ঈদ উৎসবে দীর্ঘ ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে সালামিতে নতুন টাকা দেন অনেকে। এ কারণে বিশেষ দিনটির আগে চাহিদা বাড়ে ঝকঝকে টাকার।
ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে প্রতিবারের মতো এবারও রাজধানীতে জমে উঠেছে নতুন টাকার ব্যবসা, তবে অন্যবারের চেয়ে এবার নতুন টাকা কিনতে দাম বেশি দিতে হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ক্রেতারা।
নতুন টাকার হাট যেখানে
রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে, গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের সামনে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন শাঁখারীবাজার মোড়, বাংলাবাজার মোড়সহ বেশ কিছু এলাকায় নতুন নোটের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা।
গুলিস্তান স্পোর্টস মার্কেটের সামনে সারি সারি ছোট টেবিল আর টুল নিয়ে মাথার ওপর ছাতা দিয়ে বসেছেন অর্ধশতাধিক বিক্রেতা। এসব দোকানে দুই টাকার নোট থেকে শুরু করে ৫০০ টাকার নতুন নোট বিক্রি হচ্ছে। তাদের ঘিরে রেখেছেন রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ক্রেতারা।
কোন নোটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নতুন নোটের হাট বসলেও বিক্রয়মূল্য প্রায় একই। এসব দোকানে বান্ডেল আকারে সাজিয়ে রাখা হয় নতুন নোট।
প্রতিটি বান্ডেল হাজার টাকার সমান। সাধারণ সময়ে হাজার টাকা সমমূল্যের এসব বান্ডেল বিক্রি হয় ২০০ টাকা বেশি দরে, তবে ঈদের সময়ে তা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। নোটের চাহিদা অনুযায়ী দাম কম-বেশি হয়।
এ বছর ঈদে ১০ ও ২০ টাকার নতুন নোটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি বলে জানান বিক্রেতারা। এরপর ৫ ও ২ টাকার নোট বেশি বিক্রি হচ্ছে, তবে সচ্ছল ক্রেতারা বেশি পরিমাণে ৫০ ও ১০০ টাকার নোট কিনছেন।
টাকার বাজারে দুই টাকার নোট ৬০০ টাকার বান্ডেল বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। পাঁচ টাকার বান্ডেল বিক্রি হচ্ছে হাজারে ৩৫০ টাকা বেশিতে। আবার ১০ টাকার এক বান্ডেল নোট বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৩০০ টাকায়।
২০ টাকার বান্ডেল বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২৫০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকায়।
বিক্রেতা ও ক্রেতাদের ভাষ্য
৫০ টাকার নোট এক বান্ডেল নিতে হলে বাড়তি দিতে হচ্ছে ২০০ টাকা। এ ক্ষেত্রে ১০০ টাকার বান্ডেলের চাহিদা কম থাকায় সেটা বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১৫০ কিংবা ২০০ টাকায়। চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকায় ১০ টাকার নোটের দামও বেশি।
গুলিস্তানে নতুন টাকার ব্যবসায়ী জামাল হোসেন জানান, ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকা বিক্রি করছেন তিনি। নতুন নোটের মধ্যে ১০ টাকার নোটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এর পরপরই বেশি চলে ২০ টাকার নোট, তবে ৫০০ কিংবা এক হাজার টাকার নোট এখানে চলে না।
এ বাজারেই নতুন টাকার ব্যবসা করেন ফারুক মিয়া। তিনি জানান, ঈদ সামনে রেখে প্রতিবারের মতো এবারও ক্রেতাদের সমাগম অনেক বেশি। বরাবরের মতো এবারও ১০ টাকার নোটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি, কিন্তু এবার টাকার দাম একটু বেশি হওয়ায় আগের মতো বেচাবিক্রি নেই।
রাজধানীর সদরঘাট এলাকায় ঝুট কাপড়ের ব্যবসা করেন মুন্সীগঞ্জের বাসিন্দা মনির হোসেন। তিনিও গুলিস্তানে নতুন টাকা কিনতে আসেন। প্রতি বছরই ঈদে বাড়ি ফেরার সময় নতুন নোট কেনেন তিনি।
জানতে চাইলে মনির হোসেন বলেন, ‘বিগত বছরের তুলনায় প্রতি বান্ডেলে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেশি দাম রাখা হচ্ছে।’
নারায়ণগঞ্জের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘ছেলে-মেয়ে ও প্রতিবেশীদের জন্য নতুন টাকা সংগ্রহ করেছি। ১০, ২০ ও ৫০ টাকার বান্ডেল কিনেছি। ঈদ উপলক্ষে নতুন টাকার দাম কিছুটা বেশি নিচ্ছেন বিক্রেতারা।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইউছুব ওসমানের অভিযোগ, ‘এ বছর প্রতি বান্ডেলের দাম ২০ থেকে ৫০ টাকা বাড়তি নেয়া হচ্ছে। ভাগনে, ভাতিজি ও ছোট ভাইদের ঈদ সালামি দেব। সে কারণে পাঁচ হাজার টাকা কিনতে এসেছিলাম, কিন্তু গতবারের চেয়ে এবার দাম চড়া। কোনো দামাদামিরও সুযোগ নেই।’
নতুন টাকার কদর কেন
