রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর ১১১ অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগসহ ৭৫৮ পৃষ্ঠার ‘শ্বেতপত্র’ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ।
‘অধিকার সুরক্ষা পরিষদ’ নামের সংগঠনের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় শনিবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করে এই শ্বেতপত্র প্রকাশ করেন সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান।
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমরা লজ্জিত। আমরা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার শ্বেতপত্র প্রকাশ করছি। এতে ১১১টি দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে।’
ড. মতিউর জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ উপাচার্য হিসেবে কলিমউল্লাহ ২০১৭ সালের ১৪ জুন যোগ দেন। এরপর থেকেই ব্যাপক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, জালিয়াতিসহ নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা চালাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ১৮ জন ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে রেখে সময়ের আগেই তড়িঘড়ি করে দুর্নীতির অন্যতম সহযোগী ও জাতীয় পতাকার অবমাননার এজাহারভুক্ত আসামি আমিনুর রহমানকে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে তিনি (কলিমউল্লাহ) পদোন্নতি দিয়েছেন। কারণ, তিনি উপাচার্যের একান্ত সচিব।’
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ ও দক্ষ অধ্যাপক থাকার পরেও ড. নাজমুল হককে একই সঙ্গে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, জনসংযোগ প্রশাসক, বহিরাঙ্গন কার্যক্রম পরিচালক এবং ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স সেল-এর পরিচালকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
ড. মতিউর দাবি করেন, ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স সেলে আগের উপাচার্যের সই জাল করে আগের তারিখে নিয়োগ দেখিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন উপাচার্য কলিমুল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালের উপ-উপাচার্য ড. আবুল কাশেম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং জানিপপের সদস্য ড. সাবের হোসেন চৌধুরী, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ড. শুচিতা শরমিন এবং উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ তানভীর আবির প্রশিক্ষণ ও মিটিংয়ের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
‘সদ্য নিযুক্ত ট্রেজারার প্রফেসর ড. হাসিবুর রশিদকে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন এবং ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান করা হয়েছে। অথচ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৯ এর ধারা ১৩ অনুযায়ী ট্রেজারার বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈতনিক আর্থিক কর্মকর্তা মাত্র। তিনি অ্যাকাডেমিক পদ গ্রহণ করতে পারেন না।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ এবং উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে আছেন উপাচার্য কলিমউল্লাহ ও তার মা। দুইজন মিলেই শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান উপাচার্য নিজেই, ওই অনুষদের ডিন পদেও রয়েছেন উপাচার্য। উপাচার্য হিসেবে তিনি নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি আবার অনুষদের ডিন হিসেবে তিনি নিয়োগ বোর্ডের সদস্য, বিভাগীয় প্রধান হিসেবে তিনিই সদস্য। অপরদিকে তার মা বিষয় বিশেষজ্ঞ সদস্য।’
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ৩৮তম প্লানিং কমিটির সভায় প্রভাষক পদে ২০১৯ সালের ৩ অক্টোবর প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির অনুকূলে প্রার্থিতা বাছাই করা হয়। বাছাই রেজল্যুশনে ড. কলিমউল্লাহ ডিন হিসেবে একটি এবং বিভাগীয় প্রধান হিসেবে আরেকটি স্বাক্ষর করেন।
