রাত সাড়ে তিনটায় অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর ক্লাস নেয়ার ঘটনায় তার বোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ।
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভিভাবক সংস্থার প্রধান বলেছেন, ‘সব কিছুর একটা সীমা থাকে।’
কলিমুল্লাহ বেগম রোকেয়ায় চার বছর উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করলেও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ প্রশ্ন তুলেছেন কলিমুল্লাহর মানসিক সুস্থতা নিয়ে।
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে যোগ দেয়ার পর থেকে গত চারটি বছর ধরে কলিমুল্লাহর নানা উদ্ভট কর্মকাণ্ড নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে বারবার।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যান না, তার মাকে করেছেন নিয়োগ বোর্ডের সদস্য, একের পর এক স্বজনকে বসিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা পদে। আর এর মধ্যে দিনে ২২ ঘণ্টা কাজ করার দাবি, সব শেষ অনিয়মের তদন্ত ঠেকাতে হাইকোর্টে করেছেন রিট।
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, ছাত্রদের একটি বড় অংশ কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ। তার অনুপস্থিতিতে সেখানে প্রশাসনিক কার্যক্রম গত চার বছরে ব্যাহত হয়েছে নানাভাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্যকে নিয়োগ দেয়ার পর কলিমুল্লাহর উপস্থিতি কার্ড নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজনও করা হয়েছে।
উপাচার্য হিসেবে কলিমুল্লাহর মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৩ জুন। তার আগে বৃহস্পতিবার ভোরের আলো ফোটার আগে আগে অনলাইনে তার ক্লাস নেয়ার ঘটনা নিয়ে আলোচনার ঝড়।
কেন এই কাজ করতে গেলেন তিনি, তার কোনো ব্যাখ্যা দেননি। গত দুই দিন ধরে তাকে ফোন করে হয়রান হয়েছে নিউজবাংলা। একাধিক নম্বর থেকে কল করেও তার সাড়া মেলেনি।
অন্যদিকে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলছেন, কলিমুল্লাহর সমস্যা তার ব্যক্তিত্বে।
গত ৯ জুন রাত সাড়ে ৮টায় কলিমুল্লাহ ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের ‘পলিটিক্যাল থট’ কোর্সের ক্লাস নেবেন বলে জানান। এরপর রাত ৩টা ২০ মিনিটে গুগল মিটে ক্লাস শুরু করেন। ক্লাস শেষ হয় ৩টা ৫৫ মিনিটে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী একজন শিক্ষক এত রাতে ক্লাস নিতে পারেন কি না, এমন প্রশ্নে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সবকিছু তো আইনে লেখা থাকে না। এটা তো ম্যাটার অফ প্রপার সেন্স। এ ঘটনা শুনে আমি হেসেছি। সবকিছুরই একটা লিমিট থাকে।’
তিনি বলেন, ‘এত রাতে পড়াশোনা হয় কি না, এটাই প্রশ্ন। আমি তো কখনও শুনিনি এত রাতে কোনো শিক্ষক ক্লাস নেন। আমি মনে করি, এটা তার ব্যক্তিত্বের সমস্যা। এ ধরনের ঘটনা প্রত্যাশিত নয়।'
‘কী এমন ঘটনা ঘটল যে রাত তিনটায় ক্লাস নিতে হবে? ইটস নট এ গুড প্র্যাকটিস’-বলেন ইউজিসি চেয়ারম্যান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ বলেন, ‘একজন শিক্ষক তো কখনই এ ধরনের কাজ করতে পারেন না। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ এটা কীভাবে করেন, তা আমার জানা নেই।’
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সংগঠন ‘অধিকার সুরক্ষা পরিষদ’ এর আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একজন শিক্ষক হিসেবে নয়, একজন সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ এত রাতে ক্লাস নেবেন, এটা ভাবা যায় না। শিক্ষক হিসেবে আমি লজ্জিত।’
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘এগুলো তো মন্তব্যের বাইরে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের জন্য অশোভন ও দুঃখজনক। এত তো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ভাবমূর্তি নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপাচার্যরা তো হবেন পথপ্রদর্শক। তারা যদি এমন অশোভন ও হাস্যকর কাজ করেন, তাহলে তো শুধু তারাই ব্যর্থ নন, এতে প্রতিষ্ঠানও হেয় হয়।’
কলিমুল্লাহর আরও যত কাণ্ড
নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ ছিল ক্যাম্পাসে যাননি। অথচ ২০১৮ সাল থেকে প্রতি শিক্ষাবছরে তার নামে বিভিন্ন বিভাগের বেশ কিছু কোর্স বরাদ্দ ছিল। তিনি দুটি অনুষদের ডিন, একটি ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান, দুটি বিভাগের প্রধান ছিলেন।
