× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

অর্থ-বাণিজ্য
The dollar crisis will not go away easily
google_news print-icon

‘ডলার সংকট সহজে কাটবে না’

ডলার-সংকট-সহজে-কাটবে-না
পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। ছবি: নিউজবাংলা
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতির এখন প্রধান সমস্যা হচ্ছে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ম্যানেজমেন্ট এবং ডলার সংকট। ডলার সংকটের কারণে রিজার্ভটার পতন হচ্ছে। কয়েক দিন আগে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ আরও কমে ৩২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। ডলারের যে সংকট চলছে, এটা সহজে যে যাবে তা আমার মনে হয় না। ২০২৩ সালজুড়েও ডলার সংকট থাকতে পারে। এটা সহজে দূর হবে না।’

গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও দীর্ঘদিন আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসা আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, অর্থনীতির প্রধান সমস্যা হচ্ছে রিজার্ভ ম্যানেজমেন্ট এবং ডলার সংকট। এ সংকটে রিজার্ভের পতন হচ্ছে। ডলারের যে সংকট চলছে, সেটি সহজে যাবে না। ২০২৩ সালজুড়ে ডলার সংকট থাকতে পারে। এটা সহজে দূর হবে না।

নিউজবাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ শঙ্কার কথা জানিয়েছেন আহসান মনসুর। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নিউজবাংলার বিজনেস এডিটর আবদুর রহিম হারমাছি

দুই বছরের বেশি সময়ের করোনাভাইরাস মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় কেমন চলছে দেশের অর্থনীতি? ২০২২ কেমন গেল? ২০২৩ সাল কেমন যাবে?

২০২২ সাল অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে পৃথিবীর কোনো দেশের জন্যই ভালো ছিল না। পৃথিবীর পরিস্থিতি ছিল টালমাটাল। বাংলাদেশ এটা থেকে দূরে থাকতে পারেনি। বিশ্বায়নের যুগে এককভাবে থাকা সম্ভব না। আমরাও থাকতে পারি না। আমাদের দেশের সঙ্গে সারা বিশ্বের মিল আছে। সারা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে; আমাদের এখানেও বেড়েছিল। এখনও বেশি আছে।

ব্যালেন্স অফ পেমেন্টে (বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্য) বড় ঘাটতি আছে। এটাও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে আছে। বিশ্বের সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়াতে আমরা একটি বড় ধাক্কা খেয়েছি। তেল, চাল, ডালসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়েছে। জাহাজের ভাড়া বেড়ে গেছে।

সব মিলিয়ে আমাদের ব্যালেন্স অফ পেমেন্টে ঘাটতি হওয়াতে আমরা একটা ধাক্কা খেলাম। সবচেয়ে বড় সংকট দেখা দিল এক্সচেঞ্জ রেটে (টাকা-ডলারের বিনিময় হার)। আমাদের এক্সচেঞ্জ রেটে হঠাৎ করে বড় পতন হলো। যদি ভারতের মতো আস্তে আস্তে পতন হতো, তাহলে এটিকে আমরা সহনীয়ভাবে বহন করতে পারতাম। যেহেতু একবারে বোঝাটা পড়েছে, আমাদের পিঠটা ভেঙে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে।

মোদ্দাকথা ইতোমধ্যে ডলারের বিপরীতে আমাদের টাকার ২৫ শতাংশ ডিভ্যালুয়েশন (অবমূল্যায়ন) হয়েছে; আরও কিছু হতে পারে বলা যায় না। এই আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে বিশ্ববাজারে ডলারের মূ্ল্যের যে বড় উল্লম্ফন, সেটা। দুটো মিলিয়ে শকটা বড় আকারের ছিল। ব্যালেন্স অফ পেমেন্টেও ছিল, মূল্যস্ফীতিতেও ছিল। আর সে জন্য আমাদের জনজীবন বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এই দুই-আড়াই বছরে মানুষ খুবই কষ্ট পেয়েছে; এখনও কষ্ট পাচ্ছে। আরও কতদিন এই কষ্ট করে চলতে হবে, কেউ কিছু বলতে পারছে না।

অন্যদিকে সরকারের যে বাজেট ব্যবস্থাপনা, সেখানে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সরকার বাজেটে কাটছাঁট করছে। এর পরেও কাজ হচ্ছে না। বাজেটে ভর্তুকি ছিল ৮০ হাজার কোটি টাকা। সেটি বেড়ে এখন হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।

এটি অকল্পনীয় একটি বোঝা। এত বড় ঘাটতি অনেক কঠিন! সরকার না পারছে বহন করতে, না পারছে জনগণের ওপর ফেলতে। এর ফলে বাজেট ব্যবস্থাপনায় সমস্যা হচ্ছে। অর্থনীতিতে সমস্যা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ২০২২ সালে সরকার ভালো অবস্থায় ছিল না। জনগণ ভালো অবস্থায় ছিল না। বিশ্বের কেউ ভালো অবস্থায় ছিল না।

এতসব সমস্যার মধ্যে স্বপ্নের পদ্মা সেতু বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেল চালু হয়েছে। এই দুটি বড় প্রকল্প দেশের অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে আপনি মনে করেন?

এই দুটি আমাদের কাঙ্ক্ষিত প্রকল্প। পদ্মা সেতু অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে, তবে মেট্রোরেল তো আর সঙ্গে সঙ্গে কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না। এটার প্রভাব বোঝা যাবে ২ বছর পরে পুরোপুরি শেষ হলে, তবে বাংলাদেশে একটি আধুনিক যাতায়াত ব্যবস্থা হলো। বাংলাদেশও যে পারে, তা প্রমাণিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। এ কথা ঠিক যে, ২০২২ সালটা খুবই কঠিন বছর ছিল, সংকটের বছর ছিল, চাপের বছর ছিল। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে কেটেছে। একটার পর একটা বিপদ এসেছে। এসব সামাল দিতে সরকারকে হিমশিম খেতে হয়েছে। এখনও খেতে হচ্ছে। সরকার উদ্যোগ নিয়েছে, এখনও নিচ্ছে, কিন্তু বিশ্ব পরিস্থিতি অনুকূলে আসছে না।

