রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে চার বছরের জন্য ২০১৭ সালের ১ জুন নিয়োগ পেয়েছিলেন ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। সেই হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের এ অধ্যাপকের মেয়াদ শেষ হয়েছে সাত দিন আগে।
যদিও ১৪ জুন যোগ দেয়ায় একটি পক্ষের দাবি উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হবে ওই দিন। তবে ১ জুন তার মেয়াদ শেষ হয়েছে ধরে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি, উপাচার্য হিসেবে নানা সমালোচনার জন্ম দেয়া কলিমউল্লাহর বিদায়ে ক্যাম্পাসে অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে।
তারা জানান, উপাচার্য হিসেবে চার বছর মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হয়রানি, অপছন্দের হওয়ায় পদোন্নতি আটকে দেয়া, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা, ক্যাম্পাসে না থাকাসহ নানা সমালোচনার জন্ম দেন কলিমউল্লাহ।
এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমে স্থবিরতাসহ দেখা দেয় চরম বিশৃঙ্খলা। ভেঙে পড়ে প্রশাসনিক ‘চেইন অব কমান্ড’। নষ্ট হয় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক।
এ কারণে তার তৈরি করা নানা বিশৃঙ্খলা ও পছন্দের প্রশাসন এখনও থাকলেও অন্তত শান্তিতে দম ফেলার পরিবেশ ফিরেছে।
বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করা উপাচার্য কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ-
ক্যাম্পাসে না থাকা
উপাচার্য কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি প্রচার পাওয়া অভিযোগ তিনি অধিকাংশ সময় ক্যাম্পাসে থাকেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন উপস্থিত না থাকায় একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে গত বছরের ৩ জুন ক্যাম্পাসের শেখ রাসেল চত্বরে উপাচার্যের হাজিরাখাতার বোর্ড টাঙিয়ে দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের একাংশের সংগঠন ‘অধিকার সুরক্ষা পরিষদ’ এটি করে।
সেই হাজিরাখাতার হিসাব অনুযায়ী, ১৪ জুন যোগদানের পর উপাচার্য হিসেবে কলিমউল্লাহ পেয়েছেন ১ হাজার ৪৪৭ দিন। এর মধ্যে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন ২৪০ দিন। অনুপস্থিত ছিলেন ১ হাজার ২০৭ দিন।
পদোন্নতি বঞ্চিত করা
কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে আরেক অভিযোগ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অপছন্দের অনেকের পদোন্নতি তিনি আটকে দেন।
অভিযোগ, পছন্দ না হওয়ায় এবং নানা অনিয়মের প্রতিবাদ করায় বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ, মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক রাকিবুল ইসলাম, ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মহুয়া শবনমসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষকের পদোন্নতি বিনা কারণে তিনি আটকে দেন।
অথচ নিয়ন অনুযায়ী তাদের অনেকের এক থেকে দেড় বছর আগে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়ার কথা।
কর্মকর্তাদের মধ্যে সহকারী রেজিস্ট্রার এস এম আবদুর রহিম, লাইব্রেরির উপপরিচালক মামদুদুর রহমান, সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আলী, উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ফিরোজুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক বিভাগের সহকারী পরিচালক আনোয়ারুল হক, উপপরিচালক রেজাউল করীম শাহসহ অনেকের পদোন্নতিও আটকে রাখেন।
হয়রানিমূলক বরখাস্ত, মানেননি উচ্চ আদালতের নির্দেশও
অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয় ১৫ জন শিক্ষক-কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। কয়েকজনকে চাকরি থেকে বরখাস্তও করা হয়।
অভিযোগ, এসব শিক্ষক-কর্মকর্তা উচ্চ আদালতে রিট করে যোগদানের আদেশ নিয়ে এলে সেই আদেশও মানা হয়নি।
তাদের মধ্যে ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। জাহাঙ্গীর হাইকোর্টে রিট করলে আদালত তার সাময়িক বরখাস্তাদেশ স্থগিত করে তাকে যোগদান করানোর নির্দেশনা দেন। তবে এখনও তাকে যোগ দিতে দেয়া হয়নি। বরং তার পদে উপাচার্যের একজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার তারিকুল ইসলাম ও সহকারী রেজিস্ট্রার এস এম আবদুর রহিমের বিরুদ্ধে জুয়া খেলার অভিযোগে মামলা করে পুলিশ।
আবদুর রহিমের দাবি, উপাচার্যের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় পুলিশকে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে জুয়া খেলার মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করান। ওই দিনই এক ঘণ্টার ব্যবধানে তাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
