দাম বাড়ানো না হলে বাজারে চিনি পাওয়া যাবে না বলে মনে করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
রাজধানীর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) এক অনুষ্ঠান শেষে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন।
টিপু মুনশি বলেন, ‘দাম তখনই বাড়ানো হয় যখন প্রয়োজন হয়। আমাদের ট্যারিফ অ্যান্ড ট্রেড কমিশন আছে তারা এগুলো হিসাব করে করে। যদি এটা বাড়ানো না হতো তাহলে ফলাফল হবে কি ? বাজারে চিনি পাওয়াই যাবে না। সে সব বিবেচনা করে তারা দাম বাড়িয়েছে।’
বাংলাদেশের চিনির কলগুলো উৎপাদন বন্ধ করে দেয়ায় দামে প্রভাব পড়েছে কি না প্রশ্নে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন,‘ আমাদের ২০ লাখ টন চিনি দরকার। সেখানে দেশে ৫০ হাজার টনও উৎপাদ হয় না। এটা আসলে কোনো প্রভাব বিস্তার করে না। আমাদের নির্ভর করতে হয় আমদানির ওপরে। গ্লোবাল মার্কেটে চিনির দাম বেড়েছে । যার জন্য সমস্যাটা হয়েছে। পাশাপাশ আমরা চেষ্টা করছি যাতে শুল্ক কমিয়ে দেওয়া হয়।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ,‘বিদ্যুতের দাম যৌক্তিক করা যায় কি না সেটা নিয়ে কাজ চলছে। ব্যবসায়ীরা বলেছিলেন। দাম বাড়ালেও তারা সাপ্লাই চায়। দাম যেটা বাড়ানো হয়েছে সেটা তাদের জন্য একটু বেশি হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে তারা কথা বলেবেন বলে তারা আমাদের জানিয়েছেন। আমরাও আমাদের রিপোর্ট তৈরি করছি। আমরা দেখি কমানো যায় কি না। ’
বৃহস্পতিবার দুপুরে হঠাৎ করে চিনির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানায় পণ্যটির পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। তারা প্যাকেটজাত চিনি প্রতি কেজির দাম ৪ টাকা বাড়িয়ে ১১২ টাকা এবং খোলা চিনি প্রতি কেজির দাম ৫ টাকা বাড়িয়ে ১০৭ টাকা নির্ধারণ করেছে। নতুন এই দাম ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।
দাম বাড়ানোর বিষয়ে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেন সংগঠনের নেতারা।
সর্বশেষ গত বছরের ১৭ নভেম্বর প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনির দাম ১৩ টাকা বাড়িয়ে ১০৮ টাকা করা হয়। আগে দাম ছিল ৯৫ টাকা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, দেশে বছরে চিনির চাহিদা ১৮ থেকে ২০ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত মিলগুলোতে ৩০ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদিত হয়। বাকি চিনি আমদানি করতে হয়।
২০২৬ সালের পর স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার কথা বিবেচনা করে নতুন দীর্ঘমেয়াদি রপ্তানি নীতি প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘২০২৬ সালের পর যখন আমরা এলডিসি থেকে একটি উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হব, আমরা কিছু সুযোগ পাব... আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং দেশের আরও উন্নয়ন করতে আমাদের সেই সুযোগগুলোকে কাজে লাগাতে হবে।’
সরকারি বাসভবন গণভবনে রপ্তানি সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির ১১তম সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সোমবার প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। খবর ইউএনবির
