রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর ১১১ অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগসহ ৭৫৮ পৃষ্ঠার ‘শ্বেতপত্র’ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ।
‘অধিকার সুরক্ষা পরিষদ’ নামের সংগঠনের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় শনিবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করে এই শ্বেতপত্র প্রকাশ করেন সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান।
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমরা লজ্জিত। আমরা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার শ্বেতপত্র প্রকাশ করছি। এতে ১১১টি দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে।’
ড. মতিউর জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ উপাচার্য হিসেবে কলিমউল্লাহ ২০১৭ সালের ১৪ জুন যোগ দেন। এরপর থেকেই ব্যাপক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, জালিয়াতিসহ নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা চালাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ১৮ জন ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে রেখে সময়ের আগেই তড়িঘড়ি করে দুর্নীতির অন্যতম সহযোগী ও জাতীয় পতাকার অবমাননার এজাহারভুক্ত আসামি আমিনুর রহমানকে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে তিনি (কলিমউল্লাহ) পদোন্নতি দিয়েছেন। কারণ, তিনি উপাচার্যের একান্ত সচিব।’
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ ও দক্ষ অধ্যাপক থাকার পরেও ড. নাজমুল হককে একই সঙ্গে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, জনসংযোগ প্রশাসক, বহিরাঙ্গন কার্যক্রম পরিচালক এবং ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স সেল-এর পরিচালকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
ড. মতিউর দাবি করেন, ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স সেলে আগের উপাচার্যের সই জাল করে আগের তারিখে নিয়োগ দেখিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন উপাচার্য কলিমুল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালের উপ-উপাচার্য ড. আবুল কাশেম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং জানিপপের সদস্য ড. সাবের হোসেন চৌধুরী, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ড. শুচিতা শরমিন এবং উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ তানভীর আবির প্রশিক্ষণ ও মিটিংয়ের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
‘সদ্য নিযুক্ত ট্রেজারার প্রফেসর ড. হাসিবুর রশিদকে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন এবং ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান করা হয়েছে। অথচ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৯ এর ধারা ১৩ অনুযায়ী ট্রেজারার বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈতনিক আর্থিক কর্মকর্তা মাত্র। তিনি অ্যাকাডেমিক পদ গ্রহণ করতে পারেন না।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ এবং উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে আছেন উপাচার্য কলিমউল্লাহ ও তার মা। দুইজন মিলেই শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান উপাচার্য নিজেই, ওই অনুষদের ডিন পদেও রয়েছেন উপাচার্য। উপাচার্য হিসেবে তিনি নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি আবার অনুষদের ডিন হিসেবে তিনি নিয়োগ বোর্ডের সদস্য, বিভাগীয় প্রধান হিসেবে তিনিই সদস্য। অপরদিকে তার মা বিষয় বিশেষজ্ঞ সদস্য।’
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ৩৮তম প্লানিং কমিটির সভায় প্রভাষক পদে ২০১৯ সালের ৩ অক্টোবর প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির অনুকূলে প্রার্থিতা বাছাই করা হয়। বাছাই রেজল্যুশনে ড. কলিমউল্লাহ ডিন হিসেবে একটি এবং বিভাগীয় প্রধান হিসেবে আরেকটি স্বাক্ষর করেন।