তিনি জানান, ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট এ মামলার চূড়ান্ত রায়ে তাদের খালাস দেয় আদালত। এরপর ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর বরখাস্তাদেশ প্রত্যাহার করে স্বপদে যোগ দেয়ার আবেদন করেন তিনি। তিন মাস পর তাকে যোগদান করার সুযোগ দেয়া হয়।
সহকারী রেজিস্ট্রার মুক্তারুল ইসলামের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ২৬ জুন মামলা দেয়া হয় মাদক সেবনের। ২৮ জুন তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। তিনিও বেকসুর খালাস পান। তবে এখন পর্যন্ত তিনি স্বপদে যোগদান করতে পারেননি।
সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আলীকে জনসংযোগ দপ্তর থেকে বদলির তিন বছর পর ওই দপ্তরের একটি আলমিরা নেয়া হয় অন্য দপ্তরে। সেই আলমিরার একটি ফাইলকে কেন্দ্র করে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ আলীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
এটিও উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত করা হয়। তবে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এ ছাড়া উপ-রেজিস্ট্রার তারিকুল ইসলাম, জিয়াউল হক, সাহানা ও শফিয়া শবনমের মূল পদ পরিবর্তন করে নিম্নপদে পদায়ন করা হয়। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন তারা।
২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি এ সিদ্ধান্তের ওপর স্থগিতাদেশ দেয় হাইকোর্ট। একই সঙ্গে কেন এই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হবে না, জানতে চেয়ে ভিসি ও রেজিস্ট্রারকে কারণ দর্শানোর জন্য রুল জারি করে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো জবাব দেয়নি।
অতিরিক্ত পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) এটিজিএম গোলাম ফিরোজ, উপপরিচালক (অর্থ ও হিসাব) খন্দকার আশরাফুল আলম এবং উপ-রেজিস্ট্রার মোর্শেদ উল আলম রনিকে করা সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করতে আদেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। সেই আদেশ না মানায় তারা আদালত অবমাননার মামলা করেন। এরপরও উপাচার্য আদালতে যাননি।
এক শিক্ষককে ৩৩ বার শোকজ
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশের সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমানকে ৩৩ বার শোকজ করা হয়েছে।
মশিউর রহমানের দাবি, তিনি সব সময় উপাচার্যের অনিয়মের বিরুদ্ধে ছিলেন। তাকে দমাতে এতবার শোকজ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি ওই শোকজের জবাব দিইনি। তার যা ইচ্ছে করুক। আমি তো তার অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। তার অপকর্মের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। আমরা চাই তার নজিরবিহীন শাস্তি হোক, তাহলে আরও বেশি স্বস্তি ফিরবে ক্যাম্পাসে।’
শিক্ষকদের হয়রানি
বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ ৭৬তম সিন্ডিকেট সভায় পাঁচজন শিক্ষককে সতর্কবার্তা দেয়া হয়।
তারা হলেন রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তরিকুল ইসলাম ও সহযোগী অধ্যাপক ড. বিজন মোহন চাকী, গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মশিয়ার রহমান, লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মণ্ডল ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহামুদুল হক।
এর আগেও তারিকুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান মণ্ডল, মশিয়ার রহমান, বিজন কুমার চাকীকে একাধিকবার এ ধরনের প্রশাসনিক হুমকি ও শোকজ নোটিশ দেয়া হয়েছে। তারা সবাই উপাচার্যের অনিয়মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছিলেন।
ভয়াবহ সেশনজট
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থবিরতার কারণে বেশির ভাগ বিভাগের শিক্ষার্থীই দেড় থেকে দুই বছর পর্যন্ত সেশনজটে পড়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস রাইটস ফোরামের সহসভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস তমা বলেন, ‘বিভাগের শিক্ষকদের অবহেলার কারণেই এই সেশনজট তৈরি হয়েছে। আমরা এই সেশনজট নিরসনে অনেকবার অনেকভাবে বলেছি, আন্দোলন করেছি। কিন্তু কোনোভাবেই এই সেশনজট থেকে মুক্ত হতে পারিনি। এ কারণে আমাদের অনেকে সরকারি চাকরিতে আবেদনের যোগ্যতা হারাচ্ছেন বা হারাবেন।
শিক্ষার্থীদের নামে থানায় অভিযোগ
