বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক ফ্রিজ উৎপাদকের দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। শীর্ষ গ্লোবাল ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড ওয়ালটন উন্মোচন করলো জায়ান্টটেক সিরিজের এআইওটি বেজড স্মার্ট নতুন তিন মডেলের রেফ্রিজারেটর। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম উৎপাদনকৃত ফোর-ডোর রেফ্রিজারেটর ও বিশ্বের প্রথম ৮ ইন ১ কনভার্টিবল সাইড বাই সাইড ডোর ফ্রিজ।
ওয়ালটনের জায়ান্টটেক সিরিজের এসব ফ্রিজের মধ্য দিয়ে হাই-টেক রেফ্রিজারেটর উৎপাদন ও বিপণনে নতুন যুগে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ। এতে সৃষ্টি হয়েছে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা ও সক্ষমতার অনন্য নজির।
ওয়ালটনের জায়ান্টটেক সিরিজের মধ্যে রয়েছে ৬৬০ লিটারের জিটি প্রো ম্যাক্স, ৬৪৬ লিটারের জিটি প্রো এবং ৬১৯ লিটারের জিটি মডেলের রেফ্রিজারেটর।
গ্রাহকেরা স্মার্টফোনে ওয়ালটন স্মার্ট অ্যাপ্লায়েন্সের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে এসব ফ্রিজ পরিচালনা করার পাশাপাশি অনলাইন শপিং ও ইউটিউবে কুকিং রেসিপি ব্রাউজ করতে পারবেন।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও সর্বাধিক ফিচারসমৃদ্ধ ওয়ালটনের এসব ফ্রিজ বাড়িয়ে দেবে ঘরের আভিজাত্য।
নতুন এসব মডেলের রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার কমপার্টমেন্টের জন্য রয়েছে টারবো ও ইকো ফিচারসমৃদ্ধ ডুয়ো কুলিং সেটিংস। এসব ফ্রিজের এমএসও (ম্যাট্রিক্স স্পিড অপটিমাইজেশন) ইনভার্টার টেকনোলজি বাইরের তাপমাত্রা অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে সবচেয়ে কম বিদ্যুৎ খরচে ফ্রিজের অভ্যন্তরীণ সর্বোচ্চ কুলিং পারফরমেন্স নিশ্চিত করবে।
বিশ্বের সর্বোচ্চ কনভার্টিবল মুড-সমৃদ্ধ ওয়ালটনের জায়ান্টটেক রেফ্রিজারেটরের ফ্রিজ ও ফ্রিজার কম্পার্টমেন্টের কুলিং পারফরমেন্স গ্রাহক তার পছন্দমত সেট করতে পারবেন। এতে বিদ্যুৎ খরচ হবে অনেক কম। এসব ফ্রিজ নিশ্চিত করবে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ামুক্ত স্বাস্থ্যকর ফ্রেস খাবার।
ওয়ালটনের ফোর-ডোর জিটি প্রো ম্যাক্স ও সাইড বাই সাইড ডোর জিটি প্রো মডেলের বিশেষ ফিচারের মধ্যে রয়েছে ওয়াটার ডিসপেন্সার। এছাড়া জিটি প্রো ম্যাক্স মডেলে ২১.৫ ইঞ্চি ও জিটি মডেলে ১৫.৬ ইঞ্চির মাল্টিমিডিয়া এলসিডি ডিসপ্লে। এতে ইউটিউব ব্রাউজিং, অনলাইন গ্রোসারি শপিং, অফলাইন ভিডিও ও অডিও, কাউন্টডাউন ক্লক, অনলাইন রেসিপি, ক্লক, ক্যালেন্ডার, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, সেলফি ক্যামেরা, ওয়েদার আপডেট ইত্যাদি ফিচার রয়েছে।
এছাড়া সাইড বাই সাইড জিটি প্রো মডেলে রয়েছে ডিজিটাল ডিসপ্লে। জিটি সিরিজের তিনটি মডেলেই স্মার্ট কন্ট্রোল ফিচার থাকায় উপরের দরজায় হাতের স্পর্শের মাধ্যমেই ফ্রিজ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এ জন্য ফ্রিজের দরজা খোলার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে সর্বোচ্চ কুলিং পারফরম্যান্সের সঙ্গে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়।
বুধবার রাজধানীর ওয়ালটন করপোরেট অফিসে জায়ান্টটেক সিরিজের নতুন মডেলের ফ্রিজের উদ্বোধন উপলক্ষে জমকালো এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ওয়ালটন।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিশ্বের সর্বাধুনিক ফ্রিজের উন্মোচন করেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও গোলাম মুর্শেদ ও ওয়ালটনের স্পোর্টস অ্যাম্বাসেডর বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অল-রাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি.’র অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর শোয়েব হোসেন নোবেল, ওয়ালটন প্লাজা’র চিফ এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মোহাম্মদ রায়হান, ওয়ালটন হাই-টেকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর নজরুল ইসলাম সরকার, এমদাদুল হক সরকার, মো. হুমায়ুন কবীর ও মো. ইউসুফ আলী, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এস এম জাহিদ হাসান, আমিন খান, দিদারুল আলম খান (চিফ মার্কেটিং অফিসার), তোফায়েল আহমেদ (ওয়ালটন ফ্রিজের চিফ বিজনেস অফিসার), মো. ফিরোজ আলম, আজমল ফেরদৌস (হেড অব রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার), আনিসুর রহমান মল্লিক, মো. শাহজাদা সেলিম (ইনচার্জ পিআর, মিডিয়া অ্যান্ড ব্র্যান্ডিং) প্রমুখ।
