করোনায় বন্ধ হয়ে যাওয়া রাজধানীর ‘মুগদা আদর্শ বিদ্যালয়’-এর একটি কক্ষ এখন মুদি দোকান। চাল, ডাল, তেল, লবণ থেকে শুরু করে মুখরোচক খাবার বিক্রি করে আয় করেন মারুফ হোসেন। তবে তিনি খুবই ‘দুঃখিত’।
কারণ?
কিন্ডারগার্টেন স্কুলটির মালিক ও প্রধান শিক্ষক ছিলেন মারুফ। করোনাকাল তাকে শিক্ষক থেকে বানিয়ে দিয়েছে মুদির দোকানি।
১১ বছর শিক্ষকতা করেছেন মারুফ। মানুষ সম্মান দিত। এখন যে কাজটা করেন, সেটাকে ছোট মনে করেন না। কারণ, তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে এর আয়। তবু মনের কোণে দুঃখ।
শিক্ষকতা তার ঘটনাচক্রে না, আবেগ থেকে নেয়া পেশা। এ জন্য বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের ‘উচ্চ বেতনের’ চাকরিও ছেড়েছিলেন।
সেটি ২০০৯ সালের কথা। শিশুদের পড়াতে ভালো লাগে, তাই ব্যাংকার পরিচয় ঘুঁচিয়ে চালু করেন স্কুল। কিন্ডারগার্টেনটি তার আবেগের পাশাপাশি আয়েরও একমাত্র উৎস হয়ে উঠে।
ভালোই চলছিল। তবে করোনার আঘাতে ঘটে ছন্দপতন। গত মার্চে বন্ধ হয়ে যায় স্কুল। আয় বন্ধ, সঞ্চয়ও শেষ। ঘর ভাড়া বাকি পড়ে সাত মাস।
শিক্ষক মানুষ, হাত পাততে পারেন না। কিন্তু সংসার চলে না, কী করবেন ভেবে নিজের স্কুলের একটি কক্ষ ভেঙে সেখানে তোলেন চাল, ডাল, তেল, নুন।
বাচ্চারা বই খাতা নিয়ে আসে না, খাবার কিনতে তো আসবে। তাতে অন্তত মিটবে চোখের তৃষ্ণা।
মারুফ হোসেন নিজের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘কষ্ট হয় ভাই। জমানো টাকা তিন মাসে শেষ। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি ভাড়া দিয়েছি। স্কুলের ভাড়া দিয়েছি। নিরুপায় হয়ে বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা ধার করে দোকানটা দিলাম।’
এমনই গল্প সুরভী সুলতানার। তিনিও একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। ১০ বছর পড়িয়েছেন মুগদারই ‘স্বরলিপি উচ্চ বিদ্যালয়ে’।
করোনা মহামারি শিক্ষিকার পরিচয় ঘুঁচিয়ে তাকে মশলা বিক্রেতা বানিয়েছে।
স্কুল বন্ধ হওয়ায় আয় বন্ধ হওয়া ১০টি স্কুলের শিক্ষকরা গড়ে তুলেছেন একটি অনলাইন শপ। ফেইসবুকে ‘মাস্টার গ্রুপ’ নামে পেজ খুলে পণ্য বিক্রি করে কোনো রকমে চলছেন তারা।
এই পেজে হলুদ, মরিচ, জিরা, সরিষার তেল, কালোজিরা, ধনিয়ার মতো নিত্যপণ্য বিক্রি হয়।
সুরভী নিউজবাংলাকে জানান, তার স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা ছিল ৩০ জন। তাদের কেউ এখন কোথাও অল্প বেতনের চাকরি করছেন। কেউ বা অনলাইনে কাপড় বিক্রি করছেন।
করোনা মহামারি যাদেরকে সবচেয়ে বেশি বিপাকে ফেলেছে তাদের মধ্যে অন্যতম বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীরা। এমনিতেই এদের বেতন কম। আয় হতো মূলত প্রাইভেট পড়িয়ে। তবে স্কুল বন্ধ বলে অভিভাবকরা শিক্ষক রাখার তাগিদও অনুভব করছেন না।
এই অবস্থায় প্রায় ৪০ হাজার স্কুলের ১০ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী অনেকটাই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাদের জন্য বিশেষ কোনো সহায়তার প্রকল্পও নেই।
একই অবস্থায় দিন কাটছে ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের। সরকারি হিসাবে সারাদেশে চার হাজার ৩১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২১ হাজার শিক্ষক থাকলেও বাস্তবে মাদ্রাসার সংখ্যা অনেক বেশি। সরকারি কোনো অনুদান না পাওয়া এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের পরিস্থিতিও কিন্ডার গার্টেনের শিক্ষকদের মতো।
বাসা ভাড়া দিতে না পেরে স্কুলের আসবাবপত্র, এমনকি স্কুল বিক্রির বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি ফেসবুকে।
রাজধানীর উত্তর মুগদাপাড়া ন্যাশনাল মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাত মাস শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন দিতে পারিনি। অনেক শিক্ষক ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। যারা রয়েছেন, তারা নানাভাবে জীবিকা নির্বাহ করছে।’
‘ছাত্রদের বেতন বন্ধ, বাসাভাড়া দেয়া হয়নি। বাড়িওলারা বাসা ছেড়ে দিতে বলেছেন। এখন কী করব জানি না। স্কুল বন্ধ করে দিলে ছাত্র-ছাত্রীদেরেই কী হবে? তারা কোথায় গিয়ে ভর্তি হবে?’- দুশ্চিন্তায় জাহিদুল।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশন মহাসচিব মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার উভয় সংকটে আছি। একদিকে বাড়ি ভাড়ার চাপ অন্যদিকে শিক্ষকদের মানবেতর জীবন। বাড়ি ভাড়া দিতে না পেরে ঢাকা ক্যাডেট স্কুলের মালিক আসবাবপত্র বিক্রি করে গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন।’
