দুদিনের মতো ২০০ টাকার ঘরে থাকার পর ব্রয়লার মুরগির দাম আবার বেড়েছে। শুক্রবার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়।
গত বেশ কিছু দিন ধরে দেশের বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম নিয়ে ‘অরাজকতা’ চলছিল। ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা মধ্যে প্রতি কেজি ব্রয়লারের দাম হাঁকিয়েছিলেন বিক্রেতারা। তবে এর কয়েক দিন পরই জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করা দেশের ‘বিগফোর’ খ্যাত চারটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে তলব করলে দাম কিছুটা কমে ২০০ টাকার ঘরে এসেছিল।
ক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা চাইলেন দাম বাড়ে, তারা চাইলেই দাম কমে। এই ‘সিন্ডিকেট’ থেকে মুক্তি চান ক্রেতারা।
শুক্রবার রাজধানীর বাড্ডা, কারওয়ান বাজার, নাখালপাড়া কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লারের দাম গত সপ্তাহে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল, ভোক্তার তলবের পর চার প্রতিষ্ঠান আশ্বাস দেয় খামার পর্যায়ে ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা বিক্রি করার। সেই আশ্বাসের পর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। মিলগেটে বিক্রি হয় ১৫৫ টাকায়। তবে তার দুদিন পরই এই দাম আরেকবার লাফ দেয়। বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। এ ছাড়া লেয়ার মুরগি ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হতে দেখা গেছে ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা কেজিতে।
বাড্ডা বাজারে ব্রয়লার মুরগি কিনতে আসা আনোয়ার হোসেন সবুজ বলেন, ‘দেখলাম ব্রয়লারের দাম একটু কমেছে। এখন বাজারে এসে দেখি আবার ২০ টাকা কেজিতে বেড়ে গেছে। দুই দিনের ব্যবধানে কেজি ৬০-৮০ টাকা কমিয়ে তারা কীভাবে ২০০ টাকা বিক্রি করছিল? এখন তাহলে আবার কেন কেজিতে ২০ টাকা বাড়িয়ে দিল? তাহলে তো বোঝাই যাচ্ছে এগুলোর দাম তারা নিজের ইচ্ছেমতো বাড়ায় ও কমায়। এসব সিন্ডিকেট থেকে মুক্ত হওয়া দরকার।’
এদিকে অপরিবর্তিত রয়েছে গরুর মাংসের দাম। বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজিতে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১১৫০ টাকা কেজিতে। আর ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০৫০ টাকা কেজিতে।
গত সপ্তাহের মতোই প্রকারভেদে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি, বুটের ডালের বেসন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়, খেসারি ডালের বেসন ১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহেও একই দাম ছিল। মোটা মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা, আর চিকন মসুর ডাল ১৪৫ টাকায় অপরিবর্তিত দরে বিক্রি হচ্ছে। চিনির মূল্য গত সপ্তাহের সমান ১২০ টাকা কেজি, মুড়ি ৮০ টাকা, বেগুনের দর ৮০ টাকা, আলুর কেজি ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেবুর দাম কিছুটা কমে প্রকারভেদে হালি ৩০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজির মধ্যে সবগুলোর দামই গত সপ্তাহের তুলনায় অপরিবর্তিত রয়েছে। করলা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায় এবং শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। প্রতি কেজি পটলের দাম ৭০ টাকা, ঝিঙ্গা ৭০ টাকা, আলু ২০-২৫ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকার মধ্যে রাখা হচ্ছে। লাউ প্রকারভেদে প্রতিটি ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজার স্থিতিশীল
বাজারে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের মাছের দাম গত সপ্তাহের মতোই রয়েছে। রুই আকারভেদে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা প্রতি কেজিতে। তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়।
দাম অপরিবর্তিত থাকার ব্যাপারে নাখালপাড়া কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী সোহেল হোসাইন বলেন, ‘রোজা এলে সবকিছুর দামই একটু বাড়তির দিকে থাকে। তবে রোজার কয়েক দিন যাওয়ার পর থেকেই দাম কমা শুরু করে। তাই গত সপ্তাহে যেসব পণ্যের দাম কমেছিল, সেগুলো আগের দরেই আছে। রোজার আরও কিছুদিন পর আরেকটু কমতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘এখন কমা বা আগের দাম থাকলেও ঈদের কয়েক দিন আগে আবার কিছুটা দাম বাড়বে। বুঝেনই তো, মানুষ ঈদের আগে একটু কেনাকাটার পরিমাণ বাড়িয়ে দেন। তাই চাহিদাও বাড়ে, দামও বাড়ে। তবে দাম কম থাকলে আমাদের বেচাকেনা বেশি হয়।’
আরও পড়ুন:বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী দেশ সৌদি আরব জুলাই থেকে পণ্যটির উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দিয়েছে।
