রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর ১১১ অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগসহ ৭৫৮ পৃষ্ঠার ‘শ্বেতপত্র’ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ।
‘অধিকার সুরক্ষা পরিষদ’ নামের সংগঠনের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় শনিবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করে এই শ্বেতপত্র প্রকাশ করেন সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান।
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমরা লজ্জিত। আমরা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার শ্বেতপত্র প্রকাশ করছি। এতে ১১১টি দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে।’
ড. মতিউর জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ উপাচার্য হিসেবে কলিমউল্লাহ ২০১৭ সালের ১৪ জুন যোগ দেন। এরপর থেকেই ব্যাপক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, জালিয়াতিসহ নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা চালাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ১৮ জন ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে রেখে সময়ের আগেই তড়িঘড়ি করে দুর্নীতির অন্যতম সহযোগী ও জাতীয় পতাকার অবমাননার এজাহারভুক্ত আসামি আমিনুর রহমানকে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে তিনি (কলিমউল্লাহ) পদোন্নতি দিয়েছেন। কারণ, তিনি উপাচার্যের একান্ত সচিব।’
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ ও দক্ষ অধ্যাপক থাকার পরেও ড. নাজমুল হককে একই সঙ্গে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, জনসংযোগ প্রশাসক, বহিরাঙ্গন কার্যক্রম পরিচালক এবং ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স সেল-এর পরিচালকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
ড. মতিউর দাবি করেন, ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স সেলে আগের উপাচার্যের সই জাল করে আগের তারিখে নিয়োগ দেখিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন উপাচার্য কলিমুল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালের উপ-উপাচার্য ড. আবুল কাশেম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং জানিপপের সদস্য ড. সাবের হোসেন চৌধুরী, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ড. শুচিতা শরমিন এবং উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ তানভীর আবির প্রশিক্ষণ ও মিটিংয়ের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
‘সদ্য নিযুক্ত ট্রেজারার প্রফেসর ড. হাসিবুর রশিদকে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন এবং ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান করা হয়েছে। অথচ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৯ এর ধারা ১৩ অনুযায়ী ট্রেজারার বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈতনিক আর্থিক কর্মকর্তা মাত্র। তিনি অ্যাকাডেমিক পদ গ্রহণ করতে পারেন না।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ এবং উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে আছেন উপাচার্য কলিমউল্লাহ ও তার মা। দুইজন মিলেই শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান উপাচার্য নিজেই, ওই অনুষদের ডিন পদেও রয়েছেন উপাচার্য। উপাচার্য হিসেবে তিনি নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি আবার অনুষদের ডিন হিসেবে তিনি নিয়োগ বোর্ডের সদস্য, বিভাগীয় প্রধান হিসেবে তিনিই সদস্য। অপরদিকে তার মা বিষয় বিশেষজ্ঞ সদস্য।’
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ৩৮তম প্লানিং কমিটির সভায় প্রভাষক পদে ২০১৯ সালের ৩ অক্টোবর প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির অনুকূলে প্রার্থিতা বাছাই করা হয়। বাছাই রেজল্যুশনে ড. কলিমউল্লাহ ডিন হিসেবে একটি এবং বিভাগীয় প্রধান হিসেবে আরেকটি স্বাক্ষর করেন।