২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর এর বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ওই বিভাগে প্রভাষক (অস্থায়ী) নিয়োগের জন্যও প্ল্যানিং কমিটির রেজল্যুশন ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ একইভাবে তিনটি সইয়ের মধ্যে একাই দুটি স্বাক্ষর করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম মজুমদারকে (বিইউপির বর্তমান উপ-উপাচার্য) অন্তত ১০টি নিয়োগ বোডের্র সদস্য করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিষয় সংশ্লিষ্টতা দেখা হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড. শুচিতা শারমিনকে করা হয়েছে চারটি বিভাগের নিয়োগ বোর্ডের সদস্য।
উপাচার্যের একান্ত সচিব (পিএস) আমিনুর রহমানের ভায়রা ভাই একেএম মাহমুদুল হককে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগও তোলা হয় সংবাদ সম্মেলনে। এতে বলা হয়, ‘নিয়োগের এক বছর পার হতে না হতেই তাকে (মাহমুদুল হক) সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পুনর্নিয়োগ দেয়া হয়েছে। দুইজন সহকারী অধ্যাপক নিয়োগের বিপরীতে দুইজনের লিখিত পরীক্ষা নিয়ে একজনকে প্রথম এবং আরেকজনকে দ্বিতীয় করা হয় এবং আমিনুর রহমানের ভায়রা ভাইসহ দুজনকে নিয়োগ দেয়া হয়।’
এ ছাড়া, মার্কেটিং বিভাগে সহকারী অধ্যাপক নিয়োগ বোর্ডে একজন প্রার্থীর উপস্থিতিতে একজনকেই নিয়োগ দেয়া হয়। অর্থনীতি বিভাগে নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে পছন্দের শিক্ষককে পদোন্নতি দিতে উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ নিজেই প্ল্যানিং কমিটির সদস্য হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সিন্ডিকেট সভায় সেকশন অফিসার (গ্রেড-১), রিসার্চ অফিসারসহ বিজ্ঞাপ্তিতে সব কটি পদে অনুষ্ঠিত নিয়োগ বোর্ড বাতিল করলেও অতিগোপনে পরে রিসার্চ অফিসার পদে একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
শারীরিক শিক্ষা বিভাগের ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর পদে বিজ্ঞপ্তির শর্তে প্রার্থীর বয়স ৩০ বছর রাখা হলেও ৩৮ বছর বয়সী সোহেল রানাকে নিয়োগ দেয়া হয়।
শ্বেতপত্রে আরও অভিযোগ করা হয়, উপাচার্য দপ্তরে সেকশন অফিসার (গ্রেড-২) হিসেবে সুমাইয়া খানমকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বিজ্ঞপ্তির তিনটি শর্ত লঙ্ঘন করে। বিজ্ঞপ্তির চারটি শর্ত ভঙ্গ করে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স সেলের অ্যাকাউন্টস অফিসার পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ এক শিক্ষকের ছোট ভাই নুরুজ্জামানকে।
ড. মতিউর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘উপাচার্যের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়ার জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত একেক সময় একেক রকমের করা হয়ে থাকে। পঞ্চম গ্রেডভুক্ত উপ-পরিচালক (অর্থ ও হিসাব), উপ-রেজিস্ট্রার এবং উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির শর্তাবলিতে বয়স ৪০ বছর চাওয়া হলেও একই গ্রেডভুক্ত উপ-প্রধান প্রকৌশলী পদে নিয়োগের জন্য বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ৫৮ বছর। এই উপ-প্রধান প্রকৌশলী পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে।
‘জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে এবং একজন শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের আরেকজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ভাইভা বোর্ডে উপাচার্য এবং তার জানিপপের সদস্য শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের শিক্ষক ড. সাবের হোসেন চৌধুরী নিয়োগ বোর্ডের বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে পছন্দের দুইজনকে নিয়োগ দিয়েছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, উপাচার্য তার ব্যক্তিগত সহকারীর (ভর্তি জালিয়াতির অপরাধে সিন্ডিকেটে সাজাপ্রাপ্ত) চার আত্মীয় মোছা. নুর নাহার বেগমকে (স্ত্রী) সেমিনার সহকারী পদে, মামাতো ভাই মো. গোলাপ মিয়া ও বন্ধুর ছোট ভাই হযরত আলীকে এমএলএসএস পদে এবং ফুফাতো ভাই কাওসার হোসেনকে সেমিনার সহকারী পদে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছেন।
