সাড়ে চার বছর বয়সী আরৌশি হোসেনকে স্কুলে ভর্তি করা হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বাবা আশিক হোসেন ও মা তামান্না আক্তার ভাবছেন, তাদের মতো সাধারণ শিক্ষা নয়, মেয়েকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াবেন। সন্তানের ইংরেজি ভাষায় ভিত গড়তেই এই সিদ্ধান্ত তাদের।
কেন মেয়েকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াবেন, এমন প্রশ্নে মা তামান্না নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলার পাশাপাশি প্রত্যেকের দ্বিতীয় একটি ভাষাজ্ঞান থাকা উচিত। যেহেতু ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা, তাই ইংরেজির আলাদা একটি গুরুত্ব আছে।’
চার বছরের স্বরিৎ ঋতি ভোর এখনও স্কুলে যায়নি। তার মা নাহিদা খানমও ঠিক করে রেখেছেন সন্তানকে ইংরেজি মাধ্যমেই ভর্তি করাবেন।
নাহিদা বলেন, ‘আমাদের মতো মেয়ে যেন ইংরেজিতে দুর্বল না হয়, এ জন্য তাকে ইংরেজিতেই পড়াব। এতে বড় হয়ে কর্মক্ষেত্রে সে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে বলে আশা করছি।’
বাংলাদেশে তরুণদের ইংরেজি ভাষায় দুর্বলতা নতুন কোনো তথ্য নয়। কেবল ইংরেজিতে কথোপকথন ভালো, এই বাড়তি যোগ্যতায় ভারত ও শ্রীলঙ্কা থেকে হাজার হাজার কর্মী দেশের পোশাক খাতে কাজ করছে।
আবার বহুজাতিক অনেক কোম্পানি বা উচ্চ বেতনের বেসরকারি কোম্পানিতে হাজারও তরুণ আবেদনই করেন না ইংরেজির দুর্বলতায়।
গৃহবধূ তামান্না আক্তার বলেন, ‘আমাদের বাংলা মাধ্যমের স্কুল খারাপ, তা বলছি না। তবে সেগুলোর চেয়ে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোতে তুলনামূলকভাবে ইংরেজি ভাষায় জোর দেয়া হয়।
‘ছোট থেকে একজন শিক্ষার্থী সেই ভাষাটা রপ্ত করতে পারলে কাজ এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বাড়তি সুযোগ পাবে।’
ম্যাপললিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের স্ট্যান্ডার্ড সেভেনে পড়ছে তানহা বিনতে রহমান। সে দেশের বাইরে গিয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে চায়। ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা নিতে তার সমস্যা হচ্ছে না, বরং আগ্রহ বাড়ছে।
অভিভাবকদের আগ্রহ বাড়তে থাকায় বড় শহরগুলোর পাশাপাশি মফস্বল শহরেও এখন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল গড়ে উঠছে। আর শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেড়ে চলছে। উচ্চবিত্তদের পাশাপাশি মধ্যবিত্তদের মধ্যেও সন্তানদের ইংরেজি মাধ্যমে পাঠানোর প্রবণতা বাড়ছে।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য বলছে, ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তবে ২০১৬ সালে গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বেশির ভাগ ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্র ছিলেন, এমন তথ্য আসার পর বেশ কিছু স্কুল বন্ধ হয়ে যায়।
ব্যানবেইসের প্রধান পরিসংখ্যানবিদ শেখ মো. আলমগীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কমলেও শিক্ষার্থী প্রতিনিয়ত বেড়েছে। গত তিন বছরে আমাদের হিসাবে শিক্ষার্থী বেড়ে দেড় গুণ হয়েছে।’
তবে নার্সারি ও কেজি শ্রেণিতে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলো ব্যানবেইসের হিসাবে নেই। ফলে একেবারে শিশু শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কত, সে তথ্য দিতে পারছে না তারা।
ইংরেজি মাধ্যমে আগ্রহ বাড়ছে কেন
বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ক কাজী তায়েফ সাহাদাত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক কারিকুলামের কারণে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা বিশ্বব্যাপী। মহামারির সময়টার দিকে তাকালেই আপনি বুঝতে পারবেন কেন অভিভাবকরা ইংরেজি মাধ্যমে পড়াতে বেশি আগ্রহী।
‘কঠিন সময়ে এক দিনের জন্যও ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোর ক্লাস বন্ধ হয়নি। রুটিন অনুযায়ী অনলাইনে ক্লাস চলছে। এর বিপরীতে অন্য মাধ্যমের স্কুলগুলোর দিকে তাকালেই আপনি বাস্তব চিত্র পেয়ে যাবেন।’
