নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীরের সদস্য সন্দেহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে ছাত্রলীগ।
এরা হলেন কবি জসীমউদদীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আবু আল জিন্নাত এবং সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সাবুল ইসলাম। আটক দুজনই ইংরেজি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী।
রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলন চত্বর থেকে তাদের আটক করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
বর্তমানে তারা শাহবাগ থানায় আছেন বলে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রইস উদ্দীন ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলন চত্বর থেকে তাদের হিজবুত তাহরীরের সদস্য সন্দেহে ধরে মধুর ক্যানটিনে নিয়ে আসেন। এ সময় ছাত্রলীগ নেতারা তাদের মোবাইল দিতে বললে একজন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ধাওয়া দিয়ে ধরা হয়। পরে থানায় খবর দেয়া হলে পুলিশ এসে মধুর ক্যানটিন থেকে তাদের শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক সহসভাপতি বলেন, ‘আমি এবং আরও কয়েকজন মিলন চত্বরে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। পাশেই এই দুজন বসে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে তারা দেশে খেলাফত প্রতিষ্ঠার কথা বলছিলেন। তারা বলছিলেন, খেলাফত প্রতিষ্ঠা করলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
এই সহসভাপতি বলেন, ‘আমরা যেহেতু রাজনীতি করি সেহেতু জানি হিজবুত তাহরীরই খেলাফত প্রতিষ্ঠার কথা বলে ৷ পরে তাদের ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা হিজবুত তাহরীরের সদস্য বলে স্বীকার করেন।’
শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রইস উদ্দীন বলেন, ‘ঢাবি ক্যাম্পাস থেকে তাদের ধরে আমাদের খবর দেয়া হলে আমরা তাদের থানায় নিয়ে আসি। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আব্দুর রহীম বলেন, ‘বিষয়টি আমি অবহিত আছি৷ সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে বলেছি যেন অযথাই কোনো শিক্ষার্থী ভিকটিম না হয়।’
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের(ইউজিসি) সদস্য ও চবি ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব শতরূপা তালুকদারের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে মঙ্গলবার এ তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে উপাচার্যের নির্ধারিত কোনো মেয়াদ উল্লেখ করা হয়নি। তাকে সাময়িকভাবে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর এর অনুমোদনক্রমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ এর ১২ (২) ধারা এক ধারা অনুসারে অধ্যাপক ড. আবু তাহেরকে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর পদে সাময়িকভাবে নিয়োগ দেয়া হলো।
নানা কর্মকাণ্ড ও শিক্ষকদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ব্যাপক আলোচিত ছিল বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। নিয়োগ ইস্যুকে কেন্দ্র করে গেল বছরের ডিসেম্বর থেকে চবি উপাচার্য শিরীণ আখতার ও উপ-উপাচার্য(শিক্ষা) অধ্যাপক বেনু কুমার দের পদত্যাগ দাবিতে টানা আন্দোলনে নামে চবি শিক্ষক সমিতি।
নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবু তাহেরের জন্মস্থান চট্টগ্রামের সাতকানিয়া। সেখানকার কাঞ্চনা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পর চট্টগ্রাম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন তিনি। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, দক্ষিণ কোরিয়ার ইনহা, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা সম্পন্ন করেন তিনি।
কর্মজীবনের শুরুতে ১৯৮৫ সালে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি কমার্স কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন আবু তাহের। ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৪ সালে তিনি ওই বিভাগের অধ্যাপক হন।
অধ্যাপক আবু তাহের বিভাগের সভাপতি ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ডেপুটেশনে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে লিয়েনে ট্রেজারার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এ ছাড়াও তিনি জীবন বীমা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেন। পরে পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০২০ সালে অধ্যাপক আবু তাহেরকে সরকার ৪ বছরের জন্য ইউজিসির পূর্ণকালীন সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয়।
