করোনাভাইরাস মহামারিতে এক বছরের বেশি সময় বন্ধ রয়েছে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সন্তানের শিক্ষাজীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। স্কুলে যাওয়ার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে আছে শিক্ষার্থীরাও। বিশেষ করে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের ‘গৃহবন্দি’ শিক্ষার্থীরা। সরকারও সচেষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি করোনার চলমান পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে নাকি বন্ধই থাকবে, এ বিষয়ে দ্বিমুখী চাপের কথা জানিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি আরও জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১৩ জুন খুলে দেয়ার চেষ্টা থাকলেও খুলে দেয়ার মেসেজ থেকে বন্ধ রাখার মেসেজ বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে নিউজবাংলা কথা বলেছে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, শিক্ষক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে।
মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের অধিকাংশ ১৩ জুন স্কুল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের পক্ষে নন। তারা বলছেন, করোনা সংক্রমণের ন্যূনতম ঝুঁকি থাকা অবস্থায় ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে স্কুল খোলা সঠিক হবে না। কোমলমতি শিশুদের শিক্ষার ক্ষতি মেনে নেয়া কষ্টকর। কিন্তু সে ক্ষতি পোষাতে তাদের জীবনের ঝুঁকিতে ফেলা যাবে না।
এদিকে মাসের পর মাস বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে প্রায় সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্ডারগার্টেনের উদ্যোক্তারা পড়েছেন মহাসংকটে। তারা চাইছেন, যত দ্রুত সম্ভব স্কুল খুলে দেয়া হোক। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো পরিস্থিতি হয়নি।
রাজধানীর বন্ধ থাকা কদমতলী এলাকার রেঁনেসা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে এক শিক্ষার্থী। ছবি: নিউজবাংলা
অভিভাবকরা বলছেন, বেসরকারি স্কুলগুলো আর্থিক সংকটে পড়েছে। তাই তারা দ্রুত স্কুল খোলার পক্ষে। শিশুদের শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা নিচ্ছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু বেশির ভাগের সেদিকে নজর নেই। আর সরকারি বিদ্যালয়ে অনলাইনে শিক্ষার ব্যবস্থা করা যায়নি নানা কারণে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে আর্থিক সংকটে পড়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল। প্রতিষ্ঠানটি গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়। বিজ্ঞপ্তিতে ঈদের ছুটির আগে ১২ তারিখের মধ্যে চলতি মাসের বেতন চাওয়া হয় অভিভাবকদের কাছে। এ নিয়ে তুমুল প্রতিক্রিয়া হয়। ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা বেতন দেননি।
১৩ জুন স্কুল খুলতে পারে, এমন খবরে এই স্কুলের অভিভাবক ফোরাম অনলাইনে তীব্র সমালোচনা করেছে।
‘আমরা ভিকারুননিসা পরিবার’ নামে একটি ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলা হয়, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ১২ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে ১৫ দিন, ৩০ দিন করে সময় না বাড়িয়ে আপাতত ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো দরকার বলে মনে করি।’
এমন বক্তব্যে সমর্থনের পাশাপাশি অনেক অভিভাবক স্কুল খোলা নিয়ে তির্যক মন্তব্য করেছেন।
মিজানুর রহমান নামের এক অভিভাবক লিখেন, ‘করোনা মহামারি চলাকালে যেসব অভিভাবক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সম্মতি দেবেন, তারা মূর্খ, পাগল, বিকৃত মনমানসিকতার পিতা-মাতা।’
মিরপুরের একটি বেসরকারি প্রাথমিক স্কুলের দুই শিক্ষার্থীর বাবা কাওসার চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্কুল বন্ধ থাকায় বাচ্চারা অস্থির হয়ে গেছে। ওদের আর বাসায় আটকে রাখা খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। কিন্তু করোনার যে খবর শুনছি, তাতে ওদের স্কুলে পাঠানোর সাহস করছি না। বেঁচে থাকলে পড়ালেখা করতে পারবে। আগে করোনা যাক, তারপর স্কুল খুলুক।’