দেশটি রোববার জানিয়েছে, আগামী মাস থেকে দৈনিক কম উৎপাদন করা হবে ১০ লাখ ব্যারেল তেল।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ওপেক+ জোটভুক্ত দেশগুলোর তেলের দামে নিম্নমুখিতা ও সম্ভাব্য সরবরাহ আধিক্যের মধ্যে উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নিল সৌদি।
রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন জোট ওপেক+ সদরদপ্তর ভিয়েনায় সাত ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা শেষে তেল উৎপাদন নিয়ে চুক্তি হয়।
এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সৌদির জ্বালানিমন্ত্রী আবদুলাজিজ বিন সালমান বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য বিশাল দিন। কারণ চুক্তির মান নজিরবিহীন।’
তিনি বলেন, উৎপাদনের নতুন যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে, সেটি অনেক বেশি স্বচ্ছ ও ন্যায্য।
সৌদির মন্ত্রী আরও জানান, জুলাইয়ের পর প্রয়োজনে তেল উৎপাদন আরও কমানো হবে।
ওপেক+ জোটের চুক্তি অনুযায়ী, সৌদির তুলনায় রাশিয়া, নাইজেরিয়া ও অ্যাঙ্গোলা উৎপাদনে কাঁটছাঁট আরও কম করবে। অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে তেল উৎপাদন বাড়ানোর অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
ওপেক+ সদস্য রাষ্ট্রগুলো বিশ্বে মোট উৎপাদিত অশোধিত তেলের ৪০ শতাংশের জোগান দেয়। জোটের নীতিগত কোনো সিদ্ধান্তের বড় প্রভাব পড়তে পারে তেলের দামে।
আরও পড়ুন:বাজারে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সোমবার থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিচ্ছে সরকার।
রোববার বিকেলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সোমবার থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেবে কৃষি মন্ত্রণালয়। পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের, শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট লাঘবসহ সব ভোক্তার স্বার্থরক্ষায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
গত রমজান মাসের আগেও প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩০-৩৫ টাকায় কিনতে পেরেছেন ভোক্তারা। এরপর দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে এখন ১০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্য।
আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট পেঁয়াজের দাম আরও বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। ক্রেতাসাধারণের কথা চিন্তা করে শেষ পর্যন্ত সরকার আমদানিরই সিদ্ধান্ত নিল।
সবজির দাম যেমন ছিল গত কদিন ধরে, প্রায় তেমনই আছে এখনও। তবে মাছের দাম বেড়েছে কিছুট। মাংসের দামও আছে আগের মতো।
শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনে রাজধানীর মহাখালী, আরজতপাড়া ও মধ্যবাড্ডার বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি। কচুরমুখী বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি দরে। করলা ও কাকরোল ৮০ টাকা কেজি, কচুরলতি কেজিপ্রতি ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, পেঁপে, ধুন্দল, পটল, বরবটি, শসা ও টমেটো ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ঢেঁড়শ ও বেগুন ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। কাঁচামরিচের দাম কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি দরে। আর পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকা।
গত সপ্তাহের মত গরুর মাংস, সোনালী মুরগি এবং ডিমের দাম অপরিবর্তত থাকলেও কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম।
গত সপ্তাহের তুলনায় প্রকারভেদে মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৫০ থেকে ২০০ টাকা। ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এক কেজি ওজনের ইলিশ। ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি দরে।
আইড় মাছ প্রতি কেজি ১৪০০ টাকা, রুপচাঁদা প্রতি কেজি ১৬০০ টাকা, আকার ভেদে পুঁটি মাছ প্রতি কেজি ৫০০-৭০০ টাকা, বড় সাইজের গলদা চিংড়ি প্রতি কেজি ১৩০০-১৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে রুই মাছ। কাতল মাছে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা, বাইলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা কেজি দরে।
হাইব্রিড তেলাপিয়া মাছ গত সপ্তাহে ২০০ টাকা দামে বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। পাঙাশ মাছ প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি কই বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকায়, শিং প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়।
আরও পড়ুন:
সরকার নির্ধারিত মূল্যের তোয়াক্কা না করে কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেশি দামে ১৪০ টাকা দরে খোলা চিনি বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এর সঙ্গে রাজধানীর বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে প্যাকেটজাত চিনি।
নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকার পাইকারি বাজার ঘুরে প্যাকেটজাত চিনি খুব একটা চোখে পড়েনি শুক্রবার। ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্যাকেটজাত চিনি সরবরাহ ঠিক থাকলে চিনির বাজরের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকত।
শুধু চিনি নয়, সবজি থেকে শুরু করে মুরগি, মাছ, মসলা, পেঁয়াজ, তেল- সবকিছুর ঝাঁজ যেন ক্রেতাসাধারণের নাগালের বাইরে। তবে তুলনামূলক স্বস্তি আছে শাকে। ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০ টাকার মধ্যে সব ধরনের শাক পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া চালের বাজার কিছুটা অপরিবর্তিত থাকলেও মসলার বাজারে আগুন ছড়িয়েছে যেন।
বুধবার খোলা চিনি প্রতি কেজির দাম বেড়ে হয় ১২০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি প্রতি কেজির দাম বেড়ে হয় ১২৫ টাকা। তবে বাজারে গিয়ে পাওয়া যায় ভিন্ন পরিস্থিতি।
তেজগাঁওয়ের মরন আলী রোডে শাহরাস্তি জেনারেল স্টোরে গিয়ে প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া যায়নি। খোলা চিনি থাকলেও তা বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে।
একই অবস্থা কারওয়ান বাজারের পাইকারি দোকানগুলোতে। সেখানে গিয়েও প্যাকেটজাত চিনি চোখে পড়ল না। পাশাপাশি খুচরা চিনি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা বেশি দামে।
খুচরা বাজরে প্রায় সব সবজির দাম কেজিপ্রতি ৮০ টাকা। শুধু টমেটো ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ও চিচিঙ্গা ৭০ টাকা বিক্রি করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে পেঁপে ৮০ টাকা। বেগুনও ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। তবে কারওয়ান বাজারে এসব সবজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। কলমি শাক ১০ টাকা আঁটি, লালশাক ১৫ টাকা, লাউশাক ও পুঁইশাক ৩০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহে যে মাছ ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়েছে, সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০০ টাকা। রাজধানীর খুচরা বাজারে শোল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা কেজি। শিং ৬০০, বেলে ৬০০, চিংড়ি ৭৬০, ইলিশ ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের কেজি ১ হাজার ২০০ টাকা।
মাছ বিক্রেতা বিপদ চন্দ দাস বলেন, ‘গত সপ্তাহের তুলনায় মাছের বাজারে কেজিপ্রতি ১০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। শিং, বেলে এখন ৬০০ টাকা। সব জিনিসের দাম বেশি। মানুষ দাম শুইনা চইলা যায়।’
এ ছাড়া খাসির মাংস ৯৫০ টাকা। গরুর মাংস ৮০০ টাকা কেজি, ব্রয়লার মুরগি ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আলু ৩৫ টাকা, পেঁয়াজ ৭০ টাকা, রসুন ১৬০ টাকা ও আদা ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ানবাজারের আল্লাহর দান জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী ওমর ফারুক বলেন, ‘সব মালের দাম বাড়তি। চালের দাম আগের রেটে আছে। বাড়ছে তেল, চিনি, জিরা, মসলার দাম। আগে বেচতাম ৫ লিটার তেল ৮৮০, এখন ৯৪০ টাকা। চিনি গত সপ্তাহে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা, এ সপ্তাহে ৩৫ টাকা। প্যাকেট চিনি পাচ্ছি না। মসুর ডাল ১৩৫ টাকা। মিনিকেট চাল ৭৬, নাজিরশাইল ৭৫ টাকা। পোলাওয়ের চাল ১৪০ টাকা।’
আরও পড়ুন:চিনি আমদানিতে শুল্কছাড়ের মেয়াদ বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম ও ডলারের মূল্য বাড়ায় এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে বুধবার আমদানি করা খাদ্যের মান নিশ্চিতকরণে আমদানি নীতি আদেশ-২০২১, ২০২৪ সম্পর্কে স্টেকহোল্ডারদের অবহিতকরণবিষয়ক কর্মশালা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘চিনির শুল্কছাড় ৩১ মে শেষ হবে। এটা অব্যাহত রাখতে আমরা এনবিআরকে চিঠি পাঠাব। যেহেতু চিনির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, এ জন্য শুল্কহার আরও কমানোর সুপারিশ করব।’
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত চিনির দাম ও ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় চিনির আমদানি কমেছে। কয়েক দিন আগে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে দাম সমন্বয় করার অনুরোধ জানালে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়।
