খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন।
আর গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়াকে স্বপদে দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের আলাদা প্রজ্ঞাপনে এ কথা জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি ও আচার্য আবদুল হামিদের অনুমোদন সাপেক্ষে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৯০-এর ১১(১) ধারা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৯৮-এর ১০(১) ধারা অনুযায়ী তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মাহমুদুল আলমের সই করা এই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, উপাচার্য হিসেবে তাদের নিয়োগের মেয়ার চার বছর হবে।
‘তবে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে তারা নিয়মিত চাকরির বয়স পূর্তিতে প্রত্যাবর্তনপূর্বক অবসর গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদন শেষে উক্ত মেয়াদের অবিশষ্টাংশ পূর্ণ করবেন।’
উপাচার্য পদে তারা বর্তমান বেতনের সমপরিমাণ বেতন-ভাতাদি পাবেন বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বিধি অনুযায়ী এই দুজন পদসংশ্লিষ্ট অন্যান্য সুবিধা ভোগ করবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তাদের সার্বক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে হবে বলেও সরকারি নির্দেশনা রয়েছে।
তবে রাষ্ট্রপতি ও আচার্য প্রয়োজনে যেকোনো সময় এই নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকাকে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের জামিন আবেদন ফের নামঞ্জুর করেছে কুমিল্লা আদালত।
সহকারী প্রক্টরের পক্ষে তার আইনজীবীরা জামিন আবেদন করলে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কুমিল্লা জেলা আদালতের বিচারক নাসরিন জাহান তা নামঞ্জুর করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আসামি পক্ষের আইনজীবী আবদুল মমিন ফেরদৌস। তারা আবারও জামিন আবেদন করবেন বলে জানান তিনি।
অবন্তিকার পক্ষের আইনজীবী সৈয়দ নুরুর রহমান বলেন, আজ বৃহস্পতিবার প্রক্টর দ্বীন ইসলামের পক্ষে তার আইনজীবীরা জামিন আবেদন করলে বিচারক নামঞ্জুর করেন।
এদিকে সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের জামিন আবেদন নামঞ্জুর হওয়ায় সন্তুষ প্রকাশ করেছেন অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম। তিনি বলেন, আম্মান ও দ্বীন ইসলাম জামিন পেলে মামলা প্রভাবিত করতে পারে।
গত ১৫ মার্চ রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরোজ সাদাত অবন্তিকা সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও তার সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীকে দায় দিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। ওই পোস্টের কিছুক্ষণ পরই কুমিল্লায় বাসা থেকে ফ্যানের সঙ্গে গলায় রশি প্যাঁচানো তার মরদেহ উদ্ধার হয়।
এ ঘটনায় অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম বাদী হয়ে কোতয়ালি মডেল থানায় আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগ এনে দ্বীন ইসলাম ও আম্মান সিদ্দিকীর নাম উল্লেখ ও বেশ কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করে কোতয়ালি থানায় মামলা করেন। পরে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়া হয় ওই দুজনকে।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে ৫ কর্মী আহত হয়েছেন। তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বেঞ্চের ওপর পা তুলে বসার মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ছাত্রলীগের সিনিয়র-জুনিয়র গ্রুপের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়। এ সময় উভয় পক্ষ লোহার রড ও ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
সংঘর্ষে আহতরা হলেন- ওয়াহিদুল রহমান সুজন, মঈনুল ইসলাম, তৌহিদুল করিম ইমন, জাহিদ ও আমিন ফয়সাল বিদ্যুৎ।
