টানা পাঁচদিন বন্ধ থাকার পর সোমবার সিলেটের সব বন্দর দিয়ে পাথর ও চুনাপাথর আমদানি শুরু হয়েছে। এর আগে রোববার বিকেলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমদানিকারকদের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে আমদানি শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।
জানা যায়, অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু ২ ডলার বাড়ানোর প্রতিবাদে বুধবার থেকে সিলেট বিভাগের সব স্থল বন্দর ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে পাথর ও চুনাপাথর আমদানি বন্ধ করে দেন আমদানিকারকরা। অথচ এসব বন্দর ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে মূলত বড় পাথর (বোল্ডার) এবং চুনাপাথর আমদানি হয়। কয়েকটি শুল্ক স্টেশন দিয়ে কয়লা আমদানি হয়।
এ অবস্থায় পাথর ও চুনাপাথর আমদানি বন্ধ করে দেয়ায় অচল হয়ে পড়ে স্থল বন্দর ও শুল্ক স্টেশনগুলো। আমদানি বন্ধে বিপাকে পড়েন শ্রমিকরা। সরকারও হারায় রাজস্ব।
এ অবস্থায় রোববার সিলেটে কাস্টমস কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আমদানিকারকরা। বৈঠকে অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু ২ ডলারের পরিবর্তে ৭৫ সেন্ট বাড়ানোর ব্যাপারে সম্মত হন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এরপর আমদানি শুরুর সিদ্ধান্ত নেন ব্যবসায়ীরা।
সোমবার দুপুরে তামাবিল স্থলবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, বন্দরে ফিরে এসেছে আগের কর্মচাঞ্চল্য। ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে পাথরবাহী ট্রাক। পাঁচদিন পর কাজে ফিরতে পেরে খুশি শ্রমিকরাও।
তামাবিল চুনা পাথর ও কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সহ-সভাপতি সানোয়ার হোসেন ছেনু বলেন, ‘কাস্টমসের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে চুনাপাথরের ডিউটি (ইমপোর্ট অ্যাসেসমেন্ট রেট) সাড়ে ১১ ডলার থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ১৩ ডলার এবং বড় পাথরের (বোল্ডার) রেট ১১ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১৩ ডলার করার কথা জানানো হয়। তাতে করে ট্রাক প্রতি ব্যয় ১২ থেকে ১৩শ’ টাকা বেড়ে যাবে। তাই আমরা আমদানি বন্ধ করে দিয়েছিলাম।’
তামাবিল চুনা পাথর ও কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি লিয়াকত আলী বলেন, ‘যে কোনো সিদ্ধান্তই আমাদের সঙ্গে আগেভাগে আলোচনা করে নিলে ভালো হয়। হঠাৎ করে কিছু চাপিয়ে দিলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমনিতেই ব্যবসার অবস্থা খারাপ। তার ওপর টন প্রতি ২ ডলার করে ডিউটি বাড়িয়ে দেয়া একেবারে অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। তবে শেষ পর্যন্ত কাস্টমস কর্মকর্তারা এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় আমরা খুশি। দেশের স্বার্থে আমরাও কিছুটা ছাড় দিয়েছি।’
এ ব্যাপারে কাস্টমসের সিলেট অঞ্চলের ডেপুটি কমিশনার সোলাইমান হোসেন বলেন, ‘অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে নেয়া হয়েছিল। তবে ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখে এটা পুনর্বিবেচনা করা হয়েছে। আগের ৮৪ টাকার পরিবর্তে এখন ডলারের মূল্য ১০৯ টাকা। ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণেই শুল্ক বেড়েছে।’
প্রসঙ্গত, সিলেট বিভাগে তামাবিল স্থলবন্দর ছাড়া আরও ১২টি শুল্ক স্টেশন রয়েছে। সেগুলো হলো- কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ, সুনামগঞ্জের বাগলি, বড়ছড়া ও চারাগাঁও এবং ছাতকের ইছামতি ও চেলা স্টেশন। এগুলো দিয়ে মূলত চুনাপাথর ও বোল্ডার আমদানি হয়।
আরও পড়ুন:খাতভেদে ১২ হাজার ৮০০ থেকে শুরু করে ১৪ হাজার ২৫ টাকা পর্যন্ত ন্যূনতম মজুরি ঠিক করে দেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) কর্মরত শ্রমিকদের নতুন মজুরি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
চলতি ডিসেম্বরে ১ তারিখ থেকে নতুন মজুরি কার্যকর ধরে ৭ ডিসেম্বর গেজেট প্রকাশ করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)।
আগের মজুরি-কাঠামোর চেয়ে নতুন নির্ধারিত মজুরি ৫০ শতাংশ থেকে ৫৬ শতাংশ পর্যন্ত বেশি।
গেজেটে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ধরন অনুযায়ী, চার ধরনের বেতন কাঠামো চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে শিক্ষানবিশ শ্রমিকদের জন্য ১০ হাজার ১৭৫ টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে।
ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল পণ্য, সফটওয়্যার, লেন্স ও গ্লাস পণ্য, মেটাল ও মেটাল কাস্টিং, অটোমোবাইল ও অটো পার্টস, বাইসাইকেল, ভারী শিল্প, প্রসাধনী, নৌকা, গলফ শ্যাফট, ফিশিং ইকুইপমেন্টস ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জন্য ৩টি নিয়মিত গ্রেডের মধ্যে সর্বনিম্ন গ্রেড জুনিয়র অপারেটর পর্যায়ে ন্যূনতম ১৪ হাজার ২৫ টাকা মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বোচ্চ সিনিয়র অপারেটর গ্রেডে ন্যূনতম মজুরি ১৫ হাজার ৯৫০ টাকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
পোশাক ও পোশাক উপকরণ, জুতা ও জুতার উপকরণ, চামড়াজাত পণ্য, সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, তাঁবু ও তাঁবু উপকরণ, প্লাস্টিক পণ্য, খেলনা, ক্যাপ ও হ্যাটস এবং সংশ্লিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের ৫টি নিয়মিত গ্রেডের মধ্যে সর্বনিম্ন গ্রেড হেলপার বা সহকারী পর্যায়ে ন্যূনতম ১২ হাজার ৮০০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সর্বোচ্চ হাই স্কিল গ্রেডে ন্যূনতম মজুরি ১৭ হাজার টাকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
নতুন করে উৎপাদিত মুড়িকাটা ও গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে উল্লেখ করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানোর কোনো কারণ নেই।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের চাষ হয়, উৎপাদন হয় প্রায় ৮ লাখ টন। এ বছর প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে, যার ফলন প্রায় ৫০ হাজার টন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এসব মুড়িকাটা ও গ্রীষ্মকালীন জাতের পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে এবং এটি ৩ থেকে সাড়ে ৩ মাস পর্যন্ত পাওয়া যাবে। এরপর প্রধান জাতের পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করবে এবং উৎপাদন হতে পারে প্রায় ২৬ থেকে ২৮ লাখ টন।
তবে রোববার কারওয়ান বাজারের পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫ কেজি ১ হাজার টাকা এবং একই পরিমাণ বাজারে উঠা নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকায়। পাইকারি বাজারে আমদানি করা ৫ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়।
বাংলাদেশ মূলত ভারত, চীন, মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে। পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী দেশ ভারত আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ রাখার পর পেঁয়াজের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) প্রদানে উৎসাহ দিতে প্রতি বছর সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দিয়ে আসছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরই ধারাবাহিকতায় ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ-২০২৩ সেমিনার ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে ২০২১-২২ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ভ্যাট পরিশোধকারী হিসেবে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে কক্সবাজারের সায়মন বিচ রিসোর্টসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে।
সায়মন বিচ রিসোর্ট এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো এই পুরস্কার পেয়েছে।
রোববার দুপুরে চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লু’র হলরুমে ভ্যাট কমিশনারেট চট্টগ্রাম আয়োজিত অনুষ্ঠানে সায়মন বিচ রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব রহমান রুহেলের হাতে এ সম্মাননা তুলে দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজস্ব বোর্ডের সদস্য ও এক্সাইজ ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট ড. এস এম হুমায়ন কবির।
এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারের কার্যালয়ের কমিশনার সৈয়দ মুশফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- এক্সাইজ ভ্যাট একাডেমির মহাপরিচালক সুরেশ চন্দ্র বিশ্বাস, কর অঞ্চল-১ এর কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন, চিটাগং চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ওমর হাজ্জাজ ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. খলিলুর রহমান।
১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের পথিকৃৎ সায়মন বিচ রিসোর্ট বিগত সময়েও সর্বোচ্চ ভ্যাটদাতা হিসেবে এনবিআর কর্তৃক সম্মাননা অর্জন করে। সায়মন বিচ রিসোর্ট হোটেল পর্যটন নগরীর চারশ’ হোটেল-মোটেলকে প্রতিনিধিত্ব করছে।
সায়মন বিচ রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব রহমান রুহেল বলেন, ‘নতুন বছরে নতুন করে যাত্রা করছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত পুরনো সায়মন। নতুনভাবে আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের দিকে সায়মন হেরিটেজ নামে পর্যটন খাতে যুক্ত হবে প্রতিষ্ঠানটি।’