এ ছাড়া, উপাচার্য আইন লঙ্ঘন করে পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) পদে নিয়োগ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের একজন অধ্যাপককে। পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক পদেও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকতা মো. মনোয়ারুল ইসলামকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আইন লঙ্ঘন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রারসহ এমন উচ্চতর চারটি পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সরকারি ক্রয়নীতি অনুসরণ না করে অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়েছে। ২০১৮ সালে যে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা, তা এখনও ৩৫ শতাংশ কাজের মধ্যেই রয়েছে। এই প্রকল্পে উপাচার্যসহ কয়েকজন কর্মকর্তার দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে ইউজিসির তদন্ত কমিটি।
দুর্নীতির উদাহরণ দিয়ে শ্বেতপত্রে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবহন পুলের সঙ্গে সংযোগ সড়ক নামে ছোট একটি ইট বিছানো রাস্তা নির্মাণ দেখিয়ে অন্তত ৫০ লাখ টাকার দুর্নীতি হয়েছে। ইউজিসির বরাদ্দ করা ৩৫ লাখ টাকার কাজে ৮৫ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, উপাচার্য ক্যাম্পাসে না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে আপ্যায়ন ব্যয় দেখানো হয়েছে অন্তত ২১ লাখ টাকা। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরেই আপ্যায়ন বাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে প্রায় ছয় লাখ টাকা। ২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর চালের কেজি ধরা হয়েছে ২৯০ টাকা করে। এর আগে বা পরে সব ভাউচারে প্রতি কেজি চালের দাম দেখানো হয়েছে ১১০ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ উপাচার্য হিসেবে যোগ দেয়ার পর থেকে প্রায় তিন বছর পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান ও পরিচালকসহ একাই ১৬টি প্রশাসনিক পদে থেকে নানা ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছেন। আইন লঙ্ঘন করে ছয়টি অনুষদের মধ্যে চারটি অনুষদের ডিন দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সমাজবিজ্ঞান বিভাগে বিভাগীয় প্রধান পদ দখল করে অন্তত ১০ লাখ টাকার কোনো হিসাব দিচ্ছেন না উপাচার্য।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের অধীনে এমফিল এবং পিএইচডি কোর্সের অর্ধশতাধিক গবেষকের সুপারভাইজার উপাচার্য ড. কলিমউল্লাহ নিজেই। তিনি একাই একইসঙ্গে বিভিন্ন বিভাগের ২৬টি কোর্সে পাঠদানের দায়িত্বও নিয়েছিলেন। তিনি এসব কোর্স নেয়ার নামে নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ উপার্জন করেছেন। খাতা মূল্যায়ন করেন তার পিএ আবুল কালাম আজাদ। বিভিন্ন বিভাগের ২৬টি কোর্স নিলেও কোনো কোনো কোর্সে একটি ক্লাস নিয়ে কোর্স শেষ করেছেন।’
শ্বেতপত্রে বলা হয়, ‘উপাচার্য আইন লঙ্ঘন করে ইউজিসির অনুমোদন ছাড়াই ঢাকায় ২০১৭ সাল থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি লিয়াজোঁ অফিস চালু করেন। জরুরি কার্যাদি সম্পন্ন করার নামে স্থাপিত ওই লিয়াজোঁ অফিস এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল অফিসে পরিণত হয়েছে।
‘২০১৭ সালের ১৪ জুন উপাচার্য হিসেবে যোগ দেয়ার পর থেকে চলচি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ১৩৫২ দিনের মধ্যে ১১১৫ দিনই তিনি ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থেকেছেন। অর্থাৎ উপস্থিত ছিলেন মাত্র ২৩৭ দিন।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. গাজি মাজহারুল আনোয়ার, ড. তুহিন ওয়াদুদ, সহযোগী অধ্যাপক তারিকুল ইসলাম, মাহমদুল হাসান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ফিরোজুল ইসলাম প্রমুখ।
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার হোসেন্দী ইউনিয়নের ভাটি বলাকী গ্রাম সংলগ্ন খালে জোয়ারের পানির তোড়ে ভেসে গেছে প্রায় শতাধিক গরু। একের পর এক ভেসে উঠছে মরা গরু। বিশাল ক্ষতির মুখে পড়েছে স্থানীয় কৃষক। ভুক্তভোগীদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে গ্রামের পরিবেশ।