ইংলিশ মিডিয়াম সানবিমস স্কুলের শিক্ষক উজ্জ্বল কুমার সরকার বলেন, ‘ইংলিশ মিডিয়ামের কারিকুলামকে সারা বিশ্বেই স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে গণ্য করা হয়। কোনো মা-বাবা যদি তার সন্তানকে বিদেশে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান, তাহলে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ালে বেশি সুবিধা পাওয়া যায়। এ ছাড়া কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরাই এগিয়ে থাকেন।’
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইংরেজি মাধ্যমে যারা পড়ছে, তারা তো বাংলা মাধ্যম থেকে অবশ্যই ভালোই শিখছে। আর এখন তো পৃথিবীটা ইংরেজির ওপরই চলছে। এটাই তো বাস্তবতা।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানোটা আমাদের সমাজের একটা আভিজাত্যের অংশ বলে মনে করা হয়। ইংরেজি ভাষা শিখলে ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষার পথ সুগম হয়। এখন এ কারণে অনেক অভিভাবক চান তার সন্তান যেন ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক ও ইতিহাসবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘উচ্চশিক্ষায়, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে লেখাপড়ার মাধ্যম ইংরেজি। আর শুদ্ধ করে ইংরেজি বলতে ও লিখতে পারার পারদর্শিতা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।
‘আবার ইংরেজি মাধ্যমের কারিকুলামের সঙ্গে উন্নত বিশ্বের কারিকুলামের মিল থাকায় এখানকার শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক বেশি।’
ইংরেজি মাধ্যমেও দুই ভাগ
ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজ ও ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন বা এডেক্সেল—এই দুটি বোর্ডের অধীনে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোর পরীক্ষা হয়।
এডেক্সেলের সেশন শুরু হয় মে-জুন আর ক্যামব্রিজের সেশন শুরু হয় অক্টোবর-নভেম্বর ও মে-জুন মাসে। বাংলাদেশে ইংরেজি মাধ্যমের সব পরীক্ষা ও ফলাফল তৈরি করে ব্রিটিশ কাউন্সিল।
ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোতে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পর্যন্ত পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। এখানে পড়াশোনার পুরোটাই হয় ইংরেজি ভাষায়।
ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সংখ্যা কত
ব্যানবেইসের তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে দেশে ১৫৯টি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের নিবন্ধন ছিল। এতে শিক্ষার্থী ছিল ৫৪ হাজার ৫০৭ জন। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ও লেভেলের ৬৪টি, এ লেভেলের ৫৪টি এবং জুনিয়র লেভেলের ৪১টি ছিল।
২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ১৪৫টিতে। তবে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৭ হাজার ৮০৯ জন।
১৪৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ‘ও লেভেলের ৩৪টি, ‘এ’ লেভেলের ১৩টি এবং জুনিয়র লেভেলের ১৮টি।
২০২০ সালেও বন্ধ হয়ে যায় তিনটি স্কুল। তবে বাড়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা। ওই বছর ১৪২টি স্কুলে পড়ত ৭৮ হাজার ২০১ জন। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ‘ও’ লেভেলের ৩১টি, ‘এ’ লেভেলের ১৫টি এবং জুনিয়র লেভেলের ১৬টি।
তবে এ পরিসংখ্যানের সঙ্গে একমত নয় বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অ্যাসোসিয়েশন। তারা জানায়, সারা দেশে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের সংখ্যা প্রায় ৩৫০ (কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো এ হিসাবের অন্তর্ভুক্ত নয়)। সেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় তিন লাখ।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন জানায়, দেশে প্রায় সাড়ে চার হাজার ইংরেজি মাধ্যমের কিন্ডারগার্টেন স্কুল আছে, যেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দুই লাখ।
বরিশালের হিজলার মেঘনা নদীতে নৌপুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের বিশেষ আভিযানিক টিম কর্তৃক ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে।
