টেকসই করপোরেট নিশ্চিত করার স্বার্থে জবাবদিহিতার অনুশীলন এবং অন্তযোগাযোগ বৃদ্ধির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
রোববার বিকেল ৩টায় কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের (সিইউবি) অডিটোরিয়ামে ‘টেকসই করপোরেট ও জবাবদিহিতা অনুশীলন’বিষয়ক সেমিনারে বক্তারা এ মতামত দেন। সেমিনারটি সিইউবি ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েলিংটন ও সিইউবির বিশিষ্ট শিক্ষকরা অংশগ্রহণ করেন।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিইউবির বোর্ড অফ ট্রাস্টির চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। সভাপতিত্ব করেন সিইউবির প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. গিয়াস ইউ আহসান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত সেমিনারে অংশগ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রিত অতিথিদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আজকের এত সুন্দর এই আয়োজনের জন্য অবশ্যই ধন্যবাদ জানাই ডিএসই-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ড. এ টি এম তারিকুজ্জামান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েলিংটনের সিনিয়র লেকচারার ড. আইনুল ইসলাম ও ড. ইয়িনকা মোসেসসহ উপস্থিত সম্মানিত অতিথিদের।’
তিনি বলেন, ‘আপনাদের এই অংশগ্রহণ এবং মূল্যবান বক্তব্য উপস্থিত লেকচারার ও শিক্ষার্থীদের অবশ্যই টেকসই করপোরেট ও জবাবদিহিতা অনুশীলনের জন্য দারুণ ভূমিকা রাখবে। গ্লোবালাইজেশনের এ যুগে এমন আয়োজন সত্যি একে অন্যের সঙ্গে বোঝাপড়া বাড়ানোর পাশাপাশি আন্তসম্পর্কগুলোও বৃদ্ধি করবে। এমন সেমিনারের ফলে আপনাদের দক্ষতা এবং জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এ খাতে টেকসই উন্নয়নও করানো সম্ভব হবে।’
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ডিএসই-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ড.এ টি এম তারিকুজ্জামান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েলিংটনের সিনিয়র লেকচারার ড. আইনুল ইসলাম ও ড. ইয়িনকা মোসেস, অধ্যাপক মুহাম্মদ জিয়াউল হক মামুন, পিএইচডি, প্রধান পরামর্শক, বোর্ড অফ ট্রাস্টি; এম নাসির উদ্দিন, পিএইচডি, অধ্যাপক/গবেষণা পরিচালক, এনআইসিইউ ফেলোশিপ, টেক্সাস এঅ্যান্ডএম ইউনিভার্সিটি।
সেমিনারে বক্তারা করপোরেট টেকসই এবং জবাবদিহিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। যেখানে ক্যাপিটাল মার্কেট, করপোরেট গভর্ন্যান্স, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং পরিবেশগত দায়বদ্ধতা সম্পর্কিত বিষয়গুলোর তথ্য ও উপদেশ তাদের বক্তব্যে উঠে আসে।
বক্তারা বলেন, ‘টেকসই করপোরেট কালচারের সঙ্গে টেকসই উন্নয়নও সম্পৃক্ত। আর উন্নয়ন মানে একটি দেশের জিডিপিতে অবদান রাখা এবং সেই দেশ উন্নয়নে এগিয়ে যাওয়া। একেকটি প্রতিষ্ঠানকে স্মার্ট, মডার্ন, এডুকেটেড, ভিশনারি, প্রো-অ্যাকটিভ- এককথায় সুযোগ্য কর্মীবাহিনী দিয়ে সাজাতে ও তাদের ধরে রাখতে হলে কোম্পানিকেই সবার আগে উদ্যোগী হতে হবে। ফলে টেকসই করপোরেট চর্চা লাগবে।’
তারা আরও বলেন, ‘করপোরেট কালচার ধারাবাহিক প্রচেষ্টা ও প্র্যাকটিসের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে। এটি কোনো আইন পাস বা অফিস অর্ডার ইম্পোজ করার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় না। করপোরেট কালচারের অন্যতম বিষয় হলো প্রফেশনালিজম। বিজনেস গ্রোথ তো প্রতিষ্ঠান অবশ্যই চায়, কিন্তু সাসটেইনেবল গ্রোথ, সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট বিষয়গুলো মাথায় নিয়ে কাজ করতে হবে। যার ফলে অবশ্যই টেকসই করপোরেট চর্চাটা লাগবে।’
সেমিনারে উঠে আসা মূল বিষয়গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য টেকসই করপোরেট এবং জবাবদিহিতা কেবল সাধারণ শব্দ নয়, বরং একটি সমৃদ্ধ জাতির অপরিহার্য উপাদান। টেকসই অনুশীলন গ্রহণ করে এবং নৈতিক মান বজায় রেখে যে কোনো প্রতিষ্ঠান সবার জন্য আরও সমৃদ্ধ এবং ন্যায়পরায়ণ ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে বলে উপস্থিত বক্তারা মন্তব্য করেন।