শুক্রবার(২৩ মে) বিকাল ৪টার দিকে হোসেন্দী ইউনিয়নের ভাটি বলাকী গ্রাম সংলগ খালে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার মতো আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে ভুক্তভোগী কৃষকদের সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, কৃষক এমরানের ২টা, মহাসিনের ৪টা,ইয়ারুরের ৩টা, মাসুমের ১টা,ওয়াহিদুজ্জামানের ১টা, রনির ১টা, নাহিদের ৩টা, হেলানির ১টা, হানিফার ২টা, মনার ২টা, মো. শরীফের ৩টা, তরিকুলের ২টা, কবিরের খান ৩টা, আবুল হোসেনের ৩টা, জামালের ১টা, শাহাজালালের ৩টা, রসুল গাজীর ১টাসহ বহু কৃষকের শতাধিক গরু পানির তোড়ে ভেসে যায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা শ্যামল খান বলেন, ‘আজকের দিনটি আমাদের গ্রামবাসীর জন্য একটি দুঃখের দিন হয়ে থাকবে। আমাদের গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। সবারই গরু রয়েছে। ভাটি বলাকী গ্রাম সংলগ্ন চরে ঘাস খাইয়ে গরুগুলো লালন-পালন করে সবাই। গ্রাম এবং চরের মধ্যে ছোট একটি খাল রয়েছে। খাল পাড়ি দিয়ে চরে গিয়ে ঘাস খেয়ে প্রতিদিন বিকালে গরুগুলো আবার গোয়ালে ফিরে আসে। শুক্রবার বিকালে খাল পাড় হবার সময় হঠাৎ জোয়ারের পানির তোড়ে এবং কচুরিপানার চাপে শতাধিক গরু ভেসে যায়। এর মধ্যে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ৩৬টি মৃত গরু উদ্ধার করা হলেও এখনো প্রায় ৬৫টি গরু নিখোঁজ। লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতির মুখে পড়ে কৃষকরা পাগল প্রায়'।
ভুক্তভোগী কৃষক মহসিন বলেন,‘এমন ঘটনা জীবনেও ঘটে নাই। এমন কিছু ঘটতে পারে তা আমরা চিন্তাও করি নাই। আমার ৪টি গরু পানির তোড়ে ভেসে গেছে। আমি একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি, পথের ফকির হয়ে গেছি'।
কৃষক আবু তালেব সুজন খান বলেন, প্রতিদিনের মতো আজকেও সকালে গরু ঘাস খাওয়ার জন্য খাল পার হয়ে যায়। আসার পথে জোয়ারের পানির স্রোতে প্রায় ১০০ গরু ভেসে যায়। এর মধ্যে ৩৬টি মৃত গরু উদ্ধার হয়েছে। এখনও আনেক কৃষক তাদের গরু খোঁজাখুঁজি করছে।
বিষয়টি সম্পর্কে হোসেন্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠু বলেন, ‘এরকম একটি খবর আমিও পেয়েছি। স্থানীয় ইউপি সদস্যকে এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’
গজারিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফয়সাল আরাফাত বিন ছিদ্দিক বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে রয়েছি আমরা। আমাদের অবস্থান থেকে যতটুকু সম্ভব আমরা তাদের সাহায্য করব।’
গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম বলেন, এখন পর্যন্ত ৩৬টি মৃতগরু উদ্ধার করা হয়েছে, আরও খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। কৃষকদের অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করা হবে।’
কিছুদিন আগেই কর্ণাটকে শো করতে গিয়ে কন্নড় ভাষা নিয়ে মন্তব্য করে বিপাকে পড়েন সংগীতশিল্পী সোনু নিগম। জল গড়ায় কোর্ট পর্যন্ত। সেই ইস্যুর রেশ কাটতে না কাটতেই কর্ণাটকের এসবিআই কর্মীর কন্নড় বলায় আপত্তির ঘটনা নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আবারও ভাষা নিয়ে উত্তাল কর্ণাটক। এবার এর রোষানলে পড়েছেন দক্ষিণী সিনেমার নায়িকা তামান্না ভাটিয়া। সরকারি সাবানের বিজ্ঞাপনী দ্যূত হিসেবে দক্ষিণী এ সুন্দরীকে বেছে নেওয়ায় বিক্ষুদ্ধ হয়েছেন কর্ণাটক রাজ্যের বাসিন্দারা। সোশ্যাল মিডিয়াতেও বিক্ষোভের পাহাড়। স্বাভাবিকভাবেই প্রবল সমালোচনায় বিদ্ধ হতে হচ্ছে সিদ্দারামাইয়ার সরকারকে। প্রতিবাদ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বিতর্কের কারণে শেষমেশ মুখ খুলতে বাধ্য হলেন কর্ণাটকের শিল্প-বাণিজ্যমন্ত্রী এমবি পাতিল।
