রাত সাড়ে তিনটায় অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর ক্লাস নেয়ার ঘটনায় তার বোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ।
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভিভাবক সংস্থার প্রধান বলেছেন, ‘সব কিছুর একটা সীমা থাকে।’
কলিমুল্লাহ বেগম রোকেয়ায় চার বছর উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করলেও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ প্রশ্ন তুলেছেন কলিমুল্লাহর মানসিক সুস্থতা নিয়ে।
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে যোগ দেয়ার পর থেকে গত চারটি বছর ধরে কলিমুল্লাহর নানা উদ্ভট কর্মকাণ্ড নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে বারবার।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যান না, তার মাকে করেছেন নিয়োগ বোর্ডের সদস্য, একের পর এক স্বজনকে বসিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা পদে। আর এর মধ্যে দিনে ২২ ঘণ্টা কাজ করার দাবি, সব শেষ অনিয়মের তদন্ত ঠেকাতে হাইকোর্টে করেছেন রিট।
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, ছাত্রদের একটি বড় অংশ কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ। তার অনুপস্থিতিতে সেখানে প্রশাসনিক কার্যক্রম গত চার বছরে ব্যাহত হয়েছে নানাভাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্যকে নিয়োগ দেয়ার পর কলিমুল্লাহর উপস্থিতি কার্ড নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজনও করা হয়েছে।
উপাচার্য হিসেবে কলিমুল্লাহর মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৩ জুন। তার আগে বৃহস্পতিবার ভোরের আলো ফোটার আগে আগে অনলাইনে তার ক্লাস নেয়ার ঘটনা নিয়ে আলোচনার ঝড়।
কেন এই কাজ করতে গেলেন তিনি, তার কোনো ব্যাখ্যা দেননি। গত দুই দিন ধরে তাকে ফোন করে হয়রান হয়েছে নিউজবাংলা। একাধিক নম্বর থেকে কল করেও তার সাড়া মেলেনি।
অন্যদিকে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলছেন, কলিমুল্লাহর সমস্যা তার ব্যক্তিত্বে।
গত ৯ জুন রাত সাড়ে ৮টায় কলিমুল্লাহ ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের ‘পলিটিক্যাল থট’ কোর্সের ক্লাস নেবেন বলে জানান। এরপর রাত ৩টা ২০ মিনিটে গুগল মিটে ক্লাস শুরু করেন। ক্লাস শেষ হয় ৩টা ৫৫ মিনিটে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী একজন শিক্ষক এত রাতে ক্লাস নিতে পারেন কি না, এমন প্রশ্নে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সবকিছু তো আইনে লেখা থাকে না। এটা তো ম্যাটার অফ প্রপার সেন্স। এ ঘটনা শুনে আমি হেসেছি। সবকিছুরই একটা লিমিট থাকে।’
তিনি বলেন, ‘এত রাতে পড়াশোনা হয় কি না, এটাই প্রশ্ন। আমি তো কখনও শুনিনি এত রাতে কোনো শিক্ষক ক্লাস নেন। আমি মনে করি, এটা তার ব্যক্তিত্বের সমস্যা। এ ধরনের ঘটনা প্রত্যাশিত নয়।'
‘কী এমন ঘটনা ঘটল যে রাত তিনটায় ক্লাস নিতে হবে? ইটস নট এ গুড প্র্যাকটিস’-বলেন ইউজিসি চেয়ারম্যান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ বলেন, ‘একজন শিক্ষক তো কখনই এ ধরনের কাজ করতে পারেন না। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ এটা কীভাবে করেন, তা আমার জানা নেই।’
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সংগঠন ‘অধিকার সুরক্ষা পরিষদ’ এর আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একজন শিক্ষক হিসেবে নয়, একজন সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ এত রাতে ক্লাস নেবেন, এটা ভাবা যায় না। শিক্ষক হিসেবে আমি লজ্জিত।’
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘এগুলো তো মন্তব্যের বাইরে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের জন্য অশোভন ও দুঃখজনক। এত তো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ভাবমূর্তি নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপাচার্যরা তো হবেন পথপ্রদর্শক। তারা যদি এমন অশোভন ও হাস্যকর কাজ করেন, তাহলে তো শুধু তারাই ব্যর্থ নন, এতে প্রতিষ্ঠানও হেয় হয়।’
কলিমুল্লাহর আরও যত কাণ্ড
নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ ছিল ক্যাম্পাসে যাননি। অথচ ২০১৮ সাল থেকে প্রতি শিক্ষাবছরে তার নামে বিভিন্ন বিভাগের বেশ কিছু কোর্স বরাদ্দ ছিল। তিনি দুটি অনুষদের ডিন, একটি ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান, দুটি বিভাগের প্রধান ছিলেন।