এর আগে সেমিনারে আমন্ত্রিত অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয় এবং পরে তাদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়। সেমিনারে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের (সিইউবি) সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
টাকা পাচার ঠেকাতে বিশেষ ইউনিট গঠন করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। মূলত বাণিজ্যের আড়ালে যে বিদেশে টাকা পাচার হয়, তা প্রতিরোধ করতেই এমন উদ্যোগ। দুই প্রক্রিয়ায় টাকা পাচার হয় বলে মনে করে এনবিআর। এগুলো হলো-আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা ঘোষণা এবং ট্রান্সফার প্রাইসিং। এসব কারণে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব লোকসান হয় বলে মনে করে এনবিআর।
সম্প্রতি এনবিআর মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব কৌশল নামে ১০ বছরের একটি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। সেখানে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে।
গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটির (জিএফআই) উদ্ধৃতি দিয়ে এনবিআরের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্যের আড়ালে (মিথ্যা ঘোষণা) ৭০ শতাংশ অর্থ পাচার হয়ে থাকে।
টাকার পাচার রোধে এনবিআর তিনটি উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছে। প্রথমত, আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা ঘোষণা ও ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার ঠেকাতে দক্ষ কর্মকর্তাদের দিয়ে বিশেষায়িত একটি ইউনিট গঠন করা যেতে পারে। এই ইউনিটের সদস্যরা প্রতারণা হয় বা হতে পারে- এমন বিল অব এন্ট্রিগুলো তদারকি ও তদন্ত করবেন। এই ইউনিট গঠন হলে একদিকে টাকা পাচার বন্ধের পাশাপাশি এনবিআরের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির সক্ষমতা বাড়বে।
সাধারণত আমদানিকালে তুলনামূলক বেশি দাম দেখিয়ে অর্থ দেশের বাইরে পাচার করা হয়। মূলত মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এভাবে টাকা পাচার করা হয়। দুই বছর আগে এনবিআর পাচার টাকা ফেরত আনার সুযোগ দিলেও কেউ তা নেননি।
এনবিআরের দ্বিতীয় সুপারিশ হলো, বিদেশি কূটনীতিক মিশনে রাজস্ব খাতের কর্মকর্তাদের জন্য এটাশে পদ সৃষ্টি করা। এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্যের আড়ালে মিথ্যা ঘোষণা এবং ট্রান্সফার প্রাইসিং ইস্যুটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে। যেসব দেশ থেকে পণ্য আসে, সেখানে পণ্যের মূল্য কত, তা জানা সম্ভব হয় না। আবার নানাভাবে বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার হয়। এনবিআর বলছে, বিভিন্ন দূতাবাসে, বিশেষ করে বাংলাদেশে বড় বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোতে রাজস্ব খাতে কর্মকর্তাদের জন্য এটাশে পদ সৃষ্টির সুপারিশ করেছে এনবিআর। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান, ভারতের মতো দেশ এমন পদ সৃষ্টি করেছে বলে এনবিআরের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এনবিআরের তৃতীয় সুপারিশ হলো, পাচার টাকা ফেরত আনতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। যেমন দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া; যেসব দেশে পাচার হয়, সেখানে তদারকি ও পর্যবেক্ষণ বৃদ্ধি; আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করা। এসব করা হলে পাচার টাকা চিহ্নিত করে ফেরত আনা সহজ হবে। এ ছাড়া টাকা পাচারে সহায়তাকারীদের শাস্তির আওতায় আনার কথাও বলেছে এনবিআর।
