নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান শাখার এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে বিনা মূল্যে পড়াচ্ছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া সায়েন্স একাডেমির সহায়তায় দেশব্যাপী অনলাইনে এ কার্যক্রম চালাচ্ছে দেশের নামকরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের ১০০ নেতা-কর্মীর একটি দল।
গত অক্টোবরে শুরু হওয়া এ শিক্ষা-সহায়তা কার্যক্রম সমন্বয় করছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের উপ-বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক খন্দকার হাবীব আহসান।
তিনি জানিয়েছেন, তাদের এই উদ্যোগে প্রতিদিনই নতুন নতুন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক যুক্ত হচ্ছেন। করোনার এই দুর্যোগে এমন উদ্যোগে যুক্ত হতে পেরে তারা উভয় পক্ষই খুশি।
খন্দকার হাবীব আহসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষা, শান্তি, প্রগতির এই সংগঠন নিয়ে গর্বের অনেক কিছুই থাকলেও নেতিবাচক কথাবার্তাই বেশি হয়। আমি চাইছিলাম এই অপপ্রচার বন্ধ করে ইতিবাচক কিছু করতে। করোনার এই দুর্যোগ আমাকে সেই সুযোগ দিয়েছে। বিনা মূল্যে সারা দেশের নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীদের দিয়ে পড়াতে পারছি। যারা পড়াচ্ছেন সবাই ছাত্রলীগের।’
তিনি জানান, গত বছরের অক্টোবর মাসে ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া সায়েন্স একাডেমির সহায়তায় ১৫ জন অসচ্ছল শিক্ষার্থীকে নিয়ে বিনা মূল্যের এই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এ বছরে করোনা সংক্রমণ বাড়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সময় বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন উদ্যমে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখন সব মিলিয়ে এ কার্যক্রমে রেজিস্ট্রেশনকৃত নিয়মিত শিক্ষার্থী ১ হাজার ৬৮ জন। যাদের ১০০ জনের শিক্ষক প্যানেলের মধ্যে অন্তত ৬৩ জন শিক্ষক নিয়মিত পড়াচ্ছেন। রেজিস্ট্রেশন চলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলা পর্যন্ত। করোনা সংক্রমণ কমে গেলেও ছাত্রলীগের বিনা মূল্যের এই শিক্ষা-সহায়তা চলবে।
উপ-বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক হাবীব বলেন, ‘অতি স্বল্প সময়ে আমাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে তিন-চারটি ব্যাচে ৮০-১০০ জন শিক্ষার্থী নতুন করে সহায়তাটি নিতে যুক্ত হচ্ছেন।
‘প্রত্যেক শিক্ষক ১৫-২০ জনের একেকটি গ্রুপকে সপ্তাহে ন্যূনতম দুই দিন পদার্থ, রসায়ন, গণিত, জীববিজ্ঞান, আইসিটি, ইংরেজি বিষয়ে জুম এবং গুগল মিটের মাধ্যমে ক্লাস নিচ্ছেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি স্বেচ্ছেসেবী কার্যক্রম।’
তিনি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, কুয়েট, রুয়েট, চুয়েট, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ, রাঙ্গামাটি মেডিক্যাল কলেজ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিনা মূল্যে এই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। রাশিয়া-কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাও এই কাজে যুক্ত আছেন। দেশের আটটি বিভাগেরই সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীরা তাদের কাছে পড়ছেন।
সহায়তা কার্যক্রমটি পেতে বা কার্যক্রমটির সঙ্গে যুক্ত হতে যোগাযোগ করতে হবে ০১৭৪০০০০০৭৫ বা ০১৯৭১৪৮৫২৬৬ নম্বরে। অথবা Fb/DrMAW azedMiahSA ফেসবুক পেজ এবং [email protected] ই-মেইল ঠিকানার মাধ্যমেও এতে যুক্ত হওয়া যাবে।
খন্দকার হাবীব আহসান বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থায় বাণিজ্য প্রতিরোধ করতে স্কুল-কলেজের বাইরে শিক্ষা বিনিময়ের মাধ্যমটি বাণিজ্যিক কোচিংনির্ভর না হয়ে স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম হোক, এটাও প্রত্যাশা। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এ দেশের যেকোনো সংকটে আগের মতো সময়োপযোগী কাজ করে সংকট মোকাবিলা করবে, এটাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক শিক্ষা, এটাই দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশনা।’