দ্য গ্র্যান্ড লঞ্চিং প্রোগ্রাম সঞ্চালনা করেন দেশের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক আমিন খান।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ওয়ালটন জায়ান্টটেক সিরিজের রেফ্রিজারেটগুলোর বিশেষ ফিচারের মধ্যে রয়েছে আয়োনাইজার, ওজোনাইজার ও ইউভি ফিচারসমৃদ্ধ ইন্টেলিজেন্ট জার্ম টার্মিনেটর (আইজিটি), ইলোকট্রনিক কন্ট্রোল ফিচার, ডোর ওপেনিং অ্যালার্ম, চাইল্ড লক, থ্রি লেয়ার ওডোর গার্ড, হিউম্যান ডিটেক্টর, ফিঙ্গার প্রিন্ট রেসিস্ট্যান্ট মেটাল ডোর, ইন্টার্নাল অটোমেটিক আইস মেকার, সিরামিক কোডেট প্রিমিয়াম গ্লাস এবং এলিগ্যান্ট কার্ভড ডিজাইন মেটাল ডোর ইত্যাদি।
অনুষ্ঠানে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর গোলাম মুর্শেদ বলেন, ‘জায়ান্টটেক সিরিজের ফ্রিজের মডেল ডেভলমেন্টের জন্য ইউরোপ, আমেরিকা, কোরিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের বহুদেশের ফ্রিজ এক্সপার্টসদের নিয়ে কাজ করেছি। বাংলাদেশে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন (আরএন্ডআই) সেন্টার ও প্রকৌশলী টিম গঠনে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে ওয়ালটন।
‘ওয়ালটনের শক্তিশালী আরঅ্যান্ডআই এর দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীগণসহ প্রোডাকশন, কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্টসহ সব বিভাগের সদস্যরা গত পাঁচ বছর ধরে জায়ান্টটেক সিরিজ ফ্রিজের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও ফিচার নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। এরই প্রতিফলন হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ফোর-ডোর ফ্রিজ উৎপাদনকারী দেশের মর্যাদা লাভ করলো বাংলাদেশ। একই সঙ্গে বিশ্বের প্রথম ৮রহ১ কনভার্টিবল সাইড বাই সাইড রেফ্রিজারেটর উৎপাদন ও বাজারজাতকারী দেশে বাংলাদেশের আবির্ভাব হলো।’
এর মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক ফ্রিজ উৎপাদনকারী দেশে বাংলাদেশের রপান্তর ঘটলো। ওয়ালটনের এ ধরনের উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
ওয়ালটন ফ্রিজের সিবিও তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘জায়ান্টটেক সিরিজের রেফ্রিজারেটরে ব্যবহৃত হয়েছে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও ফিচার। বিশ্বের সকল আধুনিক দেশগুলোর বেঞ্চমার্ক উপযোগী করে রেফ্রিজারেটরগুলো তৈরি করা হয়েছে। এসব ফ্রিজে গ্রাহকরা স্মার্ট সব প্রযুক্তি ও ফিচার পাবেন।’
ওয়ালটনের চিফ টেকনিক্যাল অফিসার ইয়ুন মগ ইয়াং জানান, জায়ান্টটেক সিরিজের ফ্রিজে ব্যবহৃত হয়েছে থ্রি ডি এমএসও ইনভার্টার টেকনোলজি। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট বেজড এই প্রযুক্তি এনভায়রনমেন্ট টেম্পেরেচারের থ্রিডি ডাটা সংগ্রহের পাশাপাশি দরজা খোলা অবস্থায় ও ফ্রিজ কম্পার্টমেন্টের সঠিক টেম্পেরেচার অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফ্রিজের তাপমাত্রা সেট করে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ খরচে সর্বোচ্চ কুলিং পারফরমেন্স নিশ্চিত করবে।
এছাড়া, বিশ্বের সর্বোচ্চ কনভার্টিবল মুডসমৃদ্ধ ওয়ালটনের জায়ান্টটেক রেফ্রিজারেটরের ফ্রিজ ও ফ্রিজার কম্পার্টমেন্টের কুলিং পারফরমেন্স গ্রাহক তার পছন্দমত সেট করতে পারবেন। এতে বিদ্যুৎ খরচ হবে অনেক কম।
ওয়ালটন রেফ্রিজারেটর ডিজাইন অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ইতসুরো সুজুকি জানান, নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যরে আলোকরশ্মির মাধ্যমে ওয়ালটন ফ্রিজে সংরক্ষিত ফলমূল ও শাক-সবজি প্রকৃতির মতো সজীব রাখে। ফলে ওয়ালটন ফ্রিজে সংরক্ষিত ফল ও সবজির ভিটামিন, মিনারেলসহ অন্যান্য খাদ্যগুণ ও পুষ্টি অক্ষুণ্ণ থাকে। এসব ফ্রিজের ইউভি-সি টেকনোলজি বায়ুবাহিত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া থেকে ফ্রিজে রাখা খাবারকে সুরক্ষিত রাখে।
