মসজিদের মাইকে গ্রামে ডাকাত পড়ার গুজব ছড়িয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ক্যাম্পাস সংলগ্ন গেরুয়ার একদল স্থানীয় লোক। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকের এ হামলার এক পর্যায়ে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় শিক্ষার্থীরা। রাত ১০টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলে সংঘর্ষ। এরপর র্যাব-পুলিশ গেরুয়া গ্রামে প্রবেশ করলে থমথমে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
‘ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে’ এ হামলা ও সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিক্ষার্থী। আছেন শিক্ষক, পুলিশ কর্মকর্তা এবং গ্রামটির বাসিন্দারাও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বলছেন, গুজব রটিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর গ্রামবাসী হামলা চালিয়েছে। পুলিশ আসতে দেরি না করলে ঘটনা এতো গভীর হতো না।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বন্ধ থাকায় গেরুয়াসহ আশপাশের গ্রামে ঘর ভাড়া করে থাকেন অন্তত ৫০০ শিক্ষার্থী। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে গেরুয়া গ্রামে তাদের একটি ভাড়া বাসায় হামলা শুরু হয়। এ সময় অন্যান্য ভাড়া বাসায় থাকা শিক্ষার্থীরা নিজেদের অবরুদ্ধ করে ফেলেন।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, চার দিন আগে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটির জের ধরে এ হামলা চালানো হয়েছে। গেরুয়া গ্রামের স্থানীয় মসজিদে ঘোষণা দিয়ে বলা হয় ‘গ্রামে ডাকাত পড়েছে, গ্রামের মা বোনের ইজ্জত নষ্ট করেছে।’ এর কিছু সময় পরই লাঠিসোঁটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে গ্রামবাসী। তারা শিক্ষার্থীদের পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করেছে।
রাত ১০টার দিকে আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফজলুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। গ্রামবাসী ও শিক্ষার্থী দুই পক্ষ দুই পাশে অবস্থান নিয়ে আছে। তাদের মধ্যে থেমে থেমে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শতাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা রয়েছে। গেরুয়া গ্রামে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আর কোনো শিক্ষার্থী অবরুদ্ধ নেই।’
তবে গেরুয়া গ্রামে বেশ কিছু শিক্ষার্থী আটকা পড়ে আছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শামসুল আলম সীমান্ত নামে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের এক শিক্ষার্থী আমরাই জাহাঙ্গীরনগর নামের ফেসবুক গ্রুপে রাত ১১টার দিকে এক পোস্টে বলেন, ‘গেরুয়া মাদ্রাসা মসজিদের পাশের বাসা এখানে আটকা পড়ে আছি। আমার রুমে অলরেডি স্থানীয় লোকজন একবার অ্যাটাক দিয়েছে। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছি। বাইরে অনেক লোক। কী করব বুঝতেছি না।’
কাছাকাছি সময়ে একই গ্রুপে সানিমুল হাসান নামের এক শিক্ষার্থী এক পোস্টে বলেন, ‘গেরুয়ায় বাহির থেকে গুণ্ডা ভাড়া করে আনা হইছে। ক্যাম্পাসের স্টুডেন্টদের ওপর গুলিবর্ষণ হচ্ছে। খুবই ভয়ংকর অবস্থা। জাবি প্রশাসন কই।’
কার্তিক আরিয়ান নামের আরেক শিক্ষার্থী এক পোস্টে বলেন, ‘গেরুয়াতে এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে লোডশেডিং। ভাই সবাই সাহায্যে এগিয়ে আসুন।’
রাত সাড়ে ১২টার দিকে ফরহাদ ইবনে আওয়াল নামে এক শিক্ষার্থী তার পাস্টে বলেন, ‘প্রশাসন কতটা কেয়ারলেস হলে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার ৬ ঘণ্টা পার হলেও পুলিশের সাহায্যে আটকেপড়া শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে পারে না! জাস্ট ইমাজিন যারা গেরুয়ায় বিভিন্ন মেসে আছে তারা কতটা অসহায় ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে রাতটা পার করবে। আর যদি গেরুয়ার সন্ত্রাসীরা গভীর রাতে ওদের হামলা করে তখন সেটার কী জবাব দিবেন উনারা?’