সরকারের সহযোগিতা না পেলে ৭০ শতাংশ কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন এই শিক্ষক নেতা।
বাংলাদেশ নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, ‘নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানে এমনিতেই শিক্ষকরা তেমন বেতন পান না। টিউশনি করে তারা জীবিকা নির্বাহ করে। এখন তাদের কেউ সবজি বিক্রতা, কেউ কৃষি, কেউ ফেরিওয়ারা হয়েছেন।
‘কেউ কেউ মাঝে মাঝে ফোন করে কান্নাকাটি করেন। এই পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে প্রণোদনা চেয়েছিলাম। তবে এ বিষয়ে কোনো সাড়া মেলেনি।’
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও বিপাকে। সারাদেশে ১০৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন কমে গেছে।
কিছু বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাড়া বাকিগুলোর বেতন অনিয়মিত হয়ে গেছে। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বেতন অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে।
বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চলে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি দিয়ে। কিন্তু করোনার কারণে সেই ফি এখনও পাওয়া যায়নি। ফলে তারা বেতন দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছে।’
খাদি ও রসমলাই। দুটো নাম দেশ ও দেশের বাইরে কুমিল্লার প্রতিনিধিত্ব করে। খাদি ও রসমালাইয়ের সুনাম দেশ ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে বিদেশেও।
খাদি কাপড়ের পোশাক প্রক্রিয়া করে রপ্তানি করা হয়। খাদির কদর এখনও রয়েছে দেশ-বিদেশে। অন্যদিকে নানা উৎসবে বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসীদের জন্য দেশে থাকা স্বজনরা রসমালাই পাঠিয়ে থাকেন। দীর্ঘ বছরের এক পরম্পরা বেয়ে চলছে এ দুই পণ্য।
বাংলাদেশের ১৭টি পণ্য জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন (জিআই) বা ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। তালিকায় এখনও অন্তর্ভুক্ত হয়নি কুমিল্লার খাদি ও রসমালাইয়ের নাম। সর্বশেষ স্বীকৃতি পায় নাটোরের কাঁচাগোল্লা।
তালিকায় খাদি ও রসমালাইয়ের নাম না থাকায় অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিলে এ দুটি পণ্য জিআইয়ের স্বীকৃতি পেতে পারে বলে তাদের অভিমত।
পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর থেকে ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর প্রথম পণ্য হিসেবে জামদানি জিআইয়ের স্বীকৃতি পায়। ২০১৭ সালের ১৭ আগস্ট ইলিশ, ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি খিরসাপাত আম, ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর মসলিন, ২০২১ সালের ২৬ এপ্রিল রাজশাহী সিল্ক, শতরঞ্জি, দিনাজপুরের কাটারিভোগ এবং বিজয়পুরের সাদা মাটি, ২০২২ সালের ২৪ এপ্রিল বাগদা চিংড়ি, রাজশাহীর ফজলি আম, ২০২৩ সালের ৫ জুলাই বগুড়ার দই, শেরপুরের তুলসীমালা ধান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আম এবং ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট নাটোরের কাঁচাগোল্লা জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।
রসমালাই ও খাদির উৎপত্তি কুমিল্লায় কি না, তা নিয়ে কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করেন, তবে ইতিহাসবেত্তাদের অনেকে মনে করেন, খাদি ও রসমালাই কুমিল্লার।
কুমিল্লার ইতিহাস-ঐতিহ্য গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, ‘খাদি ও রসমালাই কুমিল্লার মৌলিক পণ্য। এটা নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই। ১৯২৩ সালে স্বদেশি আন্দোলনের সময় মহাত্মা গান্ধী বিদেশি পণ্য বর্জনের ডাক দেন। ওই সময় ভারতীয় উপমহাদেশে মোটা কাপড় পরিধান ও মোটা ভাত খাওয়ার আওয়াজ ওঠে। সে সময় খাদি কাপড় বানানোর প্রতিযোগিতা জোরদার হয়।
‘ওই সময় ভারতেও খাদি কাপড় তৈরির হিড়িক পড়ে। কুমিল্লায় খাদি কাপড় তৈরির ইতিহাস কমপক্ষে এক হাজার বছরের পুরোনো। পূর্বে কুমিল্লার মুরাদনগর, চান্দিনা, দেবিদ্বার ও বুড়িচংয়ের ময়নামতি এলাকায় খাদি কাপড় বানানো হতো। রসমালাইও কুমিল্লার নিজস্ব পণ্য। ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রসমালাই তৈরি করেন কুমিল্লার মানুষ।’