প্রসঙ্গত, ২০২১-২২ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ভ্যাট পরিশোধকারী হিসেবে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে সারাদেশের ১৩৮ প্রতিষ্ঠানকে। তার মধ্যে কক্সবাজার থেকে শুধু সায়মন বিচ রিসোর্ট মনোনীত হয়েছে।
আরও পড়ুন:চলতি ডিসেম্বর মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে নেমে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থসচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার।
তিনি বলেন,‘আমাদের অর্থনীতির এখন একমাত্র চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। তবে সংকোচনমূলক মূদ্রানীতি এবং সংকোচনমূলক আর্থিক নীতির মাধ্যমে তার অনেকটা আমরা উত্তরণ করতে পেরেছি। খাদ্যমূল্য যেভাবে কমছে এবং গত মাসে শূণ্য দশমিক ৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমেছে, তাতে আমি আশাবাদী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাশের নিচে নেমে আসবে।’
তিনি আরও বলেন, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৭ দশমিক ৫ শতাংশে চলে আসবে। আগামী অর্থবছর মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ শতাংশের নিচে থাকবে বলে জানান তিনি।
রোববার ঢাকায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট দিবসের এক সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। খবর বাসসের
কোভিড পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার দ্রুত হয়েছে উল্লেখ করে অর্থসচিব বলেন, বৈশ্বিক নানা চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে আমরা আগেভাগেই সংকোচনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আর্থিক ব্যয়ের ক্ষেত্রে কৃচ্ছতা সাধন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির শক্তিশালী অবস্থা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা, এর মধ্যে রাজস্ব আয় ৫ লাখ কোটি টাকা। সুতরাং ঘাটতি বাজেট ২ লাখ ৬১ হাজার টাকার। এই ঘাটতি বাজেট মেটানোর জন্য সরকারকে ঋণ নিতে হয়।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক ঋণ বা অনুদান গ্রহণের সীমাবদ্ধতা আমাদের বাড়তে থাকবে। তাই এনবিআরকে আরও বেশি রাজস্ব সংগ্রহের প্রতি মনোযোগি হওয়ার আহবান জানান তিনি।
ড. খায়েরুজ্জামান বলেন, দেশে কর সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য অটোমেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই অটোমেশনের জন্য সরকার এনবিআরকে আরও বেশি অর্থ বরাদ্দ দেবে বলে তিনি জানান।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্টের উদ্যোগে এবং ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আর্থিক সুরক্ষা বিষয়ে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে ‘টাউন হল মিটিং রংপুর-২০২৩’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আরডিআরএস বাংলাদেশ-রংপুরে এ মিটিং অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংক রংপুর কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক মো. আনোয়ারুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম খান এবং ইসলামী ব্যাংকের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ও সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক (এফআইসিএসডি) আবু হেনা হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ মাহেনূর আলম।
ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার প্রধান অতিথির ভাষণে বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলাসহ স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেবার মানসিকতা নিয়ে আন্তরিক গ্রাহকসেবা প্রদান করতে হবে। বৈশ্বিক নানা চ্যালেঞ্জের ফলে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ উত্তরণে প্রবাসী বাংলাদেশী ও তাদের স্বজনদের আরও বেশি সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবিড় তদারকিতে আর্থিক খাতে সেবার মান ও জবাবদিহিতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাংকিং ও আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত সকল কাজ এখন হাতের মুঠোয়। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের আর্থিক খাত ডিজিটালাইজেশনের পথে ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করতে ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।’
এ উদ্যোগগুলোকে সফল করার লক্ষ্যে গ্রাহকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
