ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বুধবার মূল্য সূচকের নামমাত্র উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিনও ডিএসইতে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে ডিএসইতে টাকার অংকে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে।
বুধবার ডিএসইতে ৭৬৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ডিএসইতে আগের দিন থেকে ৫২ কোটি ১৮ লাখ টাকা বেশি লেনদেন হয়েছে। মঙ্গলবার ডিএসইতে ৭১৩ কোটি ১৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।
ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৬ হাজার ২৬৬ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক দশমিক ১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৫৯ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক শূন্য দশমিক ২৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২১৩ পয়েন্টে।
এদিন লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৪৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৪টির দর বেড়েছে, ৭২টির দর কমেছে, ২১২টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে কোম্পানির বড় অংশের শেয়ার বিক্রি হওয়ার প্রেক্ষাপটে জাপানের শেয়ার বাজার থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিচ্ছে দেশটির প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তোশিবা।
এর মাধ্যমে তোশিবার ৭৪ বছরের শেয়ার বাজারের ইতিহাস শেষ হচ্ছে বলে বৃহস্পতিবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
কোম্পানিটি বলছে, প্রাইভেট ইক্যুইটি ফার্ম জাপান ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্টনারস (জেআইপি)-এর নেতৃত্বে একটি গ্রুপ তোশিবার ৭৮.৬৫ শতাংশ শেয়ার কিনে নিয়েছে। অর্থাৎ গ্রুপটি দুই-তৃতীয়াংশের বেশি অংশীদারিত্বের মালিকানা পেয়েছে।
ঘড়ি এবং যান্ত্রিক পুতুলের নির্মাতা হিসেবে ১৮৭৫ সালের দিকে বাজারে আসে তোশিবা। এর পর নানা পণ্য উৎপাদন শুরু করে এই কোম্পানি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তোশিবার সঙ্গে হওয়া নতুন চুক্তির অধীনে এ বছরের শেষের দিকে কোম্পানিটির বকি শেয়ার বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হতে পারে।
বেশ কয়েক বছর ধরেই বাজার থেকে সরার পথে তোশিবা। এর অংশ হিসেবে ২০২০ সালে ল্যাপটপ ব্যবসা থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়, তারা ৩৫ বছরের পুরোনো ল্যাপটপ ব্যবসা থেকে সরে যাবে। এ ব্যবসার শেয়ার বিক্রি করার কথা বলা হয় জাপানি প্রতিষ্ঠান শার্পের কাছে।
বিবিসি বলছে, জাপান যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বেরিয়ে আসছে এবং টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জ পুনরায় চালু হলো তখন ১৯৪৯ সালের মে মাসে তোশিবার শেয়ারের ব্যবসা শুরু হয়।
বাসা-বাড়ির ইলেকট্রনিক্স পণ্য থেকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রও ছিল এই তোশিবার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে কয়েক দশক ধরে দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং এর উচ্চ প্রযুক্তি শিল্পের প্রতীক ছিল।
তবে গত কয়েক বছর ধরে বেশ বিপাকে পড়েছে তোশিবার ব্যবসা। ২০১৭ সালে যুক্তরষ্ট্রে পারমাণবিক শক্তি ব্যবসায় বড় ক্ষতির কথা জানায় প্রতিষ্ঠানটি। দেউলিয়া হওয়া এড়াতে তোশিবা ২০১৮ সালে এর মেমরি চিপ ব্যবসা বিক্রি বন্ধ করে দেয়।
তোশিবা ২০২১ সালে যুক্তরাজ্যের প্রাইভেট ইক্যুইটি গ্রুপ সিভিসি ক্যাপিটাল পার্টনারদের কাছ থেকে পাওয়া বিনিয়োগের বেশ কয়েকটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। তবে শেষ পর্যন্ত অস্তিত্বের প্রশ্নে অনেকটাই আপস করতে হয় প্রতিষ্ঠানটিকে।
দেশের পুঁজিবাজার আজ অনেক কারণে পিছিয়ে আছে। অথচ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভর করে পুঁজিবাজারের উন্নতির ওপর। পিছিয়ে থাকা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে আমাদের কাজ করতে হবে। আর এতে নেতৃত্ব দিতে পুঁজিবাজারের মূল কর্ণধার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই)।