তিনি আরও বলেন, ‘জিআই পণ্য নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের এবং কুমিল্লার জেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে আরও আন্তরিক হতে হবে। তাহলে কুমিল্লার খাদি ও রসমালাই জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেতে বেগ পেতে হবে না।’
কুমিল্লার সন্তান বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ম্যানেজার বদরুল হুদা জেনু বলেন, ‘কালের বিবর্তনে ভারতে খাদি কাপড় তৈরিতে বেশ বৈচিত্র্য এসেছে। তারা কচুরিপানা, বাঁশ, তুলা ছাড়াও আরও নানা কাঁচা পণ্য দিয়ে খাদি কাপড় বানান। তাদের হ্যান্ডলুম মেশিনগুলোও অত্যাধুনিক। বিপরীতে কুমিল্লায় অল্প কয়েকটি পরিবার শুধু তুলা দিয়ে বর্তমানে খাদি কাপড় তৈরি করছেন। কুমিল্লায় খাদি কাপড় তৈরিতে আধুনিকতার ছোঁয়া নেই।
‘কোনো একটি পণ্য জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেতে কিছু ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার দরকার হয়, যেমন: ঐতিহাসিক ব্যাকগ্রাউন্ড, ইকোনমিক্যাল ভ্যালু ইত্যাদি, কিন্তু কুমিল্লার খাদি ও রসমালাইয়ের ক্ষেত্রে ওই প্রক্রিয়া অনুসরণ করার মানসিকতা কারও মধ্যে নেই। কোনো পণ্যকে ব্র্যান্ডিং করার প্রকল্প চালু হলে জেলা প্রশাসকরা নড়েচড়ে বসেন। অন্যথায় তারা এসব নিয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করেন না। কুমিল্লার খাদি ও রসমালাইয়ের জিআই স্বীকৃতি পেতে খাদিকে করতে হবে আধুনিক। রসমালাইয়ের জন্য দরকার জোর প্রচেষ্টা।’
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক শান্তিরঞ্জন ভৌমিক বলেন, ‘মানুষের রুচিতে পরিবর্তন এসেছে। কুমিল্লার খাদিকে সময়োপযোগী করার প্রক্রিয়া হাতে নিতে হবে। কুমিল্লার খাদি ও রসমালাইয়ের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি না পাওয়া দুঃখজনক।’
জানতে চাইলে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, ‘রসমালাইয়ের জিআই স্বীকৃতির জন্য আমরা আবেদন করেছি। এখানে যেসব আনুষ্ঠানিকতা পালনের দরকার, তা হচ্ছে।
‘আমাদের আশা রসমালাই জিআই স্বীকৃতি পাবে। রসমালাইয়ের পর আমরা খাদি নিয়েও কাজ করব। আগে রসমালাই স্বীকৃতি পেলে খাদি নিয়ে কাজ করাটাও সহজ হবে।’
আরও পড়ুন:২০২০ সালের শেষ প্রান্তিক। দেশজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারির থাবা। বেসরকারি অন্য অনেক খাতের মতো সংবাদমাধ্যমেও চরম অনিশ্চয়তা আর উদ্বেগ। ঠিক এমন সময়ে ‘খবরের সব দিক, সব দিকের খবর’ স্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে আবির্ভাব হয় নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
ওই বছরের পয়লা অক্টোবর যাত্রা শুরু করা সংবাদমাধ্যমটি আজ পা রাখল চতুর্থ বছরে। দিবসের হিসাবে হাজার দিনের মাইলফলক অতিক্রম করেছে নিউজবাংলা। মহাকালের পরিক্রমায় একে অতি দীর্ঘকাল বলা না গেলেও সংবাদমাধ্যমের বাস্তবতায় নিজেকে জানান দেয়ার জন্য যথেষ্ট সময় হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। সেই সময়ে অসীম চ্যালেঞ্জের মধ্যে অমিত সম্ভাবনার পথে চলার চেষ্টা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
স্লোগানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা শুরু থেকেই কোনো খবরের আদ্যোপান্ত জানানোর চেষ্টা করেছি পাঠকদের। সংবাদের পূর্ণাঙ্গ একটি গল্প বলেই আমরা দায়িত্ব শেষ করিনি; সেই সংবাদে নতুন মাত্রা যোগ হলে তা পাঠককে জানানোর তাগিদ অনুভব করেছি। আমাদের প্রতি আস্থা রেখে সেই প্রচেষ্টার প্রতিদান দিয়েছেন পাঠকরা।
সংবাদ পরিবেশনে পেশাদারত্ব ছিল সবসময়ই আমাদের প্রাধান্যের শীর্ষে, যে কারণে আগে দেয়ার উত্তেজনা সামলে দেরিতে হলেও সঠিক সংবাদটি পাঠকদের জানাতে চেয়েছি। এ মনোভাব পাঠকের কাছে অনেক সংবাদমাধ্যমের তুলনায় আমাদের ভিন্ন ভাবমূর্তি তৈরি করেছে।
যেকোনো সংবাদের গল্পের খণ্ডিত চিত্রের পরিবর্তে পূর্ণাঙ্গ দিক তুলে ধরার চেষ্টা ছিল বরাবরই, যা পাঠক মহলে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা ও পেশাদারত্বকে তুলে ধরেছে।
পেশাদারত্বের অংশ হিসেবে আমরা প্রথম দিন থেকেই রোজকার জনদুর্ভোগ, সেবাপ্রার্থীদের ভোগান্তিগুলোকে তুলে ধরেছি ধারাবাহিকভাবে। আমাদের এসব সংবাদে টনক নড়েছে দায়িত্বশীল মহলের, তৈরি হয়েছে ভোগান্তি কমার পথ।
সংকট ও সম্ভাবনা নিয়েই আমাদের জগৎ। বিষয়টি মাথায় রেখে দেশের আনাচ-কানাচে ছড়িয়ে থাকা সম্ভাবনাগুলো আমরা তুলে ধরেছি। আমাদের রিপোর্টারদের বিরামহীন প্রচেষ্টায় অনুপ্রেরণা জোগানো অদম্য মানুষদের কথা উঠে এসেছে একের পর এক।