‘আর্থিক সুরক্ষার লক্ষ্যে গড়ে তুলি সচেতনতা’ স্লোগানে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয় এবং রংপুর কার্যালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তা, ইসলামী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন নির্বাহী ও কর্মকর্তাসহ রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন ব্যাংকের প্রতিনিধি এবং গ্রাহকগণ টাউন হল মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেন।
চট্টগ্রামে পেঁয়াজের বাজারে আগুন। চলছে চরম নৈরাজ্য। বেপরোয়া সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে ঘণ্টায় ঘণ্টায় দাম বাড়ছে। ২৪ ঘণ্টায় কেজিতে বেড়েছে ১৩০ টাকা। দেশি ও আমদানি করা দুই ধরনের পেঁয়াজের দামই বেড়েছে।
শনিবার পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয়েছে ২৪০ টাকা। আগের দিন ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা। তারপরও বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে পেঁয়াজ।
জানা গেছে, আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে ভারত। এ ঘটনার জেরে দেশের বাজারে একদিনের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা উভয় পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
পেঁয়াজের এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ভোক্তারা। তারা বলছেন, ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ বাজার ঠিক রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা এটিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে রীতিমতো নৈরাজ্য শুরু করেছে। তারা এক কেজি পেঁয়াজে ১৩০ টাকা পর্যন্ত মুনাফা করছেন।
অপরদিকে ব্যবসায়ীরা অজুহাত দিচ্ছেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করার কারণে বাজারে ব্যবসায়ীদের হাতে তেমন পেঁয়াজ নেই। যেহেতু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম, তাই বাজার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, প্রতি ঘণ্টায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। এজন্য পাইকাররা দেশি পেঁয়াজ ছাড়ছে না। রিয়াজুদ্দিন বাজারেও ভোরে যে দাম ছিল, সকাল ৯টায় তা কেজিতে ৭০/৮০ টাকা বেড়ে গেছে।
কাজির দেউরি বাজারের ব্যবসায়ী হাবিব মিয়া বলেন, ‘ভারত রপ্তানি বন্ধ করেছে এমন খবরের কারণে পাইকারদের কাছ থেকে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় কিনছি।’
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ ছাড়া দেশি পেঁয়াজ তেমন একটা নেই। ভারতে বন্যার কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। তাই তাদের দেশেও পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ন্ত্রন দেশটি রপ্তানিও বন্ধ করে দিয়েছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের বাজারে দাম বাড়ছে।
ভোক্তারা বলছেন, ভারত মাত্র রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এ অবস্থায় দেশের বাজারে এখনই দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।
চাক্তাই–খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ আড়ত বন্ধ। তারা বলছে যে আড়তে পেঁয়াজ নেই। অথচ প্রতিটি আড়তে পেঁয়াজ আছে। তারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে।
যে গুটিকয় আড়ত বিক্রি করছে তা-ও চড়া দামে।
বর্তমানে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা কেজি। অথচ দুদিন আগেও তা বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। অপরদিকে খুচরা বাজারে একদিন আগেও প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকায়। সেই পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায়। অর্থাৎ একদিনেই কেজিতে দাম বেড়েছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের এক আড়তদার বলেন, বর্তমানে খাতুনগঞ্জে যেসব পেঁয়াজ রয়েছে সেগুলো বাজার পর্যন্ত আসতে খরচ পড়েছে কেজিপ্রতি ১০০ টাকা। কিন্তু ভারত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পরপরই প্রতি কেজিতে ৮০-৯০ টাকা মুনাফা করছেন আমদানিকারকরা।
নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজার, কাজির দেউরি বাজার, বহদ্দারহাট, চকবাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বাজারেই পেঁয়াজ বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। শনিবার প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা। কোনো দোকানেই এর কমে পেঁয়াজ বিক্রি হয়নি। অনেক দোকানে পেঁয়াজই নেই।
বহদ্দারহাটে বাজার করতে আসা মামুন মিয়া বলেন, ‘বাজারে দেশি পেঁয়াজ ২৪০ টাকা কেজির নিচে নেই। আর ভারতের পেঁয়াজ ২০০ টাকা কেজি। দুদিন আগেও দেশি পেঁয়াজ কিনলাম ১২০ টাকা করে। রাতের মধ্যেই বেড়ে গেল ১২০ টাকা। এটা কেমন কথা! দেশি পেঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। এভাবে হলে আমরা কীভাবে চলবো?’