ডিএসই চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু সোমবার এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছাসহ ১৫ আগস্টের সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসইর নিজস্ব ভবনে এই আয়োজনে সভাপতির বক্তব্যে হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন যেভাবে এগিয়েছে, পুঁজিবাজারের উন্নয়ন সেভাবে হয়নি। আমরা সততা নিয়ে কাজ করলে পুঁজিবাজার দাঁড়িয়ে যাবে।
‘সিকিউরিটিজ হাউজগুলো তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছে না। হাউজগুলোর কাছে আমাদের কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। তবে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ডিএসই নিরলস কাজ করছে। আমরা এই উন্নয়নে হাউজগুলোকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাবো।’
বঙ্গবন্ধুর প্রতি স্মৃতিচারণ করে ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু একজন সরল প্রকৃতির নির্ভীক মানুষ ছিলেন। তার কথাবার্তায় কোনো জটিলতা ছিল না। তিনি কখনোই এদেশে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেন না। একেবারে সাধারণের মতো জীবনযাপন করতেন। সবার সঙ্গে তিনি অতি সাধারণভাবে মিশতে পারতেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নিতে হবে।’
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, ‘আমরা অনেক ভাগ্যবান। কারণ বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন। আমরা আগামী ১০০ বছরের ডেল্টা প্ল্যান করার চিন্তা করছি। এটা তখনই সম্ভব, যখন স্বাধীনতার পক্ষের রাজনৈতিক শক্তি দেশ শাসন করে। আমরা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকে তখনই সম্মান দেখাতে পারব, যখন আমরা দুর্নীতিকে পরাস্ত করে স্বাধীনতার চেতনাকে জাগ্রত করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।’
ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড-এর চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকের হৃদয়েই বঙ্গবন্ধুর জন্য একটি স্থান রয়েছে। বিদেশে আমি যখনই গিয়েছি, বাংলাদেশের নাম শুনলেই সবাই বলত শেখ মুজিবুর রহমানের কথা। বাংলাদেশ মানেই যেন শেখ মুজিবুর রহমান।’
আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ডিএসই’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. সাইফুর রহমান মজুমদার।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মময় সংগ্রামী জীবনের ওপর আলোকপাত করে আরও বক্তব্য দেন ডিএসই’র সাবেক চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমান, ডিবিএ-র প্রেসিডেন্ট রিজার্ড ডি রোজারিও, ডিএসই’র সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমদ রশিদ লালী, বুলবুল সিকিউরিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস শাহুদুল হক বুলবুল, জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম-এর প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা।
আরও পড়ুন:দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন এটিএম তারিকুজ্জামান। এর আগে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি মঙ্গলবার তার এই নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে।
এর আগে পদটিতে নিয়োগের জন্য তিন প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করেছিল ডিএসই। সোমবার ডিএসইর পর্ষদ সভায় ওই তিনজনের নাম প্রস্তাবের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং মঙ্গলবার বিএসইসির অনুমোদনের জন্য তালিকাটি পাঠানো হয়।
যে তিনজনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল তারা হলেন- বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক (ইডি) এটিএম তারিকুজ্জামান, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মশিউর রহমান এবং ন্যাশনাল ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুদ্দিন এম নাসের।