ইন্টেলিজেন্ট জার্ম টার্মিনেটর টেকনোলজি বায়ুবাহিত জীবাণু ধ্বংস করে। থ্রি-লেয়ার ওডোর সেফ গার্ড অনাকাক্ষিত গন্ধ দূর করে খাবারের স্বাদ রাখে অটুট। স্মার্ট কন্ট্রোল ফিচার থাকায় উপরের দরজায় হাতের স্পর্শের মাধ্যমেই ফ্রিজ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এরজন্য ফ্রিজের দরজা খোলার প্রয়োজন পড়ে না।
চলতি মাসেই বাজারে আসবে ৬১৯ লিটার থেকে ৬৬০ লিটার ধারণক্ষমতার ওয়ালটনের জিটি সিরিজের রেফ্রিজারেটরগুলো। এই মডেলগুলোর দাম পড়বে ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকার মধ্যে।
ওয়ালটনের এসব ফ্রিজে ১ বছরের রিপ্লেসমেন্টসহ কম্প্রেসরে ১২ বছরের গ্যারান্টি এবং ৫ বছরের ফ্রি বিক্রয়োত্তর সেবার সুবিধা পাবেন ক্রেতারা।
এছাড়া রয়েছে আইএসও সনদপ্রাপ্ত দেশব্যাপী বিস্তৃত ৭৯টি সার্ভিস সেন্টার থেকে দ্রুত ও সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবা পাওয়ার নিশ্চয়তা।
আরও পড়ুন:ভারতীয়দের বাধায় সিলেট বিভাগের তিন শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের আপত্তিতে সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি হচ্ছে না। ফলে স্থবির হয়ে আছে এসব বন্দর ও শুল্ক স্টেশন।
জানা যায়, ভারতের আসাম রাজ্যের শ্রীভূমিতে (করিমগঞ্জ) সনাতনী ঐক্য মঞ্চ নামের একটি সংগঠনের বিক্ষোভের মুখে গত রোববার সিলেটের বিয়ানীবাজারের শেওলা স্থলবন্দর ও সোমবার জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশন দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে ভারতীয়দের বিক্ষোভের কারণে গত ৩০ নভেম্বর থেকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার চাতলাপুর শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে শুল্কায়ন জটিলতায় তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে পাথর ও চুনাপাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা।
আমদানিকারক সূত্র জানায়, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ ও ইসকন থেকে বহিষ্কৃত নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গত রোববার ভারতের শ্রীভূমি জেলার সুতারকান্দি স্থলবন্দরে মিছিল নিয়ে জড়ো হয় কয়েক শ’ লোক। তারা সীমান্ত এলাকায় বিক্ষোভ করে। পরে ভারতীয় বিক্ষোভকারীরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে সুতারকান্দি (বাংলাদেশের শেওলা) স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়।
সোমবার একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় ভারতের করিমগঞ্জ শুল্ক স্টেশনে। ফলে সোমবার থেকে ওই স্টেশন দিয়েও আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে পণ্য পরিমাপ সংক্রান্ত জটিলতায় গত মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ভারতের ডাউকি স্থলবন্দর (বাংলাদেশের তামাবিল) দিয়ে পাথর-চুনাপাথর আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।
এই বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তামাবিল ও শেওলা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে যে পাথর আমদানি করা হয় তা সরাসরি খনি থেকে ট্রাকে লোড করা হয়। ফলে পাথরের সঙ্গে মাটি ও বালি মিশ্রিত থাকে। আগে শুল্কায়নের পূর্বে বন্দর কর্তৃপক্ষ মাটি ও বালির ওজন বাদ দিয়ে পাথরের ওজন নির্ণয় করত। কিন্তু বর্তমানে স্থলবন্দরের নতুন কর্মকর্তারা মাটি ও বালির ওজন ছাড় না দেয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে।
ওয়েট স্কেলে কড়াকড়ি ওজন নির্ণয়ের কারণে কয়লা-পাথর আমদানি থেকে বিরত রয়েছেন জানিয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, এ অবস্থায় আমদানি অব্যাহত রাখলে পাথরবাহী প্রতি ট্রাকে ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হবে। বিষয়টি নিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললেও কোনো সুরাহা পাচ্ছেন না বলে জানান তারা।