ক্রেতারা জানান, ঈদ উপলক্ষে পরিবারের ছোট-বড় সবাই ও আত্মীয়স্বজনকে সালামি দেয়ার জন্য নতুন টাকা নিতে এসেছেন তারা। পুরাতন ১০০ টাকার নোটের পরিবর্তে যদি ১০ টাকার দুটি নতুন নোট দেয়া হয়, ওই ১০০ টাকার চেয়ে নতুন নোট পেয়ে হাজার গুণ বেশি খুশি হয়ে শিশুরা মুখে একটা চওড়া হাসি দেয়। শুধু শিশুরাই নয়, নতুন কড়কড়ে নোট পেতে বড়দেরও ভালো লাগে। এ ছাড়াও অনেকে সহকর্মী, অনেকে আবার রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ঈদ উপহার হিসেবে দেয়ার জন্য নতুন টাকা সংগ্রহ করেন।
বিক্রেতারা বলছেন, সালামি দেয়ার কারণে ঈদ এলেই কদর বাড়ে টাকার নতুন নোটের। আবার অনেকে জাকাত, ফিতরা দিতেও নতুন টাকার ব্যবহার করে থাকেন। সারা বছর যে পরিমাণ নতুন টাকা বিক্রি হয়, তার অর্ধেকই বিক্রি হয় দুই ঈদে। এ জন্য তারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।
গুলিস্তানে নতুন টাকা কিনতে আসা আবদুল আলিম জানান, তার বাড়ি রংপুর জেলায়। বাবা-মা ও স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে এরই মধ্যে শেষ করছেন কেনাকাটা। এখন তিনি গুলিস্তান এসেছেন কিছু নতুন নোট সংগ্রহ করার জন্য, যাতে এগুলো তিনি ঈদ বকশিস হিসেবে বাড়ির ছোটদের দিতে পারেন।
ব্যাংক ছেড়ে ফুটপাতে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের লাইনে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট হয়। অফিস সময়ের পরে ঝামেলামুক্তভাবে নতুন টাকা নিতেই এখানে এসেছি। যদিও এখানেও ভিড় কম না, তবে ব্যাংকের তুলনায় সময় কম নষ্ট হয়।’ আবদুল আলিমের মতো যারা সময় বাঁচাতে চান, তারাই গুলিস্তানসহ রাজধানীর ফুটপাতের ভ্রাম্যমাণ টাকার দোকানে ভিড় জমান।
শরীয়তপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলমগীর ব্যবসার কাজে ঢাকায় এসেছেন। কাজ শেষে নতুন নোট সংগ্রহ করতে এসেছেন গুলিস্তানে।
তিনি বলেন, ‘বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সবাইকে খুশি করতে হবে। বিশেষ করে ছোট ভাই-বোন বা আত্মীয়স্বজনকে ঈদের দিন নতুন টাকা সালামি দিতে হয়। ঈদের দিন তাদের খুশি করার জন্য তেমন বেশি কিছুর প্রয়োজন হয় না।
‘তাদের একটাই চাওয়া। সেটা হলো বোনাস। তাও যেই সেই টাকা দিলে নিবে না, তাদের দিতে হবে নতুন টাকা। নতুন টাকা হাতে পেলেই তারা মহা খুশি। এ জন্য এই নতুন টাকার কেনার জন্য এখানে এসেছি।’
৩০ বছরের বেশি সময় ধরে টাকার ব্যবসা করা ষাটোর্ধ্ব মোহাম্মদ জহিরুল মিয়া দোকান সাজিয়ে বসেছেন শাঁখারীবাজার মোড়ে। তিনি জানান, ঈদে সদরঘাট দিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় অনেকেই নতুন টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। আবার পুরান ঢাকার আশপাশের লোকজনও নিচ্ছেন। নতুন টাকায় ঈদ সালামি তো অনেক দিনের রেওয়াজ।
গুলিস্তানের টাকার বাজারে বাবার অনুপস্থিতিতে দোকান সামলাচ্ছেন আরিফ হোসেন নামের এক যুবক। তিনি জানান, ঈদে এ ব্যবসা বেশ ভালো হয়, তবে এ বছর টাকার দাম কিছুটা বেশি। এ জন্য বিক্রি আগের তুলনায় কম।
ব্যাংকের নতুন টাকা খোলা বাজারে কীভাবে
ঈদের খুশিকে কয়েক গুণ বাড়িতে দিতে এবার ১০৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকার নতুন নোট বাজারে ছেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাজারে নতুন টাকা ছাড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ৩১ মার্চ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের নির্ধারিত শাখা থেকে নতুন নোট সংগ্রহ করছেন গ্রাহকরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের ৮০টি শাখা থেকে ৫, ১০, ২০, ৫০ ও ১০০ টাকার এক বান্ডেল করে একজন গ্রাহক আঙুলের ছাপ দিয়ে একবারই মোট ১৮ হাজার ৫০০ টাকা বিনিময় করতে পারবেন, তবে গুলিস্তান বা অন্যান্য খোলা বাজারে কোনো কিছুই জমা না দিয়ে বাড়তি টাকা দিয়ে ক্রেতারা যেকোনো পরিমাণ নতুন টাকা কিনতে পারছেন।
সাধারণত বছরে দুই ঈদে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখার মাধ্যমে প্রতিবার ২৫ থেকে ৩৩ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট ছাড়া হয়। এবার প্রতিটি শাখাকে দৈনিক কমপক্ষে ৯০ জনকে নতুন টাকা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ হিসাবে একটি শাখা দৈনিক কমপক্ষে ১৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকার নতুন নোট বিতরণ করবে। আর এক দিনে ৮০টি শাখার মাধ্যমে বিতরণ হবে ১৩ কোটি ৩২ লাখ টাকার নতুন নোট।