আরেক অভিভাবক সাজিয়া আফরিন বলেন, ‘বাচ্চাদের জন্য ঝুঁকিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত স্কুলে পাঠাব না। সবকিছু মেনে নিলেও বাচ্চার ক্ষতি মানতে পারব না।’
অভিভাবকদের অনেকে বলছেন, পরিস্থিতি ও প্রয়োজন বিবেচনায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। তবু সেখানে টিকাদানসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। মাধ্যমিক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত আরও দেরিতে নেয়াটাই যুক্তিযুক্ত হবে।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান এম ইকবাল বাহার চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক বছরেরও বেশি সময় আমাদের স্কুলগুলো বন্ধ। সামনে কবে খুলবে আমরা তা-ও জানি না।
‘সারা দেশে ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুলের মধ্যে করোনার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। ধার-দেনা করে অনেক দিন চলেছি। কিন্তু এখন কেউ ধার দিতেও রাজি নন। আমরা কীভাবে বেঁচে আছি সেটা বলে বোঝানো যাবে না।’
এম ইকবাল বাহার বলেন, ‘কিছুদিন আগেও সরকার আমাদের স্কুল খুলে দেবে বলে শুনেছিলাম। সে সময় আমরা ধার-দেনা করে স্কুলগুলো সংস্কার করে খোলার প্রস্তুতি নিলাম। কিন্তু স্কুল খুলল না। তখন থেকেই মূলত আমরা শেষ হয়ে গেছি।
‘তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবি, যত দ্রুত সম্ভব স্কুলগুলো খোলার ব্যবস্থা করুন। স্কুলে করোনা মোকাবিলায় আমরা সব ধরনের চেষ্টা করব।’
প্রধান শিক্ষক এখন খেলনার দোকানি
মোহাম্মদপুরের আদাবরে অবস্থিত গ্রিন লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল করোনার কারণে বন্ধ রয়েছে। জীবন চালাতে স্কুলের গেটের মুখে শিশুদের প্লাস্টিকের খেলনার দোকান সাজিয়ে বসেছেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক নুর আক্তার ডলি।
কেমন আছেন জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘কোনো রকমে বেঁচে আছি ভাই। কিন্তু কত দিন বেঁচে থাকব জানি না। এই খেলনার দোকান থেকে যা আয় করি, সেটা দিয়ে কোনো রকমে পেট চালাই। কিন্তু স্কুল চালাতে পারি না। প্রতি মাসে স্কুলের ভবন ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল ও পানির বিল দিতে হয়।
‘ধার-দেনা আর গ্রামের সম্পত্তি বেচে এত দিন চালিয়ে এসেছি। এখন আর পারছি না। আর কিছুদিন দেখব। তারপর সব ছেড়ে গ্রামে চলে যাওয়া ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই।’
করোনার কারণে ডলির মতো অসংখ্য শিক্ষক এখন আছেন অনিশ্চয়তায়।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে প্রায় ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুলে প্রায় এক কোটি ছাত্র-ছাত্রী। শিক্ষক আছেন ১০ লাখ, যার মধ্যে ২০ শতাংশ স্থায়ীভাবে অন্য পেশায় চলে গেছেন।
শিক্ষকদের পক্ষ থেকে স্কুল খুলে দেয়ার দাবি জোরালো হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন আরও কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে। তবে প্রাপ্তবয়স্ক ছাত্র-ছাত্রীদের টিকার আওতায় এনে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খোলা যেতে পারে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও করোনাবিষয়ক জাতীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের পর সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে আমরা যে ধারণা করেছি, সেটার ভালো করে ফলোআপ নিয়ে স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তাড়াহুড়া করলে হবে না। শিক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের জীবন বাঁচাতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এখন সংক্রমণের হার এবং মৃত্যুর সংখ্যা কম দেখেই কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। কারণ, শীতকালেও আমাদের সংক্রমণের হার কম ছিল। কিন্তু তখন দেশে লকডাউন ছিল না। এখনও লকডাউন চলছে। আবার সংক্রমণের হারও শীতকালের চেয়ে বেশি।