২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর এর বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ওই বিভাগে প্রভাষক (অস্থায়ী) নিয়োগের জন্যও প্ল্যানিং কমিটির রেজল্যুশন ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ একইভাবে তিনটি সইয়ের মধ্যে একাই দুটি স্বাক্ষর করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম মজুমদারকে (বিইউপির বর্তমান উপ-উপাচার্য) অন্তত ১০টি নিয়োগ বোডের্র সদস্য করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিষয় সংশ্লিষ্টতা দেখা হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড. শুচিতা শারমিনকে করা হয়েছে চারটি বিভাগের নিয়োগ বোর্ডের সদস্য।
উপাচার্যের একান্ত সচিব (পিএস) আমিনুর রহমানের ভায়রা ভাই একেএম মাহমুদুল হককে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগও তোলা হয় সংবাদ সম্মেলনে। এতে বলা হয়, ‘নিয়োগের এক বছর পার হতে না হতেই তাকে (মাহমুদুল হক) সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পুনর্নিয়োগ দেয়া হয়েছে। দুইজন সহকারী অধ্যাপক নিয়োগের বিপরীতে দুইজনের লিখিত পরীক্ষা নিয়ে একজনকে প্রথম এবং আরেকজনকে দ্বিতীয় করা হয় এবং আমিনুর রহমানের ভায়রা ভাইসহ দুজনকে নিয়োগ দেয়া হয়।’
এ ছাড়া, মার্কেটিং বিভাগে সহকারী অধ্যাপক নিয়োগ বোর্ডে একজন প্রার্থীর উপস্থিতিতে একজনকেই নিয়োগ দেয়া হয়। অর্থনীতি বিভাগে নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে পছন্দের শিক্ষককে পদোন্নতি দিতে উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ নিজেই প্ল্যানিং কমিটির সদস্য হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সিন্ডিকেট সভায় সেকশন অফিসার (গ্রেড-১), রিসার্চ অফিসারসহ বিজ্ঞাপ্তিতে সব কটি পদে অনুষ্ঠিত নিয়োগ বোর্ড বাতিল করলেও অতিগোপনে পরে রিসার্চ অফিসার পদে একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
শারীরিক শিক্ষা বিভাগের ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর পদে বিজ্ঞপ্তির শর্তে প্রার্থীর বয়স ৩০ বছর রাখা হলেও ৩৮ বছর বয়সী সোহেল রানাকে নিয়োগ দেয়া হয়।
শ্বেতপত্রে আরও অভিযোগ করা হয়, উপাচার্য দপ্তরে সেকশন অফিসার (গ্রেড-২) হিসেবে সুমাইয়া খানমকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বিজ্ঞপ্তির তিনটি শর্ত লঙ্ঘন করে। বিজ্ঞপ্তির চারটি শর্ত ভঙ্গ করে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স সেলের অ্যাকাউন্টস অফিসার পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ এক শিক্ষকের ছোট ভাই নুরুজ্জামানকে।
ড. মতিউর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘উপাচার্যের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়ার জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত একেক সময় একেক রকমের করা হয়ে থাকে। পঞ্চম গ্রেডভুক্ত উপ-পরিচালক (অর্থ ও হিসাব), উপ-রেজিস্ট্রার এবং উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির শর্তাবলিতে বয়স ৪০ বছর চাওয়া হলেও একই গ্রেডভুক্ত উপ-প্রধান প্রকৌশলী পদে নিয়োগের জন্য বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ৫৮ বছর। এই উপ-প্রধান প্রকৌশলী পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে।
‘জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে এবং একজন শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের আরেকজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ভাইভা বোর্ডে উপাচার্য এবং তার জানিপপের সদস্য শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের শিক্ষক ড. সাবের হোসেন চৌধুরী নিয়োগ বোর্ডের বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে পছন্দের দুইজনকে নিয়োগ দিয়েছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, উপাচার্য তার ব্যক্তিগত সহকারীর (ভর্তি জালিয়াতির অপরাধে সিন্ডিকেটে সাজাপ্রাপ্ত) চার আত্মীয় মোছা. নুর নাহার বেগমকে (স্ত্রী) সেমিনার সহকারী পদে, মামাতো ভাই মো. গোলাপ মিয়া ও বন্ধুর ছোট ভাই হযরত আলীকে এমএলএসএস পদে এবং ফুফাতো ভাই কাওসার হোসেনকে সেমিনার সহকারী পদে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছেন।