তামাবিল কয়লা, পাথর ও চুনাপাথর আমদানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস উদ্দিন লিপু বলেন, ‘ওজন জটিলতায় আমরা পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছি। লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেও পাথর আমদানি করতে গিয়ে আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
‘আমদানি বন্ধ থাকায় ওপারে ভারতে কয়লা-পাথরবাহী শত শত ট্রাক লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এখন রপ্তানিকারকরা আমাদের কাছে পণ্যবাহী ট্রাকের ক্ষতিপূরণ দাবি করছে।’
তামাবিল কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা তানভির হোসেন বলেন, ‘আমাদের কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে। ব্যবসায়ীরা পাথর আমদানি বন্ধ রাখায় এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
তামাবিল স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় কয়লা-পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। আমরা কয়লা-পাথর ব্যবসায়ীদের সমস্যার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।’
এদিকে ভারতীয়দের বাধায় অন্য সীমান্ত দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হওয়া প্রসঙ্গে সিলেট পাথর আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি আতিক হোসেন বলেন, ‘ইসকন ইস্যুতে ভারতের সুতারকান্দি ও করিমগঞ্জ বর্ডার দিয়ে সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। ভারতীয় লোকজনের বাধার মুখে ভারত থেকে বাংলাদেশে কিংবা বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্যবাহী গাড়ি ঢুকতে পারছে না।’
তিনি জানান, মঙ্গলবার পর্যন্ত ভারতের সুতারকান্দিতে পাথরসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী অন্তত দুশ’ ট্রাক এবং এপারে শেওলা শুল্ক স্টেশনে অর্ধশতাধিক ট্রাক আটকা পড়েছে। এছাড়া সিলেটের জকিগঞ্জের ওপারে ভারতের করিমগঞ্জে আটকা পড়েছে ফল ও কাঁচামাল বোঝাই অর্ধশতাধিক ট্রাক। পণ্য খালাস না হওয়ায় ট্রাকে ফলসহ কাঁচামাল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, বর্ডারে পণ্য আটকা পড়ায় ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। প্রতিদিনই আমদানিকারকদের ব্যাংক ঋণের সুদ গুনতে হচ্ছে। এছাড়া পাথর ও চুনাপাথর আমদানি বন্ধ থাকায় লোড-আনালোড এবং স্থানীয় পাথরভাঙার কলগুলোর হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।
বিয়ানীবাজারের শেওলা স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এই বন্দর দিয়ে মূলত কয়লা ও পাথর আমদানি হয়। আর রপ্তানি হয় ভোগ্যপণ্য, সিমেন্টসহ কিছু পণ্য। তবে ভারত সীমান্তে সমস্যার কারণে তিনদিন ধরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।’
এদিকে জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আরিফ উদ্দিন বলেন, ‘এই স্টেশন দিয়ে মূলত কমলাসহ কিছু ফলমূল আমদানি হয়। তবে সোমবার থেকে কোনো পণ্য আমদানি হয়নি।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশে নতুন গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমে বিনিয়োগ করতে চায় শেভরন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানিটি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রয়াসে এই বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে।
কোম্পানিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ক্যাসুলোর নেতৃত্বে শেভরনের কর্মকর্তারা সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।
শেভরনের কর্মকর্তারা বলেন, বিগত শেখ হাসিনা সরকার গত দুই বছরে কোম্পানিটিকে অর্থ প্রদান বন্ধ করার পর অন্তর্বর্তী সরকার কয়েক মিলিয়ন ডলারের বকেয়া পরিশোধ শুরু করেছে।
‘আমরা নতুন উপকূলীয় গ্যাস অনুসন্ধানে বিনিয়োগ করব। আর নতুন গ্যাসের মজুদ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাড়িয়ে তুলবে।’
