নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান শাখার এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে বিনা মূল্যে পড়াচ্ছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া সায়েন্স একাডেমির সহায়তায় দেশব্যাপী অনলাইনে এ কার্যক্রম চালাচ্ছে দেশের নামকরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের ১০০ নেতা-কর্মীর একটি দল।
গত অক্টোবরে শুরু হওয়া এ শিক্ষা-সহায়তা কার্যক্রম সমন্বয় করছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের উপ-বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক খন্দকার হাবীব আহসান।
তিনি জানিয়েছেন, তাদের এই উদ্যোগে প্রতিদিনই নতুন নতুন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক যুক্ত হচ্ছেন। করোনার এই দুর্যোগে এমন উদ্যোগে যুক্ত হতে পেরে তারা উভয় পক্ষই খুশি।
খন্দকার হাবীব আহসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষা, শান্তি, প্রগতির এই সংগঠন নিয়ে গর্বের অনেক কিছুই থাকলেও নেতিবাচক কথাবার্তাই বেশি হয়। আমি চাইছিলাম এই অপপ্রচার বন্ধ করে ইতিবাচক কিছু করতে। করোনার এই দুর্যোগ আমাকে সেই সুযোগ দিয়েছে। বিনা মূল্যে সারা দেশের নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীদের দিয়ে পড়াতে পারছি। যারা পড়াচ্ছেন সবাই ছাত্রলীগের।’
তিনি জানান, গত বছরের অক্টোবর মাসে ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া সায়েন্স একাডেমির সহায়তায় ১৫ জন অসচ্ছল শিক্ষার্থীকে নিয়ে বিনা মূল্যের এই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এ বছরে করোনা সংক্রমণ বাড়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সময় বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন উদ্যমে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখন সব মিলিয়ে এ কার্যক্রমে রেজিস্ট্রেশনকৃত নিয়মিত শিক্ষার্থী ১ হাজার ৬৮ জন। যাদের ১০০ জনের শিক্ষক প্যানেলের মধ্যে অন্তত ৬৩ জন শিক্ষক নিয়মিত পড়াচ্ছেন। রেজিস্ট্রেশন চলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলা পর্যন্ত। করোনা সংক্রমণ কমে গেলেও ছাত্রলীগের বিনা মূল্যের এই শিক্ষা-সহায়তা চলবে।
উপ-বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক হাবীব বলেন, ‘অতি স্বল্প সময়ে আমাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে তিন-চারটি ব্যাচে ৮০-১০০ জন শিক্ষার্থী নতুন করে সহায়তাটি নিতে যুক্ত হচ্ছেন।
‘প্রত্যেক শিক্ষক ১৫-২০ জনের একেকটি গ্রুপকে সপ্তাহে ন্যূনতম দুই দিন পদার্থ, রসায়ন, গণিত, জীববিজ্ঞান, আইসিটি, ইংরেজি বিষয়ে জুম এবং গুগল মিটের মাধ্যমে ক্লাস নিচ্ছেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি স্বেচ্ছেসেবী কার্যক্রম।’
তিনি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, কুয়েট, রুয়েট, চুয়েট, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ, রাঙ্গামাটি মেডিক্যাল কলেজ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিনা মূল্যে এই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। রাশিয়া-কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাও এই কাজে যুক্ত আছেন। দেশের আটটি বিভাগেরই সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীরা তাদের কাছে পড়ছেন।
সহায়তা কার্যক্রমটি পেতে বা কার্যক্রমটির সঙ্গে যুক্ত হতে যোগাযোগ করতে হবে ০১৭৪০০০০০৭৫ বা ০১৯৭১৪৮৫২৬৬ নম্বরে। অথবা Fb/DrMAW azedMiahSA ফেসবুক পেজ এবং [email protected] ই-মেইল ঠিকানার মাধ্যমেও এতে যুক্ত হওয়া যাবে।
খন্দকার হাবীব আহসান বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থায় বাণিজ্য প্রতিরোধ করতে স্কুল-কলেজের বাইরে শিক্ষা বিনিময়ের মাধ্যমটি বাণিজ্যিক কোচিংনির্ভর না হয়ে স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম হোক, এটাও প্রত্যাশা। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এ দেশের যেকোনো সংকটে আগের মতো সময়োপযোগী কাজ করে সংকট মোকাবিলা করবে, এটাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক শিক্ষা, এটাই দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশনা।’
বিনা মূল্যের এই অনলাইন ক্লাস করছেন রাজধানীর নটর ডেম কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিফুর রহমান।
