দেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে কয়েকটি পক্ষ। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর শ্রমিকদের ভুল বুঝিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাভার, গাজীপুরসহ বেশকিছু এলাকায় কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন মালিকরা।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের এমন সময়ে পোশাকশিল্পের নিরাপত্তায় সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরে আজ সোমবার রাত থেকে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও শিল্পাঞ্চল পুলিশের যৌথ অভিযান শুরু হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে এই নির্দেশনা দেন।
বৈঠক শেষে বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানান।
গত কয়েকদিন ধরেই নানা ইস্যুতে কারখানাগুলো অস্থির করার চেষ্টা করছে কয়েকটি রাজনৈতিক পক্ষ। শ্রমিকদের নানা ইস্যুতে উস্কানি দিয়ে আন্দোলনে নামতে বাধ্য করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সাভার ও আশুলিয়ায় কয়েকটি কারখানা বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নিরীহ শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
বন্ধ পোশাক কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে রোববার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পলাশবাড়ী এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়তে শোনা যায় নরসিংদী এবং নারায়ণগঞ্জের পোশাক শিল্প এলাকাতেও। কোথাও কোথাও কারখানাগুলোতে বহিরাগতদের প্রবেশের খবরও পাওয়া গেছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশৃঙ্খলায় জড়িত বহিরাগতদের আজ সোমবার রাতের মধ্যে আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা দিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেন। পাশাপাশি মঙ্গলবার থেকে সব কারখানা চালু করতে মালিকদের অনুরোধ করেন তিনি। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বৈঠকে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান উপদেষ্টা।
বৈঠক শেষে বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘আমরা বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র পক্ষ থেকে শ্রম উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে পরিস্থিতি তুলে ধরেছি। শ্রম উপদেষ্টা আমাদের বলেছেন, ‘শ্রমিকদের যৌক্তিক কোনো দাবি থাকলে তা মেনে নেয়া হবে। তবে কোনো পক্ষ যদি অন্য কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এই আন্দোলনের পেছনে নেতৃত্ব দেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।
তিনি আরও বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিশ্চিত করেছেন যে যারা এর সঙ্গে জড়িত এবং অন্যায়ভাবে আন্দোলনকে উস্কে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। আজ থেকেই পুলিশ ও যৌথবাহিনী শিল্পাঞ্চল এলাকায় মোতায়েন করা হবে। তারা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে।’
পিরোজপুর সদরে বুধবার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি প্রাইভেট কার খালে পড়ে আটজন নিহত হয়েছেন।
পিরোজপুর-নাজিরপুর মহাসড়কে উপজেলার কদমতলার নূরানী গেট এলাকায় রাত সোয়া ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে পিরোজপুর ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা গাড়িটির ভেতর থেকে আটজনকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক এ কে এম আসিফ আহমেদ তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
পিরোজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মামুনুর রশীদ জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পিরোজপুর সদর থানায় ফোন করেন তিনি। তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দ্রুত উদ্ধারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা চালান।
নিহত আটজনের মধ্যে দুই পুরুষ, দুই নারী ও চার শিশু রয়েছে, যাদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।
পিরোজপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক সেলিম হোসেন মিয়া বলেন, ‘রাত দুইটা ১৭ মিনিটে আমরা সংবাদ পাই কদমতলা এলাকায় নূরানী গেটে একটি প্রাইভেট কার খালে পড়ে গেছে। সাথে সাথে আমি ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট সেখানে পাঠাই এবং আমি নিজেই সেখানে উপস্থিত হয়ে দ্রুত লাশ উদ্ধার করে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করি।’
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুস সোবহান বলেন, ‘গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে সংবাদটি প্রাপ্ত হয়ে দ্রুত থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় গাড়ির ভেতরে থাকা আটটি মরদেহ উদ্ধার করি, যার মধ্যে দুইজন পুরুষ, দুইজন মহিলা এবং চারজন শিশু রয়েছে।
‘পুলিশ মরদেহগুলো সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে ও লাশের সুরতহাল প্রস্তুত করে। উক্ত লাশগুলোর মধ্যে একই পরিবারের চারজনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মৃত মোতালেব হোসেন সেনাবাহিনীর সিভিল বিভাগে কর্মরত ছিলেন। এ বিষয়ে সদর থানায় যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গৃহীত হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য ফাঁসের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে প্রধান আসামি করে ১৯ জনসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ থেকে ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এই মামলায় ১১ নম্বর আসামি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য নিয়োগ পাওয়া উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী।
এনামুল হক নামের এক ব্যক্তি বুধবার রাজধানীর কাফরুল থানায় এই মামলা করেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাফরুল থানার ওসি কাজী গোলাম মোস্তফা।
