বৈশ্বিক এ সংকটের সময়ে জ্বালানি খাতের ভবিষ্যৎ একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত যে দামে জ্বালানি কিনছে সে দামেই বিক্রি করছে। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জ্বালানি খাতে আর কোনো ভর্তুকি দেয়া হবে না।
রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ বিজনেস সামিটে এক সেমিনারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নসরুল হামিদ বলেন, ‘একটা গ্রামে ১০টি বাড়ি সেখানেও সাবস্টেশন করা হয়েছে। যেখানে ১০০ বছর বিল দিলেও সেটার দাম উঠবে না। তারপরও আমরা সেখানে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছি।
‘আমরা সব জায়গায় ব্যবসা দেখিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সবার ঘরে বিদ্যুৎ দেয়া হবে। ক্যাপাসিটি কী পরিমাণ বেড়েছে সেটা জিডিপির গ্রোথ দেখলেই বোঝা যায়।’
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, গ্রামে যে ছোট ছোট বিজনেস তৈরি হয়েছে সেটা বিদ্যুতের আলোর কারণে। প্রত্যন্ত গ্রামের বাজার গভীর রাতেও খোলা থাকে। সেখানে এখন রাত ১২টার দিকেও ব্যবসা চলে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে যা গ্রোথ হয়েছে তার থেকে অনেক পরিবর্তন হয়েছে গ্রামে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, কয়লা নিয়ে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে আমাদের। অন্য দেশ কয়লা সব উঠিয়ে ফেলেছে, আমরা কেন তুলছি না। আমরাও তাদের মতো যে ঝাঁপিয়ে পড়বো সেটা কিভাবে হয়। যেখানে হাজার হাজার একর কৃষিজমি নষ্ট হবে সেই কৃষকদের কী হবে? আমরা যদি সেখানে পাওয়ায় প্লান্ট বানাই কৃষক তো সেখানে কাজ করতে পারবে না। তারা তো বেকার হয়ে যাবে। তাদের ইকোনমির বিষয়টাও আমাদেরকে চিন্তা করতে হয়।’
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্স বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমান, বুয়েটের অধ্যাপক ডক্টর ইজাজ হোসাইন, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান, ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর প্রমুখ।
বৈশ্বিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পারস্পরিক সহযোগিতা ও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। এই চ্যালেঞ্জ উত্তরণে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। উদীয়মান ও উন্নয়নশীল এশিয়া বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধির প্রধান চালক। আগামী দিনে এশিয়া বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে ৭৫ শতাংশ অবদান রাখবে।
চীনের হাইনান প্রদেশে ২৮ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া ২০২৩-এ বক্তারা এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ছিয়ংহাই সিটির বোয়াও টাউনে অনুষ্ঠিত চার দিনব্যাপী এই বর্ণাঢ্য সম্মেলনে বিশ্ব নেতারা বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতা ও নতুন পদক্ষেপের আহ্বান জানান। একইসঙ্গে বৈশ্বিক সমৃদ্ধিতে চীনের ভূমিকা তুলে ধরা হয়।
এতে ৫০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের দুই সহস্রাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন। এছাড়া ১৭০টিরও বেশি গণমাধ্যমের ১১০০ জনেরও বেশি সাংবাদিক অনুষ্ঠানটি কাভার করেন।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী বিদেশি অতিথিরা বলেন, ‘বিশ্বের অনির্দিষ্টতা বেড়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের উচিত ঐক্যবদ্ধ হয়ে এশিয়া ও বিশ্বের সমৃদ্ধ উন্নয়নে অবদান রাখা। এশিয়ায় প্রধান অর্থনীতি হিসেবে চীন বহু পক্ষবাদ ও আঞ্চলিক সহযোগিতায় অব্যাহতভাবে ভূমিকা রাখবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ থাকলেও সহযোগিতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
এ সময় বিশ্ব নেতারা বিভিন্ন দেশের যৌথভাবে সহযোগিতা জোরদার, অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং আরও শক্তিশালী এশিয়া গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
বোয়াও এশিয়া ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল, ‘একটি অনিশ্চিত বিশ্ব: চ্যালেঞ্জসমূহ, উন্নয়নের জন্য সংহতি ও সহযোগিতা’।
