বাংলাদেশের অবকাঠামো ও সমুদ্রবন্দরের উন্নয়নে অব্যাহত সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
ঢাকায় আমিরাতের নতুন দূত আলী আবদুল্লাহ খাসেফ আল হামুদি বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সাক্ষাৎকালে এমন আশ্বাস দেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূতকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘পারস্পরিক স্বার্থে সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশের অবকাঠামো এবং সমুদ্র বন্দরের উন্নয়নে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।’
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর উন্নয়ন সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে একটি জি টু জি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
তারা বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনাল এবং নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালের একটি জেটিও পরিচালনা করতে চায়।
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ইহসানুল করিম বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আশ্বস্ত করেছেন, তার দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
আমিরাতের রাষ্ট্রদূত বিমান চলাচল খাতে সহযোগিতার বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে তার বৈঠকের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন।
তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর সফরের মধ্য দিয়ে দুই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান বাংলাদেশ ও আরব আমিরাতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানও ১৯৮৪ সালে ঢাকা সফর করেন এবং দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন। দেশটি আগামী নভেম্বরে দুবাইতে কপ-২৮ শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের কথা বলার সময় শেখ হাসিনা আরব আমিরাত ও অন্যান্য আরব দেশে চাকরির জন্য যেতে ইচ্ছুকদের আরবি ভাষা শেখার ওপর জোর দেন।
ঢাকায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের নতুন রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে অবস্থানকালে তাকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
তিনি রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতৃত্বকে তার শুভেচ্ছাও জানান।
আরও পড়ুন:প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে দুর্নীতি ও অর্থপাচারের বিশাল দুষ্টচক্রকে নিয়ন্ত্রণের দিকনির্দেশনাহীন বাজেট বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করে সংস্থাটি বলছে, এ বাজেট যে আরও দুর্নীতি ও অর্থপাচার সহায়ক হবে তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
টিআইবি সংস্থাটি বলেছে, চলমান অর্থনৈতিক সংকট, ক্রমবর্ধমান আয়-বৈষম্য ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমার মূল কারণ লাগামহীন দুর্নীতি ও অর্থপাচারের মতো মরণব্যাধিকে প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল একেবারেই স্বীকার করেননি, একইভাবে সুশাসন ও ন্যায্যতার ভাবনাকেও নির্বাসনে পাঠিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, কোভিড সংকট ও ইউক্রেন যুদ্ধপ্রসূত বৈশ্বিক সংকটের ফলে অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সন্দেহ নেই; কিন্তু দেশে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পথে মূল অন্তরায় যে অবারিত দুর্নীতি ও গগণচুম্বি অর্থপাচার, তা নিয়ন্ত্রণে কোনো প্রকার দিকনির্দেশনাহীন উচ্চাভিলাষী বাজেট কীভাবে অর্থবহ বাস্তবায়িত হবে তা যেমন পরিষ্কার নয়, তেমনিভাবে ক্ষমতার বলয়ের বাইরে দেশের আপামর জনগণের জন্য এই বাজেট কোনো ভূমিকা রাখবে, এমন আশা একেবারেই অমূলক।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় ডলার সংকট মোকাবিলা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠনের জন্য আমদানিতে কঠোরতা, ঋণপত্রে নজরদারি অব্যাহত রাখা এবং একাধিক মুদ্রা বিনিময় হার থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের পাশাপাশি দেশের সার্বিক অর্থনীতির অন্তর্নিহিত মরণব্যাধি দুর্নীতি ও অব্যাহত মুদ্রাপাচারের বিষয়টিকে নির্বিকার এড়িয়ে গেলেন।