উপাচার্যের কর্মকাণ্ড নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি করায় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ ও মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী বায়েজিদ আহমেদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেয়া হয়। পরে নানা চাপে সেই অভিযোগ মামলা পর্যন্ত গড়ায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তুষার কিবরিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলো মুক্ত চিন্তার একটি বড় জায়গা। সেখানে উপাচার্যের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ কথা বললে তাদের দমাতে মামলা দিতেন তিনি। ভয় দেখাতেন।
উপাচার্য কলিমুল্লাহর বিদায়ে শিক্ষার্থীরা মনে করছেন এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসবে। সেশনজট দূর হবে। ক্যাম্পাস আতঙ্কমুক্ত হবে।
শিক্ষক-কর্মকর্তারা কী বলেন
বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘তিনি আমাদের বিরুদ্ধে ইচ্ছে করেই অন্যায় করেছেন। আমরা তার কঠোর শাস্তি চাই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশের সংগঠন অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান বলেন, ‘এই উপাচার্যর আমলে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যেভাবে হয়রানি করা হয়েছে, তা কখনোই মেনে নেয়া যায় না। তিনি তো দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য তৈরি করেছিলেন। তিনি তার অন্যায় কাজগুলোর বৈধতা দিতে একটি শক্তিশালী টিম রেখে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আসলেই কলিমউল্লাহ শূন্য বলতে পারি না। কারণ, তার গড়া প্রেতাত্মা তো রেখে যাচ্ছেন। এই প্রেতাত্মাদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি উদ্ধার এবং উজ্জ্বল করতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাবিউর রহমান প্রধান বলেন, ‘গেল ১২ বছরে নানান সংকটে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। সেগুলো থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীবান্ধব ভিসি চাই আমরা।’
ফোন ধরেননি উপাচার্য
বিস্তারিত জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে না যাওয়ায় তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হয়। তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
আরও পড়ুন:জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডক্টর এ এস এম আমানুল্লাহ বলেছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সত্তুর শতাংশ উচ্চশিক্ষা নিয়ন্ত্রণ করে। এই প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্য যদি ভালো না হয় দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি হবে না।
জামালপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত জামালপুর শেরপুর জেলার কলেজ সমূহের অধ্যক্ষ উপাধ্যক্ষ ও শিক্ষকগণের সাথে শিক্ষার মান উন্নয়ন বিষয়ক মত বিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে জামালপুর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের মিলনায়তনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ মনিটরিং এন্ড ইভালুয়েশন দপ্তরের আয়োজনে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর হারুন অর রশিদ এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ডক্টর এ এস এম আমানুল্লাহ, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডক্টর মো: নুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) আফসানা তাসলিম। এ সময় তিনি আরো বলেন, উন্নত দেশগুলোতে যেখানে মোট জিডিপির তিন থেকে পাঁচ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেখানে বাংলাদেশে মাত্র এক দশমিক পাঁচ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয় যা শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য খুবই অপ্রতুল। এখান থেকে বিশ্বমানের নাগরিক গড়ে তোলা সম্ভব নয়। শিক্ষাব্যবস্থায় মোট জিডিপির পাঁচ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়ার সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। এ ছাড়াও তিনি প্রাইমারি শিক্ষা ব্যবস্থার উপর কিছু পরিবর্তন আনার কথা বলেন না। মত বিনিময় সভায় জামালপুর শেরপুর জেলার কলেজসমূহের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষসহ শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন।
অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে স্নাতকে (অনার্স) তথ্য প্রযুক্তি ও ইংরেজি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