এতকিছুর মধ্যেও পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল দেশের মানুষকে আশা জাগিয়েছে, যার ইতিবাচক ফল মানুষ পাচ্ছে। সরকারও সাহস পেয়েছে। মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হলে এই আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার পুরোপুরি সুফল পাবে মানুষ, তবে এখানেই থেমে থাকলে চলবে না। সমস্যা থাকবে, সংকট থাকবে।

বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বলছে, ২০২৩ সালটা আরও কঠিন যাবে। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে মন্দাও দেখা দিতে পারে। এর মধ্যেও আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে হবে। যেসব বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ আমরা শুরু করেছিলাম, অনেকটি শেষের দিকে, সেগুলো দ্রুত শেষ করে উৎপাদনে যেতে হবে। শুধু রাজধানীর ভেতরে নয়, আশপাশের জেলাগুলোর সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগব্যবস্থা সহজ করতে মেট্রোরেল করতে হবে। এই যে শুরু হয়েছে, এটা অব্যাহত রাখতে হবে। তাহলেই আমরা ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন এবং ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশের যে স্বপ্ন দেখছি, তা পূরণ করতে পারব।

দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলো এখন কী অবস্থায় আছে?

আমাদের অর্থনীতির এখন প্রধান সমস্যা হচ্ছে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ম্যানেজমেন্ট এবং ডলার সংকট। ডলার সংকটের কারণে রিজার্ভটার পতন হচ্ছে। কয়েক দিন আগে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ আরও কমে ৩২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। ডলারের যে সংকট চলছে, এটা সহজে যে যাবে, তা আমার মনে হয় না। ২০২৩ সালজুড়েও ডলার সংকট থাকতে পারে। এটা সহজে দূর হবে না।

কতগুলো বিষয় আছে, যেগুলো ২০২৩ সালজুড়েই থাকবে। এগুলো সহজে যাবে না। যেমন: ব্যক্তি খাতে যে ১৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ আছে, সেটা তো আমরা শোধ করতে পারিনি। সেটাকে আমরা সামনের দিকে ঠেলে দিয়েছি। আমরা এক বছর পিছিয়ে দিয়েছি। অনেক এলসি (ঋণপত্র) ডেফার করা হয়েছে, সেগুলোকে সামনে আমাদের পে করতে হবে। সামনের দিকে আমাদের পেমেন্টের ঝামেলাটা রয়ে গেল, শেষ হলো না। এই ডলারের টানাপোড়েন চলবে।

যতদিন পর্যন্ত না আমাদের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান দুই সূচক রপ্তানি আয় বাড়ে ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স না বাড়বে, ততদিন এই টানাপোড়েন চলবে। রেমিট্যান্সের ব্যাপারে একটু হতাশা আছে। প্রচুর লোক বিদেশ গিয়েছে। সেই দেশগুলোর কিন্তু এখন রমরমা অবস্থা। তেলের বাজার গরম। তাদের গরম অবস্থা।

গত বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১১ লাখ লোক কাজের জন্য বিভিন্ন দেশে গিয়েছে, কিন্তু সেই অনুযায়ী কিন্তু আমরা রেমিট্যান্সের প্রত্যাশিত প্রবাহটা পাচ্ছি না। আমরা দেখছি, সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্সের প্রবাহটা বাড়েনি; উল্টো কমে গেছে। রেমিট্যান্স বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এই বৈপরীত্য কেন?

আমরা মনে করছি, অর্থ পাচারের কারণে সৌদি আরবের টাকা চলে যাচ্ছে। সে কারণে মধ্যপ্রাচ্যের টাকা আমরা পাচ্ছি না। আর যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্য থেকে টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলে আসে। এখানে হুন্ডিটা থাকে না। এ ক্ষেত্রে আমরা পুরো ডলারটা পাচ্ছি; আমাদের দেশি ভাইরা যে টাকাটা পাঠাচ্ছেন। আর মধ্যপ্রাচ্যের ডলারটা পাচ্ছি না। টাকাটা তাদের পরিবারের কাছে চলে আসছে ঠিক; কিন্তু ডলারটা হারিয়ে যাচ্ছে, আমাদের সেন্ট্রাল ব্যাংকের কাছে আসছে না।

দ্বিতীয় যে জিনিসটা আমাদের ভাবতে হবে, রাজস্বের ক্ষেত্রে আমাদের একটি সমস্যা চলছে। গত বছরও ছিল; এ বছরও থাকবে। কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় হবে না। ২০২২ সালে কর জিডিপি রেশিও আরও কমেছে। আগে সাড়ে আটের মধ্যে ছিল, কিন্তু সেটা কমে কোথায় দাঁড়াবে আমরা জানি না, তবে এটা সাড়ে আটের নিচে হবে। এটা খুব দুঃখজনক। এটা আমাদের ব্যর্থতা। সরকারের সক্ষমতা থাকছে না।

সরকার দেশের বাইরে থেকে, দেশ থেকে ঋণ করছে। আরেকটা বিষয় না বললেই নয়, ব্যাংকিং খাতে আমরা ভালোর দিকে যেতে পারিনি। দিন যত যাচ্ছে, ব্যাংক খাতের অবস্থা ততই খারাপ হচ্ছে। খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। ২০২২ সালে আমরা এখানে বিশাল কিছু কেলেঙ্কারি দেখলাম। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের টাকা সবচেয়ে বেশি ভাবিয়ে তুলেছে। কারণ এখানে অনেক ব্যাংকের মালিকানা একই ব্যাংকে আছে। আর ইসলামী ব্যাংক হচ্ছে ব্যক্তি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যাংক। সেই ব্যাংকটার অবস্থা এখন খুবই খারাপ; পর্যুদস্ত অবস্থা। তাদের এখন ৮ শতাংশ সুদে টাকা ধার নিতে হচ্ছে। এটা তো চিন্তা করা যায় না। অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় অনেক বেশি দিচ্ছে। তার মানে কী? যারা বেশি দেয় তাদের দুরাবস্থার কারণেই বেশি দিতে হয়। তারা বাধ্য দিতে। এই ব্যাংকটার অবস্থা খারাপ। আমরা আশঙ্কা করছি এই ব্যাংকটির অবস্থা খারাপ কিন্তু কতখানি খারাপ সেটা বোঝা যাচ্ছে না।