তিনি উল্লেখ করেন, একটি উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পর লক্ষ্য হবে উন্নত দেশে পরিণত হওয়া।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উদ্ভূত বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য বাড়ানোর সুযোগ কাজে লাগাতেও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে থাকায় বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্যের নতুন বাজার সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অনেক দেশ বাংলাদেশ থেকে খাদ্য সামগ্রী আমদানিতে আগ্রহ দেখিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে আমরা খাদ্য সামগ্রী রপ্তানি করতে পারতাম। আমরা এর জন্য উদ্যোগ নিতে পারি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প স্থাপন এবং সেসব পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে। সরকার রপ্তানি খাতকে গুরুত্ব দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ভারত গ্রহণের পর, আমরা এক বছরের ভিত্তিতে নীতির পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদি রপ্তানি নীতি প্রণয়নের পদক্ষেপ নিয়েছি। অর্জনগুলো ধরে রাখতে হলে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের কোনো বিকল্প নেই।’
শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘...কিন্তু এর পর আমরা কী করব? এরই মধ্যে, আমরা একটি উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হচ্ছি। আমি মনে করি আগামী দিনে আমরা কী করব বা আমরা কীভাবে এগিয়ে যাব তা বিবেচনা করার এটাই সঠিক সময়।’
প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাপী বর্তমান অর্থনৈতিক অস্থিরতার কথা মাথায় রেখে অর্থনীতির জন্য পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নির্ধারণের ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সারা বিশ্বে নতুন বাজার খুঁজতে হবে। আমাদের পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে, আমাদের রপ্তানি ঝুড়িতে নতুন আইটেম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বেসরকারি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে এবং প্রতিটি সেক্টরকে উদ্যোক্তাদের জন্য উন্মুক্ত করেছে কারণ সরকারের একার পক্ষে দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, রপ্তানি খাতের উন্নয়নের জন্য একটি কৌশল গ্রহণ করতে হবে এবং পণ্য চিহ্নিত করতে হবে। এ জন্য আমরা একটি সম্ভাব্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি-২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করতে।
প্রধানমন্ত্রী আইসিটি এবং ডিজিটাল ডিভাইস, আরএমজি, ফার্মাসিউটিক্যালস, হালকা ও মাঝারি ওজনের শিল্প, মোটর যান এবং ইলেকট্রনিক মোটর গাড়ির কথা উল্লেখ করে পণ্য বৈচিত্র্যের কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, সরকার দেশ-বিদেশের বিনিয়োগ নিয়ে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছে। বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে।
আরও পড়ুন:চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৪ মার্চ শুরু হচ্ছে সিয়াম সাধনার মাস রমজান, যার সপ্তাহখানেক আগে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে বাজারে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার আগে থেকে চড়া কিছু পণ্যের পাশাপাশি রোজায় চাহিদা বাড়া দ্রব্য বিক্রি হয় বেশি দামে।
কোনটির দাম কত
পুরান ঢাকার সূত্রাপুর বাজার ঘুরে দেখা যায়, রমজানে বেশি কেনা হয় এমন সব পণ্যের দাম বেড়েছে। ছোলার দাম কেজিপ্রতি বিক্রি হয় ৯০ টাকায়, যা কয়েক দিন আগেও ছিল ৮০ থেকে ৮২ টাকা।
চিনির দামও ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হয় ১১৫ টাকা কেজিতে। ১০ ও ১৫ টাকা বেড়ে বুটের ডাল ও মসুর ডালের কেজি দাঁড়ায় ১৪০ টাকায়।
পাঁচ লিটার তেল কিনতে ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ৯০০ টাকা। এক কেজি লাল মরিচ কিনতে হচ্ছে ৪৫০ টাকা, যা মাসখানেক আগেও ছিল ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে।
এক কেজি প্যাকেটের পোলাওর চাল ১৭০ টাকায় ঠেকেছে, যা ২০ দিন বা ১ মাস আগেও ছিল ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়।