এখনও তিনি অন্তত ১২টি বিভাগের বিভিন্ন কোর্স পড়ানোর দায়িত্বে আছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, একজন শিক্ষকের জন্য নিয়মিত ১০টি কোর্স নেয়াই কঠিন। কারণ প্রতিটি কোর্সে কমপক্ষে ৪০টি ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, টিউটোরিয়াল, মিডটার্ম পরীক্ষা নেয়াসহ উত্তরপত্র মূল্যায়ন ইত্যাদি করতে হয়। অথচ তিনি উপাচার্য পদে থেকে দিনের পর দিন ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থেকেও এই বিপুলসংখ্যক কোর্স নিচ্ছেন। বিষয়টি অবিশ্বাস্য।
কর্মচারী দিয়ে পরীক্ষা নেন উপাচার্য
তিনি দুই-একটি ক্লাস নিলেও পরীক্ষা নিয়েছেন কর্মকর্তা ও কর্মচারী দিয়ে। কোনো কোনো কোর্সে একটি ক্লাস নিয়ে কোর্স শেষ করেছেন। পরে শিক্ষার্থীদের ৭৫ শতাংশ উপস্থিত দেখিয়ে পরীক্ষা নিয়েছেন।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে লোকপ্রশাসন বিভাগে ভর্তি হওয়া এক শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষেই ভর্তি বাতিল করে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে গেছেন। সব সেমিস্টারেই তাকে অনুপস্থিত দেখানো হলেও কলিমুল্লাহর কোর্সে তাকে উপস্থিত দেখানো হয়েছে।
উপস্থিতি, ইনকোর্স, টিউটোরিয়াল ও মিডটার্মে তাকে নম্বরও দেয়া হয়েছে। এমনকি মিডটার্মের লিখিত পরীক্ষায় ২৫-এ পেয়েছেন ২৭।
এ ছাড়া পরপর দুইবার ফেল করা সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রকে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে উপাচার্য পরীক্ষার ফরম পূরণ করিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিয়েছেন, যা সম্পূর্ণ বেআইনি।
একটি ক্লাস নিয়েই কোর্স শেষ
লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের ২য় বর্ষের ২য় সেমিস্টারে এমন ঘটনা ঘটেছে। কলিমুল্লাহ নিয়েছেন মাত্র একটি ক্লাস, যা নেয়া হয় প্রশাসন ভবনের সিন্ডিকেট রুমে রাত ১১টায়। তবে একটি ক্লাস নিলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দেখানো হয়েছে ৭৫ শতাংশ।
আরেকটি কোর্সে নিয়েছেন তিনটি ক্লাস।
দুর্নীতির অভিযোগ
কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির ৪৫টি অভিযোগ আছে। ইউজিসির তদন্তে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার পর দ্বিতীয় তদন্ত চলছে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় কমিটি।
প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ১০তলা ভবন ও একটি স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণকাজে অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এর জন্য উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ওই কমিটির প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।
ওই কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশে কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে করা হয় আরও একটি কমিটি।
সেই কমিটির তদন্ত ঠেকাতে গত ২৭ মে হাইকোর্টে রিট করেছেন কলিমুল্লাহ।
কলিমুল্লার রুচি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও
গত ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন জমা পড়ার পর ৪ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে তিনি শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে দোষারোপ করেন।
তার অভিযোগ, শিক্ষামন্ত্রীর আশ্রয়-প্রশ্রয় ও আশকারায় তার বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছে।
সেদিন শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে কলিমুল্লাহর বক্তব্য খণ্ডন করে বলেন, ‘মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কলিমুল্লাহ যে বক্তব্য রেখেছেন তা শুধু অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনকই নয়, নিতান্তই রুচিবিবর্জিত।’
আরও পড়ুন:জনদুভোর্গ এড়াতে চলমান এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা উপলক্ষে পরীক্ষার্থীদের সকাল সাড়ে ৮টা থেকে কেন্দ্র চত্বরে প্রবেশের জন্য জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। তবে পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশ-সংক্রান্ত আগে সব নির্দেশনা বহাল থাকবে বলেও জানানো হয়।
গতকাল শনিবার ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দারের সই করা জরুরি স্মারকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলমান এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৫-এর পরীক্ষা কেন্দ্রসমূহের আশপাশের যানজট ও জনদুভোর্গ লাঘবের লক্ষ্যে কেবলমাত্র পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্র চত্বরে সকাল ৮.৩০ থেকে প্রবেশের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।
