রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে চার বছরের জন্য ২০১৭ সালের ১ জুন নিয়োগ পেয়েছিলেন ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। সেই হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের এ অধ্যাপকের মেয়াদ শেষ হয়েছে সাত দিন আগে।
যদিও ১৪ জুন যোগ দেয়ায় একটি পক্ষের দাবি উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হবে ওই দিন। তবে ১ জুন তার মেয়াদ শেষ হয়েছে ধরে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি, উপাচার্য হিসেবে নানা সমালোচনার জন্ম দেয়া কলিমউল্লাহর বিদায়ে ক্যাম্পাসে অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে।
তারা জানান, উপাচার্য হিসেবে চার বছর মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হয়রানি, অপছন্দের হওয়ায় পদোন্নতি আটকে দেয়া, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা, ক্যাম্পাসে না থাকাসহ নানা সমালোচনার জন্ম দেন কলিমউল্লাহ।
এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমে স্থবিরতাসহ দেখা দেয় চরম বিশৃঙ্খলা। ভেঙে পড়ে প্রশাসনিক ‘চেইন অব কমান্ড’। নষ্ট হয় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক।
এ কারণে তার তৈরি করা নানা বিশৃঙ্খলা ও পছন্দের প্রশাসন এখনও থাকলেও অন্তত শান্তিতে দম ফেলার পরিবেশ ফিরেছে।
বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করা উপাচার্য কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ-
ক্যাম্পাসে না থাকা
উপাচার্য কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি প্রচার পাওয়া অভিযোগ তিনি অধিকাংশ সময় ক্যাম্পাসে থাকেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন উপস্থিত না থাকায় একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে গত বছরের ৩ জুন ক্যাম্পাসের শেখ রাসেল চত্বরে উপাচার্যের হাজিরাখাতার বোর্ড টাঙিয়ে দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের একাংশের সংগঠন ‘অধিকার সুরক্ষা পরিষদ’ এটি করে।
সেই হাজিরাখাতার হিসাব অনুযায়ী, ১৪ জুন যোগদানের পর উপাচার্য হিসেবে কলিমউল্লাহ পেয়েছেন ১ হাজার ৪৪৭ দিন। এর মধ্যে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন ২৪০ দিন। অনুপস্থিত ছিলেন ১ হাজার ২০৭ দিন।
পদোন্নতি বঞ্চিত করা
কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে আরেক অভিযোগ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অপছন্দের অনেকের পদোন্নতি তিনি আটকে দেন।
অভিযোগ, পছন্দ না হওয়ায় এবং নানা অনিয়মের প্রতিবাদ করায় বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ, মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক রাকিবুল ইসলাম, ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মহুয়া শবনমসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষকের পদোন্নতি বিনা কারণে তিনি আটকে দেন।
অথচ নিয়ন অনুযায়ী তাদের অনেকের এক থেকে দেড় বছর আগে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়ার কথা।
কর্মকর্তাদের মধ্যে সহকারী রেজিস্ট্রার এস এম আবদুর রহিম, লাইব্রেরির উপপরিচালক মামদুদুর রহমান, সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আলী, উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ফিরোজুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক বিভাগের সহকারী পরিচালক আনোয়ারুল হক, উপপরিচালক রেজাউল করীম শাহসহ অনেকের পদোন্নতিও আটকে রাখেন।
হয়রানিমূলক বরখাস্ত, মানেননি উচ্চ আদালতের নির্দেশও
অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয় ১৫ জন শিক্ষক-কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। কয়েকজনকে চাকরি থেকে বরখাস্তও করা হয়।
অভিযোগ, এসব শিক্ষক-কর্মকর্তা উচ্চ আদালতে রিট করে যোগদানের আদেশ নিয়ে এলে সেই আদেশও মানা হয়নি।
তাদের মধ্যে ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। জাহাঙ্গীর হাইকোর্টে রিট করলে আদালত তার সাময়িক বরখাস্তাদেশ স্থগিত করে তাকে যোগদান করানোর নির্দেশনা দেন। তবে এখনও তাকে যোগ দিতে দেয়া হয়নি। বরং তার পদে উপাচার্যের একজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার তারিকুল ইসলাম ও সহকারী রেজিস্ট্রার এস এম আবদুর রহিমের বিরুদ্ধে জুয়া খেলার অভিযোগে মামলা করে পুলিশ।