২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর এর বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ওই বিভাগে প্রভাষক (অস্থায়ী) নিয়োগের জন্যও প্ল্যানিং কমিটির রেজল্যুশন ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ একইভাবে তিনটি সইয়ের মধ্যে একাই দুটি স্বাক্ষর করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম মজুমদারকে (বিইউপির বর্তমান উপ-উপাচার্য) অন্তত ১০টি নিয়োগ বোডের্র সদস্য করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিষয় সংশ্লিষ্টতা দেখা হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড. শুচিতা শারমিনকে করা হয়েছে চারটি বিভাগের নিয়োগ বোর্ডের সদস্য।
উপাচার্যের একান্ত সচিব (পিএস) আমিনুর রহমানের ভায়রা ভাই একেএম মাহমুদুল হককে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগও তোলা হয় সংবাদ সম্মেলনে। এতে বলা হয়, ‘নিয়োগের এক বছর পার হতে না হতেই তাকে (মাহমুদুল হক) সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পুনর্নিয়োগ দেয়া হয়েছে। দুইজন সহকারী অধ্যাপক নিয়োগের বিপরীতে দুইজনের লিখিত পরীক্ষা নিয়ে একজনকে প্রথম এবং আরেকজনকে দ্বিতীয় করা হয় এবং আমিনুর রহমানের ভায়রা ভাইসহ দুজনকে নিয়োগ দেয়া হয়।’
এ ছাড়া, মার্কেটিং বিভাগে সহকারী অধ্যাপক নিয়োগ বোর্ডে একজন প্রার্থীর উপস্থিতিতে একজনকেই নিয়োগ দেয়া হয়। অর্থনীতি বিভাগে নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে পছন্দের শিক্ষককে পদোন্নতি দিতে উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ নিজেই প্ল্যানিং কমিটির সদস্য হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সিন্ডিকেট সভায় সেকশন অফিসার (গ্রেড-১), রিসার্চ অফিসারসহ বিজ্ঞাপ্তিতে সব কটি পদে অনুষ্ঠিত নিয়োগ বোর্ড বাতিল করলেও অতিগোপনে পরে রিসার্চ অফিসার পদে একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
শারীরিক শিক্ষা বিভাগের ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর পদে বিজ্ঞপ্তির শর্তে প্রার্থীর বয়স ৩০ বছর রাখা হলেও ৩৮ বছর বয়সী সোহেল রানাকে নিয়োগ দেয়া হয়।
শ্বেতপত্রে আরও অভিযোগ করা হয়, উপাচার্য দপ্তরে সেকশন অফিসার (গ্রেড-২) হিসেবে সুমাইয়া খানমকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বিজ্ঞপ্তির তিনটি শর্ত লঙ্ঘন করে। বিজ্ঞপ্তির চারটি শর্ত ভঙ্গ করে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স সেলের অ্যাকাউন্টস অফিসার পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ এক শিক্ষকের ছোট ভাই নুরুজ্জামানকে।
ড. মতিউর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘উপাচার্যের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়ার জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত একেক সময় একেক রকমের করা হয়ে থাকে। পঞ্চম গ্রেডভুক্ত উপ-পরিচালক (অর্থ ও হিসাব), উপ-রেজিস্ট্রার এবং উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির শর্তাবলিতে বয়স ৪০ বছর চাওয়া হলেও একই গ্রেডভুক্ত উপ-প্রধান প্রকৌশলী পদে নিয়োগের জন্য বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ৫৮ বছর। এই উপ-প্রধান প্রকৌশলী পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে।