আরও পড়ুন:সাত দফা দাবি না মানায় আবারও সেমিস্টার পরীক্ষা ব্যতীত সাত কর্মদিবসের জন্য সকল শ্রেণি কার্যক্রম বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
সোমবার জরুরি সাধারণ সভা শেষে সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের একটি সাংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন।
অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘আমাদের আগের যে দাবিগুলো ছিল, সেগুলো উপাচার্য মানেননি। তাই আমরা আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামীকাল (১৯ মার্চ) থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত ক্লাস বর্জন করছি।’
এই ক্লাস বর্জন প্রক্রিয়ায় মিডটার্ম, অ্যাসাইনমেন্ট- এগুলো অন্তর্ভুক্ত কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চূড়ান্ত পরীক্ষা (সেমিস্টার) হবে, তবে বাকি মিডটার্ম বা প্রেজেন্টেশন অ্যাসাইনমেন্ট- সকল বিষয়ই এর অন্তর্ভুক্ত।’
এদিন দুপুরের পর শিক্ষক লাউঞ্জে জরুরি সাধারণ সভা ডাকে শিক্ষক সমিতি। সভা শেষে সমিতির আগে নেয়া সিদ্ধান্ত এবং দাবি-দাওয়ার বিষয় কথা বলতে উপাচার্য দপ্তরে যান তারা। উপাচার্যের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলার পর তার দপ্তর থেকে ক্ষুব্ধ অবস্থায় বেরিয়ে আসতে দেখা যায় সমিতির নেতাদের। সেখান থেকে আসার পর বিকেলে সংবাদ সম্মেলনের আহ্বান করে সমিতি।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ড. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সংকট দেখছেন না বলছেন৷ উনি বলছেন, এই সংকট শিক্ষক সমিতির, উনার নয়। আমাদের আগের যে সিদ্ধান্ত এবং দাবিসমূহ নিয়ে একটি চিঠি তাকে দিয়েছিলাম, সেটি তিনি পড়েও দেখেননি। আমরা চাই বাংলাদেশ সরকার এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সংকটে হস্তক্ষেপ করুক। এই প্রশাসন থেকে আমরা আর এই সংকটের সমাধান পাবো বলে আশ্বাস রাখতে পারছি না।’
এ ব্যাপারে কুবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ‘আমি উনাদের বলেছি যে, বিষয়গুলো নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে কথা বলতে, কিন্তু উনারা আমার রুমে এসে নিজেরা নিজেরা গোলযোগ করেন। কথা বলার কোনো পরিবেশ রাখেন না তারা।
‘তাদের বলেছি, আপনাদের আইনসিদ্ধ যেকোনো দাবি অবশ্যই কার্যকর করব। শুধু শুধু শিক্ষার্থীদের জিম্মি করবেন না।’
এর আগে, গত ১২ মার্চ জরুরি ভিত্তিতে ডাকা এক সাধারণ সভায় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি ও তিন সিদ্ধান্ত পেশ করা হয়।
শিক্ষক সমিতির সাত দফা দাবিগুলো হলো-
১. গত ১৯ ফেব্রুয়ারি উপাচার্য কার্যালয়ে উপাচার্যের উপস্থিতিতে কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মকর্তা, বহিরাগত সন্ত্রাসী ও কিছু অছাত্র কর্তৃক শিক্ষকদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলায় নেতৃত্ব দানকারী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কারপূর্বক সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তার ও জড়িত সবার সর্বোচ্চ শান্তি নিশ্চিত করা এবং হামলায় মদদদানকারী প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীর অপসারণ।
২. শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য ঢাকাস্থ গেস্ট হাউজ অবমুক্ত করা।
৩. অধ্যাপক গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ পদে পদোন্নতির জন্য আবেদনকৃত শিক্ষকদের অবিলম্বে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা।
৪. কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মোতাবেক বিভিন্ন বিভাগে বিভাগীয় প্রধান ও অনুষদসমূহের ডিন নিয়োগ এবং ইতোমধ্যে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে যেসব বিভাগে বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তাদের প্রত্যাহার করা।
৫. শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি ও স্থায়ীকরণের ক্ষেত্রে আইনবহির্ভূত ও অবৈধ শর্ত আরোপ করে জ্যেষ্ঠতা ক্ষুণ্ণ করার মাধ্যমে যে সীমাহীন বৈষম্য তৈরি করা হয়েছে, দ্রুততম সময়ে সেসবের নিষ্পত্তিকরণ।
৬. ৯০তম সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত বিতর্কিত শিক্ষাছুটি নীতিমালা রহিত করে আগের নীতিমালা বহাল রাখা।