প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিনিয়তই বিপুলসংখ্যক মানুষের ভোগান্তির কারণ হচ্ছে। আমরা সেসব অনিয়ম, দুর্নীতি তুলে ধরেই দায়িত্ব শেষ মনে করিনি; সেসব অনিয়মের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে ধারাবাহিকভাবে চেষ্টা চালিয়েছি।
কৃষিপ্রধান দেশে কৃষিকেন্দ্রিক উদ্যোগগুলোকে তুলে ধরাকে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। শুরু থেকেই চাষি ও কৃষি উদ্যোক্তাদের সংকট ও সম্ভাবনাগুলোকে ধারাবাহিকভাবে আমরা সামনে এনেছি। স্থানীয় সংস্কৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গ নিয়মিতই উঠে এসেছে আমাদের সংবাদ গল্পগুলোতে।
সুস্থ মানুষ ছাড়া উন্নত জাতি গড়া যায় না বলে আমরা বিশ্বাস করেছি। সুস্থতার জন্য প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধকে জরুরি মনে করা অনেক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে একমত হয়ে সেই দিকটিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়ার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন রোগের কারণ, লক্ষণ নিয়ে আমরা একের পর এক কনটেন্ট পরিবেশ করেছি। পাশাপাশি প্রতিকার নিয়েও কথা বলেছি।
স্বাধীনতার পর দেশ অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে গেলেও সমাজে উঁচু-নিচুর ভেদাভেদ এখনও বাস্তবতা। আমরা তা ভাঙার চেষ্টা করেছি। আমরা কথা বলেছি জেন্ডার নিয়ে, সচেতন করার চেষ্টা করেছি পাঠকদের। আমরা অনেকের কাছে ‘ট্যাবু’ হয়ে থাকা নারী স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিক ও যৌনতা নিয়ে কথা বলেছি। এ ধরনের কনটেন্ট পাঠক মহলে আমাদের ভিন্নতা তৈরি করেছে।
একটি দেশের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি তার অর্থনীতি। আমরা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে পাঠকদের নিয়মিত জানানোর চেষ্টা করেছি। আমরা উন্নয়নের মহাযজ্ঞগুলো যেমন তুলে ধরেছি, তেমনি বাধাগুলোও সামনে এনেছি।
সংবাদমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব প্রচলিত ভুলগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জয়জয়কারের যুগে অসত্য তথ্যকে সত্য হিসেবে চালিয়ে দেয়া নতুন বিষয় নয়। আমরা সেসব অসত্যকে চ্যালেঞ্জ করে সত্য তথ্যটা পাঠকদের দেয়ার চেষ্টা করেছি।
আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই আমাদের সংবাদে স্থান পেয়েছে। আমরা শিশুদের প্রতিভা বিকাশে সহায়ক শক্তি হওয়ার চেষ্টা করেছি। তরুণদের কর্মসংস্থানসহ অন্য সমস্যাগুলো নিরসনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের তাগিদ অনুভব করেছি। বৃদ্ধদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়-অনিয়ম নিয়ে কথা বলাকে করণীয় মনে করেছি।
আমাদের চলার এ পথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। ভাইরাসজনিত মহামারির রেশ না কাটতেই ইউক্রেন যুদ্ধে ভাঙতে থাকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিন্যাস। আমরা সেই কঠিন সময়ে ঝড়ের মুখে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছি। প্রতিটি সংকটকে সম্ভাবনায় রূপান্তরের চেষ্টা ছিল আমাদের। চেষ্টায় কতটা সফল হয়েছি, সেই বিবেচনার ভার পাঠকের হাতে ছেড়ে দিয়েছি।
শুরুর পর থেকে আমরা ধীরে ধীরে এক হাজার দিনের মাইলফলক পেরিয়েছি। এ যাত্রায় আমরা টিকে ছিলাম পাঠকের আস্থায়। আমরা টিকে আছি তাদের ভালোবাসায়। আমরা বহু দূর যেতে চাই পাঠকের ভরসায়।
লেখক: ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, নিউজবাংলা ও দৈনিক বাংলা
আরও পড়ুন:একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ২০১২ সালের ২ মে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামি আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে সহায়তাকারী সাবেক জামায়াত নেতা ও তৎকালীন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব। এরপর কারাগার থেকে বের হয়েই সবার চোখের সামনে গড়ে তোলেন বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) সাম্রাজ্য। সেই এনজিও দেশ-বিদেশ থেকে আনছে বিপুল অর্থ।
বাচ্চু রাজাকারকে সহায়তাকারী কীভাবে দেশের সব গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে এনজিও চালাচ্ছেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।
ঘটনার সময় ২০১২ সালের ৩০ মার্চ। ওই দিন একটি মাইক্রোবাস করে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারকে প্রথমে আগারগাঁওয়ের নিজের বাসায় লুকিয়ে রাখার পর ওই বছরের ২ এপ্রিল হিলি সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন আবু ইউসুফ। এরপর কী করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বাচ্চু রাজাকার পালিয়ে গেলেন, তা নিয়ে দেশে শুরু হয় হইচই।
