পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে হতাশা কাটছে না। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ৬২ কোটি ৬৩ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। গত অর্থ বছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ৬৭ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। এই হিসাবে জুলাই-মার্চ সময়ে গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে পাট খাতে রপ্তানি আয় কমেছে ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
পাঁচ বছর আগে পাটের সুদিন ফিরে আসার হাতছানি দেখা দিয়েছিল; পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে প্রথমবারের মতো রপ্তানি ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৩ সালে দেশের মোট রপ্তানি আয়ে পাটের অবদান ছিল ৯৩ শতাংশ। বাকি ৩ শতাংশ ছিল অন্যান্য পণ্যের।
সেই চিত্র এখন পুরোটাই বিপরীত। ক্রমেই কমে আসে পাটের প্রাধান্য। গত সোমবার প্রকাশিত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুারোর (ইপিবি) প্রতিবেদন বলছে, গত মার্চ মাস পর্যন্ত অর্থাৎ চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) মোট রপ্তানিতে পাটের অবদান মাত্র ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ; গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের পুরো সময়ে (২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন) ছিল ১ দশমিক ৯২ শতাংশ।
বাংলাদেশের সোনালি আঁশ পাটের ‘সোনালি দিন’ ফিরিয়ে আনার কথা বলা হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। বিভিন্ন সরকারের সময়ে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। কিন্তু কাজের কাজ খুব একটা হয়নি। পাঁচ বছর আগে পাটের সুদিন ফিরে আসার হাতছানি দেখা দিয়েছিল; পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে প্রথমবারের মতো রপ্তানি ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। মোট রপ্তানিতে পাট খাতের অবদান ৩ শতাংশ ছাড়িয়েছিল।
কিন্তু এর পর ফের হোঁচট; কমতে থাকে রপ্তানির অঙ্ক। হতাশা দেখা দিয়েছে শুধু পাট ও পাটজাত পণ্যে। বাংলাদেশের সোনালি আঁশ পাটের ‘সোনালি দিন’ ফিরে আসার হাতছানি দেখা দিয়েছিল ২০২০-২১ অর্থ বছরে। ওই বছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ১১৬ কোটি ১৫ লাখ (১.১৬ বিলিয়ন) ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে রপ্তানি তালিকায় চামড়াকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল এই খাত। আগের অর্থ বছরের (২০১৯-২০) চেয়ে রপ্তানি বেড়েছিল ৩১ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
কিন্তু এর পর থেকে কমছেই; নেমে এসেছে ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলারের নিচে।
গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ৮৫ কোটি ৫২ লাখ ডলার আয় হয়েছিল, যা ছিল আগের অর্থ বছরের চেয়ে ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ কম।
২০২২-২৩ অর্থ বছরে আয়ের অঙ্ক ছিল ৯১ কোটি ১৫ লাখ ডলার। আগের অর্থ বছরের চেয়ে কমেছিল ১৯ দশমিক ১৭ শতাংশ।
২০২১-২২ অর্থ বছরে এই খাত থেকে আয় হয়েছিল ১১২ কোটি ৭৬ লাখ (১.১২ বিলিয়ন) ডলার। আগের অর্থ বছরের চেয়ে কমেছিল ২ দশমিক ৯১ শতাংশ।
বছরের পর বছর লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) ২৫টি পাটকল ২০২০ সালের ১ জুলাই বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। সে কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো পাটকল এখন উৎপাদনে নেই; সরকারিভাবে পাট ও পাটজাত পণ্য এখন আর রপ্তানি হয় না। অথচ বন্ধ হওয়ার আগে বিজেএমসির পাটকলগুলো থেকে এ খাতের রপ্তানির ২০ শতাংশের মতো আসত।
বাংলাদেশ পাটপণ্য রপ্তানিকারক সমিতির (বিজেজিইএ) চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসাইন সোহেল বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে প্রায় সোয়া বিলিয়ন ডলার আয় হওয়ায় আমরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম- আমাদের সোনালি আঁশ পাটের সুদিন হয়তো ফিরে আসতে শুরু করেছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, সে আশায় গুড়েবালি।
