সাড়ে চার বছর বয়সী আরৌশি হোসেনকে স্কুলে ভর্তি করা হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বাবা আশিক হোসেন ও মা তামান্না আক্তার ভাবছেন, তাদের মতো সাধারণ শিক্ষা নয়, মেয়েকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াবেন। সন্তানের ইংরেজি ভাষায় ভিত গড়তেই এই সিদ্ধান্ত তাদের।
কেন মেয়েকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াবেন, এমন প্রশ্নে মা তামান্না নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলার পাশাপাশি প্রত্যেকের দ্বিতীয় একটি ভাষাজ্ঞান থাকা উচিত। যেহেতু ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা, তাই ইংরেজির আলাদা একটি গুরুত্ব আছে।’
চার বছরের স্বরিৎ ঋতি ভোর এখনও স্কুলে যায়নি। তার মা নাহিদা খানমও ঠিক করে রেখেছেন সন্তানকে ইংরেজি মাধ্যমেই ভর্তি করাবেন।
নাহিদা বলেন, ‘আমাদের মতো মেয়ে যেন ইংরেজিতে দুর্বল না হয়, এ জন্য তাকে ইংরেজিতেই পড়াব। এতে বড় হয়ে কর্মক্ষেত্রে সে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে বলে আশা করছি।’
বাংলাদেশে তরুণদের ইংরেজি ভাষায় দুর্বলতা নতুন কোনো তথ্য নয়। কেবল ইংরেজিতে কথোপকথন ভালো, এই বাড়তি যোগ্যতায় ভারত ও শ্রীলঙ্কা থেকে হাজার হাজার কর্মী দেশের পোশাক খাতে কাজ করছে।
আবার বহুজাতিক অনেক কোম্পানি বা উচ্চ বেতনের বেসরকারি কোম্পানিতে হাজারও তরুণ আবেদনই করেন না ইংরেজির দুর্বলতায়।
গৃহবধূ তামান্না আক্তার বলেন, ‘আমাদের বাংলা মাধ্যমের স্কুল খারাপ, তা বলছি না। তবে সেগুলোর চেয়ে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোতে তুলনামূলকভাবে ইংরেজি ভাষায় জোর দেয়া হয়।
‘ছোট থেকে একজন শিক্ষার্থী সেই ভাষাটা রপ্ত করতে পারলে কাজ এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বাড়তি সুযোগ পাবে।’
ম্যাপললিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের স্ট্যান্ডার্ড সেভেনে পড়ছে তানহা বিনতে রহমান। সে দেশের বাইরে গিয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে চায়। ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা নিতে তার সমস্যা হচ্ছে না, বরং আগ্রহ বাড়ছে।
অভিভাবকদের আগ্রহ বাড়তে থাকায় বড় শহরগুলোর পাশাপাশি মফস্বল শহরেও এখন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল গড়ে উঠছে। আর শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেড়ে চলছে। উচ্চবিত্তদের পাশাপাশি মধ্যবিত্তদের মধ্যেও সন্তানদের ইংরেজি মাধ্যমে পাঠানোর প্রবণতা বাড়ছে।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য বলছে, ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তবে ২০১৬ সালে গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বেশির ভাগ ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্র ছিলেন, এমন তথ্য আসার পর বেশ কিছু স্কুল বন্ধ হয়ে যায়।
ব্যানবেইসের প্রধান পরিসংখ্যানবিদ শেখ মো. আলমগীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কমলেও শিক্ষার্থী প্রতিনিয়ত বেড়েছে। গত তিন বছরে আমাদের হিসাবে শিক্ষার্থী বেড়ে দেড় গুণ হয়েছে।’
তবে নার্সারি ও কেজি শ্রেণিতে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলো ব্যানবেইসের হিসাবে নেই। ফলে একেবারে শিশু শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কত, সে তথ্য দিতে পারছে না তারা।
ইংরেজি মাধ্যমে আগ্রহ বাড়ছে কেন
বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ক কাজী তায়েফ সাহাদাত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক কারিকুলামের কারণে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা বিশ্বব্যাপী। মহামারির সময়টার দিকে তাকালেই আপনি বুঝতে পারবেন কেন অভিভাবকরা ইংরেজি মাধ্যমে পড়াতে বেশি আগ্রহী।
‘কঠিন সময়ে এক দিনের জন্যও ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোর ক্লাস বন্ধ হয়নি। রুটিন অনুযায়ী অনলাইনে ক্লাস চলছে। এর বিপরীতে অন্য মাধ্যমের স্কুলগুলোর দিকে তাকালেই আপনি বাস্তব চিত্র পেয়ে যাবেন।’
ইংলিশ মিডিয়াম সানবিমস স্কুলের শিক্ষক উজ্জ্বল কুমার সরকার বলেন, ‘ইংলিশ মিডিয়ামের কারিকুলামকে সারা বিশ্বেই স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে গণ্য করা হয়। কোনো মা-বাবা যদি তার সন্তানকে বিদেশে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান, তাহলে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ালে বেশি সুবিধা পাওয়া যায়। এ ছাড়া কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরাই এগিয়ে থাকেন।’