এক প্রশ্নের জবাবে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি দুই-তিন মাস আগে এক বন্ধুর মাধ্যমেই এই ক্লাসের খবর পাই। তারপর থেকে জুম বা গুগল মিটে এই ক্লাস করছি। বায়োলজি, কেমেস্ট্রির যেকোনো সমস্যার সমাধান পাওয়া যাচ্ছে। বন্ধুবান্ধব মিলে আমরা এক ব্যাচে ১০ জন পড়ছি। শিক্ষকরা খুবই আন্তরিক। মেসেঞ্জারে নক করেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়।’
আরিফুর রহমান বলেন, ‘এই করোনার মধ্যে এমনিতেই কোথাও বের হওয়া যাচ্ছে না। স্যার পাওয়া যাচ্ছে না। সেখানে বিনা মূল্যে অনলাইনে এমন সুবিধা দিচ্ছে ছাত্রলীগ। আমি আমার কঠিন দুটি সাবজেক্ট ঘরে বসেই শিখতে পারছি, টাকাও লাগছে না।’
রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন জেলার শিক্ষার্থীরা যুক্ত হয়েছেন ছাত্রলীগের এই উদ্যোগে। তাদের একজন সাতক্ষীরার শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. কবিবুর রহমান।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ফেসবুকের ফ্রেন্ডলিস্টে সাতক্ষীরা ছাত্রলীগের কিছু বড় ভাই আছেন। দেখতাম মাঝেমধ্যে তারা এই লিংক শেয়ার করতেন। এখানে বিনা মূল্যে পড়ার জন্য তারা উৎসাহ দিতেন। তাদের উৎসাহেই এই লিংকে ঢুকে বিষয়টা ভালো মনে হয়। পরে অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হই। সব শিক্ষকই খুবই আন্তরিকতা নিয়ে ক্লাস করান। শিক্ষকের বাসায় গিয়ে পড়ায় যে সন্তুষ্টি আসে, এই অনলাইন ক্লাসে তার ১০০ ভাগ পূরণ না হলেও আমার যা প্রয়োজন তা মিটছে। আমি এখানে মূলত ম্যাথ আর ফিজিক্স পড়ি।’
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এই উদ্যোগে সাড়া দিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মো. রাজন হোসেন।
এ কাজে যুক্ত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ফজলুল হক হলের এই ছাত্রলীগ কর্মী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার সময় এমনিতেই কোনো কাজ নেই। ঘরে বসেই থাকি। ঘরে বসেই কিছু একটা করার প্ল্যাটফর্ম খুঁজছিলাম। এর মধ্যে ছাত্রলীগের বড় ভাইরা আমাকে অফার করে এখানে যুক্ত হওয়ার।
‘বিষয়টা শুনেই আমার ভালো লাগে। আমি এর সঙ্গে যুক্ত হই। এতে আমার কোনো প্রেশার পড়ে না। কারণ, আমি যখন ফ্রি থাকি, তখনই আমার ব্যাচ দেয়। সপ্তাহে দু-তিন দিন ক্লাস নেই। এক ব্যাচে ১৫-২০ জন থাকে। আমি মূলত ফিজিক্স-কেমেস্ট্রি পড়াই।’
ছাত্রলীগের বিনা মূল্যের এই শিক্ষা-সহায়তায় যুক্ত আরও একজনের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা।
এখানে ক্লাস নেয়ার আগ্রহের কারণ জানতে চাইলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এইচ এম আজরাফ নাজমী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগের ঢাকা মেডিক্যাল শাখার একজন কর্মী। মানুষ সব সময় ছাত্রলীগকে নেতিবাচক মনে করে। অনেক দিন ধরেই ছাত্রলীগকে নিয়ে ইতিবাচক কিছু একটা করার ইচ্ছা ছিল। করোনার এই সময়ে ছাত্রলীগের বড় ভাইরা যখন এ রকম একটা উদ্যোগ নেন, তখন আর বসে থাকলাম না।’
তিনি বলেন, ‘আমি সপ্তাহে দুই দিন শনি আর বুধবার সন্ধ্যায় ক্লাস নিই। কারণ, ওই সময় আমি ফ্রি থাকি; শিক্ষার্থীরাও পড়তে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। আমার প্রত্যেক ব্যাচে ১৫-১৮ জন থাকে, তাদের মূলত বায়োলজি ও কেমেস্ট্রি পড়াই।’
আরও পড়ুন:দাবদাহ আর বৃষ্টিহীনতায় পুড়ছে মাদারীপুরের পাটক্ষেত। বৈশাখের তপ্ত রোদে পাটক্ষেত নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। পাটের জমিতে ঘন ঘন সেচ দেয়ায় যেমন উৎপাদন খরচ বাড়ছে, তেমনি খরায় জমির আগাছা পরিষ্কার করতে পারছেন না কৃষকরা।
এমনটা চলতে থাকলে উৎপাদন অনেকটা হুমকির মুখে পড়বে বলেও আশঙ্কা কৃষকদের।
সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের মধ্যচক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিনের তীব্র দাবদাহে পাট গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। ক্ষেতেই মরে যাচ্ছে পাট গাছ। কোথাও শুকিয়ে মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। ফলে ঘন ঘন সেচ দিয়েও গাছের আশানুরূপ পরিবর্তন আনতে পারছেন না।
অনাবৃষ্টির কারণে পাট গাছের বৃদ্ধি না হওয়ায় জমিতে আগাছার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্বিগুণ হারে।