‘আমরা এখনও বুঝতেই পারছি না কেন আমাদের সংক্রমণের হার ওঠানামা করছে। আমার ধারণা, শীতকালে এমনিতেই আমরা অনেক দেশি ফ্লুতে (জ্বর, সর্দি, কাশি) আক্রান্ত হই। হয়তো এসব ফ্লুর মধ্যে বিদেশি ভাইরাস করোনা আমাদের বেশি আক্রান্ত করতে পারেনি।’
এই ভাইরোলজিস্ট বলেন, ‘তাই আমাদের আগে ভালো করে গবেষণা করতে হবে, কেন আমাদের দেশে করোনা সংক্রমণ কখনো কম, কখনো বেশি হচ্ছে। গবেষণার সেই তথ্যের ভিত্তিতে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক ডা. বেনজির আহমেদ মনে করেন, প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া উচিত। তবে কম বয়স্কদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে আরও একটু পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘স্কুল-কলেজ আমাদের আরও অনেক আগেই খুলে দেয়া উচিত ছিল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং প্রাপ্তবয়স্ক ছাত্র-ছাত্রীদের টিকার আওতায় এনে এটা করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যদি আমরা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতাম তাহলে সংক্রমণ হয়তো বাড়ত না। আবার ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষাজীবনও ব্যাহত হতো না।’
বেনজির আরও বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব প্রাপ্তবয়স্ক ছাত্র-ছাত্রীদের টিকার আওতায় এনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। তবে কম বয়স্ক ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর একটু পর্যবেক্ষণ করে খোলা উচিত হবে।’
আরও পড়ুন:মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, প্রাণি থেকে মানুষের দেহে রোগ ছড়ানো মারাত্মক হতে পারে। তাই প্রাণির রোগ নিয়ন্ত্রণ করা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। আমরা বিশেষ কোন রোগ জানা মাত্রই তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। সকল প্রাণিকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে সরকার ভ্যাকসিন উৎপাদনের কার্যক্রম শুরু করবে। আমরা প্রাণি থেকে মানুষের দেহে রোগ ছড়ানোর চান্স দিতে চাই না।
রোববার দুপুরে রংপুর আরডিআরএস বেগম রোকেয়ার মিলনায়তনে লাইভস্টক এন্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আয়োজনে প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে বিভাগীয় কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
উপদেষ্টা বলেন, নিরাপদ মাংস, দুধ, ডিম পেতে হলে প্রাণিকে নিরাপদ ও রোগমুক্ত করতে হবে। আমরা যেহেতু ভ্যাকসিন আমদানি করি, তাই দাম বেশি হওয়ায় খামারিরা প্রাণিদের ঠিকমত ভ্যাকসিন দিতে পারে না। আমরা সকল প্রাণিকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়ান হেলথ কনসেপ্টের আওতায় মানুষ ও প্রাণি স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের, যুগ্ম সচিব মোসাম্মৎ জোহরা খাতুন, বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের পরিচালক ডা. আব্দুল হাই সরকারসহ রংপুর বিভাগের ৮ জেলা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি প্রদর্শন নিয়ে উত্তেজনা
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার উপস্থিতিতে কর্মশালায় শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি প্রদর্শিত হওয়ায় উত্তেজনা দেখা দেয়। রোববার দুপুর রংপুর আরডিআরএস বেগম রোকেয়ার মিলনায়তনে লাইভস্টক এন্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আয়োজনে প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে বিভাগীয় কর্মশালায় মাল্টিমিডিয়া প্রজেন্টেশন দেন, প্রকল্প সমন্বয়কারী গোলাম রব্বানী।
প্রকল্পের তথ্য-চিত্র প্রদর্শনের সময় একটি স্লাইডে প্রশিক্ষণ কর্মশালার ছবিতে হলরুমে অতিথিদের মাথার উপর শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি দেখা যায়। চব্বিশের গণঅভ্যূত্থান পরবর্তী পতিত সরকার প্রধানের ছবি প্রদর্শন নিয়ে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করতে থাকে। বিষয়টি জানাজানি হলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর প্রতিবাদ জানান। সেই সাথে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবী করেন।