ফ্রাঙ্ক ক্যাসুলো বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক কার্যক্রম এবং ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে গ্যাসের বাড়তি চাহিদা শেভরনকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নতুন খনন কার্যক্রমে বিনিয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে।’
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নতুন গ্যাসের মজুদ অন্বেষণে শেভরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির মধ্যে স্থানীয় কোম্পানিগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে।
‘আমরা এখন ব্যবসার জন্য প্রস্তুত। আমরা দেশে আরও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানাই। প্রধান বহুজাতিক কোম্পানি ইতোমধ্যে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।’
এ সময় দেশে ভালো বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে তার একটি সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা।
অধ্যাপক ইউনূস স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য শেভরনের সামাজিক দায়বদ্ধতার কার্যক্রমের প্রশংসা করেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘সরকার আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে শেভরনের বকেয়া পরিশোধ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই শেভরন ও পেট্রোবাংলা ছয় মাসের ঋণ পরিশোধের চুক্তিতে পৌঁছেছে।’
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন বৈশ্বিক ও দেশীয় চ্যালেঞ্জের কারণে যেসব পরিচালন ব্যয় বেড়েছিল, আগামী বছরগুলোতে তা কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক নথি অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকারি ব্যয়ের ৫৮ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ৫৮ দশমিক ৪ শতাংশ হবে পরিচালন ব্যয়।
চলতি অর্থবছরে মোট সরকারি ব্যয়ের ৫৯ শতাংশ পরিচালন ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।
পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও মজুরি, পণ্য ও সেবা ক্রয়, ভর্তুকি ও স্থানান্তর পেমেন্ট, দেশীয় ও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এবং ‘খাদ্য হিসাব পরিচালনা’ সংক্রান্ত ব্যয়।
নথি অনুসারে, কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ২০১৯ সালের পরিচালন ব্যয় ৫৫.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে ৬২.৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
বর্ধিত ব্যয়ের মূল চালিকাশক্তি
ক্রমবর্ধমান ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতায় সুদ পরিশোধ ক্রমাগত বেড়েছে।
নথিতে বলা হয়, সামাজিক কল্যাণ ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পদক্ষেপের ওপর জোর দিয়ে ২০১৯ সালে মোট সরকারি ব্যয়ের ভর্তুকি এবং স্থানান্তর সংক্রান্ত ব্যয় ২.৯ শতাংশ থেকে ২০২৪ সালে বেড়ে প্রায় ৪ শতাংশ হয়েছে।
২০১৯ অর্থবছর থেকে ২০২৩ অর্থবছর পর্যন্ত পরিচালন ব্যয় গড়ে জিডিপির ৭ দশমিক ৬ শতাংশ বজায় ছিল।
২০২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ অঙ্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.৬ শতাংশে।
দেশীয় সুদের হারের ঊর্ধ্বগতি এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিনিময় হারের অস্থিরতা থেকে এটি বেড়েছে এবং এটি একই সঙ্গে সুদ পরিশোধ ব্যয়ও বাড়িয়েছে।
এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও সরকার কৌশলগত সমন্বয় ও আর্থিক শৃঙ্খলার মাধ্যমে মধ্যমেয়াদে পরিচালন ব্যয় জিডিপির ৮.৩ শতাংশে স্থিতিশীল রাখার প্রত্যাশা করছে।
২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে খাদ্য ভর্তুকি ১৪.১ শতাংশ বেড়েছে। এটিও পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধির একটি কারণ।
বেতন ও পণ্য ব্যয় ব্যবস্থাপনা
বেতন ও ভাতা সংক্রান্ত খাতে ২০১৯ সালে জিডিপির ১.৮ শতাংশ এবং ২০২৩ সালে ১.৪ শতাংশ কমে গেছে, তবে তা বেতন কমানোর কারণে নয়, বরং সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণেই হয়েছে।
