এইচএসসি পরীক্ষা দিতে হচ্ছে না। রাজধানীর সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র সুজন মোহাম্মদের প্রশ্ন তার ফরম ফিলাপের টাকার কী হবে?
বিজ্ঞানের ছাত্র সুজনকে এইচএসসিতে অংশ নিতে বোর্ডকে দেয়ার কথা ছিল এক হাজার ৬৯৫ টাকা। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ আদায় করেছে ১০ হাজার ৪০০ টাকা।
করোনাকালে আয় কমে যাওয়ার যে সমস্যা, তার বাইরে নয় সুজনের পরিবারও। ভাবছিলেন, টাকাটা ফেরত পাওয়া গেলে বাবা-মায়ের উপকার হতো।
টাকা কি ফেরত দেয়া হবে?
কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান মোল্লার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও জবাব মেলেনি। তিনি ফোন ধরেননি।
রাজধানীর একটি কলেজের অধ্যক্ষ নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেছেন, তিনিও মনে করেন কিছু টাকা হলেও ফেরত দেয়া উচিত। তবে শেষ পর্যন্ত হয়ত টাকা দেয়া হবে না।
এবার এইচএসসি পরীক্ষার জন্য ২১৫ কোটি টাকার মতো আদায় করেছে সরকার। এর মধ্যে প্রশ্ন তৈরিসহ কিছু খাতে একটি অংশ ব্যয় হয়েছে। তবে এখনও অনেক টাকা রয়ে গেছে।
করোনার কারণে এইচএসসি পরীক্ষা না নিয়ে সবাইকে পাস করানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। জানান, জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের গড় করে উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল দেয়া হবে।
বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে এই সিদ্ধান্ত জানালেও রেজিস্ট্রেশনের টাকা নিয়ে সরকারের চিন্তার কথা জানাননি মন্ত্রী।
পরীক্ষায় অংশ নিতে হলে শিক্ষাবোর্ডের নির্ধারিত টাকা কয়েকমাস আগেই জমা দিতে হয়। এবার এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে সর্বোচ্চ এক হাজার ৬৯৫, বাণিজ্য ও এক হাজার ৪৯৫ টাকা করে ফি ঠিক করা হয়।
কিন্তু প্রতিবারের মতোই কলেজগুলো অতিরিক্ত টাকা আদায় করেছে। বাড়তি অর্থ নিলে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার কোনো সুফল পায়নি অভিভাবকরা।
পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণার পর পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের পক্ষ থেকে কেন টাকা ফেরত দেয়া হবে না, সে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
সামসুল হক খান কলেজের পরীক্ষার্থী সুজনের বাবা রফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষা বোর্ড টাকা ফেরত দিলে প্রতিষ্ঠান যে বাড়তি টাকা নিয়েছে, সেটা ফেরত দিত। তাহলে ভালো হতো।’
আরও পড়ুন: পরীক্ষা বাতিলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া, চিন্তা ভবিষ্যৎ নিয়ে
তবে শিক্ষাবোর্ডের কর্তারা যা বলছেন, তাতে অভিভাবকদের এই আশা পূরণ হওয়ার নয়।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণ বাবদ যে টাকা নেয়া হয়েছে তার ৭০ শতাংশ খরচ হয়ে গেছে। এই টাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে প্রশ্নপত্র তৈরিতে। করোনা মধ্যেই আমাদের এই কাজ শেষ করা হয়। এছাড়া এখনও অনেক কাজ বাকি রয়েছে। সব কাজ শেষ করে যদি টাকা থাকে এই বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে বকেয়া টাকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণের সম্ভাবনা নেই।’
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এসএম আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘যেসব পক্রিয়ার মাধ্যেমে পরীক্ষা নেয়া হয় এসব প্রক্রিয়ার অধিকাংশ কাজ শেষ করা হয়েছে। যেমন ধরুন কেন্দ্র ফি। এই অর্থ এরই মধ্যে কেন্দ্রে চলে গেছে। রেজিস্ট্রেশনের কাজ করেছি, ফরম ফিলাপের কাজ করেছি। আগামীতে ফলাফল তৈরিতে কাজ করব। করোনার মধ্যে প্রশ্নপত্রের কাজ শেষ করেছি। টাকা ফেরত দেওয়ার সুযোগ নেই।’
তবে এই যুক্তি মানছেন না রাজধানীর একটি কলেজের পরীক্ষার্থীর ভাই অন্তু মুজাহিদ। তিনি বলেছেন, ‘প্রশ্ন তৈরি ও পাঠানো বাবদ খরচ ছাড়া বাকি টাকা শিক্ষা বোর্ডের তহবিলে থাকার কথা। পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় কেন্দ্র ফি কেন লাগবে। একইভাবে পরিদর্শক ফি, খাতা মূল্যায়ন খরচও লাগবে না। পরীক্ষার জন্য ছাপানো খাতার পরে যে কোনো পরীক্ষায় ব্যবহার করতে পারবে। তাহলে সেই টাকা ফেরত দিতে সমস্যা কোথায়?’