এখনও তিনি অন্তত ১২টি বিভাগের বিভিন্ন কোর্স পড়ানোর দায়িত্বে আছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, একজন শিক্ষকের জন্য নিয়মিত ১০টি কোর্স নেয়াই কঠিন। কারণ প্রতিটি কোর্সে কমপক্ষে ৪০টি ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, টিউটোরিয়াল, মিডটার্ম পরীক্ষা নেয়াসহ উত্তরপত্র মূল্যায়ন ইত্যাদি করতে হয়। অথচ তিনি উপাচার্য পদে থেকে দিনের পর দিন ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থেকেও এই বিপুলসংখ্যক কোর্স নিচ্ছেন। বিষয়টি অবিশ্বাস্য।
কর্মচারী দিয়ে পরীক্ষা নেন উপাচার্য
তিনি দুই-একটি ক্লাস নিলেও পরীক্ষা নিয়েছেন কর্মকর্তা ও কর্মচারী দিয়ে। কোনো কোনো কোর্সে একটি ক্লাস নিয়ে কোর্স শেষ করেছেন। পরে শিক্ষার্থীদের ৭৫ শতাংশ উপস্থিত দেখিয়ে পরীক্ষা নিয়েছেন।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে লোকপ্রশাসন বিভাগে ভর্তি হওয়া এক শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষেই ভর্তি বাতিল করে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে গেছেন। সব সেমিস্টারেই তাকে অনুপস্থিত দেখানো হলেও কলিমুল্লাহর কোর্সে তাকে উপস্থিত দেখানো হয়েছে।
উপস্থিতি, ইনকোর্স, টিউটোরিয়াল ও মিডটার্মে তাকে নম্বরও দেয়া হয়েছে। এমনকি মিডটার্মের লিখিত পরীক্ষায় ২৫-এ পেয়েছেন ২৭।
এ ছাড়া পরপর দুইবার ফেল করা সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রকে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে উপাচার্য পরীক্ষার ফরম পূরণ করিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিয়েছেন, যা সম্পূর্ণ বেআইনি।
একটি ক্লাস নিয়েই কোর্স শেষ
লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের ২য় বর্ষের ২য় সেমিস্টারে এমন ঘটনা ঘটেছে। কলিমুল্লাহ নিয়েছেন মাত্র একটি ক্লাস, যা নেয়া হয় প্রশাসন ভবনের সিন্ডিকেট রুমে রাত ১১টায়। তবে একটি ক্লাস নিলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দেখানো হয়েছে ৭৫ শতাংশ।
আরেকটি কোর্সে নিয়েছেন তিনটি ক্লাস।
দুর্নীতির অভিযোগ
কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির ৪৫টি অভিযোগ আছে। ইউজিসির তদন্তে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার পর দ্বিতীয় তদন্ত চলছে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় কমিটি।
প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ১০তলা ভবন ও একটি স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণকাজে অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এর জন্য উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ওই কমিটির প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।
ওই কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশে কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে করা হয় আরও একটি কমিটি।
সেই কমিটির তদন্ত ঠেকাতে গত ২৭ মে হাইকোর্টে রিট করেছেন কলিমুল্লাহ।
কলিমুল্লার রুচি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও
গত ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন জমা পড়ার পর ৪ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে তিনি শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে দোষারোপ করেন।
তার অভিযোগ, শিক্ষামন্ত্রীর আশ্রয়-প্রশ্রয় ও আশকারায় তার বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছে।
সেদিন শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে কলিমুল্লাহর বক্তব্য খণ্ডন করে বলেন, ‘মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কলিমুল্লাহ যে বক্তব্য রেখেছেন তা শুধু অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনকই নয়, নিতান্তই রুচিবিবর্জিত।’
আরও পড়ুন:কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ এনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের হাউস টিউটরের পদ ছাড়লে আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মু. আলী মুর্শেদ কাজেম।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে তিনি পদত্যাগপত্র পাঠান।
পদত্যাগপত্রে মুর্শেদ কাজেম উল্লেখ করেন, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে সৃষ্ট অচলাবস্থার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করা, পদোন্নতিতে অযাচিত শর্তারোপ ও জৈষ্ঠতা লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে সম্মানিত সাধারণ শিক্ষকদের উত্থাপিত সব ন্যায্য দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করে বর্তমানে উক্ত পদে দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করছি।