আবু ইউসুফ র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীটি জানায়, গ্রেপ্তার আবু ইউসুফ পিসল্যান্ড কোম্পানির একটি মাইক্রোবাসে করেই বাচ্চু রাজাকারকে পালাতে সহযোগিতা করেছিলেন।
ওই গাড়িতে ছিলেন বাচ্চু রাজাকারের ছেলে মুহাম্মদ মুশফিক বিল্লাহ জিহাদ, আবু ইউসুফ ও বাচ্চু রাজাকার। এরপর আদালতে নিজের জবানবন্দিতেও তার অপরাধ স্বীকার করেন আবু ইউসুফ। পরে এই অপরাধের দায়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হন তিনি।
এরপর কেটে গেছে প্রায় ১১ বছর। এখন কী করছেন সেই আবু ইউসুফ, কোথায় আছেন তিনি, এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজ করে জানা গেছে, তিনি এখন গড়ে তুলেছেন এনজিও সাম্রাজ্য। রাজধানীর শ্যামলী এক নম্বর রোডের ওয়ান বাই বি ঠিকানায় অ্যাসোসিয়শেন ফর ম্যাস এডভাসমেন্ট নেটওয়ার্ক (আমান) নামের একটি এনজিও পরিচালনা করেন তিনি। কাজ করছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আমান ছাড়াও চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার, আল ইমদাদ ফাউন্ডেশনের নামে কয়েকটি সহযোগী সংস্থাও চালাচ্ছেন এই আবু ইউসুফ।
এসব বিষয়ে কথা হয় আবু ইউসুফের সঙ্গে। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমার এই প্রতিষ্ঠান রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ১৯৯৫ সালে। ২০০২ সাল পর্যন্ত এটা লোকাল ফান্ডে চলে। এরপর এটা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর ২০১২ সালে আমি গ্রেপ্তার হয়ে ২ মাস ২২ দিন কারাকারে ছিলাম।
‘পরে ২০১৫ সালে এটা (এনজিও) আবার শুরু করি। এটা এখন দেশি-বিদেশি ফান্ডে চলে। আমেরিকা, ইংল্যান্ড আর সাউথ আফ্রিকা থেকে টাকা আসে।’
বাচ্চু রাজাকারের পালিয়ে যাওয়ায় সহযোগিতার মামলার এখন কী অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই মামলা হাইকোর্ট স্টে দিয়েছে। সময়টা সঠিক মনে নেই, তবে সম্ভবত ২০১৫-২০১৬ সালে হাইকোর্ট এটা স্টে করে।’
‘গ্রেপ্তারের সময় আপনি জবানবন্দিতে স্বীকার করেছিলেন বাচ্চু রাজাকারকে আপনি পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন।’
উল্লিখিত তথ্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, স্বীকার করেছিলাম।’
‘সে সেময় জামায়াতে ইসলামী আপনার পক্ষে স্টেটমেন্ট দিয়েছিল?’ বলা হলে তিনি বলেন, ‘মনে হয় দিয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এনজিও ব্যুরোর সকল নিয়ম কানুন মেনেই ফান্ড রিসিভ করি এবং ব্যয় করি। আমি স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বনায়ন, খাদ্যসহ আরও কয়েকটি বিষয় নিয়ে কাজ করি। আমার কাজে কোনো সমস্যা নেই, থাকলে তো সরকার এটা বন্ধ করে দিত।’
এনজিও পরিচালনা নিয়ে বিস্ময়
আবু ইউসুফের এনজিও পরিচালনা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই রকম একজন অপরাধী কীভাবে হাইকোর্ট থেকে স্টে অর্ডার নিয়ে দেশের সকল গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে এনজিও পরিচালনা করছে, সেটা অবশ্যই সরকারকে খতিয়ে দেখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা নিয়ে একটা তদন্ত হওয়া উচিত। তদন্ত হলে জানা যাবে কীভাবে সে এত বড় একটা অপরাধ করেও বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং এনজিও ব্যবসা করছে। আমাদের আইনেই আছে, ফৌজদারি দণ্ডবিধিতেই আছে ক্রাইমকে যে সহযোগিতা করে, ক্রিমিনালকে যে সহযোগিতা করে, সেও সমানভাবে অপরাধী। আবু ইউসুফ বাচ্চু রাজাকারকে পালাতে সাহায্য করেছে। তাই সেও অপরাধী।’
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘যেহেতু এটা যুদ্ধাপরাধের মামলা, তাই এখন ট্রাইব্যুনালকে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে হাইকোর্টে এই স্টে কনটেস্ট করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলে এটা উঠে যাবে। তখন তাকে গ্রেপ্তার করতে কোনো বাধা থাকবে না।’
র্যাবের ভাষ্য
এ বিষয়ে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আবু ইউসুফকে সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে র্যাব গ্রেপ্তার করেছিল। গ্রেপ্তারের পর তাকে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে তিনি সম্ভবত এনজিও ব্যুরোর অনুমতিতেই আবার এনজিওর কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