তিনি বলেন, ‘মামলা হয়েছে। বাকি তথ্য হেডকোয়ার্টার থেকে দেয়া হবে।’
মামলার এজাহারে বলা হয়, সজীব ওয়াজেদ জয় ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ক্ষমতার অপব্যবহার করে সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে জনগণের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য বিক্রি করেছেন। জাতীয় নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে, ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিসেস লিমিটেডকে এনআইডির তথ্য ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসার অনুমতি দেন অভিযুক্তরা। সেসব তথ্য দেশ ও দেশের বাইরের প্রায় ১৮২টি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়। তৃতীয় পক্ষের কাছে তথ্য পাচার হওয়ায় জনগণের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে।
এভাবে জনসাধারণের এনআইডির তথ্য বিক্রি করে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগও আনা হয় এই মামলায়।
মামলার আসামিদের মধ্যে সজীব ওয়াজেদ জয় ছাড়াও রয়েছেন- সাবেক ডাক এবং টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক; সাবেক ডাটা সেন্টার পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহ; ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিসের পরিচালক ওয়াহিদুর রহমান শরিফ; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম; সাইবার নিরাপত্তা, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, ডাক, টেলিযোগযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সাবেক নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাহাবুবুর রহমান; জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সাবেক পরিচালক (অপারেশন) আবদুল বাতেন; নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সাবেক সিনিয়র মেইন্টেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার মু. আশরাফ হোসেন; ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. রাকিবুল হাসান; মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক উপ-সচিব মো. রেজাউল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক (সদ্য নিয়োগ পাওয়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য) ড. মো. হায়দার আলী; অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহফুজুল; রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, স্থানীয় সরকার বিভাগের সাবেক সিস্টেম এনালিস্ট অলিউল হাসান; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপসচিব মো. তবিবুর রহমান; জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের সাবেক সহকারী পরিচালক মুহা. সরওয়ার হোসেন; জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের সাবেক পরিচালক আব্দুল মমিন সরকার; জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম; বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ম্যানেজার (সিকিউরিটি অপারেশন) মোহাম্মদ মহিদুর রহমান খান; ম্যানেজার, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সফটওয়্যার ডেভেলপার মো. সিদ্দীকুর রহমান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাদী এনামুল হক বলেন, ‘এজাহারে আমি আমার বক্তব্য দিয়েছি। সেটিই আমার বক্তব্য।’
এ ব্যাপারে জানতে কুবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী ও সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মান্নান জামিন পেয়েছেন। বুধবার বিকেলে সুনামগঞ্জের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. হেমায়েত উদ্দিন তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।
আদালতে এর আগে সকালে এম এ মান্নানের জামিন শুনানিতে দু’পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল হয়। হট্টগোলের এক পর্যায়ে এজলাস ছেড়ে যান বিচারক। পরে বেলা আড়াইটায় শুনানির সময় নির্ধারণ করা হয়।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও এম এ মান্নানের আইনজীবী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার এম এ মান্নানের পক্ষে জামিন শুনানির এডমিশন করা হয়। এরপর আদালত আজ শুনানির তারিখ ধার্য করেন। এভাবে এই আদালতে এর আগে বহুবার জামিন শুনানি হয়েছে। এ নিয়ে বাদী পক্ষ সকালে হট্টগোল শুরু করলে আদালত বিকেলে শুনানি করেন। অসুস্থতা ও বয়স বিবেচনায় সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানের জামিন মঞ্জুর করে আদালত।’
বাদীপক্ষের আইনজীবী মল্লিক মইনউদ্দিন সোহেল বলেন, ‘কোনো আইনজীবীর সাবমিশন ছাড়া এডমিশনটা অস্বাভাবিক। এতে আদালতকে নিয়েও প্রশ্নের উদ্রেক হয়। আমরা মনে করছি অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জামিন শুনানি অস্বাভাবিকই হবে। এজন্য আমরা জামিন শুনানির আপত্তি জানিয়েছি।’
বাদীপক্ষের আরেক আইনজীবী শেরেনুর আলী বলেন, “আমরা বলেছি, এই মামলাটা এই আদালতে অস্বাভাবিকভাবে আনা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা বাদী পক্ষ জানি না। এ নিয়ে আজ শুনানি করতে চাই না।
“অন্যান্য মামলার মতো এই মামলার শুনানির তারিখ পরবর্তীতে দেয়ার জন্য আদালতকে বলেছি আমরা। কিন্তু আদালত আমাদের কথা শুনতে চাননি। আসামি পক্ষ শুনানিতে অংশগ্রহণের জন্য তোড়জোর করেছে। এ নিয়ে হট্টগোল হয়েছে। পরে ‘আদালত’ এজলাস থেকে নেমে যান।”
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বর্তমানে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দি হিসেবে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মঙ্গলবার সকালে সিলেট কারাগার থেকে তাকে ওসমানী হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কেবিনে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তাকে মেডিসিন বিভাগের অধীনে কেবিনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, ‘সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রীর বুকে ব্যথা রয়েছে। এছাড়া তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই। তার চিকিৎসার জন্য ছয় সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।’