বিএসইসি আগামী তিন বছরের জন্য ডিএসইর এমডি পদে এটিএম তারিকুজ্জামানকে নিয়োগে অনুমোদন দেয়।
ডিএসই বোর্ড অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রেগুলেশন-২০১৩ অনুসারে, ডিএসইর মনোনয়ন ও পারিশ্রমিক কমিটি (এনআরসি) দ্বারা ব্যবস্থাপনা পরিচালক নির্বাচিত হবেb। বোর্ড এ ক্ষেত্রে তাদের সুপারিশ জানাবে। বোর্ডের সুপারিশের পর বিএসইসি তিন বছর মেয়াদে একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেবে।
এনআরসি ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদের জন্য ছয় প্রার্থীকে শর্টলিস্ট করে এবং ২৭ জুলাই অনুষ্ঠিত একটি সাক্ষাৎকারের জন্য তাদের একটি চিঠি দেয়। পরে ডিএসইর পর্ষদ সভায় এনআরসি কমিটির সুপারিশ করা ছয় প্রার্থীর মধ্য থেকে তিনজনকে বাছাই করা হয়।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক আমিন ভূঁইয়া পদত্যাগের পর ডিএসইতে শীর্ষ নির্বাহীর পদটি শূন্য হয়। এর আগে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সানাউল হক ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন।
আরও পড়ুন:দেশের দুই পুঁজিবাজারের গতি ধীরে ধীরে আরও মন্থর হচ্ছে। গত কয়েকদিনে আলোচনায় থাকা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন আরও কমেছে মঙ্গলবার। ডিএসইতে এদিন মোট লেনদেন হয়েছে ৩ শ’ ৮৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা যা গত পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে চলতি বছরের মার্চ মাসের শেষ দিকে টানা কয়েকদিন চার শ’ কোটির নিচে হয়েছিল ডিএসইর লেনদেন।
ঢাকার বাজারে ক’দিন ধরেই কমছে মোট লেনদেনের পরিমাণ। দু’সপ্তাহ আগেও দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ৯ শ’ কোটির উপর। এমনকি জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে বাজার ইতিবাচক হওয়ার ইঙ্গিত দেখা দিয়েছিল। সেই মাসের ১৮ তারিখ ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৪৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র বিশ দিনের ব্যবধানে লেনদেন কমে এসেছে এক তৃতীয়াংশে।
মঙ্গলবার দিনশেষে অবশ্য ইতিবাচক দেখা গেছে ডিএসইর সবক’টি সূচক। প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন প্রায় ১৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৬ হাজার ৩ শ’ ১৫ পয়েন্টে। পাশাপাশি বেড়েছে ডিএস-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ সূচকটিও। তবে সূচক বাড়ার দিনেও লেনদেনে হতাশাজনক চিত্র দেখতে হয়েছে বিনিয়োগকারীদের।
এই বাজারে লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে এদিন দর বেড়েছে ১১০টির, কমেছে ৫২টির আর অপরিবর্তিত দেখা গেছে ১৭৫ টি কোম্পানির শেয়ার দর।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এদিন লেনদেনে শীর্ষ অবস্থানে দেখা যায় সি পার্ল বিচ রিসোর্টকে। কোম্পানিটির ২৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে এদিন। এ ছাড়া লেনদেনে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল খান ব্রাদার্স, তৃতীয় অবস্থানে সোনালী পেপার, চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে ছিল যথাক্রমে ফুওয়াং ফুড ও আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
এদিকে দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ-সিএসইতে মঙ্গলবার মোট লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। সিএসইতেও এদিন বেড়েছে সবগুলো সূচক।
আরও পড়ুন:মাসের শুরুর দিকে সাধারণত ইতিবাচক দেখা যায় পুঁজিবাজারের লেনদেন পরিস্থিতি। তবে বর্তমান নেতিবাচক বাজারের মাসে সপ্তাহের প্রথম দিনেও গতি ফিরে পাচ্ছে না পুঁজিবাজার। রোববার একদিকে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস, অন্যদিকে মাসের ৬ তারিখ হওয়ার পরও দেশের দুই পুঁজিবাজারের সবগুলো সূচকের পতন হয়েছে।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আজ (রোববার) প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) প্রায় ১৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান নিয়েছে ৬ হাজার ৩ শ ১৫ পয়েন্টে। প্রধান সূচকের পাশাপাশি ডিএসইর অন্য দুটি সূচকেও ছিল নেতিবাচক ধারা।
