কৃষিনির্ভর মেহেরপুরে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দেশের অন্য জেলার চেয়ে একটু আগেই লিচুর মুকুল আসে। ফলনও আসে বেশ কিছুটা আগেভাগে। আগাম বাজারে আগাম লিচু ওঠায় দামও ভালো পাওয়া যাওয়ায় জেলার মানুষ ক্রমশ লিচু চাষে ঝুঁকছে।
কৃষি বিভাগও মৌসুমের শুরুতে আভাস দিয়েছিল, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারও লিচুর ভালো ফলন হবে।
তবে কুষ্টিয়ায় এবার তাপপ্রবাহের মাত্রা দেশের অন্য সব এলাকাকে ছাড়িয়ে গেছে। টানা রেকর্ড তাপমাত্র্রার পর তা বাড়তে বাড়তে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁই ছুঁই করছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে অনাবৃষ্টি।
আর এই বৈরী আবহাওয়ার কারণে মেহেরপুরে গাছেই লিচু ফেটে গিয়ে ঝরে পড়ছে। এ অবস্থায় কৃষকরা লিচুর ফলন ও দাম নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা দুঃস্বপ্নে পরিণত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কৃষি বিভাগ চাষিদের গাছের গোড়াই পর্যাপ্ত পানি দেয়া ও গাছে পানি স্প্রের পাশাপাশি কীটনাশক ও বালাইনাশক দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
তবে চাষিরা বলছেন, এসব পরামর্শ মেনে চলার পরেও গাছে লিচু ফেটে গিয়ে মাটিতে ঝরে পড়ছে। এগুলো করেও তারা তেমন কোনো ফল পাচ্ছেন না।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় চলতি মৌসুমে ৭৫০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল আনুমানিক ৭ হাজার ৫শ টন।
গাংনী উপজেলার কাজিপুর গ্রামের লিচু চাষি দুলাল বলেন, ‘এবার আমাদের শতাধিক গাছে লিচুর মুকুল আসার পর প্রচুর পরিমাণে লিচুর গুটি দাঁড়িয়েছিল। মাসখানেক আগে একবার বৃষ্টি হওয়ায় গাছে থাকা লিচু দ্রুত বাড়তে থাকে। হঠাৎ টানা দশদিনের প্রচণ্ড গরমে সব শেষ হয়ে গেল। আর হয়তো দশ থেকে পনের দিনের মধ্যে লিচু খাওয়ার উপযোগী হয়ে যাবে। এমন সময় গাছে লিচু শুকিয়ে ফেটে যাচ্ছে। আবার অধিকাংশ লিচু ঝরে পড়ছে মাটিতে।’
একই উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামের লিচু বাগান মালিক সৈকত মেম্বার বলেন, ‘আমার প্রায় পাঁচ বিঘা লিচুর বাগান রয়েছে। প্রতিটি গাছের বয়স চৌদ্দ/পনের বছর করে হবে। শুরুতে গাছ ভর্তি মুকুল এসেছিল। সেই মুকুলের পরিচর্যা করার এক পর্যায়ে এসে এখন বিপাকে পড়ে গেছি। সব ফল গাছে ফেটে যাচ্ছে। এখন বৃষ্টি না হলে তেমন ফল পাওয়া যাবে না। ফলে লোকসানে পড়তে হবে।’
বামন্দী গ্রামের লিচু বাগান মালিক আরিফুল বলেন, ‘আমাদের গাছের লিচু আর কিছুদিন পর বাজারজাত করা যাবে। এমন সময় লিচু গাছেই ফেটে গিয়ে ঝরে পড়া রোধ করা যাচ্ছে না।’
মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, ‘এ অঙ্কলের ওপর দিয়ে মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। পশুপাখি, ফল-ফলারি ও জনজীবনে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ থেকে ফল ও ফসল রক্ষায় কৃষি বিভাগ অবশ্য সার্বক্ষণিক চাষিদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।’
আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, দ্রুতই বৃষ্টিপাত হতে পারে। বৃষ্টিপাত হলেই এ সমস্যা অনে কেটে যাবে। তাছাড়া বতর্মান সময়ে গাছের গোড়া ও গাছে পর্যাপ্ত পানি দিতে হবে। জেলায় চলতি মৌসুমে ৭৫০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল আনুমানিক ৭ হাজার ৫শ টন।
ছবি ক্যাপশনঃ মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বামন্দী গ্রামের আরিফুল ইসলামের বাগান থেকে তোলা।
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘দেশে জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। তেল ও সারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে। তবে চালের দাম কম।’
