ব্যাংকগুলো দেশের ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ডিলারদের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে যে ঋণ দিয়ে থাকে তার ওপর প্রভিশন ১ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
দেশের পুঁজিবাজারে ব্যাংক খাতের বিনিয়োগ টানতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে এর কতটা ইতিবাচক প্রভাব প্রভাব তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (বিআরপিডি) থেকে সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়।
তাতে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক বা স্টক ডিলারদের ঋণ দিয়ে থাকে। সেখানে আগে অশ্রেণিবদ্ধ ঋণে ২ শতাংশ প্রভিশন রাখার নিয়ম ছিল। এখন থেকে ১ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হবে।
বিআরপিডি’র পরিচালক মাকসুদা বেগম বলেন, ‘দেশের আর্থিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগে থেকেও এমনটা দাবি ছিল। দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকে আমরা একটু আকর্ষণীয় করতে চেয়েছি। আমরা দেখলাম যে বিবেচনা করার মতো সুযোগ আছে। এর ফলে ব্যাংকের যে খুব একটা লোকসান হবে তা কিন্তু না। বরং এর ফলে দেশের পুঁজিবাজার যদি চাঙ্গা হয় তাহলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো হবে।’
এ প্রসঙ্গে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর জন্য দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আর একটু আকর্ষণীয় করে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এর ফলে যে খুব বেশি ইমপ্যাক্ট হবে তা আমি মনে করি না।’
দ্য এসোসিয়েশন অফ ব্যাংকারস, বাংলাদেশের (এবিবি) সভাপতি সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন আরও বলেন, ‘ব্যাংক কোথায় কত বিনিয়োগ করবে তা নির্ভর করছে তাদের পরিকল্পনার ওপর। এই পদক্ষেপে যে বড় কোনো পরিবর্তন হবে সেটা আমি বিশ্বাস করি না।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘এখন আগের তুলনায় প্রভিশন কম করতে হবে। আগে ব্যাংকগুলো ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক বা স্টক ডিলারদের ঋণ দিলে এর ওপর ২ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হতো। অর্থাৎ কোনো ব্যাংক ১০০ কোটি টাকা ঋণ দিলে তাকে ২ কোটি টাকা প্রভিশন রাখতে হতো। এখন ১০০ কোটি টাকা ঋণ দিলে ১ কোটি টাকা প্রভিশন রাখতে হবে। ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে ঋণ ১০০ কোটি টাকাই দিচ্ছে। শুধু ব্যাংক প্রভিশন কম রাখবে।’
আরও পড়ুন:মহান স্বাধীনতা দিবসে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) লিমিটেড।
ডিএসইর নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবুর নেতৃত্বে রোববার সকালে শহীদ বেদিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
নবনিযুক্ত পরিচালনা পর্ষদের সদস্য অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, মো. আফজাল হোসেন, রুবাবা দৌলা, ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মো. শাকিল রিজভী, শরীফ আনোয়ার হোসেন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এম. সাইফুর রহমান মজুমদার এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএসই’র প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা সাত্তিক আহমেদ শাহ, প্রধান রেগুলেটরি কর্মকর্তা খাইরুল বাসার, সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মো. ছামিউল ইসলাম, সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার, কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ আসাদুর রহমান, উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুর রহমান প্রমুখ।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ না থাকাকে দেশের পুঁজিবাজারের চলমান তারল্য সংকটের মূল কারণ হিসেবে দেখছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান (সালমান এফ রহমান)।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটের একটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্ট্রাকচারাল ডিফেট (কাঠামোগত দুর্বলতা) রয়ে গেছে। আমরা অনেকেই অনেক কথা বলি কিন্তু এসব দুর্বলতা সমাধানে যেসব কাজ করা দরকার আমরা তা করছি না।’
বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), দৈনিক সমকাল এবং চ্যানেল ২৪-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ২০২৩-২৪ প্রাক-বাজেট আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সালমান এফ রহমান।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি এ বিনিয়োগ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি এনালাইসিস করে দেখেছি যে, আমাদের দৈনিক যে লেনদেন এতে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ হচ্ছে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের। আর ৫ থেকে ১০ শতাংশ হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। আইসিবি টোটালি ইনঅ্যাকটিভ (নিষ্ক্রিয়), এছাড়া সিটি ব্যাংক ও অন্যান্য বিনিয়োগকারী ব্যাংক রয়েছে তারা দৈনিক লেনদেনের ৫ শতাংশ অংশগ্রহণ করছে। মূল সমস্যাটা এই জায়গাতেই।’
তিনি বলেন, ‘অন্যান্য দেশের ফ্রন্টিয়ার মার্কেটে দৈনিক লেনদেনে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ থাকে ৯০ শতাংশ আর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী থাকে ১০ শতাংশ।’
সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আমি আজকেও এটা শুনেছি যে, কথার কথায় সবাই বলে ছোট বিনিয়োগকারীদের আমাদের বাঁচাতে হবে। ছোট বিনিয়োগকারীকে রক্ষা করা তো সরকারের দায়িত্ব না। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের এখানে বিনিয়োগ করাই উচিত না। তাদের উচিত প্রাতিষ্ঠানিক মাধ্যমে বিনিয়োগ করা।
‘এখানে আমরা শুধু ব্রোকারকে ব্যবহার করি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে, কিন্তু বিনিয়োগের সিদ্ধান্তগুলো একজন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী হিসেবে আমি নিজে নিচ্ছি। আর যখনই আমার ভুলের কারণে আমি লস করি তখন দায়িত্বটা সরকারে হয়ে যাবে। বাহ খুব সুন্দর।’
প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা বলেন, ‘এই স্ট্রাকচারাল ডিফেটটা (কাঠামোগত দুর্বলতা) যদি আমরা না ঠিক করতে পারি, তাহলে আমাদের পুঁজিবাজার বড় করা অনেক বেশি কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।’
সালমান এফ রহামন বলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতি বিশ্বব্যাপী সমস্যা। রিজার্ভের সমস্যা সমাধানে আমরা আমদানি কমাতে সক্ষম হয়েছি। আগামী জুনে রিজার্ভ নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হবে, আইএমএফ ঋণ দেবে না বিভিন্ন আশঙ্কা করেছিলেন অনেকে। কিন্তু আইএমএফ থেকে ঋণ পাওয়া গেছে। প্রথম দফায় ঋণ ছাড়ও হয়েছে। ব্যাংক সুদের হার সীমা তুলে দেওয়া হচ্ছে। ম্যাক্রো ইকোনমিতে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে আমরা সঠিক পথেই আছি।’
তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজার চাঙা করতে বন্ড মার্কেটকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সব পণ্যে প্রণোদনা দিতে হবে। আমরা অনেক দেশ, এমনকি উন্নত দেশের তুলনায় ভালো আছি। বেসরকারি খাতের সহযোগিতায় আমরা অনেক ভালো পজিশনে আছি। কৃষি, প্রবাসী আয় ও রপ্তানি খাতের কারণে আমাদের পজিশন ধরে দেখতে পেরেছি।’
সালমান এফ রহমান বলেন, ‘ট্যাক্স জিডিপি অনুপাত বিশ্বের মধ্যেই কম। ট্যাক্স নেট ও জিডিপি বাড়াতে হলে অটোমেশনের বিকল্প নেই। কাঠামোগত সমস্যা আছে, তা হচ্ছে পরোক্ষ করের নির্ভরশীলতা। এটা কমাতে হবে। প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে হবে। বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা এখনো রাজস্ব আদায়ে কাস্টমসের নির্ভরতা বেশি। এটা কমাতে হবে।
‘ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন যদি ২০১৪ সালে করতে পারতাম তাহলে এই সেক্টর নিয়ে এতো প্রশ্ন উঠতো না। কর আইন সহজ করতে হবে। কর নেট বৃদ্ধির কথা বলি, কিন্তু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কর দিতে চায় না। এটাই বাস্তবতা। সবাই করের আওতায় না এলে করনেট বৃদ্ধি কীভাবে হবে? ব্যবসায় লাভ করছে, কিন্তু কর দিতে সমস্যা কোথায়? সব জায়গায় কর অব্যাহতি দিলে কর কোথা থেকে আসবে।’
মেনমেইড ফাইবারে কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে মেনমেইড ফাইভার মেনমেইড ফাইভার শুরু করেছি। এতদিন আমরা কী করলাম? ইয়াংওয়ান ২০ বছর আগে এগুলো করেছে। বর্তমানে তারা বিলিয়ন ডলারের মেনমেইড করতেছে, তাদের কি ইনসেন্টিভ দেয়া হইছে? তাহলে আমরা কেন এতদিন বসে রইলাম?’