‘অথচ সরকারের অজানা নয় যে, বাংলাদেশে যদি মধ্যম মাত্রায় দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হতো তাহলে জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি কমপক্ষে ২-৩ শতাংশ বেশি হতো ও জনগণের জন্য অর্থবহ হতো; অন্যদিকে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য প্রাক্কলন অনুযায়ী বছরে গড়ে বাংলাদেশ থেকে পাচার হচ্ছে কমপক্ষে ১২ বিলিয়ন ডলার সমপরিমান অর্থ। দুর্নীতি ও অর্থপাচারের বিশাল দুষ্টচক্রকে নিয়ন্ত্রণের দিকনির্দেশনাহীন বাজেট যে আরও দুর্নীতি ও অর্থপাচার সহায়ক হবে তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।’
বিবৃতিতে বলা হয়, পাচার করা অর্থ বিনা প্রশ্নে ফেরত আনতে বিগত বাজেটে দেয়া অনৈতিক সুবিধার মেয়াদ আর না বাড়ানোর চিন্তা দেরিতে হলেও সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয়। তবে প্লট ও ফ্ল্যাটে বিনিয়োগে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত না রাখার আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি।
প্লট ও ফ্ল্যাটে বিনিয়োগসহ অন্য যে কোনোভাবে কালো টাকা সাদা করার অসাংবিধানিক, বৈষম্যমূলক ও দুর্নীতিসহায়ক সুযোগ যেন নতুন করে আয়কর আইনে স্থান না পায় এমন আহ্বান জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলে, বারবার সুযোগ দিয়েও দেশের অর্থনীতিতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ করে দিয়ে কোনো সরকারই কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রাজস্ব আদায় করতে পারেনি। বরং এর মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ কালো টাকার মালিকদেরই শুধু সুরক্ষা দেয়া গেছে এবং বাস্তবে দুর্নীতির গভীরতার বিস্তারে অবদান রেখেছে; সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের নৈতিক ভিত্তি দুর্বলতর হয়েছে। তাই এই সুযোগটি যেন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর চাপে আবারও না দেয়া হয়, সে ব্যাপারে সরকার দৃঢ়তা দেখাবে এমনটাই প্রত্যাশা।’
মূলত দুর্নীতির বৈষম্যমূলক প্রভাবে দেশে ক্রমবর্ধমান আয়-বৈষম্যের প্রেক্ষিতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ ও সুবিধাভোগীর সংখ্যা এবং ভর্তুকি বরাদ্দের ব্যয় ব্যবস্থাপনার দিক থেকেও প্রস্তাবিত বাজেট ন্যায্যতা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে টিআইবি বলছে, আয়হীন ও নিম্ন আয়ের মানুষ যতোটা চাপে রয়েছে সে তুলনায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বা সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়েনি। ভাতার পরিমাণও কোনো কোনো ক্ষেত্রে নামমাত্র বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও বাস্তবে তা কোনোভাবেই অর্থবহ হবে না। আবার সরকার বাজেটে সাড়ে ৮৪ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি ও প্রণোদনা ব্যয়ের যে প্রস্তাবনা রেখেছে সেখানে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকাই রাখা হয়েছে জনপ্রশাসনের জন্য। সামাজিক নিরাপত্তায় ভর্তুকি ও প্রণোদনা মাত্র ৫ হাজার কোটি টাকা।
টিআইবি প্রত্যাশা করে বাজেট পাসের আগেই এসব ক্ষেত্রে সরকার ন্যায্যতা বিধান করবে এবং বিশেষ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিনির্ভর সুশাসন, এবং দুর্নীতি ও অর্থপাচার নিয়ন্ত্রণের কার্যকর পথরেখা বাজেটের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করবে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিল তৈরি পোশাকের বৈশ্বিক ব্র্যান্ড গ্রামীণ ইউনিক্লো। এরই মধ্যে ব্র্যান্ডটি তার সব বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে।