আবদুর রহিমের দাবি, উপাচার্যের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় পুলিশকে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে জুয়া খেলার মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করান। ওই দিনই এক ঘণ্টার ব্যবধানে তাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
তিনি জানান, ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট এ মামলার চূড়ান্ত রায়ে তাদের খালাস দেয় আদালত। এরপর ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর বরখাস্তাদেশ প্রত্যাহার করে স্বপদে যোগ দেয়ার আবেদন করেন তিনি। তিন মাস পর তাকে যোগদান করার সুযোগ দেয়া হয়।
সহকারী রেজিস্ট্রার মুক্তারুল ইসলামের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ২৬ জুন মামলা দেয়া হয় মাদক সেবনের। ২৮ জুন তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। তিনিও বেকসুর খালাস পান। তবে এখন পর্যন্ত তিনি স্বপদে যোগদান করতে পারেননি।
সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আলীকে জনসংযোগ দপ্তর থেকে বদলির তিন বছর পর ওই দপ্তরের একটি আলমিরা নেয়া হয় অন্য দপ্তরে। সেই আলমিরার একটি ফাইলকে কেন্দ্র করে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ আলীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
এটিও উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত করা হয়। তবে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এ ছাড়া উপ-রেজিস্ট্রার তারিকুল ইসলাম, জিয়াউল হক, সাহানা ও শফিয়া শবনমের মূল পদ পরিবর্তন করে নিম্নপদে পদায়ন করা হয়। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন তারা।
২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি এ সিদ্ধান্তের ওপর স্থগিতাদেশ দেয় হাইকোর্ট। একই সঙ্গে কেন এই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হবে না, জানতে চেয়ে ভিসি ও রেজিস্ট্রারকে কারণ দর্শানোর জন্য রুল জারি করে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো জবাব দেয়নি।
অতিরিক্ত পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) এটিজিএম গোলাম ফিরোজ, উপপরিচালক (অর্থ ও হিসাব) খন্দকার আশরাফুল আলম এবং উপ-রেজিস্ট্রার মোর্শেদ উল আলম রনিকে করা সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করতে আদেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। সেই আদেশ না মানায় তারা আদালত অবমাননার মামলা করেন। এরপরও উপাচার্য আদালতে যাননি।
এক শিক্ষককে ৩৩ বার শোকজ
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশের সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমানকে ৩৩ বার শোকজ করা হয়েছে।
মশিউর রহমানের দাবি, তিনি সব সময় উপাচার্যের অনিয়মের বিরুদ্ধে ছিলেন। তাকে দমাতে এতবার শোকজ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি ওই শোকজের জবাব দিইনি। তার যা ইচ্ছে করুক। আমি তো তার অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। তার অপকর্মের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। আমরা চাই তার নজিরবিহীন শাস্তি হোক, তাহলে আরও বেশি স্বস্তি ফিরবে ক্যাম্পাসে।’
শিক্ষকদের হয়রানি
বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ ৭৬তম সিন্ডিকেট সভায় পাঁচজন শিক্ষককে সতর্কবার্তা দেয়া হয়।
তারা হলেন রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তরিকুল ইসলাম ও সহযোগী অধ্যাপক ড. বিজন মোহন চাকী, গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মশিয়ার রহমান, লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মণ্ডল ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহামুদুল হক।
এর আগেও তারিকুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান মণ্ডল, মশিয়ার রহমান, বিজন কুমার চাকীকে একাধিকবার এ ধরনের প্রশাসনিক হুমকি ও শোকজ নোটিশ দেয়া হয়েছে। তারা সবাই উপাচার্যের অনিয়মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছিলেন।
ভয়াবহ সেশনজট
