বাজারমূল্যের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েনের দাম গত শুক্রবার আবারও হ্রাস পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের পণ্যে শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ায় এই পতন ঘটে।
গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ঘোষণা দেন, তিনি চীনা রপ্তানি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্কারোপ করবেন। পাশাপাশি প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে ‘যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার’ রপ্তানির ওপরও নিয়ন্ত্রণ জারি করা হবে। এর আগে চীন দুর্লভ খনিজ পদার্থের রপ্তানিতে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছিল। সেই পদক্ষেপের পাল্টা হিসেবেই ট্রাম্পের এই ঘোষণা নতুন করে বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তেজনা ছড়িয়েছে। খবর রয়টার্স।
এই সংঘাতের প্রভাব দ্রুতই বিশ্ববাজারে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শেয়ার সূচক এসঅ্যান্ডপি ৫০০ দুই শতাংশের বেশি কমে যায়। একই সঙ্গে বিটকয়েনের দাম ৮ দশমিক ৪ শতাংশ কমে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৮২ ডলারে নেমে আসে। দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রিপ্টোকারেন্সি ইথেরিয়ামের দামও একই সময়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৬৩৭ ডলারে।
বাজারজুড়ে অস্থিরতা তৈরি হয়। বিটকয়েনের দাম কখনো ১ লাখ ১০ হাজার ডলারের কাছাকাছি উঠলেও আবার মুহূর্তেই ১ লাখ ৫ হাজার ডলারের নিচে নেমে আসে। এক দিনে বিটকয়েনের দাম সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। ফলে বিটকয়েনের বাজার মূলধন নেমে আসে ২ দশমিক ২৩ লাখ কোটি ডলারে। একই সময় শেয়ারবাজারেও ব্যাপক বিক্রির চাপ দেখা দেয়, ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ থেকে বিনিয়োগকারীরা দ্রুত সরে আসতে শুরু করেন।
তবে কিছুদিন আগেই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ এবং স্পট বিটকয়েন ইটিএফের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বিটকয়েনের দাম রেকর্ড ১ লাখ ২৫ হাজার ডলারের ওপরে উঠেছিল। কিন্তু নতুন করে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও সম্ভাব্য বাণিজ্যযুদ্ধের আশঙ্কা বিনিয়োগকারীদের ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ থেকে দূরে সরে যেতে বাধ্য করছে। ফলে ইথেরিয়াম ও এক্সআরপির মতো বিকল্প ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলোর দামও ২ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে।
দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পর চলতি বছরের মার্চে ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে ‘ক্রিপ্টোকারেন্সির কৌশলগত রিজার্ভ’ গঠনের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি ক্রিপ্টোবান্ধব একাধিক ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেন-যেমন মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে পল অ্যাটকিনস এবং প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ডেভিড স্যাক্সকে হোয়াইট হাউসে দায়িত্ব দেন। খবর ইকোনমিক টাইমস।
২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিপ্টো খাতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যেমন স্টেবলকয়েনের নিয়ম অনুমোদন ও এসইসির বিধি সংস্কার। এসব কারণে বছরজুড়ে বিটকয়েনের দাম ঊর্ধ্বমুখী ছিল। তবে সাম্প্রতিক বাণিজ্য উত্তেজনা ও ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির প্রভাবে গত কয়েক দিন ধরে ক্রিপ্টো বাজারে ধারাবাহিক পতন দেখা যাচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দরের মাধ্যমে শেষ চার মাসে ৬৬২টি ট্রাকে মোট ৫ হাজার ১৮৫ টন কাাঁচামরিচ বাংলাদেশে আমদানি করা হয়েছে। এই আমদানি থেকে মোট ১৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করা হয়েছে। হিলি স্থলবন্দর কাস্টমস বিভাগের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন বাসসকে শনিবার সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দরের মাধ্যমে ৬৬২টি ট্রাকে ৫ হাজার ১৮৫ মেট্রিক টন কাঁচামরিচ ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছে।
নিজাম উদ্দিন আরও বলেন, কাঁচামরিচ একটি পচনশীল পণ্য হওয়ায় আমরা দ্রুত সব কাস্টম কার্যক্রম সম্পন্ন করে সময়মতো পণ্য রিলিজ করছি। প্রতিদিন আমদানি হওয়া মরিচ ট্রাক থেকে হিলি স্থলবন্দরে খালি করার পর ব্যবসায়ীরা তা দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠান।
তিনি আরও বলেন, বন্দর দিয়ে অন্যান্য পণ্যের আমদানি ও রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে। হিলি স্থলবন্দর কাস্টমস বিভাগ নির্ধারিত অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণ লক্ষ্য বাস্তবায়নে অক্লান্তভাবে কাজ করছে।