কৃষকরা জানান, এবার প্রতি বিঘা পাট চাষ করতে খরচ হয়েছে ১৯ হাজার ৫০০ টাকার মতো। যা গতবারের চেয়ে অন্তত দুই হাজার বেশি। এরপরে গাছ শুকিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য সেচ দিচ্ছেন তারা। ফলে আরও বাড়তে পারে উৎপাদন ব্যয়।
খোয়াজপুরের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কয়েকদিনের প্রচণ্ড গরমে মাঠ ফেটে চৌচির। পাটগাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। একটুখানি বড় হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন চললে এবার পাট আবাদ ধসে পড়বে। অনেকেই সেচ দিলেও এক দুই দিন পরে আবার শুকিয়ে যায়। এতে মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে উঠছে।’
আর মাদারীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এবার ৩৭ হাজার ৪০২ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এরই মধ্যে অধিকাংশ জমিতে বপন কাজ শেষ হয়েছে এবং অনেক স্থানে চারা বড় হয়ে গেছে, কিন্তু রোগের কারণে পাটের ক্ষতি হওয়ায় চাষিদের বিকেলে পানি সেচ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক আবদুল মতিন বিশ্বাস বলেন, ‘এই গরমে পাটের কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই, তবে কৃষকদের বলছি, যেন বিকেলে সেচের মাধ্যমে পাট গাছ জীবিত রাখে। এতে গাছ মরবে না।’
মাদারীপুর জেলায় অন্যতম অর্থকরী ফসল হিসেবে পাটের অবস্থান শীর্ষে। গত বছর পাটের মূল্য ভাল পাওয়ায় কৃষকরাও এবার বেশি জমিতে পাট চাষ করেছেন।
আরও পড়ুন:রাজধানীর খিলগাঁওয়ের গোড়ানে খেলতে গিয়ে একটি ভবনের ছাদ থেকে পড়ে এক শিশু নিহত হয়েছে।
শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে পাঁচ তলা ভবনটির ছাদ থেকে পড়ে নিহত হয় সে।
নিহত শিশুর নাম খাদিজা আক্তার (৫)। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শিশুটির ফুফা মোহাম্মদ ইসহাক মিয়া (২০ বছর)।
খাদিজার বাবা মোহাম্মদ ফয়সাল আহমাদ জানান, দুপুরে পাঁচ তলার ছাদে খাদিজা খেলাধুলা করার সময় ছাদ থেকে নিচে পড়ে যায়। এ সময় খাদিজার ফুফা দৌড়ে ধরতে গেলে তিনিও নিচে পড়ে যান।
তিনি জানান, পরে তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খাদিজা রাত সাড়ে ৮টার দিকে মারা যায় এবং ফারিয়ার ফুফাকে ভর্তি রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া থানা এলাকায়। খিলগাঁওয়ের গোড়ান নবাবীর মোড় বতর্মানে১৪৮ /১ রায়হান সাহেবের বাড়ির ভাড়াটিয়া আমরা।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মহম্মদ বাচ্চু মিয়া বলেন, শিশুটির মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত ছাড়া স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে বলে খিলগাঁও থানার সাথে কথা হয়েছে।
তীব্র থেকে অতি তীব্র মাত্রায় পাবনা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। অসহনীয় দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত তিন-চার দিন তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও শুক্রবার চলতি মৌসুমে জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
এদিন পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যা জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত রবিবার (২১ এপ্রিল) ঈশ্বরদীতে প্রথমবার ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন জানান, জেলার তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অতি তীব্র তাপদাহে পাবনার মানুষের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে কৃষক, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ইটভাটার শ্রমিকসহ দিনমজুরদের জন্য অসহ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়াও তীব্র গরমে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ।
গাইবান্ধায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন আশরাফ আলী নামের এক রিকশাচালক। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলামকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার সুন্দরগঞ্জ-কুপতলা সড়কের ৭৫ নম্বর রেলগেট নামক এলাকায় এ ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ড ঘটে। পরে শুক্রবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে সাদেকুলকে কারাগারে পাঠানো হয়।