ফোরামে যোগ দিয়ে চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং বলেন, ‘অনিশ্চয়তার বিশ্বে চীনের স্থিতিশীলতা একটি প্রধান ভিত্তি, যা বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নকে রক্ষা করে। এটি অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতে আরও বেশি বাস্তবসম্মত।
‘বিশ্ব যেভাবেই পরিবর্তিত হোক না কেন, চীন সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ এবং উদ্ভাবন-চালিত উন্নয়ন মেনে চলবে। এটি করার মাধ্যমে চীন কেবল বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন প্রেরণা দেবে না, বরং বিশ্বকে চীনের উন্নয়ন থেকে সুযোগ নিতে সক্ষম করবে।’
কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব থেকে চীনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রবণতা উল্লেখ করে লি বলেন, ‘মার্চ মাসে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির তুলনায় মূল সূচকগুলোর ক্রমাগত উন্নতি হচ্ছে। চীনের অর্থনীতির প্রচুর সম্ভাবনা ও প্রাণশক্তি রয়েছে।
‘চীনের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়া, স্থিতিশীল ও টেকসই প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরও বেশি অবদান রাখার ব্যাপারে আমাদের আত্মবিশ্বাস রয়েছে।’
লি কিয়াং উন্নয়নের জন্য শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিবেশ রক্ষা এবং বৈশ্বিক অস্থির অবস্থায় যৌথভাবে চেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান। বলেন, ‘এশিয়া ভবিষ্যতে বৃহত্তর উন্নয়ন অর্জন করতে চাইলে অবশ্যই বিশৃঙ্খলা বা যুদ্ধ হবে না। চীন শান্তিপূর্ণ উপায়ে দেশগুলোর মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে এবং যৌথভাবে বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
‘চীন সব সময় বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করাতে গুরুত্ব দিয়েছে। চীন বাজারে প্রবেশের সুযোগ আরও সহজ করবে, উচ্চমানের মুক্ত বাণিজ্য এলাকার বিশ্বভিত্তিক নেটওয়ার্ক প্রসারিত করবে।’
বৈশ্বিক অর্থনীতি বেশ কিছুদিন ধরেই মহামারি, ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব এবং বিশ্বায়ন বিরোধী মনোভাবসহ বেশ কয়েকটি কারণে চাপে রয়েছে। তবে প্রতিটি মেঘের একটি রূপালী আস্তরণ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন।
তিনি বলেন, ‘উদীয়মান ও উন্নয়নশীল এশিয়া বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধির প্রধান চালক। এশিয়া বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে ৭৫ শতাংশ অবদান রাখবে।’
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ক্রিস্টালিনা জর্জিভা বলেন, ‘বাণিজ্য একীকরণের কল্যাণে গত কয়েক বছরে এশিয়ার অর্থনীতির শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গত তিন বছরে নিম্ন আয়ের অনেক দেশ সমস্যায় পড়েছে৷ খাদ্য নিরাপত্তাসহ অনেক দেশের মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়েছে। এসব দেশকে টেনে তোলার পরিকল্পনা নিতে হবে। সহায়তার মাধ্যমে এসব সমস্যা দূর করতে হবে।’
আরও পড়ুন:যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশের অভিযাত্রায় প্রবাসীদের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন।
জাতিসংঘের সদরদপ্তরে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আয়োজিত ‘উন্নয়নের এজেন্ট হিসেবে প্রবাসী, অভিবাসী এবং বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মাসুদ বিন মোমেন প্রবাসীদের ক্ষমতায়নে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক মডেল উদ্ভাবনের পাশাপাশি আইসিটি শিক্ষার মাধ্যমে তাদের দক্ষতা উন্নয়নে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘বিদেশের মাটিতে নিজ দেশের পণ্যের অন্যতম ভোক্তা হিসেবে প্রবাসীরা রপ্তানি বৃদ্ধি ও রপ্তানি বৈচিত্র্য আনয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তারা বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক মডেল তৈরিতে অবদান রাখে এবং নিজ দেশে তাদের পরিবার ও পরিচালিত ব্যবসায় অর্থ পাঠিয়ে সেখানকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেন।’