গ্রাহকদের দাবি, চাহিদার তুলনায় ব্যাংকগুলোতে সরবরাহ করা টাকা ছিল কম। ব্যাংকগুলোতে নতুন টাকা না পাওয়া গেলেও বাড়তি দামে খোলাবাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গ্রাহকদের চাহিদার তুলনায় টাকা দেয়া যায়নি। আরও বেশি টাকার চাহিদা ছিল। ব্যাংক থেকে টাকা না পেয়ে এখন গুলিস্তান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে বসা দোকানিদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা দিয়ে নতুন নোট সংগ্রহ করছেন অনেকে।
বিপুল চাহিদার খোলা বাজারে এত টাকা আসে কীভাবে এ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ সবাই। পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে বেশির ভাগ বিক্রেতা এড়িয়ে যান।
বেশ কয়েকজন বিক্রেতা জানান, নতুন টাকা সংগ্রহের জন্য ব্যাংকগুলোয় তাঁদের ঢুকতে দেয়া হয় না। ফলে ব্যাংক থেকে সরাসরি নতুন নোট কিনতে পারেন না তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাধ্যমে তারা নতুন নোট সংগ্রহ করেন। কয়েক হাত ঘুরে এ নোটগুলো বিক্রেতাদের হাতে আসে। এ কারণে নতুন নোটের দামও বেড়ে যায়।
কথার ফাঁকে গুলিস্তানের মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর নামের এক টাকা ব্যবসায়ী নিউজবাংলাকে জানান, ব্যাংকের কর্মচারী ও বিভিন্ন ব্যাংকারদের মাধ্যমে ডিল করে টাকা সংগ্রহ করেন তারা। বেশ কয়েকজন এবার গতবারের চেয়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন। এ জন্য খোলা বাজারে ব্যবসায়ীদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
আরেক ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম বলেন, এ বছর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেরি করে টাকা এসেছে। সেখান থেকেও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে টাকা আসে। বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারী দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এবার শুরু থেকে বেচাকেনা তেমন হয়নি। আবার অনেকেই আছেন ব্যাংকারদের আত্মীয়স্বজন। তারা তাদের মাধ্যমে সংগ্রহ করেন।
আরও পড়ুন:ভারত সরকারের আমদানি নিষেধাজ্ঞার পর যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে তৈরি পোশাকের ৩৬টি ট্রাক আটকা পড়েছে। পেট্রাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষের ‘গেইট পাস’ অনুমতি না পাওয়ায় পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলো ভারতে যেতে পারেনি বলে বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান।
ভারত সরকারের আমদানি নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে জানতে চাইলে রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, ‘এ সংক্রান্ত কোনো চিঠি আমরা পাইনি। পত্র-পত্রিকায় দেখেছি। বেনাপোল বন্দর দিয়ে শনিবার পর্যন্ত সব পণ্য রপ্তানি হয়েছে।’
‘তবে রোববার সকাল থেকে অন্যান্য পণ্য রপ্তানি হলেও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, পোশাক জাতীয় কোনো পণ্য রপ্তানি হয়নি। বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছি ৩০ থেকে ৩৫ ট্রাক পণ্য এখানে আটকে আছে।’
বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, পোশাকসহ প্রায় সাত ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারত সরকার।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সুতা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের এক মাসের মাথায় ভারতের এই পাল্টা নিষেধাজ্ঞা এল, যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করার কথা বলেছে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
গত বছর (২০২৩-২৪ অর্থবছর) বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রায় ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। এদিকে বেনাপোলের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে বেশ কয়েকটি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত। যেসব পণ্যের এলসি/টিটি এরই মধ্যে হয়ে গেছে সেসব পণ্য যাতে আমদানি করা যায় তার জন্য কাস্টমসে আলোচনা চলছে।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১৭ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকার পণ্য ভারতে রপ্তানি করে, গত অর্থবছরে তা প্রায় অপরিবর্তিত ছিল। অন্যদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে রপ্তানি করেছে ১৭ হাজার ৪২৫ কোটি টাকার পণ্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয়মাসে রপ্তানি হয়েছে ১১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকার পণ্য। যেসব দেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়ছে, তার মধ্যে ভারত একটি, যেখানে প্রতিবছর প্রায় ৭০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। এর মধ্যে ৯৩ শতাংশের মত পোশাক পণ্য স্থলপথেই রপ্তানি হয়। ফলে ভারতের নতুন নিষেধাজ্ঞা এ খাতের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে দেখা দেবে বলে ব্যবসায়ীদের শঙ্কা।