এ নিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, এটি ইচ্ছাকৃতভাবে হতে পারে না। যদি ইচ্ছাকৃতভাবে হয় তবে সেটি চরম অবমাননাকর। এত মানুষের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আমলে এটি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। তবে যিনি মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপন করেছেন, তিনি বলেছেন এটি ভুলক্রমে হয়েছে। তিনি ক্ষমাও চেয়েছেন।
উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা মনে করছি ফ্যাসিবাদ জাস্ট চলে গেছে। ফ্যাসিবাদ অনেক রকম রূপে রয়েছে, তার প্রতিফলন নানাভাবে ঘটছে। আমরা যখন বিষয়গুলো জানতে পারছি, তাক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করছি।
স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও পঞ্চগড় সদর উপজেলার ৮নং ধাক্কামারা ইউনিয়নের করতোয়া নদীর ওপর স্থায়ী সেতু হয়নি। ফলে নদীর দুই তীরে থাকা অন্তত কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ আজও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন জীবন-যাপন করছে। ভরসা কেবল একটি কাঠের সাঁকো। এতে ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে স্থানীয়দের।
গ্রামের শত শত মানুষ প্রতিদিন কাঠের সাঁকো পেরিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি কার্যক্রমে পড়ছে বড় ধরনের বাধা। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীরা যেমন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, তেমনি জরুরি মুহূর্তে রোগী বা গর্ভবতী নারীকে হাসপাতালে নেওয়ার সময়ও ঘটছে দুর্ঘটনা। বর্ষার সময় ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
স্থানীয়রা আরও জানান, একদিকে নেই গাড়ি যাতায়াতের সেতু অপরদিকে নেই রাস্তাঘাট। এ কারণে এই এলাকায় কেউ আত্মীয়তা করতে চায় না। তাই এই নদীর ওপর একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ হলে এ অঞ্চলের শিক্ষার্থী, কৃষক, নারী-পুরুষ সবার জীবনযাত্রায় আসবে ইতিবাচক পরিবর্তন। শুধু তাই নয়, এলাকার অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সেতুটি হবে মাইলফলক।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি বারবার দাবি জানিয়েছি, এখানে একটা স্থায়ী সেতু খুবই দরকার। জনগণের ভোগান্তি নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা হওয়া উচিত।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, ‘আমি উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে কথা বলব। এখানে যাতে স্থায়ী সমাধান হয়, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
একটি সেতু শুধু যোগাযোগের পথ নয়, বদলে দিতে পারে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির চিত্র। নদীর ওপর একটি স্থায়ী সেতুই বদলে দিতে পুরো এলাকার ভাগ্যচিত্র।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপির) আওতায় ব্রিজ নির্মাণের জন্য যাবতীয় কাগজপত্র কয়েকদিনের মধ্যে পাঠাব।
টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (মাভাবিপ্রবি) সামগ্রিক শৃঙ্খলা অবনতি, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন শিক্ষার্থীকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে অনৈতিক কাজে লিপ্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় পাঠদান পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটানো এবং আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটানোর কাজে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগে শাস্তি পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের (নিষিদ্ধঘোষিত) ১৯ জন নেতা-কর্মী।
এদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও। অভিযুক্তদের মধ্যে ৪ জনকে আজীবন, ১ জনকে ৫ সেমিস্টার, ৭ জনকে ৪ সেমিস্টার ও ৭ জনকে ৩ সেমিস্টার পর্যন্ত বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মোহা. তৌহিদুল ইসলাম রোববার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গত ২৭ আগস্ট অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫০তম রিজেন্ট বোর্ড সভায় এই শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রিজেন্ট বোর্ডের ৪নং আলোচ্যসূচিতে ছিল বিষয়টি ।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় ৪ জন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়।
বাকি ১৫ জনকে তাদের অপরাধের ধরন ও গুরুত্ব বিবেচনায় বিভিন্ন মেয়াদে শান্তি এবং বহিষ্কার আদেশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অত্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র আরও জানায়, একটি বিশেষ ছাত্রসংগঠনের প্রতিহিংসামূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাখিলকৃত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২৪৭তম (জরুরি) রিজেন্ট বোর্ড সভায় ১৯ জন শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার এবং একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সে পরিপ্রেক্ষিতে অনুষ্ঠিত রিজেন্ট বোর্ডের ২৪৮তম সভায় পুনর্গঠিত অধিকতর তদন্ত কমিটি কর্তৃক দাখিলকৃত চূড়ান্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ এবং অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য ও উপাত্ত এবং সুপারিশ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে সাময়িক বহিষ্কার আদেশপ্রাপ্ত ১৯ জন শিক্ষার্থী দোষী প্রমাণিত হয়। খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, শাস্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা সবাই নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
আজীবনের জন্য বহিষ্কার হয়েছেন ছাত্রলীগ সভাপতি মানিক শীল (ইএসআরএম), সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির (অর্থনীতি), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাওন ঘোষ (অর্থনীতি) ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাদিক ইকবাল (পদার্থবিজ্ঞান)। সহসভাপতি রায়হান আহমেদ শান্তকে (পদার্থ বিজ্ঞানকে) ৫ সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
এছাড়া চার সেমিস্টারে জন্য ৭ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন- খালেকুজ্জামান নোমান (অর্থনীতি), সাখাওয়াত আহমেদ শুভ্র (গণিত), মো. আব্দুল্লাহ সরকার উৎস (গণিত বিভাগ), মো. আবিদ হাসান মারুফ (গণিত), রানা বাপ্পি (রসায়ন বিভাগ), মো. যোবায়ের দৌলা রিয়ন (রসায়ন), নাহিদ হাসান (ব্যবস্থাপনা)।
আরও ৭ জনকে তিন সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা হলেন- সুজন মিয়া (অর্থনীতি বিভাগ), জাহিদ হাসান (হিসাববিজ্ঞান), মো. নাঈম রেজা (অর্থনীতি), ইমতিয়াজ আহমেদ রাজু (সিপিএস), মো. রিফাত হোসেন (হিসাববিজ্ঞান) বিভাগ, ইমরানুল ইসলাম (সিপিএস), মো. আনোয়ার হোসেন অন্তর (পদার্থবিজ্ঞান)।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. ইমাম হোসেন বলেন, নিয়মতান্ত্রিক তদন্ত কমিটির সুপারিশ নিয়ে ঊর্ধ্বতন পর্যদগুলোর অনুমোদনক্রমে ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে।
মাগুরা আন্তঃপ্রেসক্লাব ফুটবল টুর্নামেন্টে মাগুরা প্রেসক্লাবকে ১-০ গোলে পরাজিত করে শালিখা প্রেসক্লাব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
মাগুরা প্রেসক্লাব আয়োজিত সকল উপজেলার প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের নিয়ে এ টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কৃষিবিদ গ্রুপ ও ইম্পেরিয়াল রিয়েল স্টেট লিমিটেডের সহযোগিতায় ও মাগুরা প্রেসক্লাবের আয়োজনে গত শনিবার মাগুরা স্টেডিয়ামে এ টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। টুর্নামেন্ট উদ্বোধন করেন কৃষিবিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মাগুরা প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য কৃষি বিজ্ঞানী ড. আলী আফজাল।