রোববার টাঙ্গাইলের নাগরপুরে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কৃষিমন্ত্রী। মঞ্চে ওঠার আগে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিদেশিরা কী বললো তাতে আমরা গুরুত্ব দেই না। তারা লন্ডনে বসে, নিউ ইয়র্কে বসে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালো বলতে পারবে না।
‘নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করবে। দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
মূল্যস্ফীতি সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আলু, পেঁয়াজ, রসুন- এগুলোর দাম নির্ধারণ হয় আবাদের ওপর ভিত্তি করে। আর কৃষি সবসময় প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। এখন বৃষ্টি হচ্ছে না। এটা নিয়ে কৃষিমন্ত্রী হিসেবে আমি শঙ্কিত। পেঁয়াজের দাম অনেক বেড়েছে। গত বছর আলু বিক্রি করতে না পেরে অনেকে আলু ফেলে দিয়েছে।’
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘তাকে সর্বোচ্চ ভালো হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ডাক্তাররা প্রতিনিয়ত তার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।’
জোয়াহেরুল ইসলাম এমপি, আহসানুল ইসলাম টিটু এমপি, তানভীর হাসান ছোট মনির এমপি, আতাউর রহমান খান এমপি, হাসান ইমাম খান এমপি, খান আহমেদ শুভ এমপি, সানোয়ার হোসেন এমপিসহ দলের জেলা ও উপজেলার নেতৃবৃন্দ এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
আরও পড়ুন:প্রযুক্তির ব্যবহারে কুমিল্লার কৃষিকাজে ব্যাপক পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। বীজতলা তৈরী, চারা রোপন, ধান কাটা, বস্তাবন্দি করা- সবই হচ্ছে যন্ত্রের মাধ্যমে। এতে একদিকে যেমন সময়ে মধ্যে কাজ শেষ করা যাচ্ছে, অন্যদিকে খরচ কমায় খুশি কৃষক।
সম্প্রতি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজলার প্রত্যান্ত গ্রাম নবীপুরে ঘুরে দেখা যায়, সেখান জমি মাঝারি-উঁচু। বোরো, আউশ ও আমন- তিন মৌসুমেই ধানের আবাদ হয় ওই এলাকায়। ধানের চারা রোপনের সময় কষ্ট কম হলেও মাড়াইয়ের সময় বেশ পরিশ্রম করতে হয় নারীদের। পায়ে চাপা মেশিনে বা হাতে পিটিয়ে ধান সংগ্রহ করতে হয় তাদের। এতে রাত-দিন একাকার হয়ে যায় তাদের। ধানের মরসুমে রান্না, খাওয়া-দাওয়া সঠিক সময়ে করতে পারেন না কিষান-কিষানীরা। তবুও যেন তাদের কাজ শেষ হয় না।
তবে দীর্ঘকালের এই কষ্টের যন্ত্রণা বোধ হয় এবার শেষ হলো। যন্ত্রের ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে কৃষকদের জীবন।
জমিত থাকা ধান মেশিন থেকে বস্তায় ভরে একবারে বাড়ি ফিরছেন কৃষকরা। নেই ধানকাটা, মাড়াইয়ের মতো কোনো ঝামেলা।
ওই গ্রামের কিষাণী সালমা বেগম ও মাজেদা খাতুন বলেন, ‘একপাশ দিয়া চোখের নিমেষে ধানকাটা শেষ, অন্য পাশে গরগর শব্দে বস্তায় ধান ঢুকছে। মনে হয় জাদুর মেশিন। চোক্ষের পলকে কাম শেষ অইয়া যায়।’
দীর্ঘদীন প্রবাসে ছিলেন নবীপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম। দেশে এসে নিজের জমিতে চাষাবাদ শুরু করেন। তার একটি ধান লাগানোর ট্রান্সপ্লান্টার রয়েছে। ট্রেতে চারা রোপন করেন তিনি। ট্রেতে থাকা চারা মেশিন দিয়ে লাগানোতে সময় কম লাগে। পরিশ্রম ও সময় কমে যাওয়ায় এক ফসল উঠে গেলে আরেক ফসলের জন্য জমি প্রস্তুত করার সময়ও কমেছে। এতে তিন ফসলের মাঝে সরিষার মতো অল্প সময়ে চাষ করা যায় এমন আরেকটা ফসলও করতে পারছেন তিনি।
নজরুল বলেন, ‘প্রথম দিকে যখন মেশিনে ধান লাগাতে যেতাম, অনেকে হা করে তাকিয়ে থাকতেন।’