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান আরও বলেন, ‘স্থলপথে পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে কার্যত ভারতের সঙ্গে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে। আমদানিকারকরা বেনাপোল ও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে থাকে কলকাতায়। সেটা বন্ধ হয়ে গেল। নৌপথে পণ্য পরিবহন করা এসব রপ্তানিকারকদের পক্ষে সম্ভব না। এতে খরচের পাশাপাশি সময়ের কারণে সেটা তারা পারবেন না।’
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, ‘ভারত সরকার স্থলবন্দর দিয়ে গার্মেন্টস সামগ্রী আমদানি নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বিপাকে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। স্থলপথে এসব পণ্য রপ্তানিতে খরচ অনেক কম হতো কিন্তু সমুদ্র ও বিমান পথে পণ্য রপ্তানিতে খরচ অনেক বেশি হবে।’
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা বলেন, বছরে ১০ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয় ভারতে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেশিরভাগ আমদানিকারকেরা বেনাপোল বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী। এ পথে রফতানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, পাট, পাটের তৈরি পণ্য, গার্মেন্টস, তৈরি পোশাক, কেমিকেল, বসুন্ধারা টিসু, মেলামাইন, মাছ উল্লেখ্যযোগ্য।
ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন
স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যসহ সাত ধরনের পণ্য আমদানিতে যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তাতে ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে দাবি করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
এ বাস্তবতা তুলে ধরে বাংলাদেশ বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করবে বলে জানিয়েছেন তিনি। গতকাল রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা এমন মন্তব্য করেন।
‘আমরা নিশ্চয় এই অবস্থানগুলোকে তুলে ধরবো এবং সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারবো। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা এই পদক্ষেপে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভৌগলিকভাবে সংযুক্ত দুটি দেশ আমরা। এটা বাণিজ্য ব্যবস্থাপনার একটা প্রক্রিয়া। উভয়পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে এটার একটা উপযুক্ত সিদ্ধান্ত আনতে পারবো। আমাদের আরও কিছু বন্দর এখনও খোলা আছে,’ বলেন শেখ বশিরউদ্দীন।
তিনি জানান, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি। স্থানীয় স্থলবন্দরে বিশেষ করে আখাউড়া ও ডাউকি সীমান্তভিত্তিক কিছু সিদ্ধান্তের কথা শুনেছি। আনুষ্ঠানিকভাবে জানার পর সিদ্ধান্ত নিতে পারবো। এখন বিষয়টি বিশ্লেষণ করবো।’
তবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যকে স্বাভাবিক বাণিজ্য প্রবাহ বলে মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা যেটা আমাদের থেকে নেয়, সেটা সুলভ মূল্যের কারণেই নেয়। আমরাও একই কারণে তাদের পণ্য কিনি। সুতরাং এখানে স্বাভাবিক বাণিজ্য প্রবাহের বিষয়গুলো আমরা তুলে ধরবো।’
‘আমরা আমাদের বৈচিত্রকরণ ও প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে বাণিজ্য বৃদ্ধি ঘটাবো,’ যোগ করেন শেখ বশিরউদ্দীন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে খুব বেশি যে আসবাব যায়, তা না। পোশাকপণ্য যায়, আমরা প্রতিযোগিতা সক্ষমতার মাধ্যমেই এগুলো পাঠিয়ে থাকি। দুপক্ষের জন্যই লাভজনক বিধায় এগুলো যায়। আশা করি, উভয় দেশের ভোক্তা ও উৎপাদনের স্বার্থে এটা চলমান থাকবে।’
এর আগে ট্রান্সশিফমেন্ট সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ায় কী ধরনের প্রবাহ পড়েছে, জানতে চাইলে বাণিজ্য উপদেষ্টা দাবি করেন, ‘ট্রান্সশিফমেন্টের কোনো প্রভাব আমাদের ওপর নেই। নিজস্ব সক্ষমতা ব্যবহার করে নিজস্বভাবেই এই সমস্যা সমাধান করেছি।’
সূত্র: বিডিনিউজ, ইউএনবি
বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে উল্লেখ করে ডলার-টাকার বিনিময় হার এখন থেকে বাজারনির্ভরভাবে নির্ধারণের সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দুবাই থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন।
এ সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বাংলাদেশ আগামী জুন মাসের মধ্যে ১৩৩ কোটি ডলারের ঋণ কিস্তি পাবে বলেও জানান তিনি।
ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের দর-কষাকষি চলছিল। মূলত সে কারণে আইএমএফ ঋণের কিস্তি ছাড় করছিল না। এর মধ্যে গতকাল জানা যায়, বাংলাদেশ ডলারের বিনিময় আরও নমনীয় করতে রাজি হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে চলমান ৪৭০ কোটি ডলারে ঋণের দুটি কিস্তি একসঙ্গে ছাড় করতে রাজি হয়েছে আইএমএফ।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত ৯ মাসে রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার বিক্রি করা হয়নি, তবুও বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে এবং তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। এ অবস্থায় বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এ বিষয়ে ব্যাংকারদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, বাজারভিত্তিক করায় হঠাৎ করে ডলারের রেট অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। দীর্ঘদিন ধরে ডলারের রেট ১২২ টাকার আশপাশে রয়েছে এবং তা সেখানেই থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ডলারের রেট দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা-সরবরাহ অনুযায়ী নির্ধারিত হবে, বাইরের দেশের নির্দেশে নয়। বর্তমানে বাজারে ডলারের সরবরাহও পর্যাপ্ত রয়েছে।
তবে, তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, দুবাইভিত্তিক কিছু সিন্ডিকেট বাজারে অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করতে পারে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্ক থাকবে এবং সার্বক্ষণিক নজরদারি করবে। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, ড. মো. হাবিবুর রহমান, কবির আহমেদ, উপদেষ্টা আহসান উল্লাহ এবং নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান।
এদিকে গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) চলতি বছরের জুনের মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির জন্য নির্ধারিত ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার একত্রে ছাড় করবে।
বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে সকল বিষয় সতর্কতার সাথে পর্যালোচনা করে উভয়পক্ষ রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, মুদ্রা বিনিময় হারসহ অন্যান্য সংস্কার কাঠামো বিষয়ে সম্মত হয়েছে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা এবং বিনিময় হার ব্যবস্থায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বিষয়ে অধিকতর পর্যালোচনার লক্ষ্যে চতুর্থ রিভিউ সম্পন্ন হওয়ার পর উভয় রিভিউয়ের জন্য নির্ধারিত কিস্তির অর্থ একত্রে ছাড় করা হবে বলে বিগত তৃতীয় রিভিউয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের এপ্রিলে ঢাকায় অনুষ্ঠিত চতুর্থ রিভিউয়ের সময় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ব্যাংক-ফান্ড সভায় এবিষয়ে আলোচনা চলমান ছিল।
এ ছাড়া বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, এআইআইবি, জাপান এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে আরও প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সহায়তা জুন মাসের মধ্যে পাবে বলে বাংলাদেশ প্রত্যাশা করছে। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে এ অর্থ পাওয়া গেলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও শক্তিশালী হবে। ফলে মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয় যে, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা গ্রহণের ক্ষেত্রে যেসকল সংস্কার কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে তা সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব বিবেচনায় পরিকল্পিত এবং জাতীয় স্বার্থে গৃহীত। এ সকল সংস্কার কর্মসূচির ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীদের কার্যক্রম শুধুমাত্র কারিগরি সহায়তা প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