বিনা মূল্যের এই অনলাইন ক্লাস করছেন রাজধানীর নটর ডেম কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিফুর রহমান।
এক প্রশ্নের জবাবে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি দুই-তিন মাস আগে এক বন্ধুর মাধ্যমেই এই ক্লাসের খবর পাই। তারপর থেকে জুম বা গুগল মিটে এই ক্লাস করছি। বায়োলজি, কেমেস্ট্রির যেকোনো সমস্যার সমাধান পাওয়া যাচ্ছে। বন্ধুবান্ধব মিলে আমরা এক ব্যাচে ১০ জন পড়ছি। শিক্ষকরা খুবই আন্তরিক। মেসেঞ্জারে নক করেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়।’
আরিফুর রহমান বলেন, ‘এই করোনার মধ্যে এমনিতেই কোথাও বের হওয়া যাচ্ছে না। স্যার পাওয়া যাচ্ছে না। সেখানে বিনা মূল্যে অনলাইনে এমন সুবিধা দিচ্ছে ছাত্রলীগ। আমি আমার কঠিন দুটি সাবজেক্ট ঘরে বসেই শিখতে পারছি, টাকাও লাগছে না।’
রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন জেলার শিক্ষার্থীরা যুক্ত হয়েছেন ছাত্রলীগের এই উদ্যোগে। তাদের একজন সাতক্ষীরার শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. কবিবুর রহমান।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ফেসবুকের ফ্রেন্ডলিস্টে সাতক্ষীরা ছাত্রলীগের কিছু বড় ভাই আছেন। দেখতাম মাঝেমধ্যে তারা এই লিংক শেয়ার করতেন। এখানে বিনা মূল্যে পড়ার জন্য তারা উৎসাহ দিতেন। তাদের উৎসাহেই এই লিংকে ঢুকে বিষয়টা ভালো মনে হয়। পরে অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হই। সব শিক্ষকই খুবই আন্তরিকতা নিয়ে ক্লাস করান। শিক্ষকের বাসায় গিয়ে পড়ায় যে সন্তুষ্টি আসে, এই অনলাইন ক্লাসে তার ১০০ ভাগ পূরণ না হলেও আমার যা প্রয়োজন তা মিটছে। আমি এখানে মূলত ম্যাথ আর ফিজিক্স পড়ি।’
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এই উদ্যোগে সাড়া দিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মো. রাজন হোসেন।
এ কাজে যুক্ত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ফজলুল হক হলের এই ছাত্রলীগ কর্মী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার সময় এমনিতেই কোনো কাজ নেই। ঘরে বসেই থাকি। ঘরে বসেই কিছু একটা করার প্ল্যাটফর্ম খুঁজছিলাম। এর মধ্যে ছাত্রলীগের বড় ভাইরা আমাকে অফার করে এখানে যুক্ত হওয়ার।
‘বিষয়টা শুনেই আমার ভালো লাগে। আমি এর সঙ্গে যুক্ত হই। এতে আমার কোনো প্রেশার পড়ে না। কারণ, আমি যখন ফ্রি থাকি, তখনই আমার ব্যাচ দেয়। সপ্তাহে দু-তিন দিন ক্লাস নেই। এক ব্যাচে ১৫-২০ জন থাকে। আমি মূলত ফিজিক্স-কেমেস্ট্রি পড়াই।’
ছাত্রলীগের বিনা মূল্যের এই শিক্ষা-সহায়তায় যুক্ত আরও একজনের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা।
এখানে ক্লাস নেয়ার আগ্রহের কারণ জানতে চাইলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এইচ এম আজরাফ নাজমী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগের ঢাকা মেডিক্যাল শাখার একজন কর্মী। মানুষ সব সময় ছাত্রলীগকে নেতিবাচক মনে করে। অনেক দিন ধরেই ছাত্রলীগকে নিয়ে ইতিবাচক কিছু একটা করার ইচ্ছা ছিল। করোনার এই সময়ে ছাত্রলীগের বড় ভাইরা যখন এ রকম একটা উদ্যোগ নেন, তখন আর বসে থাকলাম না।’
তিনি বলেন, ‘আমি সপ্তাহে দুই দিন শনি আর বুধবার সন্ধ্যায় ক্লাস নিই। কারণ, ওই সময় আমি ফ্রি থাকি; শিক্ষার্থীরাও পড়তে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। আমার প্রত্যেক ব্যাচে ১৫-১৮ জন থাকে, তাদের মূলত বায়োলজি ও কেমেস্ট্রি পড়াই।’
আরও পড়ুন:রবিবার সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে কারো মৃত্যু হয়নি। এই সময়ের মধ্যে পাঁচ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
সোমবার (৯ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন আরও পাঁচজন।
এ নিয়ে দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৪৭ জনে। আর মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৫০০ জনে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ সময়ে শনাক্তের হার ছিল ১২ দশমিক ২০ শতাংশ। মোট করোনা পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
এ নিয়ে করোনায় সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৭৬ জনে।