এ ছাড়া, উপাচার্য আইন লঙ্ঘন করে পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) পদে নিয়োগ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের একজন অধ্যাপককে। পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক পদেও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকতা মো. মনোয়ারুল ইসলামকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আইন লঙ্ঘন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রারসহ এমন উচ্চতর চারটি পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সরকারি ক্রয়নীতি অনুসরণ না করে অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়েছে। ২০১৮ সালে যে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা, তা এখনও ৩৫ শতাংশ কাজের মধ্যেই রয়েছে। এই প্রকল্পে উপাচার্যসহ কয়েকজন কর্মকর্তার দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে ইউজিসির তদন্ত কমিটি।
দুর্নীতির উদাহরণ দিয়ে শ্বেতপত্রে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবহন পুলের সঙ্গে সংযোগ সড়ক নামে ছোট একটি ইট বিছানো রাস্তা নির্মাণ দেখিয়ে অন্তত ৫০ লাখ টাকার দুর্নীতি হয়েছে। ইউজিসির বরাদ্দ করা ৩৫ লাখ টাকার কাজে ৮৫ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, উপাচার্য ক্যাম্পাসে না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে আপ্যায়ন ব্যয় দেখানো হয়েছে অন্তত ২১ লাখ টাকা। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরেই আপ্যায়ন বাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে প্রায় ছয় লাখ টাকা। ২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর চালের কেজি ধরা হয়েছে ২৯০ টাকা করে। এর আগে বা পরে সব ভাউচারে প্রতি কেজি চালের দাম দেখানো হয়েছে ১১০ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ উপাচার্য হিসেবে যোগ দেয়ার পর থেকে প্রায় তিন বছর পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান ও পরিচালকসহ একাই ১৬টি প্রশাসনিক পদে থেকে নানা ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছেন। আইন লঙ্ঘন করে ছয়টি অনুষদের মধ্যে চারটি অনুষদের ডিন দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সমাজবিজ্ঞান বিভাগে বিভাগীয় প্রধান পদ দখল করে অন্তত ১০ লাখ টাকার কোনো হিসাব দিচ্ছেন না উপাচার্য।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের অধীনে এমফিল এবং পিএইচডি কোর্সের অর্ধশতাধিক গবেষকের সুপারভাইজার উপাচার্য ড. কলিমউল্লাহ নিজেই। তিনি একাই একইসঙ্গে বিভিন্ন বিভাগের ২৬টি কোর্সে পাঠদানের দায়িত্বও নিয়েছিলেন। তিনি এসব কোর্স নেয়ার নামে নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ উপার্জন করেছেন। খাতা মূল্যায়ন করেন তার পিএ আবুল কালাম আজাদ। বিভিন্ন বিভাগের ২৬টি কোর্স নিলেও কোনো কোনো কোর্সে একটি ক্লাস নিয়ে কোর্স শেষ করেছেন।’
শ্বেতপত্রে বলা হয়, ‘উপাচার্য আইন লঙ্ঘন করে ইউজিসির অনুমোদন ছাড়াই ঢাকায় ২০১৭ সাল থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি লিয়াজোঁ অফিস চালু করেন। জরুরি কার্যাদি সম্পন্ন করার নামে স্থাপিত ওই লিয়াজোঁ অফিস এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল অফিসে পরিণত হয়েছে।
‘২০১৭ সালের ১৪ জুন উপাচার্য হিসেবে যোগ দেয়ার পর থেকে চলচি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ১৩৫২ দিনের মধ্যে ১১১৫ দিনই তিনি ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থেকেছেন। অর্থাৎ উপস্থিত ছিলেন মাত্র ২৩৭ দিন।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. গাজি মাজহারুল আনোয়ার, ড. তুহিন ওয়াদুদ, সহযোগী অধ্যাপক তারিকুল ইসলাম, মাহমদুল হাসান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ফিরোজুল ইসলাম প্রমুখ।
আরও পড়ুন:দাবদাহে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ২১ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সাত দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মাহবুবুর রহমান তুহিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে শনিবার এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘চলমান তাপদাহে শিশু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিবেচনায় আগামী ২১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ পর্যন্ত সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের বিদ্যালয়সমূহ ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর লার্নিং সেন্টারগুলো বন্ধ থাকবে।’
