অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাজার কারসাজি নিয়ন্ত্রণে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) বলেছি বাজারে কেউ চাঁদাবাজি করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। আর চাঁদাবাজি বন্ধ হলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমবে।
শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ গভর্ন্যান্স ম্যানেজমেন্টের (বিআইজিএম) সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আস্তে আস্তে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। বাজারে পণ্যের দাম একেবারে যে কমেনি তা কিন্তু নয়। আমরা চেষ্টা করছি কৃষকরা যাতে ন্যায্য মূল্যটা পায়। এজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
‘ভোক্তার ডিজিকে বাজার মনিটর করতে বলেছি, যাতে করে বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা যায় । যদিও সে এখন নেই। খুব শিগগিরই ভালো লোক আসবে এখানে। বাজারে চাঁদাবাজি করলে ডিসিরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে।’
তিনি বলেন, ‘আলু ও পেঁয়াজে ট্যাক্স কমানো হয়েছে। দাম শুধু কারওয়ানবাজারে দেখলে হবে না, অন্যান্য বাজারও দেখতে হবে। কারওয়ানবাজারে নিত্যপণ্য চার বার হাতবদল হয়, এটা বন্ধ করা হবে।’
শিল্প-কারখানা প্রসঙ্গে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পোশাক খাতের অস্থিরতা কমাতে মালিক-শ্রমিক এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। দ্রুত এটার সমাধান হবে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগ না থাকায় অর্থ লোপাটকারীদের সহজে ধরে ফেলবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা আরও দৃশ্যমান হবে। সবকিছু আপনারা দেখতে পাবেন।’
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একটা ইউনিট আগে চালু হোক, এরপর দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শুরু হবে।’
এলএনজি ও সার আমদানিসহ মোট সাতটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি (এসিসিজিপি)।
বুধবার অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, সার ও গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে এসব প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।
বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আশা করছি চলতি মৌসুমে সারের সরবরাহে কোনো ঘাটতি হবে না। এছাড়া সরকার এলএনজি আমদানির মাধ্যমে গ্যাসের ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করছে।’
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রস্তাব অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলা আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেটে সিঙ্গাপুরভিত্তিক গানভর সিঙ্গাপুর পিটিই লিমিটেড থেকে দুই কার্গো এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি করবে।
এর মধ্যে প্রথম কার্গোতে ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার টন এমএমবিটিইউ রয়েছে। এর দাম পড়বে ৬৪০ কোটি ১৫ লাখ টাকা। প্রতি এমএমবিটিইউয়ের দর ১৩ দশমিক ৫৭ ডলার। সমপরিমাণের দ্বিতীয় কার্গোর দাম পড়বে ৬ লাখ ৪৯ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। প্রতি এমএমবিটিইউয়ের দাম পড়ছে ১৩ দশমিক ৭৭ ডলার।
পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস, ২০০৮ এর অধীনে কোটেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরবরাহকারী নির্বাচন করে পেট্রোবাংলা।
সার আমদানির জন্য বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) পক্ষে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
সৌদি আরবের সাবিক এগ্রি-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্রানুলার ইউরিয়া আমদানি করবে বিসিআইসি। এর খরচ হবে ১২৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা এবং প্রতি টনের দাম পড়বে ৩৪৬.৩৩ ডলার।
একইসঙ্গে, ৩০ হাজার টন ব্যাগ গ্রানুলার ইউরিয়া কার্নফুলি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে ১২০ কোটি ৭৮ লাখ টাকায় আমদানি করা হবে; যেখানে প্রতি টনের দাম পড়বে ৩৩৫.৫০ ডলার।
নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহে দুটি বাফার গোডাউন নির্মাণের দরপত্র বাতিলের জন্য বিসিআইসির আরেকটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে কমিটি।
সার আমদানির জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এর মধ্যে একটি হলো- বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন মরক্কোর ওসিপি এসএ থেকে ১৪৯ কোটি ৪০ লাখ টাকায় ৩০ হাজার টন টিএসপি সার আমদানি করবে। প্রতি টনের দাম পড়বে ৪১৫ ডলার।
এছাড়া সৌদি আরবের মা’দেন থেকে প্রতি টন ৫৮১ ডলার দরে ২৭৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪০ হাজার টন ডিএপি সার আমদানি করবে বিএডিসি।
মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান এবং তার স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশিরের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) বুধবার দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়ে তাদের ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে।
বিএফআইইউর সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের তথ্য তলব করার এই নির্দেশের ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা-সংশ্লিষ্ট ধারা প্রযোজ্য হবে বলে বিএফআইইউর চিঠিতে বলা হয়েছে। চিঠিতে তলব করা ব্যক্তির নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টের তথ্য দেয়া হয়েছে।
বিএফআইইউর নির্দেশনায় বলা হয়েছে, হিসাব তলব করা ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট তথ্য বা দলিল যেমন হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী চিঠি দেয়ার তারিখ থেকে ৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিএফআইইউতে পাঠানোর জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারে কারসাজির দায়ে গত ২৪ সেপ্টেস্বর তারকা এই ক্রিকেটারকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
আরও পড়ুন:তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম বাড়ানো হয়েছে। ১২ কেজির সিলিন্ডারে দাম বেড়েছে ৩৫ টাকা। একইসঙ্গে লিটার প্রতি অটো গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে প্রায় দেড় টাকা।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বুধবার সংবাদ সম্মেলনে দাম বৃদ্ধির এই ঘোষণা দেন।
দাম বৃদ্ধির কারণে এখন থেকে ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম হবে এক হাজার ৪৫৬ টাকা। আর অটোগ্যাস লিটার প্রতি ৬৬ টাকা ৮৪ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন দর আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকেই কার্যকর হচ্ছে।
আমদানিনির্ভর এলপিজির আন্তর্জাতিক বাজার বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশেও দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছে বিইআরসি।
গত সেপ্টেম্বর মাসে ১২ কেজি এলপি গ্যাসের দাম ছিল এক হাজার ৪২১ টাকা। অন্যদিকে অটোগ্যাস লিটার প্রতি দাম ছিল ৬৫ টাকা ২৬ পয়সা। আগের মাস আগস্টে ১২ কেজি এলপি গ্যাসের দাম ছিল এক হাজার ৩৭৭ টাকা।
২০২১ সালের ১২ এপ্রিলের আগে পর্যন্ত এলপিজির দর ছিল কোম্পানিগুলোর ইচ্ছাধীন। ১২ এপ্রিল বিইআরসি কর্তৃক দর ঘোষণার সময় বলা হয়, আমদানিনির্ভর এই জ্বালানির দাম নির্ধারণে সৌদি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি আরামকো ঘোষিত দরকে ভিত্তি মূল্য হিসেবে ধরা হবে।
আরামকো নির্ধারিত দর উঠা-ওঠা-নামা করলে ভিত্তিমূল্য উঠা-নামা করবে। অন্যান্য কমিশন অপরিবর্তিত থাকবে। ঘোষণার পর থেকে প্রতি মাসে এলপিজির দর ঘোষণা করে আসছে বিইআরসি। টানা তিন মাস ধরে আন্তর্জাতিক বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকায় বাংলাদেশেও এলপিজির দাম বাড়ছে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বৈদেশিক ঋণপ্রাপ্তির চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ঋণ পরিশোধ করেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
সোমবার এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইআরডি। তাতে বলা হয়েছে, জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ ৪৫৮ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ পেয়েছে। তবে একই সময়ে দেশটিকে ঋণের কিস্তি বাবদ ৫৮৯ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে। এতে ঘাটতি ছিল ১৩১ মিলিয়ন ডলার।
ঋণ পরিশোধের হিসাব বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূলধনের ৪১৫ দশমকি ৬ মিলিয়ন ডলার এবং সুদ বাবদ ১৭৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়েছে। এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সুদ পরিশোধে ব্যয় বৃদ্ধি হয়েছে ১৯ মিলিয়ন ডলার।
এই মাসগুলোতে দেশটির বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি ব্যাপক কমায় এই চ্যালেঞ্জকে আরও জটিল করে তুলেছে। কেননা নতুন প্রতিশ্রুতির রেকর্ড মাত্র ২ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
সদ্যসমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। রেমিট্যান্স প্রবাহে গত চার বছরের মধ্যে একক মাসে প্রবাসী আয়ের দিক থেকে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে জুনে ব্যাংকিং চ্যানেলে ২৫৪ কোটি ডলার এবং তার আগে ২০২০ সালের জুলাইয়ে ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্ট বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। এটা আগের অর্থবছরের একই মাসে ছিল মাত্র ১ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার।
এছাড়া আগের মাস আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৮০ মিলিয়ন ডলার। আগস্টে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ছিল ২ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেপ্টেম্বরে প্রতিদিন গড়ে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে আট কোটি ডলার। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এই অংকটা ছেল চার কোটি ৪৫ লাখ ডলার। সে হিসাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