সুনামগঞ্জ ৩ (জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ) আসনের চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মান্নানকে ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ এলাকার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন তাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকে তিনি সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে ছিলেন। শনিবার বিকেলে তাকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম-১১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফকে আহত অবস্থায় কারাগার থেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি এম এ লতিফ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাথরুমে পড়ে মাথায় আঘাত পান। পরে তাকে চমেক হাসপাতালে আনা হয়। বর্তমানে তিনি নিউরোসার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন।
চমেক সূত্র জানায়, এম এ লতিফ মাথায় আঘাত পেয়েছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার মস্তিষ্কে জমাট বাঁধা রক্তের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে। তবে বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত। চিকিৎসা চলছে।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফকে এখানে আনা হয়েছে। তিনি বাথরুমে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছেন। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তার মাথায় একটা সমস্যা পাওয়া গেছে। সমস্যাটা হলো ব্রেনে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে, যেটাকে আমরা চিকিৎসা ভাষায় হেমাটোমা বলি। এছাড়া তিনি বাইপাসের রোগী। তিনি এখানে চিকিৎসাধীন আছেন।’
এ বিষয়ে কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘এম এ লতিফ অজু করতে গিয়ে বাথরুমে পড়ে মাথায় আঘাত পান। এই ঘটনাকে অন্যভাবে বলে গুজব রটানো হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ১৬ আগস্ট রাতে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী এলাকা থেকে এম এ লতিফকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এরশাদ নামে এক ব্যক্তি আহত হওয়ার ঘটনায় এম এ লতিফসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখসহ ১০০ থেকে ১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করা হয়। এ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদের শাহপরীরদ্বীপের মোহনা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশি পাঁচ জেলেকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মাধ্যমে ফেরত পাঠিয়েছে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সদস্যরা।
টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ার জেটি ঘাট দিয়ে বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে জেলেদের দেশে ফেরত আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ।
জেলেদের সোমবার দুপুরে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবদুস সালাম।
ফেরত আসা জেলেরা হলেন শাহপরীরদ্বীপের জালিয়াপাড়ার আবদুর রহিমের ছেলে মো. আলম (২২), আবদুল মজিদের ছেলে মো. রাসেল মিয়া (২৩) ও মো. সাইফুল মিয়া (১৭), রফিকুল ইসলামের ছেলে বোরহান উদ্দিন (১৯) ও চকরিয়ার খোরশেদ আলমের ছেলে মো. রাশেদ (২৪)।
ইউপি সদস্য আবদুস সালাম জানিয়েছিলেন, ‘সোমবার ধরে নিয়ে গেলেও বিষয়টি জানাজানি হয়েছে মঙ্গলবার দুপুরে। জেলেদের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে, একটি নৌকা যোগে নাফ নদে মাছ ধরতে নামলে এদের অস্ত্রধারী আরাকান আর্মির সদস্যরা মিয়ানমারের দিকে নিয়ে যান। বিষয়টি বিজিবিকে অবহিত করা হয়েছিল।’
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর মিয়ানমারের সাথে যোগাযোগ করা হয়। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের জের ধরে মিয়ানমারের ওই অংশটি আরাকান আর্মির দখলে রয়েছে। ফলে আরাকান আর্মির সদস্যরাই এদের ধরে নিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হয়েছিল।
‘পরে মিয়ানমারের ওই পাড়ে সক্রিয় থাকা সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশি ৫ জেলেকে ফেরত দিতে সম্মত হন।’
বিজিবির এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আরাকান আর্মির সাথে আলোচনার পর বুধবার সকালে বিজিবির একটি প্রতিনিধিদল নাফ নদের শূন্যরেখা যায়। সেখানে আলোচনার পর পাঁচ জেলেকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি।’
ফেরত আসা জেলেদের পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান বিজিবির এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:শেরপুরে আকস্মিক বন্যায় গবাদি পশুর খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
বন্যার অজুহাতে গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারি সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন বানভাসিরা।
গবাদি পশু বাঁচাতে দ্রুত সরকারি সহায়তা প্রদানের দাবি করেছেন তারা।
১৯৮৮ সালের পর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখেছেন শেরপুরের লোকজন। হঠাৎই উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতি বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় নাজেহাল হয়ে পড়েছেন জেলার মানুষ। টানা চার দিনের বন্যায় ভেঙে পড়েছে জনজীবন।
গবাদি পশু নিয়ে বেশ বিপাকে রয়েছেন বানভাসিরা। বাড়িঘর ও গোয়ালঘরে পানি প্রবেশ করায় রাস্তার পাশে ও উঁচু স্থানে গবাদি পশু নিয়ে আশ্রয় নেন বন্যা কবলিতরা।
বন্যার পানিতে সবজি ক্ষেতসহ মাঠ ডুবে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে ঘাসের অভাব। এ ছাড়া বাড়িঘরে পানি ওঠায় নষ্ট হয়ে গেছে খড়ের গাদা।
গাজীরখামারের করিম মিয়া বলেন, ‘এবার বন্যায় সব শেষ। ধান সব শেষ। খেড় (খড়) কই পামু পরে। আর সব তো ডুইবা আছে। ঘাসও নাই। কামাই, রোজগারও নাই। গরুর খাওয়া কিনমু ক্যামনে?’
বালুরঘাটের হারুন বলেন, ‘গরু-ছাগল নিয়া বিপদে পড়ছি। গরু রাস্তায় নিয়া রাখছি। রাতে পাহারা দিতাছি। গরুর খেড় সব ডুইবা গেছে।’
কলসপাড়ের সামসুল বলেন, ‘বন্যায় গরু-ছাগলের জন্য খাওয়া কেউ দিলে এল্লা উপকার হইত। টাকা-পয়সাও নাই যে খাওয়া কিনমু। ওদেরও পেট আছে। অনেক কষ্ট করতাছে গরু-ছাগল গুইল্লা।’
কলসপাড়ের রফিকুল বলেন, ‘আমরা বন্যার এত দিনেও কোনো সহায়তা পাইনি। আমাদের গবাদি পশু নিয়ে খুব বিপদে আছি। নিজেরা খাবার পাইতাছি না। আবার গরু-ছাগলের খাওয়ার ব্যবস্থা নাই।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এবিএম আবদুর রউফ জানান, প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে নিয়মিত কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গবাদিপশুর খামারিদের প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ ছাড়া খাদ্য সংকট নিরসনে দুর্গত এলাকায় ৩ টন গোখাদ্য বিতরণ করা হবে।
তিনি আরও জানান, এ বন্যায় জেলার ৬৬ জন খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দুর্গত এলাকাগুলোতে অনেক প্রাণী খাদ্য সংকটে পড়েছে এবং নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে।
আরও পড়ুন:সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের জামিন শুনানিতে দুই পক্ষের আইনজীবীদের হট্টগোলে বুধবার এজলাস ছেড়েছেন বিচারক।
বেলা ১১টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন শুনানিতে এ ঘটনা ঘটে।
জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ মো. হেমায়েত উদ্দিন এজলাসে ওঠার পরপরই দুই পক্ষের হট্টগোল শুরু হয়। এমন ঘটনার পর এজলাস ছাড়েন বিচারক। পরে বেলা আড়াইটায় শুনানির সময় নির্ধারণ হয়।
বাদীপক্ষের আইনজীবী শেরেনুর আলী বলেন, ‘বিচারক এজলাসে আসার পরে দুই পক্ষে হট্টগোল হয়েছে। আমরা বলেছি, এই মামলাটা এই আদালতে অস্বাভাবিকভাবে আনা হয়েছে। এই বিষয়ে আমরা বাদীপক্ষ জানি না।
‘এ নিয়ে আজকে শুনানি করতে চাই না। অন্যান্য মামলার মতো এই মামলার শুনানির তারিখ পরবর্তী সময়ে দেয়ার জন্য আদালতকে বলেছি আমরা, কিন্তু আদালত আমাদের কথা শুনতে চাননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আসামিপক্ষ শুনানিতে অংশগ্রহণের জন্য তোড়জোর করেছে। এটি নিয়ে হট্টগোল হয়েছে। পরে আদালত এজলাস থেকে নেমে গেছেন।’
শুনানিতে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটরদের (এপিপি) ভূমিকা কী ছিল, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘পিপি, এপিপিরা রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে থাকার কথা। তারা আসামিপক্ষে থেকেছেন। নিম্ন আদালতেও এ বিষয় নিয়ে আমরা প্রতিবাদ করেছি।
‘আজকেও করেছি। এই পরিস্থিতিতে সুনামগঞ্জে বিচার কার্যক্রম আগামীতে আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে।’
বাদীপক্ষের আরেক আইনজীবী মল্লিক মইনউদ্দিন সোহেল বলেন, ‘কোনো আইনজীবীর সাবমিশন ছাড়া অ্যাডমিশনটা অস্বাভাবিক। এতে আদালতকে নিয়েও প্রশ্নের উদ্রেক হয়।
‘আমরা মনে করছি এই অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জামিন শুনানি অস্বাভাবিকই হবে। এমন আশঙ্কা রয়েছে।’
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও আসামিপক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার মামলার অ্যাডমিশন হয়েছে। আজকে শুনানির জন্য ধার্য তারিখ দেয়া হয়। এভাবে এই আদালতে এর আগে বহুবার হয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য