গত সোমবার দিনব্যাপী নৌপুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের বিশেষ টিম ও নৌপুলিশ বরিশাল অঞ্চল যৌথভাবে হিজলার মেঘনা নদীতে বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করে। নৌপুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি কুসুম দেওয়ানের সার্বিক নির্দেশনায় ও নৌপুলিশের ডিআইজি মো. মিজানুর রহমান পিপিএম (বার) এর নেতৃত্বে সরকার ঘোষিত মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৫ উপলক্ষে এই বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে ৮ লাখ ২৫ হাজার মিটার অবৈধ জাল ও ১৮০ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ এবং ৭টি নৌকা উদ্ধার করা হয়। তাছাড়া ২৩টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করাসহ ৩ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে নিয়মিত মামলা রুজু করে প্রয়োজনীয় পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। অভিযানে জব্দকৃত জাল ধ্বংস করা হয় এবং মাছ স্থানীয় গরিব, অসহায় ও এতিমখানায় বিতরণ করা হয়।
ওই অভিযানে নৌপুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকার পুলিশ সুপার (অ্যাডমিন অ্যান্ড ফাইনান্স) মাসুমা আক্তার, নৌপুলিশ বরিশাল অঞ্চলের পুলিশ সুপার এসএম নাজমুল হক বিপিএম (বার), পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল পিপিএম (বার), মো. ইমরান হোসেন মোল্লা পিপিএম, সহকারী পুলিশ সুপার (বরিশাল/ পটুয়াখালী জোন) ও সোহেল মিয়া, সহকারী পুলিশ সুপার (প্রকিউরমেন্ট)-সহ নৌপুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত অফিসার ও ফোর্স অংশগ্রহণ করেন। বিশেষ আভিযানিক টিমের পাশাপাশি ওইদিন নৌপুলিশের বরিশাল অঞ্চলের হিজলা নৌপুলিশ ফাঁড়ি, কালীগঞ্জ নৌপুলিশ ফাঁড়ি ও অস্থায়ী ক্যাম্পসমূহ তাদের চলমান অভিযান জোরদারভাবে অব্যাহত রাখে। অপারেশনাল কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সরকারি আদেশ অমান্য করে অবৈধ কারেন্ট জালসহ বিভিন্ন জাল দিয়ে মা ইলিশ ধরা জেলেদের কার্যক্রম সনাক্ত করার জন্য হিজলা এলাকাধীন মেঘনা নদীর বিভিন্ন স্থানে ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
সরকার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা চলাকালে করণীয়-বর্জনীয় সম্পর্কে লিফলেট বিতরণ ও জনসচেতনামূলক প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ২২ দিনের মা ইলিশ রক্ষা অভিযান সফল করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ নৌপুলিশ। এ লক্ষ্যে নৌপুলিশের বিভিন্ন ইউনিট অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে দিনে-রাতে সার্বক্ষণিক কাজ করছে। উল্লেখ্য গত ৪ অক্টোবর থেকে এই অভিযান শুরু হয়েছে এবং আজ ২২ অক্টোবর (বুধবার) পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।
কুমিল্লার চান্দিনায় মানবিক সংগঠন ‘চেষ্টা’-এর উদ্যোগে দুঃস্থ নারীদের মাঝে সেলাই মেশিন ও উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। গত সোমবার চান্দিনা পৌরসভার একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে চারজন দুঃস্থ নারী ও একজন বীর কন্যার হাতে মোট পাঁচটি সেলাই মেশিন এবং বিভিন্ন উপহারসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। আয়োজনে ছিল ‘চেষ্টা’ সংগঠন এবং সহযোগিতায় ‘চান্দিনা আল রাজি ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার’। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চান্দিনা উপজেলা সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ফয়সাল আল নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন চেষ্টা সংগঠন এর সভাপতি লায়লা নাজনীন হারুন ও চান্দিনা আল রাজি ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারের চেয়ারম্যান আল আমিন।