আরও পড়ুন: এইচএসসি নিয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন চেয়ে পরীক্ষার্থীর আইনি নোটিস
এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানতে শিক্ষা সচিব মাহবুব হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির বক্তব্য পায়নি নিউজবাংলা। তাদের কেউ ফোন ধরেননি। মোবাইলে বিষয় জানিয়ে এসএমএস পাঠানো হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সারা দেশে এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী ছিল ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন।
এর মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থী ১০ লাখ ৭৯ হাজার ১৭১ জন আর অনিয়মিত পরীক্ষার্থী ছিল দুই লাখ ৬৬ হাজার ৫০১ জন। অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদেরকে নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত জমা দিতে হয়েছে ১০০ টাকা।
নিয়মিত শিক্ষার্থীরা বোর্ড ফি জমা দিয়েছে কমপক্ষে ১৬২ কোটি টাকা। আর অনিয়মিত শিক্ষার্থীরা জমা দিয়েছে প্রায় ৪৩ কোটি টাকা।
এক বিষয়ে অনুত্তীর্ণ, দুই বিষয়ে অনুত্তীর্ণ, মানোন্নয়ন পরীক্ষায় অংশ নিতে পরীক্ষার্থীরা জমা দিয়েছে আরও কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা।
সব মিলিয়ে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার জন্য শিক্ষা বোর্ডগুলো পরীক্ষার্থীদের কাছে প্রায় ২১৫ কোটি টাকা নিয়েছে।
তবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কলেজগুলো আসলে কত আদায় করেছে সেই হিসাব পাওয়া কঠিন। নিবন্ধন চলাকালে তিন থেকে ছয় গুণ টাকা আদায়ের অভিযোগ এসেছ গণমাধ্যমে।
প্রথমে প্রবাস ফেরত ও টাকাওয়ালা ব্যক্তিদের টার্গেট, পরে তাদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে নারী দিয়ে প্রেমের ফাঁদ পেতে ডেকে আনেন ডেটিংয়ের জন্য। প্রস্তাবিত স্থানে আগে থেকেই তৈরি থাকেন চক্রের সদস্যরা। ওই ব্যক্তি পৌঁছানোমাত্র তাকে আটকে রেখে মোটা অংকের টাকা চাঁদা দাবি করেন।
চাঁদা না পেলে মারপিটসহ জোরপূর্বক নকল বিয়ে দেন কাজী ডেকে। দেনমোহর ধার্য করেন ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা। পরে ডিভোর্সের নামে সেই দেনমোহরের টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। এমনই প্রতারক চক্রের সন্ধান মিলেছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নে চাম্বলতলা গ্রামে।
গত ২১ মার্চ এই চক্রের সদস্যদের কাছে প্রতারণার শিকার হন ঘাটাইল উপজেলার রহমতখাঁর বাইদ গ্রামের দুলাল মন্ডলের প্রবাস ফেরত ছেলে নাজমুল ইসলাম। এরপর বিচার চেয়ে তিনি টাঙ্গাইল আদালতে কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন।
আসামিরা হলেন- মো. জাহিদুল হাসান জাহিদ, সৌরভ তালুকদার, হুমায়ুন সিকদার রানা, বাবুল হোসেন, মো. জুয়েল, রিজান, সুজন, রায়হান, কাজী মো. তাহেরুল ইসলাম তাহের ও রাশেদা বেগম।
মামলার বিবরণে জানা যায়, পাঁচ মাস আগে দেশে ফেরেন নাজমুল ইসলাম। গত ২১ মার্চ চাম্বলতলা গ্রামের আবু তালুকদারের বাড়িতে তার ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে যান তিনি। সেখানে খাওয়া-দাওয়া শেষে রাত ৯টার দিকে সৌরভ তালুকদারের মাধ্যমে নাজমুলকে ডেকে নিয়ে নাজিম উদ্দিনের বাড়ির উত্তর পাশের গজারী বাগানে নিয়ে যান জাহিদুল। সেখানে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন তারা। চাঁদা না দিলে নাজিম উদ্দিনের নাবালিকা মেয়ে সুমাইয়ার সঙ্গে জোরপূর্বক বিয়ে দেয়ার কথা বলা হয়।
সে সময় টাকা দিতে অস্বীকার করায় ব্যাপক মারধরের শিকার হন নাজমুল। পরে তারা কয়েকটি কার্টিজ পেপারে খুনের ভয় দেখিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক তার স্বাক্ষর নেন এবং সুমাইয়াকে কাবিন ছাড়াই বিবাহের নামে নাজমুলের বাড়িতে জোরপূর্বক তুলে দেন। এমনকি পরবর্তীতে ঘটনার সত্যতা প্রকাশ করলে প্রাণনাশের হুমকিও দেয়া হয়।
তবে মুক্তি পেয়ে আদালতে মামলা করেন বলে নিউজবাংলাকে জানান নাজমুল।
ঘটনার বিষয়ে সুমাইয়া জানায়, সে নাজমুলকে চিনত না। জাহিদুল তার দুঃসম্পর্কের মামা হয়। জাহিদুলের কথায় সে এমনটি করেছে। প্রথমে সে রাজি না হওয়ায় তাকে মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ তার।
স্থানীয়দের ভাষ্য, দীর্ঘদিন ধরে এ চক্রটি এমন প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা নারীদের ব্যবহার করছে। আর স্থানীয় কাজীকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে তারা।
এদিকে জানতে চাইলে ওই বিয়ে পড়ানোর কথা অস্বীকার করেন কাজী তাহেরুল ইসলাম তাহের। জানান, এ ধরনের বিয়ে তিনি পড়াননি। তবে তাকে ডেকে নেয়া হয়েছিল।
এ বিষয়ে ঘাটাইল থানার ওসি আব্দুস ছালাম মিয়া বলেন, ‘এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:এ যেন রূপকথার কল্পকাহিনী। ৩০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বোনকে খুঁজে পাওয়ার গল্প। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হওয়া একটি ভিডিও’র সূত্র ধরে তিন দশক পর দেখা হলো দুই বোনের। অঝোরে কাঁদলেন ওরা। এই কান্না হারানো স্বজনকে ফিরে পাওয়ার। এই কান্না আনন্দের।