গ্রামীণ ইউনিক্লো-এর ফেসবুক পেজে পোস্টে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর বেইলিরোড ও মিরপুর-১২ এলাকাতে গিয়েও তাদের কোনো শো-রুম খোলা পাওয়া যায়নি।
যোগাযোগের জন্য গ্রামীণ ইউনিক্লো-এর ফেসবুক পেজে দেয়া ফোন নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।
অবশ্য এর আগে ১৮ জুনের মধ্যে গ্রামীণ ইউনিক্লো তাদের ১০টি বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ করার পাশাপাশি ব্যবসা কার্যক্রমও বন্ধের কথা জানিয়েছিল। তবে পরে আরেক পোস্টে বলা হয়, ৩০ মে-এর মধ্যেই বন্ধ হচ্ছে সব দোকান।
ইউনিক্লো সোশ্যাল বিজনেস বাংলাদেশ লিমিটেড বৃহস্পতিবার গ্রামীণ ইউনিক্লোর ওয়েবসাইটে ৩০ মে বিবৃতি দিয়ে বলেছে, আমরা ১৮ জুনের মধ্যে কার্যক্রম শেষ করতে চেয়েছিলাম, তবে আমাদের সব পণ্য বিক্রি হয়ে যাওয়ায় ৩০ মে-এর মধ্যেই সব কার্যক্রম বন্ধ করছি।
গ্রামীণ ইউনিক্লোর ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘আমরা দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, গ্রামীণ ইউনিক্লোর ১০টি স্টোর (বিক্রয়কেন্দ্র) ১৮ জুন, ২০২৩ সালের মধ্যে আমরা বন্ধ করব এবং এর সঙ্গে সঙ্গে গ্রামীণ ইউনিক্লোর ব্যবসার কার্যক্রমও বন্ধ হবে।
গত ১১ মে দেয়া বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি বলেছিল, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সে সঙ্গে ব্যবসায়িক পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করছি, আমাদের ব্যবসার একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য অর্জন করতে সফল হয়েছি। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আমাদের ব্যবসার কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
জাপানি খুচরা বিক্রেতা কোম্পানিটি গ্রামীণ ব্যাংক গ্রুপের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে ২০১০ সালে ইউনিক্লো সোশ্যাল বিজনেস বাংলাদেশ লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করে। তারপর ২০১৩ সালে গ্রামীণ ইউনিক্লো প্রাথমিকভাবে রাজধানী ঢাকায় একটি বিক্রয়কেন্দ্র চালু করে। পর্যায়ক্রমে বিক্রয়কেন্দ্র বাড়ানো হয়।
গ্রামীণ ইউনিক্লোর বাংলাদেশে ব্যবসা গোটানোর প্রক্রিয়াটি চলতি বছরের শুরুর দিকে দৃশ্যমান হয়। প্রতিষ্ঠানটিগত ফেব্রুয়ারিতে নয়াপল্টন, সাভার সিটি সেন্টার, খিলগাঁও তালতলা ও নিউ এলিফ্যান্ট রোডে থাকা বিক্রয়কেন্দ্র এক সঙ্গে বন্ধ করে দেয়।
পরে বন্ধ হয় যমুনা ফিউচার পার্ক, গুলশান-বাড্ডা লিংক রোড, নারায়ণগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সড়ক, সায়েন্স ল্যাব, নরসিংদী, পুরান ঢাকার ওয়ারী, মোহাম্মদপুর রিং রোড, মেট্রো শপিং মল, যাত্রাবাড়ী এবং মিরপুর-১২ এলাকার বিক্রয়কেন্দ্র।
বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার আগামী অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের পর শুক্রবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন পৃথিবীতে সবাই সবার সঙ্গে সম্পৃক্ত। একে অপরের সাথে অ্যালাইনড। কেউ আলাদাভাবে বসবাস করার কোনো সুযোগ-সুবিধা নাই। আপনি যদি আমদানি করেন, তাহলেও কাউকে লাগবে, রপ্তানি করলেও কাউকে লাগবে।
‘আর আপনার এখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ হচ্ছে। অন্য দেশ থেকে বলে দেয়া হচ্ছে কোন দেশে থেকে সেই জিনিসটি পাওয়া যাবে এবং আমরা সেটা পেতে পারি। সেখানে আমাদের যে সাবলীলভাবে যে সাধ বা সাধ্য, এগুলো একসাথে এখন পরিচালনা করা সম্ভব নয়। মাঝেমধ্যে এ ধরনের অবস্থার সৃষ্টি হলে সেটাও ফ্লেক্সিবল ওয়েতে আমরা একটা সমাধান খুঁজে বের করি।’