২০২৫ সালে বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় জিডিপির ১ দশমিক ৫ শতাংশ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা ২০১৯ সালের ১ দশমিক ৮ শতাংশের চেয়ে কম।
নথিতে বলা হয়, দক্ষ সরকারি সেবা প্রদান নিশ্চিত করার পাশাপাশি বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় বাড়াতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
কোভিড-১৯ মহামারির বছরগুলোতে আরও গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে সম্পদের পুনর্বিন্যাস এবং ২০২২ সাল থেকে গৃহীত সাশ্রয়ী নীতির কারণে পণ্য ও সেবার ওপর ব্যয় ২০২১ সালের মোট ব্যয়ের ৭.৩ শতাংশ ছিল। ২০২৩ সালে সেখান থেকে কমে দাঁড়ায় ৫.৯ শতাংশে।
২০২৪ অর্থবছরের সংশোধিত প্রাক্কলনে দেখা যায়, এ অর্থবছরে পণ্য ও সেবা খাতে ব্যয় ছিল মোট ব্যয়ের ৬ দশমিক ১ শতাংশ।
মধ্যমেয়াদে পণ্য ও সেবা খাতে ব্যয় ৬ শতাংশের কাছাকাছি থাকবে বলে প্রাক্কলন করেছে অর্থ বিভাগ।
ভর্তুকি যৌক্তিকীকরণ এবং সামাজিক সমর্থন জোরদার করা
সরকার ভর্তুকি বরাদ্দগুলো যুক্তিসঙ্গতভাবে নির্ধারণের জন্য একটি কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ জনগণের জন্য জীবনযাত্রা সহায়তা কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
ক্রমবর্ধমান প্রয়োজনীয় ব্যয়ের মধ্যে কৃষি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে রয়েছে।
জ্বালানি খাতে ধীরে ধীরে ভর্তুকি কমানো হবে। নিয়মতান্ত্রিক মূল্য সমন্বয় এবং ফর্মুলাভিত্তিক জ্বালানি মূল্য নির্ধারণের প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের মাধ্যমে এটি করা হবে।
প্রবৃদ্ধি ও স্থায়িত্ব বাড়ানো
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে সরকার রপ্তানি বহুমুখীকরণ, রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি, কৃষি উন্নয়ন এবং তৈরি পোশাক খাতে সবুজ প্রযুক্তি গ্রহণের জন্য আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের পরিকল্পনা করেছে।
হাইব্রিড প্রযুক্তি, বৈদ্যুতিক যানবাহন এবং আইসিটি পরিষেবা রপ্তানির ওপরও জোর দেয়া হচ্ছে।
দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি কৃষি ও রপ্তানিতে বিশেষ মনোযোগ দেয়া হবে বলে নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার পাওয়া গেছে ২৯ বস্তা টাকা। তিন মাস ১৩ দিনে দানবাক্সে এবার মিলেছে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ।
শনিবার সকালে দানবাক্সগুলো খুলে গণনা শুরু হয়। দিনভর গুনে দেখা গেছে, সেখানে জমা পড়েছে আট কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা। এছাড়াও পাওয়া গেছে বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা ও রুপা।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক মিজাবে রহমত এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে চলতি বছরের ১৭ আগস্ট মসজিদের ৯টি দানবাক্স খুলে পাওয়া গিয়েছিল ২৮ বস্তা টাকা। তখন দিনভর টাকা গণনা শেষে পাওয়া যায় সাত কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা।
ঐতিহাসিক এই মসজিদে টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার, বৈদেশিক মুদ্রা ছাড়াও প্রচুর পরিমাণ হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলও দান করেন অনেকে।
জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে শনিবার সকাল ৭টায় দানবাক্সগুলো খোলা হয়। পরে দানবাক্সের টাকা বস্তায় ভরা হয়। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বস্তা থেকে টাকাগুলো মসজিদের দ্বিতীয় তলায় মেঝেতে ঢেলে শুরু হয় গণনা। গণনা চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত উদ্দীন ভূইয়া বলেন, ‘টাকা গণনায় অংশ নেন পাগলা মসজিদ মাদ্রাসার ১৩০ জন ও আল-জামিয়াতুল ইমদাদিয়া মাদ্রাসার ১৫৫ জন ছাত্র, পাগলা মসজিদের ৩৬ জন স্টাফ, রূপালী ব্যাংকের ৭৫ জন কর্মকর্তা, সেনাবাহিনীর ১০ জন সদস্য, ১০ জন আনসার সদস্য, ২০ জন পুলিশ, পাঁচজন র্যাব সদস্য এবং জেলা প্রশাসনের ২০ জন।’