৭. ৮৬তম সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদিত স্থায়ীকরণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বাতিল করা।
আরও পড়ুন:সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ-২০২৩ এর তৃতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২৯ মার্চ, শুক্রবার। এই ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের আবেদনকারীদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
আবেদনকারী প্রার্থীদের নিজ নিজ জেলায় ২৯ মার্চ সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত জানান, প্রার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উল্লিখিত মোবাইল নম্বরে যথাসময়ে ০১৫৫২-১৪৬০৫৬ নম্বর থেকে প্রবেশপত্র ডাউনলোডের এসএমএস পাঠানো হবে।
তৃতীয় ধাপের এই পরীক্ষার জন্য প্রার্থীরা ২৩ মার্চ থেকে এসএসসির রোল, বোর্ড ও পাসের সন দিয়ে লগইন করে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করে রঙিন প্রিন্ট কপি সংগ্রহ করতে পারবেন।
এছাড়া পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রার্থীদেরকে অবশ্যই ডাউনলোডকৃত প্রবেশপত্রের রঙিন প্রিন্ট এবং নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র (মূল এনআইডি/স্মার্ট কার্ড) সঙ্গে আনতে হবে। পরীক্ষা সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য প্রবেশপত্রে পাওয়া যাবে।
পরীক্ষা কেন্দ্রে কোনো বই, উত্তরপত্র, নোট বা অন্য কোনো কাগজপত্র, ক্যালকুলেটর, মোবাইল ফোন, ভ্যানিটি ব্যাগ, পার্স, হাতঘড়ি বা ঘড়িজাতীয় বস্তু, ইলেক্ট্রনিক হাতঘড়ি বা যে কোনো ধরনের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, কমিউনিকেটিভ ডিভাইস, জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্ট কার্ড) ব্যতীত কোনো ধরনের ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড অথবা অন্য কোনো কার্ড বা এ জাতীয় বস্তু সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করা বা সঙ্গে রাখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
কোনো পরীক্ষার্থী উল্লিখিত দ্রব্যাদি সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করলে তাকে তাৎক্ষণিক বহিষ্কারসহ সংশ্লিষ্টের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান ও উপাত্ত বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর কবীরকে সাময়িকভাবে প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হাসান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আ. স. ম. ফিরোজ-উল-হাসানের লিখিত অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তার পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করে তাকে প্রক্টরের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান ও উপাত্ত বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর কবীরকে চলতি বছরের ১৮ মার্চ অপরাহ্ন থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ করা হলো। তিনি প্রচলিত নিয়মে সুবিধাদি ভোগ করবেন।’
নতুন দায়িত্ব পালনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন ড. মোহাম্মদ আলমগীর কবীর। তিনি বলেন, ‘আমি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে সবাইকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি উত্তরণে আমি আমার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করব।’
প্রসঙ্গত, ১১ মার্চ থেকে ৫ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য নতুন প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’। ১৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্ট সাব্বির আলমকে ১৭ মার্চের মধ্যে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেয়া হয়। পরে উপাচার্য ১৮ মার্চ অব্যাহতি দেয়ার আশ্বাস দিলে নতুন প্রশাসনিক ভবনের অনির্দিষ্টকালের অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আ. স. ম. ফিরোজ-উল-হাসান তার দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় প্ররোচনায় অভিযুক্ত শিক্ষক ও সাবেক সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ চেয়েছে তদন্ত কমিটি।
সুষ্ঠু তদন্তের জন্য এ ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে ওই শিক্ষকের সম্পৃক্ততার তথ্য চাওয়া হয়েছে।