‘এই এনজিও পরিচালনার মাধ্যমে তার কোন অপরাধের তথ্য যদি গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা এনজিও ব্যুরো পায়, ওই সকল তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নওগাঁর ছোট যমুনা ও আত্রাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। নদীতে পানির চাপ বাড়ায় জেলার রানীনগর, আত্রাই, মান্দা ও মহাদেবপুর উপজেলার সাতটি পয়েন্ট ভেঙে অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছে পানিবন্দি মানুষ।
এ ছাড়া রাণীনগর-আত্রাই সড়কের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গত দুই দিন ধরে সড়কপথে যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
নদীতে পানির চাপ বাড়ায় জেলার ওই চার উপজেলার বেড়িবাঁধের ছয়টি পয়েন্ট এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একটি অংশ ভেঙে লোকালয়ে হু হু করে পানি ঢুকছে। এখন চারিদিকে থইথই করছে পানি। বন্যার পানিতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি ঘরে প্রবেশ করায় আসবাবপত্রসহ সবকিছুই পানির নিচে।
বাড়িঘরে পানি ওঠায় বিপাকে পড়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার বাসিন্দারা। ছবি: নিউজবাংলা
বর্তমানে গবাদিপশু নিয়ে কেউ উঁচু স্থানে, কেউবা ঘরের মধ্যে চৌকির ওপর পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছেন। রান্নার চুলা তলিয়ে যাওয়ায় খাবার তৈরির মতো কোনো ব্যবস্থা নেই তাদের।
বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। খাবারের জন্য ঘরে ঘরে হাহাকার শুরু হয়েছে, তবে এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহায়তা সেখানে পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
জরুরি প্রয়োজনে বাইরে কোথাও যেতে হলে এক বুক পানি ভেঙে চলাচল করতে হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় সাপ-পোকামাকড়ের আতঙ্ক রয়েছেন তারা।
বর্তমানে নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে, সেই আশঙ্কায় রয়েছেন নদীর পাড়ের মানুষজন।
আত্রাই উপজেলার মালঞ্চি গ্রামের আবদুল মান্নান বলেন, ‘চার দিন আগে ছোট যমুনা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করে। ঘরের মধ্যেও এক হাঁটু পানি। চার দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছি। গরু-ছাগল, মুরগিসহ এখন বেড়িবাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছি। গবাদি পশুর খাবারের সংকট।
‘খাবার এবং বিশুদ্ধ পানির চরম সংকটে রয়েছি আমরাও। পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো জনপ্রতিনিধি আমাদের খোঁজ নিতে আসেনি।’
একই গ্রামের গৃহবধূ নিলুফা বেগম বলেন, ‘বাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। মানুষের বাড়িতে গিয়ে রাত কাটাতে করতে হচ্ছে। বাচ্চাদের নিয়ে বিপদে আছি। খাবারের সমস্যা। কী যে বলব, ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বাঁধের একটা স্থায়ী সমাধান চাই। কয়েক বছর পরপর বাঁধ ভেঙে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এখন আবার এমন অবস্থা। রান্না করতে পারছি না, খাদ্য সংকটে পড়েছি।’
নান্দাইবাড়ী গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, ‘আত্রাই নদীতে পানির প্রচুর চাপ। বুধবার সকাল থেকে রানীনগর-আত্রাই সড়কের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সড়ক ভেঙে এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করে। আমরা গ্রামবাসী মিলে রক্ষা চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। বেলা ১১টার দিকে ভেঙেই যায় বাঁধটি। রাস্তার প্রায় ৫০ ফুট জায়গা ধসে যায়।
‘এতে কয়েকটি গ্রামের ঘরবাড়িসহ কয়েক হাজার বিঘা জমির আমন ক্ষেত তলিয়ে গেছে। পুকুর ভেসে যাওয়ায় আমারই চার লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।’
এ বিষয়ে নওগাঁ-৬ (রাণীনগর-আত্রাই) আসনের সাংসদ আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। শিগগিরই ক্ষতিগ্রস্ত স্থান মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করা হবে।’
তিনি জানান, ইতোমধ্যে ভাঙনের স্থানে বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া বন্যা কবলিতদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। আরও সহায়তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় জেলায় প্রায় ৫০০ হেক্টর আউশ ও আমনের ক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে, তবে কী পরিমাণ পুকুর বা মাছের ঘের ভেসে গেছে, তা এখনও নিরুপণ করতে পারেনি জেলা মৎস্য অফিস।