সম্প্রতি তামান্না ভাটিয়ার নাম কর্ণাটকের সরকারি সাবান ‘মাইসোর স্যান্ডেলর বিজ্ঞাপনী দ্যূত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর থেকেই প্রতিবাদের ঝড়। সংশ্লিষ্ট রাজ্যের বাসিন্দাদের দাবি, কন্নড় চলচ্চিত্রের কোনো নায়িকাকে না বেছে কেন তামান্নাকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করা হলো? প্রশ্ন তুলে একই কণ্ঠে আওয়াজ তুলেছে কর্ণাটকবাসীর একাংশ। অনেকে আবার কন্নড় অভিনেত্রী রুক্মিণী বসন্তের নামও প্রস্তাব করেছেন। জানা গেছে, ‘মাইসোর স্যান্ডেল’ সংস্থার সঙ্গে দুবছরের চুক্তি হয়েছে তামান্নার। যার জন্য মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক পাচ্ছেন তিনি।
একটি সূত্রে জানা গেছে, ৬.২০ কোটি রুপিতে চুক্তিবদ্ধ হন তামান্না। তবে এ প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় স্তরে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দক্ষিণী সুন্দরীকে নির্বাচন করলেও সেটি ভালো মনে নেয়নি কর্ণাটকবাসীদের একাংশ। এরপর প্রতিবাদের আগুন তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমজুড়ে। বিপাকে পড়ে সবশেষে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে মাঠে নামতে হয় মন্ত্রী এমবি পাতিলকে। তার সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টে তিনি তামান্না ভাটিয়াকে বিজ্ঞাপনী দ্যূত হিসেবে বেছে নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন।
এ প্রসঙ্গে পাতিলের ভাষ্য, কন্নড় চলচ্চিত্র শিল্পের প্রতি আমাদের সম্পুর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে। এমনকি কিছু কন্নড় সিনেমা তো বলিউড সিনেমার ব্যবসাকেও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিচ্ছে। মাইসোর স্যান্ডেল কর্ণাটকে খুব জনপ্রিয় এক প্রসাধনী সংস্থা। এবার সেই জায়গাটা আরও পোক্ত করতে হবে। ‘তবে এবার মাইসোর স্যান্ডেলের ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।’
জ্যৈষ্ঠ মাসের দশ দিন চলছে। এই সময়ে প্রকৃতিতে তাপমাত্রা যেমন থাকে তেমনি থাকে বৃষ্টিপাতও। বাংলা এই মাসের শুরুতেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে প্রকৃতিতে তাপমাত্রা কমেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা গণমাধ্যমকে বলেন, বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি এলাকায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। আর এ জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের এই বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে আগামী আরও দশ দিন। বাংলাদেশ সংলগ্ন এলাকায় জড়ো হওয়া গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালার জন্য এই বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
আজ শুক্রবার সকাল ৯টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু মিয়ানমারের আকিয়াব উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। এটি আরও অগ্রসর হওয়ার অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। আগামী ২৭ মে পশ্চিমমধ্য এবং তৎসংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে।
এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চলতি মাসের শেষ দিকে সাগরে একটি নিম্নচাপ হতে পারে। এ থেকে একটি ঘূর্ণিঝড়ও সৃষ্টি হতে পারে।
কাজী জেবুন্নেছা বলেন, ২৫ থেকে ২৬ মে সাগরে লঘুচাপের সৃষ্টি হতে পারে। সেটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এটি ঘূর্ণিঝড়ে রুপ নেবে কী না, তা এখনও বলা যাচ্ছে না। এ নিয়ে নিশ্চিত করে এখনও কিছু বলার সময় আসেনি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মে মাস সাধারণত ঘূর্ণিঝড়প্রবণ মাস হিসেবে পরিচিত। গত বছরের মে মাসেই ঘূর্ণিঝড় রিমাল সৃষ্টি হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছিল। গত বছরের ২৬ মে এ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে বাংলাদেশের উপকূলে। এবারও নিম্নচাপ ও সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের সময় কাছাকাছি। এর আগেও একাধিক বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় এ মাসে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে। তাই আবহাওয়াবিদরা এ সময় সতর্ক থাকতে বলছেন।