হারিয়ে যাওয়া বড় বোনের নাম রাশিদা। তার বর্তমান ঠিকানা সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামে সোনার বাংলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩৫ নম্বর ঘর। আর তাকে খুঁজে পাওয়া ছোট বোনের নাম রহিমা খাতুন।
রহিমার ঠিকানা ঢাকার মোহাম্মদপুরে ইকবাল রোডের একটি বাড়ি। এখানে গৃহকর্মী হিসেবে থাকেন তিনি। তার মায়ের বাড়ির স্থায়ী ঠিকানা কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামে। সেখানে থাকেন তার মা মোছাম্মৎ বেগম ও ছোট ভাই ইউনুস।
সন্তানদের ছোট রেখেই মারা যান তাদের বাবা আকুব্বর। এরপর ওদের মা পুনরায় বিয়ে করেন। সেই বাবাও মারা গেছেন সাত বছর আগে।
রাশিদা তার পরিবারের খোঁজ না জানলেও তার অবস্থানস্থলের সঙ্গে মা ও ভাইবোনের দূরত্ব খুব বেশি ছিল না। এক পাশে কুষ্টিয়া, অন্য পাশে সিরাজগঞ্জ। মাঝখানে শুধু পাবনা জেলা।
গুগলের ম্যাপের তথ্যমতে, কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার এনায়েতপুর গ্রাম থেকে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার দূরত্ব ৯৫ কিলোমিটার। গাড়িতে এই দূরত্ব পাড়ি দিতে সময় লাগে মাত্র ৩ ঘণ্টা ১২ মিনিট। অথচ এই পথটুকুর দূরত্ব ঘুচতে লেগে গেছে দীর্ঘ ৩০টি বছর।
ঘটনাটা শুরু করা যাক ৩০ বছর আগের এনায়েতপুর গ্রাম থেকে। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার এই গ্রামে ছোট্ট একটি বাড়িতে থাকত চার সদস্যের একটি পরিবার। মা মোছাম্মাদ বেগম, দুই বোন সাত বছর বয়সী রাশিদা ও চার বছর বয়সী রহিমা এবং দুই বছর বয়সী একমাত্র ভাই ইউনুস।
পরিবারটিতে অভাব-অনটন ছিলো নিত্যদিনের মোছাম্মৎ বেগম সে সময় পরিবারের সদস্যদের দু’মুঠো খাবারের সংস্থান করতে বড় মেয়ে রাশিদাকে কাজে পাঠান কুমারখালীর লতিফ নামের এক ব্যক্তির ঢাকার বাসায়।
এরপর হঠাৎ একদিন গৃহকর্তা লতিফের কাছ থেকে খবর আসে যে রাশিদা তার ঢাকার বাসা থেকে পালিয়ে গেছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। মা আত্মীয়-স্বজনসহ আশপাশের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেও মেয়ের খোঁজ পাননি। নিজের নামে থাকা স্যামান্য জমিটুকু বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে রাশিদাকে খুজতে থাকেন মা। এক পর্যায়ে সেই টাকাও শেষ হয়ে যায়। আর নিখোঁজই থেকে যান রাশিদা। এই পর্যায়ে নিজ বাড়িতে বসে মেয়ের ফিরে আশায় পথ চেয়ে চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না মায়ের।
ছোট দুই ভাই-বোন রহিমা ও ইউনুস বোড় বোন রাশিদা হারিয়ে যাওয়ার মর্ম না বুঝলেও মায়ের প্রতিটি দিন কাটতে থাকে বড় মেয়ের আশায় পথ চেয়ে থেকে। এভাবেই রাশিদার পথ চেয়ে মায়ের কেটে যায় ৩০টি বছর।
এনায়েতপুর গ্রামের ছোট্ট বাড়িটিতে এখন একাই থাকেন রাশিদার মা বেগম। সাত বছর পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে দিন কাটে তার। একমাত্র ছেলে ইউনুস থাকে কুষ্টিয়া শহরে। আর ছোট বোন রহিমা কাজ করে ঢাকার মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের একটি বাসায়।
যেভাবে রাশিদার খোঁজ পান রহিমা
চলতি এপ্রিল মাসে ১৬ তারিখ, রাত সাড়ে ১১টা। কুমারখালী থেকে রহিমার ফোনে আসা একটা কল সবকিছু এলোমেলো করে দেয়। যেন আকাশ থেকে পড়েন রহিমা। নিউজবাংলাকে সে সময়ের মানসিক অবস্থার বর্ণনা দেন তিনি।
রহিমা বলেন, ‘আমি ঢাকায় যে বাসায় কাজ করি তাদের দেশের বাড়ি ঝিনাইদ শহরের আদর্শপাড়ায়। ঈদের ছুটিতে তারা ঝিনাইদহে যান। আর আমি চলে যাই কুমারখালীতে। ১৭ এপ্রিল আমাদের ঢাকায় চলে আসার কথা। তাই ১৬ তারিখেই কুমারখালী থেকে ঝিনাইদহে গিয়ে আমার গৃহকর্তার বাসায় অবস্থান করি।’
তিনি বলেন, “১৬ এপ্রিল রাত সাড়ে ১১টার সময় হঠাৎ আমাদের গ্রাম থেকে এক চাচা ফোনে জানান যে ফেসবুকে আর জে কিবরিয়ার ‘আপন ঠিকানা, পর্ব-৫৭৫’ নামের এক অনুষ্ঠানে হারিয়ে যাওয়া এক মেয়ে আমাদের গ্রামের নাম বলে নাকি আমার বোন দাবি করছে। সে সময় চাচা আমাকে ওই ‘আপন ঠিকানা’ নামের অনুষ্ঠান দেখতে বলেন।”
রহিমা বলেন, ‘এরপর আমি বাসার লোকজনে সহযোগিতায় ফেসবুকের ওই অনুষ্ঠানের ভিডিওটা দেখি। ভিডিওর ওই মেয়েকে প্রথম দেখায়ই আমার বুকের মধ্যে একটা বাড়ি মারে! সব কিছু কেমন যেন ওলট-পালট হয়ে যায়। আমার গা তখন কাঁপছিলো! মুখ দিয়ে কোন কথা আসছিলো না।
‘তবে প্রথম দেখায়ই আমি চিনে ফেলি যে এটা আমারই বড় বোন রাশিদা। চিনবো না? আমার রক্ত, আমি এক দেখায়ই চিনবো। একদম আমার মতো দেখতে। তাছাড়া ভিডিওতে সে বলছে তার ছোট বোনের নাম রহিমা, ভাইয়ের নাম ইউনুস, মায়ের নাম বেগম। সবই মিলে যায়।’
রহিমা বলতে থাকেন, ‘তখন সব কিছুই আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল। কী বলবো বুঝতে পারছিলাম না। শুধু আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছিলো। আমি কল্পনাও করিনি আমি আমার বড় বোনকে আর খুঁজে পাবো!’