‘কেনোদিনই আর সোনালী আঁশের সোনালি দিন ফিরে আসবে না। কেননা, প্রতি বছরই এই খাত থেকে রপ্তানি আয় কমছে। চলতি অর্থ বছরেও সেই নেতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সবাই আশা করেছিল, কোভিড-১৯ মহামারি পরিবেশের ক্ষেত্রে নতুন ভাবনার জন্ম দেওয়ায় পাটপণ্যের চাহিদা অনেক বেড়ে যাবে। এ খাতের সম্ভাবনাও দেখা দেবে নতুন করে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন দেশের ক্রেতারা পাটের পরিবর্তে কটন ও সিল্ক দিয়ে তৈরি পণ্য কিনছেন। পলি ফাইবারও ব্যবহার করছেন অনেকে। পাটজাত পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন ক্রেতারা।’
ব্যাংক থেকে বড় ঋণ নিয়ে কিংবা টাকা ছাপিয়ে এবারের বাজেট করা হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। মঙ্গলবার (১৩ মে) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নতুন ভবনে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা মোটামুটিভাবে বাজেটটাকে বাস্তবায়ন করবো। বিরাট একটা গ্যাপ নিয়ে বাজেট করব না। বড় বড় মেগা প্রজেক্ট নিয়ে ধার করে ডেফিসিট দিয়ে এগুলা করব না। ব্যাংক থেকে বড় ঋণ করে, টাকা ছাপিয়ে আমরা এসব করব না। কিছুটা তো ডেফিসিট থাকবে। সেটা আমরা আইএমএফ ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সাথে বসে প্রজেক্টের ব্যাপারে নেগোশিয়েট করবো।’
গতবারের চেয়ে বাজেট ছোট হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা সময় হলেই জানতে পারবেন।’
ক্রয় কমিটির নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের তেলের একটু ঘাটতি আছে। আমরা রাইস ব্রান অয়েল আনার বিষয় কথা বলেছি। বেশিরভাগ প্রস্তাবগুলো পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের। আমাদের নদীর পাড়গুলো ভেঙে গেছে, সেখানে আমরা প্রজেক্ট এপ্রুভ করলাম। নদীগুলো যদি আমরা সংরক্ষণ করি, তাহলে বর্ষা মৌসুমে দেখা যাবে রাস্তা ভাঙতে থাকবে। এর ৬টি প্রজেক্ট। আর বাকিগুলো খাদ্য গুদাম নিয়ে। আর এলএনজি আনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সবার স্বার্থ রেখেই এনবিআরের নতুন অধ্যাদেশ
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ে যে নতুন অধ্যাদেশ করা হয়েছে, সেখানে সবার স্বার্থ সংরক্ষিত আছে বলে মন্তব্য সালেহ উদ্দিন আহমেদ।
কাস্টমস কর্মকর্তারা অভিযোগ করছেন, তাদের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে এনবিআরের অর্ডিন্যান্স করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে কিছুই বলতে চাই না। তারা যা বলার বলবে। আপনারা বিষয়টা ভালো করে পড়বেন। দেখবেন তাদের স্বার্থ সংরক্ষিত আছে। সুতরাং তাদের দুশ্চিন্তা করার কিছুই নেই। এনবিআরটা যেভাবে আছে, তাদের টার্মস অব রেফারেন্স অনুযায়ী একটা ইন্টারন্যাশনাল প্র্যাকটিস।’
তিনি বলেন, ‘পলিসি ডিভিশন আর ইমপ্লিমেন্টেশন ডিভিশন এক থাকে না। সব দেশেই আলাদা থাকে। পলিসি ডিভিশনটা একটু প্রফেশনাল লোক দিয়ে কাজ করতে হয়। অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান এবং জিডিপি সম্পর্কে ধারণা থাকতে হয়। আর এনবিআর করবে এটা ইমপ্লিমেন্ট। এনবিআর যদি এটা পলিসিও করে (যাদের কাজ হলো কালেক্ট করা), তাদের একটা ইন্টারেস্ট থাকে। আমি একটা পলিসি করলাম আবার আমি আদায়ও করলাম।’
সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘আমি বলবো অধ্যাদেশ অন্তত সুচিন্তিতভাবে করা হয়েছে। ওদের সাথে যে আলাপ করা হয়নি; তা না। এনবিআরের হাজার হাজার লোকের সাথে তো আলোচনা করা যায় না। যারা মেম্বর বা সদস্য অবশ্যই তাদের সাথে আলোচনা করা হয়েছে। আবার প্রশাসনের লোকের কিছু মন্তব্য আছে। তাদের সাথেও আলোচনা করা হয়েছে।’
রাজস্ব আদায়ে প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অলরেডি গতবারের তুলনায় রাজস্ব আদায় ২ শতাংশ বেশি হয়েছে৷ এটা হতাশাব্যাঞ্চক না। ফলে আমি আশা করছি, অন্তত গতবারের চেয়ে কম হবে না।’
উত্থান দিয়ে সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসের লেনদেন শুরু হলেও শেষ হয়েছে সূচকের পতনের মধ্য দিয়ে। দাম কমেছে লেনদেনে অংশ নেওয়া ঢাকা-চট্টগ্রামের তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ কোম্পানির।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৪৬ পয়েন্ট। বাকি দুই সূচক শরীয়াভিত্তিক ডিএসইএস কমেছে ১২ পয়েন্ট এবং বাছাই করা কোম্পানির ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ কমেছে ১৬ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৮ কোম্পানির মধ্যে বেশিরভাগের দাম ছিল নিম্নমুখী। ৫৪ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ৩০৯ এবং অপরিবর্তিত আছে ৩৫ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ক্যাটাগরির হিসাবে এ, বি এবং জেড- তিন ক্যাটাগরিতেই কমেছে শেয়ারের দাম। লভ্যাংশ দেওয়া ভালো শেয়ারের এ ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত ২২০ কোম্পানির মধ্যে ৩২ কোম্পানির দরবৃদ্ধি হয়েছে। দর কমেছে ১৭৮ এবং অপরিবর্তিত আছে ১০ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