কুমিল্লা সদর উপজলার যশপুর গ্রামের আবদুল খালেক। তার হার্ভেস্টার রয়েছ। তিনি বলেন, ‘এক একর জমির ধান কাটা, মাড়াই করতে ঘণ্টাখানেক সময় লাগে। খরচ লাগে ৭ হাজার টাকা। অথচ ওই পরিমাণ জমির ধান শ্রমিক দিয়ে কাটালে একদিন সময় লাগে; খরচ লাগে ১৪ হাজার টাকা।’
আবদুল খালেক জানান, তার পাশের এলাকা শিমপুর, পান্ডানগর, শিমড়া, বামইল ও শ্রীপুরের দুই-তৃতীয়াংশ জমির ধান মেশিনের মাধ্যম কাটা হয়। এত কৃষকের খরচ অর্ধেক কমে গেছে; কমেছে পরিশ্রম। এর মাধ্যমে অন্তত ১৫ ভাগ ধানের অপচয় রোধ করা সম্ভব হয়েছে।
কষি যান্ত্রীকিকরণ প্রকল্প সূত্র জানায়, উপকূলীয় ও হাওড় এলাকার ৭০ ভাগ ও অন্যান্য এলাকায় ৫০ ভাগ ভর্তুকিতে ১২ ক্যাটাগরির কৃষি যন্ত্র বিতরণ করছে সরকার। ইতোমধ্যে দেশে প্রায় ৩৪ হাজার যন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। কুমিল্লায় ৫৬টি হার্ভেস্টারসহ ৯৬টি কৃষি যন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রীকিকরণ প্রকল্পের পরিচালক তারিক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘কুমিল্লায় দীর্ঘদিন কাজ করছি। এখানকার কৃষক এখন আধুনিক। জেলায় দিন দিন কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে।’
তিনি জানান, তিন বছর আগে দেশে মেশিনে ৪ ভাগ ধান কাটা হলেও বর্তমান তা ১৭ ভাগে উন্নীত হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ জমি যন্ত্রের মাধ্যমে চাষাবাদের আওতায় আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রান্তরজুড়ে লালশাক। নারী-পুরুষ একযোগে শাক তুলে বাঁধছেন আটি। পাইকাররা গুনেগুনে গাড়িভর্তি করছেন লালশাকে।
এমন দৃশ্যের দেখা মেলে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার আবিদপুর গ্রামে।
স্থানীয়রা জানান, লালশাক শীতকালীন হলেও আগাম চাষে ভালো মুনাফা হয় বলে চাষিদের আগ্রহ বাড়ছে মৌসুম ভিন্ন সময়ে এ শাক চাষে।
বুড়িচং উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শনিবার বিকেলে ঘুরে দেখা যায়, শীতকালীন শাকসবজি চাষ ও ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। এখন মাঠে রঙিন হয়ে আছে লালশাক।
আবিদপুর গ্রামের কৃষক বিল্লাল হোসেন জানান, তিনি এ বছর ৪৫ শতাংশ জমিতে লালশাক চাষ করেছেন। খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। সবকিছু ঠিক থাকলে তার অন্তত ৫০ হাজার টাকা মুনাফা হবে।
গোবিন্দপুর গ্রামের এমদাদুল হক বলেন, ‘২০০ শতক জমিতে লালশাক চাষ করেছি এবার। ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। ২০ দিন আগে রোপণ করা লালশাক। এখন বাজারজাত করার সময় হয়েছে। শ্রমিক, সার ও বীজ খরচ বাদে এবার মুনাফা হবে অন্তত ৫০ হাজার।’
স্থানীয় কৃষক বিল্লাল হোসেন, শরীফ মিয়া ও আবদুস সালাম জানান, গেল মাস ও চলতি মাসে দুই দিন ভারি বৃষ্টি হয়। এ দুই দিনের বৃষ্টিতে জমিতে থাকা ছোট লালশাক নষ্ট হয়ে যায়, তবে তারা দমে যাননি এতে। জমি প্রস্তুত করে আবারও লালশাক রোপণ করেছেন।
ভালো ফলনে উৎফুল্ল কৃষকরা বলেন, মাঠে এখন হাসছে লালশাক। দূরদুরান্ত থেকে পাইকাররা আসছেন। লালশাক কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। হাটে নেয়ার খরচ লাগছে না।
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা কৃষি অফিসার আফরিণা আক্তার বলেন, ‘এ বছর বুড়িচং উপজেলায় আগাম লালশাক করা হয়েছে ২৫ হেক্টর জমিতে। শীতকালে এ চাষ আরও বেড়ে যাবে। তখন লক্ষ্যমাত্রা হবে ১২৫ হেক্টর জমি। শীতকাল আসা পর্যন্ত চাষিরা আরও অন্তত তিন থেকে চারবার লালশাক চাষ করবেন।
‘এখন মাঠে আগাম লালশাক রোপণ করেছেন চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। চাষিরা ভালো মুনাফা করতে পারবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তারাও মাঠে চাষিদের পরামর্শ দিতে যাচ্ছেন।’