সরকার কিছু বলছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে না, কিন্তু গুজব বেড়ে যাচ্ছে। ফলে তাদের তারল্য সংকটও বেড়ে যাচ্ছে। আরও কয়েকটি ব্যাংকের অবস্থা খারাপ। ২০২২ সালে ব্যাংকিং খাত নিয়ে একটি আস্থাহীনতা ছিল।

ব্যাংকের ডিপোজিটের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে নিচে ৮ শতাংশের কাছাকাছি নেমে এসেছে। এ রকম দেশে ১৪ থেকে ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়ার কথা। আমরা সেটা স্বাভাবিক পাচ্ছি না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ব্যাংকিং খাতে নিয়মিত খেলাপি ঋণ এখন লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। অবলোপন বা রাইট অফ এবং মামলার কারণে আটকে থাকা খেলাপি ঋণ যোগ করলে মোট অঙ্ক আড়াই লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তাহলে ২০২২ সালই কি ব্যাংকিং খাত বেশি খারাপ গেল?

ব্যাংকিং খাত ধারাবাহিকভাবেই খারাপ যাচ্ছিল। আমরা অনেকেই উদ্বিগ্ন। আমরা আশা করেছিলাম যে একটি ব্যাংকিং কমিশন হবে। সরকারও বলেছিল। সরকার সে কাজটি করেনি।

যে স্ক্যামগুলো (ঋণ অনিয়ম বা কেলেঙ্কারি) হলো, সেগুলোর একটিরও বিচার হয়নি। ইসলামী ব্যাংকগুলোর ব্যাপারে যে প্রশ্নগুলো উঠেছে, সেগুলোর কিন্তু কোনো উত্তর সরকারের কাছ থেকে আমরা পাইনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। তারা আশ্বস্ত করছে না।

সরকার বলুক যে, তারা ভালো আছে। সেটাও বলছে না। আবার খারাপ আছে, সেটাও বলছে না। আমরা শুনতে চাই, দেশবাসী শুনতে চায়, কিন্তু সরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছুই বলছে না। আমি এখানে একটি দ্বিধা দেখছি, একটি শঙ্কা দেখছি। এখানে ট্রান্সপারেন্সি বাড়াতে হবে।

একটি গ্রুপের হাতে কয়েকটি ব্যাংকের মালিকানা। সেই ব্যাংকগুলোর অবস্থাই এখন খারাপের দিকে যাচ্ছে। এটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

এখানে দুটো বিষয় আছে। একটি হচ্ছে একজনের হাতে কয়েকটি ব্যাংকের মালিকানা। শেয়ারহোল্ডাররা একটি ব্যাংকের শেয়ারে থাকবে, কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে যে তারা কন্ট্রোলিং শেয়ারে থাকছে। এর ফলে ঝুঁকি একটু বেশি। এখানে যেহেতু একজন মালিক যদি একটি ব্যাংকের কিছু হয়, তাহলে অন্য ব্যাংকগুলোও সমস্যায় পড়ে যাবে। আস্থার যখন সংকট হয়, তখন সবাইকেই আস্থার সংকেটর মধ্যে ফেলে দেয়া হয়। এখান থেকে আমাদের বের হয়ে আসা উচিত।

দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে ঋণের কনসেনট্রেশন। কিছু ব্যক্তি বা পরিবার হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে। তারা আইন মেনে যদি নেন, সেটা এক কথা, কিন্তু নিজের ব্যাংক থেকে যদি ঋণ নেন নামে এবং বেনামে, সেটা কিন্তু আরেকটি সমস্যা। এ বিষয়ে সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংক সুস্পষ্টভাবে কিছু করছে না। এ বিষয়ে আমাদের জানার অধিকার আছে; দেশের মানুষের জানার অধিকার আছে, কিন্তু আমরা কিছুই জানছি না। এসব কারণে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। এসব কারণে আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে।

আপনি অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলো নিয়ে বলছিলেন। তাতে হতাশার দিকই বেশি উঠে এসেছে। রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে কিন্তু আশার আলো দেখা যাচ্ছে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে পণ্য রপ্তানিতে চমকের পর চমক দেখিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। নভেম্বরের পর ডিসেম্বরেও পণ্য রপ্তানি থেকে বিলিয়ন ডলারের বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে। আগামী দিনগুলো কেমন যাবে?

এটা খুশির খবর যে দুই-আড়াই বছরের করোনা মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় তছনছ হয়ে যাওয়া বিশ্ব অর্থনীতিতেও রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা আমরা অব্যাহত রাখতে পেরেছি। ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৫২ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছিল। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকেই এসেছিল ৪২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

শতাংশ হিসাবে মোট রপ্তানির ৮২ শতাংশই এসেছিল পোশাক খাত থেকে। আর চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) ২৭ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে ১০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এ ছয় মাসে রপ্তানির ৮৪ শতাংশের বেশি এসেছে পোশাক থেকে।

বিস্ময়কর হলো এই কঠিন বিশ্ব পরিস্থিতিতে শেষ দুই মাসে অর্থাৎ নভেম্বর-ডিসেম্বর দুই মাসেই ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। নভেম্বরে এসেছে ৫ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। আর ডিসেম্বরে এসেছে আরও বেশি ৫ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশে এর আগে কখনোই কোনো একক মাসে ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় আসেনি। সামগ্রিকভাবে বলা যায়, নানা বাধা-বিপত্তি ও চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বিদায়ী ২০২২ সালে রপ্তানি ভালো হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও ভালো হয়েছে।

নভেম্বরে আমাদের রপ্তানি আয়ে রেকর্ড হয়। ডিসেম্বরে সেই রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড হয়। গত বছর (২০২২ সাল) তৈরি পোশাক খাত থেকে এসেছে ৪৫ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার, যেটা আগের বছর ছিল ৩৫ বিলিয়ন ডলারের মতো। ১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি বেড়েছে এক বছরে।

এর কারণ আমরা করোনা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য অনেক কাজ করেছি; বিভিন্ন বাজারে গিয়েছি। আমাদের বড় বাজারগুলোতে গিয়েছি। এমার্জিং মার্কেটেও গিয়েছি, তবে এখানে ধোঁয়াশা আছে। রপ্তানির যে চাহিদা সেটা কিন্তু বাড়ছে না ব্যাপকভাবে। একই সময় আমাদের পণ্যের, বিশেষ করে তৈরি পোশাকের চাহিদা কিন্তু বাড়ছে না।

আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের কারণেই হোক বা কোভিডের কারণে চীন থেকে অনেকে সরে আসছেন, অনেক বায়ার বাংলাদেশে আসছেন। সে কারণে আমাদের রপ্তানি হয়তো কিছুটা বাড়ছে। যতদিন পর্যন্ত এই ডাইভারশন থাকবে, আমাদের বাজার ভালো থাকবে।

আমার মনে হয়, আমাদের তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাড়বে, তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, কোভিডের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে আমাদের পোশাকের প্রধান বাজার আমেরিকা ও ইউরোপে মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। ওই সব দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। পরিস্থিতি যদি আরও খারাপের দিকে যায়, তাহলে কিন্তু এখনকার রমরমা অবস্থা থাকবে না।

মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে ব্যাংকঋণের সুদের হার বাড়ানোর কথা বলছেন অর্থনীতিবিদরা। তিন মাস ধরে নানা যুক্তি উপস্থাপন করে আপনি ঋণের সুদের হার বাড়ানোর কথা বলছেন, কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে কিছু বলবেন?

আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি, আর দেরি না করে ব্যাংকঋণের সুদের হার এখনই বাড়ানো উচিত। বাজারব্যবস্থায় কোনো কিছুর মূল্য বেঁধে রাখা ঠিক না। সেটা তেলের মূল্য হোক, চালের মূল্য হোক বা সুদের হার হোক। কোনোটা ধরে রাখা সার্বিকভাবে ভালো না। নয়-ছয় সুদের হার পরিবর্তন না করে আমরা কী ধরনের রিস্কের মধ্যে পড়ছি। আমাদের দুইভাবে দেখতে হবে একটি হচ্ছে আমাদের কী ঝুঁকি আসবে। আমরা যদি ‍সুদের হারটাকে একটু বাড়াতাম। তাহলে কিন্তু আমাদের এক্সচেঞ্জ রেটের ওপর আমাদের চাপটা কমে আসত। সেটা কিন্তু আমরা করছি না। এখন কিন্তু এক্সচেঞ্জ রেটের ওপরে আমাদের চাপটা কমে আসত। এক্সচেঞ্জ রেটগুলো একীভূত করা হয়নি। বাজারে ডলারের যে সংকট সেটা কিন্তু চলছে। এই সংকট কাটছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেই সমস্যায়।

ব্যাংকগুলো মার্কেট থেকে ডলার কিনছে বেশি দামে। সুদের হার যদি বাড়ানো যেত, তাহলে রিটার্ন অন টাকা বাড়ানো যেত। তাহলে সমস্যা কমত।

গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বিভিন্ন দাতা দেশ সংস্থার কাছ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ সহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ। এখন তা অনেক কমে গেছে। কেন কমছে?

আমি দেখি যে বাংলাদেশের স্বাভাবিক যে লেভেলটা ছিল, সেটা ছিল ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছর বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি হয়েছিল। বিদেশিরা স্বাস্থ্য খাত উন্নত করতে আমাদের সাহায্য করেছে। এ কারণে গত বছর ২০২০-২১ অর্থবছরে আমাদের ঋণের অর্থপ্রবাহ ছিল ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি, সেটা কিন্তু এ বছর হবে না। এ বছর আমরা হয়তো আবার ৮ বিলিয়নে ফেরত চলে আসব। সরকার যেটা চাচ্ছে কিছু বাজেট সাপোর্ট দিয়ে এটাকে ১০ বিলিয়নের কাছাকাছি নিয়ে আসতে। আইএমএফ থেকে কিছু পাবে। আর বাজেট সহায়তা হিসেবে বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ অন্যান্য দাতা সংস্থার কাছ থেকে সবকিছু মিলিয়ে যদি এটা ১০-১১ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে আসা যায়, সেটা খুবই ভালো হবে। এই সংকটকালে কম সুদের ঋণ কাজে লাগবে।

আরও পড়ুন:
বস্তায় নয়, এখন ঘুষ লেনদেন ডলারে: হাইকোর্ট
রেমিট্যান্স পাঠাতে চার্জ লাগবে না প্রবাসীদের
ডলারসংকটে বিপাকে পোশাক রপ্তানিকারকরা
৪ মাসেই ৫ বিলিয়ন বিক্রি, তারপরও ডলার নেই ব্যাংকে
উচ্চ আয়ের প্রবাসীরাও পাবেন ডলারপ্রতি ১০৭ টাকা

মন্তব্য

আরও পড়ুন

অর্থ-বাণিজ্য
The vegetable market is heated raw pepper
বাজারদর

সবজির বাজারে উত্তাপ, কাঁচামরিচ আড়াইশ

সবজির বাজারে উত্তাপ, কাঁচামরিচ আড়াইশ

সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই সবজির অনেক দাম বেড়েছে। প্রায় সব সবজির দামই ৮০ টাতা থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। এদিকে কাঁচামরিচের দাম প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে এখন আড়াইশ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। বেগুন ও শসার দাম উঠেছে ৮০ থেকে ১২০ টাকার ঘরে। মাছ ও মুরগিও আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, গত সপ্তাহে যেসব সবজির দাম ছিল প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে, সেগুলোর দাম এখন ৬০ থেকে ১০০ টাকা। যেমন—৬০ টাকার গোল ও লম্বা বেগুন এখন ৮০ থেকে ১২০ টাকা, ঝিঙে ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ও ধুন্দল এখন ৬০ টাকা, কাঁকরোল, লতি, বরবটি, করলা ৮০ টাকা, ৪০ টাকার পটোল, ঢেঁড়শ, লাউ, মুলা এখন ৬০ টাকা কেজি।

কচুরমুখীর কেজি ৫০ থেকে বেড়ে ৬০ টাকা, টমেটো ১২০ থেকে বেড়ে ১৪০ টাকা, আলু ২৫ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, কাঁচা কলা (হালি) ৪০ টাকা, কুমড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি। সবজির মধ্যে কেফসি প্রজাতির সবুজ কাঁচামরিচ ২৮০ টাকা কেজি, হলুদ মরিচ ৮০০ টাকা কেজি, চাইনিজ ধনেপাতা ৩০০ টাকা কেজি, গাজর ১৪০ টাকা, শসা (হাইব্রিড) ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি, দেশি শসা ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। আর ২০০ টাকার কাঁচামরিচ এখন বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা প্রতি কেজি।