আরও পড়ুন:সম্প্রতি কয়েকদিন ধরে হওয়া প্রবল বৃষ্টিতে সড়কের মাঝখান থেকে ধসে গিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে আশপাশের মানুষসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়তকারী পথচারীরা সমস্যায় পড়লেও সড়কটির সংস্কার নিয়ে একে অন্যকে দুষছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
নীলফামারীর ডোমার ইউনিয়ন সদরের চেয়ারম্যানপাড়ার বাইপাস রাস্তা ধরে মহাসড়কে উঠতে গেলেই দেখা মেলে সড়কের ওই ভাঙা অংশের।
স্থানীয়রা জানান, মহাসড়ক হওয়ার পর থেকেই এটি একটি ব্যস্ত সড়কে পরিণত হয়েছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর রাতে প্রবল বৃষ্টির কারণে রাস্তাটি ভেঙে দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে। এছাড়া রাস্তার পুরোটা জুড়েই পিচ ও পাথর উঠে এবড়ো থেবড়ো হয়ে পড়েছে। রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় অনেকেরই যাতায়াতে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।
স্থানীয় নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে রাস্তা ভেঙ্গে গেছে। রাস্তার পাথর উঠে গেছে। এটি দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।’
ভ্যানচালক আব্দুর রহমান বলেন, ‘মহাসড়কের পাশে রয়েছে ইট ভাটা। সবসময় এই রাস্তা দিয়ে শ্রমিকরা রিকশা-ভ্যানে করে যাওয়া আসা করে। ভাটার মাটিও এই রাস্তা দিয়ে আমরা নিয়ে থাকি। এমন একটি ব্যস্ত রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় আমাদেরও যাত্রী কমে গেছে। এক সপ্তাহ হয়ে গেল, কিন্তু এখনও কেউ রাস্তা ঠিক করতে এলো না।’
শ্রমিক রাজ্জাক হোসেন বলেন, ‘রাস্তা ভাঙা থাকায় সারাদিনই অনেকেই এসে গাড়ি নিয়ে ঘুরে যাচ্ছে। দ্রুত এই রাস্তা সংস্কার করা না হলে রাতের আঁধারে দুর্ঘটনায় পড়তে পারে মানুষ।’
এ বিষয়ে নিউজবাংলার কথা হয় ডোমার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম আহমেদের সঙ্গে। তবে রাস্তা সংস্কারের বিষয়টি এলজিইডির কাঁধে চাপালেন তিনি। বলেন, ‘তাদেরকে আমি ভাঙ্গা রাস্তা সংস্কারের কথা জানিয়েছি, কিন্তু তারা এখনও কোনো গুরুত্ব দেখাচ্ছে না। আমি আরও দুয়েকদিন দেখব। তারপরও যদি তারা না আসে, তবে আমি নিজেই ঠিক করে দেব।’
তবে ডোমার উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেলেন ভিন্ন কথা। তাকে রাস্তার ব্যাপারে কেউ জানাননি বলে জানালেন। প্রকৌশলী মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘যেহেতু এখন জানলাম, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দ্রুত রাস্তাটির সংস্কার কাজ শুরু হবে।’
দুই পক্ষের মন্তব্য জানার পর এখন স্থানীয়দের একটাই প্রশ্ন- রাস্তাটি আসলে ঠিক হবে কবে?
আরও পড়ুন:সম্প্রতি ঢাকার ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোভিড-১৯ টিকাদান ক্যাম্পেইনের টাকা আত্মসাৎ ও স্বাস্থ্য সহকারীদের সঙ্গে অসদাচরণ, বিভিন্ন সময় হয়রানি, অশালীন কথাবার্তা ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছিল মাঠকর্মী স্বাস্থ্যকর্মীরা। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদনও করেছিলেন ভুক্তভোগী দাবি করা স্বাস্থ্যকর্মীরা।
তবে ঘটনার প্রায় এক মাস পর অভিযুক্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে উল্টো কর্তৃপক্ষের রোষাণলে পড়েছেন অভিযোগকারীরা। ভুক্তভোগীদের মধ্যে দুই স্বাস্থ্যকর্মীকে বদলির আদেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
অভিযোগকারীরা বলছেন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করার কারণেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের বদলির ব্যবস্থা করিয়েছেন। তবে স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই তাদের বদলির আদেশ হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বুধবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম ওই দুজনের বদলির বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন।
২৬ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে বদলির আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন সহকারী পরিচালক ডা. মুহাম্মদ মইনুল হক খান। আদেশে সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক নাজমুন নাহারকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ওসমান গণিকে ফরিদপুরে বদলি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মাঠকর্মীদের গরু-ছাগল মনে করেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা!