কী বলছেন বিক্রেতারা
সূত্রাপুর বাজারের তুষার স্টোরের জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা কী করব বলেন? দাম তো আমরা বাড়াই না। আমাদের দাম দিয়ে কিনতে হয়। তাই আমরা সেই দাম থেকে কিছুটা লাভ করে বিক্রি করি।
‘আমাদেরও তো লাভ করতে হবে। বেশি দাম হলে মানুষ কেনাকাটা কম করে। এতে তো আমাদের আরও লোকসান হয়। আগে দেখা যেত রোজা এলে মানুষ এক মাসের বাজার একসাথে করত, কিন্তু এখন কোনো রকম এক সপ্তাহ বা দুই-তিন দিনের বাজার করছে। এতে আমাদের বিক্রি আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে।’
একই বাজারে খাসির মাংসের বিক্রেতা মোহাম্মদ আলী জানান, খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ টাকা কেজি। আর বকরির (ছাগলের) মাংস ১ হাজার ৫০ টাকা কেজি। আর গরুর মাংস হাড়ছাড়া ১ হাজার টাকা এবং হাড়সহ ৭৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
ধুপখোলা বাজারের মাছবিক্রেতা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আজকে ২ কেজি ওজনের পাঙাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা কেজি। আর রুই ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি। আর অন্যান্য মাছ প্রতি কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে।’
মুরগির দাম অপরিবর্তিত
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির সেই চড়া দামই বহাল আছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকায়। আর লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা কেজি।
সবজির মধ্যে করলার কেজি ৮০ টাকা, শিমের ৬০ টাকা, পটল ৭০ টাকা, আলুর ৩০ টাকা, টমেটোর ৫০ টাকা। এ ছাড়া বেগুন ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ও ঝিঙা ৭০ টাকা, লাউ প্রকারভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা এবং লেবু ৫০ থেকে ৬০ টাকা হালি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।
চলতি বছরের রমজান মাসে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭০০ টাকা এবং খাসির মাংস ৯৫০ টাকা নির্ধারণ করেছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)।
কেসিসি এলাকায় এর চেয়ে বেশি মূল্যে মাংস বিক্রি করা যাবে না। সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জনগণের পণ্য ক্রয়ের সুবিধার্থে বিক্রয় মূল্যের তালিকা টাঙিয়ে রাখতে হবে।
রোজায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সব ব্যবসায়ীদের প্রতি এ নির্দেশনা দিয়েছে কেসিসি।
খুলনা সিটি করপোরেশনের শহিদ আলতাফ হোসেন মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার রাতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এমন নির্দেশনা দেন মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক।
সিটি মেয়র বলেন, ‘পবিত্র মাহে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ানো যাবে না। খাদ্যপণ্যে কোনো প্রকার ফরমালিন ব্যবহার করা যাবে না।
‘রমজান মাসে সাধারণ ক্রেতার জন্য দ্রব্যমূল্য যেন অস্থিতিশীল না হয়, সহনশীল পর্যায়ে থাকে, এ বিষয়ে সব পর্যায়ের ব্যবসায়ীকে সহানুভূতিশীল থাকতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রমজান মাসে অতিরিক্ত মুনাফার আশায় পচা, বাসি এবং ভেজাল খাদ্যদ্রব্য যেন বিক্রয় না হয়, সেদিকে ব্যবসায়ীদের নজর দিতে হবে। পবিত্র মাহে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা জোরদার করা হবে।’
মতবিনিময় সভায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার আশ্বাস দেন ব্যবসায়ীরা।