এর আগে দেশজুড়ে চলমান দাবদাহের কারণে সরকারি প্রাথমিক স্কুলে অ্যাসেম্বলি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘দেশজুড়ে বহমান তাপদাহের ওপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তীক্ষ্ণ নজর রাখছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অ্যাসেম্বলি পরবর্তী নির্দেশনা দেয়া না পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।’
গত কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে দাবদাহ। কোনো কোনো জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র দাবদাহ।
ভারত সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গায় শুক্রবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন বাস্তবতায় দৈনন্দিন কাজকর্ম করা কঠিন হয়ে গেছে বিভিন্ন বয়সীদের।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের পটিয়ার সড়কে শুক্রবার বিকেল ও রাতে দুটি দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন।
বাস উল্টে হেলপার নিহত
পটিয়ার মনসা বাদামতলা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামমুখী একটি মিনিবাস বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি বাসকে সাইড দিতে গিয়ে শুক্রবার বেলা সাড়ে পাঁচটার দিকে মহাসড়কের পাশে উল্টে যায়। ওই সময় বাসটির হেলপার রফিক (২৩) লাফ দিলে বাসের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান তিনি।
পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে থানার ওসি তৌফিকুল ইসলাম দুর্ঘটনার বিষয়টি জানিয়েছেন।
অটোরিকশায় বাসের ধাক্কায় দুজন নিহত
উপজেলার খরনা চেয়ারম্যান ঘাট এলাকায় শুক্রবার রাত ১০টার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বাসের ধাক্কায় দুজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন।
নিহত দুজন হলেন চন্দনাইশ উপজেলার বৈলতলী এলাকার আবু বক্কর তাসিফ (১৮) ও কক্সবাজারের ঈদগাহ মধ্যম মাইজপাড়া এলাকার নুরুল আমিন (২৭)।
আহত চারজন হলেন বৈলতলীর রাকিব হোসেন (২০), মোহাম্মদ জাবেদ (১৯), মোহাম্মদ সিহাব (২২) ও চকরিয়ার অটোরিকশার চালক লিটন (৩৫)।
পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে থানার ওসি তৌফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম অভিমুখী দ্রুতগামী মারসা পরিবহনের একটি বাস নম্বরবিহীন সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়। এতে অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
তিনি আরও জানান, স্থানীয়রা অটোরিকশার যাত্রীদের উদ্ধার করে চন্দনাইশের বিজিসি ট্রাস্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত চারজনকে হাসপাতালেই চিকিৎসা দেয়া হয়।
আরও পড়ুন:সুনামগঞ্জের ছাতকের ঐতিহ্যবাহী জাউয়া বাজার ইজারাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষের আশঙ্কায় ১৪৪ ধারা জারি ধারা জারি করা হয়েছে।
সংঘর্ষ এড়াতে শনিবার ভোর ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ফৌজদারি কার্যধারার এক আদেশে ১৪৪ ধারা জারি করেন ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম মুস্তাফা মুন্না।
আদেশে বলা হয়েছে, “যেহেতু ছাতক উপজেলাধীন ‘জাউয়া বাজার’ ইজারাকে কেন্দ্র করে বিবাদমান পক্ষসমূহের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং এর ফলে আইন শৃঙ্খলার মারাত্মক অবনতিসহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা বিদ্যমান রয়েছে মর্মে অফিসার ইন- চার্জ, ছাতক থানা, সুনামগঞ্জ থেকে প্রতিবেদন পাওয়া গিয়েছে।
“সেহেতু সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে আমি গোলাম মুস্তাফা মুন্না, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ছাতক, সুনামগঞ্জ আমার উপর অর্পিত ক্ষমতাবলে আগামী ২০ এপ্রিল সকাল ৬ ঘটিকা হতে রাত ১২ ঘটিকা পর্যন্ত জাউয়া বাজার এলাকা এবং তার আশেপাশের এলাকায় ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ১৪৪ ধারা জারি করলাম।”
আদেশ অনুযায়ী, এ সময় উক্ত এলাকায় সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শন, লাঠি বা দেশীয় কোনো অস্ত্র বহন বা প্রদর্শন, যে কোনো ধরনের মাইকিং বা শব্দযন্ত্র ব্যবহার, পাঁচ বা তার অধিক সংখ্যক ব্যক্তির একসঙ্গে চলাফেরা, সভা সমাবেশ, মিছিল ইত্যাদি নিষিদ্ধ থাকবে।