মাগুরা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা একটি ব্যতিক্রমী আয়োজনের মধ্য দিয়ে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। দিনব্যাপী এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে চার উপজেলার সাংবাদিকদের মধ্যে আনন্দঘন পরিবেশে যেন এক মিলনমেলা বসে ছিল স্টেডিয়াম।
এ খেলায় অংশ নেন ছোট-বড় নির্বিশেষে সকল বয়সের সাংবাদিকরা। প্রতি উপজেলা থেকে ২০ জন করে সাংবাদিক এ আয়োজনে অংশ নেন।
মাগুরা প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মাগুরা জেলা প্রশাসক মো. অহিদুল ইসলাম ও টুর্নামেন্টের উদ্বোধক ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক কৃষিবিজ্ঞানী ড. আলী আফজাল। এছাড়া মাগুরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিকের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন মাগুরা প্রেসক্লাবের ক্রীড়া সম্পাদক শাহিন আলম তুহিন, শ্রীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ড. মুসাফির নজরুল, মহম্মদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি আজিজুর রহমান টুটুল ও শালিখা প্রেসক্লাবের সভাপতি আব্দুর রব মিয়া।
প্রথম সেমিফাইনালে মাগুরা প্রেসক্লাব ৪-০ গোলে শ্রীপুর প্রেসক্লাবকে পরাজিত করে। অপরদিকে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে শালিখা প্রেসক্লাব ১-০ গোলে মহম্মদপুর প্রেসক্লাবকে পরাজিত করে। খেলা শেষে সাংবাদিকদের এই ব্যতিক্রমী আয়োজনকে সাধুবাদ জানিয়ে বক্তারা বলেন , মাগুরা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের এমন আয়োজন সত্যিই খুবই প্রশংসনীয়। সাংবাদিকরা যে শুধু কলমের মাধ্যমেই দেশকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে তাই নয় তারা খেলাধুলার মাধ্যমে যুব সমাজকে মাদকমুক্ত রাখতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে । আর এটা দেখে বাংলাদেশের সব জেলার সাংবাদিকদের এ ধরনের আয়োজনে অনুপ্রাণিত করবে। ব্যতিক্রমী এই আয়োজনের জন্য অতিথিরা মাগুরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিককে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান।
চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্স আপের পাশাপাশি চার উপজেলার প্রেসক্লাবের মাঝে শুভেচ্ছা ট্রফি তুলে দেন অতিথিরা। এছাড়া ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে সেরা প্রতিবেদনের জন্য মাগুরা প্রেসক্লাবের ৪ সাংবাদিককে সেরা সাংবাদিক হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়।
সেরা সাংবাদিক চারজন হলেন, এনটিভির মাগুরা স্টাফ করোসপন্ডেন্ট শফিকুল ইসলাম শফিক, নাগরিক টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি মতিন রহমান, দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি শাহিন আলম তুহিন এবং ডেইলি ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের জেলা প্রতিনিধি লিটন ঘোষ।
এছাড়া জুলাই-আগস্টের শহীদ ও প্রয়াত সাংবাদিকদের মাগফিরাত কামনায় মাগুরা প্রেসক্লাবে বাদ জোহর দোয়া মাহফিল ও মধ্যাহ্ন ভোজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় দুই শতাধিক সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।
উজানে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের ফলে উত্তরের নদনদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। তিন দিন উজানের ভারী বর্ষণের পূর্বাভাসে নদী তীরবর্তী এলাকায় বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নদীর তীরবর্তী মানুষের জানমাল ও কৃষি রক্ষায় সতর্ক করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, রোববার উজানের পাহাড়ী ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিকেল ৩টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ও কাউনিয়া পয়েন্টে ৩৪ সেন্টিমিটার নিচে পানি প্রবাহিত হয়েছে। এর মধ্যে রবিবার দিনভর ডালিয়া পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার ও কাউনিয়া পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