পবিত্র রমজান মাসে দাম সহনীয় রাখতে টাটকা ফলের ওপর আমদানি শুল্ক কমিয়েছে সরকার।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, গত ১৬ মার্চ জারি করা দুটি প্রজ্ঞাপনে আমদানি পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে এবং ৫ শতাংশ অগ্রিম কর সম্পূর্ণ অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ১০ মার্চ পৃথক প্রজ্ঞাপনে ফল আমদানির ওপর অগ্রিম আয়কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। ফলে মোট শুল্ক কমানো হয়েছে ১৫ শতাংশ।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, রমজানে দ্রব্যমূল্যে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বৃহত্তর জনস্বার্থে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এনবিআরের দাবি, বৃহত্তর জনস্বার্থে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত কয়েক মাসে ভোজ্যতেল, চিনি, আলু, ডিম, পেঁয়াজ, চাল, খেজুর, কীটনাশকসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক, নিয়ন্ত্রণ শুল্ক, ভ্যাট, অগ্রিম আয়কর ও অগ্রিম করের উল্লেখযোগ্য অংশ অব্যাহতি দিয়েছে।
আরও পড়ুন:যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত ৪ মাসে ভারত থেকে ১৮ হাজার ৮০০ টন চাল আমদানি করা হলেও দেশের বাজারে দামে প্রভাব পড়ছে না।
দেশের চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনপ্রাপ্ত ৯২টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান শুল্কমুক্ত কোটায় এসব চাল আমদানি করে।
চলতি অর্থবছরে ১৭ নভেম্বর থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত এসব চাল আমদানি করা হয়। তবে ভারত থেকে চাল আমদানি অব্যাহত থাকলেও দেশের বাজারে দামে প্রভাব পড়ছে না।
গত ১৩ মার্চ বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৩৫০ টন চাল আমদানি করা হয়। এ নিয়ে গত চার মাসে ১৮ হাজার ৮০০ টন চাল আমদানি হয় এ বন্দর দিয়ে।
গত ৬ মার্চ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আরিফুল ইসলামের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বেসরকারিভাবে নন বাসমতি সেদ্ধ চাল ও আতপ চাল আমদানির জন্য বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে এলসি খোলার সময়সীমা আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হলো।’
দেশের চালের বাজার স্থিতিশীল ও ক্রেতা সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকার দেশের শীর্ষ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাইরের দেশ থেকে চাল আমদানির অনুমতি দেয়। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে বাইরের দেশ থেকে চাল আমদানির এই সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, আটটি চাল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান গত বছরে ১৭ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৩ মার্চ পর্যন্ত ১৮ হাজার ৮০০ টন চাল আমদানি করেছে। সারা দেশে চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল ৯২ প্রতিষ্ঠানকে। দুই লাখ ৭৩ হাজার টন সেদ্ধ এবং এক লাখ ১৯ হাজার টন আতপ চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল তাদের।
অনেক প্রতিষ্ঠান এ সময়ের মধ্যে আমদানি করতে পারেনি। তারপরও সরকার ২৫ দিন সময় নির্ধারণ করে দেয় আমদানি করা চাল বাজারজাত করার জন্য। আশানুরূপ চাল আমদানি না হওয়ায় পরে তা প্রথম দফায় ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়ায় সরকার। তারপরও আমদানি ধীরগতির কারণে আবারও সময় বাড়ায় সরকার।
এভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল আমদানি না হওয়ায় চতুর্থবারের মতো আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছে সরকার। এ সময়ের মধ্যে সব চাল আমদানি হলে বাজারে চালের দাম কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে চাল আমদানি অব্যাহত থাকলেও বাজারে দামের ওপর প্রভাব পড়ছে না। রোজার শুরু থেকেই সব ধরনের চালের দাম কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। অব্যাহতভাবে চালের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, চালের দাম কমানোর জন্য সরকারের নানামুখী উদ্যোগের পরও মিলছে না সুফল। ভারত থেকে চাল আমদানি হলেও দেশীয় চালের দামের ওপর তার প্রভাব পড়ছে না।
তারা বলছেন, রোজার শুরুতেই সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। পণ্যটির অস্বাভাবিক এ মূল্যবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। রোজায় সবজিসহ অন্যান্য জিনিসপত্র কিনতে পারলেও চাল কিনতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