ডিসিসিআই সভাপতি সামীর সাত্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, এফবিসিসিআই’র সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, সাবেক সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন) উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:দেশের পুঁজিবাজারে সপ্তাহের চতুর্থ কর্মদিবস বুধবার সূচক ও লেনদেনে ভাটা পড়েছে। আজ সূচক কমার সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণও।
প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বুধবার সব সূচকের পতন হয়। আজ প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ১৬ দশমিক ২৬ পয়েন্ট হারায়। সূচকটি অবস্থান নেয় ৬ হাজার ২০৬ পয়েন্টে।
‘ডিএসইএস’ ৩ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট এবং ডিএস-৩০ সূচক ৫ দশমিক ১৮ পয়েন্ট কমেছে।
সূচকের পতনের সঙ্গে ডিএসইতে লেনদেনও কমে। আজ ৩২৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট হাতবদল হয়, যা গত ১৭ কর্মদিবসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
ডিএসইতে ৩১২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট হাতবদল হয়। এর মধ্যে ২১৩টি কোম্পানির শেয়ারদরই ছিল অপরিবর্তিত। দর বেড়েছে ১৭ কোম্পানির, বিপরীতে ৮২ কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে।
অপর বাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়। সিএসইতে ৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়।
আরও পড়ুন:দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে মঙ্গলবার নামমাত্র লেনদেনে সূচকের উত্থান হয়েছে।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, এদিন ৩৪৯ কোটি ৬১ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে ৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বেশি। আর এই সামান্য লেনদেন বৃদ্ধিতেও আগের দিনের সূচকের সঙ্গে যোগ হয়েছে ১৮ দশমিক ৭২ পয়েন্ট। বর্তমানে ডিএসইএক্স অবস্থান করছে ৬ হাজার ২২২ পয়েন্টে।
জানা গেছে, ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৫৫ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ২ হাজার ২২০ পয়েন্টে।
এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩২৫ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৮৭টির, কমেছে ১৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২২৪টির।
অপর শেয়ারবাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৩৮২ পয়েন্টে। সিএসইতে ১৫৭টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫০টির দর বেড়েছে, কমেছে ১২টির এবং ৯৫টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
সিএসইতে ১২ কোটি ২৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো তাদের খেলাপি ঋণের হিসাব ঠিকমতো দেখাচ্ছে না। খেলাপি ঋণ হিসাবের আন্তর্জাতিক আইন মানা হলে ব্যাংকগুলোর সম্পদ আরও কম হতো। কিন্তু ব্যাংকগুলো সেই আইন না মেনে নিজেদের সম্পদ বাস্তবের চেয়ে বেশি দেখাচ্ছে।
ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) চেয়ারম্যান মো. হামিদ উল্লাহ ভূঁঞা সোমবার এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
পুঁজিবাজারভিত্তিক সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিট্যাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ) দেশের পুঁজিবাজার নিয়ে ‘সিএমজেএফ টক’ শীর্ষক এই আলোচনার আয়োজন করে।
হামিদ উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশে আইএফআরএস মেনে হিসাব রাখার কথা। কিন্তু দেশের ব্যাংক খাতে আইএফআরএস ৯-এর নিয়ম মানা হচ্ছে না। বাংলাদেশে আইএফআরএস-এর সব আইন মানলে ব্যাংকের সম্পদ ৪০ শতাংশ অবলোপন করতে হবে বা কমে যাবে।