আইএমএফ নিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আইএমএফ আমাদেরকে কখনও কখনও এসে দেখে। শুধু আমরা না, আইএমএফের সাথে যারা সম্পৃক্ত, সবাইকেই দেখে। ব্যালেন্স শিট ঠিক আছে কি না, রেভিনিউ অ্যাকাউন্ট ঠিক আছে কি না, ইনকাম-এক্সপেনডিচার ঠিক আছে কি না..এগুলোতে দেখে। এই দেখাটা ভালো। আইএমএফের সাথে যারা কাজ করে, আমি মনে করি যে, এটা একটা ভালো দিক। ভালো দিক এই জন্য বলব যে, তারা শুধুমাত্র অর্থ দিয়ে…অর্থ দেয়া মানে লোন দেয়া; লোন দিয়েই সাহায্য করে না, পাশাপাশি কিছু প্রজেক্টও সাজেস্ট করে।
‘প্রজেক্টগুলা কীভাবে ডেলিভার করা যাবে, সুন্দরভাবে ডেলিভার করা যাবে কম সময়ে, এফিশিয়েন্টলি ডেলিভার করা যাবে, এগুলো তারা প্রেসক্রাইব করে। এগুলা থেকে আমি মনে করি যে, আমাদেরও শেখার অনেক কিছু থাকে এবং অনেক সময় আমরা সফল হই তাদের পরামর্শ অনুযায়ী। আমি আপনাকে স্পষ্টভাবে বলতে পারি, তাদের পরামর্শ মোতাবেক আমরা আমাদের বাজেট করি নাই।’
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার বিকেলে টানা পঞ্চমবারের মতো বাজেট পেশ করেন তিনি। এটি দেশের ইতিহাসে ৫২তম ও আওয়ামী লীগ সরকারের পাঁচ মেয়াদের ২৪তম বাজেট।
আরও পড়ুন:কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে মন্তব্য করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছে, বাস্তবতা অনুযায়ী কঠিন ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেয়নি সরকার।
জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার উত্থাপন করা আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে শুক্রবার পর্যালোচনায় এ কথা বলেছেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে আয়োজিত এ পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘গত ২৭ মে আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি পর্যালোচনা তুলে ধরেছিলাম। সেখানেও আমরা বলেছিলাম যে, ২০২৩-২৪ অর্থবছর একটি চ্যালেঞ্জিং অর্থবছর এবং এই চ্যালেঞ্জিং অর্থবছরের সময়েই কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটটি উপস্থাপন করা হচ্ছে। ২০২২-২৩ চলমান অর্থবছরটি খুবই চ্যালেঞ্জিং এবং এই অর্থবছরে আমরা দেখছি যে, বাংলাদেশের অর্থনীতির যে সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা সেটা কিন্তু ক্রমান্বয়ে এবং ব্যাপকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং এই দুর্বলতার কারণ একদিকে যেমন বৈশ্বিক কারণ, অন্যদিকে কিন্তু অভ্যন্তরীণ কারণও রয়েছে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এমন একটি সময় দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে যে, ২০২৬ সালে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হব এবং আমাদের সামনে রয়েছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার যে মাইলস্টোন ২০৩০ সালে, সেটি এবং আমাদের আরও একটি বৈশিষ্ট্য এই সময়ে দেখা যাচ্ছে যে, আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এবং অর্থনীতিতে, বিশেষ করে বহিঃখাতে সহায়তার জন্য আমরা কিন্তু আইএমএফ-আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের একটি লোন (ঋণ) নিয়েছি ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।
‘সেই প্রোগ্রামের অধীনেও আমাদের রয়েছে এবং এই অর্থবছরে যে বাজেটটি দেয়া হলো, এই বাজেটটি বর্তমান সরকারের বর্তমান মেয়াদের শেষ বাজেট। এ সমস্ত বিবেচনায় এই বাজেটটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এই বাজেটে অনেক প্রত্যাশাও ছিল।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ ছিল, সেটি আমি একটু পরেই দেখাচ্ছি, কিন্তু আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এই কঠিন সময়ে আসলে কঠিন কিছু ব্যবস্থা নেয়ার যেটা সুযোগ ছিল, সেটি কিন্তু নেয়া হয়নি।’
‘সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন চাপ’