এদিকে বাজারে ব্রয়লার, পাকিস্তানি ও দেশি মুরগির দামও আগের মতোই চড়া। বাজারে আজ ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকা কেজি দরে। আর পাকিস্তানি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩১০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫৫০-৬০০ টাকা।

বিক্রেতা শিপন জানান, ‘বড় সাইজের ব্রয়লার এখন কম আসছে, তাই দাম কিছুটা বেশি। পাকিস্তানি ও দেশি মুরগির দাম এক মাস ধরে প্রায় একই আছে, তবে আগে কিছুটা কমে পাওয়া যেত।’

মাছের বাজারেও তেমন কোনও পরিবর্তন নেই। গতকাল শুক্রবার হওয়ায় অনেক ধরনের মাছের দাম কিছুটা বেশি দেখা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের মতো আজও দুই থেকে আড়াই কেজি ওজনের রুই মাছের দাম প্রতিকেজি ৪৫০ টাকা, দেড় থেকে ২ কেজির দাম প্রতিকেজি ৩৬০ থেকে ৩৮০ টাকা, এক থেকে দেড় কেজির ওজনের রুই মাছের দাম প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকা, আর এক কেজির কম ওজনের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা কেজি দরে।

এছাড়া পোয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি দরে, মৃগেল মাছ প্রতি কেজি ২৮০ টাকা, তেলাপিয়ার দাম প্রতি কেজি আড়াইশ টাকা, এক কেজি থেকে কিছুটা বেশি পাঙাশের দাম ১৮০ টাকা কেজি, দেড় কেজি বেশি ওজনের পাঙাশের দাম ২৫০ টাকা কেজি। শিং মাছ প্রতি কেজি সাড়ে পাঁচশত থেকে ৬০০ টাকা। চিংড়ি মাছ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১৪০০ টাকা প্রতি কেজি, আর ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকা কেজি।

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
The 5th Intex Bangladesh Exhibition starts in Dhaka

ঢাকায় শুরু ১৬তম ইনটেক্স বাংলাদেশ এক্সিবিশন

ঢাকায় শুরু ১৬তম ইনটেক্স বাংলাদেশ এক্সিবিশন

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সফল গার্মেন্টস ক্রেতা, বিপনন ও সরবরাহকারী এবং সোর্সিং এক্সিবিশন খ্যাত ইনটেক্স বাংলাদেশের ১৬তম আসর আজ রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি)-তে শুরু হয়েছে। এই তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক টেক্সটাইল সোর্সিং শোতে ১০টিরও বেশি দেশের ১২৫টির অধিক কোম্পানি অংশ নিচ্ছে, যা বিশ্বব্যাপী ক্রেতা, সরবরাহকারী এবং উৎপাদনকারীদের জন্য একটি গতিশীল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।

পোশাক খাতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ-এর নিত্য উদ্ভাবনী কৌশল ও উন্নতমানের দ্রুত উৎপাদন ক্ষমতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের চাহিদায় প্রাধান্য পাচ্ছে।

২০২৬ সালের মধ্যে তৈরি পোশাক শিল্প রপ্তানি ৫৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ইনটেক্স-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা, সাপ্লাই চেইনে বৈচিত্র্য আনা এবং টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্পে উদ্ভাবন প্রদর্শনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, গেস্ট অব অনার হিসেবে ছিলেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন।

এছাড়াও বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং এলএবিসিসিআই, কেবিসিসিআই ও বিজিসিসিআই-এর মতো দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সংস্থার নেতৃবৃন্দও অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

মাহবুবুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশ এখন পোশাক খাতে বিশ্ব বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দ্রুত টেকসই ও মূল্য-সংযোজিত পোশাক উৎপাদনের একটি বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। উদ্ভাবন, কমপ্লায়েন্স এবং দক্ষ কর্মী নিয়োগে কৌশলগত বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশটি দায়িত্বশীল ফ্যাশন ও টেক্সটাইল সোর্সিংয়ের পরবর্তী অধ্যায় নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। আমরা বিশ্বাস করি, ইনটেক্স বাংলাদেশের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, পাশাপাশি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক বাজারে মানসম্পন্ন পণ্য নিশ্চিত করবে”

এই বছরের এক্সপোতে বিভিন্ন দেশের উল্লেখযোগ্য প্যাভিলিয়নের মধ্যে ভারতের (টেক্সপ্রোসিল ও পেডেক্সিলের মাধ্যমে) তুলা, মিশ্র সুতা ও টেকসই টেক্সটাইল প্রদর্শন করছে। চীন নিয়ে এসেছে টেকনিক্যাল ফ্যাব্রিক ও গার্মেন্টস ট্রিম। দক্ষিণ কোরিয়া পরিবেশবান্ধব পারফরম্যান্স উপকরণ প্রদর্শন করছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ড ও জাপান নিয়ে এসেছে প্রিমিয়াম শার্টিং ও বোনা পণ্য। বাংলাদেশি প্রদর্শনকারীরা নিটওয়্যার, ডেনিম এবং ভার্টিক্যালি ইন্টিগ্রেটেড উৎপাদন সমাধানের অগ্রগতি তুলে ধরছে।

এক্সপোর মূল্যবোধ আরও বাড়াতে ইন্টারেক্টিভ বিজনেস ফোরাম (আইবিএফ) দুটি সেশনের আয়োজন করেছে। প্রথম সেশনে টেক্সটাইল উৎপাদন ও ফ্যাশনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সংযুক্তি নিয়ে আলোচনা করা হবে, অন্যদিকে দ্বিতীয় সেশনে বৈশ্বিক শুল্ক ও বাণিজ্য পরিবর্তনের বাংলাদেশি রপ্তানির প্রভাব নিয়ে আলোচনা হবে। এই সেশনগুলোতে এ শিল্পের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা অংশ নিচ্ছেন, যা ব্যবসায়িক স্থিতিস্থাপকতা ও বৃদ্ধির কৌশল প্রদান করবে।