একক মাস হিসেবে গত বছরের তুলনায় এ বছরের সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ৮০.২ শতাংশ। গত বছরের সেপ্টেম্বরের রেমিট্যান্স এসেছিল ১৩৩ কোটি ডলার। তার আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে এসেছিল ১৫৪ কোটি ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বরে দেশে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে তার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৬৩ কোটি ৮৩ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ কোটি ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৬৫ কোটি ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৬২ লাখ ডলার।
আলোচিত সময়ে সরকারি বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, পুলিশের কমিউনিটি ব্যাংক, বিদেশি হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে কোনো রেমিটেন্স আসেনি।
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ব্যাপক রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসীরা আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ১.০৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স বেশি পাঠিয়েছেন, এ হিসাবে প্রবৃদ্ধি ৮০ দশমিক ২২ শতাংশ।
ব্যাংকাররা বলেন, নতুন সরকারের শুরু থেকে প্রবাসীরা হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন। এখন তারা লাইনে দাঁড়িয়ে হলেও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। সে সুবাদে দেশের প্রবাসী আয় ব্যাপক পরিমাণে বাড়ছে।
আরও পড়ুন:গণঅভ্যুত্থান ও বিপ্লবের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত বর্তমান সরকার বাংলাদেশের জন্য নতুন আশার সঞ্চার করেছে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের প্রাণপ্রিয় দেশ এখন গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির সুযোগ পেয়েছে। আমরা সবাই একসঙ্গে এগোলে আমাদের বাংলাদেশ দ্রুততম সময়ের মধ্যে দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে এনে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরিত হবে। আমরা এ মহৎ লক্ষ্যে অবদান রাখতে এবং বাংলাদেশের কল্যাণে নিবেদিতভাবে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। পাশাপাশি আমরা নৈতিক ব্যবসায়িক চর্চা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতে বিশ্বাস করি। সে কারণে আমাদের যেকোনো প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে যেকোনো বিভ্রান্তি বা গুজব দূর করতে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা, প্রমাণপত্র এবং তথ্য প্রদানে সদা প্রস্তুত।
নাফিজ সরাফাত
দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা চৌধুরী নাফিজ সরাফাত সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সামাজিক প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত বিভ্রান্তিকর তথ্যের ব্যাপারে নিজের অবস্থান প্রকাশ করেছেন।
দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোতে ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত ব্যাখ্যা অনুসারে, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত তার ব্যবসায়িক সাফল্যে ঈর্ষান্বিত একটি মহলের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচারের শিকার হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলোকে তিনি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন।
প্রকাশিত ব্যাখ্যায় চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেন, ‘আমাদের হাজারো পরিশ্রমী সহকর্মী এবং স্টেকহোল্ডারদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। অথচ সম্প্রতি লক্ষ করছি, আমার ব্যবসায়িক সাফল্যে ঈর্ষান্বিত একটি চক্র সত্য ও মিথ্যার মিশ্রণ ঘটিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে, যা শুধু সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যমই প্রশ্নবিদ্ধ করছে না, বরং আমরাও অন্যায্যভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছি।’
এ ছাড়া তিনি উল্লেখ করেন যে, তার মালিকানাধীন কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এক টাকাও খেলাপি ঋণ নেই এবং প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথ নিয়ম মেনে কর প্রদান করে আসছে।
তিনি বলেন, ‘প্রায় দেড় দশক ধরে দেশের আর্থিক, অবকাঠামো, শিক্ষা ও সংবাদমাধ্যম খাতের উন্নয়নে আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি।’