গত ২ সেপ্টেম্বর ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূর রিফাত আরার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগ তুলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক নাজমুন নাহার ও মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ওসমান গণিসহ ৭৪ জন মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মী। এদের সবার পক্ষে অভিযোগ পত্রে স্বাক্ষর করেন নাজমুন নাহার।
মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ওসমান গণি অভিযোগ করে বলেন, ‘আজ অফিসে আসার পর জানতে পারলাম আমাকে বদলি করা হয়েছে। কারণ আমরা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দুর্নীতি ও অসদাচরণের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ করেছিলাম। এজন্য ক্ষিপ্ত হয়ে উনিই এই বদলির অর্ডার করিয়েছেন।’
সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক নাজমুন নাহার বলেন, ‘আমরা কিছুদিন আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অশালীন বাক্য ব্যবহার ও করোনাকালে টিকা কার্যক্রমের সময় আমাদের বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মাসাতের অভিযোগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটা লিখিত আবেদন করেছিলাম। আমার মনে হয়, আমরা স্যারের বিরুদ্ধে যে আবেদন করেছিলাম, সেটার কারণেই বদলি করা হয়েছে। এছাড়া তো আর কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।’
এ বিষয়ে জানতে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূর রিফাত আরাকে একাধিকবার ফোন করলেও রিসিভ করেননি। ঢাকা জেলা সিভিল সার্জনের মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের পরিচালক ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, ‘এটা তো বলতে পারব না, কে বদলি করেছে। অভিযোগটা তো ডিজি স্যার বরাবর দিয়েছিল। এখন সেখানে কী হয়েছে, আমি বলতে পারব না এই মুহুর্তে। অনেক সময় ওখান থেকে কপি দেয়, আবার দেয় না।’
তবে অভিযোগের পর ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত কমিটি হয়েছে কি না- সে বিষয়েও তিনি জানেন না বলে জানান।
বুধবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম বলেন, ‘এটা স্বাভাবিক বদলি। বহুদিন একটা জায়গায় থাকলে যেটা হয়।’
তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিরুদ্ধে করা অভিযোগের পর কোনো তদন্ত হয়েছে কি না- প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। বলেন, ‘সেই অভিযোগের তদন্ত হবে। সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা হবে।’
আরও পড়ুন:কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে দিনাজপুরের নদ-নদীগুলোর পানি আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার নিম্নাঞ্চলের পুরোটাই প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে ওইসব এলাকার ফসলের ক্ষেত।
জেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের শীর্ষ খাদ্য উৎপাদনকারী এই জেলার ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে।
যদিও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, পানি নেমে গেলে দ্রুত এসব জমির ধান কেটে, মাড়াই করে, শুকিয়ে নিলে তেমন ক্ষতি হবে না। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় জেলার নদ-নদীর পানি আরও বাড়ার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকেল ৩টায় পুনর্ভবা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার উপরে, আত্রাই নদীর বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচে ও ইছামতি নদীর পানি ২৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সরেজমিনে দিনাজপুর সদর উপজেলার মাঝাডাঙ্গা, হীরাহার, গোসাইপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফসলি জমির প্রায় সবই পানিতে নিমজ্জিত। জমির ধান সবে পাকতে শুরু করেছে, এরই মধ্যে ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এলাকার কৃষকরা। আদতেও জমির ধান ঘরে তুলতে পারবেন কি না, এ নিয়ে তাদের মনে জমেছে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ।
শুধু ধান নয়, মরিচ, বেগুন, ঝিঙ্গাসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেতও ডুবেছে পানিতে। ফলে লাভ তো দুরাশা, সবজি চাষে যে খরচ ইতোমধ্যে হয়েছে, তাই তুলতে পারবেন না বলে জানাচ্ছেন কৃষকরা।
এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে পুকুরে মাছ চাষ করেছিলেন সদর উপজেলার মাঝাডাঙ্গা এলাকার মকবুল হোসেন। পানি বাড়ায় পুকুরের মাছ চলে গেছে। এদিকে যেটুকু জমিতে ফসল চাষ করেছিলেন, তাও তলিয়ে গেছে। এমন অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক মকবুল হোসেন।
জানতে চাইলে একরাশ হতাশা ঝরল তার কণ্ঠে, ‘সব শেষ! আমি একেবারে পঙ্গু হয়ে গেছি। গরীব মানুষ; কিস্তি তুলে পুকুরে মাছ ছেড়েছিলাম, সব মাছ পালিয়ে গেছে; ফসলও পানির নিচে। কষ্টে গলা দিয়ে খাবার নামে না আমার। এখন কিস্তি দেব, নাকি খাব! পানি তো এখনও বাড়তেই আছে।’
কৃষক গোলজার হোসেন বলেন, ‘বিঘা পাঁচেক ধান লাগিয়েছিলাম। সব ধান ডুবে গেছে। সবজি ক্ষেতও পানিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সবারই একই অবস্থা। এখন তো অনেক ক্ষতি। পাকা ধান, এসব ধান তো গাজে (অঙ্কুরোদগম হয়ে) নষ্ট হয়ে যাবে।’
শাহীন সুর আলম বলেন, ‘গত মৌসুমে ইরি (বোরো) ধানের আবাদ করে দাম পাইনি। সেই কারণে এবার আগাম জাতের ধানের আবাদ করেছিলাম। আর ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যেই কাটব, কিন্তু এর মাঝেই বন্যায় ডুবে গেল। এখনও তো পানি বাড়তেই আছে। ধান তো সব শেষ!’
সদর উপজেলার হীরাহার এলাকার সোহেল মিয়া বলেন, ‘নেপিয়ার ঘাসের চাষ করেছিলাম, ডুবে গেছে। ৩ বিঘা জমিতে মুলা চাষ করেছিলাম, তাও ডুবে গেছে। কাঁচা মরিচের এক বিঘার ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এক বিঘা জমির বেগুনের ক্ষেতও নষ্ট হয়ে গেছে। চারদিকে এখন শুধু অন্ধকার দেখছি। সামনের দিনগুলো কীভাবে পার করব, বুঝতেছি না।’
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ নুরুজ্জামান বলেন, ‘জেলার ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে, তবে ধীরে ধীরে পানি নেমে যাচ্ছে। যেসব ধান পাকা অবস্থায় আছে, পানি নেমে গেলে সেগুলো দ্রুত কেটে, মাড়াই করে যদি শুকিয়ে নেয়া যায়, তাহলে তেমন ক্ষতি হবে না।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য