এনবিআরের একজন কর্মকর্তা বলেন, টাকা পাচারের কারণে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারায় সরকার। টাকা পাচার বন্ধ করতে পারলে অর্থনীতি আরও চাঙা হবে। এ ছাড়া সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। বর্তমান বাজারদরে এর পরিমাণ ২৮ লাখ কোটি টাকা। এই হিসাবে প্রতিবছর গড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আর্থিক খাতের রাঘববোয়াল (ক্রীড়নক), আমলা ও মধ্যস্বত্বভোগীরা এই পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটি রিপোর্টস (জিএফআইআরএস) এবং কিছু নির্দিষ্ট পূর্বানুমানের ভিত্তিতে টাকা পাচারের হিসাব করেছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি।
দেশ থেকে কারা, কীভাবে, কোথায় টাকা পাচার হয়েছে- সেই চিত্র তুলে ধরে শ্বেতপত্রে বলা হয়, টাকা পাচারের জন্য দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আর্থিক খাতের ক্রীড়নক, আমলাদের মধ্যে এক ধরনের অনৈতিক চক্র গড়ে ওঠে। ঘুষ-দুর্নীতি, আর্থিক অপরাধ, মিথ্যা ঘোষণার আড়ালে বাণিজ্য, ব্যাংক থেকে চুরি করা টাকা, খেলাপি ঋণের অর্থ, রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রকল্পের খরচ বাড়িয়ে দেখানো, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, কর ফাঁকি- এসব কর্মকাণ্ডের অর্থ পাচার করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, হংকং, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারতসহ করের অভয়ারণ্য নামে পরিচিত ছোট ছোট দেশে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার হয়েছে। মূলত বাড়ি কিনে এবং ব্যবসায় বিনিয়োগ করে টাকা পাচার করা হয়।
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার বিষয়ে একটি চুক্তি এবং আটটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার চার দিনের চীন সফরের তৃতীয় দিন শুক্রবার দুই দেশের মধ্যে এ দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও স্মারকগুলো স্বাক্ষর হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ফেসবুক পোস্টে জানানো হয়, সমঝোতা স্মারকগুলোর মধ্যে রয়েছে দুই দেশের কালজয়ী সাহিত্য ও শিল্পকর্মের অনুবাদ ও সৃজন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও খবর আদান-প্রদান, গণমাধ্যম, ক্রীড়া এবং স্বাস্থ্য খাতে বিনিময় সহযোগিতা। এর পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার দ্বিপক্ষীয় চীন সফরে দুই দেশের মধ্যে পাঁচ বিষয়ে সহযোগিতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়েছে।
এগুলো হলো বিনিয়োগ আলোচনা শুরু করা, চীনের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু, মোংলা বন্দরের আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণ, একটি রোবট ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ এবং একটি কার্ডিয়াক সার্জারি গাড়ি অনুদান।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের উত্থাপিত বিষয়গুলো চীন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং।
স্থানীয় সময় শুক্রবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে চীনা প্রেসিডেন্ট এ কথা জানান।
ড. ইউনূসের সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্টের বৈঠককে অত্যন্ত সফল উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ইউএনবিকে বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি বিষয় উত্থাপন করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশকে দেওয়া চীনা ঋণের সুদের হার কমানো ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় দেশটির সহযোগিতা চাওয়ার বিষয়টি ছিল।’
তিনি বলেন, ‘বৈঠকে আলোচনা অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ, গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ হয়েছে।’
প্রেস সচিব বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার এটি ছিল প্রথম দ্বিপক্ষীয় বিদেশ সফর। এখন পর্যন্ত এটি একটি বড় সফলতা।’