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থবিরতার কারণে বেশির ভাগ বিভাগের শিক্ষার্থীই দেড় থেকে দুই বছর পর্যন্ত সেশনজটে পড়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস রাইটস ফোরামের সহসভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস তমা বলেন, ‘বিভাগের শিক্ষকদের অবহেলার কারণেই এই সেশনজট তৈরি হয়েছে। আমরা এই সেশনজট নিরসনে অনেকবার অনেকভাবে বলেছি, আন্দোলন করেছি। কিন্তু কোনোভাবেই এই সেশনজট থেকে মুক্ত হতে পারিনি। এ কারণে আমাদের অনেকে সরকারি চাকরিতে আবেদনের যোগ্যতা হারাচ্ছেন বা হারাবেন।
শিক্ষার্থীদের নামে থানায় অভিযোগ
উপাচার্যের কর্মকাণ্ড নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি করায় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ ও মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী বায়েজিদ আহমেদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেয়া হয়। পরে নানা চাপে সেই অভিযোগ মামলা পর্যন্ত গড়ায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তুষার কিবরিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলো মুক্ত চিন্তার একটি বড় জায়গা। সেখানে উপাচার্যের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ কথা বললে তাদের দমাতে মামলা দিতেন তিনি। ভয় দেখাতেন।
উপাচার্য কলিমুল্লাহর বিদায়ে শিক্ষার্থীরা মনে করছেন এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসবে। সেশনজট দূর হবে। ক্যাম্পাস আতঙ্কমুক্ত হবে।
শিক্ষক-কর্মকর্তারা কী বলেন
বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘তিনি আমাদের বিরুদ্ধে ইচ্ছে করেই অন্যায় করেছেন। আমরা তার কঠোর শাস্তি চাই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশের সংগঠন অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান বলেন, ‘এই উপাচার্যর আমলে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যেভাবে হয়রানি করা হয়েছে, তা কখনোই মেনে নেয়া যায় না। তিনি তো দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য তৈরি করেছিলেন। তিনি তার অন্যায় কাজগুলোর বৈধতা দিতে একটি শক্তিশালী টিম রেখে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আসলেই কলিমউল্লাহ শূন্য বলতে পারি না। কারণ, তার গড়া প্রেতাত্মা তো রেখে যাচ্ছেন। এই প্রেতাত্মাদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি উদ্ধার এবং উজ্জ্বল করতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাবিউর রহমান প্রধান বলেন, ‘গেল ১২ বছরে নানান সংকটে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। সেগুলো থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীবান্ধব ভিসি চাই আমরা।’
ফোন ধরেননি উপাচার্য
বিস্তারিত জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে না যাওয়ায় তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হয়। তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
আরও পড়ুন:প্রচণ্ড গরমের কারণে স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করে দেশের স্কুল-কলেজ এক সপ্তাহ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। আবহাওয়ার সেই পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি আরও বাড়বে কি না সে বিষয়ে শনিবারের মধ্যে সিদ্ধান্ত হবে।
তবে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ২৮ এপ্রিল রোববার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে শনিবারও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস চালু রাখা হবে।
শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন নাহার বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন।
বর্তমান তাপপ্রবাহ পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো হবে কি না- জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তাপমাত্রার কথা তো বলা যায় না। আপ-ডাউন হয়। সামনে দুদিন (শুক্র ও শনিবার) বন্ধ আছে। আমরা একটু দেখি, তারপর সিদ্ধান্ত নেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে যে তাপমাত্রা বাড়তে পারে। শিক্ষামন্ত্রী দেশে ফিরলে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