আধুনিক পাঠ্যক্রম প্রণয়নের পাশাপাশি তা বাস্তবায়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা দেওয়া হবে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজে গতকাল বুধবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারের এটুআই প্রকল্পের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ এসব কথা বলেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষাক্রমের আইসিটি বিষয়ের ‘টিচিং, লার্নিং অ্যান্ড অ্যাসেসমেন্ট স্ট্র্যাটেজি’ শীর্ষক এ কর্মশালার প্রথম সেশনে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও এটুআই প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক মো. রশিদুল মান্নাফ কবীর।
উপাচার্য বলেন, কলেজগুলোতে তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষাদানে শিক্ষক সংকটসহ নানা সমস্যা রয়েছে। এ বিষয়ে সহায়তার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সব টেকনিক্যাল কলেজ ও কম্পিউটার কাউন্সিলের সাথে আলোচনা করছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের কলেজ শিক্ষার্থীদের মেধার ঘাটতি নেই। সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে তারা সহজেই তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ হয়ে উঠবে।
শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক, সময়োপযোগী ও কর্মমুখী তথ্য প্রযুক্তি পাঠ্যক্রম প্রণয়নে সরকারের এটুআই প্রোগ্রাম ও শিক্ষাবিদদের প্রতি আহ্বান জানান অধ্যাপক এ এস এম আমানুল্লাহ।
কর্মশালার দ্বিতীয় সেশনে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম।
দিনব্যাপী এ কর্মশালায় দেশের বিভিন্ন কলেজের ৮টি বিভাগের ৪০ জন তথ্য প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ড. নাজমা তারা এবং মির্জা মোহাম্মদ দিদারুল আনাম।
এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের পরিচালক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন স্থগিত করে দেওয়া হাইকোর্টের আদেশ স্থগিতই রেখেছেন আপিল বিভাগ। এর ফলে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচনে আর কোনো বাধা রইল না।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত এই আদেশ বহাল থাকবে রায়ে বলা হয়েছে।
এদিন আদালতে ঢাবির পক্ষে মোহাম্মদ শিশির মনির, রিটের পক্ষে অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ও ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এবং ডাকসুর জিএস প্রার্থী এসএম ফরহাদের পক্ষে ব্যারিস্টার ইমরান এ সিদ্দিকী শুনানি করেন।
ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট মনোনীত ছাত্র শিবির সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বামজোট মনোনীত প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বিএম ফাহমিদা আলম এ রিট দায়ের করেন।
রিটে অভিযোগ করা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে এস এম ফরহাদ ‘ছাত্রলীগের কমিটিতে’ ছিলেন। এরপরও তিনি কীভাবে ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্যানেলে প্রার্থী হলেন— এমন প্রশ্ন তুলে তার প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করা হয়।
এরপর গেল সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ডাকসু নির্বাচন প্রক্রিয়া ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকার কার্যক্রম ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করেন হাইকোর্ট। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি হাবিবুল গণি ও বিচারপতি এস কে তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে কোন প্রক্রিয়ায় ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়ন, বাছাই ও চূড়ান্ত করা হচ্ছে এবং ভোটের প্রস্তুতির প্রক্রিয়া কী— এ বিষয়েও জানতে চান চাওয়া হয়।
তবে তার এক ঘণ্টারও কম সময়ের ব্যবধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের আদালত ওই স্থগিতাদেশ দেন।
ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় পুনরায় মামলাটির বিষয়ে গতকাল (২ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবেদন নিয়ে চেম্বার জজ আদালতে গেলে এ বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আজ বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) শুনানির জন্য মামলার দিন নির্ধারণ করা হয়েছিল।