‘এরপর ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী খোলা চিনি প্রতি কেজি ১২০ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি প্রতি কেজি ১২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই দামে চিনি বিক্রির জন্য বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনকে মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, তবে তারা আমাদেরকে এ বিষয়ে এখনও কিছু জানায়নি।’
সচিব আরও বলেন, ‘যখনই কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে থাকে না, তখন আমরা এনবিআরকে শুল্কহার কমাতে অনুরোধ জানাই। তারা কখনও কমায়, আবার সম্ভব না হলে কমাতে পারে না।’
ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভোজ্যতেলের ওপর শুল্ক রেয়াত ৩০ এপ্রিল শেষ হয়। বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন দাম সমন্বয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিলে ট্যারিফ কমিশনের মাধ্যমে দাম নির্ধারণ করায় তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
‘তেলের শুল্কছাড় অব্যাহত রাখার ব্যাপারেও আমরা চিঠি দিয়েছিলাম, কিন্তু এনবিআর তা করেনি।’
এ সময় ই-সিগারেটের আমদানির প্রসঙ্গও উঠে আসে। এর জবাবে বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতামত অনুযায়ী আমদানি নীতি প্রণয়ন করা হবে।’
ই-সিগারেটের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:ভোজ্যতেল আমদানিতে সরকারের ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা জানিয়ে সয়াবিন তেলের মূল্য সমন্বয় করেছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।
সংস্থাটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের জন্য এখন থেকে ১৯৯ টাকা গুনতে হবে ক্রেতাকে। আগে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৮৭ টাকা।
বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের বুধবারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ভোজ্যতেল আমদানিতে সরকার প্রদত্ত ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ গত ৩০ এপ্রিল, ২০২৩ তারিখ শেষ হওয়ায় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ট্রেড ট্যারিফ কমিশনের সাথে আলোচনাক্রমে
ভোজ্যতেলের মূল্য নিম্নোক্তভাবে সমন্বয় করল।’
সমন্বয়কৃত মূল্য অনুযায়ী এখন থেকে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হবে ১৭৬ টাকায়। এ ছাড়া সয়াবিন তেলের ৫ লিটারের বোতল ৯৬০ টাকা এবং খোলা পাম সুপার তেলের প্রতি লিটার বিক্রি হবে ১৩৫ টাকায়।
নির্ধারিত মূল্য অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
সরবরাহ স্বল্পতার কারণে ঢাকার বাজারে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়, যা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি।
গত ৮ এপ্রিল সরকার খোলা চিনির জন্য প্রতি কেজি ১০৪ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনির দাম ১০৯ টাকা নির্ধারণ করে। যদিও ভোক্তারা এই মূল্যের কঠোর বিরোধিতা করে আসছে। খবর ইউএনবির।
খুচরা বাজারে প্যাকেটজাত চিনি কমই পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি খোলা চিনির জন্যও ভোক্তাদের দিতে হচ্ছে প্রতি কেজি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে বেড়েছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, দোকানে প্যাকেটজাত চিনি নেই। গত মাসের শেষ দিকে ঈদুল ফিতরের পর থেকে চিনির সরবরাহ নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
পাইকারি কোম্পানিগুলো সরবরাহ কম হওয়ায় সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমদানিকারকরা আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির উচ্চমূল্যের জন্য সরবরাহ স্বল্পতার জন্য দায়ী করছেন যা অভ্যন্তরীণ সরবরাহকে প্রভাবিত করছে।
তারা বেশি দামে আমদানি করতে যাবে কি না সরকারের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছে। দাম বেশি হওয়ায় তারাও আমদানি কমিয়েছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, এক মাসে চিনির দাম ১৫ শতাংশ বেড়েছে, এক বছরে তা বেড়েছে ৬২ শতাংশের বেশি।
কারওয়ান বাজারের চাদপুর স্টোরের সালমত সরদার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। পাইকারি পর্যায়ে কেনা খোলা চিনি প্রতি কেজি ১৩০ টাকার বেশি। তারপরও ডিলাররা ক্রয় রশিদ দিচ্ছেন না।
তুরস্ক থেকে আসছে চিনি
তুরস্ক থেকে সাড়ে ১২ হাজার টন চিনি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ৮২ টাকা ৮৯ পয়সা কেজি দরে কেনা হবে এই চিনি। আগের তুলনায় প্রতি কেজি চিনি কিনতে প্রায় ৬ টাকা কম খরচ হচ্ছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য এ চিনি কেনা হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এই অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট খরচ ধরা হয়েছে কোটি ৬৪ কোটি ২০ লাখ টাকা।
বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য