পাউবোর পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত রংপুর বিভাগে এবং এর উজান ভারতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে। এতে রংপুর বিভাগের তিস্তা, দুধকুমার, ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। সেই সাথে নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল, চর, দ্বীপ চর প্লাবিত হতে পারে।
এদিকে বন্যার পূর্বাভাস জানিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি আবহাওয়া তথ্য ইউনিট সতর্কতা জারি করেছে। তিস্তা নদী বেষ্টিত লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার শংঙ্কায় সেখানকার পরিপক্ক সবজি দ্রুত সংগ্রহ করা, জমি থেকে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন করা এবং জলাবদ্ধতা পরিহারের জন্য জমির চারপাশে নিষ্কাশন নালা তৈরি করা, আমন ধানের জমির
নিষ্কাশন নালা পরিস্কার রাখা, আমন ধানের জমির আইল উঁচু করা, সেচ, সার ও বালাইনাশাক প্রয়োগ বন্ধ রাখা, কলা ও দন্ডায়মান সবজির জন্য খুঁটির ব্যবস্থা করা, আখের ঝাড় বেঁধে দেয়া, গবাদিপশু ও হাঁসমুরগি থাকার জায়গা পরিস্কার ও শুকনো রাখা, পুকুরের চারপাশে উঁচু করে দেয়া, অতিরিক্ত পানিতে মাছ রক্ষায় চারপাশে জাল বা বাঁশের চাটাই দিয়ে ঘিরে দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
রংপুর গঙ্গাচড়া উপজেলার লহ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, আমার পুরো ইউনিয়নই তিস্তা নদী বেষ্টিত। তিস্তা নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। বিষয়টি আমি নদীর তীরবর্তী বসবাসকারীদের জানিয়ে দিয়েছি।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সাথেও যোগযোগ করা হয়েছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে আগামী ৩ দিন তিস্তার পানি বৃদ্ধি পারে। এ তথ্য নদীর তীরবর্তী এলাকায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নে জনবসতি এলাকায় সড়কের পাশে চলছে বালু বিক্রির রমরমা ব্যবসা। এর ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন ঘটা থেকে শুরু করে বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে যাওয়ায় অনেক পরিবার গৃহহীন হওয়ার উপক্রম। এই পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগীরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।
পেয়ারপুর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল জনবসতিপূর্ণ এলাকায় বালু বিক্রি করছে। এর ফলে স্থানীয় আঞ্চলিক সড়কগুলো বালুর স্তূপে অধিকাংশ সময় অবরুদ্ধ থাকে, যা পথচারী ও যানবাহন চলাচলে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হয়, সড়কে বালুকাঁদা জমে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে হালকা যানবাহন, মটরসাইকেল, ইজিবাইক, মিনিট্রাক সহ ইঞ্জিনচালিত অন্যান্য যানবাহনেও ঘটে দুর্ঘটনা। বিশেষ করে বর্ষাকালে এ সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করে। এহেন সমস্যার ব্যাপারে উক্ত এলাকার
ভুক্তভোগী স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল হক জমাদ্দার জানান, বালু স্তুপকৃত ঐ জমি নিয়ে আমাদের আদালতে মামলা চলমান রয়েছে, বালু ব্যবসায়ীরা এলাকার প্রভাবশালী ও অর্থবিত্তের মালিক হওয়ায় আমাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য বাড়ির সামনে বালুর স্তূপ করে রেখেছে। এ কারণে চলাফেরা করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। বালুর স্তূপ করে চলাচলের রাস্তা টুকু বন্ধ করে দিয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই বালুর সাথে পানি মিশে কাঁদামাটি হয়ে যায় এবং পানি সরাসরি আমাদের ঘরে ঢুকে যায়। পানির কারণে আমাদের বাড়ি-ঘর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