প্রেসিডেন্ট শির বক্তব্যের বরাতে শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও কারখানা স্থাপনে চীন তার দেশের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করবে।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট শি ফুজিয়ান প্রদেশের গভর্নর থাকাকালীন দুইবার বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে তিনি পড়াশোনা করেছেন। সে কথাও উল্লেখ করেছেন চীনের রাষ্ট্রপ্রধান।
প্রেসিডেন্ট শির উদ্বৃতি দিয়ে শফিকুল আলম বলেন, তিনি বাংলাদেশি আম ও কাঁঠাল খেয়েছেন। এগুলো সুস্বাদু। আশা করা হচ্ছে বাংলাদেশ আগামী মৌসুমে এ দুটি ফল চীনে প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি করবে।
চীনা প্রেসিডেন্ট ও প্রধান উপদেষ্টা চীনের পিপলস গ্রেট হলে করা বৈঠকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
তারা দুই দেশের সম্পর্ককে জোরদার করা ও ঢাকা-বেইজিংয়ের পারস্পরিক ও কৌশলগত স্বার্থকে এক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার উপায় নিয়েও আলোচনা করেন।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের বাজারে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সি৩২ ইলেকট্রিক বাইক এনেছে বৈশ্বিক ব্র্যান্ড রিভো। অত্যাধুনিক ৭২ ভোল্ট ২৬ অ্যাম্পিয়ার সম্পূর্ণ গ্রাফিন ব্যাটারি পরিচালিত এই ইলেকট্রিক বাইকের উদ্বোধন ঘোষণা করেন রিভো বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ভেন নি।
ফিচার
সি৩২-এর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য শক্তিশালী ১৮০০ ওয়াট মোটর, যা ব্যতিক্রমী পারফরম্যান্স নিশ্চিত করে। বাইকটির ইকো মোডে গতি ৩০ কিলোমিটার/ঘণ্টা এবং একবার চার্জে এটি ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে।
অন্যদিকে স্পোর্ট মোডে সর্বোচ্চ গতি ৬০ কিলোমিটার/ঘণ্টা এবং এক চার্জে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে।
সি৩২ ইলেকট্রিক বাইকে উন্নত ৭২ ভোল্ট ২৬ অ্যাম্পিয়ার গ্রাফিন ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে, যা পাঁচ শতাধিক চার্জিং সাইকেল সাপোর্ট করে এবং প্রতিটি পূর্ণ চার্জে মাত্র ২.০৮ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে।
ব্যাটারিটি সম্পূর্ণ চার্জ হতে ১০.৬ ঘণ্টা সময় নেয়, যা রাতে চার্জ দিয়ে দিনব্যাপী ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।
নিরাপত্তা এবং আরামকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে রিভো সি৩২। এতে রয়েছে সামনে ডিস্ক ব্রেক এবং পিছনে ড্রাম ব্রেক সিস্টেম, যা সর্বোচ্চ স্টপিং পাওয়ার নিশ্চিত করে।
ফ্রন্ট ও রিয়ার হাইড্রোলিক সাসপেনশন থাকার ফলে রাইডাররা মসৃণ ও আরামদায়ক রাইড উপভোগ করতে পারেন। এমনকি অপ্রশস্ত বা অসমান রাস্তাতেও।
রাতে নিরাপদ যাত্রার জন্য সি৩২-এ রয়েছে পূর্ণ এলইডি লাইটিং সিস্টেম, যার মধ্যে এলইডি হেডলাইট, টেইললাইট এবং টার্ন সিগন্যাল অন্তর্ভুক্ত।
রিভো সি৩২ শুধু শক্তিশালী পারফরম্যান্সই দেয় না, এটি ডিজাইনেও বেশ কার্যকর। ১৪০ কেজি ওজনের মজবুত অথচ হালকা ফ্রেম এবং সামনে ও পিছনে ৯০/৮০-১২'' ভ্যাকুয়াম টায়ার যুক্ত বাইকটি দুর্দান্ত গ্রিপ এবং স্থিতিশীলতা প্রদান করে।
২০৫ এমএম পর্যন্ত গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স থাকায় এটি যেকোনো ধরনের রাস্তার জন্য উপযোগী। সিট বাকেটে ২৪ লিটার স্টোরেজ স্পেস রয়েছে, যা ব্যক্তিগত জিনিসপত্র বহনের জন্য আদর্শ।
ব্যবহারকারীবান্ধব ডিজাইন এবং আরামের সমন্বয়ে এটি শহরের যাতায়াতকারী এবং দূরপাল্লার রাইডারদের জন্য একটি পারফেক্ট পছন্দ।
এখন থেকে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯০০ টাকা মূল্যে বাংলাদেশের সব শোরুমে পাওয়া যাচ্ছে।
সি৩২ যাতায়াতকে সহজ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব করতে উন্নত প্রযুক্তি, শক্তিশালী পারফরম্যান্স নিশ্চিত করছে, যা প্রতিদিনের যাত্রীদের পাশাপাশি পরিবেশ সচেতন রাইডারদের জন্য আদর্শ হতে পারে।