এ ছাড়া বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে এরই মধ্যে প্রায় ১৩ জন শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন। এবার নতুন করে পদত্যাগ করছেন উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরাও।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রীষ্মের ছুটি পিছিয়ে ঈদুল আজহার সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের কনফারেন্স কক্ষে বুধবার দুপুরে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রণব কুমার পান্ডে।
জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রীষ্মাবকাশ ৫ থেকে ৯ মে এবং ১৬ থেকে ২৪ জুন ঈদ-উল-আযহার ছুটি পূর্বনির্ধারিত ছিল, কিন্তু চলমান তাপদাহের কারণে পানি সংকটের আশঙ্কা এবং শিক্ষার্থীদের এতদসংক্রান্ত নানাবিধ অসুবিধার কথা বিবেচনা করে ছুটিসমূহ পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পুনর্বিন্যস্ত ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষাসমূহ ৯ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত এবং অফিসসমূহ ৯ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। ৩০ জুন থেকে ক্লাস ও পরীক্ষাসমূহ যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে।
এ ছাড়াও গত ২১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সভায় গৃহীত ২ মে ক্লাস বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়। একইসঙ্গে বিভাগসমূহ প্রয়োজনবোধে ৬ জুন পর্যন্ত অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে বলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) প্রক্টরিয়াল বডি থেকে আরও এক সহকারী প্রক্টর পদত্যাগ করেছেন।
পদত্যাগকারী শিক্ষক হলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী এম আনিছুল ইসলাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো এক পদত্যাগপত্র থেকে বুধবার দুপুরে এ তথ্য জানানো হয়।
পদত্যাগপত্রে আনিছুল ইসলাম উল্লেখ করেন, ‘সম্প্রতি ভর্তি পরীক্ষার আসন বিন্যাস কমিটির সদস্য আবু ওবায়দা রাহিদ অনুমতি ছাড়াই আমাদের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের নির্মিতব্য সংরক্ষিত কক্ষে অবৈধভাবে প্রবেশ করে আসন বিন্যাস পরিকল্পনা করেন এবং তা কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠিয়ে দেন। অনুমতি ছাড়া ল্যাবে প্রবেশ ও আসন পরিকল্পনা করার কথা জানতে চাইলে তিনি আমার সঙ্গে উদ্ধত আচরণ করেন।
‘পরবর্তী সময়ে ঈদ ছুটি শেষে অনুমতি নেয়ার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তিনি ক্যাম্পাসে গোল চত্বরে শিক্ষার্থীদের সামনে আমাকে বিভিন্নভাবে অপমানসূচক কথাবার্তা বলতে থাকেন। বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলে স্লেজিং করতে থাকেন। ওই সময় উপস্থিত তিন শিক্ষক তাকে শান্ত করার চেষ্টা করলে তিনি আমার দিকে বারবার তেড়ে আসতে থাকেন।’
পদত্যাগপত্রে আরও বলা হয়েছে, ‘পরবর্তী সময়ে সমঝোতা বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও একজন অধ্যাপকের সামনে তিনি আমাকে মারতে উদ্যত হন এবং আমার পরিবার নিয়ে অশালীন কথাবার্তা বলেন, কিন্তু ঘটনার তিন দিন পার হয়ে গেলেও ওই সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।’
কাজী এম আনিছুল ইসলাম বলেন, ‘একজন সহকারী প্রক্টর নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে আমাকে অপদস্থ করেছেন এবং হুমকি দিয়েছেন। তাই আমি এ দায়িত্ব পালনে বিব্রতবোধ করছি। পাশাপাশি আমার সাথে হওয়া অন্যায়ের বিচারের দাবি জানিয়ে আমি সহকারী প্রক্টরের পদ থেকে পদত্যাগ করেছি।’
এর আগে গত ০৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক তোফায়েল হোসেন মজুমদার, ০৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণমাধ্যম উপদেষ্টা মাহবুবুল হক ভুঁইয়া, ১৮ ফেব্রুয়ারি সহকারী প্রক্টর মাহমুদুল হাসান এবং ২০ ফেব্রুয়ারি সহকারী প্রক্টর কামরুল হাসান ও শেখ হাসিনা হলের আবাসিক শিক্ষক কুলছুম আক্তার স্বপ্না পদত্যাগ করেন।
এ ছাড়াও ১৯ মার্চ সিন্ডিকেট সভায় ‘অ্যাজেন্ডা বহির্ভূত ও বেআইনিভাবে ডিন নিয়োগ’ দেয়ার কারণ দেখিয়ে সিন্ডিকেট সদস্যের পদ থেকে অধ্যাপক ড. শেখ মকছেদুর রহমান পদত্যাগ করেন। সবশেষ ২০ মার্চ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহমুদুল হাছান খান, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অর্ণব বিশ্বাস, ফার্মেসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জয় চন্দ্র রাজবংশীসহ মোট চার হলের চারজন হাউজ টিউটর পদত্যাগ করেন।
আরও পড়ুন:বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ প্যানেলে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলরদের ভোটে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সিনেট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সিরাজগঞ্জের রাশিদাজ্জোহা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. খাদেমুল ইসলাম।