চকবাজার থানার ওসি ওয়ালি উদ্দীন আকবর বলেন, ‘ঘটনাস্থলে পুলিশ আছে, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম বলেন, ‘বেঞ্চে পা তুলে বসা নিয়ে সিনিয়র-জুনিয়রদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। তেমন বড় কিছু না, চড়-থাপ্পর মেরেছে। কেউ গুরুতর আহত হয়নি। পরে নিজেরাই মিটমাট করে নিয়েছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে সব ইউনিটের প্রথম বর্ষ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষার ফল বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হবে।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিট; বিজ্ঞান ইউনিট; ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিট এবং চারুকলা ইউনিটের প্রথম বর্ষ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষার ফল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় প্রকাশ করা হবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রশাসনিক ভবনে অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করবেন।
এর আগে ২৩ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ঢাবির ভর্তি পরীক্ষা। বিভিন্ন ইউনিটের পরীক্ষা চলে ৯ মার্চ পর্যন্ত।
ভর্তি পরীক্ষায় মোট ১২০ নম্বরের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বর এবং মাধ্যমিক (এসএসসি) বা সমমান ও উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) বা সমমানের পরীক্ষার ফলের ওপর ২০ নম্বর বরাদ্দ দেয়া ছিল।
দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাভাবিক নিয়মে সপ্তাহে দু’দিন শুক্র ও শনিবার ছুটি থাকছে। তবে আগামী বছর থেকে সাপ্তাহিক ছুটি কেবল শুক্রবারে সীমিত করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে শনিবার স্কুল খোলা রাখার এই ছুটি রমজানে স্কুল বন্ধ রেখে সমন্বয় করার সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক আলোচনা সভায় এমন তথ্য জানান।
মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং দেশের উন্নয়ন’ শীর্ষক এই আলোচনার আয়োজন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘পবিত্র রমজান মাসে বিদ্যালয় খোলা থাকা নিয়ে নানা ধরনের প্রচার-অপপ্রচার হয়েছে। যেহেতু এ বছর বিষয়টি এভাবে এসেছে, আগামীতে আমরা বিষয়টি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করব।’
তিনি বলেন, ‘বছরে ৫৩ সপ্তাহে ৫২টি শনিবার রয়েছে। সেখানে যদি বিদ্যালয় কিছুটা খোলা রাখি, তাহলে রমজানের ক্ষেত্রে বিতর্ক সৃষ্টির অপপ্রয়াস যারা করছে তাদের সেই অপপ্রয়াস বন্ধ করা যাবে।
‘সে লক্ষ্যে আমরা একটি পরিকল্পনা করব। যাতে এটা নিয়ে আবারও কেউ আদালতে গিয়ে মিথ্যা বুঝিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে রায় নিয়ে এসে অপচেষ্টা করতে না পারে, রাস্তায় এসে মানববন্ধন করতে না পারে। আমরা সংবেদনশীলতার জায়গায় শ্রদ্ধাশীল। আমরা আলেম-ওলামার সঙ্গেও আলোচনা করব। তাদেরও একটা অবস্থান আছে এটা নিয়ে।’
মহিবুল হাসান বলেন, ‘মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে অন্য পাবিভিন্ন ধর্মের মানুষও রয়েছে। এদের মধ্যে এক ধরনের মানুষ রয়েছে যারা অবিশ্বাস, সহিংসতামূলক ও শ্রেষ্ঠত্বমূলক মনোভাব সৃষ্টি করে বিভিন্ন সময়ে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করতে চায়। পাঠক্রম থেকে শুরু করে পাঠ্যবইকেও ওসিলা বানিয়ে তারা এসব অস্থিতিশীলতা তৈরি করে।
‘আমরা অনেক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি এবং ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা আমাদের অনেক উপদেশ দিয়েছেন, যাতে কেউ কোনো ধরনের বিতর্ক সৃষ্টির প্রয়াস না পায়। আমরা সব বিষয় আরও কেয়ারফুলি দেখব।’
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে এমন ধরনের ইঙ্গিত পেলেও সেটার নিরসন করা হবে। এই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা শিক্ষাব্যবস্থাকে একধরনের গোঁড়ামির দিকে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা। আর এটা দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যমান।’
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন নাহার।
সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমদ ও বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরে প্রাথমিক বিদ্যালয় রমজানে ১০ দিন এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৫ দিন খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বিষয়টি আদালত পর্যন্তও গড়িয়েছে।
আরও পড়ুন:ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামকে চাকরি প্রদানের বিনিময়ে মিষ্টি খেতে দশ লাখ টাকার প্রস্তাব দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে রহস্যময় ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েছেন মিথি নামের এক তরুণী৷