তবে পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশ সংক্রান্ত পূর্বের নির্দেশনা বহাল থাকবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা বোর্ডের আওতাধীন এইচএসসি পরীক্ষার সব কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কারণে দেরি হওয়ায় এইচএসসির প্রথম দিন সময়মতো পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেননি আনিসা আহমেদ নামে এক পরীক্ষার্থী। ফলে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি তিনি। তবে মানবিক দিক বিবেচনায় তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার।
গতকাল শুক্রবার শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরারের বরাত দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
বার্তায় বলা হয়, চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। অসুস্থ মাকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেরি হওয়ায় প্রথম দিনের এইচএসসি পরীক্ষায় রাজধানীর সরকারি মিরপুর বাঙলা কলেজ কেন্দ্রের এক পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা না দিতে পারার ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে।
এ বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা সিআর আবরার বলেছেন, ‘মানবিক বিবেচনায় ওই শিক্ষার্থীর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণ সংক্রান্ত আইন ও বিধির আলোকে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।’
তিনি বলেছেন, ‘তার এ দুঃসময়ে আমরাও সমব্যথী। এ পরীক্ষার্থীকে উদ্বিগ্ন না হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সারাদেশে একযোগে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। কিন্তু মায়ের মেজর স্ট্রোকের কারণে কেন্দ্রে পৌঁছাতে দেড় ঘণ্টা দেরি হয় ওই ছাত্রীর। শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ মেলেনি তার। পরীক্ষাকেন্দ্রের গেটের বাইরে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে ফিরে যান তিনি।
এরপর সেদিন দুপুরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা না দিতে পারার ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওতে তাকে কেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদতে দেখা যায়।
সে সময় কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও অন্য দায়িত্বরতরা জানান, নিয়মের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ জানান অনেকে। অনেকে সমালোচনাও করেন। অবশেষে সরকারে নজরে আসায় কপাল খুলছে তার।
জামালপুর ও কিশোরগঞ্জে গতকাল শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি ১৭ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে জামালপুরে প্রবেশপত্র না পাওয়ায় এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি ১৭ জন শিক্ষার্থী। আর কিশোরগঞ্জের ভৈরবে কলেজ কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি পরীক্ষার্থী মারজিয়া বেগম। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত; রাজু আহমেদ জামালপুর থেকে জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার সারাদেশে একযোগে শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি ১৭ জন শিক্ষার্থী। এ নিয়ে সকাল থেকে কলেজ প্রাঙ্গণে আন্দোলন করে পরীক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় প্রশান্তি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে তালা লাগিয়ে গা ঢাকা দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। জানা যায়, জামালপুর শহরের দড়ি পাড়ায় বেসরকারিভাবে কয়েক বছর থেকে পরিচালিত হয়ে আসছে প্রশান্তি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। মাধ্যমিক স্কুলের রেজিস্ট্রেশন থাকলেও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি না থাকায় জেলার বিভিন্ন কলেজ থেকে ছাত্রদের পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন অধ্যক্ষ রেজাউল ইসলাম সেলিম। পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র বাবদ অর্থ নিলেও পরীক্ষার আগে প্রবেশপত্র সরবরাহ করতে পারেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় সকাল থেকে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করেছে ওই কলেজে পরীক্ষা