ঢাকা থেকে আগত ‘চেষ্টা’ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সাধারণ সম্পাদক গুলসান নাসরীন চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ শারমিনা খানম, সাংগঠনিক সম্পাদক কানিজ মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক সাকেরা খান এবং সদস্যরা দিলরুবা মাহমুদ রুবি, সাহনাজ মান্নান, মনোয়ারা তাহির ও আইভী মামুন। সভায় অতিথিরা বলেন, ‘চেষ্টা’ একটি অরাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন, সংগঠনটি সুদীর্ঘ ১৫ বছর থেকে, মানবতার সেবায় নিয়োজিত। এই সংগঠনটি ২০১৩ সালে নারী ও শিশু অধিদপ্তর কর্তৃক নিবন্ধিত। সংগঠনটি সমাজে অবহেলিত জনগোষ্ঠীর এবং ৭১ এর বীর কন্যাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
সভাপতি লায়লা নাজনীন হারুন, ‘চেষ্টার’ কার্যক্রম অতিথী ও প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সামনে তুলে ধরেন।
সেক্রেটারি গুলসান নাসরীন চৌধুরী, মানবতার পক্ষে ‘চেষ্টা’ সংগঠন কীভাবে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছে, সে বিষয়ে উপস্থিত সন্মানিত অতিথিদেরকে অবহিত করেন।
অতপর, সিমা রানী সাহা, ফারজানা বেগম, রোকসানা ইসলাম, লুৎফা বেগমসহ ৫ জন অবহেলিত মহিলাকে ৫ টি সেলাই মেশিন, শাড়ি ও উপহারগুলো তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়। চেষ্টার সভাপতি সমাজের বিত্তবানদের কাছে এই মহৎ কাজে সহযোগিতা কামনা করেন।
মাদারীপুরে আলোচিত মাদ্রাসা ছাত্রী দীপ্তি ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় ইজিবাইক চালক মো. সাজ্জাদ হোসেন খানকে (৫০) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়াও আসামিকে ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে মাদারীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শরীফ এ এম রেজা জাকের এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সাজ্জাদ হোসেন মাদারীপুর সদর উপজেলার পূর্ব খাগদী এলাকার সিরাজুল ইসলাম খানের ছেলে।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন মামলার সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট শরীফ সাইফুল কবীর।
তিনি জানান, দীর্ঘ ছয় বছর বিচার কার্যক্রম শেষে আদালত অভিযুক্ত সাজ্জাদ হোসেনকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন।
মামলা ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৩ জুলাই মাদারীপুর শহরের পূর্ব খাগদী এলাকার একটি পরিত্যক্ত পুকুর থেকে অজ্ঞাত এক কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন নিহতের বাবা মজিবর ফকির মরদেহটি তার মেয়ের বলে শনাক্ত করেন। ঘটনার পর মজিবর ফকির মাদারীপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই ঘটনায় তদন্তে নামে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৮। তদন্তে বেরিয়ে আসে ইজিবাইকচালক সাজ্জাদ হোসেন কিশোরী দীপ্তিকে ধর্ষণের পর হত্যা করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, সাজ্জাদ হোসেন পূর্বেও শিশু হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন। ২০১১ সালে মুক্তি পান। ২০১৯ সালের ১১ জুলাই বৃষ্টির দিনে দীপ্তি তার ইজিবাইকে ওঠেন চরমুগরিয়া যাওয়ার উদ্দেশে। অন্য কোনো যাত্রী না থাকায় সাজ্জাদ জোর করে দীপ্তিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ ও হত্যা করেন। পরে মরদেহ বিদ্যুতের তার দিয়ে বেঁধে কয়েকটি ইটসহ পুকুরে ফেলে দেন। পরে ১৩ জুলাই তার মরদেহ এলাকাবাসী দেখতে পেলে পুলিশে খবর দেয়। এই ঘটনায় এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও দ্রুত বিচারের দাবিতে ফেটে পড়ে নিহতের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী।
নিহত দীপ্তির বাবা মজিবর ফকির বলেন, আমার মেয়ের হত্যাকারীর আজ (মঙ্গলবার) ফাঁসির রায় ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পেয়েছি।
মামলার পিপি শরীফ সাইফুল কবীর বলেন, মামলায় একমাত্র আসামি সাজ্জাদ হোসেনকে মৃত্যুদণ্ড এবং দশ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এটি ছিল অত্যন্ত নৃশংস একটি হত্যা ও ধর্ষণ মামলা। আদালত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছেন। আমরা রায়ে সন্তুষ্ট।
চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চল দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেললাইন চালু হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। আধুনিক এ রেলপথ ঘিরে উন্নয়ন, যোগাযোগ আর পর্যটনের নতুন দিগন্ত উন্মোচন হয়েছিল। নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছিল পর্যটন নগরী কক্সবাজারের মানুষের জন্য। তবে সময়ের ব্যবধানে এ সম্ভাবনার রেলপথই যেন এখন এক ‘মরণফাঁদে’ পরিণত হয়েছে। এরই মধ্যে চলতি বছরের গত আগস্ট পর্যন্ত ২০ মাসে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩০ জন।
এ রেলপথের ৭২টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে ৫৬টিতে কোনো ব্যারিয়ার ও গেটম্যান নেই। অরক্ষিত এসব ক্রসিংয়ের দুপাশে পথচারী ও চালকদের জন্য সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড বসিয়েই দায় সেরেছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে গেট ও গেটম্যান রয়েছে মাত্র ১৬টিতে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ইসলামাবাদ-রামু সেকশনে ১৭টি ক্রসিংয়ের মধ্যে গেটম্যান রয়েছে মাত্র একটিতে।
তথ্য মতে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ২০ মাসে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে অন্তত ৩০টি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। শুধু গত ১ বছরে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। এছাড়া রেললাইনে ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেললাইনে মোট ৯টি সেকশন রয়েছে। এর মধ্যে ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ইসলামাবাদ-রামু সেকশনে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১৭টি লেভেল ক্রসিং। কিন্তু গেট ও গেটম্যান রয়েছে মাত্র একটিতে। বাকি ১৬টিতে কোনো ব্যারিয়ার ও গেটম্যান নেই ।
রামু-কক্সবাজার সেকশনে ৮টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে মাত্র একটিতে গেটম্যান আছে। ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ডুলাহাজারা-ইসলামাবাদ সেকশনের ১২টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে মাত্র একটিতে গেটম্যান আছে। ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ চকরিয়া-ডুলাহাজারা সেকশনে ৯টি ক্রসিংয়ের মধ্যে ৩টিতে গেটম্যান আছে।
হারবাং-চকরিয়া সেকশনের ৪টির মধ্যে ২টিতে, লোহাগাড়া-হারবাং সেকশনের ৫টির মধ্যে ১টিতে, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া সেকশনের ৮টির মধ্যে ৩টিতে, দোহাজারী-সাতকানিয়া সেকশনের ৮টির মধ্যে ৪টিতে এবং হাসিমপুর-দোহাজারী সেকশনের ১টিতেও গেটম্যান নেই। এগুলো উন্মুক্ত অবস্থায় রয়েছে।
রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রকৌশলী আবু রাফি মোহাম্মদ ইমতিয়াজ হোছাইন বলেন, দোহাজারী চট্টগ্রাম রেলপথের লেভেল ক্রসিংগুলোর মধ্যে কিছু ম্যান-গেট ও কিছু আনম্যান-গেট আছে। যানবাহন চলাচলের পরিমাণ কম থাকায় গেটম্যান থাকে না। যানবাহন চলাচল বাড়লে সেগুলো বিবেচনা করা হবে।
রামুর স্থানীয় বাসিন্দারা ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপককে চিঠি দিয়ে ব্যারিয়ারার ও সতর্কতা ব্যবস্থা স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু সেই চিঠির কোনো জবাব দেয়নি কর্তৃপক্ষ।
হারবাং এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, রেললাইনটি আমাদের গ্রামের মাঝ দিয়ে গেছে। ট্রেন কাছাকাছি না এলে শব্দ শোনা যায় না। ফলে আমরা সবসময় আতঙ্কে থাকি। শুধু মানুষ নয়, রেললাইনে হাতির মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত একাধিক হাতি মারা গেছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দোহাজারী কক্সবাজার রেলপথে ট্রেনের হুইসেল শুনে তাড়াহুড়ো করে মানুষ সরে যান। অরক্ষিত অবস্থার কারণে রেলপথটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালেও যেতে হয় রেলপথ অতিক্রম করে। রেলপথটির কিছু স্থানে বাঁক থাকায় দূর থেকে ট্রেন আসছে কি না, তা দেখা যায় না।