তিনি জানান, এবার দানবাক্স খোলার সময় পার হয়ে যাওয়ায় একটি টিনের ট্রাঙ্ক বাড়ানো হয়েছে। মসজিদটিতে আগে নয়টি দানবাক্স থাকলেও এখন দুটি বাড়ানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান বলেন, ‘পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্সের খরচ চালিয়ে দানের বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এ থেকে জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেয়ার পাশাপাশি অসহায় এবং জটিল রোগে আক্রান্তদের সহায়তা করা হয়।’
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী জানান, দানবাক্স খোলা থেকে শুরু করে বস্তায় ভরা এবং গণনা শেষে ব্যাংকে সব টাকা নিরাপদে পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত সার্বিক নিরাপত্তার কাজে তিনি সশরীরে উপস্থিত থেকে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে দায়িত্ব পালন করেন।
মসজিদ কমিটি সূত্রে জানা যায়, ছয় তলাবিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য একটি মেগা প্রকল্প করা হবে। এতে মসজিদ, মাদ্রাসাসহ অর্ধলাখ মুসল্লি যাতে একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন, এরকম আকর্ষণীয় একটি ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। সে সঙ্গে একসঙ্গে পাঁচ হাজার নারীর আলাদাভাবে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে। এ প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে । তারা যাচাই-বাছাই করে নকশা চূড়ান্ত করে দিলে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কাজ শুরু হবে। এতে প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা।
মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান জানান, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে দান করছেন এই মসজিদে। মনের আশা পূরণের জন্য তারা এই দান করে থাকেন।
দানবাক্স খোলার পর থেকেই টাকা গণনা দেখতে মসজিদের আশপাশে ভিড় জমান উৎসুক মানুষ। তাদের একজন শেখ বোরহান উদ্দিন বাজিতপুর উপজেলার বাসিন্দা।
বোরহান বলেন, ‘মানুষের মুখে আর বিভিন্ন টেলিভিশন ও পত্রিকায় পাগলা মসজিদের দানবাক্সে জমা পড়া টাকার কথা শুনি। গতবার দেখতে এসেছিলাম। এবারও নিজ চোখে দেখতে এসেছি। এত পরিমাণ টাকা একসঙ্গে কখনও দেখিনি।’
গণনায় অংশ নেয়া হেফজখানা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ইমদাদুল্লাহ জানান, দানবাক্স খোলার পর থেকে গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত মাদ্রাসার সব শিক্ষার্থী সেখানে অবস্থান করেন।
আরও পড়ুন:‘দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আমরা চেষ্টা করছি। আপনারা হতাশ হবেন না। গত ১৫ বছর ধরে যা হয়েছে তা অকল্পনীয়। যে ক্ষত তৈরি হয়েছে সেটা প্যারাসিটামলে সারবে না। সেজন্য কিছু হার্ড ডিসিশন নিতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ শনিবার এক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
রাজধানীর একটি হোটেলে ‘প্রাইভেট সেক্টর আউটলুক: প্রত্যাশা ও অগ্রাধিকার’ শীর্ষক এই বাণিজ্য সম্মেলনের আয়োজন করে ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘বিগত সরকারের রেখে যাওয়া অনিয়ম-দুর্নীতি দুই-চার মাসে স্বাভাবিক করা সম্ভব নয়। তবে ভবিষ্যতে কেউ আর দেশ থেকে অর্থ পাচার করতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘ক্ষয় হয়ে যেতে শুরু করা দেশের অর্থনীতিতে কিছুটা স্থিতিশীলতা আসতে শুরু করেছে। বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। বিদেশি সহযোগী সংস্থাগুলো খুবই ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে।’
বেসরকারি খাতে ঋণের বিষয়ে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পলিসি রেট আপাতত বাড়ানো হচ্ছে না। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ যেন না কমে সেদিকে নজর দিচ্ছে সরকার।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রাজস্ব আদায়কারী এবং আইনপ্রণেতা আলাদা করা হবে।’
এলডিসি গ্রাজুয়েশন হলে গার্মেন্টস শিল্পে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলেও উল্লেখ করেন অর্থ উপদেষ্টা।