কাজী জেবুন্নেছা আরও বলেন, ‘সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার উপযোগী রয়েছে। তবে নিম্নচাপ তৈরি হলে সেটি কোথায় যাবে, কীভাবে শক্তি সঞ্চয় করবে, এসব বিষয় আরও কিছুদিন পর জানা যাবে।’এবার যদি ঘূর্ণিঝড় হয়, তবে এর নাম হবে ‘শক্তি’। নামটি শ্রীলঙ্কার দেওয়া।
সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গভিত্তিক একটি প্রতিরক্ষা কোম্পানির সঙ্গে ২ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের (প্রায় ১৮০ কোটি রুপি) চুক্তি বাতিল করেছে বাংলাদেশ। শুক্রবার ভারতের একাধিক শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চুক্তির আওতায় কলকাতার গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (জিআরএসই) নামের প্রতিরক্ষা কোম্পানির কাছ থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য একটি ৮০০ টন ওজনের টাগ বোট সংগ্রহ করার কথা ছিল।
এই চুক্তিটি হয়েছিল গত বছরের জুলাই মাসে, যেখানে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও ভারতীয় কোম্পানির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। চুক্তিটি ছিল ভারত সরকারের ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তার অংশ, যা ২০২৩ সালে ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়। এই টাগ বোট কেনার উদ্যোগটিকে সেই ঋণচুক্তির প্রথম বড় প্রকল্প হিসেবে ধরা হচ্ছিল।
তবে হঠাৎ করেই বাংলাদেশ সরকার এই ক্রয়াদেশ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, এর পেছনে রয়েছে সাম্প্রতিক এক কূটনৈতিক উত্তেজনা। এর আগে গত শনিবার ভারত তাদের স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এরপরই বাংলাদেশ পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, এই চুক্তি বাতিলের ফলে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জিআরএসই কোম্পানিটি বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে। এনডিটিভি জানিয়েছে, কোম্পানিটি ভারতীয় পুঁজিবাজারকে জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার তাদের ক্রয়াদেশ বাতিল করেছে।
এদিকে, বাংলাদেশের এই সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক কারণ দেখছেন অনেকে। ভারতীয় মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্যমতে, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সেভেন সিস্টার্স অঞ্চলকে ‘স্থলবেষ্টিত’বলে অভিহিত করেন এবং এই অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক’ হিসেবে উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে তিনি চীনের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়ানোর প্রস্তাব দিলে, ভারত এর জবাবে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দু বিজনেস লাইন বলেছে, বাংলাদেশ সরকার ও জিআরএসইর মধ্যে পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতেই চুক্তি বাতিল হয়েছে। যদিও এই আলোচনার বিস্তারিত প্রকাশ পায়নি। ভারত ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশকে বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) সুবিধার আওতায় ৮ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। এই সহায়তার বেশিরভাগ প্রকল্পই বাস্তবায়ন হয়েছে শেখ হাসিনার আমলে।
চুক্তি বাতিলের এই সিদ্ধান্তকে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান রাজনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েনের প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। ভবিষ্যতে এর প্রভাব দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও অর্থনৈতিক লেনদেনে কতটা পড়ে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