ড. খাদেমুল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর (১৯৯২) ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৯৩ সালে ১৪তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে পদার্থবিদ্যার প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান।
খাদেমুল চাকরিতে থাকা অবস্থায় প্রেষণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে Plasma Physics-এ Ph.D. (২০০৫) ডিগ্রি অর্জন করেন। তা ছাড়া তিনি অস্ট্রেলিয়ার University of Melbourne থেকে Learners’ Assesment System-এর ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ নেন, যা বাংলাদেশে মাধ্যমিক শিক্ষায় সংস্কার বিষয়ে অবদান রাখতে সহায়তা করে।
পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে তিনি পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যলয় থেকে এম.এড. (২০১৭) এবং মালয়শিয়ার University of Nottingham থেকে Master of Education (প্রথম পর্ব) শেষ করেন। তিনি ২০১৭ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান।
ড. খাদেমুল দেশে ও বিদেশে পদার্থবিজ্ঞানের অনেক সম্মেলনে অংশ নিয়ে সেখানে বিজ্ঞানবিষয়ক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক জার্নালে তার উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গবেষণাপত্র প্রকাশ হয়েছে।
খাদেমুল প্রায় পাঁচ বছর ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটে ‘পরীক্ষা মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞ’ এবং জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে (নায়েম) ১০ বছর ‘প্রশিক্ষণ বিশেষজ্ঞ’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
দীর্ঘ চাকরি জীবনে তিনি আমেরিকার University of Alabama ও নিউ ইয়র্কে University of Fordham থেকে Secondary School Mangement বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন।
তিনি শিক্ষাক্রম, শিক্ষার্থী মূল্যায়ন ও দক্ষতাভিত্তিক প্রশ্ন প্রণয়ন বিষয়ে সারা দেশে Resource Person হিসেবে কাজ করেন। ড. খাদেমুল পদার্থবিজ্ঞানের অত্যন্ত সম্ভাবনাময় শাখা Plasma Physics-এ জোহান্সবার্গের University of the Witwatersrand থেকে Post-Doctoral গবেষণা (২০০৮) সম্পন্ন করেন। এর অব্যবহিত পূর্বে তিনি কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের আওতায় গাজীপুর জেলার বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে অধ্যক্ষ হিসেবে (২০২০-২০২১) দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ঢাকার ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য নির্বাচিত হন ২০২১ সালে।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুলে গোসলে নেমে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার এ তথ্য জানানো হয়।
ঢাবির প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমানকে আহ্বায়ক এবং সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মুহিতকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র মো. সোহাদ হকের এ মৃত্যুকে অপমৃত্যু দাবি করে এর কারণ চিহ্নিত করে প্রতিবেদন প্রদানের জন্য কমিটিকে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি কমিটিকে তদন্ত কাজ সম্পন্ন এবং সুইমিংপুলের ব্যবস্থাপনায় কোনো অবহেলা বা ত্রুটি আছে কি না, তা চিহ্নিত করে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ এই কমিটি গঠন করেন।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শাহ্ কাওসার মুস্তাফা আবুলউলায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য এবং তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শরিফ উল ইসলাম এবং বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের আবাসিক শিক্ষক মো. জসিম উদ্দিন।
এর আগে সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ সংলগ্ন সুইমিংপুলে গোসল করতে নেমে পানিতে তলিয়ে যান মোহাম্মদ সোয়াদ।
পরে আশেপাশের শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে বেলা সোয়া ২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জামিল নামের এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যে পুলে সোয়াদ তলিয়ে যায় সেটির গভীরতা ছিল ৮ থেকে ১০ ফিট। এটাতে কেউ ডুবে মারা যাবে, এটা স্বাভাবিকভাবে কারোর চিন্তায়ই আসবে না। পানির তলে গিয়ে ওপরের দিকে লাফ দিলেই ওপরে উঠে আসার কথা!’