বিশ্ব অর্থনীতির একটি প্রধান চালিকা শক্তি এশিয়া অঞ্চল। ২০২৩ সালে এশিয়ার মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। আগের বছর ২০২২ সালে যা ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। সে সুবাদে এই অঞ্চলে সামগ্রিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি ত্বরান্বিত হবে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার বাস্তবতায় এটি একটি আশার খবর।
বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া থেকে প্রকাশিত ‘এশিয়ান ইকোনমিক আউটলুক অ্যান্ড ইন্টিগ্রেশন প্রগ্রেস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য, ‘একটি অনিশ্চিত বিশ্ব: চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে উন্নয়নের জন্য সংহতি ও সহযোগিতা’।
চীনের হাইনান প্রদেশে মঙ্গলবার শুরু হয়েছে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া-২০২৩ এর বার্ষিক সম্মেলন। ছিয়ংহাই সিটির বোয়াও শহরে ৩১ মার্চ পর্যন্ত তা চলবে। বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান ব্যক্তি, ব্যবসায়ী নেতাসহ প্রায় দুই হাজার ব্যক্তি অংশ নিচ্ছেন এই সম্মেলনে।
ফোরামে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং পারস্পরিক ঐকমত্যকে সুসংহত করার লক্ষ্যে উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিকরণ, দক্ষতা ও নিরাপত্তা, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি বর্তমান ও ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা হয়।
মূল প্রতিবেদনে আশা করা হয়েছে, ‘এ বছর অঞ্চলটি বিশ্বকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের দিকে নিয়ে যাবে। বৈশ্বিক চাহিদা দুর্বল হওয়া এবং অনিশ্চয়তার চাপ সত্ত্বেও এশীয় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে। যদিও বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হওয়ায় এশিয়ান রপ্তানিকারকদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। কিন্তু চীনের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক পরিবর্তন এশিয়ার বাকি অংশ এবং বিশ্বের জন্য একটি ইতিবাচক সংকেত পাঠাচ্ছে।’
বোয়াও ফোরামের সেক্রেটারি জেনারেল লি বাওডং বলেছেন, ‘বৈশ্বিক অর্থনীতি অনিশ্চয়তা থেকে উত্তরণে এশিয়া মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করবে। বিশ্বব্যাপী মন্দার মধ্যে এশিয়া সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিকে ত্বরান্বিত করবে। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক উৎপাদন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও আর্থিক একীকরণ এবং সংহতির অগ্রগতি অব্যাহত রাখবে।’
প্যানেল আলোচনায় বলা হয়, আগামী দিনের অনিশ্চয়তা ও চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও চীনের দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে এশিয়ার অর্থনীতি এ বছর শক্তিশালী অবস্থানে যাবে।
বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া একটি বেসরকারি অলাভজনক আন্তর্জাতিক সংস্থা। এশিয়ার ২৮টি দেশ নিয়ে ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি এশিয়ায় আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রচার এবং আঞ্চলিক অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নের জন্য কাজ করে আসছে।
চীন তার পুরো হাইনান দ্বীপকে বিশ্বব্যাপী প্রভাবশালী এবং উচ্চ স্তরের ফ্রি ট্রেড পোর্ট বা এফটিপিতে পরিণত করার লক্ষ্যে ২০২০ সালে একটি মাস্টার প্ল্যান প্রকাশ করে। তারপর থেকে হাইনান এফটিপি-র উন্নয়নে সহায়তার জন্য শূন্য শুল্ক এবং সহজ বাজার ও বিদেশি বিনিয়োগ সহজ করাসহ নীতি সহজীকরণ করেছে।
বলা হয়, হাইনানে ২০২৩ সালের মধ্যে স্বতন্ত্র কাস্টমস ব্যবস্থা চালুর জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে চীন। ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ দ্বীপ জুড়ে নিজস্ব কাস্টমস কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে বোয়াও ফোরাম এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সংলাপ ও ঐকমত্য তৈরি করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চে পরিণত হয়েছে।
হোমল্যান্ড লাইফ ইন্সুরেন্সের গ্রাহকদের ১০৪ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বীমা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘পরিচালকদের প্রতারণার খপ্পরে হোমল্যান্ড লাইফ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির অর্থ আত্মসাত নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এই সব প্রতিবেদন যুক্ত করে প্রতিষ্ঠানটির ১৪ গ্রাহকের পক্ষে রহিমা আক্তার একটি রিট করেন।