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে চাকরি প্রদানের অনুরোধ জানিয়ে প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন এবং পরবর্তীতে ওই বার্তাটি পাঠান তিনি। হোয়াটসঅ্যাপ আইডিতে তার নাম দেখা যায় মিথি।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এইচএম আলী হাসান ইবি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
ক্ষুদেবার্তায় ওই তরুণী লিখেছেন, ‘স্যার,,, ১০ লাখ মিষ্টি খেতে নেন স্যার, এটা আপনি আর আমি ছাড়া কেউ জানবে না ইনশাআল্লাহ, আমার সত্যিই ওখানে কেউ নেই, প্লিজ স্যার চাকরিটা খুব দরকার।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বলেন, ‘আনুমানিক বেলা ১১টার দিকে উপাচার্যকে ফোন দিয়ে একটি অপরিচিত মেয়ে যোগাযোগ করতে চাচ্ছিল। উপাচার্যের সাড়া না পেয়ে মেয়েটি ম্যাসেজ পাঠায় যে, যদি তাকে চাকরি দেয়া হয় তাহলে ১০ লাখ টাকা দেবে।
‘এরপরই আমরা ইবি থানায় একটি জিডি করি যাতে ভবিষ্যতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এটি প্রকাশ হলেও কোনো সমস্যা না হয়।’
এ বিষয়ে ইবি থানার এসআই মেহেদী হাসান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে রেজিস্ট্রার মহোদয় একটি জিডি করেছেন। আমরা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
বিষয়টি নিয়ে ইবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘এক নারী হোয়াটসঅ্যাপে ফোন দিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলতে চান। এ সময় তার পরিচয় কী? কী বিষয়ে কথা বলতে চান? এসব জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাকরির বিষয়ে।
‘তখন আমি বললাম, চাকরির বিষয়ে আমি কোনো কথা বলি না। তখন তিনি বলেন, চাকরিটা তার খুব দরকার। পরে আমি ফোন কেটে দিলে তিনি হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে চাকরি প্রদানের বিনিময়ে মিষ্টি খেতে দশ লাখ টাকার প্রস্তাব দেন।’
উপাচার্য বলেন, ‘আমার ধারণা, এটা কোনো সংঘবদ্ধ চক্রের কাজ। আমাকে ফাঁদে ফেলার জন্য তারা এটা করতে পারে। তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পূর্বাপর যে তৎপরতা চালিয়েছে, এ ফোনকল তারই অংশ হতে পারে।
‘এরা আমার মানক্ষুণ্ণ করার জন্য এ কাজ করে থাকতে পারে। আমি রেজিস্ট্রারকে তাৎক্ষণিক থানায় জিডি করতে বলেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আবারও বলছি, আমি কোনো ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই। আমার সময়ে সকল নিয়োগ স্বচ্ছতার সঙ্গে দিয়েছি, যে যোগ্য তাকে নিয়োগ দিয়েছি।’
আরও পড়ুন:১৯৭১-এর ২৫ মার্চ ভয়াল কালরাত্রিতে নিহত শহিদদের স্মরণে ও গণহত্যা দিবস উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) প্রদীপ প্রজ্বালন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার চত্বরে চারুকলা অনুষদের শিল্পী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিশালাকৃতির স্ক্রল পেইন্টিং করা হয়।
‘২৫ মার্চ কালরাত্রি ও গণহত্যা দিবস’ স্মরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহিদ রফিক ভবন ও শহীদ মিনার চত্বরে সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয় এবং একটি স্ক্রল পেইন্টিং অঙ্কন করা হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এক মিনিটের জন্য অন্ধকারাচ্ছন্ন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবীর চৌধুরীর নেতৃত্বে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে এ মোমবাতি প্রজ্বালন করেন।
চারুকলা অনুষদের ডিন ও ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলপ্তগীনের নেতৃত্বে অনুষদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ১৪ফুট/৬ফুট বিশাল আকৃতির ক্যানভাসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিশালাকৃতির স্ক্রল পেইন্টিং করা হয়।
এ আয়োজন নিয়ে ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন, ‘গণহত্যার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি আমরা সবাই চাই এবং দাবিও করি। এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে আমাদের দাবিটি আরও জোড়ালো হবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি নিশ্চিত হবে। আমরাও চাইব শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, সারা বিশ্ব ২৫ মার্চের এ কালোরাত্রির গণহত্যাকে স্বীকৃতি দিবে এবং সেটা দিলে আমাদের জন্য বিষয়টি ঐতিহাসিকভাবে আরও তাৎপর্যপূর্ণ হবে।’