হামলার খবর জানিয়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে আশরাফুল আলম নামের এক শিক্ষার্থী তার ফেসবুকে পেজে লেখেন, ‘গেরুয়ায় ছাত্র-এলাকাবাসীর প্রচণ্ড মারামারি হচ্ছে। আমরা খুব হেল্পলেস আছি। আমাদের বাঁচান।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান রাত ১০টার দিকে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গ্রামবাসীর হামলার পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে ছাত্রদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। এখনও থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছে। গ্রামবাসীর হামলায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।’
এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে প্রক্টর বলেছিলেন, ‘আমাদের বেশ কিছু শিক্ষার্থী গেরুয়া গ্রামে আটকা পড়েছেন। তাদের উদ্ধারে চেষ্টা চলছে।’
রাত সাড়ে ১০টার দিকে এসএম রাশিদুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থীকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে উদ্ধার করা হয়।
রাত সাড়ে ১১টায় আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম কামরুজ্জামান জামান বলেন, ‘পরিস্থিতি আপাতত শান্ত রয়েছে। আমরা ঘটনাস্থলে রয়েছি।’
রাত সাড়ে ১০টার দিকে উদ্ধার হওয়া রাশিদুল ভুগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৭তম আবর্তনের শিক্ষার্থী। নিউজবাংলাকে তিনি তার অবরুদ্ধ অবস্থার কথা জানিয়েছেন।
রাশিদুল বলেন, ‘বিকাল থেকেই রুমে ছিলাম। ফেসবুকে জানতে পারি ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে এই সমস্যাটা লাগে। পরবর্তীতে আমাদের ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে জানতে পারি, শিক্ষার্থীদের মেসে গিয়ে গিয়ে প্রত্যেকের দরজায় গিয়ে শিক্ষার্থীদের আক্রমণ করতে যাচ্ছে এবং অনেককে আক্রমণ করেছে। আমি যে মেসে থাকি সেই মেসেরও পেছন দিয়ে কিছু লোক গিয়েছিল।
‘তারা বলছিল, সবকিছু ভেঙে ফেলব, সবাইরে মেরে ফেলব। তখন নিজেকে বাইরে থেকে আরেকজনের মাধ্যমে তালাবদ্ধ করে রেখেছিলাম আমার রুমটাকে। লাইট বন্ধ করে রেখেছিলাম, যাতে কেউ বুঝতে না পারে যে আমি রুমে আছি। এমনকি সেই রুমে কেউ আছে। সেই সন্ধ্যা থেকে প্রায় ৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলাম। পরবর্তীতে এক সিনিয়র আমাকে সেফ জায়গায় আনেন।’
তিনি বলেন, ‘এলাকাবাসী মাইকের মাধ্যমে একটি গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করে। তারা বলে যে, ডাকাত পড়েছে। আপনাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে বের হন এবং আমাদের মা-বোনের ইজ্জত রক্ষা করতে হবে। মসজিদকে ব্যবহার করে অথবা মসজিদের মাইককে ব্যবহার করে গুজবের যে রীতি বাংলাদেশে আছে সেই রীতি আজকে আবারও ব্যবহার করা হলো।’
সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান রাত সাড়ে ১১টার দিকে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এখন স্পটেই দাঁড়িয়ে আছি। প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গে এখনো বসার সুযোগ হয়নি। গ্রামবাসী মাইকে ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ডাকাত-চাঁদাবাজ বলে আশপাশের তিন-চার গ্রামের লোকজন নিয়ে আমার শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে।
‘আমার অনেক শিক্ষার্থী আহত। আমরা চেষ্টা করছি, আমাদের শিক্ষার্থীদের যাতে সাপোর্ট দিতে পারি; গ্রামবাসী যাতে আমাদের শিক্ষার্থীদের আক্রমণ করতে না পারে। সে জন্য সন্ধ্যা থেকে আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি। আমরা সাধ্যমত আমাদের প্রক্টরিয়াল টিম নিয়ে কাজ করছি।’
এ সময় তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পুলিশকে আমরা যথা সময়ে জানিয়েছি। আরও দ্রুত যদি পুলিশ আসত হয়ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটা এত বেশি গভীর হতো না।
‘এখন পরিস্থিতি যদি আমরা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি, আমরা যদি ম্যানেজ করতে পারি তারপর প্রশাসনের সঙ্গে বসব। তারপর প্রশাসনিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
মামলার বিষয়ে কি পদক্ষেপ নিবেন জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, ‘এই ব্যাপারে আমি এখানে সিদ্ধান্ত দিতে পারব না। আমাদের শিক্ষার্থীদের যেহেতু ক্ষতি হয়েছে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব তাদের বিষয়টি দেখতে।’