৫০ বছর বয়সী রিকশাচালক আশরাফ আলী সদর উপজেলার খোলাহাটী ইউনিয়নের সাহার ভিটার গ্রামের মৃত ফয়জার রহমানের ছেলে। অন্যদিকে ছিনতাই ও হত্যায় অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলাম কুপতলা ইউনিয়নের রামপ্রসাদ গ্রামের বাসিন্দা।
নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মাসুদ রানা।
ওসি জানান, প্রতিদিনের মতোই বৃহস্পতিবার রাতে রিকশা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন আশরাফ আলী। তিনি কুপতলা এলাকার ৭৫ নম্বর রেলগেটে পৌঁছালে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সাদেকুল ইসলাম তার পথ রোধ করে ছুরি ধরে রিকশা এবং চাবি কেড়ে নিয়ে তাকে চলে যেতে বলেন। আশরাফ আলী এতে রাজি না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে প্রথমে উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত সাদেকুল আশরাফ আলীর পেটে ছুরিকাঘাত করেন। পরে স্থানীয়রা তাকে চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি বলেন, ‘এ ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ওই রাতেই অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলামকে আটক করা হয়। একই সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে রিকশাটিও উদ্ধার করা হয়। পরে আজ (শুক্রবার) দুপুরে সাদেকুলকে একমাত্র আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। মামলায় আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুপুরেই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।’
দেশের বিভিন্ন স্থানে যেভাবে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকতে পারে। এর মধ্যে কোথাও কোথাও বৃষ্টিরও সম্ভাবনা রয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এতে বলা হয়, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা ও পাবনা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল, বগুড়া, বাগেরহাট, যশোর, কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগসহ ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়োহাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। আগামী পাঁচ দিনেও আবহাওয়াও প্রায় একই থাকতে পারে।
শুক্রবার দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়া ২০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশের কোথাও বৃষ্টি হয়নি বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড রোহিঙ্গা ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ ও থাই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক থেকে বেরিয়ে ব্যাংককে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি শুক্রবার এ কথা জানান। খবর বাসসের
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং থাই প্রধানমন্ত্রী শ্রেথা থাভিসিন রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এক সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’
দুপুরে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে গভর্নমেন্ট হাউজে উভয় নেতার মধ্যে অনুষ্ঠিত একান্ত বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এসব তথ্য জানান। সন্ধ্যায় ঢাকায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানানো হয়েছে।
ড. হাছান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী শ্রেথা থাভিসিনের মধ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথমে তারা একান্তে কথা বলেন, এরপর দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যাসহ বহু বিষয়ে সবিস্তারে আলোচনা করেছেন।
থাইল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশের যে ভ্রাতৃপ্রতিম ও বন্ধুপ্রতিম সম্পর্ক, সেটা আরও জোরদার, বহুমাত্রিক ও বিস্তৃত করার ব্যাপারে দুই প্রধানমন্ত্রী গভীর আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন, বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
দুদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এ সময় অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি সংক্রান্ত চুক্তি, জ্বালানি, পর্যটন ও শুল্ক সংক্রান্ত পারস্পরিক সহযোগিতা বিষয়ক তিনটি সমঝোতা স্মারক এবং মুক্ত বণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরুর জন্য একটি লেটার অভ ইন্টেন্ট স্বাক্ষরিত হয়।