জানা গেছে, নির্বাচনি তফসিল অনুযায়ী আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন নির্ধারণ করা হয়। নির্বাচনে কেন্দ্রীয় এবং হল সংসদ মিলিয়ে মোট ৪৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৪৫ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জন এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে ১৭ জন, কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ১১ জন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে ১৪ জন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ১৯ জন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ১২ জন, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ৯ জন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১৩ জন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে ১২ জন, সমাজসেবা সম্পাদক পদে ১৭ জন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ১৫ জন, মানবাধিকার ও আইন বিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন এবং ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক পদে ১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে সদস্য পদে। এবার ১৩টি সদস্য পদের বিপরীতে মোট ২১৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে এক নারী শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আলী হুসেনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আলী হুসেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২০২১ সেশনের শিক্ষার্থী এবং শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের বাসিন্দা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীকে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় আক্রমণ ও হুমকি দেওয়ার ঘটনায় আলী হুসেনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এ বিষয়ে গঠিত প্রক্টরিয়াল সত্যানুসন্ধান কমিটির সুপারিশের আলোকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এটি বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডারে প্রদত্ত প্রক্টরের এখতিয়ারভুক্ত সর্বোচ্চ শাস্তি বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
একই সঙ্গে আলী হুসেনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিষয়ক কমিটিতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত ৫ লাখের বেশি শিক্ষক ও কর্মচারীকে অবসরের ৬ মাসের মধ্যে অবসরকালীন সুবিধা প্রদানের নির্দেশনা দিয়ে রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজি জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ ১৩ পৃষ্ঠার এ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এ রায় প্রকাশ করেছেন।
রিটকারীদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সিদ্দিক উল্যাহ মিয়া গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত ৫ লাখের বেশি শিক্ষক ও কর্মচারীকে অবসরের ৬ মাসের মধ্যে অবসরকালীন সুবিধা প্রদানের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজি জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
রায়ের সময় হাইকোর্ট বলেন, এটা চিরন্তন সত্য যে শিক্ষকরা রিটায়ারমেন্ট (অবসরকালীন) বেনিফিট (সুবিধা) পেতে বছরের পর বছর ঘুরতে হয়। এই হয়রানি থেকে তারা কোনোভাবেই পার পান না। একজন প্রাথমিকের শিক্ষক কত টাকা বেতন পান, সেটাও বিবেচনায় নিতে হবে। এ জন্য তাদের অবসরভাতা ৬ মাসের মধ্যে দিতে হবে। এই অবসর ভাতা পাওয়ার জন্য শিক্ষকরা বছরের পর বছর দ্বারে দ্বারে ঘুরতে পারে না বলেও মন্তব্য করেছেন আদালত।
সেদিন রায়ের পর আইনজীবী ছিদ্দিক উল্যাহ মিয়া বলেন, সারাদেশে এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় ৫ লাখের বেশি শিক্ষক কর্মচারী অবসরকালীন সুবিধা পেতে ২০১৯ সালে একটি রিট দায়ের করেছিলাম। রিটে আমরা ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন থেকে ৬ শতাংশ কেটে নেওয়া হতো। সেই কর্তনকৃত টাকাসহ সুবিধান অবসরের পর দেওয়া হতো। এই অবস্থায় ২০১৭ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন করে ১০ শতাংশ কেটে নেওয়ার সিদ্ধান্তে নেয়। ১০ শতাংশ কেটে নেওয়া হলেও ৬ শতাংশের যে সুবিধা দেওয়া হতো সেটাই বহাল রাখা হয়। যে কারণে আমরা রিট দায়ের করে বলেছি, যাতে ১০ শতাংশের সুবিধা দেওয়া হয়। এরপর এই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। সেই রুলের দীর্ঘ শুনানি শেষে এ রায় ঘোষণা করা হয়।