আরও পড়ুন:দাম বাড়ায় অনেকেরই নাগালের বাইরে এখন গরুর মাংস। এই খাদ্যদ্রব্য কিনতে হিমশিত খেতে হয় মধ্যবিত্তদেরও। আর অল্প আয়ের মানুষের কাছে গরুর মাংস যেন স্বপ্ন। তবে তাদের এই স্বপ্ন বাস্তব করার সুযোগ করে দিয়েছে রিটেইল চেইনশপ ‘স্বপ্ন’।
সম্প্রতি ক্রেতাদের জন্য স্বপ্ন কর্তৃপক্ষ অল্প পরিমাণেও গরুর মাংস কেনার সুবিধা দেয়া শুরু করেছে। যে কেউ চাইলে এখন ৫০ গ্রাম বা প্রায় একই পরিমাণ গরুর মাংস কিনতে পারবেন স্বপ্নের আউটলেট থেকে।
স্বপ্নর নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গ্রাহকদের কথা সব সময় চিন্তা করে স্বপ্ন। তাই এমন পরিস্থিতিতে সর্বনিম্ন ২৫০ গ্রাম বা তারও কম গ্রাম গরুর মাংস বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘স্বপ্ন’ ।
সাব্বির হাসান বলেন, যেসব আউটলেটে স্বপ্নর গরুর মাংস বিক্রি হয় সেসব আউটলেটে এখন থেকে সর্বনিম্ন ২৫০ গ্রাম বা তারও কম গ্রামের (২৫০, ২০০, ১০০ গ্রাম বা ৫০ গ্রাম) গরুর মাংস যে কোনো ক্রেতা কিনতে পারবেন।
তিনি বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষের মাংস কিনতে এসে ফিরে যেতে হবে না আর । ১০ মার্চ সকাল থেকে স্বপ্নর আউটলেটগুলোতে স্বপ্নর গ্রাহকরা ওই পরিমাণ মাংস কিনতে পারছেন।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে টুকরা হিসেবে মাছ-মাংস বিক্রি হয় অনেক আগে থেকেই। উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু অঞ্চলেও একইভাবে বিক্রি হয় মাংস। তবে এখানে এখনো এর প্রচার নেই। তাই ক্রেতাদের সুবিধার্থে নতুন উদ্যোগ নিল দেশের অন্যতম সুপারশপ ব্র্যান্ড ‘স্বপ্ন’।
আরও পড়ুন:একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ইমন চৌধুরী। আয় সীমিত হওয়ায় অনেক হিসাব-নিকাশ করে চলতে হয় জানিয়ে এ ব্যক্তি নিউজবাংলাকে বলেন, মূল্যের ক্রমশ ঊর্ধ্বগতির কারণে গরুর মাংসের মতো ব্রয়লারও চলে যাচ্ছে নাগালের বাইরে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে শুক্রবার বাজার করতে আসা ইমন বলেন, ‘আমাদের মতো মাসে হিসাব করে চলা মানুষের জন্য গরুর মাংস খাওয়া অনেক আগেই বিলাসিতা হয়েছে। সবশেষ ভরসা ছিল ব্রয়লার মুরগির ওপর। এখন সেটিও আমাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। আমরা কী খেয়ে বাঁচব?’
তিনি বলেন, ‘ইচ্ছা থাকলেও মাছ-মাংস সন্তানের মুখে দিতে পারছি না। হিসাবের বাইরে গিয়ে কিনলে অন্য খরচে টান পড়ছে। সব পণ্যের দাম একসঙ্গে এভাবে বেড়ে যাওয়া আমার জীবনে এই প্রথম দেখছি।’
ইমনের কথার প্রতিফলন পাওয়া গেল কারওয়ান বাজারসহ রাজধানীর বাড্ডা, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, রামপুরা বাজারে, যেগুলোতে মাছ, মাংসের পাশাপাশি বেড়েছে সবজির দামও।
বাজারগুলোতে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা দরে। খাসির মাংসের দাম প্রতি কেজি ১ হাজার ১০০ টাকা।
মাংসের বাজারে কমছে না উত্তাপ
টানা তিন সপ্তাহ ধরে অস্থির ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি শুক্রবার ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। আর হালিপ্রতি ডিমের দাম ৫০ টাকাই আছে।
গত সপ্তাহে বাজারভেদে ব্রয়লারের কেজি ছিল ২২০ থেকে ২৩০ টাকা।
গরুর মাংসের দামও বেড়েছে বলে জানান ক্রেতা ও বিক্রেতারা।
রামপুরা বাজারের গরুর মাংস বিক্রেতা জমির উদ্দিন বলেন, ‘গত মাসেও গরুর মাংস ৭০০ টাকা কেজি বিক্রি করতে পেরেছি। এখন ৫০ টাকা বাড়তি। সপ্তাহখানেক আগেও ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে বিক্রি করা গেছে। এখন যাচ্ছে না।’
স্বস্তি নেই মাছবাজারে
অপেক্ষাকৃত কম দামি চাষের মাছের দর কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ টাকা। অন্যদিকে ইলিশ, চিংড়ির পাশাপাশি উন্মুক্ত জলাশয়ের মাছগুলোর দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।