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আলপ্তগীন বলেন, ‘২৫ মার্চকে স্মরণ করার জন্য, তাদের যেন আমরা ভুলে না যাই, তাদের যে আত্মত্যাগ, নিরস্ত্র জনগণকে যেভাবে হানাদার বাহিনী গণহত্যা করেছিল, এটা যেন আমরা স্মরণ করি এবং সমস্ত বিশ্বকে জানিয়ে দিতে চাই, এরকম একটা গণহত্যা আমাদের ওপর হয়েছিল। আমরা আন্তর্জাতিকভাবে এর স্বীকৃতি চাই। এ জন্যই আমাদের এই আয়োজন, আশা করি প্রতি বছরই এই আয়োজন সমুন্নত রাখব।’
মোমবাতি প্রজ্বলনের পর প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘২৫শে মার্চ রাতে পুরান ঢাকাসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চালানো হয়। বাঙালির ওপর অন্যায় অত্যাচার করা হয়। গণহত্যায় শহিদদের প্রতি আমরা বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই৷’
চারুকলা অনুষদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবীর চৌধুরী বলেন, ‘২৫ মার্চের এ গণহত্যাই এ দেশকে স্বাধীন করার জন্য মানুষের ভেতরের স্পৃহাকে জাগিয়ে তুলেছিল। আর বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছিল দেশকে স্বাধীন করতে হলে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আর এ ভয়েই পাক হানাদার বাহিনীরা ২৫ মার্চ নিরীহ বাঙালিদের নির্মমভাবে হত্যা করে।’
তিনি বলেন, ‘একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানিরা এ দেশের সাধারণ মানুষদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। সেদিনের এ গণহত্যার পরেই সাধারণ মানুষরা আরও স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছে যুদ্ধ ছাড়া এ দেশের মানুষের মুক্তি নেই। এ দিনটিকে আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।’
আরও পড়ুন:১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের গণহত্যার নীরব সাক্ষী হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে আছে দেশের একমাত্র গুচ্ছ ভাস্কর্য ‘৭১ এর গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি’। ওইদিন রাতে ঢাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের স্মৃতি বিজড়িত এই ভাষ্কর্যটি এখনও পূর্ণাঙ্গ করা হয়নি।
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। এ যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগী আলবদর-রাজাকার লাখ লাখ বাঙালিকে হত্যা করে। এ গণহত্যার স্মারক হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নির্মাণ করা হয় এই ভাস্কর্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে একটু ভেতরে ঢুকলেই দেখা যায়, মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ভাস্কর্যটি। এটি তৈরি করেছেন খ্যাতনামা শিল্পী ভাস্কর রাসা। সম্প্রতি নতুন রং করে ভাস্কর্যটির সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সাধারণ মানুষদের ধরে এনে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) ভেতরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী। হত্যার পর লাশগুলোকে গণকবর দেয়া হয়। সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের স্মারক হিসেবে গণকবরের ওপর এ ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্মাতা ভাস্কর রাশা।
এ ভাস্কর্যে মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যা ও যুদ্ধের প্রস্তুতির দুটি চিত্র উপস্থাপন করেছেন রাশা। ১৯৮৮ সালে শুরু হওয়া এ ভাস্কর্যের নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৯৯১ সালে। ২০০৮ সালের ৩১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ততকালীন উপাচার্য প্রয়াত অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম খান এটি উদ্বোধন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে একটু এগিয়ে গেলে নতুন ভবনের সামনে স্থাপিত এ ভাস্কর্যটি চোখে পড়ে। এর একটি অংশে সবচেয়ে বেদনাদায়ক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ২৫ মার্চের কালরাতকে।
ভাস্কর্যের প্রধান নির্মাতা ভাস্কর রাশার সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ১৯৮৮ সালে এ ভাস্কর্যের কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ১৯৯১ সালে। ২০০৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করা হয়। ৩ বছরে কাজ শেষ হলেও এর উদ্বোধন হতে সময় নেয় ২০ বছর।
ভাস্কর্যটি দুটি অংশে বিভক্ত। এর এক অংশে রয়েছে সর্বস্তরের মানুষের অংশ নেয়া মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি আর অপর অংশে রয়েছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম গণহত্যার চিত্র।