দুর্ঘটনা এড়াতে ক্রসিংগুলোতে সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ ভবিষ্যতে এই রেলপথে ট্রেনের সংখ্যা আরও বাড়বে, ফলে ঝুঁকিও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মাহমুদ ওমর ইমাম বলেন, ক্রসিংয়ের যানবাহন চলাচলের সংখ্যার বিষয়ে সঠিকভাবে জরিপ করা হয়েছে কিনা, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। তারা ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা, তত্ত্বাবধান হয়েছে বলে মনে হয় না।
তিনি বলেন, বেশি যানবাহন চলাচলকারী ব্যস্ত লেভেল ক্রসিংয়ে অবশ্যই প্রতিবন্ধকতা দিতে হবে, সার্বক্ষণিক গেটম্যান রাখতে হবে। দূর থেকে ট্রেন দেখা যায় না, এমন বাঁকও রয়েছে।
রেলপথে সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপন করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রেল ট্র্যাকে এটি করা সহজ। দুপাশে সিগন্যাল বাতি থাকবে, যখন ট্রেন যাবে তখন ঘণ্টা বাজবে ও লাল বাতি জ্বলবে। প্রকল্পের মধ্যে এটি কেন যুক্ত করা হয়নি, তা বোধগম্য নয়।
দোহাজারী-কক্সবাজাররেললাইন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. সবুক্তগীণ বলেন, ‘প্রকল্পে আরও বেশি ক্রসিং ছিল। ইতোমধ্যে ৪৬টি ক্রসিং আমরা নিরাপত্তার স্বার্থে আন্ডারপাসে রূপান্তর করেছি। রেলের নির্ধারিত ম্যানুয়াল অনুসারে এবং জিআইবিআরের অনুমোদনক্রমে ক্রসিংয়ের গেটম্যান ও ব্যারিয়ার নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘সমস্যা হয় যখন এলজিইডি (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর), পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ অনেক সময় রাস্তা প্রশস্ত বা পাকা করে, কিন্তু আমাদের কিছু জানায় না। তবুও আমরা দুর্ঘটনার পর প্রকৌশলীদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছি। কোন ক্রসিংয়ে গেটম্যান ও ব্যারিয়ার লাগবে, তা বিবেচনা করে তারা সুপারিশ করবেন। এটি জিআইবিআরে পাঠানো হবে।’
সিগন্যাল সিস্টেমের বিষয়ে তিনি বলেন, স্টেশনকে কেন্দ্রে করে কিছু সিগন্যাল আছে। তবে এটি ভালো পরামর্শ। সিগন্যাল ও ঘণ্টা দেয়া গেলে মানুষ দূর থেকে বুঝতে পারবেন, ট্রেন আসছে। এটি বিবেচনা করা হবে।
১১ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০৩ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার দোহাজারি-কক্সবাজার রেলপথে প্রথমে এক জোড়া ট্রেন চললেও এখন চলছে চার জোড়া ট্রেন। প্রকল্পটি সমাপ্ত না হলেও ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে। কিন্তু পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নেওয়ায় এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২৫ মঙ্গলবার গাজীপুর ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশে পালিত হয়েছে। দিনব্যাপী নানা বর্ণাঢ্য কর্মসূচি ও অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করা হয়। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জাতীয় পতাকা ও বাউবি পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম। তার সঙ্গে প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন, প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, পরিচালক, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে শান্তির প্রতীক সাদা পায়রা ও রঙিন বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
পতাকা উত্তোলন শেষে উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত স্মারক ‘জুলাই জাগরণীতে’ শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ডসহ শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অংশগ্রহণে এক বর্ণাঢ্য আনন্দ র্যালি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে।
এরপর কেন্দ্রীয় সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়: দ্যুতিময় এক বছর’ শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন ও আলোচনা সভা।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম। উপাচার্য তার বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. এম. শমসের আলী ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বলেন, ‘বাউবি প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য হলো- অবহেলিত ও কর্মজীবী জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া। এখন আমরা সেই লক্ষ্য পূরণের পথে আরও দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছি।’