দিনাজপুর ল্যান্ড পোর্ট ইমপোর্ট এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়েই এসব কাঁচামরিচ আমদানি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিসিআই) নব-নির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়েছে। বিসিসিসিআইর প্রশাসক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোসাম্মাত নারগিস মুরশিদার সভাপতিত্বে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গত বৃহস্পতিবার এই দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। নব-নির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির অধিকাংশ সদস্য এই সময় উপস্থিত ছিলেন বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ৮ অক্টোবর বিসিসিসিআই নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. সাইদ আলী ২৪ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটির ফলাফল ঘোষণা করেন। এতে মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সভাপতি এবং জামিলুর রহমান সাধারণ সম্পাদক (সেক্রেটারি জেনারেল) নির্বাচিত হন। অন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল বা প্রার্থী না থাকায় সভাপতি পদসহ ২৪ জন কার্যনির্বাহী সদস্য ২০২৫-২০২৭ মেয়াদের জন্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বিসিসিসিআইর দ্বিবার্ষিক নির্বাচনটি পরিচালনা করেন চেম্বারের প্রশাসক মোসাম্মাত নারগিস মুরশিদা।
নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা হলেন- সভাপতি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম, সিনিয়র সহ-সভাপতি হলেন যথাক্রমে হান জিংচাও, এ. জেড. এম. আজিজুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জি. এম. কামরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি হলেন মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান খান, চাও চংচং, খন্দকার আতিউর রহমান, মোহাম্মদ মাসুদ আলী খান
এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে জামিলুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে নাসিমা জাহান বিজলী (বিন্তি), অর্থপরিচালক পদে ফারহান আহমেদ খান, পরিচালক প্রশাসন পদে তালুকদার মো. জাকারিয়া হোসেন, শিল্প ও বাণিজ্য পরিচালক পদে মোহাম্মদ সাজ্জাদ উন নিউয়াজ, জনসংযোগ পরিচালক পদে মো. জিন্নাতুল ইসলাম নির্বাচিত হন।
অন্যান্য নির্বাচিত পরিচালকরা হলেন, মো. আমানুর রহমান, মো. আবদুল্লাহ যাবের, মো. সেলিমুজ্জামান মোল্লা, সান পিন, এটিএম অলতাফ হোসেন (লোটাস), মো. কামরুজ্জামান, মো. রাকিবুল হক, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন আল-আজাদ, আসিফ হক রূপো এবং এস. এম. মুস্তাফা জলাল।
দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বিদায়ী প্রশাসক মোসাম্মাত নারগিস মুরশিদা চেম্বারের আয়-ব্যয়ের সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এবং নবনির্বাচিত সভাপতি মোহাম্মদ খোরশেদ আলমের নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। এ সময় তিনি নবনির্বাচিত সভাপতির প্রতি আস্থা প্রকাশ করে বলেন, কঠিন সময়ে তিনি চেম্বারের পাশে থেকে কাজ করেছেন।
নবনির্বাচিত কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ করে চেম্বারের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায় এবং আগামী দুই বছরের জন্য সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সদস্যদের সুস্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়।
চলতি বছর বিশ্বব্যাপী পোরশের গাড়ি বিক্রি ৬ শতাংশ কমেছে। জার্মান গাড়ি নির্মাতা ফক্সওয়াগন গ্রুপ জানিয়েছে, চীন ও ইউরোপের বাজারে কম চাহিদা এই পতনের প্রধান কারণ।
এই সময়ে পোরশে বিশ্বব্যাপী মোট ২ লাখ ১২ হাজার ৫০৯টি গাড়ি সরবরাহ করেছে। শুধু চীনে গত বছরের তুলনায় সরবরাহ কমেছে ২৬ শতাংশ, যা সংখ্যায় ৩২ হাজার ১৯৫ ইউনিট।
পোরশের বিবৃতি অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে উত্তর আমেরিকায় পোরশের বিক্রি ৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ৪৪৬ ইউনিটে। অন্যদিকে, নিজ দেশ জার্মানিতে পোরশের বিক্রি ১৬ শতাংশ কমেছে। ইউরোপের অন্যান্য দেশ (জার্মানি বাদে) মিলিয়ে বিক্রি ৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ২৮৬ ইউনিট।
জার্মান এই বিলাসবহুল ব্র্যান্ডটি গত মাসে জানিয়েছিল, চীনা বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা, দুর্বল চাহিদা এবং যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির কারণে তারা চলতি বছরের বিক্রির পূর্বাভাস নিম্নমুখী নামিয়ে এনেছে।
সূত্র- আনাদোলু
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবারও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখাচ্ছে। চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম আট দিনেই প্রবাসী আয় হিসেবে দেশে এসেছে প্রায় ৮০ কোটি মার্কিন ডলার। পাশাপাশি গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক ১০টি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ১০ কোটি ৭০ লাখ ডলার কিনেছে। ফলে ওই দিন শেষে দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩১.৯৪ বিলিয়ন ডলার, যা কার্যত ৩২ বিলিয়ন ছোঁয়ার পথে।
তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী এই রিজার্ভের পরিমাণ ২৭ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের রিজার্ভ ছিল ৩১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী ওই সময় রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে রিজার্ভ বেড়েছে আরও প্রায় অর্ধ বিলিয়ন ডলার।
বর্তমান অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ১৪টি নিলামের মাধ্যমে ২ বিলিয়নের বেশি ডলার কিনেছে। এসব নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে মাল্টিপল প্রাইস পদ্ধতিতে, যেখানে প্রতি ডলারের গড় মূল্য ছিল ১২১ টাকা ৮০ পয়সা।
এদিকে প্রবাসী আয়ও গত এক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সদ্য বিদায়ী সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ ডলার, যা আগস্ট মাসের চেয়ে প্রায় ১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার বেশি। উল্লেখযোগ্যভাবে, গত মার্চ মাসে প্রবাসী আয় রেকর্ড ৩২৯ কোটি ডলার ছাড়ায়- যা এক মাসে দেশে আসা সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রবাসী আয়ে এই ইতিবাচক ধারা ও রিজার্ভ বৃদ্ধির পেছনে প্রধান কারণ হলো অর্থপাচার ও হুন্ডি লেনদেনের হার কমে আসা। পাশাপাশি ব্যাংকিং চ্যানেলে স্থিতিশীল বিনিময় হার প্রবাসীদের বৈধ পথে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত করছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে বছর শেষে রিজার্ভ আরও বাড়বে, যা দেশের আমদানি ব্যয় মেটানো ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশের হালাল শিল্পকে বৈশ্বিক বাজারে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং বিদ্যমান সুযোগগুলোকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলেন, হালাল বাজারের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বাংলাদেশে একটি ঐক্যবদ্ধ, জ্ঞানভিত্তিক ও বৈজ্ঞানিকভাবে সমর্থিত হালাল ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।
তারা আরও বলেন, কোনো পণ্য শুধু ধর্মীয়ভাবে বৈধ হলেই যথেষ্ট নয়, বরং তা হতে হবে বিশুদ্ধ, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মতও। ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) হালাল সার্টিফিকেশন উদ্যোগ বাংলাদেশের হালাল শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি এনেছে।
শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের হালাল শিল্পের উন্নয়ন: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক ফোকাস গ্রুপ আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী বলেন, হালাল শিল্প বর্তমানে শুধু একটি ধর্মীয় বিধান নয়, এটি এখন বৈশ্বিক অর্থনীতির দ্রুত-বর্ধনশীল ও সম্ভাবনাময় একটি খাত।
তিনি বলেন, বিশ্বে হালাল পণ্যের বাজার প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের, কিন্তু বাংলাদেশ রপ্তানি করছে মাত্র ৮৫০ মিলিয়ন ডলারের হালাল পণ্য। যার বেশিরভাগই কৃষিভিত্তিক। কার্যকর হালাল ইকোসিস্টেম ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সার্টিফিকেশন বোর্ডের অভাবে দেশের বিশাল সম্ভাবনাময় এই খাতের কাঙ্ক্ষিত বিকাশ হচ্ছে না।
রাজিব এইচ চৌধুরী আরও বলেন, ২০৩৪ সালের মধ্যে বৈশ্বিক হালাল বাজার ৯ দশমিক ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। অথচ বাংলাদেশে কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক অব্যবস্থাপনার কারণে আমরা এ খাতে পিছিয়ে আছি। আন্তর্জাতিক মান বজায় না রাখা, সার্টিফিকেট প্রাপ্তির জটিলতা, আধুনিক ল্যাবের অভাব, দক্ষ জনবল সংকট সব মিলিয়ে হালাল ইকোসিস্টেম গড়ে উঠছে না।
তিনি বলেন, ‘হালাল শিল্প খাতকে আমাদের অর্থনীতির নতুন চালিকাশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হলে স্বতন্ত্র হালাল সার্টিফিকেশন বোর্ড গঠন করা এখন সময়ের দাবি।’
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ‘আইইউবিএটির’ মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মমিনুল ইসলাম বলেন, গত ২ আগস্ট ঢাকায় আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের স্টেকহোল্ডার সংলাপ এবং পরবর্তীতে ১২-১৫ আগস্ট মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত যৌথ কর্মসূচি বাংলাদেশের হালাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথকে আরও সুগম করেছে।
বর্তমানে দেশে ৩০০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান হালাল সার্টিফিকেশন পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে একটি একীভূত জাতীয় হালাল কর্তৃপক্ষ গঠনের, যেখানে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বিএসটিআই, একাডেমিক প্রতিষ্ঠান ও শিল্প খাতের মধ্যে সমন্বয় থাকবে। পাশাপাশি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে হালাল শিক্ষা অন্তর্ভুক্তকরণও অত্যন্ত প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলো ধর্মীয় বিধান, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও জাতীয় ব্র্যান্ডিংকে একত্র করে হালাল খাতকে নীতিনির্ধারণের আওতায় এনেছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে বাংলাদেশও একইভাবে এগোলে বিশাল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে।