চাষের পাঙাশ, তেলাপিয়া থেকে শুরু করে দেশি প্রজাতির সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। আগে প্রতি কেজি পাঙাশ বিক্রি হতো ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়, যা এখন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে তেলাপিয়া মাছের কেজি হয়েছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, যা আগে ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা।
বাড্ডা বাজারে আসা দিনমজুর আকাশ মণ্ডল বলেন, ‘একটা দিন যে ভালো-মন্দ খাব, এখন সেই উপায় নেই। এগুলো দেখার কেউ নেই। আমাদের নিয়ে সরকার ভাবে না।
‘দিনে ৬০০-৭০০ টাকা কামাই। এর মধ্যে যদি ২৫০ টাকায় মাছ কিনি, তাহলে অন্য খরচ কী দিয়ে হবে?’
ওই বাজারের মাছ বিক্রেতা জামাল জানান, তার দোকানে চিংড়ির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়, যা আগে ছিল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা। অন্যান্য চাষের মাছগুলোও বেশ বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
রুই, কাতলা, মৃগেল বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজিতে, যা আগে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা ছিল। দেশি প্রজাতির টেংরা, শিং, গচি, বোয়াল মাছের কেজি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, যা আগে ছিল ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকার মধ্যে, তবে এসব মাছ চাষের হলেও কিছুটা কম দামে মিলছে।
তিনি জানান, সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে মাছের বাজারেও। সে কারণে দাম বেড়েছে।
মুদি বাজারেও দাম বাড়তি
সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে বেড়েছে ডাল ও ছোলার দাম। প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা দরে, যা গত সপ্তাহে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা ছিল। একইভাবে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বুটের ডাল ৯৫-১০০ এবং মাসকলাইয়ের ডাল ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা হয়েছে।
উত্তাপ সবজির বাজারেও
কিছু সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। অন্য কিছু সবজির দর বেশ চড়া।
প্রতি কেজি বেগুন ৮০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, পটল ১২০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ১৪০ থেকে ২৮০ টাকায়। রসুনের কেজি ১৬০ থেকে ২২০ টাকা।
কষ্টে মধ্যবিত্ত
কারওয়ান বাজার ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে বাজার করতে আসা বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। তাদের বেশির ভাগই জানান, তারা মধ্যবিত্ত। বাজারের প্রায় সব পণ্যের চড়া দামে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন।
শাহিন খান নামের এক চাকরিজীবী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার মতো যারা মধ্যবিত্ত, কষ্টটা তাদেরই বেশি। একসাথে সবকিছুর দাম এতটা বেড়ে যাওয়া যেন আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। না পারছি কিছু ভালোমতো কিনতে, না পারছি না খেয়ে থাকতে।’
তিনি বলেন, ‘যারা একেবারে গরিব তারা আমাদের চেয়ে ভালো আছেন। অন্তত মানুষের কাছে হাত পেতে হলেও ভালো-মন্দ খেয়ে চলতে পারছেন। আমাদের তো তা-ও করার জো নেই।
‘আর বড়লোকদের কথা তো বলে লাভই নেই। উনাদের এসবের দাম বাড়া-কমা নিয়ে কোনো চিন্তাই নেই।’