আরও পড়ুন:জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ যমুনা সার কারখানায় (জেএফসিএল) ইউরিয়া উৎপাদন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ গ্যাসের চাপ কমিয়ে দেয়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকে কারখানায় ইউরিয়া উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানির উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখার স্বার্থে যমুনা সার কারখানার গ্যাস সরবরাহ কমানো হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জেএফসিএল সূত্র জানায়, বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প সংস্থার (বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন কেপিআই-১ মানসম্পন্ন যমুনা সার কারখানা প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে দৈনিক এক হাজার ৭০০ টন ইউরিয়া উৎপাদন করে আসছিল৷ কয়েক বছর ধরে গ্যাসের চাপ স্বল্পতা ও মেশিনারিজ ত্রুটির জন্য উৎপাদন কমে এসেছে।
বর্তমান সময়ে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টন পর্যন্ত উৎপাদন হচ্ছিল। এর মধ্যে প্রতিবছর দুই-একবার কর্তৃপক্ষ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করায় এ কারখানায় সার উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হয়ে আসছে।
এদিকে সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) বেলা আড়াইটা থেকে কারখানায় গ্যাস সরবরাহে চাপ হঠাৎ কমে যায়। ফলে মঙ্গলবার সকাল থেকে কারখানার ইউরিয়া সার উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সম্প্রতি ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানিতে সার উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিসিআইসি। এজন্য সেখানে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে যমুনা সার কারখানায় গ্যাসের চাপ কমিয়ে দেয়া হয়েছে।
জেএফসিএল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘যমুনা সার কারখানায় উৎপাদিত সারের গুণগত মান অন্য যেকোনো কারখানার চেয়ে ভালো। এই কারখানায় উৎপাদিত সার বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ উত্তরাঞ্জলের ২০টি জেলার চাহিদা পূরণ করে আসছে। বর্তমানে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা শঙ্কিত। দ্রুত এখানে প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করে উৎপাদন চালুর দাবি জানাচ্ছি আমরা।’
এ ব্যাপারে যমুনা সার কারখানার ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) দেলোয়ার হোসেন মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদনের জন্য দৈনিক ৪২ থেকে ৪৩ পিএসআই গ্যাসের চাপ প্রয়োজন। এই চাপ ৯ পিএসআইয়ে নেমে এলে তখন তো আর উৎপাদন সম্ভব হয় না।’
তিনি জানান, কারখানায়র গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি গ্যাস স্বল্পতার কথা জানায়। গ্যাস স্বল্পতায় সোমবার দুপুর থেকেই উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছিল। বর্তমানে বিদ্যুৎ ও ইউটিলিটি উৎপাদন চালু থাকলেও সার উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
পুনরায় উৎপাদন চালুর ব্যাপারে নিশ্চিত বলতে না পারলেও কমান্ড এরিয়ায় সারের ঘাটতি নেই বলে জানান তিনি।
চা শিল্পের জন্য মজুরি বোর্ড প্রকাশিত গেজেট পুনর্বিবেচনা ও শ্রমিকবান্ধব গেজেটের দাবিতে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-দলই ভ্যালি কার্যকরী পরিষদ (বাচাশ্রই) শ্রম প্রতিমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছে।