রায়ে আদালত বলেছেন, ১০ শতাংশ কেটে নেওয়া হলেও তাদের যেন বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে অবসরের ৬ মাসের মধ্যে যেন অবসরকালীন সুবিধা প্রদান করা হয়।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট প্রবিধানমালা, ১৯৯৯ এর প্রবিধান-৬ এবং বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা প্রবিধানমালা, ২০০৫ এর প্রবিধান-৮ অনুযায়ী শিক্ষক ও কর্মচারীদের মূল বেতনের ২ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ কাটার বিধান ছিল। যার বিপরীতে শিক্ষকদের ট্রাস্টের তহবিল থেকে শিক্ষক ও কর্মচারীদের কিছু আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হতো। কিন্তু ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল উল্লিখিত প্রবিধানমালাগুলোর শিক্ষক ও কর্মচারীদের মূল বেতনের ২ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ কাটার বিধানগুলো সংশোধনপূর্বক ৪ শতাংশ এবং ৬ শতাংশ করে দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে শিক্ষক ও কর্মচারীদের মূল বেতনের ২ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ কাটার পরিবর্তে ৪ শতাংশ এবং ৬ শতাংশ কাটার বিধান করা হলেও ওই অতিরিক্ত অর্থ কাটার বিপরীতে শিক্ষক ও কর্মচারীদের কোনো বাড়তি আর্থিক সুবিধার বিধান করা হয়নি। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারীদের এপ্রিল ২০১৯ মাসের বেতন হতে ৬ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ টাকা অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টে জমা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করেন।
ফলে অতিরিক্ত অর্থ কাটার বিপরীতে কোনো আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধি না করেই শিক্ষক ও কর্মচারীদের মূল বেতনের ৬ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ টাকা কাটার আদেশের কারণে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫ লাখ শিক্ষক ও কর্মচারীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে ক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন সময়ে অতিরিক্ত অর্থ কাটার আদেশ বাতিল করার জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে তারা বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। শিক্ষক ও কর্মচারীরা ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনটি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন সংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা আপিল আবেদনের শুনানি আজ আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় এক নম্বরে রাখা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হবে। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে সোমবার হাইকোর্ট ডাকসু নির্বাচন আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করেন। তবে বিকেলে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত ওই আদেশ স্থগিত করেন।
তাৎক্ষণিক হাতে লেখা আপিল আবেদনের ভিত্তিতে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব চেম্বার কোর্টে শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন।
চেম্বার আদালত একইসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করতে নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপিল আবেদন করে। পরে চেম্বার আদালত বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠান।
সোমবার হাইকোর্ট বিচারপতি হাবিবুল গণি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ডাকসু নির্বাচন স্থগিত করেন।
ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট মনোনীত ডাকসু জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিটের শুনানিতে এই আদেশ দেন হাইকোর্ট। রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া।
হাইকোর্ট আদেশে রিটকারী ও ডাকসু নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বি এম ফাহমিদা আলমকে জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ডাকসুর নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে দাখিল করতে বলা হয়।
এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যে অচলাবস্থা চলছে, শিগগিরই সে সমস্যার সমাধান হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার।
মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে অচলাবস্থা চলছে, তা দুঃখজনক। এজন্য মন্ত্রণালয়ও উদ্বিগ্ন। তবে আলোচনা করেই এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। শিগগিরই এসব ঘটনার সমাধান হবে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার ফলে শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতি কারও কাম্য নয়। তবে সবকিছু আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে।
চলমান সমস্যাগুলো দ্রুততম সময়ে সমাধান করা হবে এবং এক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলেও আশ্বস্ত করেন উপদেষ্টা।
মন্তব্য