‘জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে এবং একজন শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের আরেকজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ভাইভা বোর্ডে উপাচার্য এবং তার জানিপপের সদস্য শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের শিক্ষক ড. সাবের হোসেন চৌধুরী নিয়োগ বোর্ডের বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে পছন্দের দুইজনকে নিয়োগ দিয়েছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, উপাচার্য তার ব্যক্তিগত সহকারীর (ভর্তি জালিয়াতির অপরাধে সিন্ডিকেটে সাজাপ্রাপ্ত) চার আত্মীয় মোছা. নুর নাহার বেগমকে (স্ত্রী) সেমিনার সহকারী পদে, মামাতো ভাই মো. গোলাপ মিয়া ও বন্ধুর ছোট ভাই হযরত আলীকে এমএলএসএস পদে এবং ফুফাতো ভাই কাওসার হোসেনকে সেমিনার সহকারী পদে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছেন।
এ ছাড়া, উপাচার্য আইন লঙ্ঘন করে পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) পদে নিয়োগ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের একজন অধ্যাপককে। পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক পদেও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকতা মো. মনোয়ারুল ইসলামকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আইন লঙ্ঘন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রারসহ এমন উচ্চতর চারটি পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সরকারি ক্রয়নীতি অনুসরণ না করে অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়েছে। ২০১৮ সালে যে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা, তা এখনও ৩৫ শতাংশ কাজের মধ্যেই রয়েছে। এই প্রকল্পে উপাচার্যসহ কয়েকজন কর্মকর্তার দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে ইউজিসির তদন্ত কমিটি।
দুর্নীতির উদাহরণ দিয়ে শ্বেতপত্রে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবহন পুলের সঙ্গে সংযোগ সড়ক নামে ছোট একটি ইট বিছানো রাস্তা নির্মাণ দেখিয়ে অন্তত ৫০ লাখ টাকার দুর্নীতি হয়েছে। ইউজিসির বরাদ্দ করা ৩৫ লাখ টাকার কাজে ৮৫ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, উপাচার্য ক্যাম্পাসে না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে আপ্যায়ন ব্যয় দেখানো হয়েছে অন্তত ২১ লাখ টাকা। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরেই আপ্যায়ন বাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে প্রায় ছয় লাখ টাকা। ২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর চালের কেজি ধরা হয়েছে ২৯০ টাকা করে। এর আগে বা পরে সব ভাউচারে প্রতি কেজি চালের দাম দেখানো হয়েছে ১১০ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ উপাচার্য হিসেবে যোগ দেয়ার পর থেকে প্রায় তিন বছর পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান ও পরিচালকসহ একাই ১৬টি প্রশাসনিক পদে থেকে নানা ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছেন। আইন লঙ্ঘন করে ছয়টি অনুষদের মধ্যে চারটি অনুষদের ডিন দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সমাজবিজ্ঞান বিভাগে বিভাগীয় প্রধান পদ দখল করে অন্তত ১০ লাখ টাকার কোনো হিসাব দিচ্ছেন না উপাচার্য।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের অধীনে এমফিল এবং পিএইচডি কোর্সের অর্ধশতাধিক গবেষকের সুপারভাইজার উপাচার্য ড. কলিমউল্লাহ নিজেই। তিনি একাই একইসঙ্গে বিভিন্ন বিভাগের ২৬টি কোর্সে পাঠদানের দায়িত্বও নিয়েছিলেন। তিনি এসব কোর্স নেয়ার নামে নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ উপার্জন করেছেন। খাতা মূল্যায়ন করেন তার পিএ আবুল কালাম আজাদ। বিভিন্ন বিভাগের ২৬টি কোর্স নিলেও কোনো কোনো কোর্সে একটি ক্লাস নিয়ে কোর্স শেষ করেছেন।’
শ্বেতপত্রে বলা হয়, ‘উপাচার্য আইন লঙ্ঘন করে ইউজিসির অনুমোদন ছাড়াই ঢাকায় ২০১৭ সাল থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি লিয়াজোঁ অফিস চালু করেন। জরুরি কার্যাদি সম্পন্ন করার নামে স্থাপিত ওই লিয়াজোঁ অফিস এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল অফিসে পরিণত হয়েছে।