দেশের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ব্যাংককে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবদুল হাই এবং থাইল্যান্ডের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. প্রাণপ্রী বাহিদ্ধা নুকারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি বর্ণনা করার পাশাপাশি বাংলাদেশের ১০০টি ইকোনমিক জোন ও আইটি ভিলেজে থাই বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা চাইলে প্রয়োজনে বাংলাদেশে তাদের জন্য বিশেষ ইকোনমিক জোন করার কথাও বলেছেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত হয়ে আসা প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছেন। তাদের জন্য বাংলাদেশে যেসব সমস্যা উদ্ভূত হচ্ছে বৈঠকে সে বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলেও জানান ড. হাছান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, থাইল্যান্ডেও অনেক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন, এখনো অনেকে আসছেন। থাইল্যান্ডও এই পালিয়ে আসা মানুষদের ভারে জর্জরিত। এই সমস্যা সমাধানে উভয় প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের একসাথে কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন।
এদিন গভর্নমেন্ট হাউজে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রদত্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অফ অনার প্রদানকালে থাই প্রধানমন্ত্রী সাথে ছিলেন। শেখ হাসিনা তার সৌজন্যে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর আয়োজিত রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজে যোগ দিয়ে বক্তব্য রাখেন।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার ব্যাংককে পৌঁছান। তিনি বৃহস্পতিবার ব্যাংককে জাতিসংঘ সম্মেলন কেন্দ্রে জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসকাপ) ৮০তম অধিবেশনে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী সেখানে দেওয়া ভাষণে সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান জানান।
সফর শেষে প্রধানমন্ত্রীর আগামী ২৯ এপ্রিল দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখায় প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগে শাখা ম্যানেজারসহ ৩ কর্মকর্তাকে আটকের পর কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আনোয়ার হোসেন সাগর। এদিন দুপুরে তাদের আদালতে প্রেরণ করে সাঁথিয়া থানা পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের জিআরও এএসআই মাহবুবুর রহমান জানান, বিকেলে সাঁথিয়া থানা থেকে এনে তাদের আদালতে তোলা হয়। এ সময় কেউ তাদের জন্য জামিন আবেদন করেননি। ফলে আদালত তাদের জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আটককৃতরা হলেন- অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখার ব্যবস্থাপক (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা হারুন বিন সালাম, সিনিয়র অফিসার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর এলাকার বাসিন্দা আবু জাফর এবং ক্যাশিয়ার বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত চক্রবর্তী।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী বিভাগীয় অফিস থেকে ৫ সদস্যবিশিষ্ট অডিট টিম কাশিনাথপুর শাখায় অডিটে আসে। দিনভর অডিট করে তারা ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা আর্থিক অনিয়ম পান। এ বিষয়ে সাঁথিয়া থানায় ওই শাখার ম্যানেজার (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) হারুন বিন সালাম, ক্যাশ অফিসার সুব্রত চক্রবর্তী ও সিনিয়র অফিসার আবু জাফরকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ দিলে পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে তাদের তিনজনকে আটক করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাঁথিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অডিটে অনিয়ম ধরা পড়লে তাদের আটক করে সাঁথিয়া থানা পুলিশকে খবর দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পুলিশ গিয়ে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। আজ (শুক্রবার) দুপুরে জিডির ভিত্তিতে আটককৃতদের আদালতে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে দুদক আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য