ঈদুল ফিতরকেন্দ্রিক যাত্রায় দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত ও এক হাজার ৩৯৮ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
যাত্রীদের স্বার্থ সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা সংস্থাটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন।
ঈদযাত্রায় অন্যান্য পথে দুর্ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একই সময়ে রেলপথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত, ২১ জন আহত হয়েছে। নৌপথে দুটি দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত, পাঁচজন আহত হয়েছে।
‘সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৪১৯টি দুর্ঘটনায় ৪৩৮ জন নিহত ও ১ হাজার ৪২৪ জন আহত হয়েছে।’
যাত্রী কল্যাণ সমিতির সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে মোজাম্মেল বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদকেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানীর বিষয়টি দীর্ঘদিন যাবত পর্যবেক্ষণ করে আসছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ শতাংশ মানুষের বেশি যাতায়াত হয়েছে। বর্তমান সরকারের বিগত ১৫ বছরে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে দেশের সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা আগের তুলনায় ভালো থাকায় যানবাহনে গতি বেড়েছে।
‘দেশের সবকটি সড়ক-মহাসড়কের পাশাপাশি পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচলের কারণে মোট যাত্রীর সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ মোটরসাইকেলে যাতায়াত করেছে। সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি চরমে উঠেছিল। গণপরিবহনগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যর কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনের ঈদে বাড়ি যেতে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৪ এপ্রিল থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত বিগত ১৫ দিনে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত ও ১ হাজার ৩৯৮ জন আহত হয়েছে। বিগত ২০২৩ সালের ঈদুল ফিতরে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জন নিহত ও ৫৬৫ জন আহত হয়েছিল।
‘বিগত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ, প্রাণহানি ২৪ দশমিক ০৮ শতাংশ, আহত ১৪৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়েছে।’
আরও পড়ুন:সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে ও সেই সঙ্গে অস্বস্তি বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন বার্তা দিয়েছে।
পূর্বাভাসে সিনপটিক অস্থান নিয়ে বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
শনিবারের তাপমাত্রা নিয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে।
তাপপ্রবাহ নিয়ে বলা আছে, রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর ও মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং বরিশালের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে যা অব্যাহত থাকতে পারে।
বৃষ্টিপাত নিয়ে বলা আছে, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্য স্থানে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:ঢাকার সাভারে দৈনিক যুগান্তরের এক সাংবাদিকের ওপর ঝাঁঝালো রাসায়নিক নিক্ষেপ করেছে দুর্বৃত্তরা।
অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে কলমা এলাকায় শুক্রবার রাত আনুমানিক পৌনে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ইকবাল হাসান ফরিদ দৈনিক যুগান্তরের অপরাধবিষয়ক প্রতিবেদক।
ঘটনার পর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ফরিদকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সাংবাদিক ইকবাল হাসান ফরিদ বলেন, ‘রাতে অফিস শেষে ঢাকা থেকে সাভারের বাসায় ফিরছিলাম। আনুমানিক পৌনে ১২টার দিকে বাসার অদূরে অন্ধকার গলিতে পৌঁছালে পেছন থেকে একজন মুখোশধারী যুবক আমাকে নাম ধরে ডাক দেয়। ডাক শুনে দাঁড়ানোর পর মুখোশধারী দুই যুবক স্থানীয় দুই জনপ্রতিনিধির নাম উল্লেখ করে আমাকে আগামী এক মাসের মধ্যে সাভার এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এলাকা ছেড়ে না গেলে সপরিবারে আমাকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয় তারা।