চার দিনের সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে দেশ ছেড়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আমিরাতের একটি ফ্লাইটে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, এই সফরে বাকিংহাম প্যালেসে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে দেখা করবেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় তিনি রাজা চার্লসের হাত থেকে গ্রহণ করবেন ‘কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’।
সফরসঙ্গী হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেন।
এ ছাড়া, দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন করে পুনরুজ্জীবিত এবং অর্থনীতি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা গড়ার লক্ষ্যে এই সফর অনুষ্ঠিত হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সফর। প্রধান উপদেষ্টা ৯ জুন ঢাকা থেকে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দেবেন এবং ১৪ জুন দেশে ফিরবেন।’
সম্প্রতি ভারতে করোনায় সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়িয়ে গেছে। দেশটিতে নতুন করে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৫৮ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এতে দেশটিতে সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৪৯১ জনে পৌঁছেছে। তাই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের আগাম সতর্কতা হিসেবে ভারত থেকে যেসব রুটের ফ্লাইট ঢাকায় অবতরণ করে, সেসব ফ্লাইটের সব যাত্রী স্ক্রিনিং শুরু করেছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে ভারতের চেন্নাই, কলকাতা, দিল্লি, হায়দ্রাবাদ, মুম্বাই থেকে ঢাকায় ফ্লাইট আসে। এই ফ্লাইটগুলো পরিচালনা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এসএম রাগীব সামাদ গণমাধ্যমকে জানান, পার্শ্ববর্তী দেশে করোনা সংক্রমণ ফের বাড়তে থাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও জোরদার করা হয়েছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা। গত ২ জুন থেকেই বিমানবন্দরে আগত যাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নেওয়া হয়েছে একাধিক পদক্ষেপ। ভারত থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত সংখ্যত মাস্ক এবং পিপিই রাখা হয়েছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছে। পাশাপাশি বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট থেকে আগত যাত্রীদের ইমিগ্রেশন প্রবেশপথে বসানো হয়েছে থার্মাল স্ক্যানার।
বিমানবন্দরে আগত যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে করোনা প্রতিরোধ সংক্রান্ত নির্দেশনা ও সতর্কতা প্রচারও চলছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এ সতর্কতামূলক ব্যবস্থাগুলো কার্যকর থাকবে।
ভারতের স্বাস্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে কেরালায়। সেখানে বর্তমান সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৯৫৭ জন। অপরদিকে গুজরাটে এই সংখ্যা ৯৮০ জন, পশ্চিমবঙ্গে ৭৪৭ জন, দিল্লিতে ৭২৮ জন কর্ণাটকে ৪২৩ জন এবং মহারাষ্ট্রে ৬০৭ জন।
সতর্কতার অংশ হিসেবে ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো রোগ এবং শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ও সামান্দা ইউনিয়নে বাংলাদেশ কোষ্টগার্ড ভোলা বেইস ও পুলিশের সমন্বয়ে পৃথক দুটি অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান চলাকালে ২৭৪ পিছ ইয়াবা ও ১৫ গ্রাম গাঁজা সহ এক মাদককারবারী কে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সোমবার মধ্যরাত ৩টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভোলা সদর উপজেলার সামান্দা ইউনিয়নে সামান্দা গ্রাম থেকে ১ লক্ষ ৪১ হাজার ৫ শত টাকা মূল্যের ২৭৪ পিস ইয়াবা ও ১৫ গ্রাম গাঁজা এবং নগদ ১২ হাজার ৮ শত ৪৫ টাকা সহ মাদক ব্যাবসায়ী আব্বাস (৩৮) কে গ্রেফতার করা হয়।
পরবর্তী আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য আসামীকে জব্দকৃত সকল আলামত সহ ভোলা সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