আরও পড়ুন:কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌরুটে আজ বৃহস্পতিবার থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের কথা থাকলেও যাত্রী সংকটের কারণে কক্সবাজার থেকে কোনো জাহাজ ছাড়েনি।
চলতি মৌসুমে প্রশাসনের অনুমতি পাওয়া জাহাজ কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করবে।
চলাচলের অনুমতি পাওয়া জাহাজ কেয়ারি সিন্দাবাদের ব্যবস্থাপক নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘আজ বৃহস্পতিবার থেকে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়ারছড়ায় বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাট দিয়ে জাহাজ ছাড়ার অনুমতি ছিল। কিন্তু যাত্রী সংকটের কারণে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে জাহাজ ছাড়া সম্ভব হয়নি।
কেয়ারি সিন্দাবাদ জাহাজে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৩৫০ জন। কিন্তু বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেন্টমার্টিন যেতে ইচ্ছুক যাত্রীর টিকিট বুকিং শতজনেও গড়ায়নি। এতে যাত্রী সংকটের কারণে আজ বৃহস্পতিবার জাহাজটি না ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
মূলত নভেম্বর মাসে সেন্টমার্টিনে রাতযাপনে নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রবাল দ্বীপটি ভ্রমণে পর্যটকদের মধ্যে এক ধরনের অনীহা কাজ করছে বলে মনে করেন নুর মোহাম্মদ।
তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বর মাসে সেন্টমার্টিনে রাতযাপনে নিষেধাজ্ঞা নেই। তাই তখন দ্বীপে পর্যটকের সংকট থাকবে না। এ কারণে ডিসেম্বরের প্রথম দিন থেকেই সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে জাহাজ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন:দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারলে কর সংগ্রহে তা ইতিবাচক পদক্ষেপ হবে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিতে অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেছেন, ‘যদি আমরা দুর্নীতির পাহাড় থেকে জনগণের সম্পদ ফিরিয়ে দিতে না পারি তবে আমরা কেমন বিপ্লব করেছি?’
‘বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং ওপেন বাজেট সার্ভে ২০২৩-এর ফলাফল’ বিষয়ক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার এই সেমিনারের আয়োজন করে ইআরএফ ও রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড)।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর শ্বেতপত্র তৈরির জন্য গঠিত কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন আগামী ১ ডিসেম্বর রোববার প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেয়া হবে। আর প্রতিবেদনটির ফলাফল ২ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করা হবে।’
দাতা সংস্থা ও বিনিয়োগকারীদের সন্দেহের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনেক বড় প্রকল্পে দাতা সংস্থা ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অর্থায়ন করেছেন। তারা উদ্বিগ্ন যে এই প্রকল্পগুলো চলবে কি না। আগামী দিনে বাংলাদেশ কীভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে- এমন জিজ্ঞাসা তাদের।’
জানুয়ারিতে দাতা সংস্থা ও সরকারের মধ্যে একটি বৈঠকের প্রস্তাব দিয়ে দেবপ্রিয় আগামী দু’মাসের মধ্যে ‘ফোরাম ফর ইনক্লুসিভ অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির সুপারিশ করেন।
তিনি বলেন, ‘এই ফোরাম তৈরি করে দাতা ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। পাঁচটি বিষয়ে অগ্রাধিকার দিতে হবে, যার প্রথমটি হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। অন্য বিষয়গুলো হলো– ব্যক্তিগত বিনিয়োগের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা, জ্বালানি সংকটের সমাধান, সরকারি অর্থায়নের প্রতিবন্ধকতা দূর করে দ্রুত প্রকল্প সম্পন্ন করা এবং সঠিকভাবে কর সংগ্রহ নিশ্চিতকরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।’
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে সরকারের লক্ষ্য পূরণ হবে না বলেও মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য