আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দ্রব্যমূল্য জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সব দফতরকে আল্টিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে এসব দফতরের কর্মকর্তাদের পদত্যাগ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
রোববার রাজধানীর কাওরানবাজারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এই আল্টিমেটাম দেয়া হয়। বাজার তদারকিসহ সচেতনতামূলক কার্যক্রমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে কাজ করার লক্ষ্যে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক বিন ইয়ামিন মোল্লা বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নয়টি সুপারিশ করেন। সেগুলো হলো- বিপ্লবী ছাত্র-জনতা টিম করে প্রতিটি শহর, জেলা, উপজেলা, পাড়া, মহল্লায় বাজার মনিটরিং করবে; তবে তারা কাউকে জরিমানা করতে পারবে না, আইন নিজের হাতে তোলা যাবে না; প্রতিটি জেলা-উপজেলায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মতবিনিময় সভার আয়োজন করা; প্রতিটি বিক্রেতার নিত্যপণ্য ক্রয়ের রসিদ রাখা; প্রতিটি দোকানে মূল্য তালিকা টানানো; কেউ বাজার, রাস্তা, দোকান দখল করে ব্যবসা করলে তাকে উৎখাত করা; রাস্তায় চাঁদাবাজি প্রতিরোধ করা; ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের জনবল বৃদ্ধি ও দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি বন্ধ করা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আমরা চাপমুক্ত হতে চাই তোমাদের (শিক্ষার্থী) মাধ্যমে। তোমাদের হাতটা এত শক্তিশালী হয়েছে, আমার মনে হয় তোমরা যেখানে হাত দেবে সেখানেই সোনা ফলবে। আমরা আসলেই ব্যর্থ হয়েছি। আমরা এখন তোমাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখি।’
উপ-পরিচালক আতিয়া সুলতানার সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণা) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মিজানুর রহমান, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ অনেকে।
আইএলও কনভেনশনে স্বাক্ষর করার সব শর্ত পূরণ করার অংশ হিসেবে শ্রমিকদের পাওনা যথাযথভাবে মেটানোর জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে শ্রমিক-মালিক সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ‘ন্যাশনাল বিজনেস ডায়ালগ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা জেনেভা কনভেনশনে যোগ দিতে পারিনি। এটা বহুদিন পড়ে আছে। শ্রমিক, মালিক, সরকার- সবাই যখন একটি টিম হলাম তখন ওটাও আমরা করে ফেলব।
‘ওটা না করলে সামনে এগুনো কষ্টকর হবে। যেখানেই যাবেন এটা বাধা দেবে। বলবে- তোমরা শ্রমিকদের যা শর্ত, প্রাপ্য এগুলোতে সই করছো না। কাজেই যদি আমাদের এগুতে হয় পরিষ্কারভাবে হতে হবে।’
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের সাহস দেন, এগিয়ে আসেন; আমরা সবাই মিলে আইএলও কনভেনশনে স্বাক্ষর করে ফেলি। আমার একটা বড় আশা, যে মেয়াদকাল আমরা এখানে থাকব, শ্রমিক-মালিক সম্পর্কটা সুন্দরভাবে গড়ে তুলব।’
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।
সংলাপে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ডিসিসিআই, এমসিসিআই, এফআইসিসিআই, বিএবি, বিকেএমইএ, বাংলাদেশ চেম্বার অফ ইন্ডাস্ট্রিজের মতো সংগঠনের নেতা ও সদস্যরা অংশ নেন।
আরও পড়ুন:ছাত্র-জনতার স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়তে যা প্রয়োজন তা-ই করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ব্যবসায়ীদেরও সেই সুযোগ গ্রহণ করে সরকারের সঙ্গে একজোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ‘ন্যাশনাল বিজনেস ডায়ালগ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় ড. ইউনূস এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘মূল লক্ষ্য, যে কয়টা দিন আছি আমরা একসঙ্গে কাজ করব। এই নতুন বাংলাদেশের জন্য যা প্রয়োজন তাই করব। যেন বলে যেতে পারি, এই আমাদের একটা সুযোগ দিয়েছিল, আমরা সেই সুযোগের পূর্ণ ব্যবহার করেছি। আমরা অতীতের পচা বাংলাদেশ থেকে নতুন তরতাজা বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আর পচন নয়, সুস্থ-সবল জাতি হিসেবে দাঁড়াতে চাই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনারা যদি মন ঠিক করেন, খুব দ্রুত নতুন বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব। চলুন একসঙ্গে কাজ করি আমরা।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ছাত্র-জনতার লক্ষ্য ছিল- একটা নতুন বাংলাদেশ হবে। তাদের প্রাণের বিনিময়ে আমরা একটা নতুন সুযোগ পেলাম। এই সুযোগ না এলে আমাদের যে পচন ধরেছিল সেই পচন থেকে মুক্তির কোনো চিহ্ন দেখা যাচ্ছিল না, হঠাৎ করে সব বাধা আমাদের থেকে চলে গেল।’
নতুন বাংলাদেশ গড়তে গণঅভ্যুত্থানে প্রাণ দেয়া শত শত ছাত্র-জনতার কথা স্মরণ করিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকে যারা সামনে বসে আছেন তারা বিশ্বমাপের উদ্যোক্তা। এই বিশ্বমাপের উদ্যোক্তা ওই যুবককে যে প্রাণ দিয়েছে তার কাছে কি শপথ নেবে?
‘যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য শহীদরা প্রাণ দিয়েছে সেই নতুন বাংলাদেশ আমরা গড়বই। সুযোগ জাতির জীবনে বার বার আসে না।’
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে অন্তর্বতী সরকারের প্রধান বলেন, ‘নতুন করে যে স্বপ্ন ছাত্র-জনতা জাগিয়ে দিয়েছে সেটা যদি আপনার মনে রেখাপাত করে তাহলে সে স্বপ্ন পূরণে আপনিও শরিক হবেন। এই সুযোগ আর কখনো আসে কি না জানি না। এই সুযোগকে আমরা যেন হারিয়ে না ফেলি। এই সুযোগ হারিয়ে ফেললে জাতির কাছে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।’
ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘আজকে আমরা একযোগে এই স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই- সরকার এবং সরকারের বাইরে যারা সবাই একজোট, এক টিম। এটা একটা কমপ্যাক্ট টিম। আপনারা সেই টিমের সদস্য। যেটুকু সময় আমরা এই দায়িত্বে আছি, আমরা টিম হিসেবে কাজ করতে চাই।’
তৈরি পোশাক শিল্পকে বিশ্বের এক নম্বরে নিয়ে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকে যে দুই নম্বরে আছি, কী করে আমরা এক নম্বর হবো, আমাদের মেয়াদকালে যদি আপনারা এক নম্বরে নিয়ে যেতে পারেন আমরাও স্মরণ করব- যাক বাবা, একটা কিছু তো করেছি। সব কিছু আমরা জানি না, আমাদের অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু একযোগে কাজ করলে অভিজ্ঞতা এসে যাবে।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা ধরনা দেই ব্যবসায়ীদের কাছে, যারা ইউরোপে আছে, আমেরিকাতে আছে তাদের কাছে। আমাদের ফরিয়াদ কী করতে হবে, তারাও কৌতূহল নিয়ে দেখছে। তাদেরকে আহ্বান জানাই- এখানে এসে শরিক হোন।’
তিনি বলেন, ‘নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে গেলে অনেক সুবিধা হারিয়ে ফেলব। কিন্তু সেই প্রতিযোগিতায় শক্ত প্রতিযোগী হওয়ার জন্য আমরা সামর্থ্য অর্জন করতে চাই। আমরা পেছনে থাকতে চাই না। সে জন্য তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য আমি একজন বিশেষ দূত নিয়োগ দিয়েছি।’
আরও পড়ুন:চলমান শ্রমিক অসন্তোষের জেরে ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে বৃহস্পতিবার ২১৯টি পোশাক কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এগুলোর মধ্যে ৮৬টি কারখানা শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আর ১৩৩টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ।
শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম জানান, আজ শিল্পাঞ্চলের কোথাও কোনো সড়ক অবরোধসহ কারখানায় হামলা বা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি, তবে আগে থেকেই কিছু কারখানায় অভ্যন্তরীণ বেশ কিছু দাবি নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ চলছিল। সেসব কারখানার শ্রমিকরা আজ কাজে ফেরেননি।
তিনি জানান, আজ সকালেও বেশ কিছু কারখানার শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশের পর কর্মবিরতিসহ কারখানা থেকে বের হয়ে গেলে সব মিলিয়ে শিল্পাঞ্চলের ২১৯টি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী বন্ধ ঘোষণা করা হয় ৮৬টি কারখানা। বাকি ১৩৩টি কারখানায় আজকের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
এ কর্মকর্তা আরও জানান, শিল্পাঞ্চলে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কারখানাগুলোর সামনে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশের বাড়তি সদস্য। এ ছাড়া শিল্পাঞ্চলে যৌথবাহিনীর টহল অব্যাহত আছে।
বাংলাদেশের কাছে ইলিশ চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে চিঠি দিয়েছেন ভারতের ব্যবসায়ীরা। বুধবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ভারতে বাংলাদেশের ইলিশ আসতে থাকে। তবে এবার তাতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এমন অবস্থায় ফিশ ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন ইলিশ রপ্তানির জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পদ্মার ইলিশ এপারে এলে খুশি হন মৎস্য ব্যবসায়ীরাও। কারণ এই ইলিশ বিক্রি করে তাদের অনেকটাই লাভ হয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে গোটা বিষয়টিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
হিন্দুস্তান টাইমস আরও জানিয়েছে, গত পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ আমদানি হয়েছে। এবারও সেই রীতি মেনে ভারতে ইলিশ পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কাছে আবেদন করেছে ফিশ ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি ত্রিপুরা এবং আসামেও বাংলাদেশের ইলিশ রপ্তানি হয়ে এসেছে। বছর ভর এপার বাংলার মানুষ বাংলাদেশের ইলিশের জন্য মুখিয়ে থাকেন। আর বাংলাদেশের ইলিশ হলে তাদের পূজার আয়োজন একেবারে জমে যায়। গত বছরও এক হাজার ৩০০ টন ইলিশ গেছে বাংলাদেশ থেকে। তবে এবার কতটা ইলিশ আসবে, এমনকি আদৌ আসবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
আরএমজি ও নন-আরএমজি সেক্টরের শ্রম অসন্তোষ পরিস্থিতি পর্যালোচনার শ্রম-সংক্রান্ত অভিযোগ পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
বুধবার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আরএমজি ও নন-আরএমজি সেক্টরের শ্রম অসন্তোষ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। সূত্র: ইউএনবি
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘শ্রম অসন্তোষ পরিস্থিতি নিয়ে আজ ছয়জন উপদেষ্টাকে নিয়ে জরুরি সভা করেছি। সেখানে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর আগে কেবিনেট মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল একটি পর্যালোচনা কমিটি বা পর্যবেক্ষণ কমিটি করার।
‘শ্রমিকদের বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে যেসব কমিটি আছে, সেগুলো বিভিন্ন কারণে বিগত সরকারের আমলে শ্রম অধিদপ্তর ও শ্রম আদালতের ওপর শ্রমিকরা আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। সেটা ফিরিয়ে আনতে হবে কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে। সেটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া।’
তিনি বলেন, ‘আপাতত শ্রমিকরা যেসব সমস্যা ফেস করছেন, দাবিগুলো যাতে নিদিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করতে পারেন সে লক্ষ্যে একটি কমিটি করা হয়েছে। আরএমজি ও নন-আরএমজি সেক্টরের শ্রম অসন্তোষ ও শ্রম পরিস্থিতির বিদ্যমান সমস্যা পর্যালোচনা করে সুপারিশ প্রদানের জন্য শ্রম সংক্রান্ত অভিযোগ পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
‘কমিটিতে শ্রম অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক এবং শ্রম অধিদপ্তরের ট্রেড ইউনিয়ন ও শালিসির পরিচালককে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটিতে তিনজন শ্রমিক নেতা, সুপ্রিম কোর্টের দুজন বিজ্ঞ আইনজীবী ও মালিক পক্ষের দুজন সদস্য আছেন।’
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ‘বিজয়নগরে শ্রম ভবনে শ্রমিকরা তাদের দাবি-দাওয়া পেশ করতে পারবেন। কমিটি পর্যালোচনা করে সুপারিশ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা সংস্থার কাছে পাঠাবে। শ্রমিকদের যেসব ন্যায্য দাবি আছে সেগুলোর মধ্যে যেটা স্বল্প মেয়াদে বা দ্রুত সমাধানযোগ্য সর্বাগ্রে সেটা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে।’
উপদেষ্টা আসিফ জানান, উপদেষ্টাদের নিয়ে জরুরি সভায় বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেগুলো হলো- শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা অবিলম্বে পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মন্ত্রণালয়, শ্রম অধিদপ্তর, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে এবং যথাসম্ভব মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন করে সমস্যা নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে। ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদসহ সংশ্লিষ্ট বিদ্যমান কমিটিগুলো পুনর্গঠন করে হালনাগাদ করতে হবে।
শ্রম সংক্রান্ত অভিযোগ পর্যবেক্ষণ কমিটির কার্যক্রম দ্রুত শুরু করতে হবে এবং শ্রম অসন্তোষ সংক্রান্ত শুনানির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রতিদিনের মাঠ পর্যায়ের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে শ্রম অসন্তোষ নিরসন কমিটি করে স্থানীয় সমস্যা সৃষ্টির প্রাক্কালে/সৃষ্টির পর কালবিলম্ব না করে সমাধান করতে হবে।
এছাড়া বেক্সিমকো গ্রুপের শ্রমিকদের বকেয়া বেতন দ্রুত পরিশোধ করতে হবে এবং এ সংক্রান্ত সরকারি আর্থিক ঋণ/প্রণোদনার ব্যবস্থা জরুরিভিত্তিতে গ্রহণ করতে হবে। ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের মাধ্যমে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট ছয়টি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আন্তঃসমন্বয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা এখানে কোনো গ্যাপ রাখতে চাচ্ছি না। সচিব পর্যায় থেকে সবাই সমন্বয় করবেন, যাতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারি এবং সমাধানের দিকে যেতে পারি।’
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন চাহিদা সহায়তার ওপর ওয়াশিংটনের দৃষ্টি নিবদ্ধ করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর একথা জানিয়েছে।
মঙ্গলবার দেশটির পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্রের অফিসের একটি মিডিয়া নোটে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ১০ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর ভারত ও বাংলাদেশ সফর করবেন। লু ঢাকায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বৈঠকের জন্য একটি আন্তঃসংস্থা প্রতিনিধি দলে যোগ দেবেন।’
প্রতিনিধি দলে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ, ইউএসএআইডি ও বাণিজ্য প্রতিনিধি অফিসের প্রতিনিধিরা থাকবেন।
ডোনাল্ড লু ঢাকায় অবস্থানকালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও সুশীল সমাজের বিভিন্ন সদস্যের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে।
গত ৮ আগস্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে এটিই প্রথম এ ধরনের সফর হতে যাচ্ছে।
পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, সফলকালে সহকারী সেক্রেটারি লু তার অংশীদারদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সমগ্র ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল জুড়ে স্থিতিশীলতাকে সমর্থন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করবেন।
ভারতে তিনি ইউএস-ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিল আয়োজিত ইন্ডিয়া আইডিয়াস সামিটে উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সহযোগিতার বিষয়টি তুলে ধরবেন।
এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সিপাল ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অফ ডিফেন্স জেডিদিয়া পি রয়েল এবং ভারতের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অষ্টম ইউএস-ইন্ডিয়া ২+২ ইন্টারসেশনাল ডায়ালগে সহ-সভাপতিত্ব করবেন।
সংলাপে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত দ্বিপক্ষীয় অংশীদারত্ব বাড়ানো এবং ইন্দো-প্যাসিফিক ও তার বাইরে সহযোগিতা সম্প্রসারণের ওপর আলোকপাত করা হবে।
ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় ডিইপিজেডসহ অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানা সচল থাকলেও অস্থিরতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মুখে অন্তত ২২টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
আরও আটি পোশাক কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েনসহ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বুধবার সকালে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় শ্রমিকদের দাবির মুখে অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাই শিল্প সুরক্ষায় কারখানা শ্রম আইন ২০০৬ সালের ১৩ (ক) ধারায় আশুলিয়ার অন্তত ২২টি পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আর এ ধারায় কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হলে শ্রমিকরা বন্ধ সময়কালীন কোনো বেতন পাবেন না।
শিল্পাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, সকাল আটটা থেকে ১০টা পর্যন্ত টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের বাইপাইল থেকে জিরাবো, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক ও বিশমাইল-জিরাবো এলাকার অনন্ত, মেডলার, শারমিন গ্রুপ, হামীম গ্রুপ, ডেকো, এস টুয়েন্টি ওয়ান, মন্ডল নীটওয়্যার লিমিটেড, ম্যাংঙ্গো টেক্স, এআর জিন্স, এনভয়, স্টাইলিং গ্রুপ, ভিনটেক্স, ইয়াগী বাংলাদেশ, ক্রস ওয়ার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, অরোনিমা, ডেবনিয়ার, দি রোজ, জেনারেশন নেক্সট, সিনসিন, ডিসান সোয়েটার ও সিগমা ফ্যাশনসহ আরও বেশ কিছু পোশাক কারখানা শ্রম আইন ২০২৬ সালের ১৩ (ক) ধারা অনুযায়ী বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মুখে আরও আটটি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
সকাল ১০টা পর্যন্ত নিউএইজ, আল মুসলিম, নাসা সুপার কমপ্লায়েন্স, নাসা এজে সুপার, নাসা বেসিক কমপ্লেক্স ও জনরন সোয়েটারের উৎপাদন চলার খবর পাওয়া যায়।
হা-মীম গ্রুপের একটি কারখানা বন্ধের নোটিশে লেখা রয়েছে, ‘দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়ার লিমিটেড, এ্যাপারেল্স গ্যালারি লিমিটেড, রিফাত গার্মেন্টস লিমিটেড, এক্সপ্রেস ওয়াশিং এন্ড ডাইং লিমিটেড, আটিস্টিক ডিজাইন লিমিটেড, নেক্সট কালেকশন লিমিটেডের সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকবৃন্দের সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আশুলিয়া শিল্প অঞ্চলে বর্তমান সহিংসতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিবেচনায় শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ১৩ (১) অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ আগামী ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং তারিখ হইতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করল।
‘পরবর্তীতে আঞ্চলিক পরিবেশ নিরাপদ হলে শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নোটিশের মাধ্যমে কারখানা খোলার তারিখ জানিয়ে দেয়া হবে। কারখানায় নিরাপত্তা বিভাগ অত্র নোটিশের আওতামুক্ত থাকবে।’
শিল্প পুলিশ জানায়, শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবির মুখে কিছু কারখানার মালিকপক্ষ আলোচনা করলেও কোনো ধরনের সিদ্ধান্তে যেতে পারেনি। ফলে আজ সেসব কারখানা ১৩ (ক) ধারায় অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছ কর্তৃপক্ষ। এখন পর্যন্ত সড়কে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা সড়ক অবরোধের খবর পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শক্ত অবস্থানে রয়েছে সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি, জেলা পুলিশ ও শিল্প পুলিশ।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ২২টি কারখানা ১৩ (ক) ধারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া আরও আটটি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে, তবে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এখনও ঘটেনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে যৌথ বাহিনী।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য