সোমবার তদন্ত কমিটির দ্বিতীয় সভা শেষে কমিটির আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেন নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কমিটির সদস্য সচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার রঞ্জন কুমার দাস স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতেও এ তথ্য জানানো হয়।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দ্বীন ইসলামের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি নিয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন পেশ করার জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে প্রকৃত ঘটনা বিষয়ে তথ্য ও উপযুক্ত প্রমাণাদি প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, কারও কাছে কোনো তথ্য ও উপযুক্ত প্রমাণ থাকলে তা আগামী ২০ মার্চের মধ্যে গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেনের কাছে জমা দিয়ে তদন্তে সহযোগিতা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
এর আগে রোববার দুপুর ১২টা থেকে শুরু হয়ে দেড়টা পর্যন্ত দেড় ঘন্টাব্যাপী কমিটির আহ্বায়কের কক্ষে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়।
তদন্ত কমিটির সদস্য ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, প্রথম সভায় ঘটনা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে এবং নিজেরা বিশ্লেষণ করেছে। সেগুলো নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করা হয়েছে। আরও তিন-চারটা সভার পর তদন্ত কোন দিক দিয়ে আগাবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবো।
গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরীর বাসা থেকে ফ্যানের সঙ্গে অবন্তিকার গলায় ফাঁস দেয়া মরদেহ উদ্ধার হয়। মৃত্যুর ১০ মিনিট আগে নিজের ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তিনি এ ঘটনার জন্য আম্মান সিদ্দিকী নামে তার এক সহপাঠীকে দায়ী করেছেন। একই সঙ্গে সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকেও এ ঘটনার জন্য দায়ী করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক অভিযুক্ত দুজনকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার ও অব্যাহতি দেয়া হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মাসুম বিল্লাহ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন, সঙ্গীত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ঝুমুর আহমেদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার রঞ্জন কুমার দাস।
অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় সুবিচারের দাবিতে শোক র্যালি ও মানববন্ধন করেছেন তার বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে অবন্তিকার মৃত্যুর পেছনে প্রকৃত অপরাধীদের সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলায় তার সহপাঠী ও শিক্ষক গ্রেপ্তার হয়ে এরই মধ্যে রিমান্ডে আছেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় সুবিচারের দাবিতে শোক র্যালি ও মানববন্ধন করছেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে অবন্তিকার মৃত্যুর পেছনের প্রকৃত অপরাধীদের সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে আইন বিভাগের ব্যানারে একটি শোক র্যালী পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। এতে আইন বিভাগের শিক্ষকসহ অনুষদের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা আইন বিভাগের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। তার মতো একজন ফাইটারের এভাবে চলে যাওয়া আমরা কেউই মেনে নিতে পারছি না। এর পেছনে যারা রয়েছে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবিও জানিয়েছেন তারা।
এ সময় আইন বিভাগের শিক্ষার্থী এনামুল হক বিজয় বলেন, আজকে মানববন্ধনে এই বার্তাই থাকবে যেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনকি কোথাও-ই যেন এমন যৌন হয়রানিমূলক ঘটনা না ঘটে এবং আমরা এই ঘটনার সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সুষ্ঠু বিচার চাই। শুধু গ্রেপ্তার নয় যতদিন পর্যন্ত সুষ্ঠু বিচার না হয় ততদিন পর্যন্ত আমাদের এ মানববন্ধন চলবে।
আরেক শিক্ষার্থী ফারিয়া তাহসিন বলেন, অভিযুক্তরা দোষী হয়ে থাকলে তারা যেন সর্বোচ্চ শাস্তিটা পায়, এটাই আমাদের দাবি। গ্রেপ্তার হয়েছে এটাই সবকিছু নয়। তদন্ত কমিটি হয়েছে তারা যেনো সঠিকভাবে তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করে, মূল ঘটনা উত্থাপন করে আর এর পেছনে আরও কারা জড়িত তাদের বের করে শাস্তির আওতায় আনে এটাই আমাদের চাওয়া।
বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন বলেন, অবন্তিকা আপু সাতবার প্রশাসনের কাছে গেছেন।তবুও বিচার পাননি। এখানে অবশ্যই প্রশাসনের গাফিলতি রয়েছে। আমরা তাদেরও বিচার চাই।
ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ল বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী জান্নাত সরকার নিতু বলেন, সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত এ মানববন্ধন চলবে। এর আগেও আমরা অনেককে হারিয়েছি। পরবর্তীতে যেন এমন কোনো ঘটনা না ঘটে সেজন্য এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা উচিৎ।
আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আলী আক্কাস বলেন, অবন্তিকার মৃত্যুর পেছনে কারা জড়িত তা যথাযথ তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আমরা বিভাগের পক্ষ থেকে শোক র্যালি করেছি। দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের বের করে এটাই আমাদের আজকের মানববন্ধনের মূল দাবি।
এর আগে রোববার রাতে অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি করে মশাল মিছিল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় ছয় দফা দাবি আদায়ে নতুন করে সাত দিনের আল্টিমেটাম দেনআন্দোলনকারীরা। একই সময়ে বামপন্থীরা গলায় রশি বেঁধে ও মুখে টেপ মেরে প্রতীকী আন্দোলন করে অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরীর বাসা থেকে গলায় রশি বাঁধা ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার হয় অবন্তিকার। মৃত্যুর ১০ মিনিট আগে নিজের ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তিনি এ ঘটনার জন্য আম্মান সিদ্দিকী নামে তার এক সহপাঠীকে দায়ী করেছেন। একই সঙ্গে সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকেও এ ঘটনার জন্য দায়ী করেন।
এরপর থেকেই অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠে পুরো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে আত্মহত্যার প্ররোচনায় অভিযুক্ত ওই দুজনকে।
আরও পড়ুন:শিক্ষক ও সহপাঠীকে দায়ী করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও ওই শিক্ষার্থীকে সহায়তাকারী শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্তের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কমিটির আহ্বায়কের কক্ষে রোববার দুপুর ১২টা থেকে দেড় ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সভা শেষে কমিটির আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা তদন্তের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছি। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সংগ্রহ করছি। শুরু থেকেই এই ঘটনায় যারা যারা সংশ্লিষ্ট বলে অভিযোগ উঠেছে তাদের সবাইকে আমরা ধারাবাহিকভাবে ডাকার চেষ্টা করব।’
তদন্ত কমিটির দ্বিতীয় সভা সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেন।
তদন্ত কমিটির সদস্য ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘প্রথম সভায় ঘটনা-সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে এবং নিজেরা বিশ্লেষণ করেছি। সেগুলো নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করা হয়েছে। আরও তিন/চারটি সভার পর তদন্ত কোন দিক দিয়ে এগিয়ে নেয়া হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারব।
পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন- আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মাসুম বিল্লাহ, সঙ্গীত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ঝুমুর আহমেদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার রঞ্জন কুমার দাস।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও ‘পিসি পার্ক স্মরণিকা’ নামের ১০ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলার বাসায় অবন্তিকা ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন।
আত্মহত্যার ১০ মিনিট আগে নিজের ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তিনি এ ঘটনার জন্য আম্মান সিদ্দিকী নামে তার এক সহপাঠীকে দায়ী করেন। একইসঙ্গে সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকেও এ ঘটনার জন্য দায়ী করেন তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য