আরেকটি এক-এগারোর বন্দোবস্ত করার পাঁয়তারা চলছে- বলে মন্তব্য করেছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। শুক্রবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম তার পোস্টে বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিকে সব ধরনের আধিপত্যবাদ থেকে মুক্ত করে স্বাধীন ও সার্বভৌমভাবে পরিচালনা করাই আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশকে বারবার বিভাজিত করা হয়েছে, জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করা হয়েছে, বাংলাদেশেকে দুর্বল করে রাখার লক্ষ্যে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পর থেকে আবারো দিল্লি থেকে ছঁক আকা হচ্ছে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করার, দেশকে বিভাজিত করার। গণতান্ত্রিক রূপান্তরকে বাধাগ্রস্ত করে আরেকটা এক-এগারোর বন্দোবস্ত করার পাঁয়তারা চলছে।
তিনি আরো বলেন, ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক, বাংলাদেশপন্থী ও ধর্মপ্রাণ ছাত্র-জনতাকে সার্বভৌমত্ব, সংস্কার ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দেশপ্রেমিক সেনা অফিসার ও সৈনিকদের সার্বভৌমত্ব ও বাংলাদেশ রক্ষায় প্রস্তুত থাকতে হবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ড. ইউনূসকে জনগণকে দেওয়া সংস্কার, বিচার ও ভোটাধিকারের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে। তাকে দায়িত্বে থেকেই রাজনৈতিকভাবে সকল সমস্যার সমাধান করতে হবে। জুলাই ঘোষণাপত্র নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই দিতে হবে। ঘোষিত টাইম ফ্রেমের মধ্যেই নির্বাচন হবে। নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কারের জুলাই সনদ রচিত হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে জুলাই গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান হবে এবং বিচারের রোডম্যাপ আসতে হবে। নতুন সংবিধানের জন্য গণপরিষদ ও আইনসভার নির্বাচন একই সঙ্গে দিতে হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করার অনুমতি বাতিল করেছে এবং বর্তমানে ভর্তি থাকা শিক্ষার্থীদের অন্যত্র স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছে। অন্যথায় তারা যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ অবস্থান হারাতে পারে বলে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (ডিএইচএস)। হার্ভার্ড এই সিদ্ধান্তকে অবৈধ ও প্রতিশোধমূলক বলে আখ্যা দিয়েছে।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সচিব ক্রিস্টি নোয়েম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম (এসইভিপি) প্রত্যয়ন বাতিলের নির্দেশ দেন।
ডিএইচএস-এর বিবৃতিতে বলা হয়, হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিষয়ে আগেই চাওয়া কিছু তথ্য সরবরাহে ব্যর্থ হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নোয়েম বলেন, 'এই প্রশাসন হার্ভার্ডকে জবাবদিহির আওতায় আনছে—যেহেতু তারা সহিংসতা ও ইহুদিবিদ্বেষ ছড়াচ্ছে এবং ক্যাম্পাসে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সমন্বয় করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ কোনো অধিকার নয়, বরং একটি সুবিধা, যা তারা অধিক টিউশন ফি নিয়ে বহু বিলিয়ন ডলারের তহবিল ফুলিয়ে তোলার কাজে ব্যবহার করে।'
হার্ভার্ড পাল্টা বিবৃতিতে জানায়, 'সরকারের এই পদক্ষেপ অবৈধ। আমরা হার্ভার্ডে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও গবেষকদের উপস্থিতি বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিশ্বের ১৪০টিরও বেশি দেশ থেকে আসা এসব মানুষ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও পুরো জাতিকে অসামান্যভাবে সমৃদ্ধ করেন।'
হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি।
এই সিদ্ধান্তকে ট্রাম্প প্রশাসনের হার্ভার্ড-বিরোধী অভিযানের একটি বড় ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই ম্যাসাচুসেটসের এই আইভি লিগ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ‘বামপন্থী’ বা ‘মার্কসবাদী’ আদর্শ ছড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করে আসছেন।
গত মাসে হার্ভার্ড একটি ২.২ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল তহবিল বরাদ্দ স্থগিতাদেশের মুখে পড়ে, কারণ তারা হোয়াইট হাউসের দেওয়া একগুচ্ছ শর্ত প্রত্যাখ্যান করে।