এদিকে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার পূর্বাভাসের প্রেক্ষাপটে কিছু প্রস্তাব দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। স্কুল খুলে দেয়া হলেও শিশুদের স্কুলের সময় এগিয়ে আনা এবং ক্লাস সংখ্যা কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে তারা।
এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করা হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে শামসুন নাহার বলেন, ‘সেটা নিয়ে কাজ করব পরে। আগে সামনে যেটা আছে সেটা শেষ করে নেই।’
কোনো বিকল্প পরিকল্পনা আছে কি না- এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অনলাইনে তো আছে, সেটা আমরা পরে দেখব। গ্রাম পর্যায়ে স্কুল আছে, তারা তো অনলাইনে অভ্যস্ত না। অতএব সবকিছু চিন্তা করেই আমাদের কাজ করতে হবে।
‘শুক্র বা শনিবারের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেব। দুদিনের মধ্যে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে চাই।’
দেশের বেশিরভাগ অংশ জুড়েই বইছে তাপপ্রবাহ। কোথাও কোথাও তাপপ্রবাহ তীব্র আকার ধারণ করেছে। অর্থাৎ দিনের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হয়েছে। ঈদুল ফিতর ও নববর্ষের ছুটি শেষে ২১ এপ্রিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা ছিল। কিন্তু প্রচণ্ড গরমের কারণে ছুটি এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। সে হিসাবে রোববার (২৮ এপ্রিল) থেকে স্কুল খুলে দেয়ার কথা রয়েছে।
তাপপ্রবাহ চলমান থাকার এই পরিস্থিতিতে পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৮ এপ্রিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে কীনা সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা প্রশাসনের অধিদপ্তরগুলোতে আলোচনা চলছে।
সেসব আলোচনায় কয়েকটি বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে। যেমন চলমান তাপমাত্রা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নয়। তাছাড়া দেশের সব অঞ্চলের বর্তমান তাপমাত্রা সমান নয়। তবে ২৮ এপ্রিল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার জন্য সব রকমের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে।
আর রোববার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলেও কিছু শর্ত থাকবে। যেমন শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষের বাইরের কার্যক্রম থেকে বিরত রাখতে হবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত অ্যাসেম্বলি বন্ধ থাকবে। আর শিখন ঘাটতি পূরণে ৪ মে থেকে শনিবারও ক্লাস চলবে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্য, ট্রেজারার ও প্রক্টরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাদের কার্যালয়ে তালা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাত দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার এই কার্যালয়গুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়।
প্রশাসনিক ভবনে সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী, ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান, উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের দপ্তরে তালা লাগানো আছে।
দপ্তর থেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার সকাল থেকে দপ্তরে আসেননি।
এই বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, ‘আমরা আলটিমেটাম দিয়েছিলাম। সে সময় শেষ হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে দাবি বাস্তবায়নের কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় আমরা পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী তিন দপ্তরে তালা দিয়েছি।’