বাংলাদেশ কোষ্টগার্ড দক্ষিণ জোন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ কোষ্ট গার্ড। উপকূলীয় এবং নদী তীরবর্তী অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং চোরাচালান রোধে অনেকাংশে উন্নত হয়েছে। সীমান্তে চোরাচালান রোধে কোষ্টগার্ড কতৃক ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার তারাগুনিয়া এলাকার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে সিজারিয়ান ডেলিভারির সময় আখি খাতুন (২২) নামের এক প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ রয়েছে, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতার মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে এবং দ্রুত লাশ দাফনের পরামর্শ দেন।
নিহত আখি খাতুন উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের পূর্ব কবিরাজ পাড়া গ্রামের ইমনের স্ত্রী।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রোববার (৮ জুন) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আখিকে প্রথমে থানার মোড় এলাকার ‘আলসেফা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল’-এ নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা রোগীর জটিল অবস্থা বুঝে উন্নত পরীক্ষার পরামর্শ দেন। তবে রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, আলসেফা হাসপাতালের পরামর্শ উপেক্ষা করে তারাগুনিয়া ক্লিনিকের দালালদের প্ররোচনায় তাকে সেখানে নেওয়া হয়।
নিহতের মা ও খালা জানান, তারাগুনিয়ার আবুলের ক্লিনিকে (তারাগুনিয়া ক্লিনিক) নেওয়ার পর কয়েকজন চিকিৎসক আখিকে সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য নিয়ে যান। সিজার শেষ করে বেডে আনার পর থেকেই রোগীর অবস্থা অস্বাভাবিক ছিল। চিকিৎসকরা একপর্যায়ে তার পেটে চাপাচাপি করে, পরে অবস্থার অবনতি দেখে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে রেফার করেন, কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকরা আখিকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃতের পরিবার আরও বলেন, ক্লিনিকেই আঁখি মারা গিয়েছে কিন্তু ক্লিনিক মালিক দায়ভার এড়াতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড এর নাটক করে।
পরে মৃতদেহ আবার ক্লিনিকে ফেরত আনা হয় এবং মৃতের পরিবার ও এলাকাবাসী ক্লিনিকের সামনে হট্টগোল করে ও ক্লিনিক ভাঙচুরের চেষ্টা করলে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার বাড়িতে ডেকে নিয়ে টাকার বিনিময়ে মীমাংসা করেন এবং রাত ৮ টার সময় দাফন সম্পন্ন করা হয়।
ঘটনার বিষয়ে ওই দিন ব্যবহৃত অ্যাম্বুলেন্স চালক ফারুক হোসেন বলেন, "আমাকে ক্লিনিক থেকে রোগী গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা জানান, রোগী মারা গেছে। এরপর তারা জোরাজুরি করে ইসিজি করেন ও সদর হাসপাতাল থেকেই ডেট সার্টিফিকেট নিয়ে আবার ক্লিনিকে ফিরিয়ে আনা হয়।"
সিজারিয়ান অপারেশনে অংশ নেওয়া চিকিৎসকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে, ক্লিনিক মালিকের ছেলে এবং মাছরাঙা টেলিভিশনের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি তাশরিক সঞ্চয় ঘটনার বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করতে সাংবাদিকদের ফোন করে নিরুৎসাহিত করেন। তিনি স্বীকার করেন, “রোগীর মৃত্যুর ঘটনা আমাদের ক্লিনিকে ঘটেছে।”
অন্যদিকে, আলসেফা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল’ থেকে রোগী কেন ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে এবিষয় ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যাবস্থাপক সুজন হোসেন জানান, “রোগীর শারীরিক সমস্যা বুঝতে পেরে আমরা উন্নত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দিই। তবে রোগীর স্বজনরা আমাদের পরামর্শ না নিয়ে অন্য ক্লিনিকে চলে যান।”
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সিজারের ৬ ঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত খাবার খাওয়া নিষেধ থাকলেও রোগী খাবার খেয়ে সেটা ডক্টরের কাছে গোপন রাখে যার ফলে সিজার পরবর্তী সমস্যা হয় ও রোগী মারা যায়।
অনভিজ্ঞতার কারণে অনেকে চামড়ায় দেরিতে লবণ দিয়েছেন। এতে করে চামড়া নষ্ট হওয়ায় এবং মান কমে যাওয়ায় অনেকে কাঙ্ক্ষিত দাম পাননি বলে মন্তব্য করেছেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