আরও পড়ুন:রোজার মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল ও মালামালের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশ (টিসিবি) ভবন মিলনায়তনে রোববার বেলা ১১টার দিকে সব বাজারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে এ সভা করা হবে বলে অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বেশ কিছুদিন ধরে দেশের বাজারগুলোতে মুরগি, ডিমসহ বিভিন্ন পণ্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। রমজানে চাহিদা বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে পণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা করছেন অনেকে। এমন বাস্তবতায় সভা ডেকেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি। এতে সভাপতিত্ব করবেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
এ ছাড়া রাজধানীর সব বাজারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এ সভায় উপস্থিত থাকবেন।
সুনামগঞ্জে মুরগি, ডিম, খাসি ও গরুর মাংসের বাজার কিছু দিন ধরে অস্থির হয়ে ওঠেছে। খরচ কমাতে ভোক্তারা ডিম ও মাংস কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। অন্য যে কোনো সময় মুরগির দাম বাড়লে ডিম মানুষের ভরসা ছিল। এবার মুরগির উত্তাপে ডিমের দামও সাধারণের নাগালের বাইরে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহে প্রতি হালি ডিমের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা এবং প্রতি কেজি মাংসের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা করে। এদিকে দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি কমেছে বলে জানান বিক্রেতারা।
এক সপ্তাহ আগেও ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকায়। এখন অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়। অথচ একমাস আগেও প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা করে। এক মাসে কেজিতে ১০০ টাকা বেড়েছে মুরগির দাম। একই সঙ্গে বেড়েছে অন্যান্য মুরগির দাম। বেড়েছে হাঁসের দাম এবং গরুর মাংসের দামও।
পৌর শহরের জেল রোডে পোল্ট্রি ফার্মের দোকানে গিয়ে জানা যায়, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা, সোনালী মুরগি প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা, লেয়ার প্রতিটি ৬৫০ টাকা, হাঁস প্রতিটি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১৮০ টাকা করে, সোনালী মুরগি ২৫০ টাকা, লেয়ার প্রতিটি ৫৫০ টাকা এবং হাঁস প্রতিটি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। এদিকে পোল্ট্রি ফার্মের ডিম গত সপ্তাহে প্রতি হালি ৪০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।
ওয়েজখালি বাজার ঘুরে জানা যায়, গরুর মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়। অথচ গত সপ্তাহে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৬৫০ টাকায়।
বিক্রেতারা জানান, সুনামগঞ্জে লোকাল খামারিদের নিকট থেকে ব্রয়লার মুরগি কিনতে পারছি না। সিলেট এবং হবিগঞ্জ থেকে কিনে আনতে হচ্ছে। এছাড়া খাদ্যের দামও বেড়েছে। সবকিছুর জন্যই ব্রয়লার মুরগিসহ অন্যান্য মুরগির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে ক্রেতারা জানান, হু হু করে দাম বাড়ছে, এসব দেখার কি কেউ নেই। কম আয়ের মানুষের কেনায় কাটছাঁট ছাড়া উপায় নেই।
শহরের ওয়েজখালি এলাকার বাসিন্দা সবুজ মিয়া বলেন, ‘বাড়িতে তিন ছেলে-মেয়েসহ আমরা ৫ সদস্যের পরিবার। বাজারে এসে মুরগি, তরকারি, চাল কেনার হিসাব মেলাতে পারছি না। বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেশি। আমাদের চলতে খুব কষ্ট হচ্ছে।’
জেল রোড এলাকার ব্যবসায়ী আলেক মিয়া বলেন, ‘সুনামগঞ্জে লোকাল ব্রয়লার মুরগি কিনতে পাওয়া যায় না। শীতে বাচ্চা মরে যাওয়ার ভয়ে খামারিরা বাচ্চা উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন। আমরা সিলেট, হবিগঞ্জ থেকে ব্রয়লার মুরগি কিনে এনেছি। খাদ্যের দামও বেশি। যে কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য