শিক্ষক সমিতির সাত দফা দাবি হলো- গত ১৯ ফেব্রুয়ারি উপাচার্য কার্যালয়ে উপাচার্যের উপস্থিতিতে কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মকর্তা, বহিরাগত সন্ত্রাসী ও কিছু অছাত্র কর্তৃক শিক্ষকদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলায় নেতৃত্ব দানকারী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেনের সাময়িক বহিষ্কারপূর্বক সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তার ও জড়িত সকলের সর্বোচ্চ শান্তি নিশ্চিতকরণ এবং হামলায় মদদ দানকারী প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীর অপসারণ, ঢাকাস্থ গেস্ট হাউজ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য অবমুক্ত করা, অধ্যাপক গ্রেড-১ ও অধ্যাপক গ্রেড-২ পদে পদোন্নতির জন্য আবেদনকৃত শিক্ষকদের অবিলম্বে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মোতাবেক বিভিন্ন বিভাগে বিভাগীয় প্রধান ও অনুষদসমূহে ডিন নিয়োগ এবং ইতোমধ্যে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে যেসকল বিভাগে বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাদের প্রত্যাহার করা, শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি ও স্থায়ীকরণের ক্ষেত্রে আইন বহির্ভূত অবৈধ শর্ত আরোপ করে জ্যেষ্ঠতা ক্ষুণ্ণ করার মাধ্যমে যে সীমাহীন বৈষম্য তৈরি করা হয়েছে দ্রুততম সময়ে সেসবের নিষ্পত্তিকরণ, ৯০তম সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত বিতর্কিত শিক্ষাছুটি নীতিমালা রহিত করে পূর্বের নীতিমালা বহাল রাখা এবং ৮৬তম সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদিত স্থায়ীকরণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বাতিল করা।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের পর উপাচার্যের কক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গেলে শিক্ষক সমিতির সঙ্গে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য এবং ছাত্রলীগের বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনা নিয়ে কর্মসূচি দেয় শিক্ষক সমিতি।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক শিক্ষকের পারিবারকে হয়রানি ও অসম্মানজনক আচরণের অভিযোগ উঠেছে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জয়শ্রী সেন, তার স্বামী ও সন্তানকে হয়রানির ঘটনায় অভিযুক্ত কর্মকর্তার নাম আব্দুস সালাম ওরফে সেলিম।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, প্রক্টর, বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও শাপলা ফোরামের প্রতিও অভিযোগের অনুলিপি পাঠানো হয়।
অভিযোগে বলা হয়, গত ১৪ এপ্রিল দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ছেলে সন্তানকে নিয়ে মোটরসাইকেলে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন তার স্বামী। এ সময় মেইন গেট অতিক্রমকালে উপস্থিত নিরাপত্তা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম তাদেরকে আপত্তিকর কথাবার্তা বলে চরমভাবে অপমান করেন। স্বামীর সামনে তাকেও অপমানজনক কথাবার্তা বলেন সালাম।
সহযোগী অধ্যাপক জয়শ্রী সেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবারের সম্মানার্থে আমি এতদিন ধৈর্য ধরে ছিলাম। ভেবেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এর একটা বিচার করবে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় তারা বিষয়টি নিয়ে কোন সম্মানজনক সমাধানের ব্যবস্থা করে নাই। এটা শিক্ষক সমাজের জন্য অপমান ও ন্যাক্কারজনক ঘটনা।
তিনি বলেন, ওইদিন আমার স্বামী সন্তানকে নিয়ে তার মায়ের বাসায় যাচ্ছিলেন। এ সময় মেইন গেটে নিরাপত্তা কর্মকর্তা তাকে থামিয়ে অকারণে আপত্তিকর ও অসম্মানজনক কথাবার্তা বলেন। এ নিয়ে প্রক্টরের কাছে মৌখিকভাবে জানালেও কোনো সম্মানজনক সমাধান পাইনি।
অভিযুক্ত নিরাপত্তা কর্মকর্তা সালাম বলেন, প্রত্যক্ষদর্শী অনেকের সাথে কথা বললে আসল সত্য সামনে আসবে। ইদের পর বহিরাগতদের চাপে মেইনগেটে অনেক ভিড় থাকে। ম্যামের স্বামী বাইক নিয়ে ঢোকা বা বের হওয়ার সময় বাইকের হর্ন বাজিয়ে মেইনর গেটে উপস্থিত দারোয়ানদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে মেইনগেট খুলে দিতে বলেন। ছোট গেট দিয়েও তিনি বাইক নিয়ে যেতে পারতেন। তার স্বামীর সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করিনি। আমি শুধু আমার দায়িত্ব পালন করেছি। বিষয়টা সঠিক তদন্ত করা হোক।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কথা বলা হচ্ছে। আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব করে যাচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বলেন, অভিযোগপত্রটি হাতে পেয়েছি। শিক্ষকের বিষয় যেহেতু সেনসিটিভ। অভিযোগটি শিগগিরই উপাচার্যের কাছে হস্তান্তর করা হবে এবং তিনিই যা ব্যবস্থা নেয়ার নেবেন।