চাক্তাই আড়তদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। ভারতের বাজারেও পেঁয়াজের সংকট রয়েছে। সেখানেও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত রপ্তানি বন্ধ করার ঘোষণা দেয়ায় এখানে দাম বাড়ছে।’
তিনি দাবি করেন, ‘পেঁয়াজের দাম বাড়ানো বা কমানোর ব্যাপারে আড়তদারদের কোনো হাত নেই। আমদানিকারকরা যে দামে বিক্রি করতে বলেন সেই দামেই আড়তদাররা বিক্রি করেন।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার ব্যবসায়ীদের মর্জির ওপর নির্ভর করে। তারা একেক সময় একেক অজুহাতে দাম বৃদ্ধি করেন। এখন বলছেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করেছে বলে দাম বেড়েছে। বাজারে বর্তমানে যেসব পেঁয়াজ আছে, সেগুলো তো দুই সপ্তাহ আগে আমদানি করা। প্রশাসনের উচিত অভিযান পরিচালনা করে পেঁয়াজের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্য যাচাই করা এবং সে অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেয়া।’
গত কিছুদিন ধরেই দেশের পেঁয়াজের বাজার অস্থির। গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের খুচরা দর সর্বোচ্চ ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু এ দরে খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা যায়নি। পরে সরকার পেঁয়াজ আমদানি উন্মুক্ত করে দিলেও পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
আরও পড়ুন:ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের ঘোষণার পর আকস্মিকভাবে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম।
উত্তরের জেলা দিনাজপুরে এক দিনের ব্যবধানে কেজি প্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। একই সঙ্গে এক দিনের ব্যবধানে দেশি জাতের পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০০ টাকা।
এ দিকে বাজারে সাংবাদিকদের দেখে দোকান বন্ধ করে চলে যাচ্ছেন পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা।
শনিবার সকাল ১১টায় দিনাজপুর শহরের সবচেয়ে বড় বাজার বাহাদুর বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। কয়েকজন পেঁয়াজ ব্যবসায়ীর কাছে পেঁয়াজের দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা একে একে দোকান বন্ধ করে চলে যান।
এমনকি কেউ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়নি। দোকান বন্ধ করার সময় কয়েকজন বলেন, ‘দোকান বন্ধ করে রাখব, তারপরও পেঁয়াজ বিক্রি করব না।’
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শুক্রবার সকালে ওই বাজারে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২৫ টাকা কেজি এবং দেশি জাতের পেঁয়াজ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছি, কিন্তু ভারত থেকে আমদানি বন্ধের ঘোষণার পর পরই এই বাজারে ভারতীয় ও দেশি জাতের পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে।
এই বাজারে শনিবার সকালে ভারতীয় পেঁয়াজ ১৯০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে দেশি জাতের পেঁয়াজ ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ দিকে ভারত থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয় দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে। আমদানি বন্ধের ঘোষণার পর পরই স্থলবন্দরের পাইকারি বাজারে আকস্মিকভাবে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম।
স্থলবন্দরে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৯০ টাকা কেজি দরে, কিন্তু আমদানি বন্ধের ঘোষণার পর শনিবার সকালে এই বাজারে পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি দরে।
পেঁয়াজের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় হাট-বাজারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মমতাজ বেগম বলেন, ‘ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের পর পরই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করেছে। আমরা সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে অভিযান চালাচ্ছি। যে সকল অসাধু ব্যবসায়ী পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য