আজ সোমবার সাভার চামড়া শিল্পনগরী পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় চামড়ার দর কমে যাওয়া নিয়ে আড়তদার ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি এসব কথা বলেন।
আদিলুর জানান, এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৭৮ হাজার পিস চামড়া এসেছে শিল্পনগরীতে। ঢাকায় আছে সাড়ে ৭ লাখ পিস।
চলতি বছর ৩০ হাজার টন লবণ বিতরণ করা হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘কোনোভাবেই যাতে চামড়া না পঁচে বা দাম পড়ে না যায় তাই সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত লবণ সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও অনভিজ্ঞতার কারণে কিছু চামড়া নষ্ট হয়েছে, যদিও এর পরিমাণ কম। যাদের চামড়া নষ্ট হয়েছে এবং মান কমে গেছে তারা দাম কম পেয়েছেন।’
তিনি দাবি করেন, ‘চামড়ায় লবণ দেওয়ার একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। অনেকেই দেরিতে লবণ দিয়েছেন, যার প্রভাব চামড়ার মানে পড়েছে। ফলে দামও কমেছে অনেক ক্ষেত্রে। তবে সরকারের তৎপরতার কারণে এ বছর খুব অল্পসংখ্যক চামড়াই নষ্ট হয়েছে।’
এ ছাড়া, গবাদি পশুর ল্যাম্পি স্কিন রোগের কারণে চলতি বছর ৩০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে বলেও উল্লেখ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
শেরপুরের ঝিনাইগাতীর দুটি গুচ্ছগ্রাম - গোমড়া ও কান্দুলীর বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে কুরবানীর মাংস থেকে বঞ্চিত ছিল। গোমড়া গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা এক যুগ এবং কান্দুলী গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা গত ৬ বছর ধরে কুরবানীর মাংস পায়নি। তবে এবার ‘দৈনিক বাংলাদেশের খবর’ পত্রিকায় বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ার পর স্থানীয় সংগঠন ও দাতাদের উদ্যোগে এই দুটি গ্রামের মানুষ কোরবানির মাংস পেয়েছে।
গোমড়া গুচ্ছগ্রামের স্বামী পরিত্যাক্তা আঙ্গুরী বেগম (৭০) বলেন, ‘১২ বছর ধরে আমরা কোরবানির মাংসের স্বাদ পাইনি। এবার রক্তসৈনিক ফাউন্ডেশন আমাদের জন্য গরু দিয়েছে। আল্লাহ তাদের ভালো রাখুন।’
গুচ্ছগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আলী বলেন, ‘আমাদের এলাকার অনেক গরিব মানুষ আছে যারা কোরবানি দিতে পারে না। এই উদ্যোগ আমাদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। আমরা সংগঠনটির কাছে কৃতজ্ঞ।’
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, ‘গুচ্ছগ্রামের দুঃস্থ মানুষেরা দীর্ঘদিন ধরে কোরবানির মাংস থেকে বঞ্চিত ছিল। স্থানীয় সংগঠন ও দাতাদের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আমরা সামাজিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে কাজ করে সবাইকে কোরবানির মাংসের আওতায় আনার চেষ্টা করব। আমাদের বিভাগীয় কমিশনার স্যারও গোসত পাঠাচ্ছেন। যদি কোনো অসহায় মানুষ কোরবানির মাংস না পেয়ে থাকে, আমরা নিশ্চিত করব যেন তারা গোসত পায়।’
পত্রিকায় খবর প্রকাশের পর রক্তসৈনিক বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন সংগঠনটি বিষয়টি নজরে নিয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়। সংগঠনের সভাপতি রাজিয়া সামাদ ডালিয়া গোমড়া গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের জন্য একটি গরু কোরবানির ব্যবস্থা করেন।
অন্যদিকে কান্দুলী গুচ্ছগ্রামে শাহ অলি উল্লাহ ইসলাম সেন্টার বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে এবং অরফান শেল্টার ফাউন্ডেশন, যুক্তরাজ্যের আর্থিক সহায়তায় একটি গরু কোরবানি দেওয়া হয়। স্থানীয়রা জানান, গত ৬ বছর ধরে এই গ্রামে কুরবানীর মাংস বণ্টন হয়নি। এবার দাতাদের সহযোগিতায় গ্রামবাসী মাংস পেয়ে খুশি।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে ঝিনাইগাতীর দুটি গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন পর কুরবানীর মাংস পেয়ে আনন্দিত। স্থানীয়রা আশা প্রকাশ করেছেন, ভবিষ্যতে আর কেউ যেন কুরবানীর মাংস থেকে বঞ্চিত না হয়।
মন্তব্য