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইংরেজি মাধ্যমে যারা পড়ছে, তারা তো বাংলা মাধ্যম থেকে অবশ্যই ভালোই শিখছে। আর এখন তো পৃথিবীটা ইংরেজির ওপরই চলছে। এটাই তো বাস্তবতা।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানোটা আমাদের সমাজের একটা আভিজাত্যের অংশ বলে মনে করা হয়। ইংরেজি ভাষা শিখলে ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষার পথ সুগম হয়। এখন এ কারণে অনেক অভিভাবক চান তার সন্তান যেন ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক ও ইতিহাসবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘উচ্চশিক্ষায়, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে লেখাপড়ার মাধ্যম ইংরেজি। আর শুদ্ধ করে ইংরেজি বলতে ও লিখতে পারার পারদর্শিতা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।
‘আবার ইংরেজি মাধ্যমের কারিকুলামের সঙ্গে উন্নত বিশ্বের কারিকুলামের মিল থাকায় এখানকার শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক বেশি।’
ইংরেজি মাধ্যমেও দুই ভাগ
ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজ ও ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন বা এডেক্সেল—এই দুটি বোর্ডের অধীনে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোর পরীক্ষা হয়।
এডেক্সেলের সেশন শুরু হয় মে-জুন আর ক্যামব্রিজের সেশন শুরু হয় অক্টোবর-নভেম্বর ও মে-জুন মাসে। বাংলাদেশে ইংরেজি মাধ্যমের সব পরীক্ষা ও ফলাফল তৈরি করে ব্রিটিশ কাউন্সিল।
ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোতে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পর্যন্ত পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। এখানে পড়াশোনার পুরোটাই হয় ইংরেজি ভাষায়।
ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সংখ্যা কত
ব্যানবেইসের তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে দেশে ১৫৯টি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের নিবন্ধন ছিল। এতে শিক্ষার্থী ছিল ৫৪ হাজার ৫০৭ জন। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ও লেভেলের ৬৪টি, এ লেভেলের ৫৪টি এবং জুনিয়র লেভেলের ৪১টি ছিল।
২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ১৪৫টিতে। তবে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৭ হাজার ৮০৯ জন।
১৪৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ‘ও লেভেলের ৩৪টি, ‘এ’ লেভেলের ১৩টি এবং জুনিয়র লেভেলের ১৮টি।
২০২০ সালেও বন্ধ হয়ে যায় তিনটি স্কুল। তবে বাড়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা। ওই বছর ১৪২টি স্কুলে পড়ত ৭৮ হাজার ২০১ জন। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ‘ও’ লেভেলের ৩১টি, ‘এ’ লেভেলের ১৫টি এবং জুনিয়র লেভেলের ১৬টি।
তবে এ পরিসংখ্যানের সঙ্গে একমত নয় বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অ্যাসোসিয়েশন। তারা জানায়, সারা দেশে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের সংখ্যা প্রায় ৩৫০ (কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো এ হিসাবের অন্তর্ভুক্ত নয়)। সেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় তিন লাখ।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন জানায়, দেশে প্রায় সাড়ে চার হাজার ইংরেজি মাধ্যমের কিন্ডারগার্টেন স্কুল আছে, যেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দুই লাখ।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান দলের ১৬ দফা ঘোষণা করেছেন। শনিবার (২৩ জুন) রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ থেকে এই ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়।
১৬ দফা ঘোষণাপত্রে রাষ্ট্রীয় সংস্কার, বিচার ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক(পিআর) নির্বাচন গ্রহণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
সংবিধানের নির্দেশিকা নীতিগুলোর মধ্যে ‘আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন, সংসদের উভয় প্রস্তাবিত কক্ষে আনুপাতিক ভোটদান (পিআর) পদ্ধতি চালু এবং বৈষম্যহীন শোষণ নিপীড়ন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে আগামী মাসে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ভবিষ্যতের স্বৈরতন্ত্রকে রোধ করতে দলটি দ্রুত, মৌলিক সংস্কার, জনপ্রশাসন পুনর্গঠন, নির্বাচনে সমান সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য এবং ‘পতিত ফ্যাসিবাদের’ সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত কর্মকর্তাদের অপসারণের আহ্বান জানিয়েছে।