নির্বাচিত ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচকেও এদিন পতন হয়েছে প্রায় নয় পয়েন্ট। ডিএসই শরিয়াহ সূচক কমেছে প্রায় ৫ পয়েন্ট।
রোববার লেনদেনর খরাও প্রকট হয়েছে ঢাকার বাজারে। এদিন মোট লেনদেন হয়েছে ৪ শ’ ১৭ কোটি টাকা, যা এর আগের কর্মদিবস থেকে প্রায় ৬৮ কোটি টাকা কম। লেনদেনে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৩৯টির, কমেছে ১৩৪টির আর অপরিবর্তিত দেখা গেছে ১৬০টি কোম্পানির দর।
লেনদেন কমে যাওয়ার দিনে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত ফুওয়াং ফুডসের। এদিন কোম্পানিটির মোট লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ২৭ লাখ টাকার শেয়ার। এ ছাড়া লেনদেনে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে জেএমআই হসপিটাল। তৃতীয় অবস্থানেও ছিল ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত আরেক কোম্পানি লিগাসি ফুটওয়ার। চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে এদিন যথাক্রমে দেখা গেছে খান ব্রাদার্স ও আলিফ ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিডেটকে।
এদিকে নেতিবাচক লেনদেনের দিনে দাম বাড়ায় শীর্ষ অবস্থানে ছিল ‘জেড’ ক্যাটাগরিভুক্ত মেঘটা পেট্রোলিয়াম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এ ছাড়া আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, লিবরা ইনফিউশন, পিপলস ইন্সুরেন্স ও ড্যাফোডিল কম্পিউটারস ছিল লেনদেনে যথাক্রমে দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম অবস্থানে।
এদিন দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) কমেছে সবগুলো সূচক। এ বাজারের প্রধান সূচক (সিএএসপিআই) প্রায় ২৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান নিয়েছে ১৮ হাজার ৬ শ’ ৬৫ পয়েন্টে।
লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে এদিন সিএসইতে দর বেড়েছে ৩১টির, কমেছে ৭৫টির আর অপরিবর্তিত দেখা গেছে ৫০টি কোম্পানিকে।
চট্টগ্রামের বাজারে এদিন মোট লেনদেন কমে হয়েছে প্রায় ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন:ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে দেশের দুই পুঁজিবাজার। জুলাই মাসের শেষার্ধের নেতিবাচক প্রবণতা কাটিয়ে আগস্টের প্রথম দিনের চিত্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনেছে। তাদের প্রত্যাশা, এই ধারাটা মাস জুড়ে অব্যাহত থাকবে।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মঙ্গলবার প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে প্রায় ১৪ পয়েন্ট। সূচকটি এখন অবস্থান করছে ৬ হাজার ৩৩৮ পয়েন্টে।
পাশাপাশি ইতিবাচক ছিলো ডিএসইর অন্য দুটি সূচক ডিএস-৩০ ও ডিএসইএস বা শরিয়াহ্ সূচকও। অবশ্য এ দুটি সূচকে বড় কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি।
তবে সূচক ইতিবাচক থাকার পরও লেনদেনে আগ্রহ কম ছিলো বিনিয়োগকারীদের। দিন শেষে ঢাকার পুঁজিবাজারে মোট লেনদেন হয়েছে ৫৪৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় একশ ১৯ কোটি টাকা কম।
লেনদেন কিছুটা কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারী শরিফ জানান, গত মাসে তার হাতে থাকা শেয়ারের দাম বেশ খানিকটা কমেছে। মঙ্গলবার সেগুলো কিছুটা বাড়লেও এখনও তাকেনা দামে পৌঁছেনি। পুঁজিবাজার ভালো হবে আশাবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সব দিকের হিসাব মিলিয়ে দেখলে মনে হয় বাজারটা এখানেই থেমে থাকবে না। তাই কিছুদিন দেখে তারপর বিক্রি করবো।’