বাচাশ্রই সভাপতি ধনা বাউরির নেতৃত্বে চা শ্রমিকরা রোববার দুপুরে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ইউএনও জয়নাল আবেদিনের কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপির কপি হস্তান্তর করেন।
স্মারকলিপিতে চা শিল্পের রীতি অনুযায়ী টি গার্ডেন শিল্প সেক্টরের চা শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে মালিকপক্ষের প্রতিনিধিত্বকারী বাংলাদেশ চা সংসদ প্রতি ২ বছর অন্তর মজুরি ছাড়াও উৎপাদনশীলতাসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা করে সমঝোতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
ধনা বাউরি বলেন, ‘১০ আগস্ট চা শিল্পের জন্য সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ড একটি গেজেট প্রকাশ করে। গেজেটে বছরে মাত্র ৫ শতাংশ হারে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির কথা বলা হয়। কিন্তু বর্তমান বাজারে বছরে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। সেখানে শ্রমিকরা কিভাবে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকবে? মজুরি বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী তিনটি শ্রেণিতে শ্রমিকদের জন্য ১৭০ টাকা, ১৬৯ টাকা, ১৬৮ টাকা ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ কিছুদিন আগেই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে ১৬৯ ও ১৬৮ টাকায় নামিয়ে আনার বিষয়টি আমাদের বোধগম্য নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘গেজেটে বলা হয়েছে শ্রমিক কর্মচারী ও পরিবারকে বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা চলমান থাকবে। বাস্তবে দেখা যায় ৭০০ শ্রমিকের জন্য একজন এমবিবিএস ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও প্রায় চা বাগানে ডাক্তার নেই। ৫ থেকে ৭টি চা বাগান মিলিয়ে একজন ডাক্তার থাকেন। প্রদত্ত চিকিৎসা ও ওষুধ পর্যাপ্ত নয়।’
বাচাশ্রই-এর সহ-সভাপতি গায়েত্রি রাজভর, সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাস পাইনকা, শ্রমিক নেতা বাবুল মাদ্রাজি, নূরজাহান চা বাগান সভাপতি বিকস কানু, ডেবল ছড়া চা-বাগান সভাপতি সঞ্জু তাঁতি, ফুলবাড়ি চা বাগান সভাপতি মনোরঞ্জন, মদন মহনপুর চা বাগান সভাপতি উমা সংকর গোয়ালী, সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত কানু, মাঠ কর্মী চা নেতা সংকর তাঁতি, ভ্যালির অফিস সহকারী রাজীব কৈরীসহ উপজেলার ২৩টি চা বাগানের নেতৃবৃন্দ ও শতাধিক চা শ্রমিক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:জমিতে একবার চারা রোপণ করে পাঁচবার ফলন দেয়া পঞ্চব্রীহি ধান উদ্ভাবন করেছেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী।
বিডিওএসএন-এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরীক্ষামূলকভাবে এ এলাকায় চাষ করা নতুন এই জাতের ধানক্ষেত থেকে এর আগে একবার ফসল উত্তোলন করা হয়েছে। এ বছর দ্বিতীয় বারের মতো ফসল উৎপাদন চলছে।
কৃষি খাতের উদ্ভাবনে বিডিওএসএন প্রথমবারের মতো কোনো গবেষণাভিত্তিক কৃষি প্রকল্প পরিচালনায় সহযোগিতা করছে, যেটি পঞ্চব্রীহি জাতের ধানের মাধ্যমে কম খরচে খাদ্যের চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখতে পারে।
বুধবার সকাল ১১ টার দিকে পঞ্চব্রীহি চাষাবাদ পরিদর্শনে আসে কুলাউড়া উপজেলার দুটি উচ্চবিদ্যালয়ের অন্তত ৪০ জন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর গ্রামে টিলাগাঁও আজিজুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় ও কানিহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষা সফরে আসেন ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা।
