো. জালাল খান (৩০) ও মো. আমির (২১)।
আটকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
মন্তব্য