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘যদি আমরা সামষ্টিক অর্থনীতির দিকে তাকাই, এখানে যে ১৫টি অর্থনীতির বিভিন্ন চাপ যেটি রয়েছে, সেটি আমরা উল্লেখ করছি। আপনারা সেগুলো জানেন। একটি হচ্ছে যে রাজস্ব আহরণ কমে যাচ্ছে এবং এই বছরে কম হচ্ছে। ঘাটতি হয়েছে এবং সরকারি ব্যয়, সেটাও একটা জায়গায় স্থবির হয়ে আছে। জাতীয় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন কম হয়েছে সেটা এবং তা ছাড়া তার পাশাপাশি আমরা দেখছি যে, ব্যাংক খাত থেকেও ঋণ নেয়া হচ্ছে এবং বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে এবং তার পাশাপাশি যেটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, মানুষের জীবনে আঘাত করছে, সেটি হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য আকাশচুম্বী হয়ে গেছে এবং তার পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতে যে ঋণখেলাপির পরিমাণ, সেটিও কিন্তু ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
‘এ ছাড়া ব্যাংকিং খাতে এক ধরনের তারল্যের ওপরে চাপ পড়েছে এবং যদি বহিঃখাতের দিকে তাকাই, রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার নিম্নমুখী। রেমিট্যান্স প্রবাহের হার নিম্নে। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার যে রিজার্ভ, সেখানে এক ধরনের বৈদেশিক মুদ্রার একটা স্ক্যারসিটি অর্থাৎ অভাব কিছুটা দেখা দিচ্ছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিন্তু ক্রমান্বয়ে নিম্নমুখী হচ্ছে। তার পাশাপাশি আমরা এটার ফলাফলটা দেখতে পাচ্ছি যে, আমদানি করার ক্ষেত্রে যতটুকু করার কথা, সেটা করা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খাতে ব্যাপক একটা ঘাটতি দেখা যাচ্ছে, যার ফলে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং তার পাশাপাশি আমরা দেখছি যে, টাকা এবং ডলারের যে বিনিময় হার, সেইখানে কিন্তু একটা অবনমন হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে এতগুলি চাপের মুখে কিন্তু সামগ্রিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ভঙ্গুর হয়ে গিয়েছে।’
জিডিপি ও বিনিয়োগের প্রক্ষেপণ নিয়ে সিপিডির ভাষ্য
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমরা যদি দেখি যে, জিডিপির এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেই ধরনের প্রক্ষেপণ এখানে করা হয়েছে, সেখানে আমরা গত অর্থবছরে এবং তার আগের অর্থবছরের সাথে এই অর্থবছরের তুলনা করেছি। সেখানে যে অনুমিতিগুলো করা হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারেও আমাদের বক্তব্য হচ্ছে যে, এই অনুমিতিগুলো অনেকগুলো অর্থনীতির যে সূচকগুলো, সেই সূচকগুলোর যে প্রবৃদ্ধি এবং প্রক্ষেপণ করা হয়েছে, সেই অনুমিতিগুলোর কিন্তু বাস্তবতার সঙ্গে তেমন মিল নেই।
‘আমরা দেখছি যে, বার্ষিক উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি অর্থাৎ জিডিপি প্রবৃদ্ধি; সাত দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে এবং মনে করা হচ্ছে যে, গত অর্থবছরেও সেটা সাত দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছিল। পরবর্তীতে এটাকে নামিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে এবং মনে করা হচ্ছে যে, এই আগামী ২০২৪ অর্থবছরে ঘুরে দাঁড়িয়ে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাড়ে সাত শতাংশ হবে এবং আমরা যদি বিনিয়োগ, সরকারি বিনিয়োগ এবং জিডিপির রেশিও দেখি, হার দেখি, সেখানে ছয় দশমিক ৩ শতাংশ, সেটা ধরা হয়েছে।
‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ। এখানে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির অংশ হিসেবে ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ ২০২৪ সালে ধরা হয়েছে, কিন্তু আসলে ২০২৩ সালে আমরা দেখেছি, সেটা কিন্তু যেটা ধরা হয়েছিল, তার চাইতে কম এ পর্যন্ত হয়েছে এবং সেটা ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। এখান থেকে কীভাবে এতটা জাম্প দিয়ে ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ হবে, এটি একটি আমাদের কাছে উচ্চাকাঙ্ক্ষা মনে হয় যে, এই যে ঘুরে দাঁড়ানোর এবং ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক বছরের মধ্যে এতখানি উল্লম্ফন হবে, সেটা অনেকটাই একটা বিরাট আকাঙ্ক্ষা বলা যায়।’
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার পর জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেন।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে যে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে, তা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে ‘স্মার্টলি লুটপাটের’ বাজেট বলে উল্লেখ করেছেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য একইসঙ্গে বলেছেন, এই বাজেট সরকার দিচ্ছে, না আইএমএফ দিচ্ছে তা-ও দেখার বিষয়। মূলত আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী সরকারকে বাজেট দিতে হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালা বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনের পর বিকেলে রাজধানীর বনানীর নিজ বাড়িতে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় তার বাড়িতে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা অবস্থান করছেন উল্লেখ করে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আমির খসরু। বলেন, ‘এ ধরনের একটা সরকার দেশের জন্য কী ধরনের বাজেট দেবে তা বোঝাই যাচ্ছে। বিরোধী দলের প্রতিক্রিয়া শুনতেও রাজি নয় তারা।’
বিএনপির এই বর্ষীয়াণ নেতা বলেন, ‘সরকার লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে প্রচার করছে। অথচ দেশে রিজার্ভে টাকা নেই।
‘বাজেটের আকার বাড়ছে ঋণের ওপর দাঁড়িয়ে এবং তা করা হচ্ছে সরকারের লুটপাটের সুবিধার জন্য। গত ৭ বছরে ৫২ শতাংশ ঋণ বেড়েছে। সরকার ঋণ নিয়ে ঘি খাচ্ছে। এই ঘি খাওয়ার টাকা বাংলাদেশের জনগণকে শোধ করতে হবে।
‘দেশের ভেতরে ব্যাংকগুলো থেকে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে, দেশের বাইরে থেকে যে পরিমাণ ঋণ নেয়া হচ্ছে, এই ঋণের ভার আগামী প্রজন্মকে নিতে হবে।’
করের খাত বাড়ানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, ‘এই সরকার তাদের অর্থনীতির যে মডেল তৈরি করছে, সেখানে ট্যাক্সের পুরো চাপ সাধারণ মানুষের ওপর। সাধারণ মানুষ এখন ঋণ করে চলছে, তাদের জমা শেষ হয়ে গেছে, তারা নিয়মিত খাদ্যতালিকা সীমিত করছে।
‘অথচ জনগণের ট্যাক্সের এই টাকায় তারা যে পৃষ্ঠপোষকতার অর্থনীতি চালু করেছে, তারা লাভবান হচ্ছে। এই টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে, পুরো চাপটা পড়ছে জনগণের ওপর। নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সাধারণ মানুষের কষ্ট আরও বাড়াবে।’
সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই বাজেট সরকার দিচ্ছে না আইএমএফ দিচ্ছে সেটাও তো দেখার বিষয়। আইএমএফ যে গাইডলাইন দিচ্ছে তাতে তো সুনিশ্চিতভাবে বলা হয়েছে যে কী কী করতে হবে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি কী কারণে আজ নিম্ন পর্যায়ে এসে নেমেছে।
‘এসব কারেক্ট করার জন্য আইএমএফের যে শর্ত, সেই শর্ত মেনে চলছে সরকার। মূলত আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী তাদেরকে বাজেট দিতে হবে। আবার তার বাইরে যদি অব্যাহতভাবে লুটপাটের অর্থনীতি, পৃষ্ঠপোষকতার অর্থনীতি চলতে থাকে, সেটা অন্য কথা।’
তিনি বলেন, ‘সরকার বিপদে আছে। আইএমএফের শর্ত না মানলে বাজেট সাপোর্ট থাকে না। আবার আইএমএফের শর্ত মানলে তাদের লুটপাটের পৃষ্ঠপোষকতার রাজনীতি বাধাগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায় সরকার অর্থনীতিকে যে জায়গায় নিয়ে গেছে, সেখান থেকে বের হতে হলে এটার রাজনৈতিক সমাধান হতে হবে। রাজনৈতিক সমাধান হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের ভোটে নির্বাচিত একটি সংসদ, যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে ও জবাবদিহিতা থাকবে।
সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে প্রস্তাবিত বরাদ্দ যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন বিএনপির এই নেতা।
তিনি বলেন, ‘বাজেট হচ্ছে জনগণের চিন্তার প্রতিফলন, রাজনীতির চিন্তার প্রতিফলন। আজ যেখানে অবৈধ দখলদার সরকার বসে আছে, তাদের বাজেটে তো রাজনীতির চিন্তার প্রতিফলন ঘটবে না; সাধারণ মানুষের চিন্তার প্রতিফলন ঘটবে না। তাদের নিজেদের চিন্তার প্রতিফলন ঘটবে।’
আমির খসরু বলেন, ‘দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে গত ৩০ বছরে যে স্থিতিশীলতা আমরা সৃষ্টি করেছিলাম সেটা এই সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। আর এটা করা হয়েছে একটা দলীয় চিন্তার ভিত্তিতে পৃষ্ঠপোষকতার লুটপাটের অর্থনীতির মডেল তৈরি করে।’
কেউ কেউ বলছেন, সরকার নির্বাচনী ব্যয়ের বাজেট দিচ্ছে। নতুন কোনো সরকার এলে তাদের জন্য এই বাজেট বাস্তবায়ন কতটা চ্যালেঞ্জ হবে।- এমন প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, ‘বাজেটে বড় বড় অঙ্ক দিচ্ছে, আর বাংলাদেশের মানুষকে অবকাঠামোর কথা বলছে। কিন্তু ৯ মাসে বাজেটের ৩৬ শতাংশও পূরণ করতে পারেনি। আর বড় বড় অবকাঠামোতে যে বিদেশে টাকা পাচার হয়েছে, সে জন্যই তো আজকে ডলার সংকট, ব্যাংকে টাকা নেই, শেয়ারবাজার ধ্বংস হয়ে গেছে।’
আমীর খসরু আরও বলেন, যে জন্য তারা (সরকার) আইএমএফের কাছে ধার করছে, বিশ্বব্যাংকের কাছে ধার করছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে টাকা ছাপাতে হচ্ছে। টাকা ছাপিয়েও কুলাতে পারছে না। সুতরাং এখান থেকে বের হতে হলে একটা অবৈধ দখলদার সরকারকে বিদায় করে জনগণের সরকার হতে হবে, জবাবদিহির সরকার হতে হবে।
আরও পড়ুন:চলমান অর্থনীতির সংকটগুলো মোকাবিলার ক্ষেত্রে বাজেটে ঘোষিত পদক্ষেপগুলো বাস্তববর্জিত বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেছেন, সংকট মোকাবিলায় ঘোষিত বাজেটে স্বীকৃতি ও সমাধান দুটোই অপ্রতুল।
বৃহস্পতিবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট-পরবর্তী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘প্রথম বিষয়টি হচ্ছে চলমান অর্থনৈতিক সংকট এবং সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলো ঘোষণা করা হলো সেই সূচকগুলো যেভাবে প্রাক্কলন করা হয়েছে আমাদের কাছে মনে হয়েছে তা বাস্তববর্জিত এবং অর্জন করা সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, মূল্যস্ফীতির চাপ বা এর লাগাম টানার জন্য যে সমাধান দেয়া হয়েছে এগুলোও সম্ভব নয়।
‘মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে না। এটি কমানোর জন্য যে আর্থিক পদক্ষেপগুলো নেয়া দরকার, বাজেটে তা নেই।’
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণের জন্য যে আর্থিক পদক্ষেপগুলো- যেমন: আমদানি করা নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু কিছু পণ্যের ওপর কর থাকে, সেখানে যদি কর রেয়াত দেয়া যায় তাহলে কিছুটা স্বস্তি পেতাম। কিন্তু সেখানে আমরা তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখিনি।’
সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘২০২৩-২৪ সালের বাজেট এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে যখন অর্থনীতির মূল সূচকগুলো ভেঙে গিয়েছে। অর্থনীতির স্থিতিশীলতা এখন আর নেই। এখানে নানামূখী চাপ রয়েছে। বহির্খাতের চাপ রয়েছে; রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স যেভাবে আসার কথা ছিল সেভাবে আসছে না। অভ্যন্তরীণ সম্পদ সঞ্চালন কিংবা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না।