‘ঘটনার শুরু যেভাবে’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর হলের ৪৪তম আবর্তনের শিক্ষার্থী ইমরুল কায়েস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গেরুয়াতে সম্প্রতি একটা ক্রিকেট টুর্নামেন্ট শুরু হয়। সেখানে স্থানীয় ও ক্যাম্পাসের ছেলেদের নিয়ে দল গঠন করা হয়েছিল। আমি নিজেও একটি দলের প্রতিনিধিত্ব করেছি। আমার হলের আর এক জন ছেলের দলের সঙ্গে গত সোমবার পাশের এলাকা জামসিং এর খেলা ছিল।
‘খেলা চলার সময়ে জামসিং থেকে আসা ছেলেরা মারামারি শুরু করে। তখন আমাদের হলের ৪৪তম আবর্তনের এলেক্স, পিয়াস ও শহীদ রফিক জব্বার হলের ৪৫তম আবর্তনের জুবায়েরসহ খেলার আয়োজক যারা ছিল তারা ওই মারামারি মেটাতে যায়। তখন জামসিংয়ের ছেলেরা আমাদের ছেলেদের মারতে থাকে। তবে সেই মুহূর্তে কাউকে আমরা আটক করতে পারিনি।’
কায়েস আরও বলেন, ‘এর মধ্যে কয়েক দফা এই বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে মিটমাট করার কথা বলা হয়। জামসিংয়ের স্থানীয় কাউন্সিলরও আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা মিটমাট করার কোনো চেষ্টা না করে উল্টো আমাদের হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিল।
‘এরপরও আজ বিকেল ৪টার দিকে গেরুয়া বসবাসরত কয়েকজন শিক্ষার্থী আয়োজক কমিটির সদস্যদের খুঁজতে থাকে। এক পর্যায়ে আয়োজক কমিটির নজরুল নামে একজনকে পাওয়া গেলে তার কাছে মিটমাট না হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হয়। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। এরপর নজরুল গেরুয়া সংলগ্ন মাদ্রাসা মসজিদ থেকে মাইকিং করতে বলে।’
কায়েস বলেন, ‘ওখানে ওরা অনেকে ছিল। শুরুতে আমাদের ছেলেদের ধাওয়া দিয়ে এলেক্স, পিয়াস ও জুবায়েরকে মারা হয়। জুবায়েরের মাথা ফেটে গেছে। এরপর ওরা কোনোভাবে গেরুয়ায় ভাড়া বাসায় আশ্রয় নিলে সেখানে গ্রামবাসী লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। প্রায় এক ঘণ্টা আহত অবস্থায় থাকার পর আমাদের ছেলেদের উদ্ধার করে মেডিক্যালে পাঠানো হয়।’
বুয়েট শিক্ষার্থী শহীদ আবরার ফাহাদ স্মৃতি স্মরণে বুয়েট সংলগ্ন পলাশী গোলচত্বরে আগ্রাসন বিরোধী আট স্তম্ভ আজ উদ্বোধন করা হয়েছে।
ইসলামিক ওয়ার্ল্ড এডুকেশনাল, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন (আইসেস্কো)-এর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. রাহিল কামার আজ ৫ অক্টোবর ২০২৫ রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। এসময় একই সংস্থার ফাহমিদা ফাইজা তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
সাক্ষাৎকালে তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইসেস্কোর মধ্যে যৌথ সহযোগিতামূলক শিক্ষা ও গবেষণা প্রকল্প গ্রহণের সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘আইসেস্কো চেয়ার’ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে তাঁরা ফলপ্রসূ আলোচনা করেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়নে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন খ্যাতিমান সংস্থার সঙ্গে অংশীদারিত্ব ও নেটওয়ার্কিং গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ সহযোগিতামূলক শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করায় তিনি আইসেস্কো প্রতিনিধিদলের সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের ৫০০ টাকা বাড়ি ভাড়া বাড়ার প্রজ্ঞাপনকে প্রত্যাখ্যান করেছে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোট। একই সঙ্গে ২০ শতাংশ বাড়িভাড়ার দাবিতে আগামী ১২ অক্টোবর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।
জানা যায়, গতকাল রোববার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া বাড়ানোর পরিপত্র ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রবিধি শাখার উপসচিব মোসা. শরীফুন্নেসা স্বাক্ষরিত পরিপত্রে বলা হয়, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা শর্ত পালন সাপেক্ষে ১ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হলো।
এ নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোট সভাপতি এবং বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারী ফোরামের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী।
নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বাড়ার একটি প্রজ্ঞাপন ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা এই প্রজ্ঞাপণের ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি যে প্রজ্ঞাপনটি সঠিক। আমরা ৫০০ টাকা বাড়িভাড়া বাড়ার প্রজ্ঞাপনকে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের পক্ষ থেকে প্রত্যাখ্যান করছি।