দিতে না পারা শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। এ বিষয়ে জানতে প্রশান্তি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল ইসলাম সেলিমের সঙ্গে যোগযোগ করার জন্য কলেজে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইলে একাধিকার কল দিলেও তিনি ধরেননি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) আফসানা তাসলিম জানান, কোনো শিক্ষার্থী বা অভিভাবক আমাদের কিছু জানায়নি। তবে প্রশান্তি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরীক্ষা বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা লিখিতভাবে আবেদন বা অভিযোগ দিলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। চলতি বছরে এইচএসসি পরীক্ষায় জেলায় ৫২টি কেন্দ্রে ২৬ হাজার ৫৭৫ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে।
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জের ভৈরবে কলেজ কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি পরীক্ষার্থী মারজিয়া বেগম। ফরম পূরণ করেও পরীক্ষার প্রবেশপত্র না পাওয়ায় চরম হতাশায় পড়েছে সে ও তার পরিবার। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। মারজিয়া গজারিয়া ইউনিয়নের বাঁশগাড়ি গ্রামের জেড. রহমান প্রিমিয়ার ব্যাংক স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের ছাত্রী। সময়মতো ২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে ফরম পূরণ করলেও পরীক্ষার আগে প্রবেশপত্র তুলতে গিয়ে জানতে পারে, তার অ্যাডমিট কার্ড আসেনি। কলেজ অফিস সহকারী মো. শফিক একাধিকবার আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত জানানো হয়, ‘ডাবল ক্লিকের’ কারণে ফরম বাতিল হয়েছে। মারজিয়া বলেন, ‘আমি টেস্ট পরীক্ষায় ৪.০৭ পেয়েছিলাম, আর ফাইনাল পরীক্ষার জন্য আরও ভালো প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু প্রবেশপত্র না পাওয়ায় বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষায় অংশ নিতে পারিনি। পুরো এক বছর হারিয়ে গেল আমার জীবনের।’ তার বাবা স্বপন মিয়া বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের ভুলে আমার মেয়ে পরীক্ষায় বসতে পারেনি। কলেজের শিক্ষকরা ভুল স্বীকার করে আমাদের বাড়িতে এসে পরের বছর বিনা ফিতে পরীক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে আইনি ব্যবস্থা নিইনি।’ কলেজ অফিস সহকারী মো. শফিক বলেন, ‘ফরম পূরণের সময় ভুল করে ‘ডাবল ক্লিক’ করায় তা বাতিল হয়ে যায়। এটি আমাদের ভুল।’ অধ্যক্ষ শরীফ আহমেদ জানান, ‘ঘটনার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ দায়ী। শিক্ষা বোর্ডে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোনো সমাধান হয়নি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শবনম শারমিন বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস.এম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, ‘অ্যাডমিট কার্ড বোর্ড থেকে আসার পর দ্রুত বিতরণ করলে ভুল সংশোধনের সুযোগ থাকে। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান তা পরীক্ষার আগের দিন দেয়, ফলে এমন সমস্যা হয়। তবে এ ঘটনায় অফিস সহকারীর পক্ষ থেকে বোর্ডে কোনো যোগাযোগ হয়নি।’
ঢাকা মহানগরীসহ সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোন্নয়ন ও যাচাইয়ের লক্ষ্যে ‘এসেসমেন্ট টুলস’ ব্যবহারের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। দীর্ঘ ছয় মাস ব্যাপী এই পরিকল্পনা শুরু হচ্ছে ১ জুলাই থেকে।
এই টুলস প্রয়োগের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার মান, মেধাবিকাশ, স্কুলে উপস্থিতি, স্কুলের চারপাশের পরিবেশ, স্কুলে পাঠদানের পদ্ধতিসহ প্রাথমিক শিক্ষার সার্বিক মান উন্নয়নে ভবিষ্যতে কি পদক্ষেপ নেয়া যায় তা সরে জমিনে যাচাই করে প্রকৃত তথ্য তুলে আনা হবে।
পরবর্তীতে এই টুলস এর মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতে প্রাইমারি শিক্ষার মান ও ভিত্তি আরো শক্তিশালী করার বিষয়ে বাস্তবধর্মী উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১ জুলাই থেকে আগামী ৬ মাসে এই অ্যাসেসমেন্ট টুলস এর মাধ্যমে সারা দেশের প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার প্রকৃত চিত্র তুলে আনা হবে। জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক, উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে বিভাগীয় কমিশনারগণ স্ব স্ব অধিভুক্ত এলাকার প্রাইমারি স্কুলের এই পদ্ধতির কার্যক্রম তদারকি করবেন।