‘এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগে পেছন থেকে তাদের একজন মরিচের গুঁড়াসদৃশ এক প্রকার ঝাঁঝালো কেমিক্যাল আমার মাথায় ও চোখে-মুখে ছিটিয়ে দেয় এবং আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে চলে যায়। ঝাঁঝালো কেমিক্যাল ছিটিয়ে দেয়ার পর চোখে-মুখে ও শরীরে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া শুরু হলে তাৎক্ষণিকভাবে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা সাভারের যে দুইজন জনপ্রতিনিধির নাম উল্লেখ করে আমাকে হুমকি দিয়েছে, তাদের কারও সঙ্গে আমার পরিচয়, যোগাযোগ কিংবা কোনো ধরনের বিরোধ নেই। তৃতীয় কোনো পক্ষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের লক্ষ্যে তাদের নাম ব্যবহার করে থাকতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঠিক তদন্তে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।’
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পাশাপাশি হাসপাতালে অসুস্থ সাংবাদিক ফরিদকে দেখতে যায় সাভার মডেল থানা পুলিশ।
সাভার মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ শাহজামান বলেন, ‘তদন্ত করে দুর্বৃত্তদের খুঁজে বের করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:কাঠফাটা রোদ আর ভ্যাপসা গরমে প্রকৃতি যেন পুড়ে যাচ্ছে। এমন বৈরী আবহাওয়াতে কুমিল্লার কৃষকরা মেতে উঠেছেন রোরো ধান ঘরে তোলার উৎসবে। পাকা ধানের ঘ্রাণে মোহিত হচ্ছে চারপাশ।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর কুমিল্লায় এক লাখ ৬১ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এ মৌসুমে ব্রি ধান ৯৬, ব্রি ধান ৮৯, ব্রি ধান ৯২ ও বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ আবাদে কৃষকের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত ১৩ এপ্রিল দেবিদ্বার উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের ইউসুফপুর গ্রামে বোরো ধান কাটার উদ্বোধন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক আইউব মাহমুদ। তিনি জানান, বোরো ধান তোলার উৎসবে শুরু হয়েছে। ভালো ফলনে খুশি কৃষকরা।
তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মিধিলি ও মিগজাউমের আঘাতে রবি ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকদের মৌসুমের শুরু থেকেই আধুনিক উফশী জাত ও হাইব্রিড জাতের বোরো ধান আবাদে উদ্বুদ্ধ করা হয়। বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সেচ নিশ্চিতকরণ, কালবৈশাখি ঝড়, অতিবৃষ্টি, তাপদাহ, রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাবসহ নানা প্রতিকূলতা ছিল।
‘নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন ও সঠিক পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত মাঠের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ বছর বোরো মৌসুমে ভালো ফলন আশা করা হচ্ছে।’
জেলার দেবিদ্বার এলাকা ঘুরে শুক্রবার দেখা যায়, ফসলের মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। জমিতে ব্রি ধান ৯৬ জাতের একটি জমিতে প্রতি হেক্টরে ফলন পাওয়া গেছে ৪ দশমিক ১৮ টন।
কৃষি বিভাগের পরামর্শে প্রথমবারের মতো ব্রি ধান ৯৬ জাতটি চাষ করেছেন কৃষক আবুল কালাম আজাদ। মাত্র ১৩০ দিনের জীবনকালে বাম্পার ফলন পেয়ে বেজায় খুশি তিনি।
দেবিদ্বার উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ বানিন রায় জানান, এ বছর দেবিদ্বার উপজেলায় ১২ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যা গত বছর ছিল ১২ হাজার ৬৩০ হেক্টর। বোরো ধানে ব্রি ধান ২৮ এর পরিবর্তে একই জীবনকালের, তবে অধিক ফলনের ব্রি ধান ৯৬ চাষের পরামর্শ প্রদান ও উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম চলমান ছিল।
তিনি জানান, স্বর্ণা ধানের মতো রঙের এ ধানটিতে প্রোটিনের পরিমাণ ১০ দশমিক ৮ শতাংশ ও এমাইলোজের পরিমাণ ২৮ শতাংশ হওয়ায় ভাত খেতে সুস্বাদু ও ঝরঝরে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য