‘আইএফআরএস হচ্ছে হিসাব রক্ষণের আন্তর্জাতিক নিয়ম। এই নিয়মগুলো বিশ্বের সব দেশের কোম্পানি মেনে চলে, যাতে আর্থিক প্রতিবেদনগুলো স্বচ্ছ হয়।
‘আইএফআরএস-এর ৯ নম্বর আইনটিতে বলা আছে- কিভাবে একটি কোম্পানি তাদের আর্থিক দায় ও আর্থিক সম্পদের হিসাব রাখবে। ব্যাংক যে ঋণগুলো দেয় সেগুলো তাদের হিসাব বইয়ে আর্থিক সম্পদ হিসেবে থাকে। আন্তর্জাতিক মান ব্যবহার করলে এই ঋণ বা আর্থিক সম্পদ অনেক কম দেখাতে হতো।’
এফআরসি চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের আর্থিক প্রতিবেদনে জালিয়াতি ঠেকাতে ২০১৫ সালে গড়ে তোলা হয় ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি)। এখন যদি কোনো হিসাব নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান আর্থিক প্রতিবেদনে জালিয়াতি করতে সাহায্য করে তাকে শাস্তির আওতায় আনা যায়।
‘এ মুহূর্তে আইএফআরএস-এর ৯ ধারা বাস্তবায়ন করা হলে ব্যাংকের সম্পদ ৪০ শতাংশ রাইট অফ (অবলোপন) করতে হবে। আমরা চাই এটি বাস্তবায়ন করা হোক। তাহলে ব্যাংকের প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে।’
রাজধানীর পল্টনে সিএমজেএফ-এর নিজস্ব কার্যালয়ে এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফোরামের সভাপতি জিয়াউর রহমান। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।
হামিদ উল্লাহ ভূঁঞা বলেন, ‘খেলাপি ঋণ বছরের পর বছর টেনে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে। এই টাকা কি কখনো ফেরত পাওয়া যাবে? ব্যাংকগুলো যদি আদায় করতে সক্ষম হয় তাহলে সমস্যা নেই। তবে আমাদের দেশের সংস্কৃতিতে দেখি খেলাপি ঋণ আদায় করা যায় না। বরং ২ শতাংশ জমা দিয়ে এগুলোকে আবার নিয়মিত ঋণে কনভার্ট করা হয়।
‘এ ২ শতাংশ দিয়ে তো ইন্টারেস্ট (সুদ আয়) আসে না। কারণ ইন্টারেস্ট তার চেয়ে অনেক বেশি। অথচ রি-সিডিউল করে রেগুলার করা হচ্ছে। আর ওই ঋণখেলাপি তখন আরেক ব্যাংকে গিয়ে লোন নিচ্ছে।’
হামিদ উল্লাহ বলেন, ‘আমি মনে করি আইএফআরএস-৯ বাস্তবায়ন করা হোক। ব্যাংকের সব ফিগার রিটার্ন অফ করে ব্যাংক একটি সেটেলড পজিশনে আসুক। কিন্তু সম্ভব না। আমি অনেকবার চেষ্টা করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক এটা মেনেই নিচ্ছে না।’
এফআরসিতে নিবন্ধিত হতে হবে অডিটরদের
আগামী ৩০ মে-র মধ্যে অডিটরদের এফআরসিতে নিবন্ধিত হতে হবে। কোনো অডিটর নিবন্ধিত না হলে তিনি তালিকাভুক্ত কোম্পানিসহ জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান অডিট করতে পারবে না।
এফআরসি চেয়ারম্যান বলেন, কোনো কোম্পানির রাজস্ব ৫০ কোটি টাকা বা তার বেশি হলে, সেই কোম্পানি জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট কোম্পানি হিসেবে বিবেচিত হবে।
এ ধরনের প্রতিষ্ঠান আছে ৩ হাজার চার শ’র মতো। এর বাইরে আড়াই হাজারের মতো ক্ষুদ্র ঋণ দেয়া প্রতিষ্ঠান আছে। এগুলোও জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হবে। সব মিলিয়ে সাড়ে ৫ হাজারের মতো প্রতিষ্ঠান জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট হিসেবে বিবেচিত হবে। কোনো অডিটর এফআরসিতে তালিকাভুক্ত না হলে এসব প্রতিষ্ঠান অডিট করতে পারবে না।
নিয়ম মানছে না বিমা কোম্পানি
হামিদ উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ‘জীবন বিমা কোম্পানিগুলো কখনও প্রফিট অ্যান্ড লস অ্যাকাউন্ট করে না। তারা একটা অ্যাকাউন্ট করে, সেটি হলো রেভিনিউ অ্যাকাউন্ট। কিন্তু আইএএস ১-এ স্পষ্ট বলা আছে, আপনার কোম্পানির নেচার যাই হোক না কেন প্রফিট অ্যান্ড লস অ্যাকাউন্ট করতে হবে। কিন্তু এরা তা করে না। এমনকি আমরা চিঠি দিলে রেসপন্সও করে না।
‘অন্যান্য রেগুলেটর কিছুটা হলেও রেসপন্স করে। এই একটা সেক্টর, যেখান থেকে আমরা আজ পর্যন্ত কোনো রেসপন্স পাইনি।’
এফআরসিকে শক্তিশালী করা হচ্ছে