‘২০১৭ সালের ১৪ জুন উপাচার্য হিসেবে যোগ দেয়ার পর থেকে চলচি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ১৩৫২ দিনের মধ্যে ১১১৫ দিনই তিনি ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থেকেছেন। অর্থাৎ উপস্থিত ছিলেন মাত্র ২৩৭ দিন।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. গাজি মাজহারুল আনোয়ার, ড. তুহিন ওয়াদুদ, সহযোগী অধ্যাপক তারিকুল ইসলাম, মাহমদুল হাসান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ফিরোজুল ইসলাম প্রমুখ।
আরও পড়ুন:দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম প্রবেশদ্বার রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় ঘাট সংকটে যানবাহনের দীর্ঘ সিরিয়াল তৈরি হয়েছে।
সিরিয়ালে অল্প সংখ্যক যাত্রীবাহী যানবাহন থাকলেও পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যাই বেশি। ফলে ট্রাকচালক ও যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সরজমিনে সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ঘাটে অপেক্ষা করে দেখা যায়, ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া ক্যানাল ঘাট পর্যন্ত দীর্ঘ দুই কিলোমিটার এলাকায় পণ্যবাহী ট্রাকের সারি সৃষ্টি হয়েছে। কয়েক'শ যানবাহন ফেরির জন্য লম্বা সিরিয়ালে আটকে রয়েছে। সিরিয়ালে আটকে থাকা যানবাহন গুলোর মধ্যে সব থেকে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাকগুলোর।
এসব পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মহাসড়কের আটকে থাকতে হচ্ছে। ফলে তাদের গোসল, খাওয়া-দাওয়া, টয়লেটসহ নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সরেজমিন ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,, দৌলতদয়িায় ১, ২, ৫ ও ৬ নং ফেরি ঘাট দীর্ঘদিন ধরে অকেঁজো হয়ে পড়ে আছে। ৩, ৪ ও ৭ নং ফেরি ঘাট জরাজীর্ণ অবস্থায় চলমান ছিল। এরমধ্যেই পদ্মায় তীব্র স্রেতের কারনে গতমাসের ২৩ আগস্ট থেকে ৭ নম্বর ঘাটটি বন্ধ রয়েছে। ৩ ও ৪ নম্বর ঘাট সচল থাকলেও ৩ নম্বর ফেরিঘাটের পন্টুনের প্লেট ভেঙ্গে যাওয়ায় রবিবার রাত ১২টা থেকে ঘাটটি মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। শুধুমাত্র ৩ নম্বর ঘাট চালু থাকায় যানবাহনের সিরিয়াল তৈরি হয়েছে।
ফরিদপুর থেকে ছেড়ে আসা গোল্ডেন লাইনের বাস চালক আঃ জলিল বলেন, দুই ঘন্টা দৌলতদিয়া ঘাটে সিরিয়ালে আটকে আছি। শুনতেছি একটি মাত্র ঘাট চালু রয়েছে। যাত্রীদের ভোগান্তি হচ্ছে।
যশোর থেকে আসা ট্রাকচালক হাবিবুর রহমান বলেন, সকাল ৮ টার দিকে এসে সিরিয়ালে আটকে আছি। গাড়িতে তার রয়েছে। এছাড়া সময়মতো মালামাল পরিবহন করতে না পেরে পরিবহন খরচের পাশাপাশি তাদের খরচও বাড়ছে।
ভোগান্তি লাঘবে যাত্রীবাহী যানবাহন ও পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করছে বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট কর্তৃপক্ষ।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাটের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন জানান, দুটি ঘাটের মধ্যে একটি ঘাট চালু থাকায় যানবাহনের সিরিয়াল তৈরি হয়েছে। একটি ঘাটের মেরামত কাজ চলছে, আশা করি খুব দ্রুতই ঘাটটি সচল হয়ে যাবে। তিনি আরও জানান, ঘাট কম থাকার ফেরি কম চালাতে হচ্ছে। বর্তমান এই নৌ-রুটে ছোট বড় মিলিয়ে ১০ টি ফেরি চলাচল করছে।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে একটিতে চাষ করা হচ্ছে হলুদ,অন্যটিতে শুকানো হচ্ছে পাট,রাতে মাদক সেবীর আড্ডা
বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৬ সালে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দৌড়গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে মেহেরপুর গাংনী উপজেলায় তিনটি ইউনিয়ন ষোলটাকা, কাজিপুর ও ধানখোলা চালু করে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র।
গত সাত মাস যাবৎ কোনো ওষুধ বরাদ্দ না থাকায় সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবায় মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। আর কেরামতি বেড়েছে গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তারদের।