‘সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল মূল্যস্ফীতির চাপ, সেটিও রয়ে গেছে। পুরো অর্থবছর জুড়েই মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমূখী ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর কথা বলেছিলাম। সেটি বাড়ানো হয়েছে। এটি খুবই ভালো।
‘তবে আমরা দেখছি সরকারি ৩৮টি সেবা পেতে রিটার্ন সাবমিট করতে হবে এবং আয় যেটাই হোক, রিটার্ন সার্টিফিকেট পেতে ২ হাজার টাকা দিতে হবে। সেটি আমাদের কাছে অবিবেচনাপ্রসুত মনে হয়েছে। সরকারি বিভিন্ন সেবা পেতে যে ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি তুলে দেয়া উচিত।’
সংস্কারের কথা তুলে ধরে ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাজেটে আমরা যেসব সংস্কার প্রস্তাব করেছিলাম, সেগুলোর কোনো প্রতিফলন নেই। এই বাজেটটি এমন একটি সময়ে প্রণয়ন করা হয়েছে যখন আন্তর্জাতিক দুটি সংস্থার বিভিন্ন শর্ত রয়েছে, যেহেতু তারা ঋণ দেবে।
‘বাজেট ডকুমেন্টে তিনবার আইএমএফ-এর কথা বলা হয়েছে। পরিষ্কারভাবে আইএমএফ-এর শর্তের কথা বলা না হলেও সেই শর্ত পালনের ইঙ্গিত রয়েছে বাজেটে। সবমিলিয়ে চলমান অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবিলার ক্ষেত্রে ঘোষিত বাজেটে স্বীকৃতি ও সমাধান দুটিই অপ্রতুল।’
আরও পড়ুন:জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে নির্বাচনমুখী বাজেট বলে উল্লেখ করেছে জাতীয় পার্টি। জাতীয় সংসদে বিরোধী দলটি মনে করে, এই বাজেট বাস্তবসম্মত নয়। সরকার-সংশ্লিষ্টরা এই বাজেটকে পুঁজি করে নির্বাচনী সুবিধা নিতে পারে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট উত্থাপনের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, গতবারের তুলনায় এক লাখ কোটি টাকা বেশি বাজেট করা হয়েছে। আমরা বুঝতে পারছি যে নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনমুখী বাজেট করা হয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে মানুষ কষ্টে জীবনযাপন করলেও রাজস্ব আদায়ের বড় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এটাকে আমরা বাস্তবসম্মত বাজেট বলে মনে করছি না। বাজেটে পরিচালন ব্যয় বাড়ানোর কারণে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সরকার এর অ্যাডভান্টেজ (বাড়তি সুবিধা) পাবে।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার খুব অল্পই অর্জিত হয়েছে। তারপরও নতুন বাজেটে চলতি অর্থবছরের চেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা মনে করি এটা অর্জিত হবে না।
‘বাকি থাকে অভ্যন্তরীণ ঋণ ও বিদেশি ঋণ। এখন যে পরিস্থিতি ইচ্ছা করলেই যে বিদেশি ঋণ পাবে বা অভ্যন্তরীণ ঋণ নিতে পারবে তা তো নয়। কাজেই আলটিমেটলি বাজেটটা ওয়ার্কঅ্যাবল হবে না, এটা আমাদের ধারণা।’
তিনি বলেন, ‘প্রায় সব কিছুর ওপর পরোক্ষ করা আরোপ করা হয়েছে। যেগুলো অনেক মানুষ, সাধারণ মধ্যবিত্তরা ব্যবহার করে। এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, এটা আরও বেশি ওপরের দিকে যাবে।
‘মানুষের আয় কমে গেছে, জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে। বাজেটে কল্যাণমুখী কিছু দেখছি না। মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, গরিব- এ তিন শ্রেণির বেঁচে থাকার জন্য বাজেটে প্রভিশন থাকার দরকার ছিল। কিন্তু তা রাখা হয়নি। এ কারণে এটাকে জনবান্ধব বাজেট বলা যাচ্ছে না।’
এক প্রশ্নের জবাবে জিএম কাদের বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে পরিচালন ব্যয় অনেক বাড়ানো হয়েছে। অথচ উন্নয়ন ব্যয় অনেক কম। পরিচালন ব্যয় আগে যা ছিল সেটাই অনেক বেশি ছিল। পরিচালন ব্যয় খুব খোলামেলা জিনিস। যেখানে-সেখানে অর্থ ব্যয় করা যায়। হয়তো নির্বাচন সামনে রেখে সরকারে জড়িতরা এটার অ্যাডভান্টেজ নেবেন। এটা অর্থ দিয়ে ইলেকশন পার করার একটা পলিসি হতে পারে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য