প্রদর্শনীর পাশাপাশি, ইনটেক্স বাংলাদেশ ২০২৫-এ ব্যবসায়িক সভা (বি২বি), ভিআইপি নেটওয়ার্কিং এবং ক্রেতা-সরবরাহকারীদের মধ্যে ম্যাচমেকিং সুবিধা রয়েছে— যা সোর্সিং ও ব্যবসায়িক সম্প্রসারণের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ অভিজ্ঞতা প্রদান করছে।

ওয়ার্ল্ডেক্স ইন্ডিয়ার আয়োজিত এই ইভেন্টটি বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিজিবিএ, ইপিবি এবং আইবিসিসিআই, এলেবিসিসিআই, কেবিসিসিআই ও বিজিসিসিআইয়ের মতো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার সমর্থন পেয়েছে।

বাংলাদেশ যখন আরও উদ্ভাবনী ও টেকসই টেক্সটাইল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছে, ইনটেক্স বাংলাদেশ বিশ্ব বাজারের সাপ্লাই চেইনের সাথে দেশটিকে সংযুক্ত করার একটি প্রধান সমর্থক হিসেবে কাজ করছে।

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
Foreign investment in the country has decreased by 5 percent

দেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৩ শতাংশ

দেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৩ শতাংশ

দেশে ২০২৪ সালে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ—এফডিআই আগের বছরের চেয়ে ১৩ শতাংশ কমেছে। গত বছর প্রকৃত এফডিআই এসেছে ১২৭ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ। ২০২৩ সালে নিট এফডিআই ছিল ১৪৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের বিশ্ব বিনিয়োগ রিপোর্টে বিদেশি বিনিয়োগ আসার ওই পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশে ২০২৪ সাল শেষে বিদেশি বিনিয়োগের স্থিতি ১ হাজার ৮২৯ কোটি ডলার, যা দেশের জিডিপির মাত্র ৪ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ায় এ ক্ষেত্রে গড় হার ১৩ শতাংশ।

ভারতের হার ১৪ শতাংশ। ভুটানের মতো দেশে এ হার ১৭ শতাংশ। বাংলাদেশে ২০২৪ সালে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগে অর্থের ঘোষণার পরিমাণও কমেছে।

ঘোষিত অর্থের পরিমাণ ১৭৫ কোটি ডলার। গত বছরের তুলনায় যা ৩৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে বিদেশে মাত্র ৭০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৮৫ কোটি টাকা।

গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২১ সালে দেশের বাইরে সর্বাধিক ৮ কোটি ডলারের বিনিয়োগ করেন বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব যখন আরো গভীর সহযোগিতা ও বিস্তৃত সুযোগ সৃষ্টির দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা, তখন ঘটছে তার বিপরীত। ২০২৪ সালে বৈশ্বিকভাবে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ১১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার, যা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় ধাক্কা। অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে মন্দা, শিল্প খাতে চাপ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি কম মনোযোগ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। বাণিজ্য উত্তেজনা, নীতিগত অনিশ্চয়তা এবং ভূরাজনৈতিক বিভাজন বৈশ্বিক বিনিয়োগ পরিবেশকে আরো জটিল করে তুলছে।

তবে অন্ধকারে কিছুটা আশার আলোও রয়েছে। ডিজিটাল অর্থনীতিকে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও এর প্রবৃদ্ধি এখনো অসম। ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে ডিজিটাল পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি। কারণ, ডিজিটাল সংযুক্তি হতে পারে অন্তর্ভুক্তিমূলক অগ্রগতির একটি শক্তিশালী চালিকাশক্তি, যদি তা সবার কাছে পৌঁছানো যায়। প্রতিবেদনটি সরকারগুলোকে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের মাধ্যমে গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজিএস) অর্জনে সহায়তা করার বিষয়ে ব্যবহারিক নির্দেশনা দিয়েছে। এ সময়টাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একসঙ্গে কাজ করার, যাতে আরো সহনশীল ও টেকসই বিশ্ব গড়ে তোলা যায়। সে লক্ষ্যে প্রতিবেদনটি বিভিন্ন নীতিগত ধারণা ও পরামর্শ তুলে ধরেছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবং এর আগ থেকে জ্বালানি সংকটের কারণে বিদেশি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। যার প্রভাব কিছুটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হলেও সেটি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সন্তোষজনক নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট ২০২৪ এ প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২০ সালের চেয়ে ২০২১ সালে এফডিআই প্রবাহ বেড়েছিল ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ২০২২ সালে প্রবাহ ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়ে ছিল ৩৪৮ কোটি ডলার। ২০২৩ সালে ১৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ কমে প্রবাহ হয়েছে ৩০০ কোটি ৪০ লাখ ডলারের। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ভিয়েতনামে বেড়েছে ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। কম্বোডিয়ায় এফডিআই প্রবৃদ্ধি ২০২৩ সালে হয়েছে ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ। পাকিস্তানে এফডিআই প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

২০২৩ সালে ৪৫টি স্বল্পোন্নত দেশে (এলডিসি) এফডিআই ১৭ শতাংশ বেড়ে ৩১ বিলিয়ন ডলারে দাড়িয়েছে। এর প্রায় ৫০ শতাংশ প্রবাহ কেন্দ্রীভূত ছিল কম্বোডিয়া, ইথিওপিয়া, বাংলাদেশ, উগান্ডা এবং সেনেগাল—এ পাঁচ দেশে। গত এক দশকে স্বল্পোন্নত দেশের বহিঃখাতগুলোয় অর্থায়নের অন্যান্য উৎসের তুলনায় এফডিআই প্রবৃদ্ধিই পিছিয়ে আছে। সামগ্রিকভাবে উন্নয়ন সহায়তা এবং রেমিট্যান্স হার স্বল্পোন্নত দেশের তুলনায় উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোর তুলনায় বেশি। ওই বছর বৈশ্বিকভাবে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবাহ ১০ শতাংশের বেশি কমে ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারে স্থবির ছিল।

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
Bri has invented three new varieties of rice

নতুন আরো তিন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছে ব্রি

নতুন আরো তিন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছে ব্রি

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ধানের আরও তিনটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে একটি লবণাক্ততা সহনশীল, একটি উচ্চফলনশীল বোরো এবং অন্যটি ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী। এ নিয়ে ব্রি আটটি উচ্চফলনশীল বা হাইব্রিড জাতসহ মোট ১২১টি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে।