দাম কমেছে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৬ মিউচুয়াল ফান্ডের বেশিরভাগের। ৩২ কোম্পানির দর পতনের বিপরীতে দর বেড়েছে ২ এবং অপরিবর্তিত আছে ২ কোম্পানির।
২২ কোম্পানির ৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে ডিএসই ব্লক মার্কেটে। এসইএমএল লেকচার ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ড সর্বোচ্চ ২ কোটি ৪৪ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে।
সূচকের পাশাপাশি লেনদেন কমেছে ঢাকার বাজারে। সারাদিনে মোট ৩৪৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, যা গত কার্যদিবসে ছিল ৩৬৪ কোটি টাকা।
৮.১১ শতাংশ দাম বেড়ে ডিএসইতে শীর্ষ শেয়ার ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড। অন্যদিকে ১৬ শতাংশের ওপর দর হারিয়ে তলানিতে মিডাস ফাইন্যান্সিং।
চট্টগ্রামেও পতন
ঢাকার মতো সূচক কমেছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)। সারাদিনের লেনদেনে সিএসইতে সার্বিক সূচক কমেছে ৩৬ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেওয়া ২০১ কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৫৫, কমেছে ১১৩ এবং অপরিবর্তিত আছে ৩৩ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে মোট ৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা গত কার্যদিবসে ছিল ৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
১০ শতাংশ দাম বেড়ে সিএসইতে শীর্ষ শেয়ার আইসিবি সেকেন্ড মিউচুয়াল ফান্ড এবং ১৩ শতাংশের ওপর দর হারিয়ে ডিএসই'র মতো সিএসইতেও তলানিতে মিডাস ফাইন্যান্সিং।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং এনআরবিসি ব্যাংকের ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মোঃ ওবায়দুল হক জনতা ব্যাংক পিএলসি’র নতুন পরিচালক হিসেবে যোগদান করেছেন। ১২ মে সোমবার এ উপলক্ষে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান মুহঃ ফজলুর রহমান। এ সময় ব্যাংকের পরিচালক বদরে মুনির ফেরদৌস, ড. মোঃ আব্দুস সবুর, আব্দুল মজিদ শেখ, এ কে এম খবির উদ্দিন চৌধুরী, আব্দুল আওয়াল সরকার, ড. মোঃ শাহাদাৎ হোসেন ও মোঃ আহসান কবীর এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মজিবর রহমান ও কোম্পানি সেক্রেটারি মোঃ আবদুল আলীম খান উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, মোঃ ওবায়দুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ হতে সন্মানসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে পেশাগত ক্যারিয়ার শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি ভোলার দৌলতখান উপজেলার চরশুভী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
জলবিদ্যুৎ, স্বাস্থ্যসেবা ও সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতার সম্ভাবনার উপর জোর দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে নেপাল, ভূটান ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যের (সেভেন সিষ্টার্স) মধ্যে একটি ‘সমন্বিত অর্থনৈতিক কৌশল’ গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার (১২ মে) ঢাকায় বাংলাদেশ সফররত নেপালের ফেডারেল পার্লামেন্টের হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের ডেপুটি-স্পিকার ইন্দিরা রানা প্রধান উপদেষ্টর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এই আহ্বান জানান।
ঢাকায় নেপাল দূতাবাস আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাংলাদেশ সফর করছেন ইন্দিরা রানা।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা আলাদাভাবে কাজ করার চেয়ে একসঙ্গে কাজ করলে বেশি লাভবান হতে পারি।’ সমন্বিত অবকাঠামো ও জ্বালানি উদ্যোগের মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান এবং ভারতের সাতটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের জন্য একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা থাকা উচিত।’