দুর্নীতির বিচার, পলাতকদের ফিরিয়ে আনা, পাচার করা অর্থ পুনরুদ্ধার এবং চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসবাদ এবং হত্যার বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও জোর দেওয়া হয়েছে ঘোষণাপত্রে।
ঘোষণাপত্রে ভারতের সঙ্গে সকল চুক্তি প্রকাশ এবং যেকোনো ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ চুক্তি বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। এটি পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের আগে সকল স্তরের স্থানীয় নির্বাচন সম্পন্ন করার এবং একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এই ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে।
দলটি চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি, ঋণ খেলাপি এবং অপরাধীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে অযোগ্য ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনী পরিবেশ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহার এবং ধর্ম ও রাষ্ট্রের প্রতি বিরূপ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যেরও আহ্বান জানিয়েছেন দলটি।
ইসলামী আন্দোলন সার্বভৌমত্ব রক্ষা, নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং টেকসই শান্তি ও অগ্রগতি নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচনসহ শাসনব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে ইসলামী মূল্যবোধ অনুশীলনের আহ্বান জানানো হয়েছে ঘোষণায়।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রক্তমাখা ছুরি দেখিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি ও সেনাপ্রধানকে হত্যার হুমকি দেওয়া মো. আলমগীর হোসেন নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
(২৮ জুন ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর আহমেদ গ্রেফতার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শুক্রবার রাতে উপজেলা সদর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মো. আলমগীর হোসেন উপজেলার জাফতনগর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মহসিনের বাড়ির মৃত চুন্নু মিয়ার ছেলে।
এর আগে, শুক্রবার রাতে আওয়ামী লীগের কর্মী মো. আলমগীর হোসেন তার ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভে এসে রক্তমাখা একটি ছুরি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি ও সেনাপ্রধানকে হত্যার হুমকি দেন। এছাড়াও তাদেরকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন। সেই ভিডিওটি মুহূর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নেটিজেনরা বিভিন্ন মন্তব্য করতে থাকেন এবং তাকে গ্রেফতারের দাবি জানান।
গ্রেফতারকৃত আসামিকে ফটিকছড়ি থানায় দায়ের হওয়া একটি বিস্ফোরক মামলায় আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে ওসি জানান।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার পেছনে কোনো উসকানি কিংবা ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে আলমগীরের মোবাইল ফোন ও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট বিশ্লেষণ করা হবে।
শেরপুর জেলা শহরের বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে তিনদিনের নবজাতক কন্যা শিশু চুরি হয়েছে। শিশু ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে হাসপাতালের সামনে এলাকাবাসী বিক্ষোভ করেছে।
চুরি হওয়া নবজাতক শেরপুর জেলা শহরের চাপাতলি মহল্লার ফিরোজ মিয়া ও আবেদা বেগম দম্পত্তির কণ্যা সন্তান।
২৮ জুন সকালে এ চুরির ঘটনা ঘটে।
শিশুটির পরিবার ও স্থানীয়রা জানায়, শেরপুর জেলা শহরের চাপাতলি মহল্লার ফিরোজ মিয়ার গর্ভবতী স্ত্রী আবেদা বেগম সিজার করার জন্য শহরের বটতলার বেসরকারী ক্লিনিক ইউনাইটেড হাসপাতালে ২৫ জুন রাত আটটার সময় ভর্তি হয়। পরে সেখানে সিজারের মাধ্যমে একটি মেয়ে শিশুর জন্ম হয়। ২৮ জুন সকাল নয়টার সময় এক অজ্ঞাত মহিলা ওই শিশুটিকে চুরি করে নিয়ে যায়। বিষয়টি জানাজানি হলে দুপুরে চাপাতলি এলাকা থেকে শতাধিক নারী পুরুষ হাসপাতালে সামনে এসে বিক্ষোভ করে।