আরেক বিনিয়োগকারী রুবেল মিয়া জানালেন, তার যেসব শেয়ার কেনা রয়েছে তার মধ্যে কয়েকটা এখনও ফ্লোর প্রাইসে পড়ে আছে। লেনদেন বাড়লেই ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া হবে- এমন প্রত্যাশা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরাও চাই না এখনই ফ্লোর প্রাইস উঠুক। অনেক দিন ধৈর্য ধরেছি, আরও কিছুদিন ধৈয্য ধরতে চাই।’
সপ্তাহের তৃতীয় কার্য দিবসে মঙ্গলবার দেখা যায়, লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১১০টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের; যার বিপরীতে কমেছে ৬০টির। আর অপরিবর্তিত ছিলো ১৭০টি কোম্পানির শেয়ারদর। এর মধ্যে বড় একটি অংশের লেনদেন আটকে আছে ফ্লোর প্রাইসের কারণে।
এদিকে দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ-সিএসইতেও এদিন বেড়েছে সব সূচক। এই বাজারে দেখা যায় প্রধান সূচক সিএএসপিআই প্রায় ২৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৮ হাজার ৭১০ পয়েন্টে। সিএসইতে এদিন মোট লেনদেন হয়েছে ৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকার কিছুটা বেশি। আর লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৬৯টির ও কমেছে ৩৪টির। অপরিবর্তিত দেখা গেছে ৬৭টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দাম।
আরও পড়ুন:ধীরে ধীরে ডিজিটাল জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষ। ডিজিটাল প্রযুক্তি ও সেবা সহজলভ্য হওয়ার ফলে যেকোনো ধরনের তথ্য ও সেবা পাওয়া এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সহজ এবং কার্যকর হয়েছে।
দেশের পুঁজিবাজারও এর ব্যতিক্রম নয়। শেয়ার বাজারে ডিজিটাল সেবা হচ্ছে তথ্য ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বিনিয়োগসহ অন্যান্য আর্থিক সেবা প্রদানের ডিজিটাল ব্যবস্থা। ডিজিটাল ব্যবস্থায় বিনিয়োগকারীরা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, মোবাইল অ্যাপ এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারেন।
ডিজিটাল সেবার মাধ্যমে যেকোনো স্থানে বসেই সহজেই বিনিয়োগকারীরা নিজেরা তাদের পোর্টফোলিও পরিচালনা করতে পারবেন। এ মাধ্যমে লেনদেনও সম্পন্ন হয় দ্রুত সময়ে এবং এটা একই সঙ্গে ব্যয়সাশ্রয়ী, পাশাপাশি নিশ্চিত হয় স্বচ্ছতা।
একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ইলেকট্রনিক ট্রেডিংয়ের সূচনা হয়।
এর আগে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে শেয়ার কেনাবেচা হতো। পরে ২০১৬ সালে ডিএসই ট্রেডিং অ্যাপ উন্মোচন করে। বর্তমানে ডিএসই-তে ব্যবহার করা হচ্ছে সেন্ট্রালাইজড অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ‘ফ্লেক্স টিপি।’
ডিএসইর উদ্যোগের পরে নিজেদের সেবাকে বিনিয়োগকারীর আরও কাছে নিয়ে যেতে কিছু কিছু ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অথবা তৃতীয় পক্ষের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিজেদের কার্যক্রমে উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটাতে শুরু করেছে। তারা সেবা দিচ্ছে অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ওএমএস) অ্যাপের মাধ্যমে, যা সহজেই গুগল প্লে স্টোর অথবা অ্যাপল অ্যাপ স্টোর থেকে ডাউনলোড করা যাচ্ছে।
অনেক সময় দেখা যায়, ঝামেলা মনে করে অনেক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকছেন।
তবে ডিজিটাল সেবার আওতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন বিনিয়োগকারীরা বেশি সুবিধা পাচ্ছেন। অ্যাপের মাধ্যমে মোবাইল ফোনেই লেনদেন সম্পন্ন করা যাচ্ছে।
সে ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীকে জেনে নিতে হবে কোন অ্যাপটি পুঁজিবাজারে লেনদেনের জন্য সবচেয়ে ভালো। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীকে আরও কিছু বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো বিনিয়োগের উদ্দেশ্য, ঝুঁকি সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা রাখা এবং বিনিয়োগের ঝুঁকি গ্রহণে সক্ষমতা রয়েছে কি না তা জানা।
পুঁজিবাজারে লেনদেনের প্রক্রিয়া এবং ডিজিটাল সেবা সম্পর্কে বিনিয়োগকারীকে প্রথমেই জেনে নিতে হবে।