তিনি আরো লিখেছেন, ১৩ আগস্ট এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের নেতাদের সঙ্গে শিক্ষা উপদেষ্টার নেতৃত্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া, ১ হাজার ৫০০ টাকা মেডিক্যাল ভাতা এবং কর্মচারীদের জন্য ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতার প্রজ্ঞাপণের দাবিতে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১২ অক্টোবর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাতাগার অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।
তিনি উল্লেখ করেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষক কর্মচারীদের ২০ শতাংশ অনুযায়ী বাড়িভাড়ার ফাইল অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব সাইেয়দ এ জেড মোরশেদ আলী।
এর আগে এমপিওভুক্ত শিক্ষায় বৈষম্য নিরসন, সরকারি নিয়মে বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, শতভাগ উৎসব ভাতা ও জাতীয়করণের দাবিতে গত ১৩ আগস্ট জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রায় এক লাখ শিক্ষক-কর্মচারী মহাসমাবেশ করেন।
ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, মাদ্রাসা শিক্ষায় এই উপমহাদেশে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অবদান উল্লেখযোগ্য। আমি একজন মাদ্রাসার ছাত্র হিসেবে গর্ববোধ করি।
বুধবার রাজধানীর বকশিবাজারে সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশসহ এই উপমহাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষার ঐতিহ্য শত বছরের পুরনো। যুগে যুগে এই শিক্ষাব্যবস্থা অনেক আধুনিকায়ন হয়েছে। সুশিক্ষার মাধ্যমে এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে।
আ ফ ম খালিদ হোসেন আরো বলেন, বাংলাদেশে আলিয়া মাদ্রাসার মতো আড়াইশো বছরের ঐতিহ্য সম্ভবত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। আলিয়া মাদ্রাসা থেকে সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুর রহমান বিশ্বাসসহ বহু আলেম-ওলামা বেরিয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, এই উপমহাদেশে, মাদ্রাসা শিক্ষা না থাকলে ইসলামের ঐতিহ্য আদর্শ তমুদ্দিন কোন কিছুই বজায় রাখা সম্ভব হতো না। তাই সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় মাদ্রাসা শিক্ষার বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, মাদ্রাসা থেকে শিক্ষা নিয়ে সমাজে ধর্মীয় মূল্যবোধের বিকাশ ঘটাতে হবে মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে। এই শিক্ষাকে ছোট করে দেখলে চলবে না। এর ঐতিহ্য শত বছরের।
উপদেষ্টা আরো বলেন, মাদ্রাসা হল আলেম-ওলামা তৈরীর কারখানা। বর্তমান সরকার মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়নের পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষাকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
উপদেষ্টা বলেন, মাদ্রাসা ছাত্রদেরকে প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করে বাস্তব জীবনে নিজেদের প্রতিভার বিকাশ করাতে হবে। তবেই জীবনে সফলতা সম্ভব।
তিনি বলেন ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার বর্তমান শিক্ষার্থীদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।সূত্র : বাসস
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা হারানোর পর এবার প্রধান ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদেও নিয়োগের ক্ষমতাও হারাচ্ছে পরিচালনা পর্ষদ বা ‘গভর্নিং বডি’ ও ‘ম্যানেজিং কমিটি’।
এসব পদে সরকারের তদারকিতে নিয়োগ সুপারিশ প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হবে। কোনো প্রক্রিয়ায় বা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে তা নির্ধারণে কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের নিয়ে আয়োজিত এক কর্মশালায় এ তথ্য জানান বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ-এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও সহকারী প্রধান পদে নিয়োগ সুপারিশ প্রক্রিয়া নিয়ে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘সিদ্ধান্ত একটা হয়েছে, আগে প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ পদগুলোতে ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডি নিয়োগ দিত, এখন এ পদগুলোতে সরকার নিয়োগ দেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটা কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি এটা নির্ধারণ করবে, এ পদগুলোতে কোন আদলে নিয়োগ দেবে, কারা করবে, এনটিআরসিএ করবে না, অন্য কেউ করবে কোনটাই এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’