এসময় স্বজন ও এলাকাবাসি চুরি হওয়া নবজাতক ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান।
নবজাতকটির বাবা ফিরোজ মিয়া বলেন, কোথায় থেকে আমার সন্তান এনে দিবে সেটা আমি জানি না। আমি আমার সন্তান ফিরে চাই, আমি অন্য কিছু চাইনা। হাসপাতাল থেকে আমার সন্তান চুরি হয়েছে।
ইউনাইটেড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিদারুল ইসলাম জানান, শিশু চুরির বিষয়টি তদন্ত করে দোষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াসহ শিশুটি উদ্ধারে সহযোগিতা কামনা করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান ভূইয়া বলেন, খবর পাওয়ার সাথে সাথে পুলিশ চুরি হওয়া শিশুটি উদ্ধারের জন্য অভিযান শুরু করেছে। এখনো অভিযোগ দেয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে মোটর মালিক-শ্রমিকদের স্বেচ্ছাচারিতা ও শ্রমিকদের মারধরের প্রতিবাদে পাবনা থেকে ঢাকা রুটে ডাকা অনির্দিষ্টকালের জন্য দূরপাল্লার বাস ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে।
২৮ জুন দুপুরে পাবনা মোটর মালিক গ্রুপের অফিস সচিব আমিনুল ইসলাম বাবলু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, পাবনার জেলা প্রশাসক ও সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসকের মধ্যস্থতায় সমস্যা সমাধানের আশ্বাসে বাস ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল রাত ১০টার পর আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছি। মোটর মালিক গ্রুপ, বাস মিনিবাস মালিক সমিতিসহ তিনটি সংগঠনকে ডাকা হয়। আজ সকাল থেকে পাবনা-ঢাকা রুটে গাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে। আমরা আশা করি সব সমস্যার সমাধান হবে।
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ধর্মঘট থাকায় পাবনা থেকে ঢাকাগামী যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বাস না পাওয়ায় অনেকে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে বিকল্প উপায়ে ভিন্ন ভিন্ন গাড়িতে ঢাকায় ফিরেছেন। অনেকে গাড়ি না পেয়ে বাড়িতে ফিরে গেছেন।
পাবনা মোটর মালিক গ্রুপের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খাদেমুল ইসলাম বাদশা বলেন, ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ সকাল ৬টা থেকে আগের নিয়মেই দূরপাল্লার বাস ঢাকায় যাচ্ছে। পাবনার ডিসি স্যার ও সিরাজগঞ্জের ডিসি স্যার সমাধানের দায়িত্ব নেওয়ায় আমরা সম্মিলিতভাবে বসে গতকাল রাতে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছি।
পাবনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম বলেন, আপনাদের (সাংবাদিক) ধন্যবাদ জানাচ্ছি যে আপনাদের ফোনের মাধ্যমে আমি বিষযটি জানি এবং তাৎক্ষণিক সমাধান করি। মোটর মালিকরা বাস বন্ধ করে নিজেরা সমাধানের চেষ্টা করেছেন। না পেরে রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেছেন। এরপর আমি বিষয়টি জানতে পেরে ওদের সঙ্গে মিটিং করে ধর্মঘট প্রত্যাহার করিয়েছি।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে বরিশালে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এই মৃত্যু হয়। আর এই সময়ের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ২৬২ জন।
শনিবার (২৮ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের হারেও সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে বরিশাল বিভাগ। এই সময়ের মধ্যে বিভাগটিতে নতুন করে মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৪১ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৮ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ২১৪ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫৬ দশমিক ১০ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৩ দশমিক ৯০ শতাংশ নারী।
একই সময়ে (১ জানুয়ারি থেকে ২৮ জুন) পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৯ হাজার ৪৮৪ জন। এর মধ্যে ৫৮ দশমিক ৯০ শতাংশ পুরুষ এবং ৪১ দশমিক ১০ শতাংশ নারী।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এন নাসির উদ্দীনের বৈঠকের পর বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়সূচি ঘোষণার প্রত্যাশা করছে বলে জানিয়েছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচনের দিন নির্ধারণ ও সময়সূচি ঘোষণায় জনগণের প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে।’
শনিবার (২৮ জুন) চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন রিজভী।