ওই এলাকার আরেক ভূক্তভোগী আ. আজিজ জমাদ্দার বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা ঐ সমস্যার কারণে স্কুলে যেতে বিড়ম্বনার শিকার হয়, কেননা রাস্তা পুরোটাই পানি ও বালুতে ভরা থাকে। আমরা আমাদের সমস্যার কথা একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছি, এরপর তারা উক্ত ব্যবসা সাময়িক বন্ধ রাখে, কিছুদিন পর তারা আবার তা পুণরায় চলমান করে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা আদালতের কাছে আইনি প্রতিকার চেয়েছি।’
এ ব্যাপারে ভূক্তভোগীরা জনদূর্ভোগ সৃষ্টকারী অবৈধ ওই বালু বিক্রির রমরমা ব্যবসা বন্ধের জন্য আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।এলাকার মানুষের দাবি বালুর ব্যাবসা বন্ধ করে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে দেয়া হোক। এ বিষয়ে মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, তারা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন।
স্থানীয়রা এখন তাকিয়ে আছেন আদালতের দিকে, যেখানে তাদের রয়েছে ন্যায় বিচার প্রাপ্তির আস্থা, যা পেলে ভুক্তভোগীরা দুঃসহ উক্ত পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবে।
বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নারী ইউপি সদস্য উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের হেনা বুলবুলির ঘর থেকে অবৈধভাবে মজুদ রাখা ৬৪ বস্তা সার জব্দ করেছে পুলিশ। রোববার বিকেলে এ সার জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় আমতলী থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নারী ইউপি সদস্য হেনা বুলবুলি গত ৩ বছর ধরে অবৈধভাবে সার মজুদ করে আসছেন। ওই সার তার স্বামী মজনু চৌকিদার ও ছেলে হাসান চৌকিদার এলাকার অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
গত বুধবার তিনি (নারী ইউপি সদস্য) আমতলী থেকে দের’শ বস্তা ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি সার অবৈধভাবে ক্রয় করে উত্তর তক্তাবুনয়া গ্রামের বাড়ীতে মজুদ করেছেন। ওই সার থেকে তিনি গত তিন দিনে ৮৬ বস্তা সার অতিরিক্ত দামে বিক্রি করেছেন এমন অভিযোগ কৃষকদের। রোববার বিকেলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমতলী থানা পুলিশ ও উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান অভিযান চালিয়ে নারী ইউপি সদস্য হেনা বুলবুলির ঘর থেকে ৬৪ বস্তা সার জব্দ করেছে। এর মধ্যে ৪১ বস্তা ইউরিয়া, ২৩ বস্তা টিএসপি ও এমওপি।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, নারী ইউপি সদস্য হেনা বুলবুলির স্বামী মজনু চৌকিদার ও তার ছেলে হাসান চৌকিদারের নামে সার বিক্রির লাইসেন্স নেই। তারা উপজেলা কৃষি অফিসের তালিকাভুক্ত ক্ষুদ্র ডিলার নয়।
অবৈধ সার মজুদকারী ও বিক্রেতা হাসান চৌকিদার তার বাড়ীতে সার মজুদ রাখার কথা স্বীকার করে বলেন, আমার কীটনাশক বিক্রির লাইসেন্স আছে। তাই কীটনাশক বিক্রির পাশাপাশি সার বিক্রি করছি।
নারী ইউপি সদস্য হেনা বুলবুলি বলেন, আমার ছেলে কীটনাশকের ব্যবসা করে। ওই সঙ্গে সারও বিক্রি করে। আমার ছেলের নামে সার বিক্রির ক্ষুদ্র লাইসেন্স আছে।
আমতলী উপজেলা উপসহকারী উদ্ভিদ কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, ৬৪ বস্তা সার জব্দ করা হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমতলী থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের এক নারী সদস্যের ঘর থেকে মজুদ রাখা ৬৪ বস্তা সার জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত সার থানার আনা হচ্ছে।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. রাসেল বলেন, ৬৪ বস্তা মজুদ সার নারী ইউপি সদস্য হেনা বুলবুলির ঘর থেকে জব্দ করা হয়েছে। অবৈধভাবে সার মজুদ ও বিক্রির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, নারী ইউপি সদস্যের স্বামী ও তার ছেলের নামে সার মজুদ ও বিক্রির কোন ক্ষুদ্র লাইসেন্স দেয়া হয়নি। তারা অবৈধভাবে সার মজুদ ও বিক্রি করে থাকেন।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রোকনুজ্জামান খাঁন বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, অবৈধভাবে সার বিক্রির সুযোগ নেই।
মন্তব্য