নতুন উদ্ভাবিত তিনটি জাত হলো; লবণাক্ততা সহনশীল ব্রি-১১২, উচ্চফলনশীল বোরো ব্রি-১১৩ ও ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী ব্রি-১১৪। গত বুধবার জাতীয় বীজ বোর্ডের (এনএসবি) ১১৪তম সভায় নতুন এ তিনটি জাত অনুমোদন করা হয়।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের সভাপতিত্বে বোর্ড সভায় ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মোহাম্মদ খালেকুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ জানায়, নতুন উদ্ভাবিত জাতগুলোর মধ্যে ব্রি ধান-১১২ লবণাক্ততা সহনশীল ও মাঝারি জীবনকালীন রোপা আমনের জাত। এ জাতের ডিগপাতা প্রচলিত ব্রি ধান-৭৩-এর চেয়ে খাড়া। ব্রি ধান-১১২ লবণাক্ততার মাত্রাভেদে হেক্টর প্রতি ৪ দশমিক ১৪ থেকে ৬ দশমিক ১২ টন ফলন দিতে সক্ষম। এ জাতের জীবনকাল ১২০ থেকে ১২৫ দিন এবং গাছের উচ্চতা ১০৩ থেকে ১০৫ সেন্টিমিটার। গাছের কাণ্ড মজবুত। এ কারণে ঢলে পড়ে না। এ জাতের ধানের চাল মাঝারি চিকন ও সাদা। ভাত ঝরঝরে। এটি লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। দানা মাঝারি চিকন ও শিষ থেকে ধান সহজে ঝরে পড়ে না। জীবনকাল তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলে ফসল কর্তনের পর মধ্যম উঁচু থেকে উঁচু জমিতে সূর্যমুখী ও লবণ সহনশীল সরিষা আবাদের সুযোগ তৈরি হবে।

ব্রি ধান-১১৩ জাতটি বোরো মৌসুমের জনপ্রিয় জাত ব্রি-২৯-এর বিকল্প হিসেবে ছাড়করণ করা হয়েছে। এটি মাঝারি চিকন দানার উচ্চফলনশীল জাত। এ জাতের ডিগপাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা এবং ধান পাকলেও সবুজ থাকে। গাছ শক্ত ও মজবুত বিধায় সহজে হেলে পড়ে না। জাতটির গড় জীবনকাল ১৪৩ দিন। চালের আকার-আকৃতি মাঝারি চিকন ও রং সাদা। দেখতে অনেকটা নাজিরশাইলের মতো। এ ধানের চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৮ শতাংশ এবং ভাত ঝরঝরে। এ ছাড়া প্রোটিনের পরিমাণ ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষায় দেখা গেছে, জাতটি ব্রি ধান-৮৮-এর চেয়ে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি ফলন দিয়েছে। এ জাতের গড় ফলন হেক্টরে ৮ দশমিক ১৫ টন। উপযুক্ত পরিবেশে সঠিক ব্যবস্থাপনা করলে জাতটি হেক্টরে ১০ দশমিক ১ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম।

কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, নতুন ব্রি ধান-১১৪ বোরো মৌসুমের দীর্ঘ জীবনকালীন ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী জাত। এ জাতের ডিগপাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা। গাছ মজবুত এবং হেলে পড়ে না। পাতার রং গাঢ় সবুজ। এর গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৭ দশমিক ৭৬ টন। দানা মাঝারি মোটা এবং সোনালি বর্ণের। ভাত ঝরঝরে হয়। জাতটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতাসম্পন্ন। ফলে এ জাতের ধান চাষে কৃষককে ব্লাস্ট রোগ নিয়ে বাড়তি চিন্তা করতে হবে না, উৎপাদন খরচ সাশ্রয় হবে।

ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, জাতগুলো অনুমোদন লাভ করায় এখন আমরা এসব ধানের বীজ বাজারজাত করতে পারব। কৃষকেরা এ জাতের ধান চাষ করে লাভবান হবেন। তাদের উৎপাদনও বাড়বে। উপকূলীয় অঞ্চলে পানিতে লবণের পরিমাণ বেশি থাকায় অনেক সময় ধান চাষ করা যেত না। এখন আমাদের ব্রি ধান-১১২ সেসব এলাকায় সহজে চাষ করা যাবে। এ ছাড়া অন্য জাতগুলো আমাদের ধান উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।

সূত্র: বাসস

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
Customs VAT and Tax Office will be open on June 23 and 26

২১ ও ২৮ জুন কাস্টমস, ভ্যাট ও কর কার্যালয় খোলা থাকবে

২১ ও ২৮ জুন কাস্টমস, ভ্যাট ও কর কার্যালয় খোলা থাকবে

আগামী ২১ ও ২৮ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং এর অধীনে সব কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর কার্যালয় খোলা থাকবে। শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও ওই দুই দিনও খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

মূলত রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। গতকাল বুধবার এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে এনবিআর। গত ২ জুন আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। ২২ জুন বাজেট চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) মোট ৩ লাখ সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকা আদায় করেছে। এটি সাময়িক হিসাব। ভ্যাটের রিটার্ন দাখিলের হিসাবের এই সংখ্যা আরও বাড়বে। লক্ষ্য অর্জনে শুধু জুন মাসেই সব মিলিয়ে ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে হবে এনবিআরকে।

এনবিআরকে চলতি অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সংশোধিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। মূল লক্ষ্য ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
From now on the dollar will be market based Governor

এখন থেকে ডলারের দাম হবে বাজারভিত্তিক: গভর্নর

জুনের মধ্যে আইএমএফের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড়
এখন থেকে ডলারের দাম হবে বাজারভিত্তিক: গভর্নর

বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে উল্লেখ করে ডলার-টাকার বিনিময় হার এখন থেকে বাজারনির্ভরভাবে নির্ধারণের সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দুবাই থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন।

এ সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বাংলাদেশ আগামী জুন মাসের মধ্যে ১৩৩ কোটি ডলারের ঋণ কিস্তি পাবে বলেও জানান তিনি।

ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের দর-কষাকষি চলছিল। মূলত সে কারণে আইএমএফ ঋণের কিস্তি ছাড় করছিল না। এর মধ্যে গতকাল জানা যায়, বাংলাদেশ ডলারের বিনিময় আরও নমনীয় করতে রাজি হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে চলমান ৪৭০ কোটি ডলারে ঋণের দুটি কিস্তি একসঙ্গে ছাড় করতে রাজি হয়েছে আইএমএফ।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত ৯ মাসে রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার বিক্রি করা হয়নি, তবুও বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে এবং তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। এ অবস্থায় বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এ বিষয়ে ব্যাংকারদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, বাজারভিত্তিক করায় হঠাৎ করে ডলারের রেট অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। দীর্ঘদিন ধরে ডলারের রেট ১২২ টাকার আশপাশে রয়েছে এবং তা সেখানেই থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ডলারের রেট দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা-সরবরাহ অনুযায়ী নির্ধারিত হবে, বাইরের দেশের নির্দেশে নয়। বর্তমানে বাজারে ডলারের সরবরাহও পর্যাপ্ত রয়েছে।

তবে, তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, দুবাইভিত্তিক কিছু সিন্ডিকেট বাজারে অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করতে পারে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্ক থাকবে এবং সার্বক্ষণিক নজরদারি করবে। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, ড. মো. হাবিবুর রহমান, কবির আহমেদ, উপদেষ্টা আহসান উল্লাহ এবং নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান।

এদিকে গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) চলতি বছরের জুনের মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির জন্য নির্ধারিত ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার একত্রে ছাড় করবে।

বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে সকল বিষয় সতর্কতার সাথে পর্যালোচনা করে উভয়পক্ষ রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, মুদ্রা বিনিময় হারসহ অন্যান্য সংস্কার কাঠামো বিষয়ে সম্মত হয়েছে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা এবং বিনিময় হার ব্যবস্থায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বিষয়ে অধিকতর পর্যালোচনার লক্ষ্যে চতুর্থ রিভিউ সম্পন্ন হওয়ার পর উভয় রিভিউয়ের জন্য নির্ধারিত কিস্তির অর্থ একত্রে ছাড় করা হবে বলে বিগত তৃতীয় রিভিউয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের এপ্রিলে ঢাকায় অনুষ্ঠিত চতুর্থ রিভিউয়ের সময় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ব্যাংক-ফান্ড সভায় এবিষয়ে আলোচনা চলমান ছিল।

এ ছাড়া বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, এআইআইবি, জাপান এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে আরও প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সহায়তা জুন মাসের মধ্যে পাবে বলে বাংলাদেশ প্রত্যাশা করছে। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে এ অর্থ পাওয়া গেলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও শক্তিশালী হবে। ফলে মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয় যে, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা গ্রহণের ক্ষেত্রে যেসকল সংস্কার কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে তা সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব বিবেচনায় পরিকল্পিত এবং জাতীয় স্বার্থে গৃহীত। এ সকল সংস্কার কর্মসূচির ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীদের কার্যক্রম শুধুমাত্র কারিগরি সহায়তা প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

মন্তব্য

অর্থ-বাণিজ্য
The United States and China agree to reduce tariffs

শুল্ক কমাতে একমত যুক্তরাষ্ট্র ও চীন

শুল্ক কমাতে একমত যুক্তরাষ্ট্র ও চীন

বাণিজ্যযুদ্ধের তীব্রতা কমিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। পরস্পরের ওপর আরোপ করা পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য শুল্ক ৯০ দিনের জন্য ব্যাপক পরিসরে কমাতে একমত হয়েছে দুই দেশ। গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তেজনা কমাতেই এই চুক্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। খবর বিবিসির।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের আগে চীনের ওপর মার্কিন শুল্ক ছিল ২০ শতাংশ। পরে নতুন শুল্ক যখন ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন তখন তিনি বলেছিলেন তিন মাস সবার জন্য বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক হার প্রযোজ্য হবে।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় দুপক্ষের মধ্যে আলোচনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, গঠনমূলক ও দৃঢ় আলোচনার পর উভয় দেশ ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত করতে রাজি হয়েছে। এর আওতায় দেশ দুটি পারস্পরিক শুল্ক ১১৫ শতাংশ কমাবে।

চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত বর্তমান ১৪৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনবে। অন্যদিকে চীন মার্কিন পণ্যের ওপর আরোপ করা ১২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনবে। উভয় দেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, আগামী ১৪ মে থেকে শুল্কের এই কাঁটছাট কার্যকর হবে।

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে স্কট বেসেন্ট বলেন, আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে এসেছি যে, আমাদের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। দুই পক্ষের প্রতিনিধিদলই একমত হয়েছে যে তারা বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায় না। মার্কিন অর্থমন্ত্রী বলেন, উভয় দেশই নিজেদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে পেরেছে। আমাদের লক্ষ্য ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্যের পথে অগ্রসর হওয়া এবং এটি তারই সূচনা।

প্রথম দফায় শুল্ক আরোপের ফলে বিশ্ববাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল এবং বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কাও জোরালো হয়েছিল। তবে এবার এই চুক্তির ঘোষণায় বিশ্ব শেয়ারবাজারে তাৎক্ষণিক ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

শুল্ক কমানোর চুক্তির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ববাজারে চাঙাভাব দেখা দেখা গেছে। হংকংয়ের প্রধান সূচক ৩ শতাংশ বেড়ে গেছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ স্টক ফিউচারের উত্থান হয়েছে। এছাড়া বাড়তি শুল্ক স্থগিতের খবরে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের দর বেড়ে ছয় মাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইউরোপীয় শেয়ারবাজারগুলোও উচ্চমুখী প্রবণতায় লেনদেন শুরু করে এবং মার্কিন বাজারগুলোও ২ থেকে ৩ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে, এই সময়সীমার মধ্যে চীনের উচিত হবে ফেন্টানিল নামক ভয়াবহ মাদকের অবৈধ রপ্তানি বন্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া। এ বিষয়ে চীনের সদিচ্ছা দেখে ওয়াশিংটন আশাবাদ প্রকাশ করেছে।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিলের প্রবেশ ঠেকাতে চীন পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে না এমন অভিযোগ তুলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমে চীনা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন।

মন্তব্য

p
উপরে