প্রধান উপদেষ্টা ও সিইসির বৈঠকের পর বিএনপি কি নির্দিষ্ট নির্বাচনের তারিখ প্রত্যাশা করে—এমন প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, ‘আমরা নিশ্চয়ই তা আশা করি।’
এর আগে বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন সিইসি নাসির উদ্দীন। বৈঠকটি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত হয়।
রিজভী বলেন, নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা ও আলোচনার বিষয়টি বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো বিশ্বাস করে, অধ্যাপক ইউনূস ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের কল্যাণ ও গণতন্ত্রের স্বার্থেই কাজ করবেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, তারাও বিশ্বাস করেন যে, প্রধান উপদেষ্টা একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, যাতে জনগণ তাদের জবাবদিহিমূলক প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে।
বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি ও সামাজিক সংকট রয়েছে। মব কালচার আছে। এসব থেকে মুক্ত হতে হবে। গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে হবে। গত বছরেও আমাদের প্রবৃদ্ধি ছিল ৪.২। এবার সেটি হয়েছে ৩.৯। আমরা সরকারকে সেটি দেখার জন্য বলব। আমরা তো সমালোচনা করবই। অবশ্যই যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করি— নির্বাচন কমিশন দ্রুত একটি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিগত অগণতান্ত্রিক সরকার দেশের অর্থ লোপাট করেছে। দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে— যার অন্যতম নির্বাচন কমিশন ও মিডিয়া। তারা কখনও প্রকৃত গণতন্ত্র চায়নি। জনগণ মনে করে, ড. ইউনূস দেশবাসীর মনের প্রত্যাশা মোতাবেক ব্যবস্থা নেবেন।’
নারী শিক্ষার্থীকে মানসিক নিপীড়ন ও যৌন হেনস্তার অভিযোগে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. আবদুল আহাদ বিশ্বাসকে তিন বছরের জন্য সহযোগী অধ্যাপক পদে অবনমিত করা হয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ইকতিয়ার উদ্দিনের স্বাক্ষরিত ১৯ জুনের এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
চাকরি সংক্রান্ত একটি তদন্ত কমিটির সুপারিশ পর্যালোচনা করে ৩০ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের ৫৫তম সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
আদেশ অনুযায়ী, অবনমনকালীন তিন বছর ড. আহাদ বিশ্বাস কোনো ক্লাস নিতে পারবেন না। পরীক্ষার দায়িত্ব, শিক্ষার্থীদের গবেষণার তত্ত্বাবধান কিংবা শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ থেকেও তাকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া, এ সময় কোনো অসৌজন্যমূলক আচরণ বা পূর্বের অভিযোগের পুনরাবৃত্তি ঘটলে উপাচার্য তাকে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই চাকরিচ্যুত করতে পারবেন। এই বিষয়ে তার আপিল করার সুযোগও রাখা হয়নি।
তবে তিন বছর পর নির্ধারিত শর্ত পূরণ সাপেক্ষে তিনি পূর্বের পদ ও স্কেলে পশু বিজ্ঞান বিভাগে যোগ দিতে পারবেন। উল্লেখযোগ্য যে, অবনমনকালীন এই সময়সীমা তার সক্রিয় চাকরিকাল হিসেবে গণ্য হবে না।
গত বছরের ১২ ডিসেম্বর এক নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তার অভিযোগ ওঠার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ড. আহাদ বিশ্বাসকে তাৎক্ষণিকভাবে সব শিক্ষা ও পরীক্ষা কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয় এবং সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। তার অভিযোগে বলা হয়, ওই শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে তাকে মানসিকভাবে নিপীড়ন করতেন, ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ ও অপমানজনক মন্তব্য করতেন এবং একাধিকবার যৌন হেনস্তার চেষ্টা করেন। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে।
এছাড়াও ড. আহাদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের নাম্বার আটকিয়ে দেওয়া, পরীক্ষায় অনৈতিকভাবে নম্বর কেটে দেওয়া এবং টানা ৪-৫ ঘণ্টা ধরে অনলাইন ক্লাস নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। গত বছরের ১৮ নভেম্বর, ২০১৮-১৯ বর্ষের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ নিয়ে রেজিস্ট্রার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ড. আহাদ বিশ্বাসের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য