প্রথম আলোতে প্রকাশিত ব্যাখ্যার উদ্ধৃতি থেকে জানা যায়, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত দেশে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক বিনিয়োগ নিয়ে এসেছেন, যার মধ্যে রয়েছে General Electric (U.S.), Nebras Power (Qatar) এবং Kohlberg Kravis Roberts (U.S.)-এর মতো খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারত্ব। এ ছাড়াও The US Trade and Development Agency (USTDA)-এর অনুদান ও SERV (Swiss Govt.), DEG, AIIB, OPEC Fund, এবং Standard Chartered Bank-এর দীর্ঘমেয়াদি বৈদেশিক ঋণের সহায়তায় বাংলাদেশে বড় পরিসরের উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।
প্রকাশিত ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। যেখানে অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ওঠে, সেখানে এ বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে পরিচালিত হচ্ছে।
পূর্বাচলে জমি বরাদ্দ নিয়ে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন এবং কেবল ধারণাপ্রসূত বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
এ ছাড়াও পদ্মা ব্যাংক নিয়ে ওঠা বিতর্ক সম্পর্কে তার বক্তব্য ছিল, ‘আমি দায়িত্ব নেয়ার আগেই ফারমার্স ব্যাংক লুটপাটের শিকার হয়েছিল। আমাকে দেয়া দায়িত্ব ছিল ব্যাংকটিকে পুনরুদ্ধার করা।
‘সঠিক পুনর্বিবেচনা ও শ্রেণিবিন্যাস করার পর দেখা যায়, প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণের বোঝা নিয়ে ব্যাংকটি কার্যত দেউলিয়া অবস্থায় ছিল।’
তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, তার সময়ে ব্যাংকটির পরিচালনা রক্ষণশীল ছিল এবং তার নেতৃত্বাধীন পরিচালনা পর্ষদের দেয়া কোনো ঋণ খেলাপি হয়নি।
আরও জানানো হয়, সম্প্রতি চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের বিরুদ্ধে রেইস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের কারসাজির অভিযোগ উঠেছে, তবে তিনি একে পুরোপুরি ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যা দেন।
তার দাবি, প্রতিষ্ঠানটির নামমাত্র চেয়ারম্যান থাকা সত্ত্বেও প্রকৃত মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ ছিল ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান তাহের ইমামের হাতে।
এ বিষয়ে তিনি দীর্ঘদিন আগেই হাইকোর্ট ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (BSEC) কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছেন।
ব্যবসায়িক পরিমণ্ডলে তার কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে বলে যে গুঞ্জন ছড়ানো হচ্ছে, সেটাকেও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে আখ্যা দেন তিনি।
নাফিজ সরাফাত বলেন, ‘আমি আমার সততা, মেধা ও সহকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশেই ব্যবসা করছি এবং ভবিষ্যতেও তা-ই করে যাব।’
এ বিবৃতির মাধ্যমে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত পুনরায় স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি তার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সব ধরনের গুজব ও বিভ্রান্তি দূর করতে প্রয়োজনীয় তথ্য ও ব্যাখ্যা প্রদানে সদা প্রস্তুত।
আরও পড়ুন:সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে টানা চার দিন আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে এ সময়ে বেনাপোল শুল্ক ভবন ও বন্দরে পণ্য উঠানামা, খালাস এবং বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক থাকবে।
ভারতের পেট্রাপোল বন্দর ক্লিয়ারিং এজেন্টস স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্ত্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘শারদীয় দূর্গাপূজার সরকারি ছুটির কারণে ৯ অক্টোবর বুধবার থেকে ১২ অক্টোবর শনিবার পর্যন্ত পেট্রাপোল বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তাই এ সময় বেনাপোল বন্দরের সঙ্গে সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকবে। তবে ইলিশের চালান গ্রহণ করা হবে। ১৩ অক্টোবর রোববার সকাল থেকে আবারও আমদানি-রপ্তানি চালু হবে।’
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা বলেন, ‘দুর্গাপূজার ছুটির কারণে চারদিন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকবে বলে ওপারের ক্লিয়ারিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন পত্র দিয়ে আমাদেরকে অবহিত করেছে।’
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) রাশেদুল সজীব নাজির বলেন, ‘দুর্গাপূজার ছুটির বিষয়টি ওপারের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। তবে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকলেও এপারের বন্দরে পণ্য উঠানামা, খালাস ও পণ্যের শুল্কায়ন কাজকর্ম স্বাভাবিক নিয়মে চলবে। বেনাপোল বন্দরে পণ্য খালাসের পর ভারতীয় ট্রাক দেশে ফিরে যেতে পারবে।’
বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ওসি ইমতিয়াজ ভুইয়া বলেন, ‘পূজার ছুটিতে দুদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকলেও এ সময় দুদেশের মধ্যে যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক থাকবে।’
মন্তব্য