ইন্দিরা রানার সঙ্গে ড. ইউনূসের আলোচনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল জলবিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশ ও নেপালের পারস্পরিক সহযোগিতা।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ভারতীয় গ্রিড ব্যবহার করে নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য গত অক্টোবরে সই করা বাংলাদেশ-নেপাল-ভারত ত্রিপক্ষীয় বিদ্যুৎ চুক্তির কথা উল্লেখ করেন। বৈঠকে উভয়ই বৃহত্তর পরিসরে আরও জলবিদ্যুৎ উদ্যোগ গ্রহণের ওপর জোর দেন।
আঞ্চলিক স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা সম্প্রসারণে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা। বলেন, ‘রংপুরে নির্মাণাধীন ১০০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি নেপাল ও ভূটানের রোগীদের জন্যও উন্মুক্ত থাকবে। তিনি বলেন, আমরা আঞ্চলিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও অভিন্ন অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বিশ্বাসী।
বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর করার কাঠমান্ডুর আগ্রহের কথা জানান দেশটির ডেপুটি-স্পিকার ইন্দিরা রানা।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সকল সংসদ সদস্য বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী। আমরা অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব শক্তিশালী করতে ও দুই দেশের জনগণের মধ্যে সংযোগ বাড়াতে আন্তরিক।’
তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে ২ হাজার ৭০০ বেশি নেপালি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এসব শিক্ষার্থীর বেশিরভাগই মেডিকেল কলেজে পড়ছেন। ডেপুটি-স্পিকার বাংলাদেশের শিক্ষার মানের প্রশংসা করেন এবংতিনি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রশংসা করেন এবং আরও শিক্ষা বিনিময় ও একাডেমিক সহযোগিতার আহ্বান জানান।
দুই দেশের প্রতিনিধিরা বৈঠকে দুদেশের মধ্যে সরাসরি সংযোগ বাড়ানোর ওপর জোর দেন। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘নেপালের সঙ্গে সরাসরি সড়ক সংযোগ উন্নয়ন করা গেলে বাণিজ্যিক ব্যয় কমবে এবং মানুষের চলাচল ও পণ্য পরিবহন সহজ হবে।’
এসময় বাংলাদেশে নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারী, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ইসরাত জাহান উপস্থিত ছিলেন।
১২ মে ২০২৫ বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) কার্যালয়ের ৫২তম বর্ষপূর্তি ও ৪ (চার) দিনব্যাপী (১২-১৫ মে, ২০২৫) সারা বাংলাদেশের সকল নিরীক্ষা ও হিসাবরক্ষণ অফিসে বিশেষ সেবা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
দিবসটি উদযাপনের অংশ হিসেবে ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে অনলাইনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল মো: নুরুল ইসলাম। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উন্নত বাংলাদেশ গড়ার জন্য গৎবাঁধা চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে চিন্তার সংস্কার করে, সৃজনশীল উপায়ে জনস্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকারি কার্যক্রম পরিচালনা করতে নির্দেশনা প্রদান করেন।
তিনি আরও বলেন, সরকারি সম্পদের যথাযথ কার্যকর ও মিতব্যয়ীতার সাথে ব্যবহার হচ্ছে কিনা তা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেবা সহজীকরণ করে সেবাগ্রহীতাগণের সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সার্ভিস অটোমেশনের পাশাপাশি বিভিন্ন অফিসে আগত সেবা গ্রহীতাগণ, বিশেষ করে সম্মানিত পেনশনার ও সরকারি চাকুরিজীবী এবং অন্যান্য সেবা গ্রহীতাকে আন্তরিকতার সাথে এ ডিপার্টমেন্ট নিয়মিত সেবা প্রদান করে যাচ্ছে এবং সেবাগ্রহীতাগণ সহজে দ্রুত সেবা পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করছেন। তিনি সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে অধিকতর নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতা নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
আলোচনা সভায় হিসাব মহানিয়ন্ত্রক এস এম রেজভী, ডেপুটি সিএজি (সিনিয়র) মোঃ শরীফুল ইসলাম এবং সিজিডিএফ এএইচএম শামসুর রহমানসহ নিরীক্ষা ও হিসাব বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ অনলাইনে সংযুক্ত ছিলেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) কার্যালয়ের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ২০২৫ উপলক্ষ্যে চারদিনব্যাপী (১২-১৫ মে ২০২৫ খ্রি.) "বিশেষ সেবা কার্যক্রম" চলছে। উক্ত কার্যক্রমে অডিট অধিদপ্তরসমূহে অডিট বিষয়ক সেবা এবং দেশব্যাপী সকল হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ে বেতন-ভাতা, পেনশন, জিপিএফ ও অন্যান্য সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