তিনি বলেন, ‘আমরা শতাধিক ছাত্র ছিলাম, কিন্তু কেউই খেয়াল করিনি যে সে ডুবে গেছে।’
আরও পড়ুন:বাসের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আরও একজন।
সোমবার বিকেল চারটার দিকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার জিয়ানগরে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, এদিন বিকেলে জিয়ানগরে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে যায় চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা, দ্বিতীয় বর্ষের তাওফিক হোসাইন ও জাকারিয়া হিমু। পথিমধ্যে শাহ আমানত নামের একটি বাসের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন শান্ত সাহা। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান তাওফিক হোসাইন। মোটরসাইকেলের আরেক যাত্রী জাকারিয়া হিমুকে গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম শহরের এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শাহ আমানতের কয়েকটি বাস আটক করার পর চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। একটি বাসে আগুনও দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
চুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (২১ ব্যাচ) শিক্ষার্থী পল্লব ঘোষ বলেন, ‘শান্ত ভাই আমার খুবই কাছের বড় ভাই এবং একজন মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন, কিন্তু বাসের বেপরোয়া গতির জন্য আজ একটি প্রাণ ঝরে গেল। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের পাশাপাশি উপযুক্ত বিচার দাবি করি ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের ব্যাবস্থা করা হবে। এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে না হয়, সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সুইমিংপুলে গোসল করতে গিয়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।
মারা যাওয়া শিক্ষার্থীর নাম মোহাম্মদ সোয়াদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষে পড়তেন।
সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ সংলগ্ন সুইমিংপুলে গোসল করতে নামলে পানিতে তলিয়ে যান তিনি।
পরে আশেপাশের শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে বেলা সোয়া ২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জামিল নামের এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেছেন, যে পুলে সোয়াদ তলিয়ে যায় সেটির গভীরতা ছিল ৮/১০ ফিট। এটাতে কেউ ডুবে মারা যাবে, এটা স্বাভাবিকভাবে কারোর চিন্তায়ই আসবে না। পানির তলে গিয়ে ওপরের দিকে লাফ দিলেই ওপরে উঠে আসার কথা!
তিনি বলেন, আমরা শতাধিক ছাত্র ছিলাম। কিন্তু কেউই খেয়াল করিনি যে সে ডুবে গেছে!
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, পানিতে পড়ে গুরুতর আহত হওয়ার পর মেডিক্যালে নিয়ে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মারা গেছেন। মরদেহ মর্গে নেয়া হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের পরিচালক শাহজাহান আলী বলেন, দর্শন বিভাগের সোয়াদ নামে এক শিক্ষার্থী সুইমিংপুলের পানিতে লাফালাফি করতে গিয়ে পানির সাথে ধাক্কা বা আঘাত পেয়ে গুরুতর আহত হয়। তখন সেখানে তার বন্ধুবান্ধব ছিল এবং আশেপাশে আমাদের লোকজনও ছিল।
তিনি বলেন, এ সময় তারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে পাঠায়। পরে ঢাকা মেডিক্যালে নেয়া হয়। বিষয়টি আমি আমাদের প্রক্টর মহোদয়কেও জানিয়েছি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য