‘তখন শুধুই ভাবছিলাম- হারিয়ে যাওয়ার পর আমার বোনের কত কষ্টই না হয়েছে। কত আপদ-বিপদই না তার পার করতে হয়েছে। তখন থেকেই মনের মধ্যে দুমড়ে-মুছড়ে যাচ্ছে, কখন আমি আমার বোনকে সামনা-সামনি দেখতে পাবো? কখন বোনকে একটু জড়িয়ে ধরবো? বলেন রহিমা।
রহিমা আরও বলেন, “ওই রাতেই আমাদের বাসা থেকে ফেসবুকের ওই ‘আপন ঠিকানা’ নামের অনুষ্ঠান যারা করেন তাদের মধ্যে তানভীর ও আরিফ নামের দুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তখন তারা বলে- ‘আপনারা ঢাকায় আসেন। আমরা রাশিদাকেও ঢাকায় এনে একদিন সময় করে আপনাদের একসঙ্গে মিলিয়ে দেব।’ এরপর আমি কুমারখালীতে মাকে ফোন করে ঘটনা জানাই। মা মনে হয় এখন বোনকে দেখার আশায় ঘুমাতে পারছে না। শুধু কান্নাকাটি করছে।”
দু’বোনের দেখা হয় যেভাবে
আর জে কিবরিয়ার ফেসবুক শো ‘আপন ঠিকানা’ অনুষ্ঠান থেকে তানভীর ও আরিফ নামের দুজন রহিমাকে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন ২২ এপ্রিল (সোমবার) বিকেলে মহাখালীতে অবস্থিত তাদের স্টুডিওতে যেতে। সেখানেই তাদের ক্যামেরার সামনে হারিয়ে যাওয়ার পর দুই বোনের প্রথম দেখা হবে।
মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে সময় হাতে রেখেই রওনা দেন রহিমা। এরপর বিকেল ৫টায় রহিমার জীবনে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আপন ঠিকানা অনুষ্ঠানের স্টুডিওতে দেখা হয় ৩০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বড় বোন রাশিদার সঙ্গে। প্রথম দেখাতেই দুই বোন পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এ সময় কুষ্টিয়ার কুমারখালীর এনায়েতপুর গ্রামে থাকা রহিমার মা বেগমের সঙ্গেও ভিডিও কলে দেখা ও কথা হয় রাশিদার। সে সময় মা-মেয়ে দু’জনই অঝোরে কাঁদতে থাকেন। ফিরে পাওয়া মেয়েকে উদ্দেশ করে মা বলতে থাকেন- ‘তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি আয়। আমি তোকে ছুঁয়ে দেখবো।’
রাশিদা স্টুডিও থেকে বের হয়ে রহিমাকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘তোর তো নাকফুল ছিলো না, এখন তোর নাকে নাকফুল। তুই কত বড় হয়ে গেছিস। আমার ছোট ভাইটাও মনে হয় অনেক বড় হয়ে গেছে। মাকে একটু ছুঁয়ে দেখতে খুব মন চাচ্ছে।’
এই পর্যায়ে দুই বোনের কান্নায় আর সব কথা হারিয়ে যায়।
রাশিদার জীবনের গল্প
৩০ বছর আগে রাশিদার হারিয়ে যাওয়ার গল্প জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ছোট বেলায় মা যে বাড়িতে আমাকে কাজ করতে পাঠিয়েছিলো সেখানে বাসার লোকজন আমাকে খুব মারতো। একদিন মেরে তারা আমার মাথা দিয়ে রক্ত বের করে দিয়েছিল। সেদিনই রাগ করে ওই বাসা থেকে পালিয়ে একটা বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার গাড়িতে উঠে বসি।
‘ওই বাসে ওঠার বিশেষ কারণও ছিল। বাসের লোকজন বলছিলো যে উল্লাপাড়ায় একটা এনায়েতপুর আছে। সে সময় আমার মনে ছিলো যে আমার বাড়িও এনায়েতপুরে। কিন্তু আমার জেলা কুষ্টিয়া, থানা কুমারখালী সেটা তখন মনে ছিলো না।’
রাশিদা বলেন, উল্লাপাড়ার এনায়েতপুরে গিয়ে দেখি এটা আমার বাড়ির এনায়েতপুর না। তখন ওই এনায়েতপুরের এক মহিলা তাদের বাড়িতে থাকতে দেয়। তাদেরও কোনো মেয়ে সন্তান ছিল না। এর কিছুদিন পর তারা আমাকে তাদের পারিচিত একজনের ঢাকার শ্যামলীর বাসায় কাজ করতে পাঠায়। সেখানে আমি অনেক বছর থাকি।’
রাশিদা জানান, শ্যামলীর ওই বাসার লোকজন তাকে একসময় বিয়ে দিয়ে দেন। তার স্বামীর বাড়িও সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে তিনি উল্লাপাড়ায় চলে যান। তখন থেকে তিনি এখানেই ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারীর সময় আমার স্বামী করোনায় মারা যায়। তারপর সরকার আমার থাকার জন্য এনায়েতপুরের এক আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটা বাড়ি বরাদ্দ দেয়। এখন আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে টিউবওয়েল বসানোর কাজ করে এবং মেঝো ছেলে এতিমখানায় থাকে। আর ছোট সন্তান মেয়েটা আমার সাথেই থাকে। আমি মানুষের বাসায় কাজ করি।’
ফেসবুক শো ‘আপন ঠিকানা’র খোঁজ পেলেন কীভাবে জানতে চাইলে রাশিদা বলেন, ‘আমি যে বাড়িতে কাজ করি ওই বাড়ির মেয়ে আমাকে এই অনুষ্ঠানের খোঁজ দেয়। সেই আমাকে এখানে নিয়ে আসে।’
রাশিদা বলেন, ‘এখন আমার একটাই চাওয়া আমার ভিটেয় (বাড়ি) যাওয়া। আমি আজ সিরাজগঞ্জ চলে যাব। তবে দুই-একদিনের মধ্যেই ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কুষ্টিয়ায় মায়ের কাছে যাব। মায়েরে ছুঁয়ে দেখব।’
সবশেষে তিনি বলেন, ‘সামান্য জেলা আর থানার নাম মনে না থাকায় আজ ৩০ বছর আমি আমার পরিবার থেকে আলাদা। আমার শুধু মনে ছিলো এনায়েতপুর গ্রামের কথা। কুমারখালীর এনায়েতপুরের খোঁজে বের হয়ে আমি এখনও সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় আরেক এনায়েতপুরের বাসিন্দা হয়ে আছি।’
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার নলকা ও নওদা শালুয়া খালের ওপরে নির্মিত সেতু ভেঙে পড়ায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাধ্য হয়ে বাঁশের মাচাল দিয়ে চলাচল করছেন ওই এলাকার প্রায় ৪০টি গ্রামের মানুষ।
উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগের সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় সেতুর পূর্ব পাশের ভারী যানবাহন চলাচল একদম বন্ধ হয়ে গেছে।
নলকা-শালুয়া সেতু দিয়ে চলাচলকারী জানান, কয়েক যুগ আগে নির্মিত সেতুটি গত পাঁচ বছর ধরে নড়বড়ে ছিল। এ অবস্থায় স্থানীয় ইটভাটার মাটি বহনকারী ট্রাক চলাচল করায় সম্প্রতি সেতুটির একাংশ ভেঙে পড়েছে। এতে ওই রাস্তা দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, তবে অটোরিকশা ভ্যানসহ হালকা যানবাহন এখনও চলাচল করছে।