রিটে অর্থ সচিব, ইন্সরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলিটরি অথোরিটির চেয়ারম্যান, দুর্ণীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, হোমল্যান্ড ইন্সুরেন্সের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানসহ প্রতিষ্ঠানটির ১৪ পরিচালককে বিবাদী (রেসপনডেন্ট) করা হয়।
রিটকারিপদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আক্তার রসুল মুরাদ, আব্দুল্লাহিল মারুফ ফাহিম ও দিদারুল আলম।
পরে ব্যারিস্টার কাজল সাংবাদিকদের বলেন, আদালত শুনানি শেষে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্সুরেন্সের ১০৪ কোটি ৬ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৮ টাকা লোপাটের অভিযোগ তদন্ত করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে।
ইন্সুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলিটরি অথোরিটির চেয়ারম্যান ও দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে তদন্তের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- দুই সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শাতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করা হয়েছে।
দুদক বরাবর হোমল্যান্ড লাইফ ইন্সুরেন্সের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের একটি আবেদন আগামী দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আগামী ৪ জুন এ ব্যাপারে শুনানির তারিখ ধার্য থাকবে বলেও জানিয়েছে আদালত।
আরও পড়ুন:
পবিত্র মাহে রমজান এবং স্বাধীনতা দিবসকে স্মরণীয় করে রাখতে বেঙ্গল গ্রুপের পক্ষ থেকে কিছু উপহার মাস্তুল ফাউন্ডেশনের এতিমখানার শিশুদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
২৬ মার্চ এবং পবিত্র রমজানের দিনগুলোকে আরও উৎসবমুখর করতে বেঙ্গল গ্রুপ এগিয়ে এসেছে মাস্তুল ফাউন্ডেশনের এতিমখানার শিশুদের জন্য উপহার নিয়ে। মাস্তুল ফাউন্ডেশনের এতিম শিশুরা, ধন্যবাদ জানাতে একটি ছোট অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানটি শুরু হয় কোরআন তিলাওয়াত এর মধ্য দিয়ে।
অনুষ্ঠানে বেঙ্গল পলিমার ওয়্যারস লিমিটেডের ডিজিএম জোহেব আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, আমরা খুবই আনন্দিত হয়েছি এই এতিম শিশুদের পাশে থাকতে পেরে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্র্যান্ড ম্যানেজার সমীর কুমার এবং সিনিয়র এক্সিকিউটিভ মুস্তাফিজুর রহমান।
মাস্তুল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর কাজী রিয়াজ রহমান বলেন, আমরা খুবই আনন্দিত বেঙ্গল গ্রুপকে আমাদের পাশে পেয়ে। আমরা সবসময় তাদের পাশে চাই। মাস্তুল ফাউন্ডেশন বরাবরের ন্যায় এ রমজানেও ১ লক্ষ অসহায় রোজাদারদের ইফতার করানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
বেঙ্গল গ্রুপ বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় শিল্প গোষ্ঠী। বেঙ্গল গ্রুপ সমাজের সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়ের উন্নতির জন্য অনুরূপ সি.এস.আর কার্যক্রম বরাবর করে থাকে।
পোলট্রি খাতের শীর্ষস্থানীয় চার প্রতিষ্ঠান খামার পর্যায়ে ১৯০-১৯৫ টাকা কেজি দরে ব্রয়লার মুরগি বিক্রির প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর খুচরা বাজারে এর দাম কমতে শুরু করেছে।
রমজানের প্রথম দিন শুক্রবার রাজধানীর শ্যামবাজার, সূত্রাপুর বাজার, ধুপখোলা বাজার ঘুরে দেখা গেছে ব্রয়লার মুরগি ২৫০-২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বৃহস্পতিবারও রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার মুরগি ২৬০-২৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
অযৌক্তিক দামে বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করায় বৃহস্পতিবার এ খাতে দেশের চার প্রধান প্রতিষ্ঠান কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, আফতাব বহুমুখী ফার্মস ও সিপি বাংলাদেশকে তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এরপর কোম্পানিগুলো খামার পর্যায়ে নির্ধারিত এ দামে মুরগি বিক্রির প্রতিশ্রুতি দেয়।
এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় অপরিবর্তিত রয়েছে গরুর মাংসের দাম। বাজারে হাড়সহ গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি, হাড়ছাড়া ১ হাজার টাকা কেজি, খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি, বকরি ১ হাজার টাকা কেজি।
এছাড়া বাজারগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের মতোই প্রকারভেদে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি, বুটের বেসন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়, খেসারি ডালের বেসন ১০০ টাকা যা গত সপ্তাহেও একই দাম ছিল। মোটা মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা আর চিকন মসুর ডাল ১৪৫ টাকায় অপরিবর্তিত দরে বিক্রি হচ্ছে। চিনির মূল্য গত সপ্তাহের সমান ১২০ টাকা কেজি, মুড়ি ৮০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, আলু ২৫ টাকা, লেবু প্রকারভেদে ৪০-৬০-৮০ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে।
শ্যামবাজারের রাতুল এন্টারপ্রাইজের শফিকুল মোড়ল বলেন, ‘এখন এমন সময় আইছে যে রমজানেও মানুষের আনাগোনা কম দেখা যাচ্ছে। অথচ রমজান মাস আইলে মানুষের ভীড় লাইগ্যা থাকত। আর এখন হাতেগোনা মানুষ বাজারে আসতাছে। যেই হারে দাম বাড়ছে, মানুষও কী কইরা কিনবো? দাম কমলেই ভালা, আমরার বেচে বিক্রি বেশি হয়।’
মাছের দর কমেছে কিছুটা
রুই মাছ গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কমেছে। বাজারে প্রকারভেদে রুই ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাঙাশ ২৫০ টাকা থেকে ৫০ টাকা কমে ২০০ টাকায়, ইলিশ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চাহিদা বেড়েছে তরমুজ বেলের
ইফতারিতে শরবত বানাতে তরমুজ ও বেলের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। বাজারে ৪০ টাকা কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। আর প্রকারভেদে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা হালি বেল বিক্রি হচ্ছে।
তরমুজ কিনতে আসা রিফাত হাসান বলেন, ‘তরমুজ কেজি ও পিস উভয় ভাবেই কিনতে পারছি। কেজি হিসেবে কিনলে ৪০ টাকা আর পিস হিসেবে কিনলে দেখা যাচ্ছে প্রকারভেদে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দিয়ে কেনা যাচ্ছে।’
আরও পড়ুন:খামার পর্যায়ে দাম ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা ব্রয়লার মুরগি বিক্রির আশ্বাস দিয়েছে এ খাতে দেশের চার প্রধান প্রতিষ্ঠান কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, আফতাব বহুমুখী ফার্মস ও সিপি বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার অযৌক্তিক দামে বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করায় চার কোম্পানিকে তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এরপর কোম্পানিগুলো খামার পর্যায়ে নির্ধারিত এ দামে মুরগি বিক্রির প্রতিশ্রুতি দেন।
শুক্রবার থেকে এ চারটি কোম্পানি নতুন দামে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করবে করলে ভোক্ত পর্যায়ে এর দাম কমবে বলে আশা করছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
তিনি বলেন, রোজায় বাজারে ব্রয়লার মুরগির দামে ৩০-৪০ টাকার একটা প্রভাব পড়বে। আশা করছি, ভোক্তা পর্যায়ে কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগির দাম কমবে ৩০-৪০ টাকা।
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘কাজী ফার্ম, সিপি, প্যারাগন ও আফতাব ফার্মের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। কোম্পানিগুলো আজ পর্যন্ত প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২৩০ টাকা করে মিলগেটে বিক্রি করেছে। তারা আজ বৈঠকে আমাদের জানিয়েছেন, আগামীকাল থেকে ১৯০-১৯৫ টাকায় বিক্রি করবে। আশা করছি, ভোক্তা পর্যায়ে এখন দাম ৩০-৪০ টাকা কমবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি তাদের আহ্বান করেছি, আপনারা এই রমজান মাসে একটু কম লাভ করেন। তারা একমত হয়েছেন। ফার্ম থেকে ব্রয়লার আসছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা রেটে। সে ক্ষেত্রে তো খোলাবাজারে ২৫০ টাকা হবেই।’
ব্রয়লারের দাম কমাতে প্রয়োজনে বর্ডার উন্মুক্ত করে দেয়া হবে বলেও জানান ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য