কর্মকর্তারা জানান, অ্যাসেসমেন্ট টুলস এর মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে পিছিয়ে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার মান উন্নয়নে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিয়োজিত করা হবে। এ বিষয়ে বিষদ পরিকল্পনা সরকারের নেয়া আছে।
এদিকে বুধবার (২৫ জুন) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি এন্ড অপারেশন) মোহাম্মদ কামরুল হাসান, এনডিসি স্বাক্ষরিত এক পত্রে অ্যাসেসমেন্ট টুলস এর মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
পত্রে বলা হয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক প্রণীত এসেসমেন্ট টুলস এর মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা, গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে শিখন অবস্থান নির্ধারণ এবং বিষয়ভিত্তিক কর্মপদ্ধতি ও কর্মপরিকল্পনা অনুসরণ করে শিখন অবস্থার উন্নয়নে স্তরভিত্তিক পাঠদানের ব্যবস্থা করা আবশ্যক। অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের অবস্থার উন্নয়নে প্রস্তুতকৃত এসেসমেন্ট টুলস এর মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর জানায়, বিদ্যালয় পর্যায়ে এসেসমেন্ট টুলেসের ভিত্তিতে শতভাগ শিক্ষার্থীর তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির প্রতিটি শিক্ষার্থীর বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ের বর্তমান অবস্থান আগামী ১ জুলাই থেকে আগস্ট যাচাই করা হবে। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক যাচাইয়ের কাজ সম্পন্ন করবেন।
পাশাপাশি শিখন অবস্থানের ভিত্তিতে শিখন ঘাটতি দূরীকরণে যথাযথ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ১৬ থেকে ২৩ জুলাইয়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকগণ তা বাস্তবায়ন করবেন। একই সঙ্গে শিখন ঘাটতি দূরীকরণে যথাযথ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। আগামী ২৪ জুলাই থেকে ৩১ আগস্টের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকগণ তা বাস্তবায়ন করবেন।
টুলস ব্যবহার করে যেকোনো একটি বিদ্যালয়ের ২৫ ভাগ শিক্ষার্থীর মান পুনঃযাচাই করা হবে। এদের মধ্যে ১০ ভাগ শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতি যাচাই করা হবে। আগামী ১ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত প্রতি কার্যদিবসে একটি শ্রেণীর একটি বিষয়ের এসেসমেন্ট কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। অধিক শিক্ষার্থী বিশিষ্ট বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত এক দিন কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে। এসেসমেন্ট চলাকালীন অন্যান্য শ্রেণীকার্যক্রম যথারীতি চলবে।
জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব মো. কামরুল হাসান বাসসকে বলেন, সরকার প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এসেসমেন্ট টুলসের মাধ্যমে মেধাবী ছাড়াও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদেরও শিক্ষার মানোন্নয় হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক ভালো ভালো স্কুল আছে আবার পিছিয়ে পড়া স্কুলও আছে আমরা সকল স্কুলেই শিক্ষার মানোন্নয়ন দেখতে চাই এজন্যই এই পরিকল্পনা সরকারের।’
১৯ জুন ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) এর ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভা বিইউপির বিজয় অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিইউপির উপাচার্য ও সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ মাহ্বুব-উল আলম, বিএসপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, এমফিল, পিএইচডি।
সভার শুরুতে বিইউপির উপাচার্য ও সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ মাহ্বুব-উল আলম বিদায়ী সদস্যদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং নবনিযুক্ত সদস্যদের স্বাগত জানান। পরে বিইউপির ট্রেজারার এয়ার কমডোর মোঃ রেজা এমদাদ খান, জিইউপি, বিইউপি, এনডিসি, পিএসসি, জিডি(পি), ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ১৩৪ কোটি ৮ লক্ষ টাকা ও ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের ১৩৪ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন।