আরও পড়ুন:আলু রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। এ স্থলবন্দর দিয়ে নতুন করে আরও ১০৫ টন আলু গিয়েছে নেপালে।
এ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ৫৫৪ টন আলু নেপালে রপ্তানি করা হলো।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের কোয়ারিনটিন ইন্সপেক্টর উজ্জল হোসেন জানান, বুধবার বিকেলে স্থলবন্দর দিয়ে পাঁচটি ট্রাকে ১০৫ টন আলু নেপালে গেছে।
তিনি জানান, আলুগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। এগুলো রপ্তানি করছে থিংকস টু সাপ্লাই ও ফাস্ট ডেলিভারি নামে দুটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে থিংকস টু সাপ্লাই ৪২ ও ফাস্ট ডেলিভারি ৬৩ টন রপ্তানি করে। এ ছাড়াও বন্দরটি দিয়ে হুসেন এন্টারপ্রাইজ, ক্রসেস এগ্রো, সুফলা মাল্টি প্রোডাক্টস লিমিটেড এবং লোয়েড বন্ড লজিস্টিক নামের কয়েকটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানও নেপালে আলু রপ্তানি করছে।
উজ্জ্বল হোসেন বলেন, রপ্তানিকারকরা প্রয়োজনীয় নথিসহ অনলাইনে আবেদন করলে উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের ল্যাবে পরীক্ষা করার পর ফাইটোসেনেটারি সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়। রপ্তানিকৃত আলুগুলো স্টারিজ এবং লেডিও রোজেটা জাতের।
বাজারে নতুন আসা স্মার্টফোন ‘অপো এ৫ প্রো’ রেকর্ড গড়া পারফরম্যান্স করেছে বলে জানিয়েছে বৈশ্বিক প্রযুক্তি কোম্পানি অপো।
কোম্পানিটি শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আগের জেনারেশনের ডিভাইসের তুলনায় নতুন স্মার্টফোনটি ৪৫০ শতাংশ বেশি বিক্রয় প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা বাংলাদেশের বাজারে অপোর ধারাবাহিক সফলতার নির্দেশক। তাৎপর্যপূর্ণ এ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের বাজারে অপোর ক্রমবর্ধমান অগ্রগতি এবং ব্রান্ডটির প্রতি গ্রাহকদের গভীর আস্থা ও আনুগত্যের প্রতিফলন।
অপো প্রতিনিয়ত স্মার্টফোন প্রযুক্তির অভিনব উদ্ভাবনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোম্পানিটির ‘অপো এ৫ প্রো’ ডিভাইসের ক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। ফোনটি নিত্যদিনের বৈচিত্র্যময় চাহিদা পূরণে ভোক্তাদের আধুনিক ও উন্নত সব ফিচার ব্যবহারের সুযোগ করে দিচ্ছে।
কোম্পানির কর্মকর্তা ও গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া
বিজ্ঞপ্তিতে অপো এ৫ প্রোর বিক্রয় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা ও একাধিক গ্রাহকের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেছে অপো।
ডিভাইসটির প্রথম দিনের বিক্রয়ের বিষয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে অপো বাংলাদেশ অথরাইজ এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটরের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডেমন ইয়াং বলেন, ‘এ সফলতা অপোর প্রতি বাংলাদেশি গ্রাহকদের আস্থা ও আগ্রহের বিষয়টিই সফলভাবে চিত্রিত করছে। তাদের প্রত্যাশা ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো অভিনব পণ্য উদ্ভাবন ও সেবা প্রদানে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
একটি বেসরকারি প্রকৌশল কোম্পানিতে চাকরিরত তারেক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ অপোর নতুন ডিভাইস নিয়ে তার অনুভূতি জানাতে গিয়ে বলেন, ‘অপো এ৫ প্রোর ওয়াটারপ্রুফ, ডাস্টপ্রুফ এবং শকপ্রুফ ফিচার আমার সবচেয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
‘আমি এ রকম একটি টেকসই ও সহনশীল স্মার্টফোনের জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করছিলাম এবং আমার অপেক্ষার অবসান ঘটেছে। স্মার্টফোনটি কিনতে পেরে আমি সত্যিই আনন্দিত।’
আরেক গ্রাহক শারমিন আক্তার বলেন, “ঈদের আগে আমি একটি মোবাইল কেনার কথা ভাবছিলাম। এ ক্ষেত্রে স্মার্টফোনের দারুণ ডিজাইন ও উন্নত ফিচারগুলো আমার অগ্রাধিকারে ছিল।