পতন দিয়ে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসের লেনদেন শুরু হলেও শেষ হয়েছে সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে। দাম বেড়েছে লেনদেনে অংশ নেওয়া ঢাকা-চট্টগ্রামের তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ কোম্পানির।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১৯ পয়েন্ট। তবে প্রধান সূচক বাড়লেও বাকি দুই সূচকের সুবিধা করতে পারেনি ঢাকার বাজার।
শরিয়াভিত্তিক ডিএসইএস বেড়েছে ১ পয়েন্ট এবং বাছাইকৃত কোম্পানির ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ কমেছে ৪ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৫ কোম্পানির মধ্যে বেশিরভাগের দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। ১৮৯ কোম্পানির দর বাড়লেও কমেছে ১৬০টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৪৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ক্যাটাগরির হিসাবে এ, বি এবং জেড- তিন ক্যাটাগরিতেই বেড়েছে শেয়ারের দাম। লভ্যাংশ দেওয়া ভালো শেয়ারের এ ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত ২১৬ কোম্পানির মধ্যে ১২২ কোম্পানির দর বেড়েছে। দর কমেছে ৮০ এবং অপরিবর্তিত আছে ১৪ কোম্পানির শেয়ারমূল্য।
দাম বেড়েছে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৬ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বেশিরভাগের। ৩০ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দরে পতন হয়েছে ৩ এবং অপরিবর্তিত আছে ৩ কোম্পানির।
২১ কোম্পানির ৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে ডিএসই ব্লক মার্কেটে। বেকন ফার্মা সর্বোচ্চ ২ কোটি ২৪ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে।
সূচক এবং কোম্পানির শেয়ারের দাম সন্তোষজনক হলেও লেনদেনে সুবিধা করতে পারেনি ডিএসই। সারাদিনে মোট ৩৬৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, যা গত কার্যদিবসে ছিল ৩৬৬ কোটি টাকা।
১০ শতাংশ দাম বেড়ে ডিএসইতে শীর্ষ শেয়ার নর্দান ইসলামি ইনস্যুরেন্স। অন্যদিকে সাড়ে ৩ শতাংশের ওপর দর হারিয়ে তলানিতে নেমেছে বে-লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
চট্টগ্রামেও উত্থান
ঢাকার মতো সূচক বেড়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)। সারাদিনের লেনদেনে সিএসইতে সার্বিক সূচক বেড়েছে ১৯ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৮২ কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৯১, কমেছে ৭১ এবং অপরিবর্তিত আছে ২০ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে মোট ৭ কোটি ২৯ লাখ টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা গত কার্যদিবসে ছিল ২১ কোটি টাকার ওপরে।
৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ দাম বেড়ে সিএসইতে শীর্ষ শেয়ার ফিনিক্স ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এবং ১০ শতাংশ দর হারিয়ে তলানিতে রয়েছে গ্রিন ডেলটা ইনস্যুরেন্স পিএলসি।
২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষ হতে এখনো বাকি এক মাস। এর আগেই দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্সের রেকর্ড গড়লো এই অর্থবছর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ২৫ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮ দশমিক ২ শতাংশ বেশি এবং দেশের ইতিহাসে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় সর্বোচ্চ।
২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। গত অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে এক মাসে হাতে থাকতে ২০২৪-২৫ অর্থবছর রেমিট্যান্সে এই রেকর্ড গড়ল।
এর আগে, চলতি বছরের মার্চে ৩২৮ কোটি ৯৯ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা মাসিক হিসাবে এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ। এপ্রিলে মোট ২৭৫ কোটি ১৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
এদিকে, মে মাসের প্রথম ৭ দিনে দেশের ব্যাংকিং চ্যানেলে ৭৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা গত বছর একই সময়ের তুলনায় ২২ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। গত বছর মে মাসের প্রথম সাত দিনে ৬০ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।
মন্তব্য