সিনেট সদস্যগণ ট্রেজারার এর বক্তৃতার ওপর আলোচনা করেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে বাজেট প্রস্তাব অনুমোদন করেন। এছাড়াও সিনেট সভায় ১৭তম বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপিত ও সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়। ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভাটি সার্বিকভাবে সঞ্চালনা করেন বিইউপির রেজিস্ট্রার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ রাব্বি আহসান, এনডিসি, পিএসসি।
সভায় সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মাহ্বুব তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিইউপি বয়সে নবীন হলেও এর শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকগণের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও গবেষণা ভিত্তিক কার্যক্রমের অর্জনসমূহ জাতীয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সুনাম বয়ে আনছে। যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদান, গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নিত হওয়ার লক্ষ্যে অত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক একটি সুনির্দিষ্ট Academic Strategic Plan –২০৫০ প্রণয়ন করা হয়েছে।
Academic Strategic Plan এর মাধ্যমে পাঠ্যক্রমের আধুনিক মান নির্ধারণ, Outcome Based Education (OBE) কারিকুলাম প্রনয়ণ, গবেষণা, উদ্ভাবন, প্রকাশনা ও গবেষণা সহায়তার সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
মাননীয় উপাচার্য সকলকে অবহিত করেন যে বিইউপি’র গবেষণাভিত্তিক অগ্রযাত্রায় BUP Research Centre (BRC) অংঙ্গীভূত ফ্যাকাল্টি ও অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে গবেষণা, উদ্ভাবন ও পরামর্শমূলক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে কাজ করছে। 'Inspiring Innovation for Advancing Knowledge' শ্লোগানকে ধারণ করে, BUP Research Centre, গবেষকদের মানসম্মত গবেষণায় উৎসাহ দিচ্ছে এবং শিল্প-প্রতিষ্ঠান ও একাডেমিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এছাড়াও তিনি উল্লেখ করেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষকদের গবেষণালব্ধ জ্ঞান প্রসারের উদ্দেশ্যে বিইউপি থেকে ৫টি জার্নাল প্রতিবছর নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে যা সকলের মাঝে সমাদৃত। সিনেট চেয়ারম্যান আরও উল্লেখ করেন যে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পাশাপাশি একজন সুশৃঙ্খল, নৈতিকতা সম্পন্ন সু-নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিইউপি বদ্ধপরিকর এবং সে লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের চারিত্রিক গুণাবলি ও আত্মিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সকল প্রোগ্রামের পাঠ্যক্রমে নৈতিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে Need Based Education - কেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন যে, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের মানসম্মত কারিকুলাম ও শিক্ষা পরিবেশের পাশাপাশি বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক সান্নিধ্যের গুরুত্বকে সামনে রেখে বিইউপি'তে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, নবপ্রজন্মের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ, সততা, চরিত্র গঠন ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং দেশপ্রেম জাগ্রত করতে পড়াশোনার পাশাপাশি বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, জাতীয় দিবসগুলোর তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য তুলে ধরে বিইউপি’র বিভিন্ন আলোচনা সভা, সিম্পোজিয়াম, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের কথা উল্লেখ করেন।
এই সিনেট সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং বিইউপির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউএফটি) এ শুরু হতে যাচ্ছে ভর্তি মেলা, যা চলবে আগামী ২২ জুন থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত। ২০২৫ সালের ফল সেমিস্টারকে কেন্দ্র করে আয়োজিত এই মেলায় শিক্ষার্থীরা পাবেন ভর্তি ফি'তে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং বিশেষ স্কলারশিপের সুবিধা।