সরেজমিনে এক রোপণে পাঁচ ফলন দেখে প্রথমেই নতুন জাতের এ ধানের উদ্ভাবক ড. আবেদ চৌধুরীকে ধন্যবাদ জানান টিলাগাঁও আজিজুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘উনার এই উদ্ভাবন আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। এখানে সবাই বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা এসেছে। আজকে এই শিক্ষা সফর শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে বিজ্ঞান শেখায় আগ্রহী করে তুলবে।’
এ সময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে IVEMRVM প্রকল্প সুপারভাইজার তাহমিদ আনাম চৌধুরী বলেন, ‘আপনারা সবাই এই এলাকার বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী। আপনাদের এই এলাকায় আমরা নতুন জাতের একাধিকবার ফলনশীল ধান নিয়ে কাজ করছি। আপনারা প্রতিনিয়ত এই কৃষি জমির দিকে লক্ষ্য করলে বিজ্ঞানের সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারবেন। এটা আপনাদের বিজ্ঞানকে জানা ও শেখার আগ্রহকে আরও ত্বরান্বিত করবে।’
পঞ্চব্রীহি মাঠের ধান পরিদর্শন শেষে গাছতলায় শিক্ষার্থীদের সামনে সমাপনি বক্তব্যে কানিহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.ফজল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা আজকে পঞ্চব্রীহি ধান দেখলাম। এখন আমাদের বেশিরভাগ পরিবার কৃষিকাজ করে না। কিন্তু আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান দেশ। আমরা যদি বাংলাদেশকে কৃষির মাধ্যমে এগিয়ে নিতে চাই, তাহলে আমাদের প্রচুর সম্ভাবনা আছে। এখনও আমাদের দেশে যে প্রাকৃতিক পরিবেশ আছে, তা অন্যান্য দেশে নাই। তাই আমরা যদি এই প্রাকৃতিক পরিবেশ ও কৃত্রিম সাপোর্ট, এই দুইয়ের সমন্বয়ে এগিয়ে যেতে পারি এবং ড. আবেদ চৌধুরীর মত সফল মানুষ যারা, তাদের সহযোগিতা যদি পাই, তাহলে এই দেশ একদিন কৃষির মাধ্যমে বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হবে।’
বাংলাদেশ বর্তমানে ধান উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
বুধবার দুপুরে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ভেড়া, ভেড়ার খাবার ও গৃহ নির্মাণ সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন মাছ উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়, সবজি উৎপাদনে দ্বিতীয়, মাংস ও ডিম উৎপাদনেও সাবলম্বী হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।’
অনুষ্ঠানে নারী বিষয়ক অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী ৫০ জনের মাঝে ৬ লাখ টাকার চেক, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে ২৩ জনের মাঝে জটিল রোগের চিকিৎসা বাবদ ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকার চেক বিতরণ করেন মন্ত্রী।
এসময় সাধন চন্দ্র বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্ব দিয়ে প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় আনার নির্দেশনা দিয়েছেন। বিষয়টি অনুধাবন করে উৎপাদন বাড়াতে মনোযোগী হয়েছেন কৃষকরাও।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কর্মসংস্থানের ওপর জোর দিয়েছেন। যারা ভেড়া পালন করবেন তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ভেড়া ভালোভাবে পালন করতে পারলে এর মাধ্যমেই তারা কর্মসংস্থান করে নিতে পারবেন। পরিবারে তিনি কর্মক্ষম সদস্য হিসেবে মর্যাদা পাবেন।’
গ্রামীণ নারীরা সেলাই মেশিনের মাধ্যমেও আয়বর্ধক কাজে যুক্ত হয়ে নিজেদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন করছেন বলে এসময় উল্লেখ করেন খাদ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানের আগে খাদ্যমন্ত্রী উপজেলা পরিষদের পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য