আরও পড়ুন:কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ এনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের হাউস টিউটরের পদ ছাড়লে আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মু. আলী মুর্শেদ কাজেম।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে তিনি পদত্যাগপত্র পাঠান।
পদত্যাগপত্রে মুর্শেদ কাজেম উল্লেখ করেন, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে সৃষ্ট অচলাবস্থার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করা, পদোন্নতিতে অযাচিত শর্তারোপ ও জৈষ্ঠতা লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে সম্মানিত সাধারণ শিক্ষকদের উত্থাপিত সব ন্যায্য দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করে বর্তমানে উক্ত পদে দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করছি।
এ ছাড়া বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে এরই মধ্যে প্রায় ১৩ জন শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন। এবার নতুন করে পদত্যাগ করছেন উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরাও।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রীষ্মের ছুটি পিছিয়ে ঈদুল আজহার সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের কনফারেন্স কক্ষে বুধবার দুপুরে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রণব কুমার পান্ডে।
জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রীষ্মাবকাশ ৫ থেকে ৯ মে এবং ১৬ থেকে ২৪ জুন ঈদ-উল-আযহার ছুটি পূর্বনির্ধারিত ছিল, কিন্তু চলমান তাপদাহের কারণে পানি সংকটের আশঙ্কা এবং শিক্ষার্থীদের এতদসংক্রান্ত নানাবিধ অসুবিধার কথা বিবেচনা করে ছুটিসমূহ পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পুনর্বিন্যস্ত ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষাসমূহ ৯ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত এবং অফিসসমূহ ৯ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। ৩০ জুন থেকে ক্লাস ও পরীক্ষাসমূহ যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে।
এ ছাড়াও গত ২১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সভায় গৃহীত ২ মে ক্লাস বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়। একইসঙ্গে বিভাগসমূহ প্রয়োজনবোধে ৬ জুন পর্যন্ত অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে বলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) প্রক্টরিয়াল বডি থেকে আরও এক সহকারী প্রক্টর পদত্যাগ করেছেন।
পদত্যাগকারী শিক্ষক হলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী এম আনিছুল ইসলাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো এক পদত্যাগপত্র থেকে বুধবার দুপুরে এ তথ্য জানানো হয়।
পদত্যাগপত্রে আনিছুল ইসলাম উল্লেখ করেন, ‘সম্প্রতি ভর্তি পরীক্ষার আসন বিন্যাস কমিটির সদস্য আবু ওবায়দা রাহিদ অনুমতি ছাড়াই আমাদের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের নির্মিতব্য সংরক্ষিত কক্ষে অবৈধভাবে প্রবেশ করে আসন বিন্যাস পরিকল্পনা করেন এবং তা কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠিয়ে দেন। অনুমতি ছাড়া ল্যাবে প্রবেশ ও আসন পরিকল্পনা করার কথা জানতে চাইলে তিনি আমার সঙ্গে উদ্ধত আচরণ করেন।
‘পরবর্তী সময়ে ঈদ ছুটি শেষে অনুমতি নেয়ার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তিনি ক্যাম্পাসে গোল চত্বরে শিক্ষার্থীদের সামনে আমাকে বিভিন্নভাবে অপমানসূচক কথাবার্তা বলতে থাকেন। বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলে স্লেজিং করতে থাকেন। ওই সময় উপস্থিত তিন শিক্ষক তাকে শান্ত করার চেষ্টা করলে তিনি আমার দিকে বারবার তেড়ে আসতে থাকেন।’
পদত্যাগপত্রে আরও বলা হয়েছে, ‘পরবর্তী সময়ে সমঝোতা বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও একজন অধ্যাপকের সামনে তিনি আমাকে মারতে উদ্যত হন এবং আমার পরিবার নিয়ে অশালীন কথাবার্তা বলেন, কিন্তু ঘটনার তিন দিন পার হয়ে গেলেও ওই সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।’
কাজী এম আনিছুল ইসলাম বলেন, ‘একজন সহকারী প্রক্টর নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে আমাকে অপদস্থ করেছেন এবং হুমকি দিয়েছেন। তাই আমি এ দায়িত্ব পালনে বিব্রতবোধ করছি। পাশাপাশি আমার সাথে হওয়া অন্যায়ের বিচারের দাবি জানিয়ে আমি সহকারী প্রক্টরের পদ থেকে পদত্যাগ করেছি।’