ষোলটাকা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ভিতরে চাষ করা হয়েছে হলুদ। আর এই উপজেলার সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন কাজিপুর। সেই কেন্দ্রটিতে দিনের বেলায় শুকানো হয় পাট। আর সন্ধ্যা লাগলেই পরিণত হয় মাদক সেবীদের আকড়া হিসেবে। আর ধানখোলায় ঝুলছে তালা।
কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তিনটি ইউনিয়নের কয়েক লাখ সাধারণ মানুষ। বর্তমানে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বেহাল দশা।
মেডিকেল অফিসারসহ চারটি পদের মধ্যে রয়েছে মাত্র একজন উপসহকারী কমিউিনিটি মেডিকেল অফিসার।
তা ছাড়া ওষুধ ও জনবল সংকটে নরমাল ডেলিভারি, প্রসূতি সেবা, কিশোর-কিশোরী স্বাস্থ্যসেবা, সাধারণ স্বাস্থ্যসেবাসহ নানা সেবা বন্ধ রয়েছে। ফলে কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তিনটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ।
একেকটি উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন মেডিকেল অফিসার, একজন উপসহকারী কমিউিনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট ও একজন পিয়নের পদ থাকলেও সেখানে নামমাত্র একজন উপসহকারী কমিউিনিটি মেডিকেল অফিসার দিয়ে চলছে এই সব উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র।
এদিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর ভবন ও বাসভবন দুটিই একেবারই ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। ছাদ থেকে ঢালায় খসে খসে পড়ছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যার পর পরিত্যক্ত ভবনে বসছে নিয়মিত মাদকের আড্ডা।
সেবা প্রার্থী ষাট বছর উধ্বো জমেলা খাতুন বলেন,আমার বয়স হয়েছে আর রোগেও পাল্লা দিয়েছে। গরীব মানুষ ঔষধ কিনতে টাকা থাকে না। এই হাপানি রোগ নিয়ে দির্ঘদিন ভুগছি। এই হাসপাতালে এসে ঔষধ নিয়ে খেলে কম থাকে। একটু আরাম পাই। অথচ গত ৫/৬ মাস যাবৎ কোনো ওষুধ নেই। জরুরি চিকিৎসার জন্য গাংনী, মেহেরপুর কিংবা কুষ্টিয়া যেতে হয়। কিছু দিন আগে সহড়াবাড়িয়া গ্রামের এক কৃষক হঠাৎ অসুস্থ হলে গাংনী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যায়।
কাজিপুর গ্রামের বাসিন্দা জুয়াদ আলী বলেন, আমরা সিমান্ত এলাকার মানুষ হওয়াই বড় পাপ করে ফেলেছি। আমরা রাষ্ট্রের নাগরিক সেবার অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত হয়ে আছি। আমাদের ইউনিয়ন পারিবারিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র খাতা কলমে আছে। আর সেবার ক্ষেত্রে শূন্য।
ষোলটাকা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনি বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো নামেই আছে, এখানে ডাক্তার ও নার্স নেই। প্রয়োজনীয় ওষুধ সময় মতো পাওয়া যায় না। বেশির ভাগ সময় স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকে।বতর্মান হাসপাতালের ভিতরে হলুদ চাষ হচ্ছে। আর অন্য সময় মাদকসেবীদের দখলে। তাই জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তার এবং নার্সের প্রয়োজন।
ধানখোলা ইউনিয়নের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান ফিরোজ বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর কোয়ার্টার ভবনগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকায় সেখানে কোনো ডাক্তার থাকতে পারেন না। তাই রাতের আঁধারে চিকিৎসার জন্য রোগীদের শহরে নিয়ে যেতে হয়। এ ছাড়া, নিয়মিত ওষুধ পাওয়া যায় না।এতে গ্রামের মানুষের চিকিৎসাসেবা পেতে ব্যহত হচ্ছে।
ষোলটাকা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপসহকারী মেডিকেল অফিসার মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, জনবল ও ওষুধ সংকট রয়েছে। জনবল ও ওষুধ দিলে কিছুটা হলেও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব হবে। তা ছাড়া চারজনের কাজ একাই করতে হয়।
কাজিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলম হুসাইন বলেন, আমার ইউনিয়ন পরিষদের কাছেই অবস্থিত ইউনিয়ন পরিবার ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র। এটির অধিকাংশ ভবন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। সন্ধ্যায় পর যখন এলাকা ফাকা থাকে তখন মাদকসেবীরা আড্ডায় বসে। অনেক ভবনের জ্বানালা দরজা খুলে বিক্রি করে দিয়েছে মাদক সেবীরা। আমারা সিমান্ত এলাকার মানুষ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে হলে ১৫ কিলো যাওয়া লাগে। তাই এটি দ্রুত চালু করা দরকার।
এদিকে মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. এ.কে.এম. আবু সাঈদ বলেন, দ্রুত ওষুধ সরবরাহ করা হবে এবং শিগগিরই জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। সপ্তাহে দুই কিংবা তিন দিন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র কিছু সময়ের জন্য খোলা থাকলেও বাকি সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করতে হয় ওই সব উপসহকারী কমিউিনিটি মেডিকেল অফিসারদের।
বগুড়ায় মা-ছেলে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার সাদুল্যাপুর বটতলা গ্রামে এ খুনের ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে মা ও ছেলে জোড়া খুনের বিষয়টি এলাকাবাসী টের পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহতরা হলেন-শিবগঞ্জ উপজেলার সাদুল্যাপুর বটতলা গ্রামের কুয়েত প্রবাসী ঈদ্রীস প্রামানিকের স্ত্রী রানী খাতুন (৪০) ও ছেলে ইমরান (১৮)।
জানা যায়, সোমবার (১৫ই সেপ্টেম্বর) রাতে খাওয়া দাওয়া করে রানী খাতুন ও ছেলে ইমরান নিজ নিজ ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে প্রতিবেশিরা ঘরের দরজা খোলা ও ঘরের ভিতর জবাই করা মরদেহ দেখে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য লাশ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়ে দেয়। তবে ইমরানের সাথে একই গ্রামের মৃত খোকার ছেলে হাসান (১৭) বসবাস করতো। ঘটনার পর থেকে হাসান নিখোঁজ রয়েছে। নিহতের মেয়ে ইলা জানান, আমার মা ও ভাইকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।
শিবগঞ্জ ও সোনাতলা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম জানান, ধারনা করা হচ্ছে, রাতের যে কোন সময় কে বা কারা তাদেরকে হত্যা করে পালিয়ে যায়। নিহতদের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। দ্রুত ঘটনার সাথে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ময়মনসিংহের ভালুকা সরকারি কলেজে ভর্তি কার্যক্রম চলাকালে দরিদ্র ও অসহায় শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ভালুকা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি তানভীর হাসান শান্ত। ভর্তি ফি জোগাড় করতে না পারায় যেসব শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল, তাদের সহযোগিতার ঘোষণা দেন তিনি।
জানা যায়, শান্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের মোবাইল নম্বর প্রকাশ করে জানান—অর্থাভাবে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হতে না পারলে সরাসরি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেক শিক্ষার্থী তাঁর সাহায্য পান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী জানান, বাবা দিনমজুর হওয়ায় ভর্তি ফি দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। পরে শান্তর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি নিজে এসে ভর্তি ফি পরিশোধ করেন। আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, ভর্তি না হলে হয়তো পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হতো। শান্ত ভাই শুধু টাকা দেননি, সাহসও দিয়েছেন।
ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক সিয়াম সাব্বির রিশাদ জানান, এবার তানভীর হাসান শান্তর সহযোগিতায় প্রায় বিশজন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পেরেছে। কারও ভর্তি ফি পুরোপুরি বহন করা হয়েছে, আবার অনেকে আংশিক সহায়তা পেয়েছেন।
তানভীর হাসান শান্ত বলেন, আমি বিশ্বাস করি, অর্থের কারণে কোনো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থেমে যাওয়া উচিত নয়। আমি আমার সাধ্যমতো শিক্ষার্থীদের ভর্তির সময় সহযোগীতা করেছি। ভবিষ্যতে যদি কোনো শিক্ষার্থী ফরমপূরন সহ যেকোনো আর্থিক অসুবিধায় পড়ে আমি যথা সাধ্য চেষ্টা করবো। ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ রক্ষার দায়িত্বও নিতে চায়।
অভিভাবকরাও এ উদ্যোগে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। একজন অভিভাবক বলেন, ছেলের ভর্তি নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। শান্তর কারণে সেই দুশ্চিন্তা দূর হয়েছে।
কুমিল্লার মুরানগর উপজেলার পীরকাশিমপুর গ্রামে বাড়ীর পাশ থেকে এক যুবকের মরদেহে উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত ওই যুবকের নাম মোঃ মিনহাজ (৩০)। সে পীর কাশিমপুর উত্তর পাড়ার আনোয়ার হোসেন মাস্টারের ছোট ছেলে।
নিহত মিনহাজের ভাই মঈদ আহমেদ জানান, সোবমার বিকেল ৩টার দিকে দুপুরের খাবার খেয়ে বাড়ী থেকে বের হয়। রাতে এশার নামাজের পরও মিনহাজ বাসায় না ফিরলে পরিবারের সন্দেহ হয়। এরপর খোঁজাখুজি করে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাড়ির কাছেই একটি পরিত্যক্ত মুরগির খামারের পাশে মিনহাজের মরদেহ পাওয়া যায়। এঘটনায় পরিবারের সদস্যরা সন্দেহ করছেন, তাকে কেউ হত্যা করে ফেলে রেখে গিয়ে থাকতে পারে।
এসময় স্থানীয়রা বাংগরা বাজার থানা পুলিশকে খবর দিলে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহফুজুর রহমান রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ওসি মাহফুজুর রহমান জানান, রাতেই লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। তবে, সুরতহালের সময় তার কপালে দুটি ছোট ক্ষত চিহ্ন দেখা গেলেও এটি দেখে তেমন কোনে আঘাতের চিহ্ন বলে মনে হয়নি। ময়না তদন্ত শেষে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে বলে ওসি জানান।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করেছেন।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে তিনি সেখানে উপস্থিত হন।
মন্দির পরিদর্শন শেষে প্রধান উপদেষ্টা সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে এক শুভেচ্ছা বিনিময় সভায় যোগ দিয়েছেন।
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য, ক্লাস ফাঁকিবাজি, শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং, বিভিন্ন সংগঠন তৈরী করে নেতা সেজে ক্লাস কামাই সহ নানান কারণের শিক্ষার পরিবেশ বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। প্রায় সময় দেখা যায়, ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সারাক্ষণ অফিস পাড়ায় তদবির নিয়ে ব্যস্ত থাকেন প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক সংগঠনগুলোর নেতারা। লেখাপড়ার মান খারাপ হওয়ায় দিন দিন স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমতে শুরু করছে। অভিভাবকরা তাদের ছেলে মেয়েদের স্কুল থেকে নিয়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্কুলে ভর্তি করান।
জানা যায়, উপজলার ৯৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলার মধ্যে রয়েছে- প্রধান শিক্ষকদের দুটি আর সহকারী শিক্ষকদের একটি সংগঠন। প্রধান শিক্ষকদের সংগঠনের একটির নেতৃত্ব দেন আলেকজান্ডার মডেল সপ্রাবির সেলিনা আক্তার ও বালুরচর সপ্রাবির প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন। আরেকটির নেতৃত্বে বিবিরহাট সপ্রাবির প্রধান শিক্ষক এবিএম ওসমান ও চরহাসান হোসেন সপ্রাবির সোহেল সামাদ। সহকারী শিক্ষকদের রয়েছে উপজেলা সহকারী শিক্ষক সমিতি। এর নেতৃত্বে রয়েছেন-আলেকজান্ডার (২) সপ্রাবির সহকারী শিক্ষক আবু সায়েদ ও মোমিন উল্লাহ।