বিশ্বমানের শিক্ষা, আধুনিক প্রযুক্তি ও বাস্তবমুখী অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে বিইউএফটি ইতোমধ্যে দেশের অন্যতম শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এখানে ফ্যাশন ডিজাইন, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের পাশাপাশি ব্যবসায় প্রশাসন, ইংরেজি, কম্পিউটার সায়েন্স ও পরিবেশ বিজ্ঞানের মতো চাহিদাসম্পন্ন বিষয়গুলোতে শিক্ষা দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাসে রয়েছে অত্যাধুনিক ল্যাব, প্রফেশনাল ডিগ্রি, ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট কোর্সের ব্যবস্থা, যেখানে ৫০টিরও বেশি ল্যাব, ২০টিরও বেশি প্রফেশনাল প্রোগ্রাম এবং দক্ষ শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে শেখার সুযোগ পান। পাশাপাশি দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যুক্ত থেকে শিক্ষার্থীরা ইন্টার্নশিপ ও চাকরির সুযোগও পান।
বিইউএফটির বৈশ্বিক সংযোগও শিক্ষার্থীদের জন্য বড় একটি সুযোগ। অস্ট্রেলিয়া, চীন, কোরিয়া, জার্মানি সহ ৩০টিরও বেশি দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম এবং যৌথ গবেষণা কার্যক্রমের সুযোগ রয়েছে। ফলে বিদেশে পড়াশোনা এবং স্কলারশিপ পাওয়ার পথও খুলে যায়।
শুধু একাডেমিক নয়, বিইউএফটি শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ২২টি স্টুডেন্ট ক্লাব, গবেষণা, ফ্যাশন শো, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সুযোগ। এখানকার সাবেক শিক্ষার্থীদের অনেকেই ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশে সফল ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছেন।
বিশেষায়িত এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি হয়ে তরুণ শিক্ষার্থীরা গড়তে পারেন তাদের স্বপ্নের ভবিষ্যৎ। ভর্তি মেলায় অংশ নিয়ে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা ও কোর্স সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ রয়েছে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য।
বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ একাডেমি অফ সায়েন্স গত ১৮ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে, ১৬ তম কাউন্সিল সভায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য, অধ্যাপক ড. এ. বি. এম. বদরুজ্জামানকে ফেলো হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করেছেন। এই মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা প্রকৌশলবিদ্যায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান এবং বাংলাদেশ ও দেশের বাইরে তাঁর প্রকৌশল ও বৈজ্ঞানিক মেধাকে স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের ডিসটিংগুইশড অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে, যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল পরিবেশ বিজ্ঞান। তিনি আর্সেনিক কন্টামিনেশন, সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, সারফেস এন্ড গ্রাউন্ড ওয়াটার কোয়ালিটি মডেলিং, এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, হেভি মেটাল স্পিসিয়েশন ও ট্রান্সপোর্টেশান ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা করেন। গ্রাউন্ড ওয়াটারের আর্সেনিক দূষণ এবং প্রতিরোধের মডেলের উপর বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০১২ সালে প্রিন্স সুলতান বিন আব্দুল আজিজ পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি মালয়েশিয়ান ইনভেনশন এন্ড ডিজাইন সোসাইটি কর্তৃক প্রদত্ত আইটেক্স গোল্ড মেডেল লাভ করেন। প্রফেসর বদরুজ্জামান বৈজ্ঞানিক জার্নালগুলোতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রকাশনা করেছেন যা তাঁর গবেষণার ক্ষেত্রে একজন উদীয়মান গবেষক হিসেবে তাঁর পান্ডিত্য নির্দেশ করে। তিনি এখন পর্যন্ত মোট ইমপেক্ট ফ্যাক্টর স্কোর ৪২৫, ৬,০৭৩ টি সাইটেশন, এইচ সূচক ৩১, আই ১০ সূচক ৪৮ সহ চিত্তাকর্ষক মেট্রিকস অর্জন করেছেন। বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশল অনুসন্ধানে তাঁর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্ব এবং পরামর্শ কেবল প্রকৌশল বিদ্যাকে সমৃদ্ধি করেনি বরং গবেষকদের একটি নতুন প্রজন্মকে জ্ঞান এবং আবিষ্কারের সন্ধান শুরু করতে অনুপ্রাণিত করেছে। প্রফেসর বদরুজ্জামান বিভিন্ন কনফারেন্স সেমিনার I ওয়ার্কশপে e³…Zv প্রদানের মাধ্যমে তাঁর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করে থাকেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটিতে, এবং ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট অস্টিন-এ ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য
মন্তব্য