এ কমিটিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, এনটিআরসিএ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা দায়িত্ব পালন করছেন বলেও তুলে ধরেন তিনি।
আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এ সব পদে নিয়োগে কোন নীতিমালা বা নিয়ম অনুসরণ করা হবে তা এ কমিটি নির্ধারণ করবে।’
আপাতত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশ পর্যায়ের শিক্ষক ও প্রভাষক পদে প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশ করার দায়িত্ব এনটিআরসিএ এর হাতে থাকলেও প্রতিষ্ঠান প্রধান, সহকারী প্রধান ও কর্মচারী পদে নিয়োগের ক্ষমতা ছিল পরিচালনা পর্ষদের হাতে।
গত সোমবার প্রকাশিত এক পরিপত্রে বেসরকারি স্কুল ও কলেজের কর্মচারী পদে নিয়োগ সুপারিশ কমিটির সভাপতি পদ থেকে ‘গভর্নিং বডি’ ও ‘ম্যানেজিং কমিটি’ সরিয়ে ডিসিদের এ দায়িত্ব দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ পর্যায়ের নিয়োগ সুপারিশ প্রক্রিয়া নিয়ে জানাতে এ কর্মশালা আয়োজন করে এনটিআরসিএ।
কর্মশালায় এনটিআরসিএ সদস্য এরাদুল হক, মুহম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী, পরিচালক তাসনিম জেবিন বিনতে শেখ, সংস্থাটির সচিব এ এম এম রিজওয়ানুল হক ও সংবাদকর্মীরা অংশ নেন।
ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ডিবেট ক্লাব আয়োজিত “জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০২৫”-এর গ্র্যান্ড ফিনালে ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান আজ সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজাকুল হায়দার হলে অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. ফরিদ আহমদ সোবহানীর সভাপতিত্বে, প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আবুল কাসেম হায়দার।
এছাড়া বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর মো. শামসুল হুদা, রেজিস্ট্রার ড. আবুল বাশার খান, ডিবেট ক্লাবের কো-অর্ডিনেট ও আইন বিভাগের লেকচারার মেহেরবা সাবরিন, এবং ক্লাবের সভাপতি আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সাবিত ইবনে মাহমুদ। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দসহ অসংখ্য শিক্ষার্থীর উপস্থিতি অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে তোলে।
৩২ টি কলেজের অংশগ্রহণে ইন্টার-কলেজ প্রতিযোগিতার ফাইনাল-এ সরকারি বাংলা কলেজ ও সরকারি বিজ্ঞান কলেজ মুখোমুখি হয়। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে সরকারি বিজ্ঞান কলেজ বিজয়ী হয় এবং সরকারি বাংলা কলেজ রানার আপের গৌরব অর্জন করে। এ পর্বে সেরা বিতার্কিক নির্বাচিত হন সরকারি বাংলা কলেজের শিক্ষার্থী ইমন আহমেদ।
অন্যদিকে, ২৮ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণে ইন্টার-ইউনিভার্সিটি প্রতিযোগিতার ফাইনাল-এ নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) এর মধ্যে লড়াই হয়। এই প্রতিযোগিতায় বুটেক্স বিজয়ী হয় এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি রানার আপ হয়। এ পর্বের সেরা বিতার্কিক নির্বাচিত হন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আলভি সালমান।
আয়োজকরা জানান, এ প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের তরুণ প্রজন্মকে যৌক্তিকতা, মুক্তচিন্তা ও নেতৃত্বের চর্চায় অনুপ্রাণিত করা।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এবং শিল্পখাতের অংশীজনদের যৌথ সহযোগিতায় কোরিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (কোইকা) নতুন পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ চালু করবে।
বাংলাদেশের তরুণদের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করাই বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন উদ্যোগের লক্ষ্য।
এ লক্ষ্যে রোববার ঢাকায় এক হোটেলে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া। সরকার ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা এবং শিল্পখাতের প্রতিনিধিরাও অংশ নেন।
কোইকা'র পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ অংশীদারিত্ব বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে। শিল্পখাতের অভিজ্ঞতা এবং বিএমইটি-এর নেটওয়ার্ককে কাজে লাগিয়ে এ কর্মসূচি প্রাসঙ্গিক ও ফলপ্রসূ কারিগরি প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করবে।
মন্তব্য