চাল ব্যবসায়ী দীন মোহাম্মদ বলেন, ‘রোজার শুরুতেই চালের দাম কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। রোজার আগের ৬৪ টাকা কেজি দরের ২৮ জাতের চাল বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৬৯ টাকায়, ৭২ টাকার মিনিকেট ৭৬ টাকায়, ৫২ টাকার মোটা চাল ৫৬ টাকায়, ৮৪ টাকার বাসমতি চাল বিক্রি হচ্ছে ৮৮ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে।
‘আমদানি করা ভারতীয় একটি চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা কেজি দরে। তবে বাজারে ক্রেতাদের মধ্যে ভারতীয় চালের চাহিদা কম।’
তিনি বলেন, ‘রোজার মধ্যে চালের দাম কমার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। ভারতীয় চাল আমদানি অব্যাহত থাকলেও বাজারে দামের ওপর কোনো প্রভাব পড়ছে না। তবে সামনে নতুন চাল বাজারে উঠলে সরবরাহ বাড়লে দাম কমতে পারে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর পরিচালক (ট্রাফিক) শামিম হোসেন জানান, ভারত থেকে আমদানি করা চালের ট্রাক স্থলবন্দরে ঢুকলেই দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা তা দ্রুত ছাড় করার ব্যবস্থা নেন, যাতে আমদানি করা চাল দেশের বাজারে দ্রুত সরবরাহ করা যায়।
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. কামরুজ্জামান জানান, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণে বেনাপোল স্থলবন্দরের গুরুত্ব অনেক বেশি। বেনাপোল থেকে কলকাতার দূরত্ব কম হওয়ায় আমদানি বাণিজ্য সম্প্রসারণের সময় স্বল্পতা ও আর্থিক সাশ্রয় ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বাড়ায়। পণ্য পরিবহনে যাতায়াত ব্যবস্থা রয়েছে উন্নত।
তিনি আরও জানান, এ বন্দর থেকে পণ্য ছাড় করার পর অতি দ্রুত পৌঁছাতে পারে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরের বাজারে।
বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত চার মাসে ভারত থেকে ১৮ হাজার ৮০০ টন চাল আমদানি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চাল আমদানির জন্য সরকার আবারও এক মাস সময় বাড়িয়েছে।
আরও পড়ুন:দেশে জ্বালানি তেলের দাম মার্চে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
এক অফিস আদেশে শনিবার এমন তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ‘মার্চ মাসের জন্য তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি তেল সরবরাহ নিশ্চিত করতে চাচ্ছে সরকার। এ জন্য বিদ্যমান মূল্য কাঠামো অনুযায়ী ডিজেল ও কেরোসিন প্রতি লিটার ১০৫ টাকা, অকটেন ১২৬ টাকা এবং পেট্রল ১২২ টাকায় অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।’
এর আগে গেল ৩১ জানুয়ারি পেট্রল, অকটেন, ডিজেল ও কেরোসিনের মতো জ্বালানি তেলের দাম লিটারে এক টাকা বাড়ানো হয়, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে যা কার্যকর করা হয়।
জানুয়ারিতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে এক টাকা কমানো হয়েছিল। পেট্রল ও অকটেনের দাম অপরিবর্তিত ছিল।
গত বছরের মার্চ থেকে বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ শুরু করেছে সরকার। সে হিসাবে প্রতি মাসে নতুন দাম ঘোষণা করা হয়।
আরও পড়ুন:সবার আগে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি মন্তব্য করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
তিনি বলেন, একদিকে মূল্যস্ফীতির কারণে নিত্যপণ্য ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে, অন্যদিকে শতাধিক পণ্য ও সেবায় নতুন করে ভ্যাট আরোপ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।
এক বিবৃতিতে সোমবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন বা সংস্কার নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। মানুষের জীবন ও জীবিকা নিয়ে চিন্তা করার যেন কেউ নেই। টিসিবির ট্রাকের সামনে লাইন দিনে দিনে বড় হচ্ছে।
‘এখন প্যান্ট-শার্ট পড়েও স্বল্প দামে চাল-ডাল কিনতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অসংখ্য মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছে। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম হওয়ায় অনেকেই ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে না পেরে একবুক কষ্ট নিয়ে খালি হাতে ঘরে ফিরছে।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের কাছে মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম কেনা দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিভাবকরা সন্তান ও পরিজনের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছেন না। সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে পারছেন না; কিনতে পারছেন না জীবন রক্ষাকারী ঔষধ।