এসব শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কাঠামো, নিয়োগ নীতি ও ভর্তি পদ্ধতিতে পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছিল, যার মধ্যে ছিল বৈচিত্র্য সংক্রান্ত দপ্তরগুলো বন্ধ করা এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের স্ক্রিনিংয়ে অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করা।
হার্ভার্ড পরে এই বরাদ্দ স্থগিতাদেশ ঠেকাতে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করে।
আগামী সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ায় দেশে অস্থিতিশীলতা বাড়ছে উল্লেখ করে বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যদি অপমানজনকভাবে পদত্যাগ করেন—তাহলে তার দল ব্যথিত হবে।
শুক্রবার (২৩ মে) একটি প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ফারুক বলেন, ‘দেশে অস্থিরতার ঢেউ বইছে বলে মনে হচ্ছে। এই অস্থিরতার পিছনে মূলত দায়ী কারা? নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা কারা করছেন? আপনার (ড. ইউনূসের) মতো একজন সম্মানিত ব্যক্তির কাছ থেকে আমরা এই বিষয়গুলো জানতে চাই।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ফারুক বলেন, সরকার যদি একটি স্পষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ দিত—তাহলে শেখ হাসিনার আমলে যারা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছেন এবং অসংখ্য মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন—তারা গঠনমূলকভাবে জড়িত হয়ে নির্বাচনমুখী হতেন।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু আপনি (ড. ইউনূস) এখনও কোনো রোডম্যাপ দেননি। যদি এই অস্থিরতা আপনার তৈরি হয়—তাহলে জেনে রাখুন, বিএনপি কখনই এর দায় নেবে না।’
সরকারকে অবিলম্বে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আহ্বান জানান সংসদের সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ফারুক।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘জাতীয় নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করুন—দেশের জনগণের পক্ষে দাঁড়ান’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘অপরাজেয় বাংলাদেশ’।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সম্ভাব্য পদত্যাগ সম্পর্কে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে ফারুক বলেন, ‘যদি আপনার মতো একজন সম্মানিত ব্যক্তিত্বকে অপমানজনকভাবে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়—তাহলে তা আমাদের ক্ষতি হবে।’
তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করে যেভাবে বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে, ঠিক সেভাবে আপনার নামও লেখা থাকুক। দিনের আলোতে ভোটদানের সুযোগ দিয়ে আমাদের ভোটাধিকার রক্ষা করলে... এমন উত্তরাধিকার ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
বিএনপি নেতা প্রধান উপদেষ্টাকে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক উত্তরণ নিশ্চিত করে একটি উদাহরণ সৃষ্টির আহ্বান জানান, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জাতির একজন গ্রহণযোগ্য ও সম্মানিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে তাকে নিয়ে গর্ব করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমি আপনাকে আন্তরিকভাবে অনুরোধ করছি, আপনি অবিলম্বে আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া, মাহফুজ আলম এবং খলিলুর রহমান—এই তিন ব্যক্তিকে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করার জন্য অনুরোধ করে চিঠি দেন। অন্যথায়, তাদের অপসারণের দায় আপনার উপর বর্তাবে।’
ফারুক বলেন, সংস্কার অবশ্যই করা উচিত, কিন্তু এমনভাবে নয়—যাতে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি করিডোর তৈরি হয় বা চট্টগ্রাম বন্দর অন্যদের হাতে চলে যায়।
ষড়যন্ত্রকারীদের নির্বাচন বিলম্বিত করা ও অধ্যাপক ইউনূসের সরকারকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিতে পারে—এমন যেকোনা সংস্কারের বিষয়ে সতর্কও করেন তিনি।
এই অস্থিতিশীলতা দূর করতে অধ্যাপক ইউনূসকে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবি জানান ফারুক।
মন্তব্য