স্কুল চলাকালীন সময়ে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবু সায়েদ স্বপনকে প্রায়ই দেখা যায়, মধ্য আলেকজান্ডার (২) সপ্রাবির সহকারী শিক্ষক আবু সায়েদের মোটরসাইকেলের পিছনে বসে ঘুরাঘুরি করতে। আবু সায়েদ শিক্ষক নেতা হওয়াতে কখনো স্কুলে যেতে হয়না। একই স্কুলের আরেক শিক্ষক জাফর স্কুলে যান কালেভদ্রে। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর ধরে এ অঞ্চলের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা।
এছাড়া উপজেলার ১৮ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের রয়েছে উপজলা মাধ্যমিক শিক্ষক কর্মচারী সমিতি নামের একটি সংগঠন। এর সভাপতি হলেন বিবিরহাট রশিদিয়া উচ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তুহিনা আক্তার। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে প্রভাব বিস্তার করে শিক্ষক কর্মচারীদের প্রায় বছর খানিকের বকেয়া বেতন নিয়ে করেন কারসাজি, স্কুলের টাকা রাখেন তার একাউন্টে। বিভিন্ন উনয়ন প্রকল্প দিয়ে করেন আর্থিক লুট। স্কুল ফাঁকি দিয়ে বেশিরভাগ সময় থাকেন ঢাকায়। খামখেয়ালি ভাবে কর্মচারীদের করেন বহিষ্কার। তার স্কুলের সহকারী শিক্ষকদের বেতন নিয়েও নয়ছয় করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তুহিনা আক্তারের এসব অনিয়ম লুটপাটের বিরুদ্ধে তার স্কুলের ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী কারিমুল হক প্রতিকার চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগও করেছেন।
সম্প্রতি উপজলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলেকজান্ডার মডেল সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বদরুল হাসান এসব অভিযোগ এনে রামগতির বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষকদের গ্রুপিং, দলাদলি, ক্লাস ফাঁকি ও নানান অনিয়মের বিষয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠার কথা জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিকারের জন্য সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। এসময় তিনি তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা নিজেদের মধ্যে গ্রুপিং, দলাদলি, ক্লাস ফাঁকি ও প্রাইভেট কোচিং নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এতে এ উপজেলার শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে অভিভাবক সহ সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা সমালোচনা হচ্ছে। অধিকাংশ প্রধান শিক্ষক স্কুলের কোন ক্লাসই করছে না। সারাদিন অফিসপাড়ায় ঘুরাঘুরি ও তদবির বাণিজ্য নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছেন। ফলে ক্লাস চলাকালীন ছাত্ররা স্কুল গেইটের বিভিন্ন দোকানে, বাজারে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। এসব গ্রুপিং দলাদলি ও তদবির বাণিজ্য বন্ধে উপজেলা শিক্ষা অফিসের হস্তক্ষেপ কামনা করে বক্তব্য দেন তিনি।
সব মিলিয়ে উপজলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা এখন হ য ব র ল অবস্থায় বিরাজ করছে। এসকল গ্রুপিং ও দলাদলি বন্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নেই কার্যকর কোন উদ্যোগ। এতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু সায়েদ স্বপন বলেন, গ্রুপিং ও দলাদলি নিরসনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অচিরেই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ দিদার হোসেনের দাবি কোচিং সারা দেশেই চলছে।শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং ও দলাদলির কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, এগুলো বন্ধে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
মন্তব্য