‘এমন বাস্তবতায় সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা।’
জিএম কাদের বলেন, ‘দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করি। আমরা মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা বলেই যাব।’
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে সরকার দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।
আরও পড়ুন:বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ড. ওমর বোলাত।
সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টার কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার সকালে এ সাক্ষাৎ হয়।
ওই সময় বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য দুই বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারে উন্নীত করার বিষয়ে আগ্রহের কথা জানান তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী।
সাক্ষাৎকালে তারা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের আকার বৃদ্ধি, বাংলাদেশে তুরস্কের বিনিয়োগ সম্ভাবনা, হালাল ফুড সনদ প্রাপ্তি ও ইকোনমিক কমিশন গঠন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, তুরস্ক বাংলাদেশের জন্য ভাতৃপ্রতিম দেশ। বিভিন্ন খাতে দীর্ঘদিনের সহযোগিতার ইতিহাস রয়েছে বাংলাদেশ ও তুরস্কের। এর মধ্যে ব্যবসা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি অন্তর্ভুক্ত।
তিনি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণকে উৎসাহিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তুরস্ককে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ হালাল রপ্তানিকারক দেশ উল্লেখ করে বাংলাদেশের হালাল খাবারের বাজার সম্প্রসারণে তুরস্কের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হালাল সনদ প্রাপ্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে তুরস্কের হালাল অ্যাক্রিডিটেশন অথরিটি ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের মধ্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হালাল সনদ প্রাপ্তি সহজ করবে। হালাল খাবার রপ্তানি দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করবে।
বাংলাদেশে বর্তমানে চমৎকার বিনিয়োগ পরিবেশ রয়েছে উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ এখন অনেক সহজ করা হয়েছে। বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধাও দিচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, টেলিযোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, ওষুধ শিল্প, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, সেবা, নির্মাণশিল্প এবং তৈরি পোশাক খাতে বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
ওই সময় তিনি বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে তুরস্কের বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ড. ওমর বোলাত বলেন, বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে দুই বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ তুরস্ক থেকে আমদানির চেয়ে রপ্তানি বেশি করে। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে।
তিনি জানান, বর্তমানে তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য মূলত টেক্সটাইল খাতকেন্দ্রিক। তুরস্ক বাংলাদেশে টেক্সটাইল খাতের বিভিন্ন যন্ত্র ও কেমিক্যাল রপ্তানি করে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে তুরস্ক তৈরি পোশাক আমদানি করে। তুরস্ক কেবল টেক্সটাইল খাতে সীমাবদ্ধ না থেকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের বহুমুখীকরণ করতে চায়।
তিনি বাংলাদেশে রিনিউবল এনার্জি, গাড়ি নিমাণ শিল্প, ফার্মাসিটিক্যালস, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাত, লজিসটিক্স ও নির্মাণ শিল্প খাতে তুরস্কের বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
ওই সময় উপস্থিত ছিলেন তুরস্কের বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী মুস্তাফা তাজকু এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব ) মো. আবদুর রহিম খান।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য