এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা ছয়টি ব্যাংকের ঋণ বিতরণে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক। একইসঙ্গে এসব ব্যাংক থেকে এলসি খুলতেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এসব ব্যাংক নতুন করে ঋণ বিতরণ করতে পারবে না। আগের ঋণ নবায়নও করতে পারবে না। এমনকি এই ব্যাংকগুলো এখন থেকে নতুন করে কোনো আমদানি এলসিও খুলতে পারবে না।
এর আগে গত সপ্তাহে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন এই ছয় ব্যাংকসহ মোট নয়টি ব্যাংকের ইস্যুকৃত এক কোটি টাকা বা তার বেশি টাকার চেক নিজ নিজ ব্যাংক থেকে বা অন্য কোনো ব্যাংকের মাধ্যমে নগদায়ন বন্ধের নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের প্রভাব কমাতে এবং তাদের ঋণ গ্রহণ বন্ধ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই বিধিনিষেধ আরোপ করে। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গ্রুপটির সরাসরি সম্পর্ক ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এস আলমের মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো দীর্ঘদিন ধরে ঘাটতিতে রয়েছে। নামে-বেনামে ঋণ দিয়ে এই ব্যাংকগুলোতে এমন সংকট তৈরি হয়েছে। তারপরও সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদের বিশেষ সুবিধার মাধ্যমে এসব ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্ট থেকে নিয়মিত টাকা সরবরাহ করেছেন।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩০ জুন গভর্নরের অনুমোদনে বাংলাদেশ ব্যাংক এস আলম গ্রুপের প্রভাব থাকা ইসলামি ব্যাংকগুলোকে একদিনে ৩৫ হাজার কোটি টাকা তারল্য সহায়তা দিয়েছে।
এর মধ্যে সরকার পরিবর্তনের পর বেনামি ঋণের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক থেকে কাগুজে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একদিনে ৮৮৯ কোটি টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করা হলে ব্যাংকটি তা ঠেকিয়ে দেয়।
এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন আটটি ব্যাংকসহ নয়টি ব্যাংকই চরম অর্থ সংকটে রয়েছে। এসব ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সিআরআর ও এসএলআর বজায় রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। তাদের চলতি হিসাবেও বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, এসব ব্যাংক আমানতের চেয়ে বেশি ঋণ দেয়ায় সেগুলোর চলতি হিসাবের ঘাটতি আরও বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ বিবেচনায় এসব ব্যাংককে জামানত ছাড়াই টাকা ধার দিচ্ছে এবং লেনদেন হিসাব চালু রেখেছে। এ কারণেই মূলত নতুন ঋণ দেয়ার সুযোগ পাচ্ছিলো ব্যাংকগুলো।’
এদিকে এস আলমের পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে থাকা হিসাব তলব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তাদের নামে থাকা ক্রেডিট কার্ডের তথ্যও চাওয়া হয়েছে। ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ও ডাক বিভাগের কাছে থাকা হিসাবের তথ্যও চাওয়া হয়েছে।
এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। সদ্যবিদায়ী সরকারের আমলে সুবিধাভোগী অন্যতম বড় শিল্পগোষ্ঠী ছিল এই শিল্প গ্রুপ।
আরও পড়ুন:সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান, তার ভাই ও পরিবারের অন্য সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। সূত্র: ইউএনবি
এর আগে আজিজ খান ও তার পরিবারের সদস্যদের অ্যাকাউন্টের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
বিএফআইইউ এক চিঠিতে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের বিধান অনুযায়ী আজিজ খান, তার ভাই ও পরিবারের অন্য সদস্যদের ব্যাংক হিসাবে ৩০ দিনের জন্য লেনদেন বন্ধ রাখতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে।
সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ জন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর একজন।
মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান এবং তার স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশিরের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) বুধবার দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়ে তাদের ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে।
বিএফআইইউর সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের তথ্য তলব করার এই নির্দেশের ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা-সংশ্লিষ্ট ধারা প্রযোজ্য হবে বলে বিএফআইইউর চিঠিতে বলা হয়েছে। চিঠিতে তলব করা ব্যক্তির নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টের তথ্য দেয়া হয়েছে।
বিএফআইইউর নির্দেশনায় বলা হয়েছে, হিসাব তলব করা ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট তথ্য বা দলিল যেমন হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী চিঠি দেয়ার তারিখ থেকে ৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিএফআইইউতে পাঠানোর জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারে কারসাজির দায়ে গত ২৪ সেপ্টেস্বর তারকা এই ক্রিকেটারকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
আরও পড়ুন:সদ্যসমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। রেমিট্যান্স প্রবাহে গত চার বছরের মধ্যে একক মাসে প্রবাসী আয়ের দিক থেকে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে জুনে ব্যাংকিং চ্যানেলে ২৫৪ কোটি ডলার এবং তার আগে ২০২০ সালের জুলাইয়ে ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্ট বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। এটা আগের অর্থবছরের একই মাসে ছিল মাত্র ১ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার।
এছাড়া আগের মাস আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৮০ মিলিয়ন ডলার। আগস্টে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ছিল ২ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেপ্টেম্বরে প্রতিদিন গড়ে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে আট কোটি ডলার। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এই অংকটা ছেল চার কোটি ৪৫ লাখ ডলার। সে হিসাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
একক মাস হিসেবে গত বছরের তুলনায় এ বছরের সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ৮০.২ শতাংশ। গত বছরের সেপ্টেম্বরের রেমিট্যান্স এসেছিল ১৩৩ কোটি ডলার। তার আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে এসেছিল ১৫৪ কোটি ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বরে দেশে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে তার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৬৩ কোটি ৮৩ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ কোটি ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৬৫ কোটি ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৬২ লাখ ডলার।
আলোচিত সময়ে সরকারি বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, পুলিশের কমিউনিটি ব্যাংক, বিদেশি হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে কোনো রেমিটেন্স আসেনি।
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ব্যাপক রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসীরা আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ১.০৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স বেশি পাঠিয়েছেন, এ হিসাবে প্রবৃদ্ধি ৮০ দশমিক ২২ শতাংশ।
ব্যাংকাররা বলেন, নতুন সরকারের শুরু থেকে প্রবাসীরা হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন। এখন তারা লাইনে দাঁড়িয়ে হলেও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। সে সুবাদে দেশের প্রবাসী আয় ব্যাপক পরিমাণে বাড়ছে।
আরও পড়ুন:চলতি সেপ্টেম্বরের চার সপ্তাহেই রেমিট্যান্স প্রবাহ দুই বিলিয়ন ডলার (২১১ কোটি ডলার) ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে) এর পরিমাণ ২৫ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকার বেশি।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি মাস সেপ্টেম্বরের প্রথম ২৮ দিনে ২১১ কোটি ৩১ লাখ ১০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আর প্রতিদিন আসছে গড়ে ৭ কোটি ৫৫ লাখ ডলার বা ৯০৬ কোটি টাকা। যদিও আলোচিত সময়ে সাতটি ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি।
আলোচিত সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৫৮ কোটি ৬৫ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৯ কোটি ২৬ লাখ ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৪২ কোটি ৮৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫৩ লাখ ডলারের বেশি রেমিট্যান্স।
আলোচিত সময়ে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি এমন ব্যাংকের সংখ্যা সাতটি। এর মধ্যে রয়েছে- রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএল ও বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা রাকাব এবং বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- কমিউনিটি ব্যাংক, আইসিবি ব্যাংক, বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অফ পাকিস্তান এবং স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, আগস্ট মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২২২ কোটি (২ দশমিক ২২ বিলিয়ন) ডলার। এটা তার আগের বছরের (আগস্ট-২০২৩) একই সময়ের চেয়ে ৬২ কোটি ডলার বেশি। গত বছরের আগস্ট মাসে এসেছিল প্রায় ১৬০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স।
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগকে সমর্থন করতে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ৩৫০ কোটি ডলার সহজ শর্তে ঋণ দেবে।
নিউ ইয়র্ক সময় বুধবার জাতিসংঘ সদরদপ্তরে সাধারণ পরিষদের অধিবেশেনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা সাক্ষাৎ করেন। ওই সময় বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট এ সহায়তার ঘোষণা দেন।
অধ্যাপক ইউনূসের দীর্ঘদিনের বন্ধু অজয় বাঙ্গা বলেন, ‘কমপক্ষে ২ বিলিয়ন ডলার হবে নতুন ঋণ এবং আরও ১.৫ বিলিয়ন ডলার বিদ্যমান কর্মসূচি থেকে পুনঃব্যবহার করা হবে।’
তিনি জানান, বিশ্বব্যাংক ডিজিটালাইজেশন, তারল্য সংকট থেকে উত্তরণ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ এবং পরিবহন খাতের সংস্কারে সহায়তা দিতে এ ঋণ দেবে।
সাক্ষাৎকালে অধ্যাপক ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গৃহীত ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচির জন্য বিশ্বব্যাংকের সহায়তা কামনা করেন।
তিনি বিশ্বব্যাংকের ঋণ কর্মসূচিতে উদ্ভাবন আনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘দেশ পুনর্গঠনের এটি একটি বড় সুযোগ।’
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট দক্ষিণ এশিয়ায় জ্বালানি খাতের সহযোগিতা এবং নেপাল ও ভুটানে উৎপাদিত জলবিদ্যুৎ কীভাবে ভারত ও বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভাগ করা যেতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করেন।
সাক্ষাৎকালে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মূল নীতি হার (রেপো রেট) ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটি আগামীকাল বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) থেকে কার্যকর হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক একই সময়ে স্ট্যান্ডিং ল্যান্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) এবং স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) যথাক্রমে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ১১ ও ৮ শতাংশ করেছে।
পলিসি রেট বাড়লে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া ব্যয়বহুল হবে। আর তা জনগণকে ব্যয় সংকোচন ও চাহিদা কমাতে বাধ্য করবে। এর ফলে পরবর্তীতে মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস পাবে।
গত ২৫ আগস্ট পলিসি রেট ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৯ শতাংশ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিগত সরকার সবশেষ ৮ মে পলিসি রেট ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে সাড়ে ৮ শতাংশ করেছিল। সে সময় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মূল্যস্ফীতি কমার কোনো লক্ষণ না থাকায় সুদের হার বাড়ানো হয়, যা গত বছরের মার্চ থেকে ৯ শতাংশের বেশি ছিল।
১২ মাস পর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশে। গত জুলাইয়ে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা ২০১০-১১ অর্থবছরের পর সর্বোচ্চ। ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আরও খারাপ হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ২০২৫ সালের মার্চ বা এপ্রিলের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৬ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন।
আরও পড়ুন:ব্যাংকিং খাত সংস্কার, অর্থ পাচার রোধ ও ট্যাক্স রিটার্ন জমার ক্ষেত্রে আধুনিকায়নের বিষয়ে আইএমএফের কারিগরি সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইএমএফের আবাসিক প্রতিনিধি জয়েন্দু দে-সহ নয় সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানা সংস্কারের জন্য অর্থ প্রয়োজন। বৈঠকে এ বিষয়ে আইএমএফ মিশনকে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কী কী সংস্কার করেছে, তা-ও তাদের জানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে আইএমএফের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দরকার।’
সরকার নিজস্ব রিসোর্স ব্যবহার করেই অর্থনৈতিক খাতে এগিয়ে যেতে চায় বলেন উল্লেখ করেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, তবে আইএমএফ বড় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বাংলাদেশের। তাই তাদের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে চায় সরকার।
ড. সালেহউদ্দিন জানান, এ বিষয়ে শুধু আইএমএফ নয়; বিশ্বব্যাংকসহ অন্য দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তার বিষয়ে কাজ করছে দাতা সংস্থাগুলো। আগামী অক্টোবরে ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হবে।
মন্তব্য