ভাস্কর্যটি মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকলেও এখনও পূর্ণাঙ্গ নয়। ভাস্কর রাসা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে পাঁচটি ভাগে প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন। এগুলো হলো একাত্তরের গণহত্যা, মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি, ঘাতক, মুক্তিযদ্ধাদের আক্রমণ ও বিজয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্যে পাঁচটি থিমের দুটি তুলে ধরা হয়েছে। এখনও তিনটি বাকি। এগুলো হচ্ছে ঘাতক, মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ ও বিজয়। শিক্ষার্থীদের আশা, প্রশাসনের সহায়তায় অতি দ্রুত এর নির্মাণ শেষ হবে।
ভাস্কর্যের তাৎপর্য নিয়ে ভাস্কর রাশা নিউজবাংলাকে বলেন, এর মাধ্যমে গণমানুষের মুক্তিযুদ্ধ এবং তৎকালীন প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। ভাস্কর্যে সবচেয়ে বেদনাদায়ক জায়গা হিসেবে ২৫ মার্চের কালো রাতকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ অংশে দেখানো হয়েছে, এই রাতে ইয়াহিয়া খান মাতাল অবস্থায় আছেন, পাকিস্তানি হানাদাররা হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, অন্তঃসত্ত্বা নারীকে অত্যাচার করে হত্যা করা হচ্ছে, মরদেহ ফেলে রাখা হচ্ছে যেখানে সেখানে।
ভাস্কর্যের অংশ হিসেবে রয়েছে একটি পাতাশূন্য বৃক্ষ। তার ওপর একটি শকুন বসে আছে। এ হচ্ছে শ্মশান হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের প্রতীক। অপর অংশে রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির চিত্র। বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা অনুযায়ী বাংলার কামার, কুমার, জেলে, কৃষিজীবী মানুষ যার যা কিছু ছিল দা, বঁটি, খুন্তি, বর্শা নিয়ে যুদ্ধের অংশ নিতে মুখিয়ে আছে মুক্তিকামী মানুষ। এখানে সে সময়ের বাংলাদেশকে তুলে ধরা হয়েছে।
পরের অংশে দেখা যায়, সবাই আধুনিক অস্ত্র নিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। নামার পর যখন যোদ্ধারা বুঝতে পারেন- পুরনো পদ্ধতি দিয়ে তাদের সাথে পেরে ওঠা সম্ভব নয়, তখন সবাই প্রশিক্ষণ নেয়া শুরু করেন। যেখানে রয়েছেন সব বয়সী নারী-পুরুষ। পরিপূর্ণ যুদ্ধের জন্য গেরিলা কৌশল, মাঝারি আকারের অস্ত্রের ব্যবহার শিখছেন তারা।
ভাস্কর্যের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন প্রশিক্ষণ নেয়া সাহসী এক কৃষকের ছেলে। তার চোখে যুদ্ধজয়ের নেশা। মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিতে সবার চোখে প্রতিশোধস্পৃহার ছাপ রয়েছে। এছাড়া, সবার মাথা সোজা, মুখ লাল বর্ণের। সবার চোখে প্রতিশোধ স্পৃহার ছাপ। আবার অন্যদিকে গণহত্যার দৃশ্যের রঙ ধূসর, কারণ এটি আমাদের বেদনাদায়ক স্মৃতি।
ভাস্কর্যের নিচে রয়েছে পানি, যা দিয়ে নদীমাতৃক বাংলাদেশকে বোঝানো হয়েছে। আর পানির ভেতরে রয়েছে বাংলা বর্ণমালা, যা দিয়ে ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে তুলে ধরা হয়েছে। এতে বোঝানো হয়েছে, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সফলতায় বাংলার মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার ভাবনা আসে। বাংলার মাটি, মানুষ আর ভাষা একাকার হয়ে আছে এ ভাস্কর্যে।
বর্তমানে ভাস্কর্যটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শোভাবর্ধনের অদ্বিতীয় শিল্পকর্ম। এর চারদিকে আছে পানির ফোয়ারা। ফোয়ারাগুলো ছাড়লে নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা হয়। রাতে রঙিন বাতির আলোয় এটি যেন আরো মনোমুগ্ধকর হয়ে ওঠে। তবে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষা এবং নতুন প্রজন্মের সামনে ইতিহাসের নির্মম অধ্যায় তুলে ধরার এ ভাস্কর্যটি মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকলেও তা অসম্পূর্ণ। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা।
ক্ষোভ প্রকাশ করে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী লিমন ইসলাম লিটন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাস্কর্যটির প্রধান আকর্ষণ হলো পানির ফোয়ার এবং সেটি বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ রাখা হয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে শুধুমাত্র ভাস্কর্যটির সংস্কার করা হয়। তা ছাড়া সারা বছর অযত্নেই পরে থাকে। এছাড়া এটি দ্রুত পূর্ণাঙ্গ করা উচিৎ।’
মন্তব্য