চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে ২০১৩ সালে অনুমোদন পায় সাবেক ফারমার্স ব্যাংক। অনুমোদন পাওয়ার পর পরই ব্যাংকটি নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে। ফলে প্রতিষ্ঠার মাত্র তিন বছর পরই বেঁচে থাকার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় ব্যাংকটি।
ফারমার্স ব্যাংক যাত্রার শুরু থেকেই অবৈধ নিয়োগ-বাণিজ্য, নিয়মবহির্ভূত ঋণ মঞ্জুর, ঋণ বিতরণ এবং ঋণের টাকা অন্যত্র সরিয়ে নেয়াসহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন ব্যাংকটির তৎকালীন চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এবং ইসি কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক ওরফে বাবুল চিশতী।
ঋণ বিতরণে অনিয়ম, জালিয়াতি ও লুটপাটে অতীতের যেকোনো ব্যাংক কেলেঙ্কারি-অনিয়মকে ছাড়িয়ে যায় এই ব্যাংক। এখানেই থেমে থাকেননি ম খা আলমগীর ও বাবুল চিশতী। গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে পে-অর্ডারের মাধ্যমে নিজেদের অ্যাকাউন্টে অর্থ সরিয়ে নেয়ার মতো গুরুতর অপরাধ করতেও পিছপা হননি তারা।
পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের যোগসাজশে আমানতকারীদের অর্থ লোপাটে অস্তিত্ব সংকটে পড়া ব্যাংকটির বড় লেনদেনে অনিয়মের তদন্ত করতে গিয়ে জঘন্য অপরাধটি খুঁজে পেয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ম খা আলমগীর ও চিশতীর নৈতিক স্খলন ঘটেছে।
অর্থনীতির চালিকাশক্তি ব্যাংকের প্রাণ হচ্ছে গ্রাহক। কিন্তু একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ইসি কমিটির চেয়ারম্যান রক্ষক হয়েও ভক্ষকের ভূমিকা নিয়ে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ সরিয়ে নেয়ার মতো অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েছিলেন। এ দুজন বিভিন্ন উপায়ে অনিয়ম করে ব্যাংকটিকে পঙ্গু করে দেন এবং আমানতকারীদের পথে বসিয়ে দেন।
এক পর্যায়ে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হন তারা। ব্যাংকটির শাখাগুলোতে প্রতিদিন ভিড় করেও টাকা ফেরত পাচ্ছিলেন না আমানতকারীরা। শুধু তা-ই নয়, সরকারের জমা রাখা জলবায়ু তহবিলের টাকাও ফেরত দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছিল ব্যাংকটি।
পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ায় ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ম খা আলমগীরকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে ব্যাংকটির পর্ষদে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়। তখন ফারমার্স ব্যাংককে আর্থিক মন্দা থেকে উদ্ধার করতে সরকার একটি আর্থিক লাইফলাইন নিয়ে পদক্ষেপ নেয়। ফারমার্স ব্যাংকের নাম বদলে করা হয় পদ্মা ব্যাংক।
সরকারের সিদ্ধান্তে ব্যাংকটির মালিকানায় যুক্ত হয় সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংক এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অফ বাংলাদেশ (আইসিবি)। ব্যাংকটির প্রায় ৭০ শতাংশ শেয়ার সরকারি এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকে।
২০১৮ সালে প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিনিধি হিসেবে পুনর্গঠিত পদ্মা ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন দেশের বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তা ও শীর্ষ ব্যবসায়ী ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। তার সুদক্ষ নেতৃত্বে ব্যাংকটি অনেক ক্ষেত্রেই সফলতা অর্জন করে। এ সময় ৯০০ কোটি টাকা নগদ আদায় ও ৪৫০০ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করা হয়। পাশাপাশি ব্যক্তি এবং করপোরেট অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ৪১০০ কোটি টাকা প্রদান করা হয় এবং স্বতন্ত্র ও ক্ষুদ্র আমানত ধরে রাখার হার ছিল ন্যূনতম ৫০ শতাংশ।
এ ছাড়া ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের নেতৃত্বে ব্যাংকটির কার্যক্রম পরিচালনায় বেশ কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- ক্রেডিট অ্যাডমিনসহ লেনদেনের কেন্দ্রীয়করণ, তিনটি নতুন শাখা এবং ১৪টি উপশাখা চালু করা, ইসলামী ব্যাংকিং সিস্টেম প্রবর্তন করা, বাংলাদেশ অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউস (বিএসিএইচ) এবং রিয়েল-টাইম গ্রস সেটেলমেন্টের (আরটিজিএস) মাধ্যমে লেনদেন নিষ্পত্তিকরণ এবং কিউআর কোড, পদ্মা ওয়ালেট, ই-চালান ইত্যাদি চালু করা।
জানা যায়, ফারমার্স ব্যাংকের গ্রাহকদের ঋণের ভাগ নিয়েছেন ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও ইসি কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী। এর মাধ্যমে দুজনের নৈতিক স্খলন ঘটেছে এবং তারা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। ওই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে এসেছিল ব্যাংকটির জনবল নিয়োগ হয়েছে মূলত এ দুজনের সুপারিশেই। আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগ দিয়েছেন।
ভুয়া ও সাইনবোর্ড-সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ পাইয়ে দিতেন ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক ইসি কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতী। ব্যাংকের শেয়ার দেয়ার কথা বলে নিতেন কোটি কোটি টাকা। ব্যাংকের আমানতকারীদের অর্থ লুট করে মালিক হয়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদের।
ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ১২টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
প্রসঙ্গত, দুজন পরস্পর যোগসাজশে আর্থিক অপরাধগুলো করা সত্ত্বেও সরকারি দলের সংসদ সদস্য থাকার কারণে ম খা আলমগীর আইনি ব্যবস্থা থেকে রেহাই পেয়ে যান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে বিদেশে অবস্থান করছেন ম খা আলমগীর। তাকে আইনের আওতায় এনে বিচার করা উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল তনুজ করপোরেশন ঋণের জন্য ফারমার্স ব্যাংকে আবেদন করে। কিন্তু ঋণ আবেদনটি নিষ্পত্তি হওয়ার আগে ওইদিনই তনুজ করপোরেশনের ব্যাংক হিসাবে জমা হয় ৫০ লাখ টাকা। পরে কোম্পানিটি সেই টাকা তাদেরই অন্য এক হিসাবে স্থানান্তর করে। অর্থাৎ ঋণ অনুমোদনের আগেই গ্রাহককে ঋণ সুবিধা দেয়া হয়, যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম শামীম।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তনুজ করপোরেশনের ব্যাংক হিসাব থেকে গত বছরের ১৯ জুলাই এক কোটি ২২ লাখ টাকা ফারমার্স ব্যাংকে খোলা তাদেরই অন্য এক ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। তা থেকে ওইদিন ৪২ লাখ টাকা নগদে তোলা হয়। আর ৮০ লাখ টাকার একটি পে-অর্ডার ইস্যু করে তনুজ করপোরেশন। যদিও পরে পে-অর্ডারটি বাতিল করা হয়। পরে মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নামে ১৮ লাখ ও মাহবুবুল হক চিশতীর নামে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার পে-অর্ডার ইস্যু করা হয়। অবশিষ্ট ৪৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদে তুলে নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয় জাকির হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে।
এদিকে জাহান ট্রেডার্স নামে অপর একটি ঋণ হিসাব থেকে এক কোটি ৪০ লাখ টাকা কোম্পানিটিরই আরেকটি হিসাবে পাঠানো হয়। ওই ঋণও দেয়া হয় মহীউদ্দীন খান আলমগীরের একক সুপারিশে। তনুজ করপোরেশন ও জাহান ট্রেডার্স উভয় কোম্পানিই নির্মাণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হলেও পুরো টাকা তুলেছেন নগদে। এর ফলে ঋণের টাকা প্রকৃত খাতে ব্যবহার হয়নি।
এ ছাড়া মাহবুবুল হক চিশতীর ছেলে রাশেদুল হক চিশতীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আরসিএল প্লাস্টিকের সঙ্গে ব্যাংকের গ্রাহকদের অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্যও বেরিয়ে এসেছে। প্রতিবেদনটি ফারমার্স ব্যাংকে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
১৯৯৬ সালে জনতার মঞ্চে বিএনপি সরকার যখন কিছুটা বেকায়দায় পড়ে ঠিক তখনই কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয় বিতর্কিত আমলা বলে খ্যাত ম খা আলমগীরের নেতৃত্বে জনতার মঞ্চে যোগ দেয়া সরকারি কর্মকর্তাদের মিছিল। সেই থেকে তিনি আওয়ামী লীগের সুনজরে আসেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাকে প্রধানমন্ত্রীর সচিব করা হয়। পরে সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর ১৯৯৭ সালে তাকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। সে সময় তিনি পর্যায়ক্রমে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।
ওয়ান-ইলেভেনে সেনা সমর্থিত সরকারের সময় জেল খাটেন ম খা আলমগীর। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান ২০১২ সালে। এক বছর তিনি এই দায়িত্ব পালনের সুযোগ পান। তার সময়কালেই ধসে পড়ে সাভারের রানা প্লাজা। সে সময় তার উক্তি ‘হরতালকারীদের ধাক্কাধাক্কিতে রানা প্লাজা ধসে পড়েছে’, ব্যাপক সমালোচিত হয়।
দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও বিচার ব্যবস্থার চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি পৃথক বাণিজ্যিক আদালত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
গতকাল রোববার সিলেটের দ্য গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে বাণিজ্যিক আদালত শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রস্তাব দেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কোনো পৃথক বিচারিক ফোরাম নেই। এখন কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যিক বিরোধগুলো ছোটখাটো দেওয়ানি মামলার সঙ্গে একই সারিতে নিষ্পত্তি করতে হওয়ায় দ্রুত, কার্যকর বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। এটি আমাদের বিচারকদের প্রতি কোনো সমালোচনা নয়। তাদের নিষ্ঠা প্রশ্নাতীত। বরং এটি একটি কাঠামোগত অসংগতি। ফলে মামলার জট যেমন বাড়ছে, তেমনি ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও বিনিয়োগ পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত শুধু অর্থঋণ আদালতে প্রায় ২৫ হাজারের বেশি মামলা অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
পৃথক বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি কারও একক কোনো দাবি নয় বরং বাণিজ্যিক মামলাগুলো বিশেষায়িত আদালতে নির্দিষ্ট সময়সীমা ও কার্যকর রায়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়ার জন্য বৃহৎ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী সবাই দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এই দাবি জানিয়ে আসছে।
প্রধান বিচারপতি বৈশ্বিক উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, রুয়ান্ডা, ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো বাণিজ্যিক আদালত গড়ে তুলে একটি দক্ষ, স্বচ্ছ ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছে। তিনি বলেন, এসব দেশের অভিজ্ঞতাগুলো বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা বহন করে।
প্রধান বিচারপতি প্রস্তাবিত বাণিজ্যিক আদালত ব্যবস্থার সাতটি মূল স্তম্ভের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো- স্পষ্ট ও একীভূত এখতিয়ার নির্ধারণ, আর্থিক সীমারেখা ও স্তরভিত্তিক কাঠামো, বাধ্যতামূলক কেস ম্যানেজমেন্ট ও কঠোর সময়সীমা, সমন্বিত মধ্যস্থতা ব্যবস্থা, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার (যেমন, ই-ফাইলিং, ডিজিটাল ট্র্যাকিং, হাইব্রিড শুনানি), সবার জন্য ন্যায়সংগত প্রবেশাধিকার এবং জবাবদিহি ও কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাণিজ্যিক আদালতের কার্যক্রম হবে পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর, জবাবদিহিমূলক এবং বাণিজ্যের পরিবর্তনশীল চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সেমিনারে সূচনা বক্তব্য দেন সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফান লিলার।
বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল আবার পেছানো হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালত গতকাল সোমবার আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর নতুন দিন ধার্য করেন।
এ পর্যন্ত এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা মোট ১২০ বার পিছিয়ে এসেছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নির্মমভাবে খুন হন। ঘটনার সময় বাসায় তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ উপস্থিত ছিলেন। সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা এবং রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামিরা হলেন — রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, কামরুল ইসলাম ওরফে অরুন, আবু সাঈদ, সাগর-রুনির বাড়ির দুই নিরাপত্তা রক্ষী পলাশ রুদ্র পাল ও এনায়েত আহমেদ এবং তাদের ‘বন্ধু’ তানভীর রহমান খান।
এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ জামিনে রয়েছেন, বাকিরা বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।
তদন্ত প্রতিবেদন বারবার পিছিয়ে আসায় এ মামলার দ্রুত বিচার ও ন্যায়বিচার প্রত্যাশায় সংশ্লিষ্ট পক্ষের মাঝে উদ্বেগ বিরাজ করছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় পুলিশের সদস্যসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের শুনানি আজ।
সোমবার (২৮ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ এই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি করবেন বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে, শুক্রবার (২৫ জুলাই) কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ছয় আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এই ছয় আসামি হলেন— সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরীফুল ইসলাম, রাফিউল, আনোয়ার পারভেজ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী আশেক।
গত ১০ জুলাই পলাতক ২৬ আসামিকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে, ৩০ জুন আবু সাঈদ হত্যায় পুলিশের সদস্যসহ মোট ৩০ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই বিকালে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। আবু সাঈদ ছিলেন জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত প্রথম শিক্ষার্থী।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ধানমণ্ডির বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কোন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি জানান, তথ্য এলে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১০ সালে খায়রুল হক শপথ নেন। পরের বছর ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
২০১৩ সালে তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা একই পদে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক এই বিচারপতিকে।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে ১৩ আগস্ট তিনি আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছিল না।
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীসহ বহু হতাহতের ঘটনায় আজ বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করেছে দেশের সকল আদালত।
আজ সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতি আপিল বিভাগ তাদের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন। এদিকে আজ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগেও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অন্যদিকে, প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমদ ভূঞা স্বাক্ষরিত অধস্তন আদালতে নীরবতা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে হৃদয়বিদারক এই দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকার ২২ জুলাই সারা দেশে শোক দিবস ঘোষণা করেছে। দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশের সর্বস্তরের মানুষ শোক প্রকাশ করছেন। বিচার বিভাগীয় পর্যায়েও বিষয়টি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা আবশ্যক। এমতাবস্থায়, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ও তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২২ জুলাই দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। সেই সাথে দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। এছাড়া ২২ জুলাই হতে ২৪ জুলাই পর্যন্ত সকল জেলা জজশীপ ও ম্যাজিস্ট্রেসিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্থগিত রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
সারাদেশে মুজিব শতবর্ষ পালন ও শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল নির্মাণের আর্থিক হিসাব চেয়ে ৬৪ জেলায় চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগ অনুসন্ধানে উপপরিচালকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি টিম অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের উপপরিজালক আকতারুল ইসলাম ব্রিফিংয়ে চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
দুদক জানায়, ৬৪ জেলা পরিষদ বরাবর পাঠানো চিঠিতে মুজিবর্ষ পালনে কত টাকা ব্যয় হয়েছে, ব্যয় করা মন্ত্রণালয়ের নাম, ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ, ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তার নাম পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া, জেলায় কতগুলো এবং কোথায় ম্যুরাল তৈরি হয়েছে, ম্যুরাল নির্মাণে কত টাকা খরচ হয়েছে, ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তার পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ পালন ও শেখ মুজিবের ১০ হাজারেরও বেশি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ করে ওই অর্থ অপচয় ও ক্ষতিসাধন করার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন। তাই রেকর্ডপত্র দ্রুত দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।
বিভিন্ন দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর আগে দেশে শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি স্থাপন করে আওয়ামী লীগ সরকার। টানা ১৫ বছর ধরেই ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও প্রতিকৃতি তৈরির মহোৎসবে মেতে উঠেছিল দলটি। অভিযোগ রয়েছে, অপ্রয়োজনীয় ম্যুরাল ও ভাস্কর্য তৈরিতে ৪ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়ে থাকতে পারে। শুধু তাই নয়, পুরো প্রকল্পই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
সূত্র জানায়, জেলা পরিষদে পাঠানোর আগে একই চিঠি বাংলাদেশ বেতার, কৃষি গবেষণা কাউন্সিলেও পাঠানো হয়েছে।
গত বছরের আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর মুজিববর্ষ পালনে অর্থ অপচয় ও এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করা হবে বলে জানিয়েছিল দুদক।
র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি), অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, মব ভায়োলেন্স বা মব সন্ত্রাস করে এ দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করা যাবে না। অপরাধী যেই হোক বা যে দলেরই হোক, আমরা তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করব।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ঘটে যাওয়া ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবস্থা গ্রহণের অগ্রগতিসহ আরও কয়েকটি ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে প্রেস ব্রিফিং করেন র্যাবের ডিজি। ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘র্যাব এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেকোনো ধরনের অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের বিষয়ে তৎপর রয়েছে। দেশে বিগত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের র্যাব গ্রেপ্তার করেছে। তাদের যেন শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়, সে ব্যাপারে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি। মব ভায়োলেন্স সৃষ্টির অপরাধে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ জন অপরাধীকে র্যাব আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।’
‘গত ২ জুলাই লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানায় সন্ত্রাসী কর্তৃক মব সৃষ্টির মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের আহত করে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমরা ৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। এ ছাড়াও গত ৩ জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগরে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় একই পরিবারের মা ও দুই সন্তানের ওপর মব ভায়োলেন্সের অযাচিত ঘটনায় ৬ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
সলিমুল্লাহ মেডিকেলের সামনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত এজাহারনামীয় ৪ নম্বর আসামি আলমগীর (২৮) এবং ৫ নম্বর আসামি মনির ওরফে লম্বা মনিরকে (৩২) আমরা গতকাল (শুক্রবার) রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।’
‘এ ঘটনায় আমরা ছায়া তদন্ত করছি, আর পুরো বিষয়টি দেখছে ডিএমপির তদন্ত বিভাগ।’
র্যাবের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
মন্তব্য