দেশে এখনো ‘হালাল কান্ট্রি ব্র্যান্ডিং’ গড়ে ওঠেনি। এ জন্য বড় আকারের আন্তর্জাতিক হালাল এক্সপো আয়োজন এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) প্রকল্প বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন বক্তারা।
আলোচনার শেষে বক্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, যৌথ উদ্যোগ, নৈতিক প্রতিশ্রুতি এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশ একদিন বৈশ্বিক হালাল বাজারে একটি শক্তিশালী অবস্থান দখল করবে। যা শুধু অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিই নয়, বরং আত্মিক পরিতৃপ্তিও এনে দেবে।
সভায় আলোচক হিসেবে অংশ নেন বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের মহাপরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম, বিডার মহাপরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. আরিফুল হক, ইপিবির মহাপরিচালক মিসেস বেবী রাণী কর্মকার, বিএসটিআইর উপপরিচালক (হালাল সার্টিফিকেশন) এস এম আবু সাইদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক ড. মো. আবু সালেহ পাটোয়ারী।
ডিসিসিআই সহসভাপতি মো. সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, সরকারি ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
গত সপ্তাহজুড়ে শেয়ারবাজারে ছিল টানা দরপতন। লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যেসব শেয়ারের দাম বেড়েছে, তার চেয়ে প্রায় চারগুণ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। এমন ঢালাও পতনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন এক সপ্তাহে কমেছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। একই সঙ্গে বড় ধরনের পতন হয়েছে মূল্যসূচকেও, যদিও দৈনিক গড় লেনদেন কিছুটা বেড়েছে।
ডিএসইর তথ্যানুযায়ী, গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ৭৯টির, কমেছে ২৯৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯টির। অর্থাৎ দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার হার ছিল প্রায় চারগুণ বেশি, যা বাজারে নেতিবাচক প্রবণতা স্পষ্ট করে।
সপ্তাহের শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ১৭ হাজার ১২৬ কোটি টাকায়, যা আগের সপ্তাহের ৭ লাখ ২৫ হাজার ৬৩ কোটি টাকার চেয়ে ৭ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ০৯ শতাংশ কম। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমেছিল ১ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা বা ০ দশমিক ২২ শতাংশ।
মূলধনের সঙ্গে কমেছে প্রধান মূল্যসূচকও। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৩২ দশমিক ০৭ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ হ্রাস পায়। আগের সপ্তাহে সূচকটি সামান্য বেড়েছিল ০ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট বা ০ দশমিক ০১ শতাংশ।
অন্যদিকে ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানিগুলোর সূচক ‘ডিএসই শরিয়াহ’ গত সপ্তাহে কমেছে ৩৭ দশমিক ৭১ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ, যেখানে আগের সপ্তাহে এটি বেড়েছিল ০ দশমিক ৫১ পয়েন্ট। ভালো কোম্পানিগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ‘ডিএসই-৩০’ সূচকও সপ্তাহজুড়ে কমেছে ৪৮ দশমিক ৮০ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ২১ দশমিক ২০ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ০১ শতাংশ।
তবে দরপতনের মাঝেও লেনদেনের গতি কিছুটা বেড়েছে। সপ্তাহজুড়ে প্রতিদিন গড়ে ৬৫৭ কোটি ১২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা আগের সপ্তাহের গড় ৬২০ কোটি ১০ লাখ টাকার চেয়ে ৩৭ কোটি ২ লাখ টাকা বা ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেশি।
লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষে ছিল সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল। কোম্পানিটির শেয়ারে প্রতিদিন গড়ে ২১ কোটি ৫০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে, যা মোট লেনদেনের ৩ দশমিক ২৭ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে ছিল সোনালী পেপার, প্রতিদিন গড়ে ১৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। তৃতীয় স্থানে রয়েছে রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, যার প্রতিদিনের গড় লেনদেন ১৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ছিল সামিট এলায়েন্স পোর্ট, ওরিয়ন ইনফিউশন, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিং, রবি আজিয়াটা এবং খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ।
মন্তব্য