এর আগে গত ০৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক তোফায়েল হোসেন মজুমদার, ০৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণমাধ্যম উপদেষ্টা মাহবুবুল হক ভুঁইয়া, ১৮ ফেব্রুয়ারি সহকারী প্রক্টর মাহমুদুল হাসান এবং ২০ ফেব্রুয়ারি সহকারী প্রক্টর কামরুল হাসান ও শেখ হাসিনা হলের আবাসিক শিক্ষক কুলছুম আক্তার স্বপ্না পদত্যাগ করেন।
এ ছাড়াও ১৯ মার্চ সিন্ডিকেট সভায় ‘অ্যাজেন্ডা বহির্ভূত ও বেআইনিভাবে ডিন নিয়োগ’ দেয়ার কারণ দেখিয়ে সিন্ডিকেট সদস্যের পদ থেকে অধ্যাপক ড. শেখ মকছেদুর রহমান পদত্যাগ করেন। সবশেষ ২০ মার্চ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহমুদুল হাছান খান, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অর্ণব বিশ্বাস, ফার্মেসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জয় চন্দ্র রাজবংশীসহ মোট চার হলের চারজন হাউজ টিউটর পদত্যাগ করেন।
আরও পড়ুন:বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ প্যানেলে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলরদের ভোটে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সিনেট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সিরাজগঞ্জের রাশিদাজ্জোহা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. খাদেমুল ইসলাম।
ড. খাদেমুল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর (১৯৯২) ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৯৩ সালে ১৪তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে পদার্থবিদ্যার প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান।
খাদেমুল চাকরিতে থাকা অবস্থায় প্রেষণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে Plasma Physics-এ Ph.D. (২০০৫) ডিগ্রি অর্জন করেন। তা ছাড়া তিনি অস্ট্রেলিয়ার University of Melbourne থেকে Learners’ Assesment System-এর ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ নেন, যা বাংলাদেশে মাধ্যমিক শিক্ষায় সংস্কার বিষয়ে অবদান রাখতে সহায়তা করে।
পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে তিনি পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যলয় থেকে এম.এড. (২০১৭) এবং মালয়শিয়ার University of Nottingham থেকে Master of Education (প্রথম পর্ব) শেষ করেন। তিনি ২০১৭ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান।
ড. খাদেমুল দেশে ও বিদেশে পদার্থবিজ্ঞানের অনেক সম্মেলনে অংশ নিয়ে সেখানে বিজ্ঞানবিষয়ক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক জার্নালে তার উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গবেষণাপত্র প্রকাশ হয়েছে।
খাদেমুল প্রায় পাঁচ বছর ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটে ‘পরীক্ষা মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞ’ এবং জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে (নায়েম) ১০ বছর ‘প্রশিক্ষণ বিশেষজ্ঞ’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
দীর্ঘ চাকরি জীবনে তিনি আমেরিকার University of Alabama ও নিউ ইয়র্কে University of Fordham থেকে Secondary School Mangement বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন।
তিনি শিক্ষাক্রম, শিক্ষার্থী মূল্যায়ন ও দক্ষতাভিত্তিক প্রশ্ন প্রণয়ন বিষয়ে সারা দেশে Resource Person হিসেবে কাজ করেন। ড. খাদেমুল পদার্থবিজ্ঞানের অত্যন্ত সম্ভাবনাময় শাখা Plasma Physics-এ জোহান্সবার্গের University of the Witwatersrand থেকে Post-Doctoral গবেষণা (২০০৮) সম্পন্ন করেন। এর অব্যবহিত পূর্বে তিনি কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের আওতায় গাজীপুর জেলার বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে অধ্যক্ষ হিসেবে (২০২০-২০২১) দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ঢাকার ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য নির্বাচিত হন ২০২১ সালে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য