স্বাগত বক্তব্যে রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘প্রশাসনিক কাঠামোর পুনর্বিন্যাস ও জনবলের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে বাউবির কার্যক্রম আরও গতিশীল হয়েছে। পরীক্ষায় নকলমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ায় একাডেমিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে।’
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন তথ্য ও গণসংযোগ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. খালেকুজ্জামান খান।
একইসঙ্গে দেশের সকল আঞ্চলিক এবং উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রেও পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২৫ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়।
বিভাগ ঘোষণার দাবিতে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী জেলার বাসিন্দারা সভা সমাবেশ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। বর্তমানে এ ইস্যুতে উত্তাল নোয়াখালী। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সোনাইমুড়ী উপজেলার বিভিন্ন স্কুল মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী ও সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে এসব কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সোনাইমুড়ী বাইপাস চত্বরে প্রায় ১ ঘণ্টার ব্লকেড কর্মসূচি পালন করা হয়।
কর্মসূচি পালন উপলক্ষে সোনাইমুড়ী উপজেলার বিভিন্ন স্কুল মাদ্রাসা থেকে ছাত্র-ছাত্রী ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সোনাইমুড়ী বাইপাস চত্বরে জড়ো হন। এ সময় তারা স্লোগান দেন, ‘দাবি মোদের একটাই, নোয়াখালী বিভাগ চাই’। এতে তিন দিকের সড়কে বেশ কিছুক্ষণ যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। ভোগান্তিতে পড়ে বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা।
এ সময় কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ‘দাবি মোদের একটাই, নোয়াখালী বিভাগ চাই’। এই দাবি আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। দাবি আদায় না মানলে আরও কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানান।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রাজনৈতিক নেতা, সমাজকর্মী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন ব্যক্তির প্রোফাইল সরব রয়েছে বিভাগের দাবিতে।
নোয়াখালী জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। নোয়াখালী জেলার মোট আয়তন ৪২০২.৭০ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে ২২০০৭’ থেকে ২৩০০৮’ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০০৫৩’ থেকে ৯১০২৭’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে নোয়াখালী জেলার অবস্থান। রাজধানী ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ১৭১ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর থেকে প্রায় ১৩৬ কিলোমিটার। এ জেলার পূর্বে চট্টগ্রাম জেলা ও ফেনী জেলা, উত্তরে কুমিল্লা জেলা, পশ্চিমে লক্ষ্মীপুর জেলা ও ভোলা জেলা এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত।
খননের ৩ বছর না পেরোতেই আবারও ভরাট হয়ে যাচ্ছে জয়পুরহাটের চিরি নদী। প্রায় ২২ কিলোমিটার এ নদীর কোথাও কোথাও ভরে গেছে কচুরিপানায়। নদীর কোনো কোনো স্থানে পানি থাকলেও আবার অনেক স্থানে পানি নেই। এতে নদী খননের পর যে সুফল পাওয়ার আশা ছিল তা পাচ্ছেন না নদীর দুইপাড়ের মানুষরা। এতে উপকারের চেয়ে অপকারই হচ্ছে বেশি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও নদী আন্দোলনের নেতারা জানান, অপরিকল্পিত খননে বালু ও মাটি আবারও নদীতে মিশে যাওয়া, বর্জ্য ফেলা ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আবারও ভরাট হচ্ছে এই নদী। তাই নদীর নাব্য টিকিয়ে রাখতে শুধু খনন করলেই হবে না, প্রয়োজন এর রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।