বাজারে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা এ খাতে দীর্ঘদিন কাজ করছে। লেনদেন, বিনিয়োগের গতিপ্রকৃতি, সেখান থেকে লাভবান হবার উপায়, নানা নিয়মনীতি ও পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারেন।
সম্প্রতি পুঁজিবাজারের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের অংশ হিসেবে ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে নিজস্ব অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ওএমএস) ব্যবহারের অনুমোদন দেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।
নিজস্ব ওএমএস ব্যবহার করে মার্জিন ঋণ ব্যবস্থাপনায় আরও দক্ষতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীসহ নতুন বিনিয়োগকারী যুক্ত করা সম্ভব।
ডিজিটাল সুবিধা প্রচলিত হওয়ার আগে পুঁজিবাজারের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে জানতে অনেক সময় ব্যয় করা লাগত, ব্রোকারেজ হাউস বা স্টক একচেঞ্জে সশরীরে হাজির থাকা লাগত।
ডিজিটাল মাধ্যমের সবচেয়ে বড় সুবিধাই হচ্ছে যেকোনো সময় যেকোনো স্থান থেকে লেনদেন করার সুযোগ পাবেন বিনিয়োগকারী।
সে ক্ষেত্রে এনবিএল সিকিউরিটিজসহ নানা প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করা যায়। যারা পুঁজিবাজারের লেনদেনকে ডিজিটাল মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের হাতের নাগালে নিয়ে আসতে কাজ করে যাচ্ছে।
শিগগিরই এনবিএল সিকিউরিটিজ চালু করবে এর নিজস্ব অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, যেন বিনিয়োগকারীরা যেকোনো স্থান থেকে অর্ডার পরিচালনা করতে পারেন।
পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে এবং তাদের সেবা প্রদানে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কল সেন্টার সেবা। প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিত ভিত্তিতে আর্থিক তথ্য ও গবেষণা প্রতিবেদনের মাধ্যমে এর ডিজিটাল সেবাকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজারে স্বাচ্ছন্দ্যে বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনায় উদ্ভাবনী নানা উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে এনবিএল সিকিউরিটিজসহ পুঁজিবাজারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। শেয়ারবাজারে আগ্রহীরা যেন ভবিষ্যতে সহজে ও দ্রুত সময়ে বিও হিসাব খুলতে পারেন এবং মার্জিন লোন সুবিধা ও অ্যাপের মাধ্যমে দেশ বা বিদেশের যেকোনো স্থান থেকে লেনদেন করার সুযোগ উপভোগ করেন, পাশাপাশি পুঁজিবাজার সম্পর্কিত তথ্য ই-মেইলে প্রদান করতে পারেন এ জন্য কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
এসব সিকিউরিটিজ প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ নিয়ে সবাইকে সচেতন করতে, তাদের আর্থিক প্রশিক্ষণে, বাজারে নতুন বিনিয়োগকারীদের অ্যাকসেস বৃদ্ধিতে এবং লেনদেন সুরক্ষিত করতেও ভূমিকা রাখছে, যা এ খাতের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। লেনদেন এবং এর মধ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়াই এ বিনিয়োগের কারণ।
এ ক্ষেত্রে কেবল পুঁজিবাজার বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা থাকলেই হবে না, পাশাপাশি তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক অবস্থা এবং লেনদেনের স্বচ্ছতা সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।
বাংলাদেশে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে অনেকে আগ্রহী হচ্ছেন। ডিজিটাল সেবাগুলো গ্রহণের মাধ্যমে তাদের এ কাজটি আরও সহজ ও কার্যকর হচ্ছে। বিনিয়োগ করার মধ্য দিয়ে এক দিকে যেমন বিনিয়োগকারী সফল হতে পারেন, অপরদিকে তেমনি সমৃদ্ধ হতে পারে তালিকাভুক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দেশের অর্থনীতি।
লেখক: জোবায়েদ আল মামুন হাসান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এনবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেড
আরও পড়ুন:
মন্তব্য