“আমার মতে, বাজারের একই ঘরনার ফোনগুলোর মধ্যে এ বিষয়গুলোতে ‘অপো এ৫ প্রো’ই সেরা। ফোনটি পছন্দ করতে পেরে মনে হচ্ছে আমি সঠিক মোবাইলটিই বেছে নিয়েছি।”
নতুন ডিভাইসের ফিচার
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘অপো এ৫ প্রো’ বিশ্বের প্রথম স্মার্টফোন, যেটি আইপি৬৬, আইপি৬৮ এবং আইপি৬৯ রেটিং অর্জন করেছে। ডিভাইসটি পানি, ধুলা ও যেকোনো ধরনের শক থেকে সুরক্ষিত। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মোবাইলটির অনন্য স্থায়িত্ব।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, মোবাইলটিতে সংযুক্ত আছে মিলিটারি গ্রেডের ইমপ্যাক্ট রেজিস্ট্যান্স প্রযুক্তি। পাশাপাশি ডিভাইসের মাদারবোর্ড থার্মাল কনডাকটিভিটি বৃদ্ধি করে এবং আগের জেনারেশনের স্মার্টফোনের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি সক্ষমতা প্রদান করে। মোবাইলটি এক হাজার বেন্ডিং টেস্টও উতরে গেছে। অর্থাৎ প্রতিদিনের যেকোনো পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে এটি ব্যবহার উপযোগী।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, স্মার্টফোনটি নান্দনিক ফটোগ্রাফির জন্য অনন্য। এতে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তথা এআই সংবলিত উন্নত ফিচার। ডিভাইসটিতে এআই ইরেজার ২.০ ব্যবহার করে সহজেই ছবিতে থেকে অপ্রয়োজনীয় বস্তু মুছে ফেলা যায়। এআই রিফ্লেকশন রিমুভার ব্যবহার করে অযাচিত রিফ্লেকশন সরিয়ে দেওয়া যায়।
এ ছাড়া এআই আনব্লার ফিচার ব্লারি বা অস্পষ্ট ছবিকে আরও স্পষ্ট করে তুলতে সাহায্য করে।
দাম
অপো জানায়, দেশজুড়ে রিটেইল স্টোর এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে স্মার্টফোনটি ২৩ হাজার ৯৯০ টাকায় ৮জিবি+২৫৬ জিবি ভ্যারিয়েন্টে পাওয়া যাচ্ছে।
বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে অপোর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলোতে।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে ভারত ও পাকিস্তান থেকে চালবোঝাই আরও দুটি জাহাজ।
এক দিনের ব্যবধানে দুটি জাহাজ বন্দরে পৌঁছায়।
এবার এসেছে ৪৮ হাজার ৭৫০ টন আতপ ও সিদ্ধ চাল। এর মধ্যে পাকিস্তান থেকে আসে ২৬ হাজার ২৫০ টন এবং ভারত থেকে আসে ২২ হাজার ৫০০ টন চাল।
চট্টগ্রাম বন্দরের সাইলো জেটি ও কাফকো-সংলগ্ন জেটিতে এই দুই জাহাজ নোঙর করে বলে শনিবার দুপুরে নিশ্চিত করেন খাদ্য অধিদপ্তরের চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক জ্ঞানপ্রিয় বিদূর্শী চাকমা।
পাকিস্তানি পতাকাবাহী জাহাজটি শুক্রবার চট্টগ্রাম সাইলো জেটিতে বার্থিং করেছে জানিয়ে তিনি জানান, জাহাজ এমভি মারিয়ম গত ১১ মার্চ ২৬ হাজার ২৫০ টন আতপ চাল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে প্রবেশ করে।
অন্যদিকে ১২ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে প্রবেশ করে ভারতের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি তানাইস ড্রিম। জাহাজটি শুক্রবার কাফকো সংলগ্ন জেটিতে বার্থ করে।
এ জাহাজ থেকে ২২ হাজার ৫০০ টন বাসমতি নয় এমন সিদ্ধ চাল আনা হয়েছে।
পাকিস্তানের জাহাজ এমভি মারিয়মে আসা চালের নমুনা সংগ্রহ শেষে ভৌত বিশ্লেষণ সম্পন্ন হয়েছে মন্তব্য করে জ্ঞানপ্রিয় বিদূর্শী চাকমা জানান, এ চালের খালাস কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অন্যদিকে ভারত থেকে আসা জাহাজ এমভি তানাইস ড্রিমের চালগুলোর নমুনা সংগ্রহ করা শেষ হয়েছে।
এর আগে বুধবার ভারত ও ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা ৩৮ হাজার ৮৮০ টন চাল বাংলাদেশে এসে পৌঁছে। জি-টু-জি চুক্তির আওতায় ভিয়েতনাম থেকে ১৭ হাজার ৮০০ টন আতপ চাল এবং আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে সম্পাদিত চুক্তির আওতায় ভারত থেকে ২১ হাজার ৮০ টন সিদ্ধ চাল কেনা হয়েছে।
গত ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ভারত থেকে আরও ৬ হাজার টন সিদ্ধ চাল আমদানি করা হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য