হামিদ উল্লাহ ভূঁঞা বলেন, এফআরসিতে জনবল নিয়োগ দেয়ার পর আমি প্রথম হাত দেব ক্যাপিটাল মার্কেটে। আমি ক্যাপিটাল মার্কেটের কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতার অবস্থা দেখতে চাই। ক্যাপিটাল মার্কেটের কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনে যদি ম্যানিপুলেশন হয় তাহলে অনেক মার্জিনাল ইনভেস্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিনিয়োগ সীমার অনেক নিচে বা তুলনামূলক সক্ষমতার কম শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা ব্যাংকগুলোর ওপর কঠোর হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এলক্ষ্যে মঙ্গলবার থেকে চিঠি ইস্যু করা হবে।
শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের মাধ্যমে সহায়তার প্রত্যাশা থাকে। কিন্তু ফেব্রুয়ারির তথ্য অনুযায়ী, অনেক ব্যাংকের বিনিয়োগ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সীমার তুলনায় কম। এই অবস্থায় ওইসব ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগে আনার জন্য পদক্ষেপ নিতে চিঠি ইস্যু করা হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানিগুলো একক হিসাবে মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫% ও সাবসিডিয়ারিসহ সমন্বিতভাবে ৫০% শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু অনেক ব্যাংক এর ধারে কাছেও নেই। অথচ ওইসব প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ারবাজার থেকে নিয়মিত অর্থ উত্তোলন করে ব্যবসার পরিধি বাড়িয়ে থাকে।
এবার তাতে অনীহা প্রকাশ করতে যাচ্ছে বিএসইসি।
বিএসইসির একটি সূত্রে জানা গেছে, শেয়াবাজার থেকে অর্থ নিয়ে ব্যাংকগুলো বড় হচ্ছে। কিন্তু শেয়ারবাজারে তাদের বিনিয়োগে অনীহা। তাই ওইসব প্রতিষ্ঠানের বন্ডেও অনীহা প্রকাশ করবে বিএসইসি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, কমিশন নিয়মিতভাবে ব্যাংকের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের বিষয়টি তদারকি করে। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারির তথ্য অনুযায়ি অনেক ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতার বা বিনিয়োগ সীমার তুলনায় কম। কিন্তু শেয়ারবাজারের সহায়তায় ব্যাংকের বিনিয়োগ প্রত্যাশা করা হয়। যে প্রত্যাশা পূরণে ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগে আনতে চিঠি দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, যেসব ব্যাংক শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সীমার অনেক তলনাতি বা তুলনামূলক কম বিনিয়োগ, সেসব কোম্পানির পারপিচ্যুয়াল ও সাবঅর্ডিনেটেড বন্ডে অনুমোদনের ক্ষেত্রে ধীরগতি নীতি অনুসরন করা হবে। আর যেসব প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ সীমার কাছাকাছি বিনিয়োগ, সেগুলোকে সুপার ফাস্ট (দ্রুত গতিতে) বন্ডের অনুমোদন দেওয়া হবে।
আসন্ন পবিত্র মাহে রমজানে দেশের পুঁজিবাজারে লেনদেনের নতুন সময়সূচি নির্ধারণ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সোমবার বিএসইসির সহকারি পরিচালক মোসাভীর আল আশিকের সই করা এক চিঠিতে জানানো হয়েছে, রমজানে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত দেশের দুই শেয়ারবাজার-ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন হবে। আর ক্লোজিং সেশন থাকবে ১টা ২০ মিনিট থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত।
ওই চিঠিটি উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কাছে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে সিডিবিএল ও সিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিএমবিএ, ডিবিএ, এএএমসি এবং সিএমএসএফের চেয়ারম্যান কাছে পাঠানো হয়েছে। এর কপি বিএসইসির কমিশনার, পরিচালক ও চেয়ারম্যানের পিএসের কাছেও দেয়া হয়েছে।
স্বাভাবিক সময়ে শেয়ারবাজারে সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত লেনদেন অনুষ্ঠিত হয়।
মন্তব্য