জানা যায়, জয়পুরহাট জেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে ৪টি নদী। এর মধ্যে আক্কেলপুর থেকে সদর পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার রয়েছে চিরি নদী। এটি শাখা নদী হিসেবে পরিচিতি। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে প্রায় ১২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি নদীর খননকাজ শুরু হয়, যা শেষ হয় ২০২২ সালের জুন মাসে। নদী খননের প্রকল্পের উদ্দেশ্যে ছিল জমিতে সেচ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সারা বছর সেচ সুবিধা নিশ্চিত করা, পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বন্যার ঝুঁকি কমিয়ে আনা, পুনঃখননের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত করা, নৌচলাচলের মাধ্যমে সহজ যোগাযোগ নিশ্চিত করা, পরিবেশ ও আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সাধন করা। কিন্তু চিরি নদীতে এসব বেশিরভাগ উদ্দেশ্যে বাস্তবায়ন হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নদী খননের ফলে সারা বছর পানি থাকার আশা থাকলেও শুকনো মৌসুমে কোথাও পানি থাকছে, কোথাও থাকছে না। নদী খনন করার সময় বাঁধের ওপর রাখা মাটি আবারও নদীতে মিশে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও নদী ভরে আছে কচুরিপানায়। কোথাও পানি থাকলেও ময়লার কারণে হয়ে পড়েছে ব্যবহার অযোগ্য। এতে দিন দিন নদীটি নাব্য হারিয়ে ফেলছে। নদী রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি সচেতন মহলের।
সদর উপজেলার খঞ্জনপুর এলাকার বাসিন্দা আরিফুর রহমান বলেন, ‘নদী খনন করার আগে আমাদের বাড়ির কাছে চিরি নদীতে কিছু পানি থাকত। আমরা প্রতিদিনের কাজে পানি ব্যবহার করতাম। কিন্তু খননের পর আর পানি থাকছে না। নদী সংস্কার করেই আমাদের অসুবিধা হয়ে গেছে। পানি পাচ্ছি না, আবার কচুরিপানায় ভরে গেছে।’
একই এলাকার রমজান আলী বলেন, ‘ছোটবেলায় নদীতে অনেক মাছ ধরা হতো। মনে হয়েছিল নদী খনন করার পর নাব্য ফিরে আসবে। কিন্তু এখন তা দেখা যাচ্ছে না। বৃষ্টি হলেও বেশিরভাগ জায়গায় পানি নেই। আগে মাছ ধরা হতো। এখন পানি না থাকার কারণে মাছ ধরা যায় না। গোসল করা যায় না। নদী আমাদের কোনো উপকারে আসছে না।’
সদরের কুঠিবাড়ী ব্রিজ এলাকার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘কোটি কোটি টাকা খরচ করে নদী খনন করা হলো, পানি থাকবে বলে। কিন্তু নদীতে কোনো পানি নেই। উপকারের জন্য খনন করা হলো এখন উপকারের চেয়ে অপকারই হচ্ছে বেশি।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের জয়পুরহাট জেলার সমন্বয়ক লুৎফুল্লাহিল কবির আরমান বলেন, ‘চিরি নদী খনন করা হয়েছে পুরোপুরি অপরিকল্পিতভাবে। নদী খননের সময় মাটি ও বালু নদীর পাড়ের ওপর রাখা হয়েছিল। পরে বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে আবার নদীতে পড়ে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে করে কোনো সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। জনগণের কোটি কোটি টাকা খরচ করে নদী খনন করে কোনো লাভই হয়নি। নদী রক্ষাসহ পরিবেশ রক্ষা করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও আমাদের সবার সচেতন হতে হবে।’
জয়পুরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াদুল ইসলাম বলেন, ‘১২০ কোটি ৬৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকা ব্যয়ে জয়পুরহাটের ৪টি নদীর খননকাজ করা হয়েছে। এ থেকে সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছে। নদীগুলো খনন করায় বন্যার ঝুঁকি একেবারে কমে গেছে। তবে নদীগুলো বড় কোনো নদীর সঙ্গে সংযুক্ত না থাকার কারণে পানি কম থাকে। আর চিরি নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে বা কচুরিপানা জমে গেছে এ বিষয়ে আমাদের কেউ জানায়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাদ্দপ্রাপ্তি সাপেক্ষে কচুরিপানা সরানো বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কাজ করা হবে।’
মন্তব্য