তারা জানান, বর্তমানে ভাঙা অংশের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকায় ওই ইউনিয়নসহ প্রায় ৪০টি গ্রামের মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় সেতুর ভেঙে যাওয়া অংশে বাঁশের মাচাল বিছিয়ে হালকা যানবাহন চলাচল করছে, তবে খুঁটির নড়বড়ে অবস্থা।
জরুরি ভিত্তিতে নলকা-শালুয়া সেতু সংস্কার বা পুনরায় নির্মাণের দাবি জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ বলেন, ‘ভাঙা সেতুতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার পরও কাজ হচ্ছে না। মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে এলাকাবাসী মিলে সামান্য চলাচলের ব্যবস্থা করেছি। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। যেকোনো মুহূর্তে সেতু ভেঙে মানুষের মৃত্যুসহ বড় ধরনের বিপদে পড়তে পারে।’
পাঙ্গাসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম নান্নু বলেন, ‘সেতুটি অনেক আগের। এ কারণে ভেঙে গেছে, তবে সেতুটি দিয়ে প্রায় ৪০ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টির স্থায়ী সমাধান করতে হবে। আধুনিক সেতু নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি জানানো হয়েছে।’
রায়গঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ বলেন, ‘সেতুর যাবতীয় তথ্যাদি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আশা করা যায় দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন হবে।’
রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, ‘সেতু পরিদর্শন শেষে এলজিইডিকে জানানো হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে দ্রুত জনগণের ভোগান্তি নিরসন করা হবে।’
আরও পড়ুন:গত কয়েক মাস ধরে বেনাপোলের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ পচনশীল পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে দুপুরের পর ২০ ট্রাক জেনারেল পণ্যের পর মাত্র ৫ ট্রাক পচনশীল পণ্য রপ্তানিত নিয়ম চালু করেছে।
এদিকে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাতে কোনো পচনশীল পণ্য খালাস না দেয়ায় বন্দর থেকে ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে পরদিন। ফলে অধিকাংশ পচনশীল পণ্যের চালান দিনে বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রবেশ করতে না পেরে নষ্ট হচ্ছে ওপারেই।
সিরিয়ালের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওপারে ট্রাক আটকে থাকায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে পচনশীল পণ্য আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা। এ কারণে তারা বেনাপোল বন্দর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অন্য বন্দরে।
সেইসঙ্গে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে রাজস্ব আয়ে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
পণ্য আমদানিকারকরা জানান, রাজস্ব আয়ের একটা বড় অংশ আসে পচনশীল পণ্য আমদানি থেকে। কিন্তু বেনাপোলের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ উচ্চ পচনশীল পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সিরিয়ালের নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রাক আটকে রাখায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে পচনশীল পণ্য আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের ফল, মাছ, সবজি, ক্যাপসিকাম, কাচা মরিচসহ অন্য পচনশীল পণ্য আমদানি হয় দুপুরের পরপরই। ফলে সন্ধ্যার আগেই এসব পণ্য চালান খালাস হয়ে চলে যেত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে, কিন্তু গত মাসখানেক ধরে ভারতীয় বন্দর কর্তৃপক্ষ সিরিয়ালের নামে পচনশীল পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে দুপুরের পর ২০ ট্রাক জেনারেল পণ্যের পর মাত্র পাঁচ ট্রাক পচনশীল পণ্য রপ্তানির নিয়ম চালু করেছে।
‘কোনো কোনো চালান সিরিয়াল পেয়ে রাতে প্রবেশের অনুমতি পেলেও বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাতে কোনো পচনশীল পণ্য খালাস না দেয়ায় পরদিন বন্দর থেকে ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে। ফলে অধিকাংশ পণ্য চালান পচন ধরতে শুরু করে।’
পচনশীল পণ্য আমদানিকারকদের দাবি, সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত জেনারেল গুডস আমদানির অনুমতি দেয়া হোক। শুধু পচনশীল পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে দুপুরের পর থেকে মাত্র দুই থেকে তিন ঘণ্টার জন্য একসঙ্গে সব পচনশীল পণ্য চালান আমদানির অনুমতি দিলে পচনশীল পণ্য খুব দ্রুত সময়ে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করতে পারবে।
তারা জানান, গত মাসখানেক আগেও এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ ট্রাক পচনশীল পণ্য আমদানি হতো। যা থেকে সরকার প্রতিদিন ১৮ থেকে ২০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করছিল। ফলে বর্তমানে আমদানির সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫ থেকে ১০ ট্রাকে। যদিও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড পচনশীল পণ্য দ্রুত খালাস ও নিষ্পত্তিকরণ বিধিমালা-২০২১ নামে একটি নতুন বিধিমালা জারি করেন। যার আওতায় ৬৩ ধরনের পচনশীল পণ্যের শুল্কায়নসহ সব কর্মকাণ্ড দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেয়া হয়েছে।
চলতি বছরের ৩০ মার্চ ভারতীয় পেট্রাপোল কাস্টমস সহকারী কমিশনার অনিল কুমার সিংহ স্বাক্ষরিত এক পত্র জারি করে পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষের ম্যানেজারকে বলা হয়েছে। পচনশীল পণ্য দ্রুত রপ্তানির বিষয়টি সবার আগে প্রাধান্য দিতে হবে।
বেনাপোল আমদানীকারক সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন জানান, পচনশীল পণ্য দ্রুত খালাসের নিয়ম থাকলেও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ তা প্রতিপালন করছেন না।
পচনশীল পণ্য দ্রুত আমদানিতে সিরিয়ালের নামে দীর্ঘসূত্রিতা প্রথা বাতিল করে পূর্বের ন্যায় আমদানির পণ্য দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করে দ্রুত সমাধানের দাবি করেছেন আমদানিকারকরা।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘সমস্যা সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে পেট্রাপোল পোর্ট ম্যানেজারের সাথে কথা বলেছি। ব্যবসায়ীদের সমস্যার কথা জানিয়েছি অন্য পণ্যের সঙ্গে পচনশীল পণ্যের গাড়ির সারা দিনব্যাপী বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে সে অনুযায়ী সিরিয়াল মেইনটেন করার জন্য তাকে আমি অনুরোধ করেছি।’
বেনাপোল কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার শাফায়েত হোসেন জানান, বেনাপোলের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে সিরিয়ালের নামে পচনশীল পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানিতে বিলম্ব হচ্ছে। ফলে বেনাপোল বন্দরে আগের তুলনায় আমদানি কমে গেছে। বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি কমে যাওয়ায় রাজস্ব আদায়ও অনেক কমে গেছে।
আরও পড়ুন:মনের বাসনা পূরণের আশায় কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদে প্রতিনিয়ত টাকা, অলংকারের মতো বিভিন্ন বস্তু ও হাঁস, মুরগির মতো জীবিত প্রাণী দান করেন স্থানীয়সহ অন্য জেলার লোকজন।
সাধারণত প্রতি তিন মাস পর দানবাক্সগুলো খুলে গণনা শেষে টাকার পরিমাণ ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। এ ঘটনাটি দেশজুড়ে থাকে আলোচনায়।
দানবাক্স গণনার পর প্রতিবারই টাকার পরিমাণটা সাধারণত আগের মাসের চেয়ে বেশি হতে দেখা যায়। গত তিন বছরের হিসাবে দেখা যায়, কিছু ব্যতিক্রম বাদে প্রতিবারই বেড়েছে দানের টাকা।
কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দার তীরে প্রায় ১০ শতাংশ জমিতে গড়ে ওঠে ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ। সম্প্রসারণের পর মসজিদের আওতাধীন জায়গা দাঁড়িয়েছে তিন একর ৮৮ শতাংশে।
তিন বছরের কোন সময়ে কত টাকা দান
পাগলা মসজিদে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি দানবাক্সের টাকা গণনা করা হয়েছিল। চলতি বছরের ২০ এপ্রিল গণনা করা হয় টাকা।
ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটিতে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি দানবাক্স খুলে পাওয়া যায় দুই কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪৫ টাকা। আর ২০২৪ সালের ২০ এপ্রিল আগের সব রেকর্ড ভেঙে পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মেলে সাত কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা। সেই হিসাবে তিন বছরের বেশি সময়কালে মসজিদটিতে দানের টাকা বেড়েছে সোয়া তিন গুণের বেশি।
মসজিদটিতে ২০২১ সালের ১৯ জুন পাওয়া যায় দুই কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার ৪৯৪ টাকা। একই বছরের ৬ নভেম্বর পাওয়া যায় রেকর্ড পরিমাণ তিন কোটি সাত লাখ ৭০ হাজার ৫৮৫ টাকা।
পরে ২০২২ সালের ১৩ মার্চ দানবাক্সে পাওয়া গিয়েছিল তিন কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার ২৯৫ টাকা। এ ছাড়া ওই বছরের ৩ জুলাই পাওয়া গিয়েছিল তিন কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার ৪১৫ টাকা। একই বছরের ২ অক্টোবর মেলে তিন কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২ টাকা।
তিন মাস এক দিন পর ২০২৩ সালের ৭ জানুয়ারি দানবাক্স খোলা হয়েছিল। ২০টি বস্তায় তখন চার কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা পাওয়া গিয়েছিল।
এরপর রমজানের কারণে চার মাস পর ৬ মে দানবাক্স খোলা হয়েছিল। তখন ১৯টি বস্তায় রেকর্ড পাঁচ কোটি ৫৯ লাখ সাত হাজার ৬৮৯ টাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণালংকার, হীরা ও বিপুল পরিমাণ রুপা পাওয়া গিয়েছিল। ওই বছরের ১৯ আগস্ট খোলা হয়েছিল এ মসজিদের আটটি দানবাক্স। তখন রেকর্ড ২৩ বস্তা টাকা পাওয়া গিয়েছিল। সাড়ে ১৩ ঘণ্টায় ২০০ জনেরও বেশি লোক এ টাকা গণনা শেষে রেকর্ড পাঁচ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৩২৫ টাকা পান।
একই বছরের ৯ ডিসেম্বর খোলা হয়েছিল দানবাক্সগুলো। তখন রেকর্ড ছয় কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। ওই সময়ে পাওয়া যায় বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার।
পাগলা মসজিদে আটটি দানবাক্স থাকলেও তখন থেকে একটি বাড়ানো হয়।
গত বছরের পর এবার ৪ মাস না যেতেই আলোচিত ও ঐতিহাসিক মসজিদটির দানবাক্সে সব রেকর্ড ভেঙে মেলে পৌনে আট কোটি টাকা।
দান করেন কারা
দিনের পাশাপাশি গভীর রাতে গোপনে অনেকে দান করে থাকেন পাগলা মসজিদের দানবাক্সগুলোতে। টাকা, অলংকারের পাশাপাশি প্রতিদিন মসজিদে দান করা হয় হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল। কারা দান করেন এসব টাকা এবং কোন খাতে ব্যয় হয় এসব অর্থ, সে তথ্য জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা।
পাগলা মসজিদের নৈশপ্রহরী মো. মকবুল হোসেন এ মসজিদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন ২৭ বছর ধরে, যার ভাষ্য, ‘শুধু মুসলিম নয়, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এখানে এসে দান করেন। টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার, বৈদেশিক মুদ্রা ছাড়াও প্রচুর পরিমাণ হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলও দান করেন অনেকে। করোনার শুরুতে যখন জনসমাগম বন্ধ ছিল, তখনও অনেকে গভীর রাতে এসে দানবাক্সে দান করেছেন।’
তিনি জানান, অতীতে এ মসজিদে কেবল আশপাশের এলাকার মানুষ দান করতেন। আর এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন এসে টাকা-পয়সা দান করেন। এ ছাড়া বিদেশিরা অনেক সময় আসেন। পুরো মসজিদ ঘুরে দেখে যাওয়ার সময় দানবাক্সে বৈদেশিক মুদ্রা দান করেন।
মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান জানান, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে দান করছেন এই মসজিদে। যারা দান করতে আসেন তারা বলেন, এখানে দান করার পর তাদের আশা পূরণ হয়েছে। আর এ বিষয়টির কারণেই এখানে দান করেন তারা।
টাকা ব্যয় হয় যেসব খাতে
পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, প্রতি মাসে পাগলা মসজিদের স্টাফ বাবদ ব্যয় হয় পাঁচ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ২০২১ সালে দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত ১২৪ জন ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য এবং অসহায় ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচের জন্য ১৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও করোনাকালে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে সাত লাখ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
তিনি জানান, পাগলা মসজিদের টাকায় ২০০২ সালে মসজিদের পাশেই একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে এ মাদ্রাসায় ১৩০ জন এতিম শিশু পড়াশোনা করছে। মসজিদের টাকায় তাদের যাবতীয় ভরণপোষণ ও জামাকাপড় দেয়া হয়ে থাকে। ওয়াকফ এস্টেটের অডিটর দিয়ে প্রতি বছরের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসে পাগলা মসজিদের আয়-ব্যয়ের অডিট করা হয়।
শওকত উদ্দিন জানান, পাগলা মসজিদ ও ইসলামী কমপ্লেক্স পরিচালনার জন্য ৩১ সদস্যের কমিটি রয়েছে। এ কমিটিতে জেলা প্রশাসক সভাপতি এবং কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়াও স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি, আইনজীবী, সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা এই কমিটিতে আছেন।
অতীতে জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসায় দান করা হলেও বর্তমানে সেটি বন্ধ রয়েছে জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, দানের টাকায় আন্তর্জাতিক মানের একটি আধুনিক মসজিদ নির্মাণ করা হবে। তাই কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই অনুদান বন্ধ রয়েছে।
বিপুল পরিমাণ দানের টাকার বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদ এ এলাকার মানুষের একটি আবেগের স্থান, যে কারণে আমরা প্রতিবারই দান হিসাবে বিপুল পরিমাণ টাকা পেয়ে থাকি।
‘আমরা মানুষের স্বপ্ন ও ইচ্ছা অনুযায়ী বর্তমান মসজিদের স্থানে একসাথে ৩০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে এমন একটি বিশাল মসজিদ নির্মাণ করব। আধুনিক স্থাপত্যের এ মসজিদ নির্মাণে অচিরেই নকশা চূড়ান্ত করাসহ কাজ শুরু হবে।’
তিনি জানান, প্রাপ্ত দানের টাকা থেকে পাগলা মসজিদ এবং এর অন্তর্ভুক্ত মাদ্রাসা, এতিমখানা ও গোরস্থানের ব্যয় নির্বাহ করা হয়। এ ছাড়া দানের টাকায় জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানায় সহায়তার পাশাপাশি গরিব ছাত্র ও দুস্থদের আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়।
দানের টাকায় আন্তর্জাতিক ইসলামি কমপ্লেক্স
মেয়র পারভেজ মিয়া জানান, পাগলা মসজিদের দানের টাকায় আন্তর্জাতিক মানের একটি ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। কমপ্লেক্সটি এশিয়া মহাদেশের মধ্যে অন্যতম ধর্মীয় স্থাপনা হিসেবে বানানো হবে। এ জন্য আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ থেকে ১২০ কোটি টাকা। সেখানে একসঙ্গে প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। ২০০ গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া একসঙ্গে পাঁচ হাজার নারীর নামাজের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকবে।
আরও পড়ুন:দেশের নানা প্রান্তে বয়ে যাচ্ছে দাবদাহ, যার ফলে গরমে অতিষ্ঠ বিভিন্ন বয়সী মানুষ। তীব্র দাবদাহের মধ্যে শনিবার হিট স্ট্রোকে চুয়াডাঙ্গা ও পাবনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এমন বাস্তবতায় গা ঝলসানো গরম থেকে মুক্তি কবে মিলবে, তা জানার আগ্রহ অনেকের।
দেশের মানুষ কবে দাবদাহ থেকে মুক্তি পেতে পারে, তা নিয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী এক আবহাওয়াবিদ রোববার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) কিন্তু রংপুর বিভাগে কোনো হিটওয়েভ (দাবদাহ) ছিল না, তবে আজকে রংপুর বিভাগের টেম্পারেচারটা (তাপমাত্রা) বাড়বে এবং এটা মৃদু হিটওয়েভ হবে বলে আশঙ্কা করছি আমরা। এ ছাড়া দেশের যে অবস্থাটা আছে তাপপ্রবাহের, এটা দুই-এক জায়গায় বাড়বে। তা ছাড়া মোটামুটি গতকালকের মতো একই অবস্থা থাকবে।
‘আগামীকাল-পরশু এই দুই দিনও আশা করছি আমরা একই মতো থাকবে; নিয়ারলি আনচেঞ্জড (প্রায় অপরিবর্তিত) যেটা বলি আমরা। (এপ্রিলের) ২৪/২৫ তারিখে একটু কমার সম্ভাবনা আছে, তবে তার মানে এই না যে, তাপপ্রবাহ শেষ হয়ে যাবে। সেটা হয়তো মাঝারি থেকে মৃদুতে আসতে পারে বা দুই-এক জায়গা থেকে কমতে পারে তাপপ্রবাহের হারটা, কিন্তু দেশের বেশির ভাগ জায়গায় তাপপ্রবাহটা এই মাসজুড়েই বিরাজমান থাকবে।’
দেশের কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেখানে মৃদু তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ বইছে ধরা হয়।
তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তীব্র দাবদাহ ধরা হয়। অন্যদিকে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে বলা হয় অতি তীব্র দাবদাহ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর রোববার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানায়, পাবনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে।
মে মাসে দাবদাহ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না, সে বিষয়ে সহকারী আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা বলেন, ‘আসলে আমাদের যে ভৌগোলিক অবস্থান, প্লাস আমাদের যে ক্লাইমেটোলজি (জলবায়ু পরিস্থিতি অর্থে), এই প্রেক্ষিতে এপ্রিল এবং মে মাস হচ্ছে সবচেয়ে উষ্ণতম দুটি মাস। অতীতের যে ক্লাইমেটোলজি বা রিপোর্টগুলো আছে, তাতে দেখা গেছে যে, কখনও কখনও এপ্রিলের থেকে মে মাসেই তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ছিল। তো আমরা সে ক্ষেত্রে আশঙ্কা করতে পারি যে, এপ্রিলের পাশাপাশি মে মাসেও হিটওয়েভটা থাকবে।
‘মে মাস যেহেতু আমাদের মনসুনের (বর্ষাকাল) কাছাকাছি, এর পরেই জুন মাস। জুন মাস থেকেই আমাদের মনসুনটা মোটামুটি অনসেট শুরু হয়। তো সে ক্ষেত্রে জুন মাসে কিছু ময়েশ্চার (বাতাসে আর্দ্রতা) আসতে শুরু করবে। কখনও কখনও দেখা যাবে যে বৃষ্টি, আবার হিটওয়েভ। ময়েশ্চার আসার কারণে গরমের অস্বস্তিটাও বাড়বে, আবার একটু কমবে, তবে হিটওয়েভ থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে যে স্পেলটা আমাদের এপ্রিল মাসে আছে, হয়তো এটার মতো না, তবে তাপপ্রবাহ থাকবে। এপ্রিল ও মে উভয় মাসেরই হিটওয়েভ থাকবে, তবে এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে একটু কম থাকার সম্ভাবনা আছে।’
জুন থেকে দাবদাহ একেবারে চলে যাবে কি না, সে বিষয়ে জেবুন্নেসা বলেন, ‘জুনে যে একেবারে থাকবে না, তা নয়। গত বছর জুন মাসেও বেশ কিছু স্বল্প পরিসরে, ছোট ছোট স্কেলে দুই-তিন দিনের স্পেলে কিছু তাপপ্রবাহ ছিল। যদিও গত বছর সারা বিশ্বে এল নিনো অ্যাকটিভ ছিল। এই বছরটাতে এল নিনো আমরা আশা করছি জুন থেকে কমে যাবে। এল নিনো থেকে নিউট্রাল কন্ডিশন বা লা নিনা পর্যায়ে চলে যাবে। সে ক্ষেত্রে একটু কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
‘হয়তো ছোট স্পেলে এক দিন, দুই দিন, এ রকম একটু থাকতে পারে, তবে আমরা আশা করছি আসলে মের মাঝামাঝি থেকেই একটু তাপপ্রবাহটা কমে যাবে।’
প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্য ও পূর্ব উষ্ণপ্রধান অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণায়ন বা তাপমাত্রা গড় তাপমাত্রার চেয়ে বেশি হওয়াকে এল নিনো বলে।
আরও পড়ুন:থোকায় থোকায় ঝুলছে আঙুর। আর কয়েকদিন পর পেকে গেলে তা গাছ থেকে সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করা হবে। বাতাসে দোল খাওয়া আঙুর বাগানের এমন দৃশ্য দেখা গেল কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বলরামপুর গ্রামে।
ওই গ্রামের বাসিন্দা কাজী বিল্লাল হোসেন খোকন পেশায় কলেজ শিক্ষক। শখ করে করা আঙুর বাগানটি এখন তাকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে আঙুর উৎপাদনের।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, চারপাশে বিস্তৃর্ণ ধানি জমি। তার মাঝেই উঁচু করে তৈরি করা হয়েছে বাঁশের মাচা। সেই মাচায় থোকায় থোকায় ঝুলছে গাঢ় সবুজ রঙের আঙুর।
বাগানে নিবিষ্ট চিত্তে গাছের পরিচর্যা করছিলেন বিল্লাল হোসেন। এ সংবাদ সগ্রাংহককে দেখে এগিয়ে আসেন তিনি। এরপর আগ্রহ নিয়ে ঘুরিয়ে দেখান তার শখের আঙুর বাগান।
বাগানের প্রতিটি কোণায় যত্নের ছাপ স্পষ্ট। শিক্ষকের হাতের ছোঁয়ায় আঙুর গাছগুলো সজীব ও সতেজ হয়ে বাগানে শোভা ছড়াচ্ছে।
বিল্লাল জানান, বছর দুই আগে শখ করে তার নার্সারিতে দুটি আঙুর চারা রোপণ করেন তিনি। সেবার গাছ দুটি থেকে তিনি প্রায় ১৮ কেজি আঙুর পেয়েছিলেন। তারপর ইউটিউব দেখে আঙুর বাগান করার উদ্যোগ নেন তিনি।
তিনি জানান, এ বছর ১৪ শতক জমিতে আঙুর বাগান করেছেন। মোটামুটি লাখ খানেক টাকা খরচ হয়েছে তার। তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এ বাগান থেকে অন্তত ৫ লাখ টাকার আঙুর তিনি বিক্রি করতে পারবেন।
শখের এ কৃষকের চিন্তা, আগামী বছর তিনি বাগানের পরিসর আরও বড় করবেন।
কুমিল্লা জেলার মাটিতে আঙুর চাষের উপযোগিতা আছে কি না তা এ মুর্হুতে বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তবে এ জেলার মাটি সব ধরনের ফল উৎপাদনে সহায়ক বলে জানান অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আইয়ুব মাহমুদ।
কৃষি বিভাগের অব্যাহত সহযোগিতা পেলে আঙুর চাষেও সফলতা আসবে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আঙুর চাষে শিক্ষক খোকনের প্রচেষ্টা অন্যদের উৎসাহিত করবে। পাশাপাশি জেলায় ফলের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে।’
মন্তব্য