ব্যাংক খোলার প্রথম দিন মঙ্গলবার ইসলামী ব্যাংকের কার্যালয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইসলামী ব্যাংকের সুবিধাবঞ্চিত কর্মকর্তা ও স্টাফরা বিক্ষোভ করছেন রাজধানীর মতিঝিলে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে। তারা এস আলম গ্রুপের নিয়োগকৃতদের ব্যাংকে ঢুকতে দিচ্ছেন না।
দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যাংকটিতে পতন হওয়া সরকারের মদদে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে মালিকানায় আসে এস আলম গ্রুপ। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর মঙ্গলবার দেশের সব অফিস-আদালত খুলেছে।
এর আগে সোমবার রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সব অফিস খুলে দেয়ার কথা বলা হয়।
শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর সোমবার বিকেল থেকেই বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাসভবন ও কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুরের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেও আজ দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুলেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ঝুঁকি বিবেচনা করে ব্যাংকগুলো শাখা খোলা রাখতে পারবে; নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। ব্যাংকগুলো সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছে।
ইসলামী ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ব্যাংকের ডিএমডি রেজাউর রহমানকে মারধর করেছে আইবিবিএলের লোকজন। এ ছাড়া এস আলমের ‘বিশেষ কৃপায়’ প্রমোশন পাওয়া আরও অন্তত চার-পাঁচজনকে মারধর করেছেন ব্যাংকটির কর্মকর্তারা।
ইসলামী ব্যাংকের এক ডিএমডি জানান, তাকেও ব্যাংকে ঢুকতে দিচ্ছেন না বিক্ষুব্ধরা।
দেশের সমালোচিত ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক সালমান এফ রহমানকে সরিয়ে দেয়া হলো আইএফআইসি ব্যাংক থেকে। তার সময়ের পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান ফজলুর রহমান ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন।
আইএফআইসি ব্যাংকের আগের পরিচালনা পর্ষদ বুধবার ভেঙে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টি জানিয়েছে।
সালমানকে সরিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদও গঠন করে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। নতুন পর্ষদে চারজন স্বতন্ত্র পরিচালক ও দুজন প্রতিনিধি পরিচালক নিয়োগ করা হয়েছে। আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষা, ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করাসহ জনস্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নতুন ছয় সদস্যের পর্ষদের নেতৃত্বে রয়েছেন ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক এমডি মেহমুদ হোসেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের আদেশে এমনটি উল্লেখ করা হয়েছে।
নতুন পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক হয়েছেন ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মেহমুদ হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবতাদুল ইসলাম ও চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ট কাজী মাহবুব কাশেম।
আর ব্যাংকটিতে ৩২ দশমিক ৭৫ শতাংশ সরকারি শেয়ার থাকায় সরকারের দু’জন প্রতিনিধি পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. গোলাম মোস্তফা ও যুগ্ম সচিব মুহাম্মাদ মনজুরুল হককে সরকার মনোনীত প্রতিনিধি পরিচালক করা হয়েছে।
২০১৫ সাল থেকে আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে ছিলেন সালমান এফ রহমান। তার ছেলে সায়ান রহমানও ব্যাংকটির পরিচালক ও ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে সরকার পরিবর্তনের পরপরই তিনি বাদ পড়েন।
ব্যাংকটিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সালমান এফ রহমান নামে-বেনামে ও কৌশলে অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বন্ড ও সুকুক ছেড়ে টাকা তুলেছেন ব্যাংক ও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে।
আওয়ামী লীগ সরকারের অত্যন্ত প্রভাবশালী এই উপদেষ্টা নিজে জাতীয় সংসদ সদস্যও হয়েছিলেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। কয়েক দিন পর পুলিশ তাকে রাজধানী ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। সে সময় তার সঙ্গে ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
আরও পড়ুন:দেশের ব্যাংক খাতের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে খেলাপি ঋণ। এই ফোঁড়ার ব্যথা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। নামে-বেনামে ঋণ প্রদান আর ফেরত না দেয়ার সংস্কৃতি ভোগাচ্ছে পুরো ব্যাংক খাতকে। অবশ্য সব ব্যাংকের ক্ষেত্রে বাস্তবতা এটি নয়। তবে পুরো খাতের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে খেলাপি ঋণ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। এটা দেশের সব ব্যাংকের প্রদেয় ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। অর্থাৎ দেশের ৬৪টি ব্যাংক মিলে যত ঋণ দিয়েছে তার সাড়ে ১২ ভাগের বেশি খেলাপি হয়ে পড়েছে।
শঙ্কার বিষয় হলো, খেলাপি হয়ে পড়া এসব ঋণের অর্থ ফেরত আসার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। অর্থনীতিবিদরা বার বার সতর্ক করা সত্ত্বেও খেলাপির সংস্কৃতি থেকে ব্যাংক খাত বেরিয়ে আসতে পারছে না। তাদের ধারণা, খেলাপি হয়ে পড়া ঋণের অর্থের বড় অংশই দেশের বাইরে পাচার হয়ে গেছে।
সদ্য পদত্যাগ করা আওয়ামী লীগ সরকারের নানামুখী ব্যর্থতার মধ্যে অন্যতম এই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ। একের পর এক ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া আর ঋণ জালিয়াতি বন্ধ করতে না পারার ব্যর্থতা আওয়ামী লীগ সরকারের বড় দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, গত ১৫ বছরে দেশের ব্যাংক খাত থেকে লোপাট হয়েছে প্রায় ৯২ হাজার কোটি টাকা। আর সেই অর্থ ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না সংস্থাটির গবেষকরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি।
তিন মাস আগে মার্চ প্রান্তিকে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিলো ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা, যার মধ্যে খেলাপি ঋণ ছিলো এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি। অর্থাৎ চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর এই সময়টাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন আবদুর রউফ তালুকদার।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।
জানা গেছে, এসব খেলাপি ঋণ নিয়ে যারা দেশের বাইরে অর্থ পাচার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে তাদের সম্পদের খোঁজে কাজ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইতোমধ্যে পাচারের অর্থ পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন দেশকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট- বিএফআইইউ। পাশাপাশি এসব ঋণখেলাপির দেশের ভেতরের সম্পদ জব্দে জোর চেষ্টা চলছে বলেও জানা গেছে। এসব অর্থ আত্মসাৎকারীরর বিদেশে থাকা সম্পদ ফিরিয়ে আনতে সরকারও জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
বিএফআইইউ থেকে জানা গেছে, আর্থিক খাতের বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান এস আলম, সামিট, বসুন্ধরা, বেক্সিমকো, ওরিয়নসহ অনেক গ্রুপের তথ্য চেয়ে একাধিক দেশে চিঠি দেয়া হয়েছে। আর সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশে।
তৎকালীন সরকারের সুনজরে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে প্রভাব খাটিয়ে অর্থ পাচারের পুরো চিত্র বের করতে চেষ্টা চলছে বলেও জানা গেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গণমাধ্যমে দেয়া নিজের বক্তব্যে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অসাধু ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নামে-বেনামে কত টাকা পাচার করেছে তা হিসাব করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে দেশের অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র তৈরি করতে কমিটি করে দিয়েছে সরকার। ওই কমিটি দেশের ব্যাংক খাতের পুরো চিত্র জাতির সামনে তুলে ধরবে বলে জানিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে খেলাপি ঋণের পুরো চিত্র উঠে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দুবাই পালানোর সময় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার ঋণখেলাপি আনছারুল আলম চোধুরী নামে এক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে ইমিগ্রেশন পুলিশ। তিনি চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আনছার ট্রেডিংয়ের মালিক।
সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চট্টগ্রামে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে পতেঙ্গা মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বন্দর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শাকিলা সোলতানা ও শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন শাখার ওসি মো. তাহইয়াতুল ইসলাম।
আটক ব্যক্তি চট্টগ্রামের উপজেলার কোয়েপাড়া এয়াকুব আলী চৌধুরী বাড়ির মফিজুল আলম চৌধুরীর ছেলে।
ইমিগ্রেশন পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আনছারুল আলম চৌধুরী সকাল সাড়ে ৮টায় ইউএস বাংলার একটি ফ্লাইটে দুবাই যাওয়ার জন্য শাহ আমানত বিমানবন্দরে আসেন। খেলাপি ঋণ থাকায় পুলিশ তাকে আটক করে। তিনি এস আলম গ্রুপের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, আনছারুল আলম চৌধুরীর নামে ইসলামী ব্যাংকে এক হাজার ৩০ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। এছাড়া জনতা ব্যাংক থেকে ৩৪০ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে এই দুই ব্যাংকেই তিনি মোট এক হাজার ৩৭০ কোটি টাকার ঋণখেলাপি।
আরও পড়ুন:ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক (এফএসআইবি) এস আলম গ্রুপের দখলমুক্ত করার পর নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রোববার বেসরকারি খাতের ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একইসঙ্গে পাঁচজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়ে পরিচালনা পর্ষদের নতুন বোর্ড গঠন করে দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে এস আলম গ্রুপের দখলে থাকা আরও একটি ব্যাংক মুক্ত হয়েছে।
ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল মান্নানকে এফএসআইবি চেয়ারম্যান করা হয়েছে।
বাকি চার স্বতন্ত্র পরিচালক হলেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক আজিজুর রহমান, উত্তরা ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল কুদ্দুস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষক সাইফুল আলম ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট রাগিব আহসান।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের পর্ষদে পরিবর্তন আনা হয়। সবশেষ ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করে দিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছয়টিসহ ৯টি বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলে জানিয়েছে ইউএনবি।
বার্তা সংস্থাটির খবরে বলা হয়, নিষেধাজ্ঞায় এসব ব্যাংকের পে-অর্ডার, চেক ও ব্যাংক গ্যারান্টি না নেয়ার কথা জানানো হয়েছে।
বন্দরের প্রধান অর্থ ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুস শাকুরের সই করা একটি অফিস আদেশ বৃহস্পতিবার সংস্থাটির সব বিভাগের কাছে পাঠানো হয়। এ নির্দেশনার ফলে বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে সেবা নিতে কিংবা টেন্ডারসহ আনুষঙ্গিক কাজে কেউ ব্যাংকগুলোর চেক বা পে-অর্ডার দিতে পারবেন না।
ইউএনবির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত প্রায় ১৫ দিন ধরে শিপিং এজেন্টগুলো ৯টি বেসরকারি ব্যাংকের পে-অর্ডার নেয়া বন্ধ রেখেছিল। এবার ব্যাংকগুলোর পে–অর্ডার, চেক ও ব্যাংক গ্যারান্টি সেবা বন্ধের নির্দেশনা জারি করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
ব্যাংকগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংক।
এর মধ্যে প্রথম ছয়টি ব্যাংক আলোচিত এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন।
গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘সাধারণত দরপত্র দাখিলের সময় টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে জামানত হিসেবে পে–অর্ডার নেয়া হয়। আবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির জন্য ব্যাংক গ্যারান্টি নেয়া হয়।
‘এসব পে-অর্ডার কিংবা ব্যাংক গ্যারান্টি নগদায়নের ক্ষেত্রে যাতে বন্দর কোনো সমস্যায় না পড়ে, সে জন্য সতর্কতাবশত এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সালমান এফ রহমান, তার স্ত্রী ও ছেলের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে ইউএনবি।
বার্তা সংস্থাটির খবরে বলা হয়, ব্যাংকগুলোতে চিঠি পাঠিয়ে প্রাথমিকভাবে ৩০ দিনের জন্য এসব ব্যক্তিগত হিসাবের লেনদেন স্থগিত করার নির্দেশ দেয় বিএফআইইউ।
এ ছাড়াও চিঠি পাঠানোর পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে এসব হিসাবের হালনাগাদ তথ্য জানানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ইউএনবির খবরে উল্লেখ করা হয়, গত ১৩ আগস্ট গ্রেপ্তার হন বাংলাদেশের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, সাবেক সংসদ সদস্য ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো গ্রুপে যেসব ব্যাংকের বিপুল অর্থ গেছে, তার একটি জনতা ব্যাংক।
সম্প্রতি ঋণ অনিয়মের কারণে আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালক পদ হারান সালমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান।
আরও পড়ুন:আমানতকারীদের অর্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রির পরিকল্পনার কথা জানিয়ে জনসাধারণকে এসব সম্পত্তি কেনার বিষয়ে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংকে আমানতকারীদের অর্থ পরিশোধে লুট হয়ে যাওয়া টাকা উদ্ধারকেই অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সব লেনদেন ইতোমধ্যে স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পরিপ্রেক্ষিতে গ্রুপটি বিভিন্ন ভূসম্পত্তি বিক্রির চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। এসব সম্পদ বিক্রি ঠেকাতে আইনি প্রক্রিয়া প্রয়োজন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ‘রাষ্ট্রের স্বার্থে’ এস আলম গ্রুপের কাছ থেকে জমি ও সম্পত্তি না কেনার পরামর্শ দেন।
ড. মনসুর জানান, সুশাসন নিশ্চিত করতে ছয়টি ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে। শিগগিরই আরও পরিবর্তন আশা করা হচ্ছে। এই নতুন বোর্ডগুলো রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে ব্যাংকগুলো পরিচালনা করবে। যদি তারা প্রয়োজনমতো কাজ না করে তবে আরও পরিবর্তন আনা হবে।
মুদ্রাস্ফীতির বিষয় তুলে ধরে গভর্নর বলেন, ‘দেশে সাম্প্রতিক বড় বন্যার কারণে আগামী দুই থেকে তিন মাসে মুদ্রাস্ফীতি কমার সম্ভাবনা নেই। তবে আমি আশাবাদী আগামী ৬ থেকে ৮ মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে।
‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে উভয় পক্ষের প্রচেষ্টা প্রয়োজন। তা হলো- বাংলাদেশ ব্যাংকের যথাযথ নীতিগত ব্যবস্থা এবং একটি স্থিতিশীল সরবরাহ চেইন বজায় রাখা। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছি। সরবরাহ স্বাভাবিক হলে মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করবে।’
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রসঙ্গে ড. মনসুর বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে এক ডলারও বিক্রি হবে না। তবে আমরা বাজার থেকে ডলার সংগ্রহ করে সরকারি ব্যয় মেটাতে সোনালী ব্যাংকের মতো ব্যাংকে সরবরাহ করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘লেটার অফ ক্রেডিট (এলসি), বিদ্যুতের ঋণ এবং সার আমদানিসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় মেটাতে ডলারের চাহিদা ব্যবস্থাপনার দিকে মনোনিবেশ করা হচ্ছে।’
আমানতকারীদের উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে গভর্নর তাদেরকে ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানান এবং গণপ্রত্যাহারের বিরুদ্ধে সতর্ক করেন।
তিনি বলেন, ‘সবাই একযোগে টাকা উত্তোলন করলে পৃথিবীর কোনো ব্যাংক তা পরিচালনা করতে পারবে না। শুধু যেটুকু প্রয়োজন তা তুলে নিন।’
ধুঁকতে থাকা ব্যাংকগুলোর আমানতকারীদের আশ্বস্ত করে ড. মনসুর বলেন, ‘সংস্কার চলছে এবং সময় লাগবে।
‘আপনারা উচ্চ সুদের হার বা অন্য কোনো কারণে এসব ব্যাংকে টাকা রেখেছেন। এখন আপনার টাকা তুলে নেয়ার জন্য তাড়াহুড়োর দরকার নেই। স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে টাকা তুলে নেয়ার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো না করে